বিএনপি
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে: বিএনপি
বিএনপির সিনিয়র নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমগ্র গণতান্ত্রিক বিশ্ব এখন বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সমগ্র বিশ্বের বিবেক এখন বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে রয়েছে। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকামী সব দেশই মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’
শুক্রবার এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা বলেন, সম্প্রতি ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন একটি বার্তা দিয়েছেন যে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তাকে (মোমেন) গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত না রাখার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে সেদিকে কড়া নজর রাখার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ডা. জাফরুল্লাহ অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন: বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খসরু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশ সরকারকে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে বলেছে।
ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশের পরিবর্তে বিশ্ব সম্প্রদায় ও গণতন্ত্রকামী দেশগুলো কেন শুধু বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সামনে আমরা কীভাবে অপমানিত হয়েছি তা প্রকাশ পেয়েছে।’
এর আগে সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে তারা বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সিলেট বিভাগীয় জাতীয়তাবাদী ছাত্র ফোরাম ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান ও নিরাপদে ফেরার দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে চায় সরকার: বিএনপি
সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মহাখালী রেলক্রসিং থেকে জোরপূর্বক গুম করা হয় বলে জানা গেছে।
খসরু বলেন, গুম, মিথ্যাচার ও মিথ্যা ও ভুতুড়ে মামলার রাজনীতি করে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে বর্তমান সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ তাদের (আওয়ামী লীগ সরকারকে) রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে… বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদও দূর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
আরও পড়ুন: পাঁচ সিটি নির্বাচনে সরকারের ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি: ফখরুল
ডা. জাফরুল্লাহ অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন: বিএনপি
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের (জিএসকে) প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার।
বুধবার এক শোক বার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের নায়ক ডা. জাফরুল্লাহ জাতি, দেশ ও জনগণের কল্যাণে সারা জীবন কাজ করে গেছেন।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় বিএনপি ও এলডিপির ২৬ নেতাকর্মী কারাগারে
বিএনপি নেতা স্মরণ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের জন্য মাঠ হাসপাতাল এবং স্বাধীনতার পর স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ডা. জাফরুল্লাহ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়ন এবং সমাজ সংস্কার ও অগ্রগতিতেও এই মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।
ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রের সব সংকটে তিনি নির্ভীক সৈনিক হিসেবে এগিয়ে এসেছিলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে এবং আওয়ামী সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং দল কর্তৃক জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন।
তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং জাফরুল্লাহর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা: নাটোরে আ.লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে চায় সরকার: বিএনপি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে চায় সরকার: বিএনপি
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও ক্ষমতা দখলের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ব্যবহার করে জনগণের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার জন্য সরকার ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার এক সেমিনারে বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি ডিএসএ বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান কারণ এটি এখন জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
ফখরুল বলন, ‘সরকার বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতায় বসতে এ ধরনের আইন করেছে। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। তারা এই আইন করেছে যাতে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে এবং নির্বাচনের আগে তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারে।’
বিএনপি নেতা বলেন, দেশের নাগরিকদের কথা বলতে ও অভিযোগ জানাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিএসএ ’র অপব্যবহার করে লিখতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারও ডিএসএ এবং অন্যান্য 'কালো' আইন ব্যবহার করে তাদের বিরোধীদের সম্পূর্ণভাবে দৌড়ের বাইরে রেখে নির্বাচনের বাধা অতিক্রম করতে চায়।
ফখরুল বলেন, ‘সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে। সবার আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। এটা এখন দেশ ও জনগণের দাবি।’
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক পরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।
কয়েকজন ব্যক্তি যারা ডিএসএ এবং আইসিটি আইনের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে তারাও সেমিনারে তাদের দুঃসহ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলেছেন।
ফখরুল বলেন, সরকার ডিএসএসহ আরও অনেক আইন করেছে যাতে দেশের নাগরিকরা কথা বলতে ভয় পায়।
তিনি বলেছিলেন যে ১৯৮৪ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্র রয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে যে কীভাবে উত্তর কোরিয়ায় তার নাগরিকদের ভয় দেখিয়ে এবং সেই জাতিকে দাসত্ব করার জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে রাখা এবং তার ও আরও অনেক সাংবাদিক ভাইয়ের বিরুদ্ধে ডিএসএ মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এর প্রতিফলন শুরু হয়েছে।’
বিএনপি নেতা বলেন, সরকার অনেক সাংবাদিক ও সাইবার কর্মীকে জেলে, নির্যাতন ও গুম করেছে।
আরও পড়ুন: সরকার দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে: ফখরুল
র্যাবের ওপর ডয়চে ভেলের একটি তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার নেওয়া নাফিজ মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করার জন্যও তিনি সরকারের নিন্দা জানান৷
ফখরুল বলেন, পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা মামলায় নাফিজকে মদসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ‘এটা তাদের (সরকার) পুরনো অভ্যাস। এটা তাদের অস্ত্রও বটে। তাদের কাছে এরকম অনেক অস্ত্র আছে এবং তারা সেই অস্ত্রগুলোকে একের পর এক ব্যবহার করে
নাগরিকদের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এবং এভাবে তারা নিজেদের মতো করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে।’
তিনি বলেন, বিচার বিভাগে ন্যায়বিচার পাওয়া এখন ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রশাসনকে পুরোপুরি রাজনীতিকরণ করা হয়েছে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার একটি অনির্বাচিত, অবৈধ ও দখলদার সরকার। ‘এটি সম্পূর্ণরূপে একটি দখলদার শাসন হিসাবে কাজ করছে এবং দেশকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করছে এবং একটি গণতন্ত্রপ্রিয় জাতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের গণতান্ত্রিক আত্মাকে ধ্বংস করে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ করেছে।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্রের আড়ালে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং গণমুখী সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার বিকল্প নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা-১৯৪৮-এর পরিপন্থী হওয়ায় ডিএসএ প্রত্যাহার করতে হবে।
আরও পড়ুন: বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি: খুলনায় বিস্ফোরক আইনে ২২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
মূল প্রবন্ধে আসাদুজ্জামান বলেন, ডিএসএ নিঃসন্দেহে একটি বিতর্কিত আইন যা সরকারের ভিন্নমত ও রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘এই আইনের প্রয়োগ শুধুমাত্র নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকেই প্রভাবিত করে না বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেও প্রভাবিত করে যা আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো।’
তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন যে ডিএসএ অবিলম্বে বাতিল করা উচিত, যাতে নাগরিকদের সুরক্ষা এবং তাদের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষা করা উচিত নয়, গণতন্ত্র নিশ্চিত করা এবং ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধার করাও।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব সাইফুল হক, জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক লুৎফর রহমান।
আরও পড়ুন: পাঁচ সিটি নির্বাচনে সরকারের ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি: ফখরুল
পাঁচ সিটি নির্বাচনে সরকারের ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি: ফখরুল
চলতি বছরের জুনের মধ্যে পাঁচটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকে সরকারের ফাঁদ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের দল এই চক্রান্তে প্রলুব্ধ হবে না।
তিনি বলেন, ‘এবার জনগণ ও বিএনপি সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবে না...আমরা তাদের ফাঁদ উল্টে দেব।’
সোমবার রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় এই বিএনপি নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সংসদ নির্বাচন হতে পারে না এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, এই স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে তাদের দল আন্দোলনে রয়েছে।
ফখরুল আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না।
নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি এক বৈঠকে বরিশাল, গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট- এই পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাটোর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনকে দেখতে ডেল্টা কেয়ার হাসপাতালে যান ফখরুল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ‘এখন যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে দেখবেন আওয়ামী লীগ ত্রিশটি আসনও পাবে না। এটাই বাস্তবতা।’
এই বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, মিথ্যা মামলা এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি নস্যাৎ করে ক্ষমতায় বসতে চায়।
বর্তমান সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ফখরুল বলেন, নাটোরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা আবুল হোসেনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করে। ‘আসলে পুলিশ তাকে উদ্ধার না করলে তাকে হত্যা করা হতো। তারা (আ.লীগ ক্যাডার) তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।’
তিনি বলেন, নাটোরে বারবার এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। তারা শুধু নাটোরে নয়, খুলনা, হবিগঞ্জ ও যশোরসহ সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ‘ক্যাডাররা’ পুলিশের সহায়তায় শনিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের দলের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মূলত একটি সন্ত্রাসী দল এবং বর্তমান সরকার পুরোপুরি সন্ত্রাসী শাসনে পরিণত হয়েছে। দেশের জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এর যোগ্য জবাব দেবে।’
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি: খুলনায় বিস্ফোরক আইনে ২২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
বিএনপির খুলনার ফুলতলা উপজেলা শাখার আহ্বায়কসহ ২২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। শনিবার সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
এর আগে শনিবার সারাদেশে শহর, থানা ও উপজেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক গাজী আব্দুল হকের নেতৃত্বে জামিরা রোডে জড়ো হন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এ সময় তাদের কর্মসূচি পালনের অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয় বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে পুলিশের দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মো. রাশেদসহ বিএনপির ৯ জন নেতাকর্মী জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
রবিবার দুপুরে তারা কারাগার থেকে ছাড়া পান।
আরও পড়ুন: নাটোরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে আ.লীগের হামলায় কর্মসূচি পণ্ড
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি: ঢাকার রাজপথে জড়ো হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা
সরকার দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে পরিকল্পিতভাবে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করছি যে এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বিনা উসকানিতে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে হামলা ও বাধা দিয়ে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।’
রবিবার এক আলোচনা সভায় এই বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দল এ পর্যন্ত সকল বাধা-বিপত্তি ও দমনমূলক কর্মকাণ্ডকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে তাদের চলমান আন্দোলনের সকল কর্মসূচি পালন করে আসছে।
আওয়ামী লীগ সব সময় সংবিধান মেনে চলার কথা বলে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, সংবিধানে বিরোধীদের কথা বলার ও প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কেন আমরা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারি না? সরকার কি রাষ্ট্র নাকি ঈশ্বর? সরকার ঈশ্বর নয় (যে আমরা এর সমালোচনা করতে পারি না)।’
ক্ষমতাসীন দল গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘তারা (যারা ক্ষমতায় আছে) একাই কথা বলবে এবং সবাইকে দাসের মতো তাদের কথা মেনে চলতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা হতে দেবে না।’
গত মাসে নওগাঁয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে র্যাব হেফাজতে মুত্যুর প্রতিবাদে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।
ফখরুল বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনকে অবৈধভাবে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে এটা হতে পারে না। এটা আইন ও সংবিধানের চরম লঙ্ঘন।’
তিনি আরও বলেন, জেসমিন হত্যার ঘটনাকে ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই। ‘এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন করে এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়।’
সরকারের উচ্চপদস্থদের নির্দেশে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা দমন-পীড়ন ও গণহত্যায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অন্যায়ের কথা যারা বলে এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার সরকার ক্রমবর্ধমান হারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ব্যবহার করে তাদের দমন করছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক ভাই ও সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে এই আইনের প্রতিবাদ করে আসছি। কিন্তু তারা (সরকার) এটা করবে না (এটি বাতিল বা সংশোধন)।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার সরকারকে ডিএসএ সংস্কার এবং এর দুটি ধারা বাতিল করার আহ্বান জানালেও আইনমন্ত্রী তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার দমনমূলক আইন ব্যবহার করে জনগণের কথা বলার অধিকার এবং প্রতিবাদের অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নিতে চায় বলে ডিএসএ বাতিলের করছে না।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সত্য প্রকাশের জন্য অনেক সাংবাদিককে ডিএসএ-এর অধীনে করা মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছে সরকার: ফখরুল
শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সরকার বিএনপিকে সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আজ(শনিবার) ৫৫০টি থানা ও উপজেলায় আমাদের অবস্থান কর্মসূচি ছিল এবং প্রায় সর্বত্র পুলিশ বাধা দেয়। ঢাকা মহানগরীতে, প্রায় সব নির্ধারিত স্থানে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি।’
এক ইফতার পার্টিতে বক্তব্যে বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতার উস্কানিনিতে সাড়া না দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোট ও অন্যান্য অধিকারের জন্য আন্দোলন করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘এটা এখন প্রমাণিত হয়েছে যে সরকার সহিংসতা চালাচ্ছে। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ আমাদের উস্কানি দিয়ে অন্য পথে নিয়ে যেতে চায়।’
শনিবার রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার লেডিস ক্লাবে ইফতারের আয়োজন করে ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ (শনিবার) সারাদেশের সব উপজেলা ও থানায় ১০ দফা দাবি আদায়ে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা ছিল বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সর্বব্যাপী দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে দলের প্রতিবাদ করার জন্য এই কর্মসূচি পালন করে দলটি।
ফখরুল দাবি করেন, কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তাদের দলের প্রায় ৫০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে আমাদের কর্মসূচিতে হামলা করছে। এটা একটা কাপুরুষোচিত শাসন যা মানুষকে ভয় পায়। তাই তারা জনগণকে কোনো সমাবেশ করতে দেয় না। তারা জনগণের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না।’
বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দলের ১৭ নেতাকর্মীকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য রাস্তায় নেমে কয়েক হাজারকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে আ.লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সন্দেহ ফখরুলের
ফখরুল বলেন, সময় এসেছে পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের জনগণ ও তাদের অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তোলার।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘কেউ এখন বলছে না বাংলাদেশ খুব ভালো, বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। গতকাল (শুক্রবার) সংসদে বিদায়ী ভাষণে তাদের (আ.লীগ) নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কিছু সত্য কথা বলেছেন। তিনি প্রথম কথাটি বলেছিলেন, গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন কখনোই সর্বজনীন হতে পারে না। এটা আমরা বারবার বলে আসছি।’
রাজনীতিতে ভদ্রতা ও সহনশীলতার গুরুত্ব সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বক্তব্যের প্রশংসাও করেন ফখরুল। ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি)ও (রাজনৈতিক দলগুলোকে) সংঘাত ভুলে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু যে দল থেকে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন সেই দল গণতন্ত্র ছাড়াই উন্নয়নের নামে লুটপাটের মাধ্যমে দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও জনমতের প্রতি সহনশীলতার অভাব রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশৃঙ্খলা এড়াতে জাতীয় নির্বাচনের আগে দাবি মেনে নিন: ফখরুল
বিশৃঙ্খলা এড়াতে জাতীয় নির্বাচনের আগে দাবি মেনে নিন: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকারকে সহিংসতা ও সংঘাত এড়াতে হলে বিরোধী দলগুলোর দাবি মানতে হবে।
শনিবার গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেনে।
গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে উন্নয়ন কখনোই সর্বজনীন হতে পারে না রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এমন মন্তব্যের প্রশংসাও করেন ফখরুল।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘সরকার যদি সংঘাত এড়াতে চায় এবং এগিয়ে যেতে চায়, তাহলে প্রথমেই বিরোধী দলগুলোর দাবি পূরণ করতে হবে। অন্য কথায়, পদত্যাগ করতে হবে, আলোচনার পথ প্রশস্ত করতে হবে।’
ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে তারা সব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, তাদের দল সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রেখে ২০১৮ সালের নির্বাচনে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু তারা ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হয়েছিল।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্স থেকে বিএনপির ২০ নেতাকর্মী আটক
বিএনপি নেতা বলেন, দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আলোচনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের দল ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপে বসবে না। ‘তাদের (সরকার) বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না। প্রথমে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে এবং তারপর সংলাপের পদক্ষেপ নিতে হবে।’
জাতীয় আইনসভার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংসদে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্মারক ভাষণের প্রতি প্রতিবেদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ফখরুল বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে তার তেমন ক্ষমতা নেই। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না।’
তিনি স্মরণ করেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তাদের দল যখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, তখন রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ‘কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি আমাদের কোনো প্রস্তাবই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তার সেই ক্ষমতা নেই।’
ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি সংসদে সরকারের ঐতিহ্যগতভাবে লিখিত ভাষণ পড়ে শোনান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলি যে ব্যক্তিগতভাবে আমি একটি জিনিস পছন্দ করি, কারণ তিনি বলেছিলেন যে গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন সর্বজনীন নয়। এটা আরেকটি ভালো কথা তিনি বলেছেন, সংঘাত ও প্রতিহিংসার মাধ্যমে কখনও গণতন্ত্র চর্চা করা যায় না। এই শব্দগুলো ভাল।’
আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের চর্চা না করে ধ্বংসের চেষ্টা করছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন ফখরুল।
সহিংসতা এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার কোনো সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
বিএনপি নেতা বলেন, বর্তমান সংসদ সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ জনসমস্যার আলোচনা হয় না। ‘একজন ব্যক্তি সেখানে সর্বেসর্বা। এটি একটি অনির্বাচিত সংসদ।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবাজার মার্কেট নিয়ে সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে: ফখরুল
সাম্প্রতিক বঙ্গবাজার মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে ফখরুল বলেন, সরকার ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সেবা করার উপযোগী নয়। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকায় তারা অনিয়মে লিপ্ত হয়।’
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন, সরকারের পদত্যাগসহ তাদের ১০ দফা দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলন জোরদার করার কৌশল নিয়ে তারা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে আ.লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সন্দেহ ফখরুলের
শনিবার সব উপজেলা ও থানায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে শনিবার সারাদেশের সব উপজেলা ও থানায় দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের প্রতিবাদ জানানোর জন্যও এই কর্মসূচি।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, দলের সিনিয়র নেতাদের অংশগ্রহণে সারাদেশের সব উপজেলা ও থানায় বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিনি জানান, কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন উপজেলায় গেছেন।
রাজধানীতে টিপু বলেন, ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপি ২৬টি থানায় এবং দলের ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখা ২৪টি থানায় কর্মসূচি পালন করবে।
বিএনপি ছাড়াও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি শনিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর পান্থপথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলে দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে সরকার ব্যর্থ: ফখরুল
এর আগে গত ১ এপ্রিল বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন ও সমমনা দলগুলো ১০ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সব বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি ও সমমনা দল ও জোট বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে।
এ পর্যন্ত তারা ১০ দফা দাবি আদায়ে দেশের সব ইউনিয়ন, জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
এছাড়া গত ২৮ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর পাঁচটি এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন বিএনপির ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন: বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে আ.লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সন্দেহ ফখরুলের
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে আ.লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সন্দেহ ফখরুলের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা জমি দখলের জন্য বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবাজার মার্কেট দখলের চেষ্টা করছে। সত্যিকার নিরপেক্ষ তদন্ত হলে জানা যাবে এই ঘটনা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে।’
শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারর্সনের গুলশান কার্যালয়ে ১২ দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তাদের দল সত্য উদঘাটনের জন্য ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চায়।
মার্কেটের আগুনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সম্পৃক্ততার বক্তব্যের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ঘটনার একদিন পরই বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা বলা শুরু করেছে সরকার।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে এক বিশাল অগ্নিকাণ্ড ঘটে এবং এটি আশেপাশের কয়েকটি বাজারে ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক হাজার দোকান, প্রধানত তৈরি পোশাক এবং জুতার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বিএনপি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে রাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে সরকার ব্যর্থ: ফখরুল
বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন বৈধ হবে না
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার আগের মতো ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো মঞ্চ-পরিচালিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি সরকার আগের মতোই একতরফা নির্বাচন করতে চায়। এ কারণে তারা জাতিসংঘের প্রস্তাব (আগামী জাতীয় নির্বাচনে সহযোগিতার জন্য) প্রত্যাখ্যান করেছে।’
এর আগে সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিণত এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতিসংঘের সাহায্য নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি ও জোটের শরিকরা নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচনের কোনো বৈধতা থাকবে না। এ কারণেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার গতকাল (বৃহস্পতিবার) বলেছেন, প্রধান দলগুলো অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দার জানান, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে তারা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আগামী দিনে তারা আন্দোলন আরও জোরদার করবেন এবং সফল করবেন।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবাজার মার্কেট নিয়ে সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে: ফখরুল
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মধ্যে কোনো দুর্বলতা নেই: ফখরুল