পানামা পেপার্স
পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসাদের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপ জানতে চায় হাইকোর্ট
বিশ্বজুড়ে আলোচিত পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে নাম আসা বাংলাদেশি অর্থপাচারকারীদের ব্যাপারে গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডিকে) আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ সুইচ ব্যাংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার বন্ধে ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার দাবিতে করা এক রিট আবেদনের এবং একই বিষয়ে স্বত:প্রণোদিত হয়ে জারি করা এক রুলের ওপর শুনানিকালে এই আদেশ দেন।
একই সঙ্গে অর্থ পাচারকারীদের ব্যাপারে তথ্য চাওয়ার চার বছর পার হলেও দুদককে কেন তথ্য দেয়া হয়নি এবং এক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ গোপনে বিদেশে পাচারকরা অর্থ অবিলম্বে ফেরত আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।
রিটে অর্থসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাণিজ্যসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১৪ জনকে বিবাদী করা হয়।
আরও পড়ুন: কেরোসিন-ডিজেলের মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না: হাইকোর্ট
এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বিবাদীদের চরম ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পানামা পেপার্স এবং প্যারাডাইস পেপার্সে যাদের নাম আসছে তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করার জন্য বিবাদীদের প্রতি কেন নির্দেশ দেয়া প্রদান করা হবে না এবং এ বিষয়ে প্রতি মাসে কেন অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
একইসঙ্গে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অতীতের এবং বর্তমানে এ ধরনের অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে অর্থপাচারকারীদের নাম-ঠিকানা ও তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চান আদালত। সে অনুযায়ী সিআইডির কাছে তদন্তাধীন ৮টি অর্থ পাচার মামলার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন গত ১৭ অক্টোবর দাখিল করা হয়। এরপর গত রবিবার দুদক অর্থপাচারে জড়িত ৪৩ জনের একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেন। প্যারাডাইস পেপারর্সের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার পরিবারের সদস্য নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল ও তাজওয়ার মো. আউয়ালসহ মোট ২৯ জনের একটি তালিকা দাখিল করা হয়।
এছাড়া পানামা পেপার্সে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনের একটি তালিকা দাখিল করে দুদক। তবে পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে আসা বাংলাদেশি পাচারকারীদের নামের তালিকা ছাড়া তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে পারেনি দুদক।
আরও পড়ুন: নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্তিতে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
তালিকা দাখিলের পর শুনানিতে অংশ নিয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, বিদেশে ব্যাংক একাউন্ট খোলা, অফশোরসহ অন্যান্য কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা সম্পত্তি অর্জন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য মূলত বিএফআইইউ সর্বাধিক উপযুক্ত মাধ্যম। কিন্তু অভিযুক্তদের ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য বিএফআইইউ’র কাছে তথ্য চেয়ে পাওয়া যায়নি। এছাড়া আইন অনুযায়ী দুদক শুধু ঘুষ ও দুর্নীতির তদন্ত করতে পারে। যদি বিএফআইইউ দায়িত্ব না দেয় তাহলে দুদক অর্থ পাচারের তদন্ত করতে পারে না। যাদের নাম এসেছে এদের ব্যাপারে তদন্তের ক্ষেত্রে দুদকেরি আইনি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান ও তদন্ত এগোয়নি।
শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, ২০১৬, ২০১৭ সালের ঘটনা, কিন্তু এখনও ব্যবস্থা নেই। আমরা তাদের ব্যাপারে আপডেট জানতে চাচ্ছি। এখনই শুরু না করলে দূরে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা অন্তত শুরু করতে না পারলে এগুলো বাদ দেয়ার কথা বলে দেন। আমাদেরতো দেশের প্রতি কিছু দায়িত্ব আছে। এসব চিন্তায় মাঝে মাঝে ঘুম হয় না।
আদালত বলেন, আমাদের দেশে নানা ধরণের সংগঠন থাকলেও দুর্নীতিবিরোধী কোনো সংগঠন আছে? ভারতে কিন্তু আছে। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও আন্দোলন করে। আমরা কেউই চাই না, এত রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে অর্জিত এদেশে দুর্নীতি হোক, অর্থপাচার হোক। এখানে তথ্য চাওয়া হলে নানা অজুহাতে দেয়া হয়না। বলা হয় এই টার্মস আছে, কন্ডিশন আছে। কিন্তু ইন্ডিয়ার আদালতের রায় দেখেন। সব অযুহাত উড়িয়ে দিয়েছে। আদালত চাইলেই সব তথ্য দিতে বাধ্য।
এসময় রিটকারী আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসার পরপরই ইন্ডিয়া কিন্তু বিষয়টি তদন্তে একটি বিশেষ কমিটি করে দিয়েছে। এটা করাতো সরকারের দায়িত্ব। এটাতো দেশের জন্য কলঙ্ক। হাইকোর্ট এ বিষয়ে আদেশ দেয়ার পরে সিআইডি ছাড়া অন্য বিবাদীদের কেউই আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক আসেনি, বিএফআইইউ আসেনি। অন্য ১০-১২জন বিবাদীও আসেনি। তাদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করার পর আদেশ দিয়েছেন,তারপর আজও তারা আসেনি। এটা আদালতের আদেশের অবমাননা।
তিনি বিবাদীদের প্রতি আদালত অবমাননার রুল জারি করার আর্জি জানালে আদালত বলেন, আগে একটা আদেশ দিই, তারপর তখন না আসলে দেখা হবে। পরে হাইকোর্ট আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: দেশের সব নদীর তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট