���������������
বারিধারার ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউ: যেভাবে যাবেন, যা দেখবেন
প্রতি ক্ষেত্রফলে সর্বাধিক জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি এই ঢাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিষ্প্রাণ আকাশচুম্বী অট্টালিকায় ভরে উঠেছে প্রাচীন এই শহর। আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থাকে সুগম করার পাশাপাশি এখানে সবুজায়নও অবধারিত হয়ে পড়েছে।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নেরই এক বিরাট পদক্ষেপ ঢাকার বারিধারার ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউ। পরিকল্পিত কতগুলো উপশহর গড়ে তুলে সেগুলোকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার মহাপ্রকল্পকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে এই সড়ক। চলুন, সদ্য চালু হওয়া অভিনব এই সড়কের আদ্যোপান্ত জেনে নেওয়া যাক।
৬ লেনের ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউ
রাজধানীর নতুনবাজার থেকে শুরু হয়ে বালু নদীর দিকে চলে যাওয়া সড়কটির নামের অঙ্কুর লুকিয়ে আছে পাকিস্থান শাসনের সময়ে। সে সময় ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন জিএ মাদানী। মূলত তার নামানুসারেই এই সড়কটির নাম হয়েছে মাদানী এভিনিউ।
রাজধানীর উত্তরাঞ্চলে যানজটের চাপ কমাতে এই সড়কটিকে প্রশস্ত করার প্রকল্প চালু হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। তখন থেকেই এ প্রকল্পের আওতায় ৬ লেন সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরে সড়কটিকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ে-এর সঙ্গে সংযুক্ত করার কাজ হাতে নেওয়া হয়।
১০০ ফুট প্রশস্ত এই সড়ক মোট ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। মূল প্রকল্পে দুটি সড়ক নির্মাণের কথা উল্লেখ ছিল। প্রস্তাবিত সড়ক দুটোর একটি পূর্বাচল নতুন শহর থেকে ইউসুফগঞ্জ হয়ে এই মাদানী এভিনিউ পর্যন্ত ৩.৩ কিলোমিটার।
আর অন্যটি পশি, কেরিয়া এবং জলশিড়ি আবাসনের মধ্য দিয়ে প্রায় ৫.২৩ কিলোমিটার অগ্রসর হবে। মূলত এই দ্বিতীয় সড়কটিকে রূপ দেয়া হবে ৬লেনে। ৪টি এক্সপ্রেসওয়ে আর ২টি সার্ভিস লেন। বেরাইদ অঞ্চলে সড়কটির ৬ লেন ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
পুরো এই ৮.৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে নির্মাণাধীন আছে ৪টি সেতু ও ২টি কালভার্ট।
এই সড়কের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপনা হচ্ছে বালু নদীর উপরে ৪৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের বালু সেতু। সংযোগ সড়ক মিলে ৫৯৩ মিটার এই সেঁতুটি দেখতে নড়াইলের ৬ লেন বিশিষ্ট মধুমতি বা কালনা সেতুর মতো।
এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় আরও আছে, ২১০ মিটার ৪টি সেতু প্রশস্তকরণ, ২০০ মিটারের নতুন ২টি সেঁতু নির্মাণ, এবং ৯০ মিটার সেঁতু প্রশস্তকরণ। পুরোদমে এগিয়ে চলছে ২ হাজার ৩৮৪ মিটারের ৪টি আন্ডারপাসসহ ৯০০ মিটারের ১টি ইউলুপ, এবং ৫০ মিটারের ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ কাজ।
১০০ ফিট সড়কটির অবস্থান
মাদানি এভিনিউ সড়কটি পড়েছে ঢাকার ভাটারা থানায়। বারিধারার মার্কিন দূতাবাস তথা নতুন বাজার থেকে এর শুরু। বালু নদী পেরিয়ে সোজা শেষ হয়েছে গিয়ে নারায়ণগঞ্চের রূপগঞ্জে। অবশ্য মধ্যপথে বালু ব্রিজের পর জলশিড়ি আবাসন সংলগ্ন স্থানে মোড় নিয়ে সড়কটি চলে গেছে পূর্বাচল ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের দিকে।
মাদানী এভিনিয়ের রুপগঞ্জ প্রান্তে রয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত বীর প্রতীক গাজী সেতু।
অর্থাৎ সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এ পথ ধরেই পূর্বাচল হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম বা সিলেট মহাসড়কের দিকে যাওয়া যাবে। এছাড়া এই পথটি কুড়িল বিশ্বরোডের উপর চাপ কমাবে। পূর্বাচল থেকে এই পথে সরাসরি গুলশান-২ এবং বেরাইদ ও নতুন বাজার হয়ে রামপুরায় প্রবেশ করা যাবে।
আরও পড়ুন: মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক: কীভাবে যাবেন, কী দেখবেন
অবকাঠামোগত উন্নয়নে ধীরে ধীরে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। স্বভাবতই দেশজুড়ে দিন বদলের এই হাওয়ার সবচেয়ে বেশি সান্নিধ্য পেয়েছে রাজধানী ঢাকা। ছোট্ট ভূখণ্ডে আকাশসম জটিলতা নিয়ে বিশ্বমানের সভ্যতার সঙ্গে তাল মেলানো শুরু করেছে প্রায় ৪০০ বছরেরও পুরানো এই শহর। ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক বজ্রকণ্ঠে যেন তারই ঘোষণা দিচ্ছে। উপশহর গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ঢেলে সাজানো এই বিস্তৃত অঞ্চলটি ইতোমধ্যে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়েতে। চলুন, খুব শিগগিরই উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা নতুন এই মাইলফলকের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্ব মানের ৩০০ ফিট সড়ক
সংশোধিত নকশায় ২৩৫ ফিট হলেও পূর্বের নামেই এখনও পরিচিত কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটি। মূলত প্রস্থ বরাবর ৩০০ ফিট সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সূচনালগ্ন থেকেই প্রসিদ্ধি লাভ করে ৩০০ ফিট নামটি।
এখন কুড়িল থেকে সড়কটি ১৪ লেনে ভাগ হয়ে সাড়ে ৬ কিলোমিটার চলে গেছে বালু ব্রিজ পর্যন্ত। ১৪ লেনের ৮টি এক্সপ্রেসওয়ে, যে পথে দ্রুতগামী যানবাহনগুলো ঢাকার বাইরে থেকে যাওয়া-আসা করবে। আর ৬টি হলো সার্ভিস রোড, যেগুলোতে চলাচল করবে স্থানীয় গাড়িগুলো।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলার নায়াগ্রাতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
তারপর বালু ব্রিজের পর থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কটি ১২ লেনের। এখানে ৬টি এক্সপ্রেসওয়ে, ৬টি সার্ভিস রোড।
এগুলোতে না আছে কোনো স্টপওভার পয়েন্ট, না কোনো ট্র্যাফিক সিগনাল। কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আপন গতিতে চলতে পারবে প্রতিটি যানবাহন। সার্ভিস লেন থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে যাওয়ার জন্য পুরো সড়কটিতে নির্দিষ্ট দূরুত্ব পর পর রয়েছে মোট ৫টি এ্যাটগ্রেড ইন্টার-সেকশন। এগুলোর নিচের আন্ডারপাস বা পাতাল সড়ক দিয়ে গাড়িগুলো চলে যেতে পারে এক্সপ্রেসওয়েতে। এরকম পাতাল সড়ক রয়েছে ১২টি।
বালু ব্রিজসহ ৬টি প্রশস্ত সেতু তো আছেই, সেই সঙ্গে হাতিরঝিলের আদলে বানানো হয়েছে ১৩টি আর্চ ব্রিজ। এগুলোর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকার ছোট ও মাঝারি গাড়িগুলো সার্ভিস লেন হয়ে ঢুকতে পারে মূল সড়কে। পাখির চোখে দেখলে ৪টি আইলুপ আলাদা করে দৃষ্টি কাঁড়ে।
এছাড়াও রয়েছে ৩০০ ফিটের সব থেকে চোখে পড়ার মতো বিষয় হচ্ছে সড়কের দু’পাশে ১০০ ফুটের দৃষ্টিনন্দন খাল। এর পাশ দিয়ে ৩৯ কিলোমিটার পায়ে হাটা পথ রীতিমতো উদ্যানে পরিণত করেছে জায়গাগুলোকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন যেসব দেশে
৩০০ ফিটে রয়েছে ১টি পাম্প হাউজ এবং খালের পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে ৫টি স্লুইস গেট। পানি গিয়ে মিলিত হয়েছে বালু নদীতে।
বর্ষা মৌসুমে আশেপাশের আবাসিক এলাকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসণকল্পে আরও খাল খননের কাজ চলছে। পার্শ্ববর্তী ডুমনি, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খালের পানি এক হয়ে এসে মিশবে এই ১০০ ফুট খালের সঙ্গে। এডি-৮ খাল খনন করা হবে ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ করে, আর বোয়ালিয়া খাল হবে ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ। ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ করে খনন করা হবে ডুমনি খাল। ৩০০ ফিট সড়কের খালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনটি খালেরই প্রস্থ ১০০ ফুট রাখা হবে।
বোয়ালিয়া, এডি-৮ ও ১০০ ফুট খালের পানি এক হয়ে গিয়ে পড়বে বালু নদীতে। অন্যদিকে খননের পর ডুমনি খালটি যুক্ত হবে পাশের কাঁঠালিয়া খালের সঙ্গে, যার শেষ গন্তব্য বালু নদী। ফলে ডুমনি খালেরও বালু নদীতে বের হওয়ার পথ থাকবে।
আরও পড়ুন: মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝর্ণা: যাওয়ার উপায় ও ভ্রমণ খরচ
এতে করে নিকুঞ্জ, বারিধারা ডিওএইচএস, বারিধারা, জোয়ারসাহারা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেনানিবাস, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কালাচাঁদপুর, কাওলাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না।
ঢাকার ৩০০ ফিট সড়কের অবস্থান
সড়কটির অবস্থান ঢাকার উত্তর-পূর্ব দিকে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায়। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর মাঝখানে প্রায় ৬২১৩ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে মনোরম সড়কটি। ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের সংযোগ স্থাপন করেছে এই বিরতিহীন সড়কটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্চ, নরসিংদী, গাজীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ও কিশোরগঞ্জ। মূলত ৩০০ ফিটের মাধ্যমে ঢাকার পশ্চিমাংশের সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যাতায়াত পথ সুগম হয়েছে।
বিমান বন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির সঙ্গে ঢাকার পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসের সংযোগ ঘটায় বহিরাগতরা ঝামেলাবিহীন ভাবে নানা গন্তব্যে যেতে পারবেন।
এছাড়া ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নামে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়েটি পূর্বাচল ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউকে সংযুক্ত করবে এই এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
সত্যিকার অর্থেই যদি বনভোজনের স্বাদ পেতে হয়, তাহলে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর বন-জঙ্গলের কোনো বিকল্প নেই। অরণ্যের আনাচে-কানাচে কিছু পাহাড়ি টিলা উঁকি দিলে মন্দ হয় না। এমন প্রাকৃতিক নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায় সিলেটের পথে বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে। আর তা যদি হয় বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বৃষ্টিবন এলাকা তাহলে তো কথাই নেই! বলছি দেশের ১০টি জাতীয় উদ্যান এবং ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্যে অন্যতম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কথা। চলুন, জেনে নেওয়া যাক- এই বুনো বাস্তুতন্ত্রে পদচিহ্ন এঁকে দেওয়ার উপায়।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের নামকরণ
ভানুগাছ অঞ্চলে জুম চাষকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ত্রিপুরা গ্রাম। ত্রিপুরা ভাষায় লাউয়াছড়া বনকে মৈলপতুইসা বলা হয়। মৈলপ মানে লাউ, আর তুইসা শব্দের অর্থ পাহাড়ি ছড়া। যে বনের ছড়ার ধারের জুমে লাউয়ের ফলন ভালো হয়, সেই এলাকাকে বলা হতো মৈলপতুইসা।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলার নায়াগ্রাতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
১৯২৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার পুরো অঞ্চলটি অধিকার করে এখানে বৃক্ষায়ন শুরু করে। ইতোমধ্যে অরণ্যে রূপ নেওয়া মৈলপতুইসা ঘোষিত হয় সংরক্ষিত বন হিসেবে। ভানুগাছের পশ্চিমে থাকার কারণে এর নাম ছিল পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। ১৯২৭ সালে উপনিবেশিক বন আইন জারির পর এখানকার বিভিন্ন স্থানের নামে পরিবর্তন আনা হয়। আর এ সময়েই মৈলপতুইসা বদলে হয়ে যায় লাউয়াছড়া।
১৯৯৬ সালে ১৯৭৪-এর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংশোধন আইন অনুসারে বনের নামের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয় জাতীয় উদ্যান শব্দ দুটি।
সিলেটের জাফলং ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
বিচিত্রতার কষ্ঠিপাথরে বাংলাদেশকে যাচাই করতে হলে ঘুরে আসতে হবে দেশটির উত্তর-পূর্বের সিলেট বিভাগ। শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এর সমৃদ্ধ জেলাগুলো দেশের সেরা বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। শুধুমাত্র এক জাফলং ভ্রমণ যে কোনও জাতীয়তার পরিব্রাজকের মনে এক টুকরো বাংলাদেশকে গেঁথে দিতে যথেষ্ট। প্রকৃতি কন্যা হিসেবে খ্যাত এই পর্যটনস্থল ভ্রমণের নানা দিক নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের নিবন্ধ। চলুন, পাহাড়, নদী ও বনের এই অনিন্দ্য সমারোহকে খুব কাছ থেকে দেখার উপায়টি জেনে নেয়া যাক।
জাফলং-এর নামকরণের ইতিহাস
জাফলং-এর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে খাসি জনগোষ্ঠীর হাজার বছরের ইতিহাস। সংক্ষেপে বলতে গেলে খাসিদের মালনিয়াং রাজ্য থাকাকালে এর রাজধানীগুলোর একটি ছিলো বল্লাপুঞ্জি। এই বল্লাপুঞ্জি মূলত জাফলয়েরই একটি এলাকা।
প্রাচীন এই মালনিয়াং রাজ্যেই উৎপত্তি হয়েছিলো জাফলং নামটির, যার মাধ্যমে আনন্দের হাট বোঝানো হতো।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
জাফলং-এর ভৌগলিক অবস্থান
এই দর্শনীয় জায়গাটির অবস্থান সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড়টি মেঘালয় সীমান্তে আলাদা করেছে বাংলাদেশ ও ভারতকে। সীমান্তবর্তী জায়গাটি পড়েছে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন নদীর অববাহিকায়।
ভারতের ডাউকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং হয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে।
জাফলং ভ্রমণের সেরা সময়
এটি এমন এক জায়গা যা প্রতি ঋতুতেই নতুন রূপে সেজে ওঠে। তবে বৃষ্টির মৌসুমে এই প্রকৃতি কন্যা নিজের সকল সৌন্দর্য্য যেন উজাড় করে দেয়। স্বচ্ছ স্রোতস্বিনীর নিচে পাথরের ছোঁয়াছুয়ি খেলা, আর সংগ্রামপুঞ্জীর মায়া দৃষ্টি ভরে নিতে চাইলে আসতে হবে বর্ষাকালে। তাছাড়া জুন থেকে অক্টোবরের এই সময়টাতে; এমনকি নভেম্বরেও পাহাড়ের সবুজটা যেন আরও বেশি করে ফুটে ওঠে।
আরও পড়ুন: মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
অন্যান্য দ্বীপদেশগুলোর মত জাঁকজমক না হলেও, বাংলাদেশের উপকূলগুলো মোটেই বঞ্চিত হয়নি প্রাকৃতিক শোভা থেকে। পৃথিবীর এই বৃহত্তম ব-দ্বীপের আঙ্গিনা সযত্নে ধুয়ে দিয়ে যায় বঙ্গোপসাগরের ফেনিল জলরাশি। সামুদ্রিক হাওয়ার পরশে পলিমাটির অলঙ্করণে যেন নিয়ত সেজে থাকে কাঁচা জীবনধারার ঘনবসতিগুলো।
২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মনপুরা চলচ্চিত্রটি ঠিক যেন এমনি এক কাদামাটি তুলে এনেছিল সাগরের বুক থেকে। তারপর চলচ্চিত্রপ্রেমি থেকে ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয় অব্দি পাড়া হতে খুব বেশি সময় লাগেনি মনপুরার। দেশের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগসূত্র না থাকলেও তারা ছুটে গেছে এই দ্বীপ সৈকতে।
চলুন, সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক এই মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।
মনপুরা নামের পটভূমি
দ্বীপের নাম কিভাবে মনপুরা হলো সে নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। স্থানীয় বায়োজ্যেষ্ঠগণের মতে, দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য্য ও উপকূলবর্তী খাবার আগন্তুকদের মন জয় করত। এ কারণেই দ্বীপ ও ইউনিয়নের নাম মনপুরা হয়েছে।
অনেকের ধারণা, মনগাজী শাহবাজপুর জমিদারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিলো বিস্তৃত এই জায়গাটি। ফলে তার নামের উপর ভিত্তি করেই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায়
এছাড়া একটি অদ্ভূত গল্পও প্রচলিত আছে এ দ্বীপকে ঘিরে। জায়গাটিতে আগে বাঘ ও হাতীর মত হিংস্র সব জন্তু-জানোয়ার বিচরণ করতো। একদা মনগাজী নামের এক লোক বাঘের আক্রমণে শিকার হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারান। সেই থেকে সবাই দ্বীপটিকে মনপুরা নামে ডাকতে শুরু করে।
দিল্লি ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
প্রাচীন সমাধি ও স্মৃতিস্তম্ভের সঙ্গে ব্যস্ত সমস্ত লোকারণ্যকে বুকে ধারণ করে দীর্ঘকাল ধরে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে আসছে ভারতের রাজধানী দিল্লি।
দেবনগরী নামে খ্যাত এই ঐতিহাসিক শহর বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগর। বেশ কয়েকটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটসহ দিল্লি এখন শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত দর্শনীয় স্থানেরও প্রাণকেন্দ্র। ফলশ্রুতিতে, পৃথিবীর নানা প্রান্তের নানান ধরণের পর্যটক তাদের স্বজাতির চিহ্নগুলো খুঁজে পান এখানে। এমনি হাজার সংস্কৃতির মিলনকেন্দ্র এবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩-এর আয়োজনে।
তাই দিল্লি দর্শনের মাধ্যমে ক্রিকেট উৎসাহীরা তাদের খেলা দেখার আনন্দকে বাড়িয়ে নিতে পারেন বহুগুনে। চলুন, এই উপলক্ষে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক দিল্লি ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন যেসব দেশে
দিল্লির ১০টি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান
ইন্ডিয়া গেট
নয়া দিল্লির রাজপথের পাশে অবস্থিত এই স্থাপনাটির আরও একটি নাম অল ইন্ডিয়া ওয়ার মেমোরিয়াল। ১৩৮ ফুট উচু ঐতিহাসিক কাঠামোটি নকশা করেছিলেন ব্রিটিশ স্থাপত্যশিল্পী স্যার এডউইন লুটিয়েন্স। শহরের এই যুদ্ধের স্মারকটিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।
এটি উৎসর্গ করা হয়েছে মুলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তৃতীয় অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধের সময় মারা যাওয়া ৮৪ হাজার ভারতীয় এবং ব্রিটিশ সৈন্যদের প্রতি। স্মৃতিস্তম্ভটির পৃষ্ঠে খোদায় করা আছে ১৩ হাজার ৩০০ জন সৈনিকের নাম।
পিকনিকে আসা দলগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায়ই এখানে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের ফেরিওয়ালারা ভীড় করে। খুব কাছাকাছিই আছে একটি মনোরম শিশু পার্ক।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম
পূর্বে ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়াম নামে পরিচিত এই ক্রিকেট ভেন্যুর প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৮৩ সাল। নয়াদিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর মার্গে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৬ নভেম্বরের ম্যাচটিতে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার।
মাঠটি দিল্লির সেরা কিছু দর্শনীয় স্থানের কাছাকাছি হওয়ায় দিল্লি ভ্রমণটা ষোলো আনা পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে। লাল কেল্লা, পুরান কেল্লা, ফিরোজ শাহ কোটলা এবং চাদনী চক এক নিমেষেই নিয়ে যাবে প্রাচীন ভারতে। দিল্লি চিড়িয়াখানা থেকে নেয়া যেতে পারে বিস্ময়কর সাদা বাঘের দর্শন।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি
সমাধিটি ১৫৫৮ সালে তৈরি করেছিলেন হুমায়ুনের প্রথম স্ত্রী মুঘল সম্রাজ্ঞী বেগা বেগম। এর নকশা করেছিলেন পারস্য স্থপতি মিরক মির্জা গিয়াস এবং তাঁর পুত্র সাইয়্যিদ মুহাম্মদ।
পূর্ব নিজামুদ্দিন রোডে অবস্থিত এই সমাধি পুরো একটি সমাধি কমপ্লেক্সের অংশ, যেখানে শায়িত আছেন আরো অনেক মুঘল শাসক। এই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম উদ্যান-সমাধি। এটিই ছিল প্রথম স্থাপনা, যেখানে বৃহৎ পরিসরে লাল বেলেপাথর ব্যবহার করা হয়েছিল।
এর পারস্য ঘরানার চারবাগ বাগান পরবর্তী মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে এক দীর্ঘ মাইলফলক স্থাপন করেছিল, যা ভারতে এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
বৃষ্টি ও ঝর্ণার মধ্যকার যোগসূত্র যতটা সহজাত, প্রাকৃতিক দৃশ্য দু’টির আকর্ষণটাও যেন ঠিক ততটাই অনিবার্য। অতি বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢল যে রূপেই হোক না কেন, পাহাড়ের কোলে বৃষ্টির স্বতঃস্ফূর্ত বিসর্জনই যেন ঝর্ণার মুক্তি।
অন্যদিকে, একসঙ্গে হোক বা আলাদাভাবে, দৃশ্য দুটোর প্রতি আদিম ভালো লাগাটা নিঃসন্দেহে অপ্রতিরোধ্য। আর এই টানেই হয়তো প্রকৃতিপ্রেমীরা নিজেদের সপে দেন ঝর্ণা বা বৃষ্টিস্নানে।
পানি প্রবাহের দিক থেকে বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত বান্দরবানের তিনাপ সাইতার যেন সেই নৈসর্গিক অবগাহনেরই নামান্তর। বিশাল জলপ্রবাহের এই বিস্ময়কর নিদর্শন নিয়েই আজকের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, ডুব দেওয়া যাক রোমাঞ্চ ও সৌন্দর্য্যের এক অপূর্ব মিথস্ক্রিয়ায়।
তিনাপ সাইতারের নামকরণ
তিনাপ সাইতার বম ভাষার দুটি শব্দ, যেখানে তিনাপ মানে নাকের সর্দি, আর সাইতার বলতে বোঝানো হচ্ছে ঝর্ণা বা জলপ্রপাত। এত সুন্দর একটি প্রস্রবণের এমন বিচিত্র নাম কেন রাখা হলো তার কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি।
তবে পাইন্দু খালের গহীনে লুকিয়ে থাকা অপার এই বুনো সৌন্দর্য্যকে স্থানীয়রা পাইন্দু সাইতার নামেও ডাকে।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
তিনাপ সাইতারের অবস্থান
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার অন্তর্গত পাইন্দু ইউনিয়নের পাইন্দু খালে অবস্থিত এই দানবাকৃতির জলপ্রপাত। এর সবচেয়ে কাছাকাছি লোকালয়ের নাম রনিন পাড়া, যেটি ঝর্ণা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে।
তিনাপ সাইতার ভ্রমণের সেরা সময়
বর্ষাকালে বৃষ্টি যত বাড়তে থাকে এই জলপ্রপাত ততই আপন মহিমায় অধিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া রৌদ্রোজ্বল দিনে এখানে পানির উপর রংধনুর খেলা দেখতে হলে বর্ষাকালই একমাত্র ভরসা। তাই অতি বৃষ্টির মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস এই জলপ্রপাত দেখার সেরা সময়।
কিন্তু এর সঙ্গে দুর্গম পিচ্ছিল পাহাড়ি পথ আর কোমড় সমান পানির পাইন্দু খাল পেরোবার ধকল সামলাতে হবে। একদিকে মেঘলা রোদে ঘামে ভেজা শরীর, অন্যদিকে বৃষ্টির জন্য ঠাণ্ডা বাতাসের সুরসুরি। সেই সঙ্গে জোঁকের উৎপাতে শরীরকে টেনে নিয়ে চলাটা দায় হবে। তাই সাঁতার না জানলে আপাতত পাইন্দু খাল অতিক্রমটা এড়িয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝর্ণা: যাওয়ার উপায় ও ভ্রমণ খরচ
গন্তব্য যখন ঝর্ণা দেখা, তখন সেখানে স্বভাবতই চলে আসে পাহাড়ের গহীনে গুপ্ত কোনও প্রাকৃতিক শোভা আবিষ্কারের নেশা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দুর্গম ঝিরিপথ পেরোবার দুঃসাহস এবং ধৈর্য্য। এই পাহাড়ী পথ প্রথমবারের মত আগত যে কোনও ভ্রমণকারিকে বিভ্রমে ফেলে দিতে যথেষ্ট। কেননা সবেমাত্র পা রাখা পর্যটক এখনও জানেন না যে ঠিক কতগুলো বাঁক ঘুরে শেষ হবে এই পিচ্ছিল পথ। এই রোমাঞ্চের পুরোটাই অকৃপণভাবে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশের ঝর্ণা রানি খৈয়াছড়া ঝর্ণা। আজকের নিবন্ধটি দেশের এই সবচেয়ে বেশি ঝিরিপথের অন্যতম বৃহৎ জলপ্রপাতটি নিয়ে। চলুন, এই ভয়ঙ্কর সুন্দরকে আলিঙ্গন করার ভ্রমণে নেমে পড়া যাক।
খৈয়াছড়া ঝর্ণার ইতিহাস
খৈয়াছড়ার এই বিশাল প্রস্রবনের ইতিহাস প্রায় ৫০ বছরের। ঘন ঝোপ-ঝাড়ে ভরা ও দুর্গম হওয়ায় এই এলাকায় মানুষের পদচিহ্ন পড়তে অনেক সময় লেগেছে। এরপরেও কোনও এক সময় হয়ত প্রকৃতির খেয়ালেই পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এই ঝর্ণার।
বারৈয়াঢালা ব্লক থেকে শুরু করে কুণ্ডের হাট পর্যন্ত এলাকাটি বর্তমানে বড়তাকিয়া ব্লক নামে পরিচিত। এর ২৯৩৩.৬১ হেক্টরের পাহাড়ী জমিকে ২০১০ সালে ঘোষণা করা হয় সরকারী জাতীয় উদ্যান হিসেবে। সে সময় এই উদ্যানেরই প্রধান প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় এই জলপ্রপাতটি।
স্থানীয়রা এই ঝর্ণাকে চতল বলে ডাকে।
২০১৭ সালে সরকার এই ঝর্ণার সংরক্ষণের লক্ষ্যে ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকা ছিলো চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের রামগড়, সীতাকুন্ড ও রিজার্ভ ফরেস্ট।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলার নায়াগ্রাতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলার নায়াগ্রাতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
দুর্গম পাহাড়ের ঝর্ণাধারা কঠিন ও কমনীয়তার এক অকৃত্রিম মিথস্ক্রিয়া। এমন নৈসর্গিক দর্শন নিমেষেই ভোলাতে পারে যে কোনো পাহাড়চারীর মন। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকার সময় প্রস্রবণগুলো গুনতে যেয়ে খেই হারাতে হয় এর মোহনীয়তার কারণে। এরপরেও বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাতগুলোর তালিকায় নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছে। আজকের প্রবন্ধটি এই নাফাখুম ঝর্ণাকে নিয়েই। চলুন, দেখে নেওয়া যাক কতটুকু রোমাঞ্চের পর দেখা পাওয়া যায় এই অমিয়ধারার।
নাফাখুম ঝর্ণার নামকরণ
এই ঝর্ণার নামকরণের কথা বলতে হলে প্রথমেই বলতে হবে রেমাক্রি নদীর কথা। এই নদীতে নাফা নামে এক ধরনের মাছ আছে, যেটি সবসময় স্রোতের বিপরীত দিকে চলে। এভাবে চলতে যেয়ে মাছগুলো লাফিয়ে ঝর্ণা পার হওয়ার সময় এদের কাপড় বা জালে আটকে ফেলে স্থানীয় আদিবাসীরা।
এই আদিবাসীদের বসতবাড়িগুলো দেখা যায় সবুজে ঘেরা পাহাড়ের আনাচে-কানাচে। পাহাড়ের ঢালে টিন আর বেড়া দেওয়া ঘরগুলোকে মারমা ভাষায় ‘খুম’ বলা হয়, যার অর্থ জলপ্রপাত। আর এভাবেই নাফা আর খুম শব্দ দু’টি মিলে ঝর্ণার নাম হয়েছে নাফাখুম।
আরও পড়ুন: নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
নাফাখুম জলপ্রপাতের অবস্থান
জলপ্রপাতের জায়গাটি পড়েছে বান্দরবান জেলার অন্তর্গত থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে। থানচি বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দূরে।
থানচি বাজারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী, যেটি রেমাক্রি থেকে থানচির দিকে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে গেছে। নদীপথে কিছুদূর পর পর ১ থেকে ২ ফুট; এমন কি কোনো কোনো জায়গায় ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্তও ঢালু। এই পথে নৌকা বেয়ে উপরে ওঠার সময় দুপাশের সবুজে মোড়ানো উঁচু পাহাড়গুলো চোখে পড়ে। এগুলোর কোনো কোনোটা এতটাই উঁচু যে, দেখে মনে হয় সেগুলোর চূড়া হারিয়ে গেছে মেঘের উপরে।
উপরে রেমাক্রি মুলত একটি মারমা অধ্যুষিত এলাকা। সেখান থেকে তিন ঘণ্টা হেঁটে গেলেই পাওয়া যায় জলপ্রপাতের দর্শন।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ: গাজীপুরে রোমাঞ্চকর ক্যাম্পিং
শুধুমাত্র শহুরে যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকুতি নয়, রোমাঞ্চের জন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড দুঃসাহস। একঘেয়েমি ভাব কাটিয়ে অদম্য অনুশীলনে কতটুকু আত্মনিয়োগ করা যাবে তারও কড়া হিসাব করতে হয়।
নিদেনপক্ষে ভ্রমণটা যদি কোনো দুর্গম জায়গায় হয়। কিন্তু ঢাকার গাজীপুরের বেস ক্যাম্প মোটেই তেমন দুঃসাধ্য এলাকা নয়, যাকে জয় করার দরকার হয়। রোমাঞ্চ প্রেমিদের উদ্দেশ্য করে এই জায়গাটিকে এমন রূপ দেওয়া হয়েছে যেন তারা সব ধরনের আউটডোর অ্যাক্টিভিটিগুলো করতে পারে। চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ সম্পর্কে।
দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ উদ্যোগের সূত্রপাত
দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ ধারণাটি তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দনের মস্তিষ্ক প্রসূত। সবুজ বন, রিসোর্ট, লেক, খাবার; অবকাশ যাপনের এই পুরনো উপাদানগুলোর সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন আউটডোর অ্যাক্টিভিটির সুযোগ। এতে শুধু নির্মল বিনোদনই মিলবে না, সঙ্গে শরীর চর্চাটাও হয়ে যাবে।
এই লক্ষ্য নিয়েই ২০১৩ সালে গাজীপুরের শফিপুরে তিনি গড়ে তোলেন দেশের এই প্রথম আউট ডোর একটিভিটি ক্যাম্প।
আরও পড়ুন: মানা বে: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রিমিয়াম ওয়াটার পার্ক
দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশে যেসব অ্যাক্টিভিটি করা যায়
বেস ক্যাম্পের শুরুতেই আছে বিশাল পার্কিং এলাকা; সঙ্গে অবারিত সবুজ মাঠ। এই মাঠ থেকেই শুরু হয় অন ট্রি ও অন গ্রাউন্ডের রোমাঞ্চকর সব চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি অ্যাক্টিভিটিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে সঙ্গে থাকেন অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টার।
অধিক উদ্দীপনার শক্ত অ্যাক্টিভিটিগুলো হলো- অন ট্রি কোর্স (যেখানে ৯ টি বাধা পেরোতে হয়), অন গ্রাউন্ড কোর্স (যেখানে ৮ টি বাধা পেরোতে হয়), এবং কাদা পথ (যেখানে রয়েছে ৭ টি বাধা)।
সাইক্লিং, টায়ার পাস, মাঙ্কি পাস, টায়ার স্যান্ডউইচ, রোপ ট্রেঞ্চ, জিপ লাইনিং, রোপ ওয়াক, ও বোটিং নিয়ে পূর্ণ হয় অন গ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি।
এছাড়াও রয়েছে টিম বিল্ডিং গেম, ক্যাম্প ফায়ার, বার বি কিউ পার্টি ও পটার মেকিং। বাচ্চাদের স্পেশাল জোনের পাশাপাশি তাদের জন্য আছে ট্রামপোলিন ও কারপেন্ট্রি প্রশিক্ষণ।
স্পোর্টসের মধ্যে আছে- ওয়াটার ফুটবল, ওয়াটার জর্বিং, তীর-ধনুক, ফুটবল, হিউম্যান ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, এবং ইনডোর বোর্ড গেম।
এগুলোর সঙ্গে ট্রি হাউজ, ট্র্যাকিং আর ফিশিং-এর ব্যবস্থা আর তাবুতে রাত্রি যাপন পুরোপুরি বনভোজনের সাধ পুরণ করবে।
এই অ্যাক্টিভিটিগুলোর বেলায় কিছু কিছু শারীরিক অসুস্থতা থাকলে ইন্সট্রাক্টরকে তা আগেই জানিয়ে রাখতে হবে। যেমন: উচ্চতা ভীতি, অ্যাজমা বা হৃদরোগ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের অসুস্থতা।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা ১০ মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত