ম্যা্ক্সন
কলকাতায় চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যা্ক্সনের রহস্যজনক মৃত্যু
চট্টগ্রামের কথিত শিবির ক্যাডার, পুলিশের তালিকাভুক্ত ২২ মামলার শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. নূর নবী ম্যাক্সনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে ‘শিবির ম্যাক্সন’ ভারতে পালিয়ে ছিল।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কালিগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ম্যাক্সনের ছোট ভাই আবছার উদ্দিন।
নিহত ম্যাক্সন চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার আবদুল লতিফের ছেলে। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি অস্ত্র মামলা ও ১৭টি চাঁদাবাজির মামলাসহ ২২ মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
ম্যাক্সন দীর্ঘদিন ধরে ভারতের কলকাতায় ছিলেন। বাংলাদেশের পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও তাকে দেশে আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ম্যাক্সনের পরিবারের দাবি, অনামিকা নামে সেখানকার এক বান্ধবী তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে।
এদিকে ভারতীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর এলাকায় তার সঙ্গিনী অর্পিতা হাজরার সঙ্গে থাকতেন ম্যাক্সন ওরফে তমাল চৌধুরী। তবে তারা বিবাহিত ছিলেন না। হাসপাতালে লাশ আনার সময় অর্পিতা সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে লাশ রেখে তিনি নিরুদ্দেশ হন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
ম্যাক্সনের ছোট ভাই আবছার উদ্দিন বলেন, গতকাল রাতে কলকাতার বর্ধমান জেলার কালিগঞ্জে আমার ভাই ম্যাক্সনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। অনামিকা নামের এক নারী ঘুমের ওষুধ খাইয়ে আমার ভাইকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। এই নারী আমার ভাইকে ভারতের গ্রিনকার্ড ও আধারকার্ড পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রথম দিকে চার লাখ টাকা দাবি করে। আমি প্রথমে চার লাখ টাকা পাঠিয়েছিলাম। গতকাল বিকালে ওই নারী আবার ১৮ লাখ টাকা দাবি করে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি তো প্রথমে চার লাখ টাকা চেয়েছিলেন। জবাবে তিনি বলেন, আপনার ভাই সন্ত্রাসী তাই টাকা বেশি লাগবে। আমি এতো টাকা দিতে না পারায় গতকাল রাতে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন: টঙ্গীতে সন্ত্রাসী হামলায় যুবক নিহত
তিনি আরও বলেন, কালিগঞ্জ পুলিশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। সেখানে একটি হত্যা মামলা দায়ের হবে।
সূত্র জানায়, ম্যাক্সনের ছোট ভাই হাসপাতালে যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ থেকে ম্যাক্সনের বর্তমান স্ত্রী লাশটি বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বর্তমানে লাশটি কলকাতার এম. আর বাঙুর হাসপাতালে রয়েছে।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহান বলেন, তার পরিবার আমাদের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব। এরপর কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালে একটি ডাকাতির মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় আরেক সন্ত্রাসী সারোয়ারকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র।
ওই মামলায় ২০১৭ সালে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে কাতারে পালিয়ে যান তারা। কাতারে বসে দেশীয় অনুসারীদের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো।
২০১৯ সালেও নয়াহাট এলাকার একজন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি এবং হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। চাঁদার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কাতারে সরোয়ারের সঙ্গে ম্যাক্সনের সংঘর্ষ হওয়ার পর কাতারের পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে দেশে পাঠায়। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সারোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে ম্যাক্সনের কোনো খোঁজ মেলেনি তখন।
জানা যায়, বাংলাদেশে পাঠানোর সময় কাতার এয়ারপোর্ট থেকে কৌশলে পালিয়ে ভারতে চলে আসে ম্যাক্সন। সেখানে তমাল চৌধুরী নাম ধারণ করে মাছের ব্যবসা শুরু করেন এক সময়ের দুর্ধষ এই সন্ত্রাসী।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার ডানলপ এলাকা থেকে ম্যাক্সনকে সেখানকার গোয়েন্দা সদস্যরা গ্রেপ্তার করে। পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। স্থানীয়দের কাছে ‘শিবির ম্যাক্সন’ নামে পরিচিত। তার নামে রয়েছে ২২টি মামলা। এক সময়ের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে ভারতের কলকাতায় আছেন। বাংলাদেশের পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও তাকে দেশে আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ম্যাক্সনের পরিবারের দাবি, অনামিকা নামে সেখানকার এক বান্ধবী তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় সন্ত্রাসীদের মারধরে আহত তরুণের মৃত্যু
সন্ত্রাসীদের হাতে ফ্রান্সে বাংলাদেশি খুন