বন্যা
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বুধবার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে উপজেলার ১৩ ইউপি ও একটি পৌরসভাসহ নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের বহু রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শতাধিক মৎস্য খামার।
ছাতক-সিলেট সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়ক পথে ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু যান চলাচল করলেও গত বুধবার সকাল থেকে ছাতকের সঙ্গে জেলা সদরসহ দেশের সব অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৮০ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা চৈলা নদী, পিয়াইন নদী ও সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৯ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ ও সীমান্ত এলাকা মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক বন্যা প্লাবিত হওয়ায় ১৮টি সড়ক ও উপজেলা সদরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যায় দুর্ভোগে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
সিলেটের বন্যায় দুর্ভোগে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরীতে বন্যার্ত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সুরমা নদী উপচে পানি প্রবেশ করছে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। এ অবস্থায় মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
সিলেট নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের মানুষের পাশাপাশি এই ভোগান্তি থেকে বাদ যায়নি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট শহরের সুরমা নদী তীরবর্তী আখালিয়া ঘাট সংলগ্ন সুরমা ও তপোবন আবাসিক এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিকটবর্তী হওয়ায় সুরমা ও তপোবন আবাসিক এলাকায় শাবিপ্রবির অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা মেস আকারে থাকেন। আকস্মিক এই বন্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ এই এলাকার মানুষদের।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ এই বন্যায় রাস্তায় পানি উঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে অসুবিধা হচ্ছে। তাছাড়া বেশির ভাগ বাসায় বিশুদ্ধ পানির সংকট, বাজার ও রান্নার সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেক মেস নিচতলায় যেখানে পানি প্রবেশ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, তপোবন আবাসিক এলাকা সুরমা নদীর খুব নিকটে হওয়ায় হঠাৎ করেই সোমবার দুপুরের পরপর নদীর পানি তপোবন আবাসিক এলাকায় ঢুকে পরে, এক পর্যায়ে পানি বাড়তে থাকলে আমাদের বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। মেসে রান্নার বুয়া না আসায় এবং পানির ট্যাপ দিয়ে দূষিত পানি আসায় খাবার আয়োজন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ায় আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বন্যার দুর্ভোগ বেশি পোহাতে হচ্ছে।
বিবিএ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, বন্যার ফলে চারদিকের বাসাগুলোতে আমরা শিক্ষার্থীরা অনেকটা বন্দী অবস্থায় সময় পার করছি। চলাচলের অসুবিধা হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীরা বাইরের মেস ও হলগুলোতে অবস্থান করছি। এছাড়াও ময়লা পানিতে চলাচল করতে গিয়ে এলার্জিজনিত নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার্তদের জন্য ১৯৯ আশ্রয়কেন্দ্র
সিলেটে বন্যার্তদের জন্য ১৯৯ আশ্রয়কেন্দ্র
সিলেটে বন্যা কবলিতদের জন্য ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
তিনি বলেন, বন্যায় জেলায় ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের পাঁচটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। আর কেউ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি।
তিনি বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে।
জেলা প্রশাসক জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য আরেক দফায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৩০০০ প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে ১২৯ মেট্রিক টন চাল ও ১০০০ শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
এছাড়া সিলেট সদর উপজেলার সাত ইউনিয়নে পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৩ হাজার ব্যাগ শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সিলেট জেলায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে ১শ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে বুধবার সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. একে আব্দুল মোমেনের সিলেট যাওয়ার কথা রয়েছে। এসময় তিনি বিভিন্ন এলাকা পরির্দশন করবেন ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বরিশালে ৫ নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতেও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
পাউবো বলছে, ২০০৪ সালের পর নদীর পানি কখনও এতোটা বাড়েনি। ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে সিলেট-সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি
পানিতে ভাসছে সিলেট, বন্যার্ত মানুষের চরম দুর্ভোগ
সিলেট নগরীতে বন্যার্ত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বাসা-বাড়ি বিশেষ করে বিভিন্ন কলোনীতে পানি উঠায় লোকজন ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। নগরীতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খোলা হয়েছে দুটি আশ্রয় কেন্দ্র।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সিলেট নগরীতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে থাকে। বন্যার পানিতে এরই মধ্যে উপশহর, তালতলা, কানিশাইল এবং দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি লোকজন ঘর-বাড়ির জিনিসপত্র সামলাতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে।মঙ্গলবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেড়েছে নদ-নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।উজানে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার প্রায় দেড় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও।নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার প্লাবিত এলাকার পানি আরও বেড়েছে। নগরের উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।সকালে নগরের উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অভিজাত এই এলাকার প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের দোকানপাট ও এলাকার বাসাবাড়িতেও। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।উপশহরের বি ব্লকের ব্যবসায়ী আজমল আলী বলেন, ‘দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি। কাল রাতেও পানি ছিল না। সকালে এসে দেখি দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে।’
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, হাজারো মানুষ পানিবন্দি
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, হাজারো মানুষ পানিবন্দি
টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে। জেলার সুরমা নদীর পানি বিপদসীমায় অবস্থান করছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
সোমবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত সুরমা নদীর নবীনগর পয়েন্টে ৭ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর মাত্র ১০ সেন্টিমিটার পানি বাড়লেই বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে হাওরের উঁচু এলাকার বোরো ফসল। পানিতে বাদামসহ নষ্ট হয়েছে মৌসুমী সবজি। জেলার সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহীম, সদরগড়, সৈয়দপুর এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার তিন ইউনিয়নের বরকতনগর, শরীপপুর গোজাইড়া, মহব্বাতপুর মামদপুর, মারফতি গ্রামসহ অনন্ত ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এছাড়াও জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও ঘড়বাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ঢলের পানিতে তাহিরপুর ও সদর উপজেলার উচ্চ এলাকার ২০ হেক্টর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। ঢলের পানি নেমে যাওয়ার আশায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না বলে মুটোফোনে জানিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম। যদিও হাওর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন ঢলের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে পারে। অজানা কারণে কৃষি বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আরও পড়ুন: বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
টানা বৃষ্টিপাতে রোদের দেখা না পাওয়ায় মারাইকৃত ধান নিয়ে বিপাকে রয়েছেন নন হাওর এলাকার কৃষকরা। ভেজা ধান শুকাতে না পারায় ধানে চারা গজানোর কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাজারো কৃষক। সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর গ্রামের বাসিন্দা উজ্জল মিয়া জানান, ঢলের পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পানির কারণে চলাচল করা যাচ্ছে না। অনেক ঘরে পানি উঠেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মুন্না মিয়া জানান, ঢলের পানি দোয়ারাবাজার উপজেলার কাংলা, নাইন্দা, গোজাউরা, সিংরাই হাওরের স্কীমের ধান তলিয়েগেছে। পাহাড়ের সীমান্তবর্তী অন্তত ১০ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি রয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ঢলের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনও পুরোপুরি নিরুপণ হয়নি। আমরা পরিস্থিতি অভজার্ব করছি। পানি নেমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলা ১০ হেক্টর ও সদর উপজেলার ১০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
কালনী নদীর বন্যা রক্ষা বাঁধ উপচে সুনামগঞ্জের দিরাই ও জগন্নাথপুর উপজেলার বারাম ও দাড়াখাই হাওড়ে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত হাওরে পানি প্রবেশ ঠেকানো যায়নি।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষকেরা লোকসান কমাতে আধপাকা ধান কাটা শুরু করেছেন।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুর রহমান জানান, জেলার বড় হাওর বারাম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই হাওরে পানি ঢুকছে। হাওরপাড়ের চণ্ডিপুর-খেজাউড়ার মাঝামাঝি অংশ দিয়ে কালনী নদীর পাড় উপচে পানি প্রবেশ শুরু হয়। এ হাওরে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের হাওরে ফের বাড়ছে পানি, আতঙ্কে কৃষক
স্থানীয়রা জানান, হাওরের ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। পানি প্রবেশ ঠেকানো না গেলে বাকি ধান ডুবে যাবে। সকাল থেকে জগন্নাথপুর, ছাতক ও শান্তিগঞ্জের মাঝামাঝি এলাকার ছোট হাওর দাড়াখাইয়েও পানি ঢুকেছে। এ হাওরের বেশিরভাগ ধান কাটা হয়নি।
স্থানীয় কৃষক শামিম মিয়া জানান, জমির পাকা ধান, কম সময়ে ধান কেটে গোলায় নিতে হচ্ছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় ধান শুকাতেও বিলম্ব হচ্ছে। এ অবস্থায় বাঁধ রক্ষার কাজে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, বারাম হাওরের আরও এক হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়নি। পাঠার হাওরের ২০ হেক্টর জমির মধ্যে বেশিরভাগই কাটা শেষ। দুই হাওরে এখনও ধান কাটা চলছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বাঁধ উপচে হাওরে ঢুকছে ঢলের পানি
সুনামগঞ্জে ঢলের আশঙ্কায় হাওরে দ্রুত ধান কাটার অনুরোধ করে মাইকিং
দক্ষিণ আফ্রিকার বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪৩
দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে গত সপ্তাহে হওয়া ভারী বর্ষণ ও বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪৩ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া এখনও ৬৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে রবিবার একজন স্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
কোয়াজুলু-নাটাল প্রাদেশিক প্রধান সিহলে জিকালালা বলেন, দ্রুত উদ্ধার, জীবন বাঁচানো এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ করার দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী পাইলট এবং ক্রু মোতায়েন করেছে।
জিকালালা বলেন, বেশ কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিঘ্নিত হয়েছে। মোট ৮ হাজার ৩২৯ বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত, ৩ হাজার ৯৩৭টি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস এবং ১৩ হাজার ৫৫৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই বন্যাকে জিকালালা প্রদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন।
পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্যায় ৩৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত
দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্যায় ৩৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত
ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ডারবানসহ দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে কমপক্ষে ৩৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুরো পরিবারসহ অনেক লোক নিখোঁজ হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী দিনে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
অবিরাম বর্ষণের ফলে অনেক ভবন ধসে পড়ে এবং প্রধান রাস্তগুলো ভেসে গিয়ে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইথেকউইনির মেয়র ম্যাক্সলোসি কাউন্ডা বলেছেন, ডারবান এবং আশেপাশের এলাকার ক্ষতি আনুমানিক ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কমপক্ষে ১২০টি স্কুল প্লাবিত হয়েছে, যার ফলে আনুমানিক ২৬ মিলিয়নেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এক বিবৃতিতে শিক্ষামন্ত্রী অ্যাঞ্জি মোতশেকগা জানিয়েছেন, বন্যায় বিভিন্ন স্কুলের অন্তত ১৮ জন শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: জিম্বাবুয়ে বাস দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত
মোতশেকগা আর বলেছেন, ‘এটি একটি বিপর্যয় এবং এর ক্ষতি নজিরবিহীন। এর চেয়েও বড় উদ্বেগের বিষয় হল, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স উদ্ধার ও মপ-আপ অপারেশনে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েন করেছে। বন্যার কারণে ডারবান এবং আশেপাশের ইথেকউইনি মেট্রোপলিটন এলাকার অনেক অংশে পানি এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, এই পরিষেবাগুলো পুনরুদ্ধার করতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করার জন্য মন্ত্রিসভার একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন, যাতে বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য তহবিল নির্ধারণ করা যেতে পারে।
অন্যদিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তারা জানান, ডারবানের উত্তরে টোঙ্গাট এলাকার একটি খামার থেকে ১৪টি কুমির বন্যার পানিতে লোকালয়ে চলে গিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে সেগুলোকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আল-আকসায় ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ১৫০ ফিলিস্তিনি আহত
যুদ্ধজাহাজ ‘মস্কোভা’ ডুবে গেছে, স্বীকার করল রাশিয়া
সিলেটে ৪০০ বিঘা বোরো খেত প্লাবিত
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কোম্পানিগঞ্জের কয়েকটি হাওরের পানিতে নিচু জমির প্রায় ৪০০ বিঘা বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, রবিবার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের ফুকছা হাওর, ভাই কুড়ি, মটরের কুড়ি, দেওয়ার কর, কাপনা কুড়ি, ডাইলা হাওর, আখাই কুড়ি, কাংলাঘাটি ও দরম হাওর মিলিয়ে প্রায় ৪০০ বিঘা জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফসল রক্ষা বাঁধের বাইরে আবাদ করা ওইসব জমির ফসল ছিল দুধ ও দানা পর্যায়ে।
আরও পড়ুন: বাঁধ ভেঙে ফেনীতে ৭ গ্রাম প্লাবিত
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পঙ্কজ জানান, ইছাকলস ইউনিয়নের ৫০ বিঘা জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে পাথারচাউলি হাওর রক্ষা বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে হাওরের হাজারো হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যাবে।
পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলম বলেন, পাহাড়ি ঢলের শঙ্কায় এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাউটি হাওরে বাঁধ তৈরি করি। তবুও পানি আটকানো যায়নি। প্রবল স্রোতে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করে বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। পানির এমন প্রবাহ থাকলে ফসল রক্ষা বাঁধের সীমা উপচে উপজেলার সমস্ত বোরো ফসল তলিয়ে যাবে।
এ বছর উপজেলায় পাঁচ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী ফখরুল আহমেদ বলেন, কোম্পানীগঞ্জে হাওরে এবার ৬ দশমিক ৫৭১ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এক কোটি ৪৭ লাখ টাকার ব্যয় বরাদ্দে এ বাঁধ মজবুত হলেও অতিরিক্ত পানি বেড়ে উপচে পড়লে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত লুসিকান্ত হাজং বলেন, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে, আমাদের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো এখনও নিরাপদ জোনে আছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ফসল তলিয়ে গেছে, সেসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
বন্যা প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও বাঁধ দরকার: অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যাকে বিশ্বের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হিসেবে স্বীকার করে, বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আরও বাঁধ নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিরসনে শুধুমাত্র গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে, ভবিষ্যতে বন্যা ও অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য আরও কিছু করা দরকার।
কুইন্সল্যান্ড এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের কিছু অংশে কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে শুরু হওয়া বন্যায় কমপক্ষে ২০ জন মারা গেছে এবং হাজার হাজার বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে।
রবিবার তিনি নাইন নেটওয়ার্ক টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করা মানে শুধুমাত্র কার্বণ নির্গমন হ্রাস করা নয়। এর সঙ্গে স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজনও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার দুই রাজ্যে রেকর্ড করোনা শনাক্ত
তিনি বলেন, আপনি বুশফায়ারে স্থিতিস্থাপকতা মোকাবিলা করতে চাইলে আপনাকে জ্বালানি লোড ব্যবস্থাপনা করতে হবে। আপনি বন্যা মোকাবিলা করতে চাইলে আপনাকে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
বন্যাকবলিত অঞ্চলে দ্রুত অস্ট্রেলিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ অন্যান্য সহযোগিতা সংস্থাগুলোর সহায়তা পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় দেশটির ফেডারেল সরকার সমালোচিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার আনাস্তাসিয়া প্যালাসজুক ফেডারেল সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন,অনেক দেরিতে এই সহায়তা পৌঁছেছে এবং তার প্রস্তাবিত ২০টি বন্যা প্রশমন ব্যবস্থার মধ্যে ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে মাত্র তিনটিতে অর্থায়নের জন্য মরিসনের সমালোচনা করেছেন।
জবাবে মরিসন বলেন, ফেডারেল সরকার যত দ্রুত সম্ভব সহায়তা পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় ওমিক্রনে প্রথম রোগীর মৃত্যু
'জনসন অ্যান্ড জনসন'-র করোনাভাইরাসের টিকা কিনবে না অস্ট্রেলিয়া