মালিহা ফরিদী সারা
বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য
বরিশাল নগরীর ভাড়া বাসায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মালিহা ফরিদী সারার (২৪) গলায় ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন থাকায় এই মৃত্যুকে রহস্যজনক বলছে পুলিশ। এছাড়াও ওই বাসা ভাড়া নেয়ার সময় স্বামী ও বাবার মোবাইল নম্বর ভুল দেয়া হয়েছিলে বলে জানান তারা।
মালিহার সঙ্গে মোহাম্মদ ইমন নামের এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শনিবার রাত ১১টায় ওই বাসায় মালিহা অসুস্থ হওয়ার পর খবর পেয়ে ইমনের বাবা-মা ও স্বজন পরিচয়ে তাকে শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মালিহা ওই রাতেই মারা যাওয়ার পর তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় নি এবং মৃতের লাশ হাসপাতালেই পড়ে থাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ রবিবার দুপুরে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে বলে সোমবার বিকালে জানিয়েছেন ওসি নুরুল ইসলাম।
মালিহা নগরীর ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজে বিএ অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার একেএম ফরিদ আহমেদের মেয়ে। নগরীর কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকার ৩ নম্বর লেনের একটি ফ্ল্যাটে একা বসবাস করতেন।
শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার বিকালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে লাশ পর্যবেক্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন: গোসল করতে গিয়ে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার, যুবক গ্রেপ্তার
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালিহা শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাড়া বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজন পরিচয় দিয়ে প্রেমিক ইমনের বাবা মা হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই রাতেই মলিহা মারা গেলে লাশ হাসপাতালে রেখে তারা চলে যান। তাদের খুঁজে না পেয়ে পুলিশে খবর দেয়া হলে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এছাড়াও বাড়িভাড়া নেয়ার সময় ভাড়াটিয়া তথ্য ফরমে মালিহা স্বামীর নাম উল্লেখ করেছেন মোহাম্মদ তানভীর রাফি। তানভির রাফির মোবাইল নম্বর ১১ সংখ্যার বদলে ১০ সংখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া বাবার মোবাইল নম্বরও ভুল দিয়েছিলেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মালিহার সঙ্গে মোহাম্মদ ইমন নামের এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই দিন মালিহাকে ইমনের বাবা মা হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ইমনের বাবা মায়ের আচরণ সন্দেহজনক। অসংলগ্ন কথা বলে কিছু গোপন করার চেষ্টা করছেন বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া মালিহার গলায় ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ইমনের বাবা মা– পুলিশকে জানান, মালিহা শনিবার রাতে তাদের মোবাইল ফোনে জানান যে তার শরীর খুব খারাপ। এরপর তারা ফ্ল্যাটে গিয়ে মালিহাকে নিয়ে হাসপাতালে যান। সেখানে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। রাতে মালিহার মৃত্যুর খবর তার বাবাকে না জানালেও পরের দিন রবিবার সকালে ফোন দিয়ে তাকে জানানো হয় ‘মালিহা আত্মহত্যা করেছে’।
বরিশাল কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, মালিহাকে শনিবার রাত দেড়টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি হত্যা না আত্মহত্যার শিকার তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।