জেলার প্রত্যাহার
শরীয়তপুরে ভুল আসামির মুক্তি: ডেপুটি জেলার বরখাস্ত ও জেলার প্রত্যাহার
শরীয়তপুরে নামের ভুলে লিটন সিকদার সেজে কারাগার থেকে জামিনের কাগজপত্র দেখিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন লিটন ফরাজী নামে এক আসামি। এ ঘটনায় জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত ও জেলার আমীরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান ডেপুটি জেলারকে বরখাস্ত ও জেলারকে প্রত্যাহারের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত চিঠি শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পৌঁছায়।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর কারাগারের কারারক্ষী মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় শরীয়তপুর কারাগারে এ ঘটনা ঘটে। পরে ব্যাপারটি বুঝতে পেরে ৫ এপ্রিল পালং মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন শরীয়তপুর জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাট থানার একটি চুরির ঘটনার মামলার আসামি লিটন ফরাজি ও লিটন সিকদার। তারা দুজন রাজবাড়ী ও খুলনার দুটি মামলারও আসামি। লিটন ফরাজি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দামুরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা। আর লিটন সিকদার খুলনার খালিশপুরের বাসিন্দা। গত ১১ মার্চ তাদের শরীয়তপুর জেলা কারাগারে আনা হয়।
রবিবার শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে গোসাইরহাট থানার ওই মামলায় তাদের জামিন দেয়া হয়। আর খুলনা ও রাজবাড়ীর মামলায় লিটন সিকদার জামিনে থাকলেও লিটন ফরাজি জামিনে ছিলেন না।
রবিবার শরীয়তপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ওই জামিনের কাগজ কারাগারে পৌঁছালে কারা কর্তৃপক্ষ লিটন সিকদারকে না ছেড়ে লিটন ফরাজিকে সন্ধ্যায় মুক্তি দেয়। লিটন সিকদারকে আটক রাখা হয়। লিটন সিকদারের স্বজনেরা বিষয়টি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তখন তাদের নজরে আসে নামের ভুলে লিটন ফরাজি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পরে সোমবার রাতে লিটন সিকদারকে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে লিটন ফরাজিকে এখনো খুঁজে পায়নি কারা কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কারা কর্তৃপক্ষকে জানান শরীয়তপুর জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) গোলাম হোসেন। কারা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্তের জন্য বরিশাল বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। মঙ্গলবার তারা শরীয়তপুর জেলা কারাগার পরিদর্শন করে ঘটনাটির তদন্ত করে। তবে তদন্ত এখনো শেষ করেনি তদন্ত কমিটি।
এ ঘটনায় বুধবার কারা মহাপরিদর্শক মোমিনুর রহমান ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। আর কারাগারের জেলার আমীরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করেন এবং তাকে ঢাকা বিভাগীয় কারা উপ মহাপরিদর্শকের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
জেলা কারাগারের সুপার গোলাম হোসেনকে একাধিক বার ফোন করে পাওয়া যায়নি, পরে তিনি তার ব্যবহৃত সরকারি ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।
জেলার আমীরুল ইসলামের মুঠোফোনে জানান, আমাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে আর ডেপুটি জেলারকে আজকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর গত মঙ্গলবার কারারক্ষী মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য ঝালকাটির জেলার জান্নাতউল ফরহাদ জানান, এখনো আমাদের তদন্ত শেষ হয়নি এবং তদন্ত রিপোর্ট জমা এখনো দেয়া হয়নি।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক জানান, কারা মহাপরিদর্শক মোমিনুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ডেপুটি জেলারকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কারাগারের জেলারকে প্রত্যাহারের করা হয়েছে।