���������������
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায়
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন আকাশের বুকে ধূসর প্রকাণ্ড পাহাড়ের ওপর একগুচ্ছ রঙিন আঁচড়। কখনো তা শ্বেত-শুভ্র, কখনো সূর্য-কমলা। ২৮,১৬৯ ফুট উচু এই চূড়া মাথায় নিয়ে মহান হিমালয়ের অবস্থান নেপাল ও ভারতের সিকিম রাজ্যের মাঝামাঝি সীমান্তরেখায়। আর বাংলাদেশ থেকে এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণে যেতে হবে। দেশের সর্ব উত্তরের এ উপজেলাতেই রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম স্থলবন্দর। চলুন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
পাঁচ গড়ের পঞ্চগড়
দেশের উত্তরাঞ্চলের শেষ বিভাগ রংপুরের জেলা পঞ্চগড়। ১৯৮৪ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি এটি বাংলাদেশের একটি জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এর পূর্বে ফাঁমাগড় প্রশাসন, পশ্চিমে ও উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণে ঠাকুরগাও ও দিনাজপুর জেলা।
জেলাটির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুটি প্রধান কিংবদন্তি। প্রথম কিংবদন্তি বলে যে, পঞ্চগড়ের নামকরণ হয়েছে পুণ্ডু নগর রাজ্যের পঞ্চনগরী নামক একটি অঞ্চলের নামানুসারে।
আরও পড়ুন: শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০ স্থান
আর দ্বিতীয় মতানুসারে, এই তল্লাটে ছিলো ৫টি দুর্গ বা গড়। যেগুলোর নাম- ভিতরগড়, হোসাইনগড়, মীরগড়, দেবেনগড় ও রাজনগড়। এই ৫ গড় থেকেই পরবর্তীতে জায়গাটি পঞ্চগড় নামে পরিচিতি পায়; যার অর্থ ৫ দুর্গ।
পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার উপায়
পঞ্চগড়ের কোন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়
পঞ্চগড়ের অন্তর্গত তেঁতুলিয়া দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা। এই সদরের প্রাণকেন্দ্রে আছে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো। অনেক আগের এই স্থাপনাটির নির্মাণ কৌশল অনেকটা বিলেতি ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। কথিত আছে- এটি নির্মাণ করেছিলেন কুচবিহারের রাজা।
জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত ডাকবাংলোটির পাশে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর একটি পিকনিক স্পট। দুটি স্থাপনা একসাথে দারুণ এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সৌন্দর্যমণ্ডিত এ জায়গাটি দেখার জন্য ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উচুতে উঠতে হবে। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্রোতস্বিনী মহানন্দা। নদীর ওপারে ভারত আর এপারে সুউচ্চ গড়ের ওপর এই ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পটটি। এই ডাকবাংলোর বারান্দা থেকেই দেখা যায় দূরের দিগন্তরেখায় ভেসে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
আরও পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
এছাড়া তেঁতুলিয়ার অন্যান্য জায়গার মধ্যে বাংলাবান্ধা, বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতু, ভিতরগড় থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।
পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সেরা সময়
সাধারণত শীতকালে দূরের মেঘমুক্ত আকাশে যেন ভেসে থাকতে দেখা যায় তুষারশুভ্র পাহাড়ের চূড়া। রোদের আলোয় চিকচিক করতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শোভা উপভোগ করার জন্য শীতই সবচেয়ে সেরা সময়। পাহাড় চূড়ার প্রাকৃতিক দৃশ্যটি সারা দিনের ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রুপ ধারণ করে। তাই বছরের যে কোন সময় না গিয়ে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টাতে যাওয়া উত্তম। এই সময়টাতে আকাশ একদম পরিষ্কার থাকে। মেঘের সঙ্গে বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার লুকোচুরি খেলার কোন উপায় থাকে না।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গায় দাড়ালে খুব ভোরে মেঘ ও কুয়াশামুক্ত নীল আকাশ জুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের খালি চোখেই এঁকে দেয় বিস্ময়ের চিহ্ন।
আরও পড়ুন: ইউএস-বাংলার বিমানে ভ্রমণ করলে হোটেল ফ্রি
ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যাওয়ার উপায়
বাস ও ট্রেন; ঢাকা থেকে কেবল এই দুই মাধ্যমে পৌছানো যায় পঞ্চগড় জেলায়। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল, শ্যামলী ও মিরপুর থেকে পঞ্চগড়ের বাস পাওয়া যায়। নন-এসি বাসে খরচ নিতে পারে মাথাপিছু ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা, আর এসি বাস ভাড়া পড়তে পারে ১৩০০ থেকে ১৯০০ টাকা।
পঞ্চগড় নেমে লোকাল বাসে করে যেতে হবে তেঁতুলিয়ায়। এ পথে সারাদিনি চলাচল করে এই বাসগুলো। বাসের ভাড়া পড়তে পারে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়ে পড়ে। ভাগ্য ভালো হলে এ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দূরের আকাশে চোখে পড়তে পারে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য।
ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ারও বাস আছে। এগুলোর ভাড়া জনপ্রতি ১১৫০ টাকা পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
ট্রেনে যেতে হলে ঢাকার কমলাপুর থেকে সরাসরি পঞ্চগড় ট্রেন আছে। শ্রেণীভেদে ট্রেন ভাড়া জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৫৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৯৪২ টাকা হতে পারে।
পঞ্চগড় নেমে এখানকার কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন ও চৌরঙ্গী মোড়ে পাওয়া যাবে প্রাইভেট কার ও মাইক্রো। এগুলোতে করে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যাবে। মাইক্রো ও প্রাইভেট কার রিজার্ভ করতে আনুমানিক কমপক্ষে ২,০০০ থেকে শুরু করে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া লাগতে পারে।
পঞ্চগড় ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
তেতুলিয়া উপজেলায় আবাসিক হোটেলের নন-এসি রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। এসি ডাবল বেডের ভাড়া পড়তে পারে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। মহানন্দা নদীর তীরের ডাকবাংলোতে থাকা যেতে পারে। তবে তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে। এই ডাকবাংলোতে কক্ষ প্রতি ভাড়া ৪০০ টাকা। এছাড়া আছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের জেলা পরিষদের ডাকবাংলো এবং বন বিভাগের রেস্টহাউস। এগুলোতেও থাকার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুন: পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
আর পঞ্চগড়ে এসে থাকতে চাইলে এখানে আছে সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল। এখানে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় আছে নন-এসি কক্ষ এবং ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে এসি কক্ষ।
পঞ্চগড়ের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে, যেগুলো এখনো গ্রামগুলোতে রান্না হয়ে থাকে। অবশ্য এগুলোর অধিকাংশই এখন বিলুপ্তির পথে। খাবারগুলোর মধ্যে ডিম ভূনা, তেঁতুলিয়া উপজেলায় হালকা, শীদলের ভর্তা, পাটা শাকের খাটা, কাউনের ভাত, সজির মুড়ার ছ্যাকা ও মোড়ত লাভা শাকের পেলকা অন্যতম।
পঞ্চগড়ের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় দৃশ্য ছাড়াও পঞ্চগড় ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক নিদর্শনের অপূর্ব উপচার সাজিয়ে রেখেছে। এগুলোর মধ্যে মহারাজার দিঘী, চা বাগান, ভিতরগড়, শাহী মসজিদ, মিরগড়, জিরো পয়েন্ট, রক্স মিউজিয়াম, এবং বারো আউলিয়া মাজার অন্যতম।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
পরিশিষ্ট
বাংলাদেশ থেকে সুদূর কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দর্শনে পঞ্চগড় ভ্রমণে পাওয়া যাবে এক অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের অভিজ্ঞতা। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নানা শ্রেণীর পর্যটকদের আসা-যাওয়ার ফলে এ অঞ্চলটিতে তৈরি হয়েছে পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধির সুযোগ। হাজার বছরের চমকপ্রদ ইতিহাস-ঐতিহ্য, পাথর ও চা শিল্প; সব মিলিয়ে ভ্রমণের জন্য এক পরিপূর্ণ এলাকা। শুধু প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়নের। বিশেষ করে সরকারি উদ্যোগে এখানে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে, এই ছোট্ট উপজেলাই পরিণত হতে পারে রাজস্ব আয়ের একটি কার্যকর উৎসে।
শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০ স্থান
শীতকাল মানেই ভ্রমণের মৌসুম। যে সময়ে নেই ভয়াবহ গরমে ক্লান্ত হবার ভয়, নেই বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত সড়কের ঝামেলা। ক্রমাগত উষ্ণ হতে থাকা বাংলাদেশ, শীতকালে তার চিরাচরিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ফিরে পায়। সেই সৌন্দর্যের মোহে আবিষ্ট হয়ে দীর্ঘ শিশির ভেজাপথ হেটে গেলেও ভর করবে না কোনো ক্লান্তি। তাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়টিতে দেশ জুড়ে পড়ে যায় বনভোজনের ধুম। চলুন, শীতকালে নিরাপদে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
এই শীতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের ১০টি জনপ্রিয় স্থান
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কথা যখন পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ নিয়ে, তখন সেখানে কোনো সময়ের বাধাই মানা যায় না। তাই বছরের পুরোটা সময়ই দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অখণ্ড সৈকতে শুধু উত্তাল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেয়া যায় সারাটা দিন।
ঢাকা থেকে স্থলপথে বাসযোগে ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে হলে আগে চট্রগ্রাম পর্যন্ত যেয়ে সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার যেতে হবে। চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কক্সবাজার যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজার
বাংলাদেশের এই একমাত্র প্রবাল দ্বীপকে স্থানীয়া নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণের মাত্র ১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির অবস্থান কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। একদিকে নিঃসীম নীল দিগন্তের কোণে ফেনিল সমুদ্রের মিশে যাওয়া, অন্যদিকে সারি সারি নারিকেল গাছ ঘেরা সাধারণ জীবন ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে অমোঘ আকর্ষণে কাছে টানে।
সেন্টমার্টিন যেতে হলে ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফ পৌঁছে সেখান থেকে জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। জাহাজগুলো সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন চলাচল করে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জাহাজগুলো। আর ফেরত আসে বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে।
কুয়াকাটা, পটুয়াখালী
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতের অবস্থান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার অন্তর্গত লতাচাপলি ইউনিয়নে। কক্সবাজারের মত অভিজাত না হলেও, এখানকার নিরিবিলি বেলাভূমি এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কুয়াকাটাকে করেছে অনন্য।
আরো পড়ুন: পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায় হচ্ছে নদী ও সড়ক পথ। পূর্বে সবাই ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে বাকি পথ বাসে কুয়াকাটা যেতো। তখন লঞ্চ ও বাস যোগে পুরো অর্ধেক দিন লেগে যেতো। তবে এখন পদ্মা সেতুর কারণে মাত্র ৫ ঘন্টায় বাসে করে সরাসরি পৌছনো যায় কুয়াকাটায়।
সুন্দরবন, খুলনা
বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী এবং ভারতের কিছু অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বন। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃত এই বনাঞ্চলটি বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণের আধার। এখানে জন্মান সুন্দরী বৃক্ষের কারণে সুন্দরবন নামেই বিশ্বখ্যাতি পেয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এই প্রধান বিচরণক্ষেত্রটি।
এখানে ঘুরতে যেতে হলে অবশ্যই বন অধিদপ্তরে নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমতি ও সাথে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে নিতে হয়। এর সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার একমাত্র মাধ্যম লঞ্চ ও ছোট জাহাজ।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
সুন্দরবন সাধারণত সবাই খুলনা বা মোংলা হয়ে যেতো। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে এখন সড়কপথেই সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে পারছে দেশের হাজারো মানুষ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজার
এক হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও আংশিক শ্রীমঙ্গল নিয়ে। দেশের ট্রপিকাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত এই জাতীয় উদ্যানটি জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২৪০ প্রজাতির পাখির আশ্রয়স্থল এই লাউয়াছড়া। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের সবচেয়ে বড় বিচরণ এলাকা হিসেবে এর সুখ্যাতি রয়েছে।
বনের ভেতরে আছে তিনটি ট্রেইল; যেগুলো ট্রেকিং করার সময় খুব কাছ থেকে দেখা যায় বনের সৌন্দর্যকে।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল পৌছে লাউয়াছড়া ভ্রমণ করা যায়।
কুতুবদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার
বাংলাদেশে বাতিঘর দেখতে হলে চলে যেতে হবে কক্সবাজার জেলার ছোট উপজেলা কুতুবদিয়ার এই দ্বীপটিতে। এখানকার প্রাচীন বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষটি এখনো যেন ভাটার সময় পুরানো ইতিহাসের গল্প বলে। ২১৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট এই দ্বীপে আছে নির্জন সমুদ্র সৈকত এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার।
বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও প্রাকৃতিক ভাবে লবণ চাষের জন্য এ জায়গাটি বেশ প্রসিদ্ধ। এই দ্বীপ ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার থেকে প্রথমে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড আসতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি করে মগনামা ঘাট পৌছে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে নেমে পড়তে হবে কুতুবদিয়া চ্যানেলে। আর এই কুতুবদিয়া চ্যানেলই পৌছে দিবে কুতুবদিয়া দ্বীপে।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
মনপুরা দ্বীপ, ভোলা
ভোলা জেলার এই বিচ্ছিন্ন ভূমিটি সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত এবং হরিণ দেখার জন্য পর্যটকদের প্রিয় স্থান। মেঘনা নদীর ভেতরে ৫০০ মিটার পর্যন্ত স্থাপন করা মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের ভীড় থাকে। দ্বীপ ভ্রমণে এসে দর্শনার্থীরা চৌধুরী প্রজেক্টের মাছের ঘের আর সারি সারি নারিকেল গাছের বিস্তৃত এলাকাতেও ঘুরতে আসেন। নদীর ধারে সাইক্লিং কিংবা সবুজের মাঝে ক্যাম্পিং-এর জন্য সেরা জায়গা মনপুরা দ্বীপ।
মনপুরা দ্বীপে যাওয়ার জন্য ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫টায় লঞ্চে উঠে পড়তে হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে থেকে সড়ক পথে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটে এসে সি-ট্রাকে করেও মনপুরা দ্বীপে আসা যায়। সি-ট্রাক ছাড়ার সময় বিকাল ৩টা।
নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালী
নোয়াখালীর হাতিয়া অঞ্চলে বঙ্গপসাগর ঘেরা ছোট্ট এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর। শীতের মৌসুমে পুরা নিঝুম দ্বীপ ভরে যায় অতিথি পাখিতে। এখানকার সবচেয়ে সেরা আকর্ষণ হচ্ছে চিত্রা হরিণ। একসাথে এত চিত্রা হরিণের দেখা দেশের আর কোথাও পাওয়া যায় না। নিঝুম দ্বীপের নামা বাজার সৈকত থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
সড়ক পথে যে যানবাহনই ব্যবহার করা হোক না কেন, নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে প্রথমে পৌছতে হবে চেয়ারম্যান ঘাটে। এখানকার হাতিয়া যাওয়ার সি-ট্রাক বা ট্রলারগুলো নলচিরা ঘাটে নামিয়ে দেবে। এবার মোটর সাইকেল দিয়ে পৌছতে হবে হাতিয়ার অন্য প্রান্ত মোক্তারিয়া ঘাটে। সেখান থেকে ট্রলারে চড়ে নিঝুম দ্বীপ।
তবে সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়ার লঞ্চে উঠে পড়া। হাতিয়ায় পৌছার পর তমুরদ্দী ঘাট থেকে পাওয়া যাবে সরাসরি নিঝুম দ্বীপের ট্রলার।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, হবিগঞ্জ
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা অবস্থিত সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। প্রায় এক হাজার ৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় ১৯৮২ সালে। এটি প্রায় ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রায় ৬২ প্রজাতির প্রাণী এবং প্রায় ১৬৭ প্রজাতির পাখির আবাস।
আরো পড়ুন: ভারতের টুরিস্ট ভিসা কীভাবে পাবেন: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রসেসিং ফি
এই অভয়ারণ্যে আছে অপরূপ সুন্দর তিনটি ট্রেইল, গোটা বনকে এক নজরে দেখার জন্য আছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌছে টমটমে চড়ে যেতে হবে নতুন ব্রীজ। সেখান থেকে সিএনজিতে চুনারুঘাট মধ্যবাজার পৌছে আরেকটি সিএনজিতে করে কালেঙ্গা বাজার নামতে হবে। তারপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই অভয়ারণ্যের প্রধান ফটক।
মালনীছড়া চা-বাগান, সিলেট
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা-বাগান এই মালনীছড়া চা-বাগান। এক হাজার ৮৪৯ সালে লর্ড হার্ডসনের তত্ত্বাবধানে এক হাজার ৫০০ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় এই চা-বাগান। বর্তমানে বেসরকারী তত্ত্বাবধানে থাকলেও চা-বাগানপ্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ পছন্দের একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ানো যায় বাগানে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বাস, ট্রেন অথবা বিমান; এই তিন রুটের যে কোনটি ব্যবহার করে ঢাকা থেকে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। অতঃপর শহরের যেকোন জায়গা থেকে রিক্সা কিংবা সিএনজি যোগে সহজেই পৌছা যাবে মালনীছড়া চা-বাগানে।
শেষাংশ
শীতকালে বাংলাদেশ ভ্রমণের জনপ্রিয় এই ১০টি স্থান হিম শীতল প্রকৃতিকে দারুণ ভাবে উপভোগ্য করে তোলে বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। তবে এই আনন্দটা ফিকে হয়ে যেতে পারে যদি যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়। এ সময় যাত্রা শুরুর সময় অবশ্যই সাথে গরম কাপড় নিয়ে নেয়া আবশ্যক। নিয়মিত ওষুধপত্রের সাথে ডেটল, স্যাভলন, ব্যান্ডেজ, তুলার মত কিছু ফার্স্ট এইড সামগ্রি সঙ্গে রাখা উচিত। একটি সুপরিকল্পিত পূর্বপ্রস্তুতিই পারে একটি ভ্রমণকে নিরাপদ নির্ঝঞ্ঝাট করে তুলতে।
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
প্রাচীন ইতিহাস, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি ও অকৃত্রিম সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতিপ্রেমী ও দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের জন্য অনেক উপাচারে সাজানো সুজলা-সুফলা এই দেশটি। সিলেটের হাওড় আর ঝিরি পথের ঝর্ণাগুলো যেন সে কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে অধিক বৃষ্টিপাতের সুফলটা দারুণভাবে উপভোগ করা যায় বর্ষা মৌসুমে। হাওড় ও নদী ভরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়গুলোও যেন সেজে ওঠে সাদা ঝর্ণায়। তেমনি এক অপরূপ জায়গা সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে ভ্রমণ নিয়েই আজকের নিবন্ধ।
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী: ভৌগোলিক অবস্থান ও নামকরণের ইতিহাস
নদীটির উৎপত্তি ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে মেঘালয়ের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়। বাংলাদেশের অংশে এর অবস্থান সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে। ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫৭ মিটার প্রস্থের সর্পিলাকার নদীটি রক্তি নামে মিলেছে সুরমা নদীর সঙ্গে। সবুজ বনে ঢাকা বারেক টিলা আর খাসিয়ার মাঝে পড়েছে আট মিটার গভীর এই নদী, যার অববাহিকার আয়তন ১২৫ বর্গ কিলোমিটার। বিশ্বম্ভরপুর থেকে দক্ষিণে জামালগঞ্জ উপজেলা শহরে প্রবেশ করায় সেখানে গড়ে উঠেছে আনোয়ারপুর ও দুর্লভপুর নদীবন্দর দুটি।
যাদুকাটা নদীর প্রাচীন নাম রেনুকা। অনেক আগে এই নদীতীরেই গড়ে উঠেছিলো প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে যাদুকাটা নদী।
আরো পড়ুন: ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
লোকমুখে এক গল্প প্রচলিত আছে এই নদীটিকে নিয়ে। একবার এক গাঁয়ের বধু তার শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে মাছ কাটছিলেন। হঠাৎ এক পর্যায়ে অন্যমনষ্ক হয়ে ভুলবশত মাছের জায়গায় তার কোলের শিশুটিকেই কেটে ফেলেন। সেই শিশুপুত্রটির নাম ছিলো যাদু, আর গ্রামটি ছিলো এই নদীর তীরে। আর মাছটি ছিলো এই নদীরই মাছ। এই গল্প থেকেই নদীটির সঙ্গে জুড়ে যায় যাদুকাটা নামটি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পর্যটন এলাকা
এই নদীর প্রবহমান স্বচ্ছ পানি, নীল দিগন্ত আর সবুজ গালিচার পাহাড়; সব মিলিয়ে প্রকৃতির যেন এক অপূর্ব মিথস্ক্রিয়া। নদীর প্রতিটি পাড় যেন প্রকৃতির আপন মহিমায় স্বযত্নে সাজানো। নৌকা দিয়ে ঘোরার সময় যাদুকাটা নদীতে চোখে পড়বে স্থানীয় শ্রমিকদের ব্যস্ত জীবন। সেই সুবহে সাদেকের সময় শুরু হয় তাদের কাজ আর সেটা চলতে থাকে সন্ধ্যা অবধি। তাদের পেশা নদী থেকে কয়লা, বালি ও পাথর আহরণ করা।
এ অপরূপ সৌন্দর্য্যের সঙ্গে জনজীবনের এক চিরন্তন মেলবন্ধন। আর এই রূপেই মুগ্ধ হয়ে এই নদীমুখী হন শত শত দর্শনার্থী। এমনকি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ-বিভুঁই থেকেও পর্যটকরা এসে ভিড় জমান যাদুকাটার যাদু দেখতে। এখানে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বর্ষার ঢলের সময় মেঘালয় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ১৮টি পাহাড়ি ছড়া থেকে বেরিয়ে আসে চোখ জুরানো ঝর্ণা। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শ্রী শ্রী অদ্বৈতা মহাপ্রভুর আশ্রম ও পূর্ণতীর্থ স্থান এবং শাহ আরেফিন আউলিয়ার আস্তানা। পশ্চিম তীরে দেখা যাবে এখানকার সবচেয়ে সেরা দর্শনীয় বস্তু; সুনামগঞ্জের আইফেল টাওয়ার। প্রায় ১৫০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারটি বারেক টিলা নামে সুপরিচিত। আর পাহাড়ি সবুজের সঙ্গে ছন্দ মেলাতে নদীর পাশের বৃহত্তর শিমুল বাগান তো আছেই।
ভারতের সারি সারি উঁচু-নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বারেক টিলার বুকে ঘন সবুজের সমারোহ পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে হলহলিয়া নামক গ্রামে গেলে পাওয়া যাবে ৮০০ বছর পুরানো প্রাচীন লাউড় রাজ্যের হাবেলি রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ।
মেঘালয় পাদদেশে থাকা গারো মানুষদের ভাঙা ভাঙা বাংলা কথা বেশ আনন্দ দেয় পর্যটকদের। কখনও ইঞ্জিনচালিত নৌকা, কখনও বা ডিঙ্গিতে ভেসে, কখনও বা তীর ঘেষে পায়ে হেটে যাদুকাটার মন্ত্রমুগ্ধতা বিমোহিত হয়ে উপভোগ করে পর্যটকরা।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে যাদুকাটা নদী ঘুরতে যেতে হলে প্রথমে সুনামগঞ্জ পৌছতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গার বাস টার্মিনালগুলো থেকে প্রতিদিনি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাস যাত্রা করে। এগুলোর মধ্যে নন-এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া লাগতে পারে প্রায় ৭০০ টাকা আর এসি-বাসে গেলে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মত। সুনামগঞ্জ পর্যন্ত পৌছতে সময় লাগতে পারে প্রায় আট ঘন্টা।
সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে মোটরসাইকেল অথবা সিএনজি চালিত অটোগুলো যাদুকাটা নদী পৌছে দেয়। মোটরসাইকেলের ভাড়া পড়তে পারে প্রায় ২৫০ টাকার মত। সিএনজি অটোতে সাত জন হলে পুরোটা রিজার্ভ নেয়া যায়। এছাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় যাদুকাটা যায়। ফেরার সময়েও একই পথে আসা যায়।
তবে পর্যটকরা সাধারণত একসঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওড়, টেকেরঘাটের নীলাদ্রী লেক, শিমুল বাগান ও যাদুকাটা নদী দেখে সুনামগঞ্জ ফিরে আসেন। এতে অল্প সময়ের মধ্যে ভ্রমণের খরচটা বেশ ভালো মতই পুষিয়ে নেয়া যায়। তাই হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে (কমপক্ষে দুই দিন) ঘুরে আসা যেতে পারে যাদুকাটা নদীসহ অন্যান্য দর্শনীয় জায়গাগুলো।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
যাদুকাটা নদী ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
যাদুকাটা নদীর আশেপাশে তেমন একটা থাকার ব্যবস্থা নেই। খুব বেশি ভিড় হলেও এখানকার পর্যটন সেবা বলতে তেমন কোন স্থাপনা গড়ে উঠে নি। বড়ছড়া বাজারে গেলে থাকার জন্য কয়েকটি গেস্ট হাউজ পাওয়া যাবে। এখানে একদিনের জন্য মাথাপিছু ২০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ পড়তে পারে। আর তাহিরপুর বাজারে আছে দুটি আবাসিক হোটেল। সব চেয়ে ভালো সুনামগঞ্জ শহরে এসে থাকা। শহরে বিভিন্ন মান ভেদে হোটেল ভাড়া ২০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
লেকের পাশে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা একটি চুনা পাথরের কারখানা আছে। এর গেস্ট হাউজটা খালি থাকলে রাত্রি যাপনের জন্য এখানে থাকা যেতে পারে। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতি নেয়া সাপেক্ষে অনেকে উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করে নেয়।
খাবারের জন্য লাউড়ের গড় বাজারে পাওয়া যাবে সাধারণ মানের দেশীয় খাবার। বারিক্কা টিলার নিচের হোটেলগুলোও দুপুরের খাবারের জন্য মোটামুটি। এছাড়া বড়ছড়া বাজার, টেকেরঘাট বাজার, তাহিরপুর বাজারে মোটামোটি মানের খাবার দিয়ে উদরপূর্তি করা যাবে। কিন্তু ভালো খাবারের জন্য চলে আসতে হবে সুনামগঞ্জ শহরে। এখানকার রেস্টুরেন্টগুলো খাবারের মানের দিক থেকে বেশ ভালো। নদী দেখতে যাওয়ার সময় প্রয়োজনে এখান থেকে সঙ্গে করে কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণে প্রয়োজনীয় টিপস
- যাদুকাটা নদীতে ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখা উচিত
- এখানে দলবল মিলে যাওয়াটাই উত্তম
- বজ্রপাতের সময় নৌকার ছইয়ের নিচে অবস্থান নিতে হবে
- খাবারের উচ্ছিষ্ট ও প্যাকেট পানিতে ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না
- নৌকাতে মাইক বা মোবাইলে গান বাজিয়ে শব্দ দূষণ পরিহার করা উচিত
- রাতের বেলা অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো জ্বালানো থেকে বিরত থাকতে হবে
- মাছ, বন্যপ্রাণী এবং পাখি ধরা যাবে না। এমন কোন কাজ করা যাবে না, যেখানে এদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে।
- নৌকার গলুই বা ছইয়ের ওপর দাড়িয়ে ছবি তোলার মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে
- ভ্রমণের পূর্বেই সিলেটের আবহাওয়ার সম্বন্ধে ভালো করে জেনে যেতে হবে। নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রতিকূল আবহাওয়া থাকলে নৌকায় চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- ভ্রমণের সময় কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বা হারিয়ে গেলে জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করে সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
- যাত্রা শুরুর সময় নিয়মিত ওষুধ, টয়লেট পেপার, কয়েকটি বড় বড় পলিথিন, ব্যাকআপ ব্যাটারিসহ টর্চ লাইট, পাওয়ার ব্যাংক, মগ, রেইনকোর্ট বা ছাতা, চাদর, খাবার পানি, গামছা বা রুমাল, এবং সহজে শুকায় এমন কাপড়-চোপড় সঙ্গে নেয়া উত্তম।
আরো পড়ুন: পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
পরিশিষ্ট
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে ভ্রমণ সারা জীবনের জন্য স্মরণীয় এক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে। আর এই অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করতেই বছরের সারাটা সময়ই টাঙ্গুয়ার হাওড়, টেকেরঘাট ও বারেক টিলা ঘুরে আসার সময় পর্যটকরা যাদুকাটা নদী দেখে আসেন। এখানে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে ইকোট্যুরিজম স্থাপন করা হলে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে জায়গাটি। শুধু যে সরকারেরই রাজস্ব আয় হবে তা নয়, স্থানীয় তরুণ সম্প্রদায়ও খুঁজে পাবে কর্মসংস্থানের জায়গা।
পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
পাহাড় হাইকিং ও ক্যাম্পিং ভ্রমণপিপাসুদের সবচেয়ে প্রিয় ক্রিয়াকলাপগুলোর মধ্যে অন্যতম। রোমাঞ্চকর ট্রেইলগুলোর প্রতি ধাপে ধাপেই যেন ওত পেতে থাকে হাজারও বিপদ। এই রুদ্ধশ্বাস যাত্রার সঙ্গে যখন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা যোগ হয় তখন সেই রোমাঞ্চও হুমকির মুখে পড়ে। পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সর্তকতা না নেয়া হলে পুরো যাত্রাটাই অশুভ হয়ে যেতে পারে। তাই চলুন, দুর্ঘটনাগুলোর কারণ ও নিরাপদ পাহাড় ভ্রমণে করণীয় জেনে নেয়া যাক।
পাহাড়ি অঞ্চলে মৃত্যুর কারণ
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুই কারণেই স্থানীয় সহ পর্যটকদের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়, যা অনেক সময় তাদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে। সাধারণত বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড়ী এলাকার প্রকৃতির কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে। বৃষ্টিতে ঢাল, গর্ত, খানা-খন্দ, চূড়া সহ পাহাড়ের প্রতিটি পথ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এ অবস্থায় রাস্তা খুব ভালো করে চেনা থাকার পরেও স্থানীয়রা বিপদে পড়েন। আর রাস্তা না জানা পর্যটকদের জন্য দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।
পাহাড়ে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর আরো একটি কারণ হলো পাহাড়ে ভূমিধ্বস। সাধারণত নদীর পানিতে ক্ষয় হয়ে, ঢালে গর্ত হয়ে, বৃষ্টির পানি জমে, ভূমিকম্পের কারণে ভূমিধ্বস হয়ে থাকে। এছাড়া বন উজাড়, ঢালের উপর বাড়ি-ঘর বা অন্যান্য কাঠামো বানানো, পাহাড় কাটা, সাপ্লাইয়ের পাইপলাইন ফুটো হয়ে পানি পড়া, যে কোন ধরণের কৃষি কাজের মত মানুষ সৃষ্ট কারণও দায়ী ভূমিধ্বসের জন্য। মৌসুমী বর্ষার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় পাহাড়ে প্রায়ই বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় সমূহ
আবহাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে জেনে নেয়া
এটি অবশ্যই সর্বপ্রথম কাজ; তাছাড়া গন্তব্য যখন পাহাড়ী এলাকা, তখন এর কোন ব্যতিক্রম করা উচিত নয়। পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। পাহাড়ে দিনের বেলা বেশ উষ্ণ হলেও গ্রীষ্মের রাত এবং ভোরবেলা বেশ ঠান্ডা হয়। তাই সব ধরণের আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা ভাল। তবে বৃষ্টির ব্যাপারে সাবধান!
এর জন্য ভ্রমণকারিদের যাত্রার শুরুতেই পাহাড়ী এলাকার আবহাওয়া সম্বন্ধে জানতে হবে। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই সিলেট বা চট্রগ্রামের তাপমাত্রা জেনে নেয়া যায়। ভেজা আবহাওয়ায় যাওয়ার পাহাড়ী রাস্তা তো পিচ্ছিল হয়ই; পাশাপাশি গন্তব্য পর্যন্ত যাওয়ার দীর্ঘ পথটুকুও দুর্গম হয়ে ওঠে।
পার্বত্য অঞ্চলে বাজ পড়া একটি সাধারণ ঘটনা, তাই বজ্রপাতের সময় পাহাড়ে আটকা পড়া এড়াতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়ার কোন বিকল্প নেই। অবস্থা শান্ত হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করে তারপর বের হওয়া উচিত। এটি প্রতিকূল পরিবেশে অবহেলার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পড়া থেকে বিরত থাকা যাবে।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
উপযুক্ত জামাকাপড় ও জুতা পরা
ঠান্ডা বা গরম যে কোন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত পরিধেয় বাছাই করা উচিত। আর পাহাড়ী এলাকার ক্ষেত্রেও পোশাক বিশেষ ভাবে বেছে নিতে হবে। ক্লান্তিকর হাইকিং-এর সঙ্গে মানিয়ে নেবার জন্য শরীরকে আরামদায়ক রাখতে উপযুক্ত পোশাক এবং জুতা সঙ্গে নেয়া জরুরি। এর জন্য ভ্রমণের আগেই পোশাক ও জুতা কিনে রাখতে হবে।
চট্রগ্রাম ও সিলেটের জন্য সাধারণত মজবুত জুতা, থার্মাল এবং হালকা ওজনের ডাউন ফেদার জ্যাকেটই যথেষ্ট। অবশ্য শীতের সময় সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গরম কাপড় নিতে হবে।
ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা রাখা
শীতে কাপড়-চোপড় বেশি লাগে মানে এই না যে ব্যাগ ভর্তি করে যাত্রা করতে হবে। পাহাড় চড়ার জন্য হালকা থাকা আবশ্যক। কেননা ব্যাগে প্যাক করা সমস্ত কিছু নিজেকেই বহন করতে হয়। ভ্রমণের জন্য যাবতীয় গ্যাজেট থেকে যেগুলো না নিলেই নয় সেগুলোই শুধু নিতে হবে। বেশি পোশাক নেয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য সরঞ্জামগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য রেখে প্যাক করতে হবে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- ভ্রমণকারির জন্য ব্যাগের ওজনটি সহজে বহন করার মত হচ্ছে কিনা।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি না নেয়া
ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত দুঃসাহসিক কাজ করতে যেয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে খারাপ আবহাওয়ার সময় দুর্ঘটনার মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে। কোন দুর্গম ট্রেইল পাড়ি দেয়া, অজানা কোন রাস্তায় আন্দাজ করে হেঁটে যাওয়া, লাফিয়ে কোন বড় গর্ত পার হওয়ার মত কাজগুলো অনেকেই ছোট করে দেখেন।
তাছাড়া অনেকে তাড়াহুড়া অথবা শর্টকাটে যাওয়ার জন্য বিপজ্জনক রাস্তা বেছে নেয়। এখানে মনে রাখা ভালো যে, পর্বতগুলো কিন্তু কোথাও যাচ্ছে না। তাই সতর্কতামুলক কাজে দেরি হলে কোন সমস্যা নেই। বরং তা অনেক খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচাবে।
সঙ্গে একজন গাইড নেয়া
একজন পর্বত আরোহীর দক্ষতা যে স্তরেরই হোক না কেন, প্রতিটি যাত্রাই ভিন্ন ভিন্ন ঝুঁকির হাতছানি দেয়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একজন পেশাদার গাইডকে সঙ্গে রাখা। সে শুধু ঝুঁকির সম্ভাবনা কমানোর কৌশলগুলো ব্যবহারেই সাহায্য করবে না, পুরো পাহাড়ী ট্রেইলটার একজন গাইড হিসেবেও কাজ করবে।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পর্যটকদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি পূরণ করে সে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। এক কথায়, সার্বিক ক্ষতি থেকে দূরে রেখে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে একজন গাইড পুরো পর্বত আরোহণটাকে নিশ্চিন্তে উপভোগ করার জায়গা করে দেয়।
পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার ও পানি নেয়া
যে কোন দীর্ঘ ভ্রমণের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হাইড্রেটেড থাকা এবং শক্তি বজায় রাখার জন্য খাবার খাওয়া। এ জন্য বিভিন্ন ফলমুলের পাশাপাশি হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে। পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণের জন্য একটি রিফিল-যোগ্য পানির বোতল সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
পর্বতারোহণের সময় সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরে খাদ্যের ভালো যোগান অপরিহার্য। এটি হাইকিং করার সময় যাত্রা অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত হাইকিং করার সময় ৩০০০ থেকে ৬০০০ ক্যালোরি খরচ হতে পারে, যা অবিলম্বে পুষিয়ে নেয়া দরকার।
আরো পড়ুন: ভারতের মেডিকেল ভিসা: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ভিসা প্রসেসিং ফি
আরও যে জিনিসগুলো সঙ্গে রাখা দরকার
সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে বাঁচতে এক জোড়া সানগ্লাস ও সানস্ক্রিন রাখা যেতে পারে। এর থেকেও দরকারি জিনিস হলো ফ্ল্যাশলাইট এবং পাওয়ার ব্যাঙ্ক সঙ্গে রাখা। যে কোন সময় বিপদ-আপদে ফোন করার দরকার হতে পারে। তাই অযথা ফোনের ব্যাটারি নষ্ট করা যাবে না।
বিশ্রামের জন্য বিরতি নেয়া
হাইকিংয়ের সময় বিশ্রামের জন্য সময় নেওয়া একটি মৌলিক উপায়, যা ভ্রমণকে নিরাপদ, আনন্দদায়ক এবং সতেজ করে তোলে। দীর্ঘ দূরত্বের দৌড়বিদরা ক্লান্ত হওয়া এড়াতে নিজেদের গতি বাড়ায়। কিন্তু একজন ভাল হাইকারকে উল্টোটা করতে হয়; অর্থাৎ ধীরগতিতে চলে যেতে হয়। এই বিশ্রাম নেয়ার হারটা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তন হয়। এই সময়টা নিছক বসে থাকা নয়; প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপভোগের একটি উপায়।
সর্বদা সতর্ক থাকা
পাহাড়ী রাস্তায় চলার সময় প্রতিটি পদক্ষেপে মনযোগ দিতে হবে। একটি ছোট ভুল পদক্ষেপের জন্য মারাত্মক বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। একটি পিচ্ছিল পাথর বা কাদা মাটিই যথেষ্ট গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য। তাই নিরাপদে থাকার জন্য প্রয়োজনে গতি কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। ঘন ঝোপ-ঝাড়, গর্ত, পিপড়ার ঢিবি, ঝিরি পথ পেরনোর সময় সতর্ক থাকা উচিত। কোন ভাবেই বেকায়দা পড়ে পা যেন মচকে না যায় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বিষাক্ত প্রাণী ও পোকামাকড়ের ব্যাপারে সচেতন থাকা
পাহাড়ী এলাকার প্রাণী ও পোকামাকড় শহরের মত ঝুঁকিহীন নয়। খুব ছোট কোন প্রাণীও বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। পাহাড়ী পিপড়া ও মশাগুলো বেশ বিপজ্জনক হয়। এগুলোর জন্য পোকামাকড় নিরধোক নেয়ার পরেও সতর্ক থাকতে হবে। কোন কোন এলাকাগুলো এ ধরণের উপদ্রব বেশি তার জন্য গাইড বা স্থানীয়দের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
শেষাংশ
দুর্ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদ পাহাড় ভ্রমণে প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা হলে পুরো ভ্রমণটা আনন্দদায়ক হয়ে থাকবে। দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো নিঃসন্দেহে জীবনের জন্য এক স্মরণীয় স্মৃতি স্বরূপ। কিন্তু তা করতে যেয়ে বেঘোরে প্রাণ হারালে সেই স্মৃতির আর কোন মূল্যই থাকবে না। তাই নূন্যতম নিরাপত্তার বেষ্টনীতে থেকে উত্তেজনাকর কার্যকলাপগুলো চেষ্টা করা যেতে পারে। নিদেনপক্ষে, বন্ধু-বান্ধবকে নিজের মুখে পাহাড় ভ্রমণের বিস্ময়কর গল্প বলার জন্য হলেও এই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।
নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
নানান ধরনের সামাজিক টানাপোড়েন ও সমাজে নারীদের অবস্থান, এগুলোকে উপেক্ষা করে নারীরা আজকে বিস্ময়করভাবে শত শত দেশ জয়ের রেকর্ড গড়ছেন। একজন বিচক্ষণ নারী পরিব্রাজক সব সময় বিশ্ব ভ্রমণে যাত্রার পূর্বে গন্তব্যের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে ভালোভাবে অবগত হয়ে নেন। এই আর্টিকেলটি নারীদের একাকী ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ১০টি শহর নিয়ে আলোচনা করবে।
যে ১০টি শহর নারীদের একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ
ভ্যানকুভার, কানাডা
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূল পর্বতমালা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এই শহরটি তার উপকূলীয় সৌন্দর্য্যের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। স্ট্যানলি পার্কে হাটাহাটি করার সময় পশ্চিম কানাডার এই বৃহত্তম মেট্রোপলিটন এলাকাটিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যাবে। ওয়েস্ট এন্ড এলাকার কফিতে চুমুক দেয়ার সময় টের পাওয়া যাবে কানাডিয়ানদের আতিথেয়তা এবং বন্ধুত্বটা।
ভ্যানকুভার আর্ট গ্যালারি, লুকআউট টাওয়ার বা ভ্যানকুভার অ্যাকোয়ারিয়ামে মগ্ন থাকার সময় অন্য শহরের সাথে এর তুলনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে। সেখানে একা ভ্রমণের কথা মনেই থাকবে না। তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য কোলাহলপূর্ণ জায়গা থেকে সবাই পালিয়ে এই ভ্যানকুভারেই আসতে চায়।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
বার্গেন, নরওয়ে
সাতটি পর্বত এবং উত্তর সাগরের উপকূলের পার্শ্ববর্তী নরওয়ের সবচেয়ে সুন্দর এই শহরটি যেন প্রকৃতির এক টুকরো আশীর্বাদ। এর রাস্তা ধরে হাটার সময় মৃদুমন্দ হাওয়া শীষ দিয়ে জানান দেবে যে, ঠান্ডা ফিওর্ড পথচারিকে আরো আপন করে নিতে চাইছে। ভেগান বন্দর দিয়ে ব্রিগেন বরাবর সঙ্গ দেবে পুরনো স্থাপত্য এবং ইতিহাস।
ফ্লোয়েন-এর তাজা খাবারগুলো স্বাদ দিবে অমৃতের। ছোট মাছের বাজার পরিদর্শন শেষে শহরের সীমান্ত আলিঙ্গন করলেও ভ্রমণ পিপাসাটা রয়েই যাবে। তখন সবেমাত্র নতুন আসা পর্যটক ঘুরে আবার ফিরে চলেন অন্তরঙ্গ বার্গেনের উদ্দেশ্যে। এ যেন খেয়াল-খুশীমত অবাধে বিচরণের এক অপূর্ব নগরী, যার অধিবাসীরা নবাগতকে অভিভূত করতে অভ্যস্ত।
ভেনিস, ইতালি
স্বপ্নময় ভেনিস শুধুমাত্র নব দম্পতিদের মধুচন্দ্রিমার জন্য নয়। ৬০০ বছর পুরনো এই নগরী একাকী ভ্রমণকারিনীদের জন্যও একটি নস্টালজিক জায়গা। এর ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভগুলো ঘুরে দেখার সময় অবলীলায় মনে হতে পারে, যে ঠিক এরকমি একটা জায়গা হয়ত বহুদিন ধরে স্বপ্নে লালণ করে আসছেন।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
শিল্পকলায় ভরা দ্য ডোজ প্যালেস এবং সেন্ট মার্কস ব্যাসিলিকা ঘুরে দেখার সময় টের পাওয়া যায় যে, ভেনিস তার মানুষকে কাঙ্ক্ষিত প্রাইভেসিটি দিতে পারে। তাই এখানে নিরাপত্তা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। আর সূর্য অস্ত যাওয়ার লগ্নটি উপভোগের জন্য একটি বারের জন্য হলেও এ সময়টি একা কাটানো উচিত।
আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ড্স
কিছুক্ষন পরপর লেক দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে, কেন আমস্টারডামকে উত্তরের ভেনিস নাম দেওয়া হয়েছে। শহরটি প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ ভ্রমণকারীর পদচারণায় ধূলিধুসরিত হয়। এত মানুষের ভিড়ে নিঃস্বঙ্গতা নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে না। কারণ প্রায় ১৫০০ টিরও বেশি সেতু দেখে শেষ করতে হবে। ভেনিসের মতোই এই শহরটি মন্ত্রমুগ্ধতা সৃষ্টি করবে, কিন্তু তাতে নিরাপত্তাহীনতার ভয় নেই। বরং আছে আদিম ও অকৃত্রিম প্লেটোনিক ভালবাসার রোমান্টিক অনুভূতি।
আমস্টারডাম বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে একটি। ওল্ড সেন্টারের লেক, কেনাকাটা এবং কফিশপ এবং প্লান্টেজের যাদুঘর শহরে যে কোন নতুন মুখের সান্নিধ্য পেতে সদা প্রস্তুত।
আরো পড়ুন: ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজক ৭ শহর ভ্রমণ
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
একা একা কোথাও হারিয়ে যাবার জন্য এই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলটি সেরা হতে পারে। ছোট শহরটি জুড়ে নর্ডিক মিথের গা ছমছমে আবহ নবাগতদের অবাক হওয়ার খোরাক যোগায়। কিন্তু এই চমকে যাওয়াটা নেতিবাচক নয়; বরং এর জন্যই কোপেনহেগেনে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা।
নাইহ্যাভেনের লেক আর ভেস্টারব্রোতে কেনাকাটার জন্য হাল্কা পদব্রজে ভ্রমণই যথেষ্ট। তবে ক্লান্ত হয়ে গেলেও ভয় নেই। বড় বড় শহরের জমকালো আলো না থাকলেও নিঝুম সড়ণীয় আড্ডাপ্রিয় প্রতিবেশীরা অকুন্ঠচিত্ত্বে বুঝিয়ে দেবে যে, পথচারিণী নিরাপদ আশ্রয়েই আছেন।
ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
শ্বাসরুদ্ধকর স্থাপত্য এবং ইউরোপের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক কেন্দ্রে পরিপূর্ণ ভিয়েনা নগরী। বারোক দুর্গ এবং ইম্পেরিয়াল প্রাসাদের মধ্যে আসা ভ্রমণ গ্রুপগুলো দর্শনীয় স্থান গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের প্রাচীন এই রাজধানী ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
এখানকার গথিক গীর্জা এবং স্মারক ভাস্কর্যগুলো দেখার সময় পরিচয় হবে প্রায় শখানেক নিঃস্বঙ্গ পর্যটকদের সাথে। কারো হয়ত ক্যামেরার শাটারে আঙ্গুল, কারো বা চোখে সৌন্দর্য্যের নেশায় মোহগ্রস্ত দৃষ্টি। কিন্তু পর্যটকদের স্রোতের অনুকূলে অবচেতনেই একই সাথে বয়ে চলছে গন্তব্যের দিকে।
এই নিরাপদ নগরীর সংস্কৃতির স্বাদ পেতে হলে হাজার পুলকিত দৃষ্টির সাথে এক হয়ে চোখ রাখতে হবে স্টেট অপেরায়। যোগ দিতে হবে ফিলহারমোনিকের কনসার্টে।
সিঙ্গাপুর সিটি
এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বের এই দ্বীপ নগরীটি জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে ১৮১৯ সালের ব্রিটিশ বাণিজ্য উপনিবেশের। বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্রে থাকা অত্যাধুনিক হয়ে ওঠা শহরটি প্রায় ৫৫ লাখ লোকের আবাসস্থল। এই কোলাহলপূর্ণ শহর জুড়ে অনেক বছর ধরেই নিজেদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করছেন হাজারো নারী পর্যটক। ঘনবসতিপূর্ণ হলেও এর ৫০-এরও বেশি সবুজ উদ্যান একে রীতিমত উদ্যানের শহর বানিয়ে ফেলেছে।
আরো পড়ুন: ভারতের টুরিস্ট ভিসা কীভাবে পাবেন: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রসেসিং ফি
এমনকি এগুলোতে ঘুরতে পায়ের চাপে পিষ্ঠ হওয়ার ভয় নেই। বরং এখানকার বাহারি খাবারে এশিয়ান ফিউশন এবং আমেরিকান খাবারের মিশ্রণ বহু জাতির মেলবন্ধনের সংকেত দেবে। এখানকার মরিচ কাঁকড়া খাওয়ার সময় অপরিচিতরা বৈঠকি ভঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে এর অদ্ভূত স্বাদের অনুভূতি শেয়ার করতে পারেন।
লিসবন, পর্তুগাল
লিসবন আটলান্টিক মহাসাগরের ধারে অবস্থিত এটি ইউরোপীয় শহরটি সগর্বে প্রকাশ করে এর সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতিকে। শহরটি সাতটি পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটিতে স্বভাবতই পাহাড় বেয়ে উঠতে আসেন হাজারো হাইকার। খাড়া ঢাল বেয়ে একা একা ওপরে ওঠার সময় সবাই সতর্ক থাকেন রহস্যময় পাথরযুক্ত রাস্তাগুলোর ব্যাপারে।
অ্যালফামা, কিয়াডো এবং বাইরো অ্যাল্টোর আশেপাশের এলাকাগুলোর প্রাণবন্ত দৃশ্য মন কেড়ে নেয়ার মত। আর সেখানের কোন খাবারের দোকানে খেতে যেয়ে দোকানীদের অপূর্ব ব্যবহার সেই ভূবন ভোলানো দৃশ্যকে যেন আরো ন্যায্যতা দেয়। এই জায়গাতে মুলত সবাই নতুন খাবারের স্বাদ পরখ করতে যেতে চায়।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
হংকং, হংকং
তিয়ান তান বুদ্ধের শহর হংকং নারীদের ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর অবিশ্বাস্য শান্ত পরিবেশের সাথে আধ্যাত্মিক ভাবগাম্ভীর্যের মিথস্ক্রিয়া এক পরম প্রাপ্তি। পো লিন মনাস্ট্রি পর্যন্ত ২৬৮টি ধাপ পেরনোর সময় হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় বুদ্ধে প্রতি তীর্থযাত্রীদের টানটা।
উন্নত অর্থনীতির শহর হওয়ায় এখানে অপরাধের হার খুবই কম। এমনকি প্রতি বছর তা আরো কমের দিকে যাচ্ছে। তবে ১ শতাংশ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য হলেও পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো গভীর রাত পর্যন্ত সক্রিয় থাকায় রাত ১২টার পর আলোকসজ্জাটা এখানে অদ্ভূত কোন ব্যাপার নয়। সে অনুসারে স্থানীয়রা অনায়াসেই রাতে চলাফেরা করতে পারেন। পরিবহন ব্যবস্থাও অনেক রাত পর্যন্ত চালু থাকে।
লন্ডন, ইংল্যান্ড
লন্ডনের সদা বিকশিত এবং বহুজাতিক সংস্কৃতির বিপজ্জনক গতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয়দের মনযোগ নিজেদের জীবন নিয়েই। তাই অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও পারস্পরিক বাক বিনিময় ও সৌজন্যতার ক্ষেত্রে এরা বেশ ভদ্র এবং সহানুভূতিশীল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
তবে এর গতিশীল লোকালয়ে একা ভ্রমণকারি নারী প্রায় সময় স্বাগত বোধ নাও করতে পারেন। তবে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাধীন ভ্রমণকারির জন্য লন্ডন দারুণ একটি জায়গা। শোরেডিচ, ব্রিক লেন বা ক্যামডেন টাউনের বাজারে একা একাই ঘুরে বেড়িয়ে লন্ডনের খাবার খ্যাতির সাথে পরিচিত হয়ে নেয়া যায়। থিয়েটার আর নাইট লাইফের জন্য হারিয়ে যাওয়া যাওয়া যেতে পারে গুঞ্জনপূর্ণ ওয়েস্ট এন্ডে।
শেষ কথা
অবাধে প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের জন্য বহু ভ্রমণপিপাসু নারী প্রতি বছর পারি জমাতে চান দেশের বাইরে। উপরোল্লিখিত ১০টি শহর নারীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য হতে পারে দারুণ সুযোগ। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির এখানে কোন স্থান নেই। জনজীবন এখানে নিজেদের জীবনধারণ নিয়েই বরং বেশি ব্যস্ত। এমনকি দিকভ্রান্ত কোন পথিক এখানে সাহায্য চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন না। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, নিঃস্বঙ্গ ভ্রমণকারী নির্দ্বিধায় এই জায়গাগুলোতে খুঁজে পাবেন নিজের ঘরের মত আরামদায়ক অনুভূতিটি।
কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
প্রথমবারের মত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ মঞ্চস্থ করার মাধ্যমে ইতিহাস গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কাতার৷ ৮টি সুসজ্জিত ফুটবল ভেন্যু সরাসরি দেখতে যারা দেশটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য অভাবনীয় চমক অপেক্ষা করছে এই প্রাকৃতিক নৈসর্গে। ঐতিহ্যবাহী আরব আতিথেয়তার সাথে আদর্শ শীতকালীন আবহাওয়া, খেলা দেখার স্বাদকে পরিপূর্ণতা দেবে। এই ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে চলুন দেখে নেয়া যাক কাতারের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো।
কাতারের বিভিন্ন শহরের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো
দোহার ইসলামী শিল্প যাদুঘর
চাইনিজ স্থপতি আইএম পেইয়ের নকশা করা ইসলামী শিল্প জাদুঘর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০০৮ সালে। কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত ভবনটিকে দূর থেকে একে অপরের উপরে রাখা কয়েকটি বাক্সের স্তুপের মতো দেখায়৷ এর ক্রিম রঙের চুনাপাথরের বাহ্যিক অংশটি ইউরোপীয়ান স্থাপত্যের আমেজ দেয়। পরিচ্ছন্ন জ্যামিতিক প্রান্তগুলো জানান দেয় এর মজবুত কাঠামোর কথা।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
সূর্যের আলোতে ধারগুলো ঝলমল করতে থাকে। ভবনের উপরে চোখের মতো স্লিটটি বানানো হয়েছে ১৩ শতকের ওজুর ফোয়ারা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যাদুঘরের কাছাকাছি হওয়ার জন্য লেকের উপর দিয়ে একটি সেতু অতিক্রম করতে হয়। বাইরের অবকাঠামোটি যতটাই সরল, এর অভ্যন্তর ভাগটি ঠিক ততটাই জটিল। এই বৈপরীত্য প্রতিটি দর্শনার্থীকেই হতবাক করে দেয়।
সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
সমুদ্র ভ্রমণে উত্তাল ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে দেয়ার অমোঘ টান অনুভূত হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই উচ্ছ্বাস অনেক সময় জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্র সৈকতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক না থাকা, নির্দেশনা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব এবং সৈকতে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এর জন্য দায়ী। তাই চলুন, সমুদ্রে স্নানের সময় মৃত্যুর কারণ ও দুর্ঘটনা এড়িয়ে সতর্ক থাকতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
সমুদ্রে স্নানের সময় দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর কারণ
পর্যটকদের সৈকত নিরাপত্তা নির্দেশনা উপেক্ষা
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে নিষেধ সত্ত্বেও পর্যটকদের সমুদ্রের পানিতে নামা। গোসলের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলেও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে আরো গভীরে চলে যান। নিরাপত্তা রক্ষীদের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরেও দর্শনার্থীরা তা উপেক্ষা করেন। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টেই এই বিড়ম্বনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি বিপজ্জনক সময়গুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার সময়েও কিছু পর্যটকদের সামাল দিতে যেয়ে রীতিমত ঝামেলার সম্মুখীন হন নিরাপত্তা কর্মীরা।
ফলশ্রুতিতে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চলেছে। এছাড়া ভ্রমণের অফ সিজনে নির্জন সৈকতে পানিতে নেমেও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। এই অসতর্কতা ও নিরাপত্তাজনিত নির্দেশনা অমান্য করাই মুলত দায়ী প্রতি বছর মৃত্যুর ঘটনাগুলোর জন্য।
আরো পড়ুন বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
সৈকত নিরাপত্তা সংকেত সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব
সমুদ্রের মত বিপজ্জনক জায়গায় আগে থেকেই জোয়ার-ভাটার তথ্যটা সবার জেনে নেয়া উচিত। সৈকত প্রশাসন প্রতিটি বৈরী আবহাওয়ায় সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে সতর্ক সংকেত ও সংখ্যা দিয়ে বিপদের মাত্রা সম্পর্কে অবহিত করা হয় জনসাধারণকে।
কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এই সংকেত বা সংখ্যার অর্থ অনেকেই জানেন না। কোন রঙের পতাকা কি অর্থ বহন করছে সে বিষয়ে অনেকেরই কোন স্পষ্ট জ্ঞান নেই। সৈকতের কোন কোন প্রবেশদ্বারগুলোতে সমুদ্রস্নানের নির্দেশনা থাকলেও তা একবারের জন্য পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেন না কেউ। ফলে অসতর্ক হয়েই সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাজারো দর্শনার্থী।
সমুদ্র সৈকতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা
উপরোক্ত দুটি কারণের পাশাপাশি এই কারণটি বিপদের ভয়াবহতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পর্যটকরা নিজেরা সতর্ক থাকলে বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো। কিন্তু হাজার হাজার অসতর্ক পর্যটককে সামলানোর জন্য বর্তমান লাইফগার্ড কর্মীর সংখ্যা যথেষ্ট নয়। বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের বিপরীতে মাত্র ১১২ জন টুরিস্ট পুলিশকে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। কক্সবাজার সি সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিদিনের দুই শিফটে মাত্র ২৭ কর্মী নিয়োজিত থাকেন।
আরো পড়ুন চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
তাছাড়া সৈকত এলাকায় পর্যাপ্ত নজরদারি ছাড়াও অভাব আছে উদ্ধার সরঞ্জামের। এরকম নাজুক ব্যবস্থায় ক্রমাগত দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে সৈকত।
সমুদ্রে স্নানের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার
দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গা ও সময়ের ব্যাপারে আগে থেকেই জেনে রাখা
সমুদ্রস্নান করার জন্য এমন মৌসুমে যাওয়া উচিৎ যখন সমুদ্র শান্ত থাকে। এরপরেও অন্যান্য মৌসুমে যেতে হলে জোয়ার-ভাটার সময়গুলো ভালো ভাবে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। কক্সবাজারে পৌছার পর পরই স্থানীয়দের সাথে কথা বলে খোঁজ খবর করে নেয়া উচিত।
টুরিস্ট গাইড বা হোটেল বা স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা এবং তার স্পট সম্পর্কে জেনে নেয়া যেতে পারে। সৈকতে প্রবেশের মুখে উল্লেখিত নির্দেশনাগুলো মনযোগ দিয়ে একবার পড়ে নেয়া উচিত।
আরো পড়ুন ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
সাধারণত লাবণী পয়েন্ট ব্যতীত সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী, ডায়াবেটিস হাসপাতাল পয়েন্ট ও সিগাল পয়েন্টে গোসলে নামা নিষিদ্ধ থাকে। বিকেল ৫টার পর সমুদ্রের পানিতে নামা ঠিক নয়। এছাড়াও সমুদ্রে নামার আগে দিয়ে কর্মরত গার্ডের কাছ থেকে জোয়ার-ভাটাসহ আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থাটা জেনে নেয়া উত্তম। লাইফগার্ড নির্দেশিত স্থানগুলো ছাড়া অন্য কোনো পয়েন্ট থেকে সমুদ্রে গোসল করা ঠিক নয়। এমনকি সেখানে টায়ার বা যে কোন ভাসমান বস্তু নিয়েও পানিতে নামা উচিত হবে না।
সৈকতে বাতাসের গতিবিধি ও পানিতে নামা ঠিক হবে কি হবে না তা সহ যে কোন তথ্যের জন্য লাইফগার্ডরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকেন। যে কোন সময় তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য তাদের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করাটা উত্তম।
চিহ্ন এবং পতাকা ব্যাপারে জানা
সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রঙের পতাকা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো কখন ও কোথায় সমুদ্রের পানিতে যাওয়া নিরাপদ তার নির্দেশনা বহন করে। লাল রঙের পতাকা মানে সমুদ্রের পানিতে নামা যাবে না। এগুলো ভাটার সময় লাগানো হয়। আর সবুজ পতাকার অর্থ এখন আপাতত সমুদ্রে গোসল করা নিরাপদ। এই পতাকা লাগানো হয় জোয়ারের সময় লাইফগার্ড এলাকায়।
আরো পড়ুন বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
হলুদ পতাকা মানে সমুদ্রে ঢেউয়ের মাত্রা ১.৫ মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। তাই পানিতে সাঁতারের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
গোসলের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবুজ; সর্বোচ্চ হলুদ পতাকা লাগানো জায়গাগুলোতে থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই লাল পতাকা লাগানো জায়গা অতিক্রম করা যাবে না।
রিপ কারেন্ট থেকে সাবধান
রিপ কারেন্ট হল ঢেউয়ের শক্তিশালী অবস্থা যখন তা সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ঢেউ যে কোন দক্ষ সাঁতারুকেও খড়কুটোর মত দ্রুত সমুদ্রের গভীরে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এ সময় কোনভাবেই সমুদ্রের পানিতে নামা যাবে না। যথাসম্ভব আগে থেকেই গার্ডদের কাছ থেকে রিপ কারেন্টের সময়ের ব্যাপারে জেনে নিতে হবে।
আরো পড়ুন ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
অনেক সময় আচমকাও রিপ কারেন্টের সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তীর রেখার সমান্তরালে থেকে তীরের দিকে সাঁতার দিতে হবে। তবে এ সময় সাহায্যের জন্য চিৎকার করাটাই ভালো। তাহলে আশেপাশের লোকজন সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারবে।
সমুদ্রের পানিতে নামার সময় টায়ার বা লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা
খুব ভালো সাঁতারুদেরও সমুদ্রের পানিতে নামার সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা উচিত। সমুদ্রের আবহাওয়া যে কোন সময় পরিবর্তন হতে পারে। টায়ার বা লাইফ জ্যাকেট থাকলে এ অবস্থায় বাঁচানোর সুযোগটা থাকে। আর যারা সাঁতার জানেন না, তাদের জন্য সমুদ্রের পানিতে না নামাটাই উত্তম। নিদেনপক্ষে, সমুদ্রের একদম কূল ঘেষে গোসল করা যেতে পারে, তবে সাবধান থাকতে হবে।
চোরাবালি থেকে সাবধান
সমুদ্রে তীব্র স্রোত এবং গুপ্ত গর্ত সৃষ্টি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। জোয়ারের সময় সমতল থাকা জায়গাগুলো ভাটার সময় খাদে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আর ঘূর্ণিপাকে সৃষ্টি হয় ভয়ঙ্কর চোরাবালির। তাই এগুলো এড়িয়ে চলার জন্য লাইফগার্ডদের সাহায্য নিতে হবে। সবুজ পতাকা চিহ্নিত জায়গায় গোসল করা যেতে পারে। তবে সাবধানতার জন্য দলবদ্ধভাবে থাকা যেতে পারে, যেন কোন সমস্যা হলেই অন্যরা সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে।
আরো পড়ুন কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণ গাইডলাইন: ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় ঝিরিপথ
শিশু ও বয়স্কদের একা হতে দেয়া যাবে না
সমুদ্রস্নানের ক্ষেত্রে এই দলবদ্ধ থাকাটা খুবই জরুরি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের কোনভাবেই একা হতে দেয়া যাবে না। অসুস্থ বা দুর্বল শরীরের লোকদের নিয়ে সমুদ্রে হাঁটুপানির বেশি নামা যাবে না। তরুণদের মধ্যেও এরকম কেউ থাকলে বাকিদের উচিত তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও খাবার পানি রাখা
সৈকতে শঙ্খ, ঝিনুক জাতীয় জিনিসে লেগে অনেক সময় পা কেটে যায়। বিশেষ করে ইনানি সৈকতে এরকমটা বেশি দেখা যায়। এই পরিস্থিতির জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা বাঞ্ছনীয়। আর ক্লান্তি এড়ানোর জন্য সাথে রাখতে হবে খাবার পানি। কারণ পানের অযোগ্য সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পান হিতে বিপরীত করতে পারে। সর্বসাকূল্যে, ক্লান্ত বা ক্ষত নিয়ে সমুদ্রের পানির বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
পরিশিষ্ট
সমুদ্রে স্নানের সময় দুর্ঘটনা এড়িয়ে সতর্ক করণীয় সমূহ যথাযথ পালনের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাগুলো এড়ানো যেতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের জন্য সম্পদ, যা বিশ্ব পরিব্রাজকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো তাদের কাছে এই সম্পদের ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি করছে। তাই একদিকে সৈকতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি যেমন জরুরি, অন্যদিকে দেশীয় পর্যটকদেরও উচিত নিজের ও অন্যের প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে সমুদ্র ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকা।
আরো পড়ুন হাকালুকি হাওর ভ্রমণ: এক নিঃসীম জলজ মুগ্ধতা
২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজক ৭ শহর ভ্রমণ
পুরো একটি বছর পার করে আবারো বসতে যাচ্ছে আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপের আসর। তাও আবার মন্ত্রমুগ্ধ কর দ্বীপ দেশ অস্ট্রেলিয়ার। অস্ট্রেলিয়ার ৭টি সুন্দর শহরে (সিডনি, মেলবোর্ন, অ্যাডিলেড, জীলং, হোবার্ট, পার্থ এবং ব্রিসবেন) আয়োজিত হবে বিশ্বনন্দিত ক্রিকেট উৎসবের ৮ম আসর। শুধু স্টেডিয়াম-ই নয়, ভ্রমণপিপাসু ক্রিকেটপ্রেমিদের জন্য অনেক চমক নিয়ে অপেক্ষা করছে ওশেনিয়া মহাদেশের এই বৃহত্তম দেশটি। সূর্যস্নাত সৈকত এবং মনোরম বন থেকে শুরু করে বিদেশি বন্যপ্রাণী ক্রিকেট ভক্তদের সফরটিকে নিমেষেই পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে। শহরগুলোর নান্দনিকতা এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতি প্রতিটি ভ্রমণকারির উপলব্ধ অভিজ্ঞতা চিরস্মরণীয় করে রাখতে পারে। সেই সূত্রে, অস্ট্রেলিয়ামুখী পরিব্রাজকদের উদ্দেশ্যেই ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজক অস্ট্রেলিয়ার ৭টি শহরের বিস্তারিত নিয়ে এবারের নিবন্ধ।
২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজক ৭টি শহর
অ্যাডিলেড
সংস্কৃতি, খাবার, উৎসব এবং বিনোদনে ভরপুর অ্যাডিলেড মানেই ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন উৎসবের আমেজ আর নতুন নতুন সব মজার অভিজ্ঞতা।
অভ্যন্তরীণ-শহরের মুল দর্শনীয় স্থানগুলো সব পায়ে হাটা দূরত্বে। ঝকঝকে শহরতলি থেকে ২০ মিনিট এগোলেই দৃশ্যমান হতে শুরু করবে সৈকত ও পাহাড়ের প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলো। স্টেডিয়াম ওভালের দক্ষিণে হাল্কা ম্যারাথন করলেই পৌছে যাওয়া যাবে অপূর্ব রিভারব্যাঙ্ক ব্রিজ এবং নতুন পুনর্নির্মিত ফেস্টিভাল সেন্টারে। অ্যাডিলেড বোটানিক গার্ডেন এবং ন্যাশনাল ওয়াইন সেন্টার পেরনোর সময় চোখে পড়বে উত্তর টেরেসের সাংস্কৃতিক বুলেভার্ড বরাবর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার আর্ট গ্যালারি, স্টেট লাইব্রেরি এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ান যাদুঘর।
অ্যাডিলেড সেন্ট্রাল মার্কেট দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যে বৃহত্তম। শহরের রাস্তাগুলো ভোজনশালায় ভরা। ইতালীয়-অনুপ্রাণিত অস্টেরিয়া ওগি এবং ফুগাজি থেকে শুরু করে আফ্রিকোলায় খাবারের পসড়া, শোবোশোর গুঞ্জন এবং ফিশব্যাঙ্কে পরিশ্রুত সামুদ্রিক খাবার। রান্ডেল, হাট, এবং গাউজার রাস্তাগুলো রাতের খাবারের জন্য নির্ধারিত।
অ্যাডিলেড ভিত্তিক দর্শনার্থীদের জন্য ডে-ট্রিপ এবং সাপ্তাহিক ছুটির সুযোগ প্রচুর। ক্যাঙ্গারু দ্বীপের প্রাকৃতিক নৈসর্গে প্রাচীন পৃথিবীর খোঁজে হারিয়ে যেতে সাদরে আমন্ত্রণ জানায় ফ্লিন্ডার রেঞ্জ এবং আউটব্যাক। আর এখানকার নিখুঁত সৈকত এবং ফ্লিন্ডার চেজ ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে কোনটা আগে দেখবেন, তা নিয়ে পর্যটকরা প্রায়ই দ্বিধায় পড়ে যান।
পড়ুন: আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২২: বাংলাদেশ দলের সোয়াট (SWOT) বিশ্লেষণ
ব্রিসবেন
ভূরিভোজন করানোর দিক থেকে এই শহরের রেস্তোরাঁগুলোও পিছিয়ে নেই। তবে তার আগে অবশ্যই আউটডোর কার্যক্রমগুলো শেষ করে নিতে হবে। কারণ সেগুলো নিরতিশয় রোমাঞ্চকর। অ্যাবসেইলিং, স্টোরি ব্রিজে আরোহণ, হেলিকপ্টারে দ্বীপ ভ্রমণ বা নৌকায় করে পিকনিক করতে যেয়ে বেশ হাপিয়ে উঠতে হবে। ব্রিসবেনের ৫-তারকা বিলাসবহুল হোটেল বা আকাশক্ষত তারার নিচে ক্যাম্পিং নিমেষেই ভুলিয়ে দিতে পারে সেই ক্লান্তি।
বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
নিম্নভূমির দেশ বাংলাদেশে পাহাড়ী অঞ্চল বলতে দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রাম পাহাড়, উত্তর-পূর্বে সিলেটের নিম্ন পাহাড় আর উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে কিছু উচ্চভূমি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়গুলোর আশ্রয়স্থল দেশের একমাত্র উল্লেখযোগ্য পার্বত্য প্রণালী চট্টগ্রাম, যেখানে অন্তত ৭৫টি পাহাড় রয়েছে। এগুলোর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,০০০ থেকে ৩,৩০০ ফুট পর্যন্ত উচু। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই পর্বতশ্রেণীটি প্রায় ১৩,১৮৪ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত, যা বাংলাদেশের মোট ভূমি এলাকার এক দশমাংশ। এই অঞ্চলের মাটি প্রধানত বাদামী দোআঁশ থেকে বেলেপাথরের হয়। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অম্ল বিদ্যমান। পাহাড় জীববৈচিত্র্যে এক অপরিপেয় ভান্ডার। আসুন জেনে নেই বাংলাদেশের কোন পাহাড়গুলো ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার।
বাংলাদেশে অবস্থিত ৩০০০ ফুটের অধিক ১৪টি পাহাড় চূড়া
কেওক্রাডং চূড়া
৪,০৩৫ ফুট উচু এই আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানটি দেশের উত্তর-পূর্বের মিয়ানমারের নিকটবর্তী সীমান্তে অবস্থিত। এটি আসলে বান্দরবান জেলার রেমাক্রি মৌজার থাইখং পাড়ার কাছে অবস্থিত। যদিও এটিকে বাংলাদেশের ৪,০৪০ ফুটের সর্বোচ্চ চূড়া বলে ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করা হয়, সাম্প্রতিক এসআরটিএম (শাটল রাডার টপোগ্রাফি মিশন) ডেটা, জিপিএস রিডিং এবং রাশিয়ান টপোগ্রাফিক ম্যাপিং-এ এর প্রকৃত উচ্চতা ধরা পড়ে ৩,৩০০ ফুটের কম।
কেওক্রাডং এর চূড়ায় একটি ছোট আশ্রয়কেন্দ্র এবং বাংলাদেশি সামরিক বাহিনী কর্তৃক ১০,৪০৭ ফুট উচ্চতা ঘোষণা করা একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। গারমিন জিপিএস এই অবস্থানে ৩,১৯৬ ফুট রেকর্ড করেছে। পাশাপাশি আরো একটি ভিন্ন দল জিপিএস দিয়ে ৩,২৩৫ ফুট পরিমাপ করেছে। পরের এই দুটি পরিমাপগুলো রাশিয়ান টপোগ্রাফিক ম্যাপিং এবং এসআরটিএম ডেটার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পড়ুন: ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
সাকা হাফং
বাংলাদেশের এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গটির নামকরণ হয়েছে মুলত স্থানীয় ত্রিপুরা উপজাতির গোত্রীয় নাম থেকে। চূড়াটি ৮,৪১২ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, যার জিপিএস(গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) রিডিং সর্বপ্রথম রেকর্ড করা হয়েছিলো ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইংরেজ অভিযাত্রিক জিঞ্জ ফুলেনের মাধ্যমে। তিনি নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। এটি বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে মৌদক পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত।
এর চারপাশে আছে থানচি, বান্দরবান, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের চিন রাজ্য। ২০০৭ সালে প্রথম বাংলাদেশি অভিযাত্রিক দল এই পাহাড়ে উঠতে সক্ষম হয়। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ইয়াহিয়া খান এবং পরবর্তীতে এভারেস্ট পর্বতারোহী সজল খালেদ তাদের সঙ্গে যোগ দেন। ২০১১ সালে দুটি প্রবাসী দলের রেকর্ড থেকে সাকা হাফং এর উচ্চতা পাওয়া যায় ৩,৪৮৮ ফুট এবং ৩,৪৬১ ফুট।
শাহবাগ শিশু পার্ক: আধুনিকায়নের নামে ৩ বছরের বেশি সময় বন্ধ
আধুনিকায়নের নামে তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাজধানীর শাহবাগ শিশু পার্ক বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু–কিশোররা।
নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি শিশু পার্ক আধুনিকায়ন বা আধুনিক রাইড স্থাপনের নামে অর্ধযুগ পার করে দেবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময়ে একটি প্রজন্ম শিশু পার্কের বিনোদন থেকে বঞ্চিত হবে। এতে তাদের শারীরিক-মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পড়ুন: ‘ইয়াংগেস্ট ট্রাভেলার অব বাংলাদেশ’ স্বীকৃতি পেলেন ঢাবি শিক্ষার্থী শাওন