বিদ্যুৎ
আগামী ২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ৮০৪ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ায় আগামী দুই অর্থবছরে এ খাতে ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৪২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে।
সরকার পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সক্ষমতা নিশ্চিত করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।’
'মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)' শীর্ষক নথিতে বলা হয়েছে, গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াটে (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ) উন্নীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আরও ৩ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
এছাড়া সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন ৮ হাজার কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইন ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬২ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা প্রায় ৯০০ মেগাওয়াট।
নথিতে আরও বলা হয়, সরকার মোট ১ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় গ্রিডে ৬১৮ এমএমসিএফডি গ্যাস যোগ করতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা
এছাড়া মোট ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২ হাজার ৫৭০টি সোলার সেচ পাম্প এবং গ্রিড বহির্ভূত অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের জন্য ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে বলেও ওই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে, উৎপাদন ও সরবরাহ উভয় ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯টি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে এবং দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি অনুসন্ধান কূপ খনন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা থেকে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা যোগ হতে পারে।
একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা থেকে দৈনিক আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন সক্ষমতা বাড়বে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যয় দক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার আন্তঃদেশীয় জ্বালানি পরিবহনের জন্য একটি আঞ্চলিক পাইপলাইন নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের ভিত্তিতে জ্বালানির নিয়মিত মূল্য সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি জরুরি: নসরুল হামিদ
সরকার জ্বালানি শোধনাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস উভয়ের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপন এবং সমতল ও উপকূলীয় অঞ্চলে উভয় জরিপের মাধ্যমে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানের উপর জোর দিয়েছে।
পাশাপাশি জ্বালানি দক্ষতা ও সিস্টেম লস হ্রাসকেও অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হবে বলে এতে বলা হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেছেন, গ্যাস বিতরণ খাতে সিস্টেম লস দুই বছর আগে ছিল ২২ শতাংশ, তা থেকে কমিয়ে তা এখন সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস ৭ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সিস্টেম লস ছিল ৪৪ শতাংশ এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ছিল ২২ শতাংশ।আরও পড়ুন: সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ঘাটতি, লোডশেডিং ছাড়িয়েছে ১৮৬০ মেগাওয়াট
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ঘাটতি, লোডশেডিং ছাড়িয়েছে ১৮৬০ মেগাওয়াট
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও অন্যদিকে বিদ্যুতের ঘাটতি এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। রবিবার লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬০ মেগাওয়াট।
গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ৯টায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশজুড়ে লোডশেডিং অব্যাহত। এদিকে তাপপ্রবাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে।
উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ও তার চাহিদার মধ্যে পার্থক্যের কারণেই লোডশেডিংয়ের সৃষ্টি হয়।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার দুপুর ১২টায় লোডশেডিং ১ হাজার ৮৬৪ মেগাওয়াটে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ
তবে বিভিন্ন বিদ্যুৎ সংস্থার গ্রামীণ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, লোডশেডিংয়ের মাত্রা এনএলডিসির দেখানো সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থানীয়ভাবে হওয়া বিঘ্নগুলো সবসময় তালিকাভুক্ত হয় না।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) একজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট এত ঘন ঘন হয় যেকোনো সমস্যা হলে গ্রাহকদের দিনে ও রাতে উভয় ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ পেতে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্থানীয় বিভ্রাট বিবেচনায় নিলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ২ হাজার মেগাওয়াটের চেয়েও বেশি হতে পারে।’
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
আরও পড়ুন: গরমের কারণে ক্রমবর্ধমান চাহিদার মধ্যে ১ হাজার মেগাওয়াটের লোডশেডিং
এনএলডিসির রেকর্ডে আরও দেখা যায়, রবিবার রাত ১টায় ১ হাজার ৭৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করলেও এক পর্যায়ে সকাল ৭টায় তা কমে ১৩ হাজার ১৯ মেগাওয়াটে নেমে আসে। কিন্তু আবার তা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে লোডশেডিংয়ের পরিমাণও বেড়ে যায়।
স্বাভাবিক চাহিদা বাড়লে সন্ধ্যায় ‘পিক আওয়ারে’ লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশে দিনের চাহিদার পূর্বাভাস নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট এবং সান্ধ্যকালীন চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে ৯৬৬ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ে প্রথম কর্মদিবস শুরু
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার তথ্যে দেখা যায়, প্রায় ৪ হাজার এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
এতে দেখা যায়, বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৪২৩ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাড়ছে লোডশেডিং-তাপপ্রবাহ
দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ
বিদ্যুৎ উৎপাদন নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) রেকর্ডে দেখা যায়, বুধবার (২৪ এপ্রিল) দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে, যা মঙ্গলবারে ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে।
কিন্তু আবারও লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যায় এবং বুধবার বিকাল ৩টায় তা বেড়ে ৮২১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়।
আরও পড়ুন: হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিকাল ৫টায় দেশে সন্ধ্যার গুরুত্বপূর্ণ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট হয়েছে।
অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
এতে দেখা যায়, বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, গ্যাস সংকটের কারণে সেগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে
সিলেটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আগুন, নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত
সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। সোমবার (১৫) এপ্রিল সকাল সোয়া ৯টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তালতলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লিডার শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন শুধু ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে আছে। বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই।
এদিকে আগুনের ঘটনায় বড় কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও সিলেট নগরীর বেশ কিছু অংশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রয়েছে। তবে সিলেট জেলার বাকী অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সকাল সোয়া ৯টার দিকে কুমারগাঁও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্টারে আগুন লাগে। এরপর ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি জানালে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আরও পড়ুন: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারে আগুন
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, ‘৩৩কেভি গোলাপগঞ্জ উপজেলা সরবরাহ লাইনের হাইভোল্টেজের তার ছিঁড়ে স্পার্কিং হয় এবং আগুনের সূত্রপাত হয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডাম্পিং করে রাখা পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্টারে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি।
অগ্নিকাণ্ডে সিলেটের অনেকই জায়গায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আগুনের ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে সঞ্চালন স্বাভাবিক করতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
আর পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন ৫টি ফিডারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি ইতোমধ্যে পুনরায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং বাকি দুটিও কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মহান আল্লাহ আমাদেরকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। ফলে সিলেট নগরীতে ৩১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে আগুনে পুড়েছে ১০টি দোকান
বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাড়ছে লোডশেডিং-তাপপ্রবাহ
উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে রাজধানীর বাইরে লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও খারাপ। কারণ জনরোষ এড়াতে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ঢাকাসহ চার বিভাগে তাপপ্রবাহের সতর্কতা (হিট অ্যালার্ট) জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির অফিসিয়াল পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মূলত মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশে গ্রীষ্ম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়।
দীর্ঘ শীতের পর গত ২৫ মার্চ মধ্যরাতে প্রায় ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হলে দেশে প্রথম বড় ধরনের লোডশেডিং হয়।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি জরুরি: নসরুল হামিদ
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১ এপ্রিল রাত ২টায় প্রথমে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ৮৫০ মেগাওয়াট অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘গ্রীষ্মের শুরু থেকে অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে, দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন প্রতিদিন ১২০০-১৬৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।’
পিজিসিবির তথ্যে আরও দেখা যায়, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ২ এপ্রিল বিকাল ৫টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং রেকর্ড করা হয়, যেখানে ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১১ হাজার ৯৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
গত বছর ১৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি চাহিদার বিপরীতে গত ৩০ জুলাই সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ১০৪ মেগাওয়াট।
ফলে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করলেও বিদ্যুৎ সরবরাহে ৩ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি দেখা দেয়।
কিন্তু পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহে সীমাবদ্ধতার কারণে দেশে সব সময় ২৫০০-৩০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার উৎপাদন ইউনিট অলস রাখতে হয়।
আরও পড়ুন: তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ নারায়ণগঞ্জের জনজীবন
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা পূর্বাভাস দিয়েছেন, এই গ্রীষ্মে দেশের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং গ্যাস সরবরাহ না বাড়ালে গত বছরের মতো লোডশেডিং পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশে ৭১৭ মিলিমিটার লোডশেডিং হয়েছে।
সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়তে পারে আশঙ্কা করছেন বিপিডিবি কর্মকর্তারা।
এদিকে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনাল উৎপাদন শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ বাড়ানো যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনিং) ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, 'আমরা মনে করি সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পেতে আরও ৩-৪ দিন সময় লাগতে পারে।’
তিনি আরও জানান, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল পুনরায় চালু হলে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে।
পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ৪ হাজার এমএমসিএফডির বেশি চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল ২ হাজার ৬৪০ এমএমসিএফডি।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে তীব্র লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ
বাণিজ্য-যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত ঢাকা-থিম্পু
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সাক্ষাৎকালে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বর্তমান চমৎকার স্তর নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে উভয় পক্ষ।
তারা ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন।
সোমবার(২৫ মার্চ) সকালে ঢাকায় আসেন ভুটানের রাজা।আরও পড়ুন: চার দিনের সফরে সোমবার ঢাকায় আসছেন ভুটানের রাজা
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠনের পর এটিই কোনো বিদেশি অতিথির প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।
একটি বিশেষ বিমানে রাজা এবং তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঢাকায় অবতরণের পর তাদেরকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং ফার্স্ট লেডি।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের তৃতীয় রাজা টেলিগ্রামের মাধ্যমে স্বীকৃতির বার্তা পাঠানোর মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান।
সেই থেকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে একটি বিশেষ বহুমাত্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই ভুটান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় এবং ফলস্বরূপ, ১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ভুটানের রাজা
বিদ্যুৎ খাত গভীর সংকটে: রিজভী
দেশের বিদ্যুৎ খাত গভীর সংকটে নিমজ্জিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রবিবার (৩ মার্চ) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিএনপি নেতা বলেন, কাদের দাবি করেছেন দেশে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন অথচ তার প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, দেশে স্বল্প পরিসরে হলেও লোডশেডিং থাকবে।
আরও পড়ুন: ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ী চক্র দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে লুটপাটে মরিয়া হয়ে উঠেছে: রিজভী
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ সকাল-সন্ধ্যা লোডশেডিংয়ে ভুগছে অথচ তাপমাত্রা এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
বিএনপি দেশের মানুষকে উপেক্ষা করে বিদেশি প্রভুর কাছে ধর্না দিচ্ছে- কাদেরের এই বক্তব্যের নিন্দা করেন রিজভী।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সম্ভবত স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। কারণ তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচন ভুলে গিয়েছিলেন যখন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজাতা সিং আওয়ামী লীগকে তাদের সমর্থন করতে এবং এইচএম এরশাদকে নির্বাচনে যোগদান করানোর জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
এটি একটি সার্বভৌম দেশে হস্তক্ষেপের স্পষ্ট লক্ষণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, সহ অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন প্রমুখ।
আরও পড়ুন: সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বিএনপিকে দায়ী করছেন প্রধানমন্ত্রী: রিজভী
শিশুদের বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে দূরে রাখতে করণীয়
১১ হাজার ভোল্টের ট্রান্সমিশন কেবলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ৭ বছর বয়সী এক শিশুর। ঘটনাটি কুমিল্লার সংরাইশ নামক একটি এলাকার; ঘটেছে বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি)। শিশুটি বর্তমানে চিকিৎসাধীন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোই নয়; দেশের আধুনিক শহরগুলোও মুক্ত নয় এমন নির্মম দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে। বিশেষ করে আবাসিক এলাকাগুলো যেখানে উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ দ্বারা পরিবেষ্টিত, সেখানে শিশুর খেলার জায়গাটি নিমেষেই পরিণত হতে পারে মরণফাঁদে। এমনকি ঘরের ভেতরটাও এই ঝুঁকির বাইরে নয়। তাই শিশুর নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র নিশ্চিত করতে অনতিবিলম্বে প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের।
এই পরিপ্রেক্ষিতে চলুন দেখে নিই, ঘরের ভেতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে শিশুর জীবন বাঁচাতে কি কি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
বৈদ্যুতিক শক থেকে শিশুদের রক্ষা করার উপায়
ঘরের ভেতরে প্রয়োজনীয় সাবধানতা
দেয়ালের বৈদ্যুতিক সকেটগুলো আবৃত রাখা
ঘরের দেয়ালের নিচের দিকে প্রায় সময় দেখা যায় বিদ্যুৎ সংযোগের উৎসগুলো অনাবৃত থাকে। এছাড়া ব্যবহার শেষে প্লাগ খুলে ফেলার পর সেগুলো অনাবৃত অবস্থাতেই রেখে দেওয়া হয়। এগুলো বাচ্চাদের হাতের নাগালেই থাকে। খেলার ছলে এগুলোর ছোট গর্তগুলোতে বাচ্চাদের হাত চলে যেতে পারে। এমন অনর্থ থেকে বাঁচতে বৈদ্যুতিক আউটলেট কভার বা সেফটি প্লাগের আবির্ভাব।
আরও পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
প্লাগগুলো মূলত টু পিং ও থ্রি পিং সকেটের জন্য সামঞ্জস্য করে তৈরি করা হয়। আর কভারের ক্ষেত্রে বর্তমানের অত্যাধুনিক স্লাইডিং আবরণীগুলো ব্যবহার শেষে কোনো অ্যাডাপ্টারের প্লাগ খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সকেটটিকে ঢেকে ফেলে। এতে করে বিদ্যুৎ সংযোগের গর্তগুলো আবৃত হয়ে যায় এবং তাতে বাচ্চাদের হাত পড়লেও কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকে না।
বিদ্যুতের কেবলগুলো গুছিয়ে রাখা
শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে কেবল অর্গানাইজার। এলোমেলো করে ছড়ানো-ছিটানো কেবল বা তারগুলোতে বাচ্চাদের ছোট ছোট হাত-পা জড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে চঞ্চল শিশুরা ছুটে বেড়াতে যেয়ে এগুলোতে পা জড়িয়ে পড়ে যেয়ে আঘাত পেতে পারে। আর কোনো একটিতে ছোট্ট কোনো চিড় বা লিকেজ থাকলে তা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই নিদেনপক্ষে দড়ি বা ফিতে দিয়ে কেবল বা তারগুলোকে বেধে পরিপাটি করে রাখা উচিৎ।
তাছাড়া এখন অধিকাংশ ইলেকট্রনিক পণ্যের সঙ্গে এগুলোর কেবল গুছিয়ে রাখার জন্য ছোট ছোট প্লাস্টিকের তার সরবরাহ করা হয়। এগুলোর যথাযথ সদ্ব্যবহার করে তার বা কেবলগুলো আড়াল করে রাখা উচিৎ। কর্ড সংগঠক ব্যবহার করে বা অতিরিক্ত কর্ডের দৈর্ঘ্য বেঁধে দড়িগুলোকে সংগঠিত এবং নাগালের বাইরে রাখুন। এটি দড়িতে ছিটকে যাওয়ার বা টানার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
ওভারলোড না করা
একটি আউটলেটে একাধিক ডিভাইস ব্যবহারের উপায় থাকলেও তার সুবিধা নেওয়া উচিৎ নয়। বিশেষ করে উচ্চ পাওয়ার রেটিংয়ের বৈদ্যুতিক আসবাব একটি আউটলেটে একটির বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে আউটলেটগুলো অতিরিক্ত গরম হয়ে সকেটের পেছনে তার বা আসবাবের কেবল পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া শর্ট সার্কিট হলে একসঙ্গে একাধিক যন্ত্র নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
বিদ্যুতের প্রতিটি সংযোগের ত্রুটিহীনতা নিশ্চিত করা
ঘরের প্রতিটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ঠিক মতো কাজ করছে কি না তা রুটিন মাফিক যাচাই করা হলে সময় মতো ত্রুটিগুলো চোখে পড়বে। এতে করে যন্ত্রপাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় থাকবে। সেই সঙ্গে নিশ্চিত হবে প্রত্যেকটির নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার। আর ঘরের ভেতরে শিশুর খেলার জায়গাটিও হবে ঝুঁকি মুক্ত।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রাদিকে কোনোভাবেই পানির সংস্পর্শে না আনা
রান্নাঘর ও টয়লেটের বৈদ্যুতিক আউটলেটগুলোকে কোনোভাবেই ভেজা রাখা যাবে না। প্রয়োজনে নিয়মিত শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে রাখতে হবে। দিনের অধিকাংশ সময়ই এই স্থানগুলোতে পানির কাজ থাকে। ফলে যে কোনো ভুলে মেঝেতে পানি পড়ে তা গড়িয়ে চলে আসতে পারে ডাইনিং বা অন্যান্য ঘরগুলোতে। পরিণতিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে শিশুর খেলে বেড়ানোর জায়গাটি।
ফ্রিজ বা ওভেনের মতো উচ্চ ভোল্টেজের যন্ত্রপাতির পেছনের স্থান কোনোভাবেই যেন পানির সান্নিধ্যে না আসে। এগুলোর কেবলে হঠাৎ পানি লেগে গেলে দ্রুত পাওয়ার অফ করে শুকনো কাপড় দিয়ে তা মুছে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের ক্লাবে বাংলাদেশ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) জন্য বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আয়োজিত হস্তান্তর অনুষ্ঠানে (গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি) স্বপ্নের প্রকল্পটির রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম আরএনপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর করে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ জ্বালানি হস্তান্তর করেন।
আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় রূপপুরে পৌঁছাল ইউরেনিয়াম
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।
রাশিয়া থেকে একটি বিশেষ এয়ার কার্গোর মাধ্যমে ইউরেনিয়ামের চালানটি ঢাকায় এসে পৌঁছায়। পরদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সড়কপথে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাশিয়ার একটি কারখানা থেকে সরাসরি একটি বিশেষ বিমানে করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পারমাণবিক জ্বালানি পাঠানো হয়।
রাশিয়ার নভোসিবির্সক কেমিক্যাল কনসেনট্রেট প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) এই জ্বালানি উৎপাদিত হয়, যা রোসাটমের জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তেভেলের সহায়ক প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন: রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের 'গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি'তে রাশিয়ার রোসাটম থেকে ইউরেনিয়ামের নতুন ব্যাচ গ্রহণ
রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি ২০২১ সালের অক্টোবরে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য চুল্লি ২০২২ সালের অক্টোবরে বসানো হয়।
সরকার ২০০৯ সালে আরএনপিপি প্রকল্প স্থাপনের ধারণাটি হাতে নেয় এবং ২০০৯ সালের ১৩ মে রাশিয়ার সঙ্গে ‘পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে নির্মাণকাজ সম্পাদনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে মস্কোর সঙ্গে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাধারণ চুক্তি (জিসি) সই করে সরকার।
বাংলাদেশ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আরএনপিপির জন্য ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি আর্থিক চুক্তি সই করে। প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ এই অর্থ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে।
আরও পড়ুন: রূপপুরের জন্য ইউরেনিয়াম সংগ্রহে রুশ কোম্পানির সাথে প্রাথমিক চুক্তি
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে লাগতে পারে আরও এক বছর
২০২৪ সালের জুলাই মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) ১২০০ মেগাওয়াট প্রথম ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করা কথা রয়েছে। এই সময়সীমা পূর্ণ হতে আর মাত্র ১০ মাস বাকি রয়েছে।
তবে বিদ্যুৎ খাতের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন অবকাঠামো-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অনেকটা বাকি থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
২৪০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের প্রথম ১২০০ ইউনিট চালুর মাত্র ১০ মাস আগে এসে কর্মকর্তারা এখন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য আরও এক বছর বা আরও কিছুটা বেশি সময় প্রয়োজন বলে মনে করছেন।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বিএইসি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) উভয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও প্ল্যান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সারাদেশে গৃহস্থালি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইনের অভাবে এটি কাজে লাগবে না।
বিএইসি-কে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, পিজিসিবি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অপসারণ ও সঞ্চালনের কাজ করবে।
আরও পড়ুন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত
এই প্রথম তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঞ্চালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।
পিজিসিবি-র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউএনবিকে বলেছেন, ‘আরএনপিপি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে আমরা তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি।’
তিনি যে তিনটি চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো- নদী ক্রসিংলাইন নির্মাণ, সাবস্টেশন স্থাপন ও ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের জন্য দুটি নদী ক্রসিং প্রয়োজন—যমুনা নদীর ওপর দিয়ে ৯ কিলোমিটার এবং পদ্মার ওপর দিয়ে ৭ কিলোমিটার।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি পিজিসিবি এই বিষয়ে দুটি পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং প্রকল্পগুলো শেষ করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।’
তিনি আরও বলেন, আরএনপিপি থেকে বিদ্যুৎ ঢাকায় আসবে ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন ডাবল সার্কিট লাইনের মাধ্যমে। যা ধামরাইয়ে একটি নতুন ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড-সাবস্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি একটি ফার্মকে ট্রান্সমিশন লাইন বসানোর চুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং এর কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে।
পিজিসিবি’র আরেকজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইউএনবিকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আরএনপিপি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন সিস্টেমে ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখা। কারণ এটি হবে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বিদ্যুৎ, যেখানে সঞ্চালন ও সরবরাহ নেটওয়ার্কে সবসময় স্থিতিশীল চাহিদা থাকবে।’
তিনি বলেন, প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে পিজিসিবি এ বিষয়ে কাজ করার জন্য রাশিয়া থেকে একজন পরামর্শক নিয়োগ করে। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ওই পরামর্শদাতা হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান।
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ের সমাধান খুঁজতে বর্তমানে একটি উচ্চ পর্যায়ের দল রাশিয়া সফর করার পরিকল্পনা করছে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান আরএনপিপি থেকে সময়মতো বিদ্যুৎ অপসারণ ও সঞ্চালন শুরু করার বিষয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করে ইউএনবিকে বলেছেন, প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন অবকাঠামো ২০২৪ সালের জুলাই মাসের মধ্যে প্রস্তুত হবে কি না এ বিষয়ে তার মন্ত্রণালয় এখনও অন্ধকারে রয়েছে।
আরও পড়ুন: রূপপুর এনপিপির ইউনিট-২ এর প্রধান কুল্যান্ট পাইপলাইন ঝালাই শেষ: রোসাটম
পিজিসিবি-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া অফিসিয়াল তথ্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, আরএনপিপি থেকে বিদ্যুৎ অপসারণ নিশ্চিত করতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একীভূতকরণ ও নিরাপদ পরিচালনার জন্য এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য ১০ হাজার ৯৮১ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফর পাওয়ার ইভাকুয়েশন ফ্যাসিলিটিস অব রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট’-শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-১৩ কিলোমিটার নদী ক্রসিংসহ একটি ৪৬৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ এবং ৭ কিলোমিটার নদী ক্রসিংসহ একটি ২০৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, চারটি ৪০০ কেভি বে এক্সটেনশন এবং পাঁচটি ২৩০ কেভি বে এক্সটেনশন।
ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল ও ফ্রিকোয়েন্সি ড্রপ প্রোটেকশন, প্রোটেকশন সিস্টেম, ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ‘কোয়ালিটেটিভ আপগ্রেডেশন অব বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম’ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজগুলো বাস্তবায়ন করাও এই প্রকল্পের অংশ।
ওয়েবসাইটের একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে পুরো প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং বরাদ্দ দেওয়া অর্থের ৪৮ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।
পিজিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, ৪৬৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের ১৩ কিলোমিটার নদী ক্রসিংয়ের মধ্যে- ১৫০ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা, ১৫৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ, ৯০ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া এবং ৫১ কিলোমিটার কালিয়াকৈর-আমিনবাজার সঞ্চালন লাইন নিয়ে গঠিত।
২০৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের ৭ কিলোমিটার নদী ক্রসিংয়ের মধ্যে ১৫৮ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা এবং ৮১ কিলোমিটার রূপপুর-বাঘাবাড়ি লাইনের অংশ রয়েছে।
পিজিসিবি কর্মকর্তারা জানান, জমির ওপর সঞ্চালন লাইন স্থাপনের অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ হলেও সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক নদী পারাপার নির্মাণের কাজও শুরু হয়নি।
আরও পড়ুন: রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন