উপাচার্য
২৭ দিন পরে নিজ অফিসে শাবি উপাচার্য
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ২৭ দিন পর তার অফিসে ফিরেছেন। রবিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, একই দিন শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগ উপাচার্য বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এ কথা জানান।বিজ্ঞপ্তিতে তারা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু ও পাঠদানের যথোপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে কিছু দাবি উপস্থাপন করেছে। দাবি গুলো হচ্ছে- অতিদ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা। যত দ্রুত সম্ভব অনলাইন/অফলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা। ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলায় আহত ছাত্রলীগ সহ সকল শিক্ষার্থী যারা ইতোমধ্যে নিজের ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা করেছেন তাদের ব্যয় বহন করা। সকল হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন-ক্যাফেটেরিয়া খুলে দেয়া এবং খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধি ও মূল্য হ্রাস করা। অতি দ্রুত ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আধুনিক ফুডকোর্টের ব্যবস্থা করা ও নির্মাণাধীন ফুডকোর্টের কাজ শেষ করা। বিভিন্ন দেয়ালে দেয়াল লিখন মুছনসহ ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির প্রত্যাশা করে’।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে ছাত্রীরা তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ’ ছাত্রী।
এছাড়া ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের জন্য উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে ভিসিকে মুক্ত করে। এতে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার: ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর আহ্বান
এতে ১৯ জানুয়ারি বুধবার বেলা ৩টা থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এতে শুরুতে ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশনে অংশ নেয়।
পরে ২৩ জানুয়ারি গণঅনশনের অংশ হিসেবে যোগ দেয় পাঁচজন শিক্ষার্থী।
২৬ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল সস্ত্রীক ক্যাম্পাসে এসে পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ১৬৩ ঘন্টার এ অনশন ভাঙান।পরে, শনিবার (১২ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চলমান আন্দোলন শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: অবশেষে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শাবিপ্রবি উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ
শাবিপ্রবি উপাচার্যকে ‘দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার’ পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর
শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার: ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর আহ্বান
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা তাদের বিক্ষোভ প্রত্যাহার করেছেন। সঙ্গে ক্লাস ও পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।
আন্দোলনের মুখপাত্র মোহাইমিনুল ইসলাম রাজ বলেন, ‘আপনারা সবাই অবগত আছেন গতকাল (শুক্রবার) শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী আমাদের আমন্ত্রণে শাবিপ্রবিতে এসেছিলেন। মন্ত্রীদের সঙ্গে আমাদের দাবি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের সকল দাবি আন্তরিকতার সঙ্গে শুনেছেন এবং আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এজন্য আমরা মন্ত্রীদ্বয়’কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: অবশেষে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শাবিপ্রবি উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা শুক্রবার তাদের ছয় দফা দাবি এবং সারাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাত্মক উন্নয়নের কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে রবিবার থেকে আগের মতো ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি পদক্ষেপের জন্য উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি সেদিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আহত ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীসহ সকলের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করছি।
শুক্রবার শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে ভিসি পদে কাউকে নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির। তাদের দাবি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি উপাচার্যকে ‘দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার’ পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও, আন্দোলনের সময় বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট এবং নম্বরগুলো কয়েক দিনের মধ্যে পুনরায় সক্রিয় করা হবে বলে জানান তিনি।
দীপু মনি পুলিশের গুলিতে আহত সজল কুণ্ডের যথাযথ চিকিৎসা এবং তার জন্য সরকারি চাকরিতে নিয়োগেরও আশ্বাস দিয়েছেন বলে ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা জানান।
অবশেষে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শাবিপ্রবি উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ গত ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন।বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য বলেন, আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের একদিন পর উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শিক্ষা উপমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানান, যারা ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন।
ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান ভিসি।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি উপাচার্যকে ‘দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার’ পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর
শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সাক্ষাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
শাবিপ্রবি উপাচার্যকে ‘দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার’ পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন।সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্য এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।ইশফাকুল হোসেন বলেন, মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তার দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন।এ সময় কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী বলেছেন, উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি যেন যথাথতভাবে পালন করা হয় সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।এর আগে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউজে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি ভিসিকে অপসারণের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করে: দীপু মনি
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তবে ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আচার্য (রাষ্ট্রপতি)। এ বিষয়টি আচার্যের কাছে তুলে ধরা হবে। অন্যান্য দাবি পূরণ করা হবে পর্যায়ক্রমে।
তিনি বলেন, ‘তাদের (শিক্ষার্থী) যা যা বক্তব্য আছে, পুরো ঘটনা সম্পর্কে তাদের কী বলার আছে, তা সব বর্ণনা করেছে। তাদের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের কথা বুঝতে চেষ্টা করেছি।এরপর মন্ত্রী উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক ও উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে কিছুই বলেননি দীপু মনি। প্রায় ১৫ মিনিটের আলোচনা শেষে উপাচার্যের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।এরপর মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে জানান। সেইসঙ্গে দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসও দেন।বিকেলে সার্কিট হাউসে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা মোট আটটি দাবি তুলে ধরেন।দাবিগুলো হলো- উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ, ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর বন্ধ থাকা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু করা, পুলিশের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা দেয়া ও তার জন্য নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিত করা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর করা, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবির নতুন প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ’ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন।
২৬ জানুয়ারি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে তারা এক সপ্তাহের অনশন ভাঙেন। সে সময় সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য জাফর ইকবালের কাছে তারা পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন।দাবিগুলো ছিল—উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সব আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া, পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন ও অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ভার বহন।এর মধ্যে সেদিনই জামিন পান গ্রেপ্তার সাবেক শিক্ষার্থীরা, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচও দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর গত রবিবার ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষ প্রক্টর আলমগীর কবিরকে বৃহস্পতিবার রাতে অব্যাহতি দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি সংকট: সিলেটে পৌঁছেছেন শিক্ষামন্ত্রী
উপাচার্যদের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা উচিত নয়: ঢাবি উপাচার্য
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। দেশের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলেও অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
শুক্রবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এফডিসিতে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীলতা প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে এক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে সশরীরে ক্লাস শুরু ২২ ফেব্রুয়ারি
আখতারুজ্জামান বলেন, ক্যাম্পাসে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ছাত্র শিক্ষক উভয়কেই শব্দ চয়নে ও প্রতিপক্ষের সমালোচনায় দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। উপাচার্য কর্তৃক ছাত্রকে রাজাকারের বাচ্চা বলা অথবা ছাত্র কর্তৃক শিক্ষককে নির্লজ্জ বলার মতো আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাবিতে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যে সকল উপাচার্যের দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ঢাবির গণরুম সংস্কৃতি বন্ধের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু দীর্ঘদিনের এই মন্দচর্চা দূর করার ক্ষেত্রে ছাত্র, শিক্ষক ও প্রশাসন সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক সূচকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান উর্ধ্বমূখী করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল প্রকাশনা, গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যাল গুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়ানো এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষা কারিকুলাম পুনবিন্যাস করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাবির 'ডি' ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের ক্ষোভ: আদালতে যাওয়ার হুমকি
প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, ড. শাহ আলম চৌধুরী, সাংবাদিক হাসনাত রাব্বি ও উন্নয়নকর্মী নিশাত সুলতানা।
শাবিপ্রবির সমস্যার শিগগিরই সমাধান হবে: শিক্ষামন্ত্রী
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের সমস্যা শিগগিরই সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তবে তিনি বলেছেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণ ভিন্ন বিষয়।’
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডে গভর্নমেন্ট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘একজন ভিসি চলে গেলে আরেকজন ভিসি আসবেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সমস্যা থেকে গেলে তাদের কোনো লাভ হবে না। তাই সমস্যার সমাধান করা দরকার।’
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শাবিপ্রবির এই পুরো বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকটা দিন তাদের সঙ্গে নানাভাবে আমরা সম্পৃক্ত থেকেছি। নানা ভাবে আলাপ আলোচনা হয়েছে। অনশন যারা করছিলেন এবং যারা আন্দোলন করছিলেন সবাই মিলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি- আমাদের যে শিক্ষার্থীরা যারা এই অবরোধ কর্মসূচিতে রয়েছে সেটি তারা তুলে নিবেন এবং আন্দোলনের ইতি এখানেই টানবেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এই অর্থে এখন আর আন্দোলন করবেন না শিক্ষার্থীরা। তবে তারা যে অর্থে আন্দোলন করেছেন সেই কারণগুলো আমরা অ্যাড্রেস করব এবং সমাধান করব। পুরো বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকার সবাই একপক্ষ। এখানে দুই পক্ষ বলে কিছু নেই। আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন। তারা একটু গুছিয়ে উঠুক। যারা আন্দোলনের কারণে অসুস্থ হয়েছে তারা সুস্থ হয়ে উঠুক। কিছুদিন পর আমরা সেখানে যেতে পারি। শিক্ষার্থীরা চাইলে আমরা যে কোনো সময় আলোচনায় বসতে পারি। ’
এসময় শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শাবিপ্রবিতে যে সমস্যাগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে তা যৌক্তক।কিন্তু এখানে পুলিশি অ্যাকশন হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। একটি দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সকল সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করবো। তারা আমাদের উপর আস্থা রেখেছে, আমরাও তাদের আস্থার প্রতিদান দিব। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের আন্দোলন ভাঙচূরসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এখানে তেমন কিছু ঘটেনি। তারা শান্তিপূর্ণভাবে গত সাত-আটদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে গেছে। এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে যা বললেন জাফর ইকবাল
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের কারণ ও সমস্যা সকল বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এতে যেই অপরাধী হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু সমস্যা আমাদের সামনে উঠে এসেছে। আমরা তা খুঁজে বের করে সমাধান করার সুযোগ পেলাম। সবাই মিলে সেসব সমস্যা সমাধান করা হবে।’
যে সমস্যাগুলো নিয়ে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, সে সমস্যা কিন্তু শুধু শাবিপ্রবির একার নয় বলে মন্তব্য করেন
শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও একই সমস্যা রয়েছে। আমাদেরকেই মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা খুব জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সুষ্ঠুভাবে চলে, যেন সেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে, শিক্ষার্থীরা যেন সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে সেটি আমাদের জন্য জরুরি। শুধু শাবিতে নয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনসহ নানা ধরনের সংকট রয়েছে সেগুলোও সমাধান করা হবে। আমরা চাই সকল সমস্যা সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে। শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর আস্থা রেখেছে। আমরাও তাদের উপর আস্থা রেখে এগিয়ে যাব।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুনেছি শাবির কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামে মামলা হয়েছে। তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখনো যদি কেউ আটক থাকে তবে সেটি আমরা খোঁজখবর নিয়ে সমাধান করবো। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব সমস্যা সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন: জাবি ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য: ক্ষমা চাইলেন শাবিপ্রবি উপাচার্য
উপাচার্যকে সরানো হবে কী না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একজন উপাচার্যকে সরালে আরেকজন উপাচার্য আসেন। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ পান। তাই তাকে সরাতে হলে একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। তাকে রাখা হবে না সরানো হবে সেটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সকলের প্রচেষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানো হয়েছে। আমরা আশা করি তারা তাদের অবরোধ তুলে নিয়ে ক্লাসে ফিরে যাবেন। এ জন্য বর্তমান সকল সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। এখানে পুলিশি অ্যাকশন হয়েছে। একটি দুঃখজনক। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অনশনের অষ্টম দিন আজ সকালে অনশন ভেঙেছেন। তারা অনশন ভেঙেছেন, এ কারণে তাদের সাধুবাদ জানাই।যারা আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তাদের সকল দাবি বাস্তবায়ন করব। যে বা যারাই অপরাধী হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘যে কারণে আন্দোলন করেছে সে সকল দাবির পক্ষে আমরা সমস্যার সমাধান করব। আমরা আনন্দিত সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে চাই, তাতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করবেন’ তিনি আরও যোগ করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে যেতে পারি। শিক্ষার্থীরা যখন চাইবে আমার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারবে। তারা চাইলে আমি সিলেটে যেতে পারি। অনশন ভেঙেছে। এখন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্দোলন শেষ করা হবে। শুধু শাবিপ্রবিতে নয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসন হলসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় কিছু মামলা হয়েছে, পেছনে যা কিছু ঘটেছে থাকবে না। তাদের কোনো কিছুতেই এর কোনো প্রভাব থাকবে না। মামলা থাকবে না। সমস্যার যখন সমাধান হচ্ছে, যারা এগুলো করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে এগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো।
উপাচার্য থাকলেন কি থাকলেন না এতে তাদের সমস্যা সমাধান হবে না। আমরা সমস্যা সমাধান করবো। এটার তো অন্য পদ্ধতি রয়েছে। রাষ্ট্রপতি তার উপর দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন। এ ব্যাপারে আমরা দেখবো আমাদের পক্ষে কি করা সম্ভব।’
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাবিতে সমাবেশ
শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বরিশালে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বরিশালে অবস্থান কর্মসূচি করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বুধবার বেলা ১২টায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন জেলা কমিটির সভাপতি রাহুল দাস, সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল ইসলাম সাকিন, সদস্য নুসরাত জাহান মীম, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সুজয় শুভ, ছাত্র ইউনিয়ন জেলা কমিটির সদস্য জয়দেব সাহ প্রমুখ।
শিক্ষার্থীরা বলেন, একজন উপচার্য নির্বিচারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তার পদত্যাগের জন্য আজ শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বক্তারা।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে যা বললেন জাফর ইকবাল
অনশন ভাঙলেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
শাবিপ্রবি: আন্দোলনরতদের দেখতে ক্যাম্পাসে এমপি
‘১০ হাজার টাকা দিলাম, আমাকে অ্যারেস্ট করুক’
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ায় সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ভোরে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে আসেন।
এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আবেগি মানুষ। চোখের জল আটকাতে পারি না। আমি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মারকে লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। এটা এখন তোমাদের দিচ্ছি। এখন সিআইডি দেখি আমারে অ্যারেস্ট করে কি না। আমারে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাক।’
পুলিশের উদ্দেশ্যে জাফর ইকবাল বলেন, ‘ছাত্রদের গায়ে হাত তুলবেন না। অলরেডি হাত তুলে আপনারা অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন। আর করবেন না। তাদের হয়রানি করবেন না।’
শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ ও দাবি শোনার পর ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা আমাকে গণমাধ্যমের সামনে কথা দিয়েছ, এ অনশন ভাঙবে। তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান। একজন মানুষের জন্য তোমরা জীবন দিয়ে দেবে, এটা মানা যায় না। গ্রেপ্তার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলা করা হয়ে গেছে, তাদের তো আদালতে তোলা হবে। আশ্বাস পেয়েছি ছাত্রদের জামিন দেয়া হবে।’
শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ঢাকা থেকে বুধবার ভোররাতে ক্যাম্পাসে যান অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি: আন্দোলনরতদের দেখতে ক্যাম্পাসে এমপি
সাবেক ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা
শাবিপ্রবির ছাত্র আন্দোলনে টাকা পাঠানোর অভিযোগে আটক পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে জালালাবাদ থানায় ওই মামলা করা হয়।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর দারিপাকা গ্রামের মতিয়ার রহমান খানের ছেলে হাবিবুর রহমান খান (২৬), বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানাধীন লক্ষ্মীকোলা গ্রামের মুইন উদ্দিনের ছেলে রেজা নুর মুইন (৩১), খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গার মিজানুর রহমানের ছেলে এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), ঢাকা মিরপুরের মাজার রোডের জব্বার হাউসিং বি-ব্লকের ১৭/৩ বাসার এ কে এম মোশাররফের ছেলে এ কে এম মারুফ হোসেন (২৭) ও কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন নিয়ামতপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সল আহমেদ (২৭)।
এর মধ্যে হাবিবুর শাবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে ২০১২ সালে পাস করেছেন। একই বছর আর্কিটেকচার বিভাগ থেকে পাস করেছেন রেজা নূর মঈন দীপ ও নাজমুস সাকিব দ্বীপ।
এর আগে রাজধানী ঢাকা থেকে শাবিপ্রবি'র সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটকের পর সিলেটে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল তাদের সিলেটে নিয়ে আসে। সোমবার ও মঙ্গলবার এই দুই দিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে সিআইডি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অঅরও পড়ুন: ‘করোনা ঝুঁকিতে’ শাবিপ্রবি থেকে ছাত্রলীগের মেডিকেল টিম প্রত্যাহার
শাবিপ্রবি: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সংগ্রহের ৬ অ্যাকাউন্ট বন্ধ
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘোষণা দিলেও, শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে লংমার্চ
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের নায্য দাবির সমর্থনে ঢাকা থেকে সিলেটে লংমার্চের ডাক দেয়া হয়েছে।
‘বিবেকবান নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে।
মঙ্গলবার বিবেকবান নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাবিপ্রবি'র উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছে। দীর্ঘ অনশনে অনেকেই অসুস্থ হতে শুরু করেছেন। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কেউ অনশন ভাঙেননি। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট কেউ শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে এগিয়ে আসেননি। তাদের দাবি পূরণে আশ্বাসও দিতে দেখা যায়নি। এভাবে টানা অনশনে ছাত্র-ছাত্রীরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছেন। এভাবে চলতে পারে না। শিক্ষার্থীরা জীবন বিপন্ন করে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন, আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সংগ্রহের ৬ অ্যাকাউন্ট বন্ধ
এমন পরিস্থিতিতে আজকের মধ্যে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করলে আগামীকাল বুধবার ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করা হবে।বিজ্ঞপ্তিতে দেশের সব বিবেকবান মানুষকে লংমার্চ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড় এবং শ্রমজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে লংমার্চ সফল করা হবে।বিবেকবান নাগরিক সমাজের পক্ষে বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, কবি ও লেখক রাখাল রাহা এবং সাংবাদিক এহসান মাহমুদ।
লংমার্চ কর্মসূচি উপলক্ষে বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভিসির বাসায় খাবার নিতে বাধা, শাবিপ্রবিতে অনশন অব্যাহত
শাবিপ্রবি ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বরিশালে মশাল মিছিল
শাবিপ্রবি: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সংগ্রহের ৬ অ্যাকাউন্ট বন্ধ
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আর্থিক লেনদেনের ছয়টি অ্যাকাউন্ট বন্ধের অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, শাবিপ্রবির যেকোনো কর্মসূচিতে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা যৌথ উদ্যোগে তহবিল গঠন করে থাকেন। এ আন্দোলনেও সেভাবেই অর্থ সংগ্রহ চলছিল।
তবে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে এসব নম্বরে আর কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
রকেট, নগদ, বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ মোট ছয়টি অ্যাকাউন্ট থেকে তারা কোনো লেনদেন করতে পারছেন না।
শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সাপোর্ট বন্ধ
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সাপোর্টও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে যে মেডিকেল টিম উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছিলেন, তারাও সেবা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র আরিফুল ইসলাম চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলেন, 'অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। তারা সবাই খিঁচুনি, ব্লাডে অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড প্রেশারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন। তারা অর্গান ড্যামেজের ঝুঁকিতে আছেন।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ঢাবিতে সমাবেশ