���������������������������������
গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘আসন্ন’, উত্তরাঞ্চলের প্রধান হাসপাতালে আবারও ইসরায়েলি হামলা
গাজার উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ভয়াবহ খাবারের সংকটে ভুগছে। বলা হচ্ছে অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ 'আসন্ন'।
খাদ্য সংকটের তীব্রতা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃপক্ষের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেককে অভুক্ত থাকতে হবে।
এই প্রতিবেদনটি এমন সময় এলো যখন গাজা উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশ সহজ করে দিতে এবং আরও স্থল ক্রসিং খুলে দিতে কাছের মিত্রদেরও ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ত্রাণ সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের আকাশ ও সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহ খুবই ধীর গতির এবং কম।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, আসন্ন দুর্ভিক্ষ 'সম্পূর্ণরূপে মানবসৃষ্ট' কারণ 'ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এদিকে, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম হাসপাতাল শিফাতে হামাস সেনারা পুনরায় সংগঠিত হয়ে তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে এমন দাবি তুলে হাসপাতালটিতে সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
হাসপাতালের ভেতরে ও এর আশপাশে দিনভর সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল, যেখানে হাজার হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে, বলছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।
হামাস সেনা হিসেবে চিহ্নিত করে ২০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এসময় তাদের একজন সৈন্যও নিহত হয়েছে। যদিও নিহতদের হামাস সদস্য হিসেবে শনাক্ত করা যায়নি।
ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, নিহতদের মধ্যে গাজার হামাসের পুলিশ বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রয়েছেন, যিনি ওই হাসপাতালে লুকিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে গাজার কর্মকর্তারা জানান, ওই কমান্ডার ত্রাণবাহী গাড়িবহরের সুরক্ষার সমন্বয় করছিলেন।
আরও পড়ুন: বড় বাধার মুখে ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের পরিকল্পনা
শিফা হাসপাতালের ভেতরে ও নিচে হামাস কমান্ড সেন্টার গড়ে তুলেছে এমন দাবি করে গত নভেম্বরে হাসপাতালটিতে সর্বশেষ অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। কিছু ভূগর্ভস্থ কক্ষের দিকে যাওয়ার একটি সুড়ঙ্গ এবং হাসপাতালের ভিতরে অস্ত্র পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেছিলেন তারা। তবে অভিযানে আগে তারা যে পরিমাণ অস্ত্র আছে বলে দাবি করেছিল তার চেয়ে কমই ছিল যে কারণে বেপরোয়াভাবে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগে সমালোচকরা ইসরায়েলি বাহিনীকে অভিযুক্ত করেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে রোগী, চিকিৎসা কর্মী এবং নিরাপত্তার খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া লোকজনসহ প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধের কারণে গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হামাসের জ্যেষ্ঠ যোদ্ধারা হাসপাতালে পুনরায় সংগঠিত হয়ে ভেতর থেকে হামলার নির্দেশ দিচ্ছে।
হামলায় নিহতদের মধ্যে গাজা পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফাইক মাভুহও রয়েছেন বলে দাবি করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তিনি সশস্ত্র ছিলেন এবং শিফায় লুকিয়ে ছিলেন এবং পাশের একটি কক্ষে অস্ত্র পাওয়া গেছে।
গাজা সরকার জানিয়েছে, মাভুহ উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ সুরক্ষা এবং ত্রাণ গোষ্ঠী ও স্থানীয় উপজাতিদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
হাগারি বলেন, রোগী ও চিকিৎসা কর্মীরা মেডিকেল কমপ্লেক্সে থাকতে পারেন এবং যেসব বেসামরিক নাগরিক চলে যেতে চান তাদের জন্য নিরাপদ পথের ব্যবস্থা রয়েছে।
ইসরায়েল অভিযোগ করেছে যে হামাস তার যোদ্ধাদের রক্ষা করার জন্য হাসপাতাল এবং অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনা ব্যবহার করছে এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে।
গাজার অর্ধেককে অনাহারের দিকে ঠেলে দিতে পারে রাফাহর আক্রমণ
২০০৪ সালে সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের সময় প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি যা এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার তীব্রতা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের এক ডজনেরও বেশি সংস্থা, সহায়তা গোষ্ঠী, সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা গাজায় ক্ষুধা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি বলছে, গাজার মানুষ পর্যাপ্ত খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ অর্থাৎ গাজার জনগোষ্ঠীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ সর্বোচ্চ মাত্রার খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। খাদ্যের চরম অভাব এবং তীব্র অপুষ্টির গুরুতর স্তরে রয়েছে তারা। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলেরই প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ রয়েছেন।
এখন থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোনো সময় উত্তরাঞ্চলে সরাসরি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যখন ২০ শতাংশ পরিবারে খাদ্যের চরম অভাব থাকে, ৩০ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভোগে এবং প্রতি ১০ হাজার লোকের মধ্যে কমপক্ষে ২ জন প্রাপ্তবয়স্ক বা ৪টি শিশু প্রতিদিন মারা যায় তখন সেই অঞ্চলকে দুর্ভিক্ষপীড়িত মনে করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম শর্তটি পূরণ হয়েছে এবং দ্বিতীয় শর্তটিও পূরণ হওয়ার 'অত্যন্ত সম্ভাবনা' রয়েছে। শিগগিরই মৃত্যুর হার আরও বাড়বে এবং দুর্ভিক্ষের পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যদি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে আক্রমণ চালায়, তাহলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ (গাজার জনসংখ্যার অর্ধেক) বিপর্যয়কর ক্ষুধা পরিস্থিতিতে পড়বে এবং দক্ষিণাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হবে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাথিউ হলিংওয়ার্থ বলেন, 'এই মুহূর্তে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হচ্ছে এবং এটি ঘটতে মাত্র পাঁচ মাস সময় লেগেছে।’
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী জেমি ম্যাকগোল্ডরিক উত্তর ও মধ্য গাজাসহ ত্রাণের জন্য 'সব রাস্তা' খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডব্লিউএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাকে করে যে সহায়তা আনা হয় তার তুলনায় এয়ারড্রপ থেকে সহায়তা 'নগণ্য'।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
গাজা শহরসহ গাজার উত্তরাঞ্চল ছিল আগ্রাসনের প্রথম লক্ষ্যবস্তু এবং পুরো এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এটি এখন গাজার মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দু। অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ফিলিস্তিনি ইস্যু নিয়ে কাজ করা ইসরায়েলি সামরিক সংস্থার মুখপাত্র শিমন ফ্রিম্যান বলেছেন, ইসরায়েল 'গাজা উপত্যকায় প্রবেশের সব সুযোগ দিচ্ছে এবং দেশগুলোকে সহায়তা প্রেরণে উৎসাহিত করছে।
ইসরায়েলের অভিযোগ, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সময়মতো ত্রাণ বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, শত্রুতা, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের অসুবিধা এবং আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণে গাজার বেশির ভাগ এলাকায় বিতরণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড পিস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়াল বলেছেন, ইসরায়েলকে ‘যথেষ্ট হুঁশিয়ারি’ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যদি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করা অব্যাহত রাখে, বিপুলসংখ্যক লোককে বাস্তুচ্যুত করে এবং ত্রাণ তৎপরতায় বাধা দেয় তবে এর পরিণতি হবে বিপর্যয়কর।
তিনি বলেন, 'নীতি পরিবর্তন করতে না পারলে এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী হবেন তারা।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, আরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলের বিষয়। ইসরাইলকে এটা করতেই হবে। এটা লজিস্টিকের প্রশ্ন নয়। এর কারণ এই নয় যে, জাতিসংঘ পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়নি। ট্রাক থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে, আর ল্যান্ড ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, পুলিশের ওপর ইসরায়েলি হামলা জনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ, যার ফলে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা রাস্তায় ত্রাণবাহী ট্রাকে উপচে পড়ছে।
সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ৩১ হাজার ৭২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় ১২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং আরও ২৫০ জনকে জিম্মি করে। গত বছর যুদ্ধবিরতির সময় বাকিদের বেশিরভাগ মুক্তি দেওয়ার পরেও হামাস এখনও প্রায় ১০০ জন জিম্মির পাশাপাশি ৩০ জনের দেহাবশেষ নিজেদের হেফাজতে রেখেছে বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
বড় বাধার মুখে ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের পরিকল্পনা
ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা বলেছেন, তিনি একটি টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করবেন এবং গাজার পুনর্গঠনের জন্য একটি স্বাধীন ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করবেন।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) হাতে বিবৃতি এসেছে। এতে সংঘাত নিরসনে মার্কিন কর্তৃপক্ষ যুদ্ধ পরবর্তী যে ধরনের ফিলিস্তিন সরকার গঠন করতে চেয়েছিল, তার জন্য বিস্তৃত পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন তিনি।
কিন্তু উল্লেখ করার মতো আরেকটি বিষয় হলো, গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ক্ষমতা নেই। ২০০৭ সালে হামাস তাদের বাহিনীকে বিতাড়িত করেছে। ইসরায়েলি অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশে কেবল সীমিত কর্তৃত্ব রয়েছে এই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গাজায় ফেরার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন এবং তার সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোর বিরোধী।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত সপ্তাহে মুস্তাফাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। যিনি মার্কিন অর্থনীতিবিদ এবং আব্বাসের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা, যার কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি নেই।
বিবৃতিতে মোস্তফা বলেন, তিনি একটি নির্দলীয়, টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করবেন। যা তাদের জনগণের আস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন উভয়ই অর্জন করতে পারবে। তিনি পিএ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক সংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তিনি অঞ্চলগুলোকে পুনরায় একত্রিত করতে চাইবেন এবং গাজার পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য একটি ‘স্বাধীন, দক্ষ ও স্বচ্ছ সংস্থা এবং প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ, পরিচালনা ও বিতরণের জন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের চেষ্টা করবেন।’
ভিশন বিবৃতিতে হামাসের কথা উল্লেখ করা হয়নি, যারা ২০০৬ সালে শেষবার ফিলিস্তিনিদের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন করেছিল এবং কোনো কোনো জরিপ ইঙ্গিত দেয় যে এখনও উল্লেখযোগ্য সমর্থন রয়েছে।
আরও পড়ুন: ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০
পিএ'র সার্বিক নিয়ন্ত্রণে থাকা ৮৮ বছর বয়সী আব্বাস ২০০৯ সালে তার নিজের ম্যান্ডেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন করতে অস্বীকার করেছেন।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের একটি বড় অংশ চায় তিনি পদত্যাগ করুন।
মুস্তাফা বলেন, পিএ প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু তিনি কোনো সময়সূচি ঘোষণা করে বলেন, এটি গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের 'বাস্তবতা'র ওপর নির্ভর করবে। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করা অঞ্চলগুলোর ওপর ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র চায়।
২০২১ সালে, আব্বাস নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলম্বিত করার সিদ্ধান্তের জন্য অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি বিধিনিষেধকে দায়ী করেন, যেখানে তার ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ পার্টি বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জাতিসংঘ প্রধানের
সৌদি আরবে আজ রোজা শুরু
সৌদি আরবে রবিবার(১০ মার্চ) সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই আজ সোমবার (১১ মার্চ) পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে।
এর আগে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার আহ্বান জানিয়েছিল সৌদি আরব। খালি চোখে বা দূরবীন দিয়ে যারাই অর্ধচন্দ্র দেখবেন, তাঁদের নিকটস্থ আদালতে রিপোর্ট করতে এবং পর্যবেক্ষণ নথিভুক্ত করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ব্রুনাইসহ আরও কয়েকটি দেশ ১২ মার্চ থেকে রমজান মাস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ওমানও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ১২ মার্চ, মঙ্গলবার পবিত্র রমজান মাস শুরু করবে, কারণ রবিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা যায়নি।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা থমকে যাওয়ায় গাজায় ত্রাণের জন্য আলোচনায় সমুদ্রপথ
অবরুদ্ধ গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ একটি সমুদ্রপথ খুলে দিতে চাইছে, যা গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেবে।
তবে ত্রাণ কর্মকর্তারা বলছেন, স্থলপথে ট্রাক পাঠানোর চেয়ে জাহাজ বা সাম্প্রতিক এয়ারড্রপের মাধ্যমে সরবরাহ অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং অপর্যাপ্ত।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার গাজায় এয়ারড্রপ কার্যক্রমে বিপর্যয় ঘটে তা নিচে থাকা মানুষদের আঘাত করে এবং বাড়িঘরের উপর পড়ে। এতে ৫ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর গাজার বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, দেশটির এক-চতুর্থাংশ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি। গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো বসবাসরত আনুমানিক তিন লাখ মানুষের অনেকেই বেঁচে থাকার তাগিদে পশুখাদ্যে নির্ভর করছে। তা-ও কমে আসছে।
আরও পড়ুন: কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার পর গাজায় বাড়তে শুরু করেছে শিশুদের মৃত্যু
ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, হামলা ও অবরোধের মুখে গাজায় গত কয়েক মাস ধরেই দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দেওয়া হচ্ছিল। এবার সেখানে শিশু মৃত্যুর হার বাড়তে শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন উত্তর গাজায় দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় তীব্র আকার ধারণ করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তরের কামাল আদওয়ান ও শিফা হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই শিশু - যাদের বয়স ১৫ বছরের মধ্যে আর একজন ৭২ বছর বয়সী পুরুষ।
অন্যদিকে দক্ষিণ গাজায় সাহায্য মিললেও দুর্বল শিশুরা মারা যেতে শুরু করেছে।
গত পাঁচ সপ্তাহে অপুষ্টিজনিত কারণে ১৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছে রাফাহর এমিরাতি হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক।
এই সপ্তাহের শুরুতে ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান অ্যাডেল খোদর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলাম তা শুরু হয়ে গিয়েছে।’
ইউনিসেফের শিশু পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অনুরাধা নারায়ণ বলেন, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে গাজায় ডায়রিয়াজনিত রোগ বাড়ছে যার ফলে অনেকেই ক্যালরি ধরে রাখতে পারছে না।
এপির প্রতিবেদনে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। কিছু দোকানে মিললেও দাম অনেক বেশি।
বেশিরভাগ লোক ‘খুবাইজা’ নামে লতা-পাতা সিদ্ধ করে খেয়ে বেঁচে থাকছে। উত্তর গাজায় দুই ছেলে এবং তাদের সন্তানদের সঙ্গে বসবাসকারী ৭০ বছর বয়সী ফাতিমা শাহীন বলেন, সিদ্ধ খুবাইজা তার প্রধান খাবার এবং খুব হিসাব করে খাবার তৈরি করতে হচ্ছে।
শাহীন বলেন, আমরা এক টুকরো রুটির জন্য মরছি।
গাজার উত্তরাঞ্চলের আরেক বাসিন্দা ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের গবেষক এবং অর্থনৈতিক সাংবাদিক কামার আহমেদ জানান, তার ১৮ মাস বয়সী মেয়ে মীরা বেশিরভাগ সেদ্ধ লতা-পাতা খায়। তার বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো খাবার নেই।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. হুসাম আবু সাফিয়া এপিকে বলেন, তার কর্মীরা বর্তমানে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ শিশুর চিকিৎসা করেন এবং তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই অপুষ্টিতে ভুগছে।
আবু ইউসুফ নাজ্জার হাসপাতালের শিশুদের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. জাবর আল-শায়েরের মতে, খাবারের অভাবে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালে আরও অপুষ্টির শিকার ৮০ শিশু রয়েছে।
এমিরাতি হাসপাতালের নার্সারি ইউনিটের ডেপুটি হেড ডক্টর আহমেদ আল-শাইর বলেন, অকাল শিশুদের মৃত্যুর মূল কারণ মায়েদের মধ্যে অপুষ্টি। অপুষ্টির কারণে কম ওজনের শিশুর জন্ম ও মৃত্যু হচ্ছে। যুদ্ধের সময় এ মৃত্যু বেড়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
চিকিৎসক আল-শাইর বলেন, হাসপাতালে ফেব্রুয়ারিতে ১৪টি এবং মার্চে এ পর্যন্ত আরও দুটি শিশু মারা গেছে। বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ১০ দিনের কম বয়সী ৪৪টি শিশু রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন তাদের চিকিৎসা করি কিন্তু ভবিষ্যৎ কী হবে আল্লাহ জানেন।’
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকে খাবার-পানি-ওষুধসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। শুধু দক্ষিণে দুটি ক্রসিং দিয়ে দুই-একটি সাহায্যকারী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়।
গাজায় ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার জন্য জাতিসংঘের এজেন্সিগুলোকে দায়ী করে ইসরায়েল বলেছে, গাজা ক্রসিংয়ে তারা সাহায্য দ্রব্যগুলো বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, ইসরায়েল কিছু পণ্য প্রবেশের অনুমতি দেয় না আর জটিল নিয়ম আরোপ করে যে কারণে ত্রাণ প্রবেশের গতি কমে যায়।
এছাড়াও গাজায় বিতরণ ব্যবস্থা প্রায় পঙ্গু হওয়ার পথে। যেসব সাহায্য বহনকারী ট্রাকগুলো ইসরায়েলি বাহিনী ফিরিয়ে দেয়। সেগুলো ফেরার সময় তারা কোনো নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যার ফলে ফেরার পথে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা ট্রাকে হামলা চালিয়ে সাহায্য ছিনিয়ে নেয়।
এছাড়াও খাবার বিতরণকালে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায়, যার ফলে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। ইসরায়েল দাবি করে খাদ্য বিতরণকারী ট্রাকগুলোতে ফিলিস্তিনিরা হামলা করছিল তাই আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হয়।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল জানিয়েছে, শিগগিরই উত্তর গাজায় সাহায্যের জন্য ক্রসিং খোলা হবে এবং সমুদ্রপথে চালান আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
গাজার হাত ও পরিবার হারানো শিশু ওমরের দ্বিতীয় জীবন শুরু
গাজার হাত ও পরিবার হারানো শিশু ওমরের দ্বিতীয় জীবন শুরু
সাব- কৃত্রিম হাত দেখিয়ে বলে, ‘আমার বাহু সুন্দর’
ওমর আবু কুওয়াইক গাজার নিজ বাড়ি থেকে এখন অনেক দূরে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বাবা-মা ও বোনের মৃত্যুর পাশাপাশি নিজ হাতের একটি অংশ হারিয়েছিল ৪ বছর বয়সী শিশুটি।
তবে খানিকটা ভাগ্যবান বরা যেতে পারে শিশুটিকে। পরিবার ও অপরিচিতদের প্রচেষ্টায় ওমরকে গাজা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়, যেখানে একটি কৃত্রিম হাতসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায়। নিউ ইয়র্ক শহরে দাতব্য চিকিৎসালয় পরিচালিত একটি বাড়িতে ফুফুর সঙ্গে দিন কাটিয়েছে শিশু ওমর।
অবশেষে ফিলাডেলফিয়ার শ্রীনার্স চিলড্রেনস হাসপাতালে বুধবার কৃত্রিম হাত পায় এবং মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, ‘আমার বাহু সুন্দর।’
দুর্ভোগের সমুদ্রে এটি ওমর ও তার ফুফু মাহা আবু কুওয়াইকের জন্য অনুগ্রহের ছিটাফোটা মাত্র। তারা একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ছিল। যারা এখনও গাজায় আটকে আছে তাদের জন্য দুঃখ ও হতাশা সব সময়ই অদূরে।
মাহা এ নিয়ে খুশি যে তিনি তার প্রিয় ভাইয়ের ছেলের জন্য এই ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। ওমরকে তিনি এখন নিজের চতুর্থ সন্তান বলে মনে করেন।
কিন্তু এটি তার জন্য খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। ওমরের সঙ্গে যাওয়া মানে গাজার দক্ষিণতম শহর রাফাহতে তাবু ক্যাম্পে নিজের স্বামী ও তিন কিশোর সন্তানকে রেখে যাওয়া। রাফাহসহ যেসব এলাকায় বেসামরিক লোকদের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে এমন এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে। মাহা জানেন, তিনি তার পরিবারকে আর কখনও দেখতে পাবেন না।
তিনি বলেছিলেন,‘আমার বাচ্চারা ওমরকে খুব ভালোবাসে। তারা আমাকে বলেছিল, আমরা আর শিশু নই। যাও, ওমরের চিকিৎসা হোক। এটি ওর জন্য সবচেয়ে ভালো এবং এটি ওর একমাত্র সুযোগ।’
তিনি বলেন, ওমর বেশ চটপটে এবং তার প্রকৌশলী বাবার মতোই বুদ্ধিমান ছিল। কিন্তু এখন প্রায়ই সে হাল ছেড়ে দেয় আর কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ওমরকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে সে ডান হাত ও বাম হাতের বাকি অংশ দিয়ে কান চেপে ধরে বলে, ‘আমি কথা বলতে চাই না।’
অবশেষে ওমর বলেছে,‘বিদ্যালয় ভালো ছিল এবং আমি প্রথম দিনেই খুশি ছিলাম।’ যুদ্ধ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছিল সে। কিন্তু এখন আর বিদ্যালয়ে যেতে চায় না সে। সে এখন ফুফুর কাছ থেকে দূরে যেতে ভয় পায়।
যদিও নিউইয়র্কে উড়ে যাওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ওমর।
‘যখন আমি বড় হব, আমি পাইলট হতে চাই,’ ওমর বলছিল, ‘যাতে আমি মানুষকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে আসতে পারি।’
ওমরই গাজার প্রথম ফিলিস্তিনি শিশু যাকে গ্লোবাল মেডিকেল রিলিফ ফান্ডের অধীনে নেওয়া হয়েছিল। স্টেটেন আইল্যান্ড দাতব্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এলিসা মন্টান্টি, যুদ্ধ বা বিপর্যয়ে অঙ্গ হারানো শত শত বাচ্চাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করতে এক চতুর্থাংশ সময় কাটিয়েছেন।
কয়েক দশক ধরে চলে আসা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ঘটে গত ৭ অক্টোবর। গাজার চারপাশে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ইসরায়েলি সম্প্রদায়গুলোতে ঢুকে পড়ে হামাস। প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
পাল্টা জবাবে ইসরায়েল গাজাকে ধ্বংস করেছে। পাঁচ মাসের যুদ্ধে, গাজার ২.৩ মিলিয়ন লোকের মধ্যে ৮০ শতাংশ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গাজায় মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে, ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। নিহতদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। ইসরায়েল বেসামরিক মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করে বলেছে, সশস্ত্র বিদ্রোহীরা জনগণের মধ্যে কাজ করছে।
যুদ্ধ শুরুর ২ সপ্তাহ পর ওমর ও মাহা অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ভবনগুলো মাটিতে মিশে যাওয়ার আগে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
এই দুই পরিবার বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে থাকতে চলে যায়।
৬ ডিসেম্বর, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ওমরের দাদা-দাদির বাড়িতে দুটি ইসরায়েলি বিমান হামলা চালায়। বিস্ফোরণে তার মুখের চামড়া উঠে যায়। বাম হাতের কনুইয়ের নিচ থেকে হারিয়ে ফেলে সে। পা ও ঘাড় পুড়ে যায়। বাবা-মা, ৬ বছর বয়সী বোন, দাদা-দাদি, দুই ফুফু এবং এক চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ওমর। উদ্ধারকারীরা খনন করে যখন তার ছোট্ট দেহটি খুঁজে পায়, তখন তার শরীর রক্তাক্ত ছিল।
ইউএস-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা রাহমা ওয়ার্ল্ডওয়াইডের ভাইস প্রেসিডেন্ট আদিব চৌকি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছিল, গাজায় থাকার চেয়ে অন্য যেকোনো জায়গাই তার জন্য ভালো।’
গাজাবাসীর চলাচল সীমাবদ্ধ করে প্রতিদিন মাত্র কয়েক শতাধিক মানুষকে ওই অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে, যাদের বেশিরভাগেরই বিদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ২ হাজার ২৯৩ জন রোগী গাজা ত্যাগ করেছে। যাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৯৮ জন আহত ও ৭৯৫ জন অসুস্থ। আর তাদের সঙ্গী হিসেবে ১ হাজার ৬২৫ জন গাজা ছেড়ে যেতে পেরেছেন। এখনও প্রায় ৮ হাজার রোগী বিদেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা।
ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি ও মিশরীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আদিব চৌকি ওমর এবং মাহা আবু কুওয়াইকের জন্য নতুন পাসপোর্ট এবং তাদের মিশরে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলি নিরাপত্তা ছাড়পত্র পেয়েছেন।
একটি অ্যাম্বুলেন্স তাদের সীমান্তে নিয়ে আসে, যেখানে সিনাই মরুভূমি দিয়ে একটি মিশরীয় অ্যাম্বুলেন্স তাদের নিয়ে আসে।
১৭ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কে উড়ে যেতে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের সবুজ বাতির জন্য মিশরীয় একটি হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছিল ওমর আর তার ফুফু।
ফিলাডেলফিয়ার শ্রীনার্স চিলড্রেনস হাসপাতালে, ওমরের পায়ে পোড়ার জন্য স্কিন গ্রাফ্ট সার্জারি হয়েছিল। সে তার নতুন কৃত্রিম হাত পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে বুধবার সেটি দেখতে পেয়ে ধরতে হাত বাড়িয়ে দেয় আর দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে, ‘আমার বাহু সুন্দর।’
ওমর ও তার ফুফু পরের দিন কায়রোর উদ্দেশে একটি বিমানে উঠেছিলেন। সঙ্গে তাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ও ছিলেন। স্থায়ী আবাস না হওয়া পর্যন্ত মিশরে তার বাড়িতেই থাকবেন তারা।
মাহা আবু কুওয়াইক বলেন, ‘আমি প্রায় ঘুমাই না । আমি ওমরের কথা ভাবি এবং আমি আমার বাচ্চাদের কথা ভাবি । তারা সেখানে তাঁবুতে বসবাস করছে এখনো।’
খাদ্যের অভাব। ইসরায়েলের হাতে গাজার অবরোধ অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে অনাহারের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, তার পরিবার একটি তাঁবুতে ৪০ জনের সঙ্গে ভাগ করে থাকছে যা ঝড়-বৃষ্টি থেকে সামান্যই সুরক্ষা দেয়। আর একজন অসুস্থ হলে অসুখ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
যুদ্ধের কারণে গাজায় সেলফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আবু কুওয়াইক ‘যখন নেটওয়ার্ক থাকে’ যোগাযোগ রাখে।
মিশরে ফেরার পর ওমর এবং তার ফুফুর ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট; কেননা তাদের নির্বাসনে যেতে হতে পারে।
আবু কুওয়াইকের জন্য, যদিও, ওমরের ফিরে যাওয়ার জন্য কোনো বাড়ি নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি কল্পনাও করতে পারি না, যে আমি গাজায় ফিরে যাব। তার জীবন কী হবে? কোথায় তার ভবিষ্যৎ?’
উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জাতিসংঘ প্রধানের
উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক।
উত্তর গাজায় হামলার নিন্দা জানিয়ে দুজারিক বলেন, ‘গাজার উত্তরাঞ্চলের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মহাসচিব, যেখানে জীবন রক্ষা করার জন্য সাহায্য চাইতে গিয়ে ১০০ জনেরও বেশি লোক নিহত বা আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গাজার আহত বেসামরিক নাগরিকদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন, যার মধ্যে অবরুদ্ধ উত্তরাঞ্চলের লোকজনও রয়েছে। সেখানে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ত্রাণ সরবরাহ করতে পারেনি জাতিসংঘ।’
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকার পশ্চিমে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ১০৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়। আহত হয় ৭৬০ জনেরও বেশি।
আরও পড়ুন: উপহার-অনুগ্রহ নয়, রাষ্ট্রকে একটি আন্তর্জাতিক আইনি অধিকার মনে করে ফিলিস্তিনিরা
ইসরায়েলি বাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, ভোরে গাজা উপত্যকায় প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা ট্রাকগুলোতে আক্রমণ করে লুটপাট চালায় গাজাবাসীরা। এ সময় আত্মরক্ষা করতে গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
জাতিসংঘের কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না জানিয়ে দুজারিক বলেন, ঘটনার তদন্ত করে জবাবদিহির ব্যবস্থা করা হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, গুতেরেস আবারও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা গাজায় সবার কাছে পৌঁছাতে পারে।
গাজা সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি মৃত্যু এবং ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মৃত্যুর এই মর্মান্তিক সংখ্যা দেখে গুতেরেস আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে জানান দুজারিক। এছাড়াও ধ্বংসস্তূপের নিচেও অনেকে আটকে আছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০
ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০
গাজা শহরে মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে ইসরায়েলের আকাশ, সমুদ্র ও স্থল আক্রমণের প্রথম লক্ষ্য ছিল গাজা শহর ও গাজার বাকি অংশগুলো। এলাকাটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে এবং কয়েক মাস ধরে বাকি অঞ্চল থেকে মূলত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে সহায়তা পেয়েছে সামান্যই।
ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার বেশির ভাগ এলাকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ত্রাণবাহী গাড়িবহরে সাহায্যপ্রত্যাশী মানুষের মরিয়া হয়ে হামলে পড়াও এর একটি কারণ বলে জানায়।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার এক চতুর্থাংশ মানুষ অনাহারে ভুগছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা বলেন, বৃহস্পতিবারের হামলায় আরও ২৮০ জন আহত হয়েছেন।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রধান ফারেস আফানা বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে চিকিৎসকরা কয়েকশ মানুষকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছেন।
তিনি বলেন, মৃত ও আহতদের নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স নেই এবং কয়েকজনকে গাধার গাড়িতে করে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা এসব প্রতিবেদন খতিয়ে দেখছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৭০ হাজার ৪৫৭ জন।
তবে এর মধ্যে কতজন বেসামরিক ও যোদ্ধা তা আলাদা করে বলতে পারেনি মন্ত্রণালয়। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু বলে জানানো হয়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের অংশ এই মন্ত্রণালয় হতাহতের বিস্তারিত রেকর্ড রাখে। এর আগে যেসব যুদ্ধ হয়েছে সেসবের হতাহতের যে হিসাব এই মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা অনেকাংশে জাতিসংঘ, স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এমনকি ইসরাইলের নিজস্ব পরিসংখ্যানের সঙ্গেও মিলেছে।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং প্রায় ২৫০ জন জিম্মিকে করে হামাস। নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় হামাসের জিম্মায় প্রায় ১৩০ জন রয়েছে বলে ইসরায়েলের দাবি। যাদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ মারা গেছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিন সরকারের পদত্যাগের ফলে সংস্কারের দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনা
ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ বলেছেন, তার সরকার পদত্যাগ করছে, যা মার্কিন সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: রমজানে গাজা সংঘাত সম্প্রসারণের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ
সোমবার জমা দেওয়া ওই পদত্যাগপত্রের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি শাতায়েহ ও তার সরকারের পদত্যাগ গ্রহণ করবেন কি না। কিন্তু এই পদক্ষেপ পশ্চিমা সমর্থিত ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের নড়েচড়ে বসেছে এবং এটা মেনে নিতে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সূচনা করতে পারে।
যুদ্ধ শেষ হলে গাজা শাসনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সংস্কার করা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। চায় কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এখনও অনেক বাধা রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে: জেলেনস্কি
'আর গণহত্যায় জড়িত থাকব না' বলে নিজের গায়ে আগুন দিলেন মার্কিন সেনা
রমজানে গাজা সংঘাত সম্প্রসারণের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ
পবিত্র রমজান মাসে গাজায় অব্যাহত যুদ্ধ সংঘাত প্রসারিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ।
রবিবার(২৫ ফেব্রুয়ারি) আম্মানে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই সতর্কবার্তা দেন তিনি।
রয়্যাল হাশেমি কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাদশাহ আবদুল্লাহ গাজায় তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এবং নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: উপহার-অনুগ্রহ নয়, রাষ্ট্রকে একটি আন্তর্জাতিক আইনি অধিকার মনে করে ফিলিস্তিনিরা
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জর্ডান গাজার জনগণকে মানবিক, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
এতে আরও বলা হয়, বাদশাহ পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাকে বিচ্ছিন্ন করার যে কোনও প্রচেষ্টাকে জর্ডান প্রত্যাখ্যান করবে বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান খুঁজে বের করতে আরও সমন্বয় অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে জর্ডানের দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করেন মাহমুদ আব্বাস। ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে কাজ করতে এবং শহরের পবিত্র স্থানগুলো রক্ষায় উভয় পক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ও পরামর্শ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়