হামলা
আল্লাহ হয়তো আমাকে সাহায্য করছেন: হামলায় বেঁচে যাওয়া প্রসঙ্গে এএনআইকে শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা হত্যা করেছিল তাদের দৃষ্টি এড়াতে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে দিল্লির পান্ডারা রোডে একটি ভিন্ন পরিচয়ে বসবাস করতেন।
এই ঘটনার প্রায় পাঁচ দশক পরে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই) দেয়া এক সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী তার এ ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
১৯৭৫ সালে খুব অল্প সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী বর্ণনা করেন হাসিনা। যখন তিনি তার পরমাণু বিজ্ঞানী স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে জার্মানিতে যান।
১৯৭৫ সালের ৩০শে জুলাই শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে বিদায় দিতে তার পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দরে এসেছিলেন। এটা একটা সুখকর বিদায় ছিল এবং শেখ হাসিনার কোনো ধারণা ছিল না যে এটাই বাবা-মায়ের সঙ্গে তার শেষ দেখা হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে থাকায় আমি একই বাড়িতে (আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে) থাকতাম। সেদিন সবাই সেখানে ছিল: আমার বাবা, মা, আমার তিন ভাই, দুই ভাইয়ের স্ত্রী। তারা আমাদের বিদায় দিতে বিমানবন্দরে এসেছিলেন... সেটাই ছিল শেষ দিন, আপনারা জানেন।’
পনেরো দিন পরে ১৫ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনা এমন খবর পান, যা তার জন্য বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। তার পিতার মৃত্যুর খবরেই ভয়াবহতা থামেনি, এরপর একে একে তিনি তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মৃত্যুর কথা জানতে পারেন।
শেখ হাসিনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল। অবিশ্বাস্য যে কোনো বাঙালি এটা করতে পারে। কিন্তু তখনও আমরা জানতে পারিনি কিভাবে, আসলে কি ঘটেছে। আমরা শুধুমাত্র জানতে পারি যে একটি অভ্যুত্থান হয়েছিল এবং তারপরে আমরা শুনেছিলাম যে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানতাম না যে পরিবারের সকল সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমদিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া দেশগুলোর মধ্যে ভারত একটি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিসেস ইন্দিরা গান্ধী অবিলম্বে খবর পাঠিয়েছিলেন যে তিনি আমাদের, মানে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে চান। আমরা আশ্রয়ের প্রস্তাব পেয়েছি... বিশেষ করে যুগোস্লাভিয়া থেকে মার্শাল টিটো ও মিসেস গান্ধীর কাছ থেকে। আমরা সেখানে (দিল্লি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ আমরা ভেবেছিলাম যে আমরা যদি দিল্লি যাই, সেখান থেকে আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারব। এবং তারপরে আমরা জানতে পারব পরিবারের কতজন সদস্য এখনও বেঁচে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘এটি একটি খুব কঠিন সময় ছিল।’
তিনি আরও বলেন, জার্মানিতে নিযুক্ত তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীই প্রথম ব্যক্তি যিনি তার পরিবারের গণহত্যার বিবরণ দেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কয়েক মুহুর্তের জন্য, আমি জানতাম না আমি কোথায় আছি। কিন্তু আমি আমার বোনের কথা ভেবেছিলাম... সে আমার থেকে ১০ বছরের ছোট। তাই, আমি ভাবলাম সে এটা কিভাবে নেবে। এটা তার জন্য খুব কঠিন ছিল... দিল্লিতে, প্রথমে, তারা আমাদেরকে সমস্ত নিরাপত্তাসহ একটি বাড়িতে রেখেছিল, কারণ তারাও আমাদের নিয়ে চিন্তিত ছিল।’
তিনিও সম্ভাব্য (হত্যার) টার্গেট বলে মনে করেন কিনা জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, যারা তার বাবাকে হত্যা করেছে, তারা অন্য আত্মীয়দের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে এবং তার আত্মীয়দের কয়েকজনকে হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিহত ১৮ জন সদস্যের মধ্যে বেশিরভাগই আমার আত্মীয়, কিছু গৃহকর্মী ও তাদের সন্তান এবং কিছু অতিথি নিহত হন।
ষড়যন্ত্রকারীদের স্পষ্ট লক্ষ্য ছিল- বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ যেন আর ক্ষমতায় না আসে।
তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর...তারা তাকেও রেহাই দেয়নি। আমরা যখন দিল্লিতে ফিরে আসি, তখন সম্ভবত ২৪শে আগস্ট… তখন আমি প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীর সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাদের ডাকলেন... সেখানে আমরা জানতে পারলাম কেউ বেঁচে নেই। তিনি আমার স্বামীর জন্য একটি চাকরি এবং এই পান্ডার রোডের বাড়ির জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন। আমরা সেখানেই থাকলাম।
‘প্রথম ২-৩ বছর এটা মেনে নেয়া খুব কঠিন ছিল। আমার বাচ্চারা, আমার ছেলের বয়স ছিল মাত্র চার বছর। আমার মেয়ে, সে ছোট ছিল… দুজনেই কাঁদত। তারা আমার মা, আমার বাবার কাছে ফিরে যেতে চাইতো এবং তারা এখনও আমার ছোট ভাইকে সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে’, আর যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এত কিছু হারিয়ে গেলেও, হাসিনাও বুঝতে পেরেছিলেন যে তাকে আগামীর কথা ভাবতে হবে।
এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এই অপরাধ, তারা শুধু আমার বাবাকে হত্যা করেনি, পরো জাতিকে তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকেও দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সব কিছু, শুধু এক রাতে, সবকিছু বদলে গেল। এবং সেই খুনিরা... তারা এখনও আমাদের তাড়া করছে। আমরা কোথায় ছিলাম তারা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিল, তাই আমরা যখন পান্ডারা রোডে থাকতাম, তখন আমাদের নাম পরিবর্তন করতে হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবং আপনি নিজের নাম, নিজের পরিচয় ব্যবহার করতে পারছেন না এটা খুবই বেদনাদায়ক ছিল।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি আমার দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এত বড় দলের দায়িত্ব নেয়ার কথা আমি কখনও ভাবিনি।’
সেসময় শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন এবং এমনকি ১৯৮০ সালের ১৬ই আগস্ট লন্ডনে একটি জনসভায় দেয়া ভাষণে তিনি তার বাবার খুনিদের শাস্তির দাবি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের বিচারের আওতায় আনা বা তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য, যাতে তারা বিচারের আওতায় আসে, কারণ তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছিল। একটি অধ্যাদেশ ছিল... খুনিরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং দায়মুক্তি পেয়েছে... তারা দাবি করেছিল যে হ্যাঁ, তারা এই অপরাধ করেছে এবং তারা খুব সোচ্চার ছিল। কারণ তারা ভেবেছিল তারা খুব শক্তিশালী।’
সে সময় তিনি অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার ক্যাম্পেইন চালিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘একদিকে আমরা সবাইকে হারিয়েছি, অন্যদিকে আমি বিচার চাইতে পারি না। ন্যায়বিচার করা হচ্ছিল না। তাই এমন অবস্থা হয়েছিল। তারপর আবার, ১৯৮০ বা ৮১’র দিকে আমি দিল্লিতে ফিরে আসি।’
শেখ হাসিনা বলেন, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছিল। ‘আওয়ামী লীগের একটি সম্মেলন হয়েছিল, এবং সে সময় তারা আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে দলের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।’
আরও পড়ুন:নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনে অতিরিক্ত খাদ্য আমদানির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
তিনি জানান, অবশেষে তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে আবার দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শীর্ষস্থানে পৌঁছেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা আমাকে বেশ কয়েকবার হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমি বেঁচে গিয়েছি। দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। আমি জানি না কিভাবে বেঁচে গেলাম। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা আমাকে ঢেকে দিয়েছে, মানব ঢাল বানিয়েছে, তাই তাদের গাঁয়ে সব স্প্লিন্টার ঢুকেছে কিন্তু আমি... আমি বেঁচে গেছি... তারা আমার মিটিংয়ে একটা বিশাল বোমা রেখেছিল... কোনোরকমে এটা আবিষ্কৃত হলো... তাই, আমি আবার বেঁচে গেলাম। আমি জানি না... আল্লাহ হয়তো আমাকে সাহায্য করছেন, হয়তো আল্লাহ আমাকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন পালনের জন্য।’
আরও পড়ুন:রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত জয় ও দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে: প্রধানমন্ত্রী
যুবদলকর্মী শাওন হত্যা মামলা: আসামি ৫ হাজার!
নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যকার সংঘর্ষে গুলিতে যুবদলকর্মী শাওন এর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিহতের ভাই মিলন প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মুঠোফোনে বলেন, ‘নিহতের বড়ভাই মিলন প্রধান বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো। ’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকালের শোভাযাত্রা থেকে পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর ও যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, এর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুইটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান।’
মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, অজ্ঞাতনামাদের কথা উল্লেখ রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের খুঁজে বের করা হবে।’
পড়ুন: জনগণ বিএনপির সহিংসতা রুখে দিবে: কাদের
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা জানান,‘একটি মামলা হয়েছে। এর পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলাসহ অন্যান্য বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিস্তারিত পরে জানাতে পারবো।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে শাওনের মৃত্যু ছাড়াও পথচারী-নারীসহ আরও ২৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় পুলিশের সদস্যসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, নিহত ১
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নবীনগর শাহওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শাওনের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নবীনগর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে রাত সাড়ে বারোটার দিকে জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় শাওনের লাশ তার বাড়িতে নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: যুবদল কর্মী নিহত: দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
ক্ষমতায় গেলে জিয়া হত্যার বিচারে কমিশন গঠন করবে বিএনপি: ফখরুল
ইসরাইলি হামলায় সিরিয়ার বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
স্যাটেলাইট থেকে তোলা একটি ছবিতে দেখা গেছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় সিরিয়ার আলেপ্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামরিক বাহিনীর অংশের একটি রানওয়ে ও এর পার্শ্ববর্তী স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার রাতে রাজধানী দামেস্কের প্রধান বিমানবন্দর আলেপ্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সেসব রানওয়েতে ইসরাইল হামলা চালায় যেগুলো দিয়ে মাত্র মাসখানেক আগেও ইরানের অস্ত্রের চালান এসেছে।
শুক্রবার দ্য এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ছবিটি বিশ্লেষণ করেছে।
প্লানেট ল্যাব পিবিসির বৃহস্পতিবারের নেয়া ছবিতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের পশ্চিমাংশের একমাত্র রানওয়ের হামলার জায়গার চারদিকে অনেকগুলো গাড়ি ঘিরে রেখেছে। হামলায় রানওয়েতে গর্ত তৈরি হয়েছে এবং আগুন জ্বলছে।
আরেকটি হামলায় রানওয়ের দক্ষিণে বিমানবন্দরটির সামরিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং সড়কের পিচ ও আরেকটি কাঠামো নষ্ট হয়েছে।
সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলো মতো বিমানবন্দরে দুটি রানওয়ে ব্যবহার করে যার একটি দিয়ে বেসামরিক ও অন্যটি সামরিক বাহিনীর জন্য। হামলায় ফ্লাইট বিঘ্নিত হয়েছে।
পড়ুন: সিরিয়ায় বিমান হামলায় ২৯ তুর্কি সেনা নিহত
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার হামলায় ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে বলেন, ‘হামলায় সামরিক বাহিনীর জায়গা ও যন্ত্রাংশ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।’
বিদ্রোহীদের যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস অভিযোগ করছে যে ইরানের একটি মিসাইলের চালানকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। লেবাননের হিজবুল্লাহর ঘটিষ্ঠ সহযোগী ইরান। যারা সিরিয়ায় বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে ২০১১ সালে দেশব্যাপী চরম বিদ্রোহের সময় থেকে তার পক্ষে যুদ্ধ করছে।
অন্যদিকে, শুক্রবার এপির পক্ষ থেকে ইরান ও সিরিয়ার আন্তর্জাতিক মিশনে যেগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিরিয়ায় ইরানের সঙ্গে ইসরাইল ছায়া যুদ্ধে লিপ্ত থেকে অনেক হামলা চালিয়েছে। তবে বুধবারের হামলার দায় এখন পর্যন্ত সরাসরি স্বীকার করেনি তারা।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসরাইল এই হামলার জন্য দায়ী ‘দামেস্ক ও আলেপ্পোর বিমান বন্দরে বার বার হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন ও চলাফেরার স্বাধীনতাকে হুমকির মধ্যে ফেলছে।’
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে নিহত ১৩
সিরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২২
আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িবহরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার ফেনীর দাগনভূঞায় বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় গাড়িবহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকালে দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বিকালে উপজেলা সদরের আলাইয়ারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়।
মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা বিএনপির এক সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। সমাবেশ শেষে তিনি দাগনভূঞা ত্যাগ করেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন অভিযোগ করেন, বিকেল চারটার দিকে আবদুল আউয়াল মিন্টু গাড়িবহর নিয়ে সভাস্থলের দিকে যাওয়ার সময় ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের দাগনভূঞা উপজেলা সদরের ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ সড়কের মাথায় হামলা করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। বহরের পেছনের ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া সকাল থেকে উপজেলা সদর ও বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
পড়ুন: গুমের ঘটনা জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত করুন: সরকারকে ফখরুল
বিরোধীদের ওপর লাগাতার হামলা করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে সরকার: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও বাড়িঘরে অবিরাম হামলা চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
সোমবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে তাদের
সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নতুন ধরন চালু করেছে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি, দলীয় কার্যালয়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশে
বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামকে ভয় পেয়ে দমননীতি শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমদের প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলোতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি, লাখো মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছে।’
বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক এমন মন্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার বলে একটা করে আরেকটা।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা এখন যা বলে করে তার উল্টো। এটিই আওয়ামী লীগের চরিত্র। সারাদেশের ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে তাদের সন্ত্রাসী চরিত্র আবারও জনগণের কাছে প্রকাশ পেয়েছে।
পড়ুন: ছাত্রলীগ-বিএনপি সংঘর্ষ এড়াতে রামগড়ে ১৪৪ ধারা জারি
এভাবেই তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভায় তাদের চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে তারা।
ফখরুল বলেন, যশোর, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফেনি, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ঠাকুরগাঁও, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ, মাগুড়া, গাইবান্ধা, বরিশাল, খুলনা, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, রাজশাহী, নোয়াখালী, ভোলা, নাটোর, কুমিল্লা এবং নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় তাদের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শাসকদলের ক্যাডার বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: আ’লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি: পেকুয়ায় ১৪৪ ধারা জারি
নোয়াখালীতে বিএনপির প্রতিবাদ সভার মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
ভয় ও শঙ্কার মধ্যেই ইউক্রেনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
রুশ হামলার আশঙ্কায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছেন।
বুধবার (২৪ আগস্ট) একই সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দেশটির স্বাধীন হওয়ার ৩১ বছর পূর্ণ করেছে এবং ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুরও ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে।
ফলে নতুন করে স্বাধীনতার শপথ নেন ইউক্রেনের নাগরিকরা।
কিয়েভের স্বাধীনতা দিবসে সাধারণত নগরের কেন্দ্রে একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ দেখা যায়।
কিন্তু এবছর রাজধানীতে সাধারণ মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ যে কোনো সময় হামলার শিকার হতে পারে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর জন্য রাশিয়া তার প্রচেষ্টা বাড়াতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দেয়া তার বক্তব্যে ‘কোন ছাড় দেয়া বা আপস ছাড়াই’ রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের সমস্ত অঞ্চল ‘মুক্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে সম্প্রতি রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়ায় বিস্ফোরণ এবং রাশিয়ার রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আলেক্সান্দ্র দুগিনের মেয়ে দারিয়া দুগিনার মৃত্যুর পর আবারও উত্তেজনা বেড়েছে।
রাশিয়া যত বেশি ইউক্রেনকে তার স্বাধীনতার পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করবে, ইউক্রেনের জনগণের জাতীয়তাবোধ ততই শক্তিশালী হবে।
নাটালিয়ার নামের ইউক্রেনের এক নারী জানান, কিয়েভের ডিনিপার নদীর বাম তীরের একটি ছোট কারখানায় তিনি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম তৈরি করতেন, কিন্তু এখন তিনি ইউক্রেনের পতাকা তৈরি করেন।
তিনি জানান, হামলার প্রথম দিকে সামরিক চেকপয়েন্টগুলো থেকে তাকে পতাকা তৈরির অনুরোধ করা হতো। এখন তিনি কেবল সেনাবাহিনী থেকেই নয়, অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকেও মাসে ২৫০০টিরও বেশি পতাকা তেরির অর্ডার পান।
নাটালিয়ার আরও বলে, ‘এগুলো (পতাকার রং) আমাদের কাছে খুব প্রিয় রং। প্রত্যেক ইউক্রেনীয় এই রঙগুলো অনুভব করেন এবং আমরা এই রংগুলোর মধ্যে আমাদের দেশের মুক্ত আকাশ ও গম খেত দেখতে পাই। এগুলো আমাদের মধ্যে খুশি, আনন্দ ও ইতিবাচক আবেগ সঞ্চার করে।’
এদিকে ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ব নেতারা ইউক্রেনের সঙ্গে তাদের সংহতি প্রকাশ করছেন এবং তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘যতদিনই লাগুক (যুদ্ধ শেষ হতে) তার দেশ ও জাতি ইউক্রেনের পাশে থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের নাগরিকদের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের মানবিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দেয়া হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ইউরোপ ‘আজ এবং সবসময়ই’ ইউক্রেনের সঙ্গে রয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলা বলেছেন, ‘ইইউ ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও অবৈধ রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার সাহসী লড়াইকে সমর্থন করা কখনই বন্ধ করবে না’।
আরও পড়ুন: রুশ হামলায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৯ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেছেন, তার দেশের মানুষের ভালোবাসা ইউক্রেনের সঙ্গে রয়েছে। কারণ দেশটি আজ এক ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’র মধ্য দিয়ে তার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থন ‘অবিসংবাদী ও অবিচল’। এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক আইন অবশ্যই প্রাধান্য পাবে।
এছাড়াও ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মলদোভা, পোল্যান্ড ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাসহ সারা ইউরোপের নেতারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
পড়ুন: ইউক্রেন হামলার পর দ্বিতীয় রুশ জাহাজ মোংলায় পৌঁছেছে
যুদ্ধ: ইউক্রেনে রেকর্ড মানবিক সহায়তা সংকটের মুখে জাতিসংঘ
রুশ হামলায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৯ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য
ইউক্রেনে রুশদের হামলায় গত ছয় মাসে ৯ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য মারা গেছে। সোমবার তথ্যটি জানিয়ে দেশটির সেনাপ্রধান বলেন, এই যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, অনেক ইউক্রেনীয় শিশুর দেখভাল প্রয়োজন। কারণ তাদের বাবা যুদ্ধক্ষেত্রে গেছে এবং সম্ভবত তারাও ৯ হাজার মৃত সৈন্যের মধ্যে আছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনের প্রধান পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের অদূরে নিপার নদীর পাশে অবস্থিত নিকোপোল শহরে রুশদের গোলাবর্ষণে সোমবার চারজন আহত হয়েছে। শহরটি গত ১২ জুলাই থেকে অনবরত হামলার শিকার হচ্ছে। এতে ৮৫০টি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং শহরটির অর্ধেক নাগরিক (এক লাখ) পালিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন সংঘাতে ৩৭৫২ বেসামারিক মানুষের প্রাণহানি: জাতিসংঘ
জাতিসংঘ জানায়, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ হাজার ৫৮৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি মারা যায় এবং সাত হাজার ৮৯০ জন আহত হয়। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা সোমবার জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৯৭২ শিশু মারা গেছে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল বলেন, ‘সংখ্যাগুলো জাতিসংঘ নিশ্চিত করলেও আমরা মনে করি তা আরও বেশি হতে পারে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে শুধু অস্ত্র উৎপাদনকারীরা লাভবান হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
সিরাজগঞ্জে ইউএনও’র ওপর হামলা: দেড় শতাধিকের বিরুদ্ধে মামলা
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ইউএনও-এসিল্যান্ডের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলায় শতবর্ষী খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা মাটি দিয়ে ভরাটের সময় এই হামলার ঘটনায় দেড় শতাধিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রবিবার সকালে এ ঘটনার পর রাতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের পেশকার আব্দুল হাই বাদী হয়ে ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) হাসিবুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মামলা দায়েরের পর রাতে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভিডিও ও ছবি দেখে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। অযথা কেউ হয়রানির শিকার হবে না বলে নিশ্চয়তা দেন তিনি।
হাসিবুল ইসলাম আরও বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি সরকারের রেকর্ডভুক্ত পতিত জমি। এর পাশেই একটি প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ আছে। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি সরকারি ও ১৯৮০ সালের সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী পতিত জমি।
সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. মাসুদ রানা বলেন, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের জন্য নির্ধারিত জায়গা ছাড়া ক্রীড়া সংস্থার অন্য আর কোনো খেলার মাঠ নেই। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের অন্য কোনো সরকারি জায়গা যদি থাকে তাহলে খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ না করাই ভালো বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
উল্লেখ্য, শাহজাদপুর উপজেলার বলদিপাড়া-হলদিঘর খেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে বিরোধিতা করে আসছিলেন স্থানীয়রা। তারা গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে বাঁধার সৃষ্টি করেন। রবিবার সকালে মাটি ভরাটের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে ব্যারিকেড ভেঙে মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে বিরোধিতাকারীরা হামলা চালিয়ে ইউএনও’র গাড়ি ভাঙচুর করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে সহকারী কমিশনারের মাথায় আঘাত লাগে। তাকে উদ্ধার করে শাহজাদপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তির পর তার মাথায় আটটি সেলাই দেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শাহজাদপুর উপজেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. মাসুদ রানা। বিকালে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
টঙ্গীতে সন্ত্রাসী হামলায় যুবক নিহত
গাজীপুরের টঙ্গীতে সন্ত্রাসী হামলায় এক যুবক নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। রবিবার রাতে টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার মেরিট স্কুলের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহত কাউসার আহমেদ সুমন ওরফে তানোন টঙ্গের দেওরা এলাকার বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল চোরদের হামলায় যুবক নিহত
স্থানীয়রা জানায়, রাতে টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার মেরিট স্কুলের সামনে সন্ত্রাসীদের হামলায় ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুজন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিলে গেলে চিকিৎসক কাউসার আহমেদ সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত তুহিনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবক নিহত
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. ইলতুৎমিস জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের টিম কাজ করছে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা যাবে বলে তিনি জানান।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকীতে আ.লীগের নানা কর্মসূচি
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী পালন করবে রবিবার।
বিএনপি-জাময়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
চলমান কোভিড-১৯ অতিমারিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে দিবসটি পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি।
দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২১ আগস্টে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।
কাল সকালে প্রথমে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টে নিহতদের স্মরণে নির্মিত প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক হাইকোর্টে
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের সম্মান জানাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্খী ও সর্বস্তরের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে দিবসটি পালনের আহ্বান জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওই দিন হামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন লোক নিহত হন। এছাড়া আহত হন আরও পাঁচ শতাধিক মানুষ, যাদের অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
সেদিনের হামলায় যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতার নিরাপত্তা কর্মী ল্যান্স করপোরাল (অবসরপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রশিদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আব্দুল কুদ্দস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুন্সি, হাসিনা মমতাজ রীনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম, মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মো. হানিফ, আবুল কাশেম, জেহাদ আলী, মমিন আলী, এম শামছুদ্দিন এবং ইসহাক মিয়া।
এছাড়া গ্রেনেড হামলায় স্প্রিন্টারের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ হানিফ, অধ্যাপক আবু সায়্যিদ এবং এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের জন্য জাপানে বিশেষ দোয়া
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী আজ