গণহত্যা
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর প্রথম আলোকচিত্র প্রদর্শনী
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যার ওপর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।
এই প্রদর্শনীটি বুধবার জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি, জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মিডিয়া কর্মী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে পুষ্টিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন
উদ্বোধনী বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এই প্রদর্শনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
তিনি এই প্রদর্শনীটি সফলভাবে আয়োজন করতে আন্তরিকভাবে সহায়তার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার ইতিহাস আন্তর্জাতিক সম্পদায়ের মাঝে গভীরভাবে ছড়িয়ে দিতে আমাদের আরও জোর প্রচেষ্টা চালানো দরকার।’
আজকের এই প্রদর্শনী কেবল আমাদের ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে সহায়তা করবে না, আগামী দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপী গণহত্যা ও অন্যান্য নৃশংস অপরাধ রোধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।
ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে ২৭টি আলোকচিত্র সংগ্রহ করে ১৯৭১ সালের গণহত্যার ওপর এক বিস্তারিত উপাখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে। যা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: আলোকচিত্র প্রদর্শনী 'প্রত্যাশা: অভিবাসীদের আশা' শুরু মঙ্গলবার
জাপানে গণহত্যা দিবস পালন
যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসে শনিবার (২৫ মার্চ) ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে।
টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে কালো ব্যাজ ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়।
পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদত বরণকারী তার পরিবারের সদস্যসহ ২৫ মার্চ কালরাতে ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের নাম জানা-অজানা ৩০ লাখ শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
আরও পড়ুন: দেশে গণহত্যা দিবস পালিত হচ্ছে আজ
এছাড়া দিবসটি স্মরণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত সাহাবুদ্দিন আহমদ প্রথমেই ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের ভয়ঙ্কর কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদারদের ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত আক্রমণে যে সব বীর বাঙালি শাহাদত বরণ করেছিলেন তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রদূত সাহাবুদ্দিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্ নেসা মুজিবসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্য এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
তিনি স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, সব শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে যাদের চরম ত্যাগের বিনিময়ে নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াই করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে।
তিনি বলেন, ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত এ পাকিস্তানের দখলদার শাসকদ্বারা সংগঠিত এ গণহত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকাসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলোতে বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতারা, ছাত্র ও স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমন করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা গণহত্যা দিবসের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য তুলে ধরেন।
বক্তারা বিশ্বের সচেতন নাগরিকদের বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিতে এবং গণহত্যাকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শেষে গণহত্যা দিবসের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আরও পড়ুন: গণহত্যা দিবস পালিত হবে শনিবার
পশ্চিমাদের অবশ্যই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে হওয়া পাক গণহত্যার কথা স্বীকার করতে হবে: শাহরিয়ার
পশ্চিমাদের অবশ্যই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে হওয়া পাক গণহত্যার কথা স্বীকার করতে হবে: শাহরিয়ার
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, যেসব দেশ মিয়ানমারে গণহত্যা স্বীকার করছে তাদের এটাও স্বীকার করতে হবে যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগিরই এই দেশগুলোর কাছে এ বিষয়টি উত্থাপন করব।
সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘রিকগনিশন অব বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১’- শীর্ষক সেমিনার শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু জাতিসংঘে ইতোমধ্যে একটি গণহত্যা দিবস রয়েছে, তাই দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বসম্প্রদায় ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে জাতিসংঘের গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না।
বিষয়টিকে জটিল আখ্যায়িত করে শাহরিয়ার আশা প্রকাশ করেন, সরকারিভাবে সেসব দেশের স্বীকৃতি না পেলেও বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের জনগণের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাবে।
সরকার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার জন্য জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য তার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে, যা বিশ্বের অন্যতম জঘন্য অপরাধ।
আওয়ামী লীগ সরকার ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
আরও পড়ুন: বিদেশি মিশনের সঙ্গে নথি শেয়ারের কারণ জানালেন শাহরিয়ার আলম
২০১৭ সালের ২০ মার্চ প্রস্তাবটি করা হয়েছিল।
এর আগে একই বছরের ১১ মার্চ সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দিবসটি পালনের প্রস্তাব পাস হয়।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জনের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার হিসেবে ছিল।
সরকারের প্রচেষ্টা জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় কারণ জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যার অপরাধের শিকার এবং এই অপরাধ প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক স্মরণ ও মর্যাদা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সরকার সর্বোচ্চ সংখ্যক দেশের কাছ থেকে গণহত্যার স্বীকৃতি চায়।
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল, কিন্তু দ্রুতই গণহত্যার বিষয়টি বিস্মৃত হয়ে যায়।
২৫শে মার্চকে 'গণহত্যা দিবস' হিসেবে পালন করা হবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগের জন্য জাতির চিরন্তন স্মারক এবং এটা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
২৫ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে অপারেশন সার্চ লাইট নামে গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে গোপনে পাকিস্তানে যান।
সেই রাত থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী পরবর্তী ৯ মাসে সারা দেশে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে।
আরও পড়ুন: ‘বিজিবি সতর্ক, মিয়ানমার থেকে এখন কেউ ঢুকতে পারবে না’: শাহরিয়ার আলম
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না সৌদি আরব: শাহরিয়ার
রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার পরিচালনায় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) চলমান মামলা পরিচালনায় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা- ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)।
বৃহস্পতিবার জেদ্দায় রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার বিষয়ে ওআইসি মন্ত্রী পর্যায়ের এডহক কমিটির বৈঠকে তিনি এ সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এটর্নি জেনারেল এবং গাম্বিয়ার বিচার বিষয়ক মন্ত্রী দাওদা জালো।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশ তাঁর সীমিত সাধ্যের মধ্যে ইতোমধ্যে আইসিজেতে মামলা পরিচালনার জন্য সেচ্ছাসেবী তহবিলে ইতোমধ্যেই পাঁচ লাখ ডলার দিয়েছে, এছাড়া ও সম্প্রতি আরও দুই লাখ ডলার দেয়ার পথে রয়েছে।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশে অবস্থানরত এক দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দেখভালের পাশাপাশি নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলারে ভাসানচরে নির্মিত নতুন অবকাঠামোতে তাদের একাংশকে স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত আইসিজেতে মামলা পরিচালনার জন্য সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কুয়েত, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, আফগানিস্তান এবং ইসলামিক সলিডারিটি ফান্ডসহ কয়েকটি দেশের স্বেচ্ছামূলক অবদান এবং অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, অনেক দেশের সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার পরও প্রাপ্ত অর্থ প্রয়োজনীয় পরিমাণ থেকে অনেক কম, তাই তিনি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা পরিচালনার জন্য উদারভাবে অবদান রাখার আহবান জানান।
রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা দায়েরের জন্য গাম্বিয়ার প্রতিনিধিদল, ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র এবং ওআইসি সচিবালয়ের প্রতি রাষ্ট্রদূত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মাধ্যমে এর সমাধান একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয় এবং আমাদের অবশ্যই এর প্রতি নিবিড় কার্যক্রম বজায় রাখতে হবে। এটি একটি বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার প্রদানের প্রশ্ন যারা তাঁদের জাতিগত অস্তিত্বের অধিকার থেকেও বঞ্চিত।
তিনি আরও বলেন, গাম্বিয়ার দায়ের করা এ মামলার প্রতি আমাদের সকলের পূর্ণ সংহতি, সমর্থন এবং সহযোগিতা প্রয়োজন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ২০১৭ সালে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর ও মিয়ানমারে আমরা একজন শরণার্থীও ফেরত পাঠাতে পারিনি এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য মিয়ানমারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারিনি। তিনি ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় উক্ত এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর যে আর্থসামাজিক চাপের সৃষ্টি হয়েছে ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হলে তার সুদূরপ্রসারী স্থানীয় ও আঞ্চলিক নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজ দেশে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সার্বক্ষণিক সমর্থন কামনা করে। রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এবং তাঁদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার জন্য আইনি সহায়তা প্রদান করা আমাদের দায়িত্ব। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার এবং মানবতার উন্নতির জন্য দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: উখিয়া ক্যাম্পে ২ রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা, আটক ২
সভার শুরুতে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বিচারাধীন এই মামলাটির বর্তমান অবস্থা, এর বিভিন্ন দিক ও সামনের পরিকল্পনা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, এই মামলাটি ওআইসি ও বিশ্বের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
তিনি প্রত্যাশা করেন, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে এই মামলাটি নিষ্পত্তি হবে।
এছাড়া তিনি ওআইসি’র সকল সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন ও মামলা পরিচালনার জন্য সহায়তা কামনা করেন।
ওআইসি মহাসচিব তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা প্রদান, তাদের অধিকার আদায়ে একযোগে কাজ করা ওআইসি’র নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তিনি এ বিষয়ে ওআইসি সচিবালয়ের সার্বক্ষণিক সহায়তার আশ্বাস দেন ও এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সমর্থন ও সহায়তার অনুরোধ জানান।
এই বৈঠকে সৌদি আরব, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ক্যামেরুন, ফিলিস্তিন, মালদ্বীপসহ অন্যান্য দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য ইইউ’র ৩ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা ঘোষণা
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে 'গণহত্যা' ঘোষণার আহ্বান
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য স্টিভ চ্যাবট ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেস সদস্য রো খান্না মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর চালানো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি রেজ্যুলেশন বা প্রস্তাব পেশ করেছেন।
চ্যাবট বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছিল সেটি ভুললে চলবে না। ওহাইও’র ফার্স্ট ডিস্ট্রিক্টে আমার হিন্দু ভোটারদের সহায়তায় রো খান্না ও আমি হিন্দুসহ বাঙালিদের ওপর চালানো ব্যাপক নৃশংসতা, নির্দিষ্ট করে বললে গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য রেজ্যুলেশন পেশ করেছি।’
চ্যাবোট জানান, তারা অবশ্যই বছরের পর বছর ধরে গণহত্যার লাখ লাখ মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলতে দেবে না।
আরও পড়ুন: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে 'গণহত্যা' ঘোষণা করুন: মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের রেজ্যুলেশন পেশ
তিনি টুইটারে লিখেন, ‘গণহত্যার স্বীকৃতি ঐতিহাসিক রেকর্ডকে শক্তিশালী করে, আমাদের সহকর্মী আমেরিকানদের জানায় এবং এই ধরনের অপরাধ সহ্য করা বা ভুলে যে যাওয়া হবে না তা অপরাধীদের জানতে দেয়।’
রো খান্না বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাঙালি গণহত্যার স্বীকৃতি চেয়ে প্রথম রেজ্যুলেশন পেশে রিপাবলিকান স্টিভ চ্যাবোটের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত, যেখানে আমাদের সময়ের সবচেয়ে ভুলে যাওয়া গণহত্যায় লাখ লাখ বাঙালি, হিন্দু নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।’
‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি’ শিরোনামের ৮ পৃষ্ঠার রেজ্যুলেশনে পাকিস্তান সরকারের এই গণহত্যার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণের প্রেক্ষিতে স্বীকৃতিটি দেয়ার কথা বলা হয়। সেখানে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করার এবং যেসব অপরাধী এখনও জীবিত আছে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এটি ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা করে। যেখানে স্বীকার করা হয় যে বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নৃশংসতা মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা। যা এই ধরনের নৃশংসতার শিকারদের মৃত্যু ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করে এবং তাদের কষ্টের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে।
রেজ্যুলেশনটি স্বীকার করে যে সমগ্র জাতিগত গোষ্ঠী বা ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো তাদের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর জাতিগত বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এটি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে এই অঞ্চলে বসবাসকারী সকল মানুষের অধিকারের সুবিধা ভোগ করার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করবে। যার ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সুযোগ উপভোগ করা যাবে।
আরও পড়ুন: গণহত্যার ৫ম বার্ষিকী উপলক্ষে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ
বার্মিজ সেনাদের নৃশংসতা মানবতার বিরোধী এবং গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে 'গণহত্যা' ঘোষণা করুন: মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের রেজ্যুলেশন পেশ
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য স্টিভ চ্যাবট ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেস সদস্য রো খান্না মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর চালানো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি রেজ্যুলেশন বা প্রস্তাব পেশ করেছেন।
চ্যাবট বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছিল সেটি ভুললে চলবে না। ওহাইও’র ফার্স্ট ডিস্ট্রিক্টে আমার হিন্দু ভোটারদের সহায়তায় রো খান্না ও আমি হিন্দুসহ বাঙালিদের ওপর চালানো ব্যাপক নৃশংসতা, নির্দিষ্ট করে বললে গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য রেজ্যুলেশন পেশ করেছি।’
চ্যাবোট জানান, তারা অবশ্যই বছরের পর বছর ধরে গণহত্যার লাখ লাখ মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলতে দেবে না।
তিনি টুইটারে লিখেন, ‘গণহত্যার স্বীকৃতি ঐতিহাসিক রেকর্ডকে শক্তিশালী করে, আমাদের সহকর্মী আমেরিকানদের জানায় এবং এই ধরনের অপরাধ সহ্য করা বা ভুলে যে যাওয়া হবে না তা অপরাধীদের জানতে দেয়।’
আরও পড়ুন: কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদার করবে
রো খান্না বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাঙালি গণহত্যার স্বীকৃতি চেয়ে প্রথম রেজ্যুলেশন পেশে রিপাবলিকান স্টিভ চ্যাবোটের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত, যেখানে আমাদের সময়ের সবচেয়ে ভুলে যাওয়া গণহত্যায় লাখ লাখ বাঙালি, হিন্দু নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।’
‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি’ শিরোনামের ৮ পৃষ্ঠার রেজ্যুলেশনে পাকিস্তান সরকারের এই গণহত্যার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণের প্রেক্ষিতে স্বীকৃতিটি দেয়ার কথা বলা হয়। সেখানে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করার এবং যেসব অপরাধী এখনও জীবিত আছে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এটি ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা করে। যেখানে স্বীকার করা হয় যে বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নৃশংসতা মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা। যা এই ধরনের নৃশংসতার শিকারদের মৃত্যু ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করে এবং তাদের কষ্টের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে কংগ্রেসে প্রস্তাব উত্থাপন
রেজ্যুলেশনটি স্বীকার করে যে সমগ্র জাতিগত গোষ্ঠী বা ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো তাদের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর জাতিগত বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এটি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে এই অঞ্চলে বসবাসকারী সকল মানুষের অধিকারের সুবিধা ভোগ করার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করবে। যার ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সুযোগ উপভোগ করা যাবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ওপর গণহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে বিশ্বাস করি না: মার্কিন কংগ্রেসম্যান
গণহত্যার ৫ম বার্ষিকী উপলক্ষে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ
বাংলাদেশে আসার পাঁচ বছর পূর্তি ও মিয়ানমারে গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে সমাবেশ ও র্যালি করেছে রোহিঙ্গারা। এসব সমাবেশে রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য সেফ জোন স্থাপন, নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প, শফিউল্লাহ কাটা, বালুখালী, জামতলি, হাকিমপাড়া, মধুরছড়াসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে ১২টি সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
২৫ আগস্টকে ‘রোহিঙ্গা জেনোসাইড ডে’ (রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস) আখ্যায়িত করে তারা নিজ ভূমি মিয়ানমারের আরাকানে ফিরে যেতে চায় এবং গণহত্যার বিচার দাবি করেন।
রোহিঙ্গা আগমনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট প্রথম বড় ধরনের সমাবেশ করেছিল রোহিঙ্গারা। ওই সমাবেশে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উপস্থিত হয়েছিল। ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মাস্টার মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে।
আরও পড়ুন:অবৈধ স্থাপনা: কক্সবাজারের ডিসিকে হাইকোর্টে তলব
এরপর গত দুই বছর রোহিঙ্গারা সমাবেশ করতে পারেনি। এ বছর সরকার বিভিন্ন ক্যাম্পে পৃথক পৃথক সমাবেশ করার অনুমতি দেয়।
২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সমাবেশে অবিলম্বে প্রত্যাবাসন শুরু করা, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ফিরিয়ে দেয়া, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য সেফ জোন প্রতিষ্ঠাসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবি বাস্তবায়নে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সমাবেশে।
কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এআরএসপিএইচ’র সেক্রেটারি মাস্টার জোবাইর, মাস্টার নুরুল আমিন, মোহাম্মদ রফিক, জুমাদিলা বেগম প্রমুখ।
এসব সমাবেশে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ফিরে যেতে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন মিয়ানমারের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের ডিসি-এসপি’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এলো জীবিত ডলফিন
রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সহায়তা চায় ইউএনএইচসিআর
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনামানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও বেশি বিনিয়োগ আহ্বান করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বলেছে, এর মাধ্যমে শরণার্থীরা বাংলাদেশে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে এবং স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর তাদের সম্প্রদায়কে সমর্থন করতে এবং সর্বোপরি তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন রক্ষাকারী সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই তহবিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
২০২০ এর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং পাঁচ লাখের বেশি বাংলাদেশি জনগণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা চাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত যার মাত্র ৪৯ শতাংশ তথা ৪২৬.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
একইসঙ্গে ইউএনএইচসিআর বলেছে, রোহিঙ্গারা যাতে বাস্তুচ্যুত হয়ে না থাকে। এবং স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি তৈরি করতে রাজনৈতিক সংলাপ ও কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য দ্বিগুণ প্রচেষ্টা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি কিছু করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি: মন্ত্রী ওয়াং
রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবেন না, সহযোগিতা বাড়ান: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ব্যাচেলেট
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানকে শেখ হাসিনা
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড গণহত্যার শামিল: শেখ পরশ
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড গণহত্যার শামিল। কারণ সেদিন নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড ছিল সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পিত।
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ আয়োজিত কোরআন খতম, দোয়া ও অসহায়-দুঃস্থদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শেখ পরশ এসব কথা বলেন। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে যুবলীগ ঘোষিত মাসব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে পরশ আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। কিন্তু তারা তার নাম বাঙালি জাতির অন্তর থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুই বলেছেন- ‘নেতার মৃত্যু হতে পারে, কিন্তু আদর্শের মৃত্যু নেই।’ বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর আলম শাহীন, খালেদ শওকত আলী, সাজ্জাদ হায়দার লিটন, মোয়াজ্জেম হোসেন, মৃনাল কান্তি জোয়াদ্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, বদিউল আলম, শেখ ফজলে নাঈম, কাজী মাজহারুল ইসলাম, সাইফুর রহমান সোহাগ, জহির উদ্দিন খসরু, মাইন উদ্দিন রানা, জয়দেব নন্দী, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতরা।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু সকল যুগেই প্রাসঙ্গিক ও সমকালীন: শেখ পরশ
শেখ হাসিনার কারণে উত্তরবঙ্গে 'মঙ্গা' শব্দটি নিশ্চিহ্ন: পরশ
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার এখতিয়ার নিয়ে রায় দেবেন জাতিসংঘের আদালত
মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো নিয়ে দেশটির শাসকদের অভিযুক্ত করে দায়ের করা মামলা অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে শুক্রবার রায় দেবেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত।
মিয়ানমারের দাবি, ২০১৯ সালে আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ গাম্বিয়ার করা মামলাটি অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এ ব্যাপারে এখতিয়ার নেই। হেগ ভিত্তিক আদালত এ বিষয়ের ওপর রায় দেবেন।
বিচারকরা মিয়ানমারের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করলে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার প্রমাণ সম্প্রচার করে আদালতে শুনানির প্রক্রিয়া প্রণয়ন করবেন।
রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতাকে অধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের সমতুল্য বলা হয়েছে। মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংস দমন-পীড়ন গণহত্যার সমান।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে থাই রাষ্ট্রদূত
রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মধ্যে মিয়ানমার গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করছে বলে বিশ্ব আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়ই কনভেনশনের পক্ষ এবং সব স্বাক্ষরকারীর এটি কার্যকর নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে বলে যুক্তি দেখায় দেশটি।
মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা ফেব্রুয়ারিতে যুক্তি দেন, বিশ্ব আদালত কেবল রাষ্ট্রের মধ্যে মামলার শুনানি করে এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার পক্ষ থেকে গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের অভিযোগ আনায় মামলাটি বাতিল করা উচিত।
তারা আরও দাবি করে, গাম্বিয়া মামলাটি আদালতে আনতে পারে না কারণ এটি মিয়ানমারের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না এবং মামলা দায়েরের আগে দুই দেশের মধ্যে আইনি বিরোধ ছিল না।
গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী দাউদা জালো ফেব্রুয়ারিতে বলেন, মামলাটি অগ্রসর হওয়া উচিত এবং এটি ওআইসি নয়, তার দেশই এনেছে।
জ্যালো আদালতকে বলেন, ‘আমরা কারও প্রক্সি নই।’
এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডস ও কানাডা গাম্বিয়াকে সমর্থন করছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যকে এক লাখ রোহিঙ্গার পুনর্বাসনের অনুরোধ ঢাকার
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলার পর ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে একটি ক্লিয়ারেন্স অভিযান শুরু করে। এতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা ও হাজার হাজার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
তবে গত বছর মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে আইসিজের মামলাটি জটিল হয়ে পড়ে। ফেব্রুয়ারির শুনানিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির সামরিক বাহিনীর গঠিত সরকারকে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।