দুদক
দুদকের আপিল মঞ্জুর, কাজে ফিরতে পারবেন না সাবেক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন
কোনো কারণ দর্শানো (শোকজ) ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মচারীকে অপসারণ করা সংক্রান্ত ৫৪(২) বিধি বাতিলের বিরুদ্ধে দুদকের আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন চাকরিতে ফিরতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
আরও পড়ুন: এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজে যাবে: প্রশ্ন হাইকোর্টের
আদালতে শরীফের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহউদ্দিন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
খুরশিদ আলম খান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মচারীকে অপসারণ করা সংক্রান্ত ৫৪(২) বিধি বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, দুদকের আপিল মঞ্জুর করে সেই রায় আপিল বিভাগ আজ বাতিল করে দিয়েছেন।
এছাড়া এ সংক্রান্ত শরীফ যে রিট আবেদন করেছিলেন সেই রিট পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন আদালত। এর ফলে শরীফ আর চাকরিতে ফিরতে পারবেন না।
২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দর্শিয়ে কোনো কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করে অথবা নব্বই দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করে তাকে চাকরি হতে অপসারণ করতে পারবে।’
২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি অনুসারে মো. আহসান আলী নামের দুদকের এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। তিনি ৫৪ (২) বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন। সে রিটে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর এ বিধি বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, যা ২০১৬ সালের নভেম্বরে খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এর বিরুদ্ধে পরের বছর দুদক পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে। পরে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর দুদককে আপিল করার অনুমতি দেন। আর এই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। পরে দুদক আপিল করে।
এদিকে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিনকে গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি অপসারণ করলে তিনিও দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি ও চাকরিচ্যুতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
পরে ১১ এপ্রিল তা শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু তখন পর্যন্ত মো. আহসান আলীর মামলায় দুদকের দুদকের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় শরীফের রিটের শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
পরে এ মুলতবি আদেশের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৬ জুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন শরীফ।
গত ৩ জানুয়ারি শরীফের সেই লিভ টু আপিল ও দুদকের আপিল শুনানির জন্য একসঙ্গে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।
এরপর একসঙ্গে দুই আবেদনের শুনানি শেষে গত ২ মার্চ রায়ের জন্য ১৬ মার্চ দিন ঠিক আপিল বিভাগ।
আরও পড়ুন: বেসরকারি হজ প্যাকেজে ন্যূনতম খরচ ৬.৭২ লাখ টাকা: হাব
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ নির্ধারণ
এসেনসিয়াল ড্রাগসে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট: দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ
দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের সরকারি অডিটে ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
দুই মাসের মধ্যে অনুসন্ধান করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন নজরে নিয়ে রবিবার (১২ মার্চ) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: অনলাইন প্লাটফর্মে ফারাজ সিনেমাটি প্রদর্শন ও প্রচার বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের
রুলে এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। এর আগে শনিবার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ এক সরকারি অর্থ লুটপাটের স্বর্গরাজ্য। ক্যান্টিন বন্ধ, কিন্তু বিল তোলা হয়েছে ভর্তুকির। কাঁচামালের তুলনায় ওষুধের উৎপাদন কম দেখিয়ে করা হয়েছে তছরুপ। বিধি লঙ্ঘন করে টেন্ডার দেয়া হয়। বিনা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ বাণিজ্য এমন কোনও অনিয়ম নেই যা হয়নি এখানে। এটি দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগ্স কোম্পানি লিমিটডে (ইডিসিএল)। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এটি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি অডিটেই আর্থিক বড় দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে।
গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে ৩২টি গুরুতর অনিয়মে সরকারি ৪৭৭ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় যেসব অনিয়ম ধরা পড়েছে তার মধ্যে আছে-নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ব্যবহৃত কাঁচামালের চেয়ে ওষুধ উৎপাদন কম দেখানো, উৎপাদিত ওষুধে সঠিক মাত্রায় কাঁচামাল ব্যবহার না করে গুণগত ওষুধ উৎপাদন না করা, কনডম প্রস্তুতে কাঁচামালের ঘাটতি, বনভোজনের নামে ভ্রমণভাতা, করোনাকালীন ক্যান্টিন বন্ধ থাকলেও প্রাপ্যতা না হওয়া সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদেরকে অনিয়মিতভাবে ক্যান্টিনে সাবসিডি প্রদানের নামে টাকা আত্মসাৎ।
এছাড়া সর্বনিম্ন দরে মালামাল ক্রয় না করে উচ্চমূল্যে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে সরকারি টাকার লুটপাট, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে ভাগাভাগির মাধ্যমে সরবরাহকারীগণকে কার্যাদেশ দিয়ে মালামাল ক্রয় সংস্থার আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম উঠে এসেছে নিরীক্ষায়।
প্রাথমিকভাবে ইস্যুকৃত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫১টি আপত্তি তুলেছে অডিট কমিটি। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কমিটি ১৯টি আপত্তি বাতিল করে দেয়। বাকি ৩২টিকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম (এসএফআই) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে থেকে ১১টিকে পিএ কমিটির জন্য (সংসদীয় কমিটিতে) পাঠানো হচ্ছে বলে সূত্র বলছে। পরিচালক ও দলনেতা মোহা. নূরুল আবসারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দলটি ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ১০ই এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা করেন। প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এআইআর হিসেবে দাখিল করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ই-অরেঞ্জ থেকে রাজস্ব আদায় না করায় হাইকোর্টের উষ্মা প্রকাশ
ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকিকে দুদকের মামলায় জামিন দেননি হাইকোর্ট
খণ্ডিত নয়, পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে: দুদকের চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে খণ্ডিত তথ্য না দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সহজ হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সুনীতি’ নামে স্মরণিকার আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এসময় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ভালো কাজ সবাই ভালো ভাবে দেখে না, অনেকে ত্রুটি দেখে। স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করতে সমালোচনা করলে কোনো কিছু যায় আসে না, আমি আপনাদেরকে সবসময় সহকর্মী মনে করি, আমাদের ও আপনাদের উদ্দেশ্য অভিন্ন।
তিনি আরও বলেন, সত্যের পরও সত্য থাকে, তথ্যের পরেও তথ্য থাকে; তাই সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও একটু দেখে নিবেন; কেউ যেন হয়রানি না হয়। সত্যকে সত্য এবং সাদাকে সাদা বলতে হবে।
অনেক সময় অনেক তথ্য থেকে যায়, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা আমাদের কাজ না। খণ্ডিত তথ্য না দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে ন্যায় বিচারটা আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: কৃষি ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
দুদকের কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, সুনীতি একটি মূল্যবান দলিল, এখানে অনেকের ছোট ছোট কথা, সুনীতির পক্ষে আমরা আছি, এটাকে পজিটিভলি নিব। এর কথাগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। আপনারা এই নীতিকে ধারণ করতে পারবে ভালো হবে। এখানে ভাবনার খোরাক আছে কাউকে হয়রানি নয় দেশের স্বার্থে লেখবেন তাহলেই দেশ উপকৃত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, আপনারা ভালো সংবাদ করবেন এটাই স্বাভাবিক, নেগেটিভ বলবেন, তবে নেগেটিভ দিয়ে সমাজ প্রতিষ্ঠা হয় না। এজন্য পজিটিভ নিউজ করে সমাজকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র্যাকের সভাপতি আহম্মদ ফয়েজ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জেমসন মাহবুব।
আরও পড়ুন: ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকিকে দুদকের মামলায় জামিন দেননি হাইকোর্ট
বিপিসি’র ৪৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ৩ মাসের মধ্যে দুদককে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ৯ এপ্রিল
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইকবাল হোসেন আদালতে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।
এদিন সকালে সম্রাট আদালতে হাজিরা দেয়ার পর তার আইনজীবী অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময় আবেদন করেন আসামীর আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। এছাড়া তার আইনজীবী স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।
আরও পড়ুন: দুদকের মামলায় সম্রাটের চার্জ শুনানি পিছিয়ে ৮ নভেম্বর
সারাদেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২২ সালের ২২ আগস্ট সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
অভিযোগপত্রে সম্রাটের বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন: সম্রাটের জামিন বাড়লো ২০ অক্টোবর পর্যন্ত
দুদকের আবেদনে সম্রাটের জামিন কেন বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকিকে দুদকের মামলায় জামিন দেননি হাইকোর্ট
টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় দণ্ডিত আসামি চুমকিকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তাকে জামিন না দিয়ে ২১ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে তার করা আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করতে বলেছেন আদালত।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান এবং আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব শফিক।
পরে আসিফ হাসান জানান, দণ্ডের পর চুমকি আপিল করলে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এর মধ্যে জামিন আবেদন করে। শুনানি শেষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য আজকের দিন (সোমবার) রাখেন। আজকে আদালত মৌখিকভাবে জামিন না দেয়ার কথা বলে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করতে বলেছেন।
গত বছরের ২৭ জুলাই এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত করা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকিকে ২১ বছর কারাদণ্ড দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদ।
আরও পড়ুন: ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুনানি ২০ জুন
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় চুমকিকে ১ বছর কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাস কারাদণ্ড, ২৭ (১) ধারায় প্রদীপ ও চুমকিকে ৮ বছর কারাদণ্ড, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় প্রদীপ ও চুমকিকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও চার কোটি টাকা জরিমানা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় প্রদীপ ও চুমকিকে দুই বছর কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ২ মাস কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
প্রত্যেক কারাদণ্ড একসঙ্গে চলবে।
গত বছরের ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে এ মামলায় দুদকপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর বিচারক ২৭ জুলাই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। তদন্তের পর টাকার অংকে কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
২০২১ সালের ২৮ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর আসামি প্রদীপের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। সম্পদ বিবরণীতে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেয়া এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার শুরু থেকে চুমকি পলাতক থাকলেও গত বছরের ২৩ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেই থেকে কারাবন্দি চুমকি কারন।
এদিকে, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।
এই হত্যা মামলায় গত বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রদীপসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন
যুক্তরাষ্ট্রে গোলাপের বাড়ি: দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি কেনার অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অনুসন্ধান শেষে আগামী চার মাসের মধ্যে দুদককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: টিপু-প্রীতি হত্যা: বিডি বাবুকে জামিন দেননি হাইকোর্ট
রুলে নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি কেনা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবদুস সোবহান মিয়ার নামে অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
আদালতে সোমবার রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
এর আগে রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্রসচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আবদুস সোবহান মিয়াকে (গোলাপ) বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে ২০১৮ সালে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি কেনা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবদুস সোবহান মিয়ার নামে অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি কেনা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবদুস সোবহান মিয়ার নামে অনুসন্ধান করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন: অনলাইন প্লাটফর্মে ফারাজ সিনেমাটি প্রদর্শন ও প্রচার বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি। এ তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
ওসিসিআরপির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি।
পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন।
এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।
ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন আবদুস সোবহান।
সে সময় ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার।
এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ছয় লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি।
নিউইয়র্কে কেনা এসব সম্পত্তির নথিপত্র বলছে, সম্পত্তিগুলো নগদ অর্থে কেনা হয়েছিল।
এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন তার স্ত্রী গুলশান আরাও।
ওসিসিআরপির করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবদুস সোবহান নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আরও একটি সম্পত্তি (বাড়ি) কিনেছিলেন।
ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ১২ লাখ ডলার।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এর সাত মাস আগে বাংলাদেশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি কালো দাগ সৃষ্টি করেছে: হাইকোর্ট
বিপিসি’র ৪৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ৩ মাসের মধ্যে দুদককে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির (এসএওসি) বিরুদ্ধে ৪৭২ কোটি টাকার বেশি অনিয়মের অভিযোগে বিষয়ে করা মামলার তদন্ত আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত লিজুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে একটি সুয়োমটো (স্বপ্রণোদিত) রুলের শুনানিতে এ আদেশ দেন।
এর আগে ৪৭২ কোটি টাকার বেশি অনিয়মের ব্যাপারে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ব্যাপারে এসএওসির ৫ পরিচালকের একজন এবং এর ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত চলছে।
মঈনুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অনিয়মে জড়িতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক।
তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে এবং ট্রায়াল কোর্ট তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন। পরে আদালত এ মামলার তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন।
এর আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় ‘৪৭২.৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বিপিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান’- শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। পরে ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট সুয়োমটো রুল ও আদেশ জারি করেন। আদেশে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির ৪৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মের ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চান।
আরও পড়ুন: শর্ত সাপেক্ষে আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
একইসঙ্গে অনিয়মের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন, অডিটর জেনারেল ও বিপিসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির (এসএওসিএল) ২১ অনিয়মের কারণে সরকার ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত এসএওসিএলের নথি পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানতে পেরেছে।
বিপিসি ও এশিয়াটিক ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে ৫০-৫০ যৌথ উদ্যোগ এসএওসিএল। প্রতিষ্ঠানটি ইঞ্জিন তেল, যানবাহনের তেল, ডিজেল, বিটুমিন, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ও ফার্নেস তেল বিপণন ও বিতরণ এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানে জেট ফুয়েল সরবরাহ করে।
এসএওসিএলের নথি পর্যালোচনায় যেসব অসঙ্গতি দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে শীর্ষ কর্মকর্তাদের দ্বারা অর্থ আত্মসাৎ, উচ্চ হার, ওভারটাইম, অনুপস্থিত তহবিল, মামলা-মোকদ্দমা ফি প্রদানে অনিয়ম ও আয়কর অধ্যাদেশ এবং ভ্যাট বিধি লঙ্ঘন।
প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ পরিচালকের একজন ও এর ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত মঈনুদ্দিন আহমেদের মালিকানাধীন এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির কাছে এসএওসিএলের বিক্রি করা লুব্রিকেটিং তেলের বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে সংস্থাটির ১৯৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এসএসিওএলের নথিগুলোতে দেখা গেছে, এওসিএল চালানের বিপরীতে চেক সরবরাহ করেছিল। তবে, চেকে উল্লেখ করা অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়নি।
এছাড়া কোম্পানি আইন অনুযায়ী, অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ। বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে এওসিএলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সিএজি বলছে, ‘এটি গুরুতর অনিয়ম।’
আরও পড়ুন: টিপু-প্রীতি হত্যা: বিডি বাবুকে জামিন দেননি হাইকোর্ট
২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত কোম্পানির জন্য এসএওসিএলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অগ্রিমের জন্য কোনো ভাউচার বা চালান সরবরাহ না করেই ৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন মঈনুদ্দিন আহমেদ।
তিনি ২০১২-১২ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ২৩ কোটি ১১ লাখ টাকা অগ্রিম হিসেবে তুলে নিয়েছেন। কারণ টাকা তোলার কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। তিনি কখনও এই টাকা ফেরত দেননি।
অর্থ তছরুপের দুটি ঘটনায় মঈনুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং তার ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, এসএওসিএলের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে মঈনুদ্দিন আহমেদ গুলশানে ১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় তার স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট এবং ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা দিয়ে রাজধানীর লালমাটিয়া, উত্তর কমলাপুর, বারিধারা, বসুন্ধরা ও চট্টগ্রামের হালিশহরে ৬টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এসএওসিএলের চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা তুলে সেই অর্থ নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন মঈনুদ্দিন আহমেদ।
২০১৩-১৪ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে আমদানি করা এক লাখ ৩৪ হাজার ৩২৫ ড্রাম বিটুমিন হারিয়ে যাওয়ার কারণে এসএওসিএলের বইয়ে ৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে। বিটুমিন ড্রামগুলো চট্টগ্রামের পোর্ট কলোনির গুদামে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
সেখানকার প্রহরী জানান, এসএওসিএলের চাহিদাপত্র দেখেই তিনি সেই পণ্য নিয়ে যেতে দিয়েছেন। তবে গুদামের মালিক এ ধরনের কোনো চাহিদাপত্রের কথা অস্বীকার করেন।
প্রতিষ্ঠানটির কাছে কোনো স্টক রিপোর্ট ছিল না। নিরীক্ষকরা এই ধরনের ঢিলেঢালা অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিপিসিকে দায়ী করেন এবং আর্থিক ক্ষতির জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য এই বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত লুব-ভিত্তিক তেল ও বিটুমিন আমদানির খাতে এসএওসিএলের অ্যাকাউন্টে আরও ৬৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ গালফ পেট্রোলিয়াম পিটিই, গালফ পেট্রোলিয়াম পিএলসি, ইউনাইটেড অয়েল কোম্পানি ও ইউনাইটেড পেট্রোকেমিকেলের নামে নন-অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক ইস্যু করেছিল। চেকগুলোর অর্থ উত্তোলন করা হয়েছিল। তবে, এর বিপরীতে কোনো ভাউচার বা চালান পাওয়া যায়নি। কিছু চেকের পেছনে করা সইয়ে দেখা গেছে, এসএওসিএল কর্মকর্তারা চেকগুলো থেকে অর্থ উত্তোলন করেছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ অনিয়মের পেছনে দায়ী মঈনুদ্দিন আহমেদ ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ। এই দুইজন সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা দিয়ে জীবন বীমার প্রিমিয়ামও কিনেছিলেন। এসএওসিএলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেই সেই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বায়ু দূষণ থেকে মানুষকে বাঁচান: পরিবেশ অধিদপ্তরকে হাইকোর্ট
চসিক কার্যালয়ে দুদকের অভিযান, মশার ওষুধ কেনায় অনিয়ম
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় ৮ জনের একটি টিম চসিক কার্যালয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, নথি তল্লাশি করেন। এসময় মশা মারার ওষুধ কেনায় অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুদক টিম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেলা ১টার দিকে অভিযান শুরু করেন দুদক কর্মকর্তারা। এসময় সংস্থাটির বিভিন্ন বিভাগের নথিপত্র তল্লাশি করেন তারা। অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা বেশ কিছু নথি নিজেদের জিম্মায় নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এর আগে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর কক্ষে দীর্ঘসময় সময় অবস্থান করেন এবং মেয়রের সঙ্গে এসব ইস্যুতে কথা বলেন দুদক কর্মকর্তারা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, দুদক কর্মকর্তারা নগরীর টাইগার পাসস্থ নগর ভবনেই অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: চসিকের সার্ভার হ্যাক করে জন্মনিবন্ধন সনদ উত্তোলন, আটক ৪
এবিষয়ে চসিকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা নগর ভবনে এসেছেন। মেয়রের সঙ্গেও ঘণ্টাখানেক কথা বলেছেন তারা। পরে তারা কিছু ফাইল তল্লাশি করেন এবং নিজেদের জিম্মায় নেন।
তবে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের আকস্মিক এই অভিযান, তা জানেন না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
অভিযানের বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক এমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটা অভিযোগ ছিল, চসিকে মশার ওষুধ কেনায় দুর্নীতি হয়। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে বারবার কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে। মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ডিসেম্বর ২১ থেকে অক্টোবর ২২ পর্যন্ত ৭৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৫ লাখ টাকার বেশি কেনাকাটা করতে হলে দরপত্র আহ্বান করতে হয়। কিন্তু একই ব্যক্তিকে কাজ পাইয়ে দিতে ৫ লাখ টাকার নিচে রাখতে ১৬ লটে ভাগ করে ওষুধ কেনা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন,‘কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে আমরা অনিয়মের সত্যতা পেয়েছি। বাকিটা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
অভিযোগ রয়েছে, দরপত্র ছাড়াই চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক অরভিন সাকিব ওরফে ইভান নামের এক নেতার কাছ থেকে কেনা হয় এসব মশার ওষুধ।
আরও পড়ুন: নির্মাণে ত্রুটির কারণেই ফ্লাইওভারে ফাটল: চসিক মেয়র
চসিকের প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হলেন তিন কাউন্সিলর
নিয়োগে অনিয়ম: খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) ৪২৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে সাবেক উপাচার্য ড. শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত তিন বছরের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র সোমবার দুদকে জমা দিয়েছে খুকৃবি কর্তৃপক্ষ।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের কথা উল্লেখ করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ ঘটনা ঘটে।
এতে বলা হয়, ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৪২৬ জন শিক্ষক ও কর্মচারী খুকৃবিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এবং মাত্র তিন বছরে ৪৩টি বিভাগ খোলা হয়েছিল।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত করে নিয়োগে অসঙ্গতি খুঁজে পায়।
ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ৩ আগস্ট উপাচার্যের স্বজনসহ ৭৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত বছরের নভেম্বরে দুদক খুকৃবি'র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং দুদকের উপ-পরিচালক এরশাদ মিয়াকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া ৪৭৩ নথি আদালতে দাখিলের নির্দেশ
গত ২ জানুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রার্থীদের আবেদন পত্র, লিখিত পরীক্ষার রেকর্ডসহ নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র ১০ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে এ বিষয়ে কোনো তদন্ত করা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করেন।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মাজহারুল আনোয়ার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে নথিজমা দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া বলেন, তিনি কিছু কাগজপত্র পেয়েছেন এবং সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
আরও পড়ুন: তাকসিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে দুদককে পদক্ষেপ জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট
বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে দুদক: মোশাররফ
দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া ৪৭৩ নথি আদালতে দাখিলের নির্দেশ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের শেষ পাঁচ মাসে ৪০৮টি দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানে কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া ৬৩টি মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে।
এদিকে অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষিত ও চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দুদককে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক সুয়োমটো রুলের শুনানিকালে রবিবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
আদেশের পর দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত যে ৪০৮টি অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে প্রতিটির ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছি।
তিনি বলেন, কেন অনুসন্ধান পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে তা তুলে ধরেছি। তখন আদালত এই ৪০৮টিসহ মোট ৪৭৩টি নথি দেখতে চেয়েছেন।
আমরা বলেছি, আমাদের কোন আপত্তি নেই। ১২ই ফেব্রুয়ারি এই নথিগুলো দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া আমরা ওইদিন অনুসন্ধান করে পরিসমাপ্তি ঘোষণা করাও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দাখিল করবো।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান: চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় দুদক ২০২০ থেকে ২০২১ সালে অনুসন্ধান পর্যায়ে ৪১০টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন এবং ৬৩টি মামলায় তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট সেই নথিগুলো দাখিল করতে বলেছেন। পত্রিকায় যে অভিযোগ এসেছে ‘দুদক অনুসন্ধান বাণিজ্য করেছেন’, সেটা জনসম্মুখে এসেছে। এই অভিযোগের একটা সুরাহা হওয়া দরকার।
এজন্য হাইকোর্ট অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘটানো এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দুদককে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ফের শুনানি হবে।
২০২১ সালের ১৪ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে ‘দুদকে অনুসন্ধান বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ের আগে দুর্নীতির বহু রাঘব-বোয়ালকে ছেড়ে দেন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ পাঁচ মাসে তিনি দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘সফার্স’র মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সোনা এবং হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে রাজস্য ফাঁকিসহ শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। এটি ‘নথিভুক্ত’ করা হয় ২৩ নভেম্বর। এটি স্বাক্ষর করেন মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান। কয়েকবার কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর উপপরিচালক মোশাররফ হোসাইন মৃধার নেতৃত্বে একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (এফএফডি) ও সেলস ডাটা কন্ট্রোলারসহ (এসডিসি) ফিসক্যাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) কেনার দরপত্রে অভিজ্ঞতাহীন চীনা কোম্পানি এসজেডজেডটিকে ২৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার কার্যাদেশ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এর সঙ্গে ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর শামীম আরা বেগম, ডেপুটি কমিশনার মো. খায়রুল আলম ও ডেপুটি কমিশনার রাবেয়া খাতুন, এনবিআরের সদস্য ও সিস্টেম ম্যানেজার মো. শফিকুর রহমান, ভ্যাট অনলাইনের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান, আইসিটি ডিভিশনের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. নবীর উদ্দীন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সুমন কুমার পাটওয়ারী, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ মুবিনুল কবীর, এনবিআর-এর মূসক ও ভ্যাট নীতি মেম্বার ড. আব্দুল মান্নান শিকদার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
২০১৬ সালের ১০ মার্চ ইকবাল মাহমুদ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন।
এছাড়া ২০২১ সালের ১০ মার্চ তিনি অবসরে যান।
প্রকাশিত এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চ ২০২১ সালের ১৬ মার্চ দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শেষ পাঁচ মাসে কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দিয়েছেন তার তালিকা চান হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবেদককে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
ওই আদেশ অনুযায়ী রবিবার দুদক একটি প্রতিবেদন দাখিল করে হাইকোর্টে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ পাঁচ মাসে চার হাজার ৪৮১টি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন ছিল। এই সময়ে কমিশন নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১৫৪টি অভিযোগের বিপরীতে মামলা দায়েরের এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের অভাবে ৪০৮টি অভিযোগ পরিসমাপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
দুটি অভিযোগ কমিশন অন্যভাবে নিষ্পত্তি করে।
এছাড়া একই সময়ে এক হাজার ৫৭৮টি মামলা তদন্তাধীন ছিল, তার মধ্যে ৫৭টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
১৬৫টি মামলায় চার্জশীট দাখিল করা হয় এবং ছয়টি মামলা অন্যভাবে নিস্পত্তি করা হয়।
এসবের বিস্তারিত বিবরণী তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
আদালত প্রতিবেদন দেখে পরিসমাপ্তি ঘোষণা, অন্যভাবে নিস্পত্তি করা এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া মোট ৪৭৩টি নথি দাখিলের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: ডিবি প্রধান ও আরও ৯জনের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ আদালতে খারিজ
তারেক-জোবায়দাকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ