জাতির সেবা
জাতির সেবা করতে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার আহ্বান শেখ হাসিনার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের শেষ সময়ে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, 'আজ আমি নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’ ভাষণটি প্রচার হয় সন্ধ্যা ৭টায়।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'উদয়াচল' কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ডাক এসেছে, এখন রাস্তায় নামার সময়।”
২৪ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী করতে, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করতে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তিনি আরও পাঁচ বছরের মেয়াদ চান।
আরও পড়ুন: আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হবে: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর তিন মেয়াদে (২০০৯-২০২৩) সাম্য ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে জনকল্যাণমুখী সমাজ বিনির্মাণের প্রক্রিয়ায় 'গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা' অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, 'আপনাদের মূল্যবান ভোট পেয়ে আমরা যদি আবার সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের গৃহীত কর্মসূচির বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হব। এটি আমাদের জীবনযাত্রার অবস্থার আরও উন্নতির সুযোগ দেবে।’
শেখ হাসিনা অতীতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সেবা করার সুযোগ দেওয়ায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, এই দীর্ঘ যাত্রায় তিনি যা কিছু অর্জন করেছেন তা জনগণের সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না।
তিনি বলেন, 'আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি, তাহলে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, বিষয়টি ক্ষমার চোখে দেখুন। আমি যদি আবার সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে ভুলগুলো সংশোধনের সুযোগ পাব। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।’
শেখ হাসিনা জনগণকে তার পরিবার মনে করেন জানিয়ে তার উপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, 'আসুন আমরা সবাই মিলে এই বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করি।’
গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেন এমন কোনো ধারণা লালন না করে, যা দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রধান বলেন, তার দল ৭ জানুয়ারি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সংসদে পাস হওয়া কোনো আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, 'আমাদের সরকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল এবং যখনই তারা ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, সরকার ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের খাদ্য, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে।
দলের নির্বাচনী ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ১২টি অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: অন্যরা ক্ষমতায় আসে খেতে, আওয়ামী লীগ আসে দিতে: আইনমন্ত্রী
এগুলো হলো:
১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চর্চা ও প্রচার করা।
২. সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা।
৩. কর্মসংস্থানভিত্তিক শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
৪. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
৫. সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থার যান্ত্রিকীকরণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬. কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নয়ন।
৭. গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত অবকাঠামো ও শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৮. ব্যাংক বিমা ও আর্থিক খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৯. নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সাশ্রয়ী করা।
১০. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১১. আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
১২. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা।
গত ১৫ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ৫ গুণ, বাজেটের আকার ১২ গুণ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১৩ গুণ, জিডিপির আকার ১২ গুণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ গুণ, রপ্তানি আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বার্ষিক রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬ গুণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়েছে ৫ গুণ।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রপ্তানি আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫ গুণ হ্রাস পেয়েছে।
পানীয় জলের কভারেজ ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮৪ থেকে কমে ২১ হয়েছে। মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৩৬০ থেকে কমে ১৫৬ হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আট গুণ বেড়েছে এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার ২৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কারিগরি শিক্ষায় সাক্ষরতার হার ২২ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া শস্যের উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ।
তিনি বলেন, 'আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আমরা ঢাকায় মেট্রোরেল চালু করেছি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছি এবং পাতাল রেল নির্মাণের উদ্বোধন করেছি। আমরা রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছি।’
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র রক্ষায় আবারও শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন: ওবায়দুল কাদের
তিনি বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ভূগর্ভস্থ সড়ক 'বঙ্গবন্ধু টানেল' নির্মাণ করেছি। কক্সবাজারে একটি দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশনসহ ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১' উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, যেকোনো অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বহুগুণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০০৯ সালে জিডিপি ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে জিডিপি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ক্ষমতাসীন দলের প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ সাত গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা; যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
সমালোচকদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটা দুঃখজনক যে তারা জাতির কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে না। দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করাই তাদের চরিত্র। মনে হচ্ছে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখলে এসব মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ এবং আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। মানুষ আজ উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে।
পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শান্তি চায় এবং যুদ্ধ পরিহার করে।
আমরা ফিলিস্তিন ও ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান চাই। আমরা ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার অবসান চাই। বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে রয়েছে।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের স্বার্থে রবিবার ভোটকেন্দ্রে যাবেন: নারায়ণগঞ্জের জনসভায় শেখ হাসিনা