ফাঁসি
তানিয়া ধর্ষণ-হত্যা: ২ জনের ফাঁসির আদেশ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের রেবতি মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।বৃহস্পতিবার বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন আমির হোসেন ওরফে খোকন ও মোহর চাঁন। একইসাথে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে সফর আলীর যাবজ্জীবন বহাল এবং আসামি নুর আলম ও মনির হোসেনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম ফায়েজ ও মন্টু চন্দ্র ঘোষ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুনর রশিদ ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমদ হিরো। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমদ হিরো।
আরও পড়ুন: মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
১৯৯৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর আমির হোসেন খোকন তার চারবন্ধুসহ তানিয়াকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে পরে তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ শীতলক্ষা নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় আসামিরা। এই ঘটনায় নিহতের মামা বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ওই পাঁচ আসামি করে হত্যা মামলা করেন। বিচার শেষে ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। রায়ে মোহর চান ও আমির হোসেন খোকনকে ফাঁসি এবং সফর আলী, নুরে আলম ও মনিরকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়।
এরপর ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের নথি) হাইকোর্টে আসে। আর আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন। দুটির একসাথে শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দেয়া হয়।
সহকারী অ্যাটর্নি জাহিদ আহামদ হিরো জানান, মোহর চান ও আমির হোসেন খোকনের ফাঁসির আদেশ এবং সফর আলীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট বিভাগ। আর নুরে আলম ও মনিরকে খালাস দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: রিজেন্সির কবির-ফাহিমের জামিন বিষয়ে আদালতের ব্যাখ্যা তলব
শীর্ষ জঙ্গি সালেহীনের ফাঁসি বহাল
২০০৪ সালে জামালপুরে গণি গোমেজ হত্যা মামলার শীর্ষ জঙ্গি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীনের ফাঁসি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এই মামলার অপর আসামি জঙ্গি রাকিব মারা যাওয়ায় তার আপিল অকার্যকর ঘোষণা করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
মামলার শুনাতিতে আপিল বিভাগ বলেন, কোনো পলাতক আসামি আইনের আশ্রয় পেতে পারে না।
আরও পড়ুন: রিজেন্সির কবির-ফাহিমের জামিন বিষয়ে আদালতের ব্যাখ্যা তলব
এর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা অস্বীকার করে ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠিয়েছিলেন জঙ্গি সালেহীন। পরে ২০১৫ সালে টাঙ্গাইলে অন্য মামলায় হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। তখন থেকে তিনি পলাতক।
২০০৪ সালে জামালপুরের গণি গোমেজকে হত্যা করেন জেএমবির জঙ্গিরা। ওই মামলায় ২০০৬ সালে সালেহীন ও রাকিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই বছরই ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল- ১ তাদের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন: পরিবেশের ডিজিসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
পরীমণির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত
চট্টগ্রামে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বশির আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। শনিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে উপজেলার বারদোনা এলাকার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার বশির আহমদ সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বশির আহমদকে থানায় কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। আজ তাকে কারাগারে প্রেণে করা হবে।
আরও পড়ুন: আদালতে বসতে পারবেন না সেই বিচারক
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আমজাদ হোসেন প্রকাশ আমজাদ চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় গত ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ কে এম মোজাম্মেল হকের আদালত ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে সাতকানিয়ার মীর্জাখীল দরবার শরীফের ওরশ চলাকালীন সময়ে দরবার শরীফের উত্তর গেইট সংলগ্ন নাছিরের চায়ের দোকানে সন্ত্রাসীরা তৎকালীন সাতকানিয়ার চেয়ারম্যান আমাজাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে।
আমজাদ হোসেন সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়নের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। হত্যার পরদিন ৪ অক্টোবর নিহত চেয়ারম্যানের স্ত্রী সৈয়দা রোশনা আকতার বাদী হয়ে ২০ জন আসামির নাম উল্লেখ করে সাতকানিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পড়ুন: ঘুম থেকে ডেকে তোলায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা!
বাস থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু: চালক ও হেলপার গ্রেপ্তার
ফাঁসি দেয়ার আগে অন্তত দশ বার চিন্তা করি: প্রধান বিচারপতি
কাউকে ফাঁসি দেয়ার আগে কম করে হলেও দশবার চিন্তা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গোলাম রসুল ঝড়ু ও আব্দুল মকিমের নিয়মিত আপিলের শুনানিকালে বুধবার প্রধান বিচারপতি এই মন্তব্য করেন।
এই দুই আসামির জেল আপিল খারিজ হওয়ার পর তাদের ফাঁসি বহাল থাকায় আইনানুগভাবেই ফাঁসি কার্যকর করায় আদালত তাদের নিয়মিত আপিল দুটি অকার্যকর ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। একই সঙ্গে সুজন নামে এক আসামির নিয়মিত আপিলও এদিন খারিজ করা হয়। যিনি জেল আপিলের ভিত্তিতে খালাস পেলেও তার নিয়মিত আপিলটি বিচারাধীন ছিল। পরে আপিল বিভাগ নিয়মিত আপিল ও জেল আপিল একসঙ্গে শুনানির ব্যাপারে সমন্বয় সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করে দেবেন বলেও জানান।
এদিকে বুধবার শুনানিকালে আপিল বিভাগ ভার্চুয়াল আদালতের সুফল তুলে ধরে জানান, ভার্চুয়াল কোর্ট ছাড়া জুডিসিয়ারির কোনো গতি নেই। জজ সাহেবরা যদি বাসা থেকে কাজ করেন তাহলে দ্বিগুণ কাজ হবে। তবে আগামী ডিসেম্বর মাসে আপিল বিভাগ শারীরিক উপস্থিতিতে চলবে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ২০৬ হাসপাতাল-ক্লিনিক কেনো বন্ধ হবে না, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুরের মনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় আপিল নিষ্পত্তির আগেই আসামি ঝড়ু ও মকিমের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর জানা যায়, এই দুই আসামির জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করা জেল আপিল খারিজ হওয়ার পর ফাঁসি বহাল থাকায় তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। তবে তাদের দায়ের করা নিয়মিত আপিল দুটি শুনানির জন্য সম্প্রতি আদালতের কার্যতালিকায় আসে। নিয়মিত আপিল বিচারাধীন থাকলেও জেল আপিল খারিজের ভিত্তিতে চার বছর আগে ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আদালত আপিলকারী পক্ষের আইনজীবীদের দায়ী করেন। আপিল বিভাগ বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উচিত ছিল নিয়মিত আপিল করার পর একটি আবেদন দিয়ে জেল আপিলের সঙ্গে তা যুক্ত করা।
অন্যদিকে আইনজীবীরাও আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট সেকশনের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। তারা বলেন, সেকশন থেকে জেল আপিলের সাথে নিয়মিত আপিলটি যুক্ত করে একসাথে শুনানির জন্য লিস্টে দেয়া উচিত ছিল।
আরও পড়ুন: সন্তানের অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত সব মামলা ৬ মাসে নিষ্পত্তির নির্দেশ হাইকোর্টের
বুধবার ঝড়ু ও মকিমের নিয়মিত আপিলের ওপর দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে বলেন, তিন নম্বরের সাথে তালিকায় থাকা সাত নম্বর আইটেমের একসঙ্গে শুনানি করতে চাই। সাত নম্বর আইটেমে সুজন নামে একজনের রেগুলার (নিয়মিত) আপিল আছে। কিন্তু তারও একটি জেল পিটিশন ছিল। যেখানে তার কোনো আইনজীবীও ছিল না, কিন্তু শুনানি করে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ওই মামলায় তিন আসামির মধ্যে দুই জনের আপিল ছিল। আর সুজনের ছিল জেল পিটিশন। অথচ নিয়মিত আপিল যাদের, তাদের ফাঁসি হয়েছে আর জেল পিটিশন শুনানি করে আমরা ওই (সুজন) আসামিকে খালাস দিয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি দেখেন এই লোকের (সুজন) পক্ষে আইনজীবী একটা কথাও বলেনি। শুধু তার উপস্থিতি আছে। কারণ আমরা বাসায় ফাইল নিয়ে ভালো করে দেখে তারপর রায় দেই।
মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কোর্টের উপর এমন একটি ব্লেইম (অভিযোগ) আসলে সেটি কোর্টের জন্য বিরাট বিব্রতকর। তখন অবশ্য আমি প্রধান বিচারপতি ছিলাম না। তারপরও আমাদের প্রত্যেকের জন্য বিব্রতকর। আমরা প্রত্যেকটি ফাঁসি দেয়ার আগে ভালো করে দেখি। ফাঁসি দেয়ার আগে আমরা কম করে হলেও ১০ বার চিন্তা করি।
আদালত ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের ওপর জোর দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের এখানে তো এখনও ডিজিটাল সিস্টেম হয়নি। ডিজিটাল করতে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ডিজিটাল হলে সাথে সাথে ডিটেক্ট (শনাক্ত) হয়ে যাবে, কোন মামলার কোনটি থেকে কোনটি আসছে। এখন এটাই বড় সমস্যা। ডিজিটাল না হলে ডিটেক্ট করা সম্ভব নয়। কারণ এখন আর কেউ কনভার্সনের দরখাস্ত (জেল আপিলকে নিয়মিত আপিলে রূপান্তর করার আবেদন) দেয় না। এই যে দেখেন, সুজনের রেগুলার আপিল রয়ে গেছে, কিন্তু জেল আপিলে সে খালাস হয়ে গেছে।
মোকিম ও ঝড়ুর ২০১৩ সালের আপিল পড়ে থাকলেও তাদের আইনজীবী কেন আদালতে মেনশন (উপস্থাপন) করলেন না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি বলেন, আমি সেকশনে নির্দেশ দিয়ে বলেছি, সব ফাঁসির মামলা পৃথক করো। বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে আমি এটা করেছি, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। তারপর সব বাছাই করা হয়েছে, আপিলে শুনানি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডেসটিনি গ্রুপের পরিচালকের জামিন প্রশ্নে বিভক্ত আদেশ হাইকোর্টের
প্রধান বিচারপতি বলেন, গরিব মানুষের মামলায় তারা এসে ধরাধরি না করলে আইনজীবীরা কোনো আবেদন দেন না। মামলা পড়ে থাকলে নোটিশও করেন না। এ সময় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমরা যেহেতু অন মেরিটে আপিলটি ডিসমিস করেছি। আমার কাছে মনে হয়, রেগুলার আপিলটি নট মেইনটেনেবল বলে ডিসমিস করে দিতে পারেন বা অকার্যকর করে দিতে পারেন।
ঝড়ু ও মকিমের আইনজীবী আসিফ হাসান এ সময় বলেন, আমরা কিন্তু কোর্টের উপর কোনো ব্লেইম দেইনি, হয় তো কিছু প্রভাব পড়ে গেছে। আমাদের এ ক্ষেত্রে ছোট একটু চাওয়া হলো, আমাদের হয়ত আরও সতর্ক হতে হবে। তবে সেকশনের আরও সমন্বয় করা উচিত। পাশাপাশি কারা কর্তৃপক্ষের জন্য একটা গাইডলাইন দিলে ভালো হয়।
বিচারপতি ইমান আলী বলেন, উচিত ছিল যখন ক্রিমিনাল আপিল দায়ের করে, তখন বলে দেয়া যে, অলরেডি একটি জেল আপিল ফাইল হয়ে গেছে। আসিফ হাসান বলেন, তালিকায় আসার আগ পর্যন্ত আমরা কিছুই জানি না। ফাঁসি হয়ে গেছে তাও কিছু জানায়নি। এখন আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই। একটু চাওয়া সকলের স্বার্থে একটি গাইড লাইন দিয়ে দেন। বিচারপতি ইমান আলী বলেন, এগুলো সব কম্পিউটারাইজড হয়ে গেলে এ সমস্যা হতো না। এটা আপনারা আইনজীবীরা হতে দেবেন না। কারণ আপনার আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী কোর্টে গিয়ে শুনানি করবেন। সবশেষে আদালত ঝড়ু, মোকিম ও সুজনের ক্রিমিনাল আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে খারিজ করে দেয়। এ বিষয়ে গাইড লাইন থাকবে বলে জানিয়ে দেন আদালত।
ভার্চুয়াল কোর্টে দ্বিগুণ কাজ হয়
ঝড়ু ও মকিমের আপিল শুনানিকালে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়ালি শুনানির কারণে সম্প্রতি বেশ অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ম্যানুয়ালি মামলার শুনানির সময় আগে প্রতি রোববার কয়েক ঘণ্টা সময় যেত মামলা জরুরি উল্লেখ করে তালিকা করতে। আগে আপিল বিভাগে মামলা ছিল ২৩ হাজার। আর ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি হয়ে মামলা কমে এখন আছে সাড়ে ১৫ হাজার। এই প্যানডেমিকের সময়ে দেশের সব আদালতে মামলা সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু আপিল বিভাগে মামলা কমেছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে ফিজিক্যাল কোর্ট খুলে দেব, তবে ভার্চুয়াল কোর্টে কাজ হয় ডাবল। ধরুন এখন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রয়োজন। অথচ তিনি আছেন অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে। তার আসতে ১৫ মিনিট সময় নষ্ট হলো। আর ভার্চুয়ালে হলে অ্যাটর্নি জেনারেল একই চেয়ারে বসে থাকেন, জাস্ট একটি টিপ দিয়ে দেন। তা ছাড়া আপিল বিভাগের সব আইনজীবী বয়স্ক, যাদের অধিকাংশের বয়স ৭০ এর বেশি। উনারা যখন বাসায় থাকেন তখন কোনো সময় নেন না। ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম নিজের বেডরুম থেকে শুনানি করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা সবাই ফিজিক্যাল কোর্টের ভক্ত, তবে ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট আপার হাউজে বলেছেন, কোর্ট ডাজ নট ইন এ পার্টিকুলার বিল্ডিং (কোর্ট একটি নির্দিষ্ট ভবনে আবদ্ধ নয়)। ভার্চুয়াল কোর্টে রোকন উদ্দিন মাহমুদ সুইজারল্যান্ড থেকে শুনানি করেছেন। আজমালুল হোসেন এখনও সিঙ্গাপুর থেকে শুনানি করেন। তানজিব উল আলম লন্ডন থেকে শুনানি করেছেন। এ রকম অনেকেই আছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলও দেশের বাইরে থেকে শুনানি করেছেন। এখানে তো ছুটির নেয়ার প্রয়োজন হবে না।
আরও পড়ুন: ঋণখেলাপির আইনি অধিকার থাকতে পারে না: হাইকোর্ট
তিনি বলেন, কোর্ট হচ্ছে মেডিকেল সেবার মতো সার্ভিস। আমার মনে হয় ২৪ ঘণ্টা কোর্ট খোলা থাকা উচিত। এটা তো সার্ভিস। ভারতের গুজরাটে তো ইভিনিং (সান্ধ্যকালীন) কোর্ট চালু আছে। এ সময় বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, তাহলে আমরা হলি ডে কোর্ট চালু করে দিই। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা হয়েছে মাই লর্ড। গতবার বন্ধের সময় এটা হয়েছে। আপনারা বন্ধের মধ্যে বসেছিলেন। ওই মামলায় আমিও ছিলাম। ওই বন্ধের সময় ২৫৬টি মামলার শুনানি হয়েছে।
বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, শনিবারও হলি ডে কোর্ট খোলা রাখা যায়। সাড়ে ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত কোর্ট খোলা রাখা যায়। আইনজীবীরা যেহেতু চায়, এটা করা যায়। সবাই তার বাসা থেকে শুনানি করবেন সমস্যা কী! এ সময় আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, এটা উচ্চ আদালতে করা যায়, কিন্তু নিম্ন আদালতে সমস্যা হবে।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ওটা আরও সহজ। আমেরিকা বসে সাক্ষী সাক্ষ্য দেবে। সাক্ষীর অভাবে কত মামলা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের যেকোনো স্থানে বসে সাক্ষী তার সাক্ষ্য দিতে পারবে। আসামিদের জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করাও দরকার নেই। ভার্চুয়াল কোর্টের ফলে সড়কে যানজটও কমে যাবে। হাজার হাজার আইনজীবীকে কোর্টে আসতে হবে না। জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হবে। ভার্চুয়াল ছাড়া মামলার জট কিছুই যাবে না। এতে জাজও অনেক বাড়ানো যায়। প্রধান বিচারপতি বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যেভাবে আগাচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিপ্লব হয়ে যাবে। এখন বাংলাতে কথা বললেই মোবাইলে লেখা হয়ে যায়। এটাতে জজ সাহেবদের কষ্ট কমে যাবে, তারা মুখে বলবেন আর লেখা হয়ে যাবে।
নিয়ম অনুযায়ী হত্যা মামলার দুই আসামির ফাঁসি হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গার একটি হত্যা মামলায় দুই আসামির আপিল শুনানির আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী তাদের ফাঁসি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।তিনি বলেন, 'যথাযথ নিয়ম মেনে তাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। কোনো আপিল পেন্ডিং ছিল বলে আমাদের জানা নেই। ফাঁসি দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সিস্টেমের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।’
আরও পড়ুন: আপিল শুনানির আগে মৃত্যুদণ্ডের সংবাদ সঠিক নয়: আইনমন্ত্রী
আপিল শুনানির আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জানা মতে এই রকম ঘটনা ঘটেনি। প্রথম কথা হলো এই। ফাঁসির ক্ষেত্রে একটা প্রসিডিউর আছে। যিনি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হন, প্রথমে তিনি আপিল করতে পারেন। তিনি হাইকোর্টে আপিল করেছেন। আপিল না মঞ্জুর হওয়াতে তিনি আবার আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। জেল থেকে তিনি আপিল করেছেন, যেটাকে জেল আপিল বলে। জেল আপিল নিষ্পন্ন হওয়ার পরে, না মঞ্জুর হওয়ার পরে তিনি সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন না মঞ্জুর করেছেন। এরপর সিস্টেম অনুযায়ী তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীতিনি বলেন, ‘আমরা যেটুকু দেখেছি, যথাযোগ্য নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে, প্রত্যেকটি স্টেপের পর যে স্টেপ সেই স্টেপই আসছে। কোন আপিল পেন্ডিং ছিল বলে আমাদের কিংবা কারা কর্তৃপক্ষের জানা নেই।’স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের যে সিস্টেম সেই সিস্টেমে কোন ব্যত্যয় হয়নি।
নড়াইলে হত্যা মামলা: একজনের ফাঁসি, দু’জনের যাবজ্জীবন
নড়াইল শহরের ভওয়াখালীতে হালিমা বেগম নামে এক নারীকে হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অপর দুইজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বুধবার (৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ আদেশ দেন। এর মধ্যে আসামি মোমেনা বেগম রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক আছেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম সেলিম সরদার ভওয়াখালীর সলেমান সরদারের ছেলে। অন্য দু’জন সলেমান সরদারের স্ত্রী মোমেনা বেগম ও মেয়ের ছেলে (নাতী) সাজ্জাদ খান।
আরও পড়ুন:নড়াইলে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৭ মে আসামি সেলিম সরদার ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজারের টাকা ছিনতাই করেন। ঘটনাটি প্রতিবেশি হালিমা বেগম দেখে স্থানীয় লোকজনকে জানান। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেলিমের মা আসামি মোমেনা বেগম নিহত হালিমাকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। কথা কাটাকাটিরএক পর্যায়ে সেলিম সরদার কোদাল দিয়ে হালিমার মাথায় আঘাত করেন। এ সময় সেলিমের মা মোমেনা বেগম ও তার নাতি সাজ্জাদ খান হালিমাকে কিল,লাথিসহ মারধোর করে।
আহত হালিমা খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় মো.সেলিম সরদার,মোছা.মোমেনা বেগম ও সাজ্জাদ খানকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ ওই তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মো.সেলিম সরদারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং মোছা. মোমেনা বেগম ও সাজ্জাদ খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।
আরও পড়ুন:নড়াইলে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ নিহত ২
নড়াইলের জেলা আ’লীগ কমিটিতে সদস্য মাশরাফি, উপদেষ্টা বাবা
২ বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যা: যশোরে ২ আসামির ফাঁসি আজ
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় দুই বান্ধবীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে যশোর কারা কর্তৃপক্ষ।
সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মিন্টু ওরফে কালু (৫০) ও একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুল (৫০)।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান জানান, শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো তাদের দু’জনের স্বজনেরা তাদের সাথে দেখা করেছেন। এই সময় পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আরও পড়ুন: সিলেটের নতুন কারাগারে প্রথম ফাঁসি কার্যকর
তিনি জানান, বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে টানা ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। ফাঁসির জন্য যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জল্লাদ মশিয়ার, কেতু কামালসহ বেশ কয়েকজনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া তিন জল্লাদ ফাঁসির রায় কার্যকরে অংশ নেবেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, আজিজুল বা আজিদ ওরফে আজিজ এবং মিন্টু ওরফে কালু আলমডাঙ্গার রায় রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের দুই বান্ধবীকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০০৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মামলা হয়। দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই আসামি আজিজুল ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ড ও পাশাপাশি দুই লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। এরপর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। আসামিপক্ষ মামলাটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও যান। চলতি বছরের ২৬ জুলাই সেখানেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ হয়। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া হলেও তা নামঞ্জুর হয়। চলতি মাসের ৬ তারিখে কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় সুরক্ষা সেবা বিভাগ। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ৮ সেপ্টেম্বর সেই চিঠি গ্রহণ করে।
আরও পড়ুন: নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ২ বছর, আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চায় পরিবার
মামলা সূত্র জানায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায়লক্ষীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাদের দুজনকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলাকাটা হয় ওই দুই নারীকে। এ ঘটনার পরদিন নিহত কমেলা খাতুনের মেয়ে নারগিস বেগম আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দু’জনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে প্রবাসীকে গলাকেটে হত্যা মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ
মামলা বিচারাধীন অবস্থায় আসামি মহি মারা যান। ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। এরপর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা বহাল রাখেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে বেকসুর খালাস দেন।
কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসির আসামির মৃত্যু
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফজলুর রহমান তন্ময় ওরফে তাপস মারা গেছেন। সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তিনি মারা যান।
আসামি ফজলুর রহমানের বাড়ি ঢাকার দোহার থানার লোটাখোনা গ্রামে।
আরও পড়ুন: কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যু
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল জানান, সোমবার (৩০ আগস্ট) রাত সোয়া ১১টার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সোয়া ২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আরও পড়ুন: কাশিমপুর কারাগারে হাজতির ‘আত্মহত্যা'
উল্লেখ্য, ঢাকার ধানমন্ডি থানায় করা এক হত্যা মামলায় আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়া অপর এক মামলায় অস্ত্র আইনে ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ছিলেন তিনি।
সিলেটের নতুন কারাগারে প্রথম ফাঁসি কার্যকর
সিলেটের নতুন কারাগারে প্রথমবারের মতো এক আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
শহরতলীর বাদাঘাটে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে স্ত্রী হত্যার দায়ে সিরাজুল ইসলাম সিরাজের (৫৫) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন জল্লাদ শাহজাহান।
কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ফাঁসি কার্যকর করার আগে সিরাজের ইচ্ছে অনুযায়ী তার পরিবারের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে কারা কর্তৃপক্ষ। ফাঁসি কার্যকরের পর রাতেই স্বজনরা তার লাশ দাফনের জন্য হবিগঞ্জে নিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে মা ও ২ শিশুকে গলাকেটে হত্যা
মৃত্যুদন্ডের সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিলেটের ডিআইজি প্রিজনস মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল, সিলেটের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, জেল সুপার মো. মুজিবুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০০৪ সালে পারিবারিক বিরোধের জেরে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ তার স্ত্রী সাহিদা আক্তারকে শাবল ও ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই হবিগঞ্জ থানায় ২০০৪ সালের ৭ মার্চ হত্যা মামলা করেন। মামলার ১৭ বছর পর এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলো।
২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি সিলেট দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিরাজের মৃত্যুদন্ডের রায় দেন। সেই সাথে রায়ে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে সিরাজ হাই কোর্টে আপিল করেন। ২০১২ সালের ১ আগস্ট হাই কোর্ট সিরাজের জেল আপিল নিষ্পত্তি করে সাজা বহাল রাখেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে সিরাজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জেল পিটিশন দাখিল করেন। আপিল বিভাগও ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রায়ে সিরাজের আপিল বাতিল করে ডেথ রেফারেন্সের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন। এরপর সিরাজ প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করলে এ বছরের ২৫ মে রাষ্ট্রপতি তা নামঞ্জুর করেন বলে জানান সিনিয়র জেল সুপার মঞ্জুর আলম।
কারা সূত্র জানায়, সিরাজের ফাঁসি কার্যকরের জন্য ১৪ জুন কাশিমপুর কারাগার থেকে জল্লাদ শাহজাহানকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর শাহজাহানের হাতেই হয়।
আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় যুবককে হত্যা
মাছ চুরির অভিযোগে কুষ্টিয়ায় কৃষককে পিটিয়ে ‘হত্যা’
প্রসঙ্গত, শহরের ধোপাদীঘির পাড় এলাকায় অবস্থিত সিলেট পুরাতন কারাগার ১৭৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৪ সালের ২ জুলাই এখানে প্রথম ফাঁসি কার্যকর হয়। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শহরতলীর বাদাঘাট এলাকায় নির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধন করেন। নবনির্মিত এ কারাগারটি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ নামে পরিচালিত হচ্ছে। এই কারাগারে প্রথম ফাঁসি এটি।
নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ২ বছর, আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চায় পরিবার
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার।
২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
সেই থেকে প্রতিদিন ভাত খেতে গেলে মেয়ে নুসরাতের কথা মনে পড়ে মা শিরিনা আক্তারের। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় ভাত খেতে চাওয়ার পরও মেয়েকে ভাত দিতে না পারার যন্ত্রণা তাকে এখনো কাতর করে।
আরও পড়ুন: নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বোরকা জব্দ
নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালে পানি ও ভাত না খেয়ে মারা গেছে আমার মেয়ে। ক্ষুধায় মেয়ে পানি ও ভাত খেতে চেয়েছিল। ওর শ্বাসনালি পুড়ে গেছে তাই ডাক্তাররা আমাকে পানি ও ভাত দিতে নিষেধ করেন। আজ আমি দুইটা বছর যখন ভাত খেতে যাই, আমার নুসরাতের কথা মনে পড়ে। আমার মেয়ে ভাত, পানি খেয়ে যেতে পারে নাই। আমার মেয়েকে জানোয়ারেরা হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে।’
প্রিয় কন্যা রাফির শূন্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: পিবিআইয়ের তদন্তে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ
আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আজ দুই বছর আমি আমার মেয়ের কণ্ঠে মা ডাকটি শুনতে পাই না। রাতে ঘুম হয় না। কারণ আমার মেয়ের হাত-পা বেঁধে যখন তারা আগুন লাগিয়েছিল, তখন আমার মেয়ে কি করেছিল? সেদিন আমি খবর পেয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে ছুটে যাই, তখন পুলিশ সদস্যরা আমার মেয়ের কাছে ভিড়তে দেয় নাই। তার পুরো শরীর ব্যান্ডেজ করে ফেলে ডাক্তাররা। পুলিশরা আমাকে বলে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাঁচে কিনা সন্দেহ? আপনি মেয়ের আগুনে পোড়া এই শরীর দেখলে সহ্য করতে পারবেন না। ডাক্তাররা আপনাকে দূরে থাকতে বলেছে। তখন আমার মেয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল।
নুসরাতের মা বলেন, আমার মেয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আমাকে অনেক কথা বলেছে। তখন আমার মেয়েকে আমি বলেছিলাম মামলা তোলার জন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে দিতা। তাহলে আজকে তোমার এই অবস্থা হতো না। তখন আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল মা মৃত্যুকে ভয় পাই না। তারা সাদা কাগজ ধরে সিগনেচার (স্বাক্ষর) চেয়েছিল তখন আমার মেয়ে রাজি না হওয়ায় তারা হাত-পা বেঁধে কেরোসিন তেল ঢেলে আমার মেয়ের গায়ে দিয়াশলাই মেরে আগুন ধরিয়েছিল। তখন আমার মেয়ে যে চিৎকার দিয়েছিল কেউ শুনতে পায়নি।
আরও পড়ুন:নুসরাত হত্যাকাণ্ড: সেই এডিএম এনামুলের ‘অবহেলা নেই’
তিনি বলেন, আজকে দেশে-বিদেশে করোনাভাইরাসে হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা মনেরে বুঝ দিতে পারবে, করোনাভাইরাসে তারা মারা যাচ্ছে। কিন্তু আমার মেয়েকে জানোয়ারেরা হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়ে মেরেছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ৯৯ ভাগ মানুষ আমার মেয়ের পাশে ছিল। আমাদের পরিবারের পাশে ছিল। আসামি ও তাদের স্বজনরাসহ ১ ভাগ মানুষ আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে থাকতে পারে।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।
আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানালেন নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার।
নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, তিনি আশা করছেন নিম্ন আদালতের দেয়া রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে।
তিনি দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চার দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মৃত্যুবরণ করেন নুসরাত। ১০ এপ্রিল বিকালে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।