কৃষি
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সবচেয়ে বড় ছায়ার হাওরের মাউতির বাঁধ ভেঙে রবিবার সকাল থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে হাওরের সব জমির পাকা ধান ডুবে যায়। একই সঙ্গে কেটে রাখা ধানের বোঝা ও খড়কুটোও তলিয়ে যায়। এই ঘটনায় হাজারো কৃষকের কান্নায় পুরো হাওর ভারি হয়ে উঠেছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে যে হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। কিন্তু কৃষকদের দাবি, ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কাটা ধান আবার জমিতেই রয়ে গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, শাল্লার মাউতির বাঁধ (৮১ নম্বর পিআইসি) ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ শুরু হতে থাকলে কৃষকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কৃষকরা কাটা ধান, নাকি জমির পাকা ধান, না খড় তুলে আনবেন এই নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার কাটা ধানের স্তুপের পাশে বসে কাঁদতে আছেন।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
ভাঙা বাঁধের পাশে কাটা ধানের স্তুপের কাছে বসে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আভা রানী দাস। স্বামী কানন দাসের মাথায় ধানের বোঝা তুলে দিতে দিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘তারা খালি নিজের চিন্তা করে, বাঁধে লাখ লাখ টেকা দুর্নীতি করে। আমি ২৫ কেয়ার (আট একর) ধান করছিলাম। ৫ কেয়ার (আধ একরের কম) কাটছিলাম, অখন নিতাম পাররাম না, নিতে নিতে ইগুন নষ্ট অই যাইবো।’
আভা রানীর মতো তলিয়ে যাওয়া ফসলের চিন্তায় হাওরে বসেই কাঁদছেন আফাজ মিয়া, সিরাজ উদ্দিন, মনির মিয়াসহ হাজারো কৃষক।
ফসল হারানোর সংশয় নিয়ে তারা বললেন, ‘এই বাঁধ ভাঙতে পারে না, তদারকি ও অবহেলায় বাঁধটি ভেঙে আমাদের সর্বনাশ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাজারো পরিবার পানিবন্দি
কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ‘যারা বাঁধের কাজে গাফলতি করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
তলিয়ে যাওয়া বাঁধের কাছে দাঁড়ানো আঙ্গাউড়ার হিমেল সরকার নামে স্থানীয় একজন বলেন, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বাঁধের নিচে বুরুঙ্গা দিয়ে পানি যাচ্ছে দেখে হাওরে থাকা কয়েকজন কৃষককে জানাই। তারা বাঁশ বস্তা ছাড়াই খড় দিয়ে একঘণ্টা পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বাঁধ ভেঙে যায়। পরে সকাল ৭টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসেন, কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের শাল্লার সভাপতি তরুন কান্তি দাস বললেন, হাওরে ৭০ ভাগ ধানকাটা হয়েছে তবে ২০ ভাগ কাটা ধান খেতেই আছে। ৪৮ ঘণ্টায় পুরো হাওর ডুবে যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) বাঁধের কাজে মনোযোগী ছিল না,তাই আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একই মন্তব্য করেন শাল্লা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাউতির বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি কৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি ভালো করে বাঁধের কাজ করেছি। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি শনিবার রাতেও বাঁধের ওখানে ছিলাম।’
আরও পড়ুন: আগাম প্রস্তুতির কারণে এবার হাওরে ক্ষতি কম হয়েছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব বলেন, পানির চাপ বেশি থাকায় বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, রবিবার সকালে দায়িত্বশীলদের বাঁধ ঠেকানোর কাজ করতে কোনো বাধা ছিল না। কেন করলেন না তারাই ভালো বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওরে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধটি মেরামতের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বাঁধ নির্মাণে যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষককে সার পৌঁছে দিচ্ছে: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, সারা বিশ্বে সারের দাম বাড়লেও সরকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষককে সার পৌঁছে দিচ্ছে। এদেশের বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করে কৃষকের কাছে নিয়ে গেছেন। এ কারণে জমি কমলেও কৃষকের উৎপাদন বেড়েছে।
রবিবার নওগাঁর পোরশা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উফশী আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষকদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের দেয়া প্রণোদনার বীজ ও সার আপনাদের কাছে আমানত স্বরূপ। এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আউশের উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখুন।’
আরও পড়ুন: ভোক্তার সচেতনতা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে: খাদ্যমন্ত্রী
প্রকৃত কৃষকের হাতে প্রণোদনা পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কৃষক নন কিংবা চাষের জমি নেই এমন কেউ যেন প্রণোদনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী কৃষকদের উফশী আউশ চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য (২০২১-২০২২ অর্থ বছরে) পোরশা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে এক হাজার ১০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ৪৭ জন নারীর মাঝে চার লাখ ৮৯ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন তিনি।
পরে খাদ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাস্তবায়নাধীন সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় ৫০ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ করেন এবং ২১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেন।
আরও পড়ুন: সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশ গঠনে অবদান রাখার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর
ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের হাতে সার তুলে দিচ্ছে সরকার: আমু
সরকার ৮০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কাছে সার পৌঁছে দিচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় কৃষকদের পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকারের আমলে কৃষক সারের জন্য গুলি খেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকার শতকরা ৮০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে সময় মত কৃষকের কাছে সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ পৌঁছে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার হচ্ছে কৃষক বান্ধব সরকার। যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই কৃষকদের বিনামূল্যে এবং ন্যার্য মূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করে থাকে।’
শুক্রবার দুপুরে ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কুষকদের মাঝে বিনামূল্যে উফশী আইশ ধানের বীজ, এপি এবং এমওপি সার বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা বলেন, করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্নভাবে দেশের মানুষকে অর্থ ও খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে করোনার সময় আমাদের দেশে খাদ্যের কোন অভাব হয়নি।
আরও পড়ুন: আমুই হলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে আমির হোসেন আমু বলেন, রাস্তার কারণে দোকান পাট হয়েছে, গাড়ি চলছে। দালান কোঠা হচ্ছে, যাতে শ্রমিক কাজ করে। রাস্তা ঘাট উন্নয়ন হওয়ার কারণে মানুষের বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে। আজ যারা সরকারের বিরোধীতা করছেন, তারা এসব উন্নয়নের কথা বলেন না।
তিনি বলেন, আজকে পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর দেশের দক্ষিণ অঞ্চলকে সাউদ এশিয়ার একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মঞ্চে উন্নয়নের রোল মডেল। তাই আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে সকলকে কাজ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী, পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরদার মো. শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান, কৃষিম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক মো. মরিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সম্পদের ওপর বিদেশিদের লোভ দীর্ঘদিনের: আমু
নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান আমুর
হাওরের ৪১ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে: কৃষি মন্ত্রণালয়
হাওরের ৪১ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে ৩৮ শতাংশ, নেত্রকোণায় ৭৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৯, সিলেটে ৩৭, মৌলভীবাজারে ৩৬, হবিগঞ্জে ২৫ ও সুনামগঞ্জে ৪২ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর দেশের হাওরভুক্ত সাতটি জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের হাওরে চার লাখ ৫২ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। আর হাওর বাদে চার লাখ ৯৮ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। মোট (হাওর ও নন-হাওর মিলে) ৯ লাখ ৫০ হাজার ৩১৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আক্রান্ত হয়েছে, যা মোট আবাদের শতকরা এক ভাগ।
আরও পড়ুন: দেশে খাদ্য সংকট নেই, বিএনপি কোরাস গেয়ে চলেছে: কৃষিমন্ত্রী
এদিকে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও বৈরি আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ৮০ শতাংশ পাকলেই হাওরের ধান কাটার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, পাকা ধান দ্রুততার সঙ্গে কাটার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য জেলা থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা নেই: কৃষিসচিব
এই মুহূর্তে হাওরে প্রায় এক হাজার ৭০০ কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার ধান কাটছে। যার মধ্যে এক হাজার ১০০ কম্বাইন হারভেস্টার স্থানীয় আর ৩৫০টি কম্বাইন হারভেস্টার বহিরাগত বা অন্যান্য জেলা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
পাইকগাছায় ইঁদুরে কাটছে ধান গাছ, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
খুলনা জেলার পাইকগাছায় চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষমাত্রার তুলনায় বেশি জমিতে ধানের আবাদ হলেও ইঁদুরের উৎপাতে ফসল উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় ধানের জমিতে ইঁদুরের উৎপাত চরম আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইঁদুর ধান খেতের মাঝে গিয়ে শিষ আসা ধান গাছ কেটে ফেলছে। কৃষকেরা ইঁদুর নিধনে নানা ধরনের ফাঁদ পাতলেও সেগুলো কোনো কাজে আসছে না বলেও জানান বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইঁদুরের উৎপাতে ধান ক্ষেত পরিচর্যায় কিছুটা বেশি সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
কাশিমনগর এলাকার ধান চাষি হুমায়ূন কবির জানান, প্রতি রাতেই ইঁদুর তার জমির ধান কেটে নষ্ট করছে। ইঁদুর মারতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও সেগুলো কোনো কাজে আসছে না বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: দেশে এই মুহূর্তে সারের কোনো সংকট নেই: কৃষিমন্ত্রী
কপিলমুনি এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, আমার দুই বিঘা জমিতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান ভালো হয়েছে। তবে ধান গাছে শিষ ধরার শুরুতেই ইঁদুর ধান গাছের গোড়া থেকে কেটে ফেলে মারাত্মক ক্ষতি করছে। জমির আইলে বা ধান ক্ষেতের কোথাও ইঁদুরের গর্ত না থাকলেও জমির মাঝখানে গিয়ে তারা ধান কাটছে। এ সময় ধানের গাছ নরম ও মিষ্টি হয়, সে কারণে ইঁদুর ধান গাছ কেটে নরম অংশ খেয়ে ফেলছে বলে জানান তিনি।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছায় চলতি বোরো মওসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এক হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও এর বিপরীতে ৫ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উফশী ৪ হাজার ৫০ হেক্টর ও ১ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ হয়েছে। হরিঢালী ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ৯৪৫ হেক্টর, কপিলমুনি ইউনিয়নে ১ হাজার ৩০ হেক্টর, লতা ইউনিয়নে ১ হেক্টর, সোলাদানা ইউনিয়নে ১ হেক্টর, গদাইপুরে ১ হাজার ২৪০ হেক্টর, রাড়ুলী ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৫ হেক্টর, চাঁদখালী ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টর, দেলুটি ইউনিয়নে ৭০ হেক্টর, গড়ইখালী ইউনিয়নে ২০ হেক্টর ও পৌরসভায় ১৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৬ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের মাধ্যমে ইঁদুরের উপদ্রবের ব্যাপারে জেনেছেন। আর প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছে।
নিয়মিত মাঠে গিয়ে তারা কৃষকদের ইঁদুর মারার পদ্ধতি দেখিয়ে দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইঁদুর খুবই সুচতুর প্রাণী।’ তাই এদের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদেরকে জমির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এ সময় কৃষকদেরকে জমিতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
দেশে এই মুহূর্তে সারের কোনো সংকট নেই: কৃষিমন্ত্রী
দেশে এই মুহূর্তে সারের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবছর ২৬ লাখ টন ইউরিয়া লাগে, টিএসপি সাড়ে সাত লাখ টন, ডিএপিপি সাড়ে ১৬ লাখ টন, এমওপি সাড়ে সাত লাখ টন লাগে। আজ পর্যন্ত আমাদের মজুদে কোনো সমস্যা হয়নি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান মন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছরই অর্থবছরের শেষে আমরা আগামী অর্থ বছরের জন্য কি পরিমান সার প্রয়োজন সেটি নির্ধারণ করি। এই বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য কি ধরনের নীতি বা কৌশল নেবো। যাতে করে কৃষি উৎপাদন কোন ক্রমে বাধাগ্রস্ত না হয়। সার নিয়ে আমাদের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সার না পেয়ে ১৯৯৫ সালে ১৮ জন কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। তারা কোনো সাহায্যে চায়নি, তারা শুধু ন্যায্য মূল্যে সার চেয়েছিলো এজন্য তাদের রক্ত দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এরপর ২০০৩/২০০৪/২০০৫ সহ প্রায় প্রতিবছর সারের সংকট হয়েছে। ডিলারদের কারসাজিসহ সব কিছুর মধ্যেই ত্রুটি ছিলো। ফলে সার সংগ্রহ ও বিতরণে চরম অব্যবস্থাপনা ছিলো। তবে বর্তমান সরকার তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে। খাদ্য নিরাপত্তা আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আরও পড়ুন: নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রী জানান, আমাদের অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে একটি হলো কৃষি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষির গুরুত্ব অতীতেও ছিলো, আগামীতেও থাকবে। দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের জীবিকা কোন কোনভাবে কৃষির সাথে জড়িত। এজন্য সারের বিষয়টি অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখি। প্রধানমন্ত্রী সে নির্দেশ দিয়েছেন সার ব্যবস্থাপনা যাতে কোনো সমস্যা না হয়। সার নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন উপকরণ ও কাঁচামাল শিপিং নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। তাই বলা হচ্ছে সারা বিশ্বে খাদ্য ঘাটতির সমস্যা দেখা দেবে। কানাডার মতো দেশে মানুষ লাইন ধরে রুটি কিনছে, কাউকে ৫ লিটারের বেশি ভোজ্যতেল দেয় না। এই পরিস্থিতিতে আজকের সভাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষির উৎপাদন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে, কোনো ক্রমেই আমরা বিদেশের উপর নির্ভরশীল না হই।
ড.রাজ্জাক বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই সারের দাম বাড়লেও বাংলাদেশে সারের দাম বাড়েনি। আজকে আমরা সংগ্রহের পরিমাণ সমান রেখে দাম ঠিক রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটাই মূল কথা। ৩০ হাজার কোটি টাকা সার সংগ্রহ করতে এ বছর দিতে হবে। আগামী বছর পরিস্থিতি কি হবে আমি জানিনা।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে দীর্ঘক্ষণ পর্যালোচনা করেছি সার নিয়ে। এপর্যন্ত মজুদ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে টিএসপি, এমওপি ও ডিএপিপি বেশি আছে। ইউরিয়া যেটুকু দরকার সেটাই আছে। তবে সামনে কি হবে সেজন্য আমাদোর প্রস্তুতি নিতে হবে।
এসময় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, কৃষিমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, কমিটির সদস্য ও জাতীয় সংসদ সদস্য জহিরুল ইসলাম, কৃষি সচিব মো. সাইদুল ইসলাম ও শিল্প মন্ত্রণালয় সচিব, সার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: কোনভাবেই চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে দেয়া হবে না: খাদ্যমন্ত্রী
ঠাকুরগাঁওয়ে রাসায়নিকের বিকল্পে জনপ্রিয় হচ্ছে কেঁচো সার
ঠাকুরগাঁওয়ে রাসায়নিকের বিকল্পে জনপ্রিয় হচ্ছে কেঁচো সার
ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব ও সাশ্রয়ী ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের প্রবণতা যেমন কমছে, তেমনি ফসল উৎপাদনের খরচও সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়া জৈব সারের ব্যবহার ও উৎপাদন ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ এই জেলার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।
জানা গেছে, গত বছর ঠাকুরগাঁও সদরের বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকার ১০-১৫ জন চাষি কেঁচো সংগ্রহ করে জৈব পদ্ধতিতে সার উৎপাদন শুরু করেন। আর তাদের বিনা মূল্যে সার তৈরির উপকরণ দিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহযোগিতা করে। কৃষকদের উৎপাদিত সেই সার জমিতে ব্যবহার করে আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
আরও পড়ুন: লাউ গাছের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা
বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের নতুনপাড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম, মাজেদুর রহমান, হামিদুর রহমান, রইস উদ্দীনসহ একাধিক কৃষক বলেন, সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে কেঁচো কম্পোট সার প্রয়োগে খরচ হয় মাত্র আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু রাসায়নিক সার ব্যবহারে সেই ফলন পেতে চাষিদের তিন থেকে চার গুন বেশি টাকা গুনতে হয়। তাছাড়া এ সার তৈরিতে তেমন খরচ না হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
ফরিদপুরে ওটস চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট (বিএআরআই) উদ্ভাবিত উচ্চ মূল্যের দানা জাতীয় ফসল ওটস চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ফরিদপুরে। এরই মধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলার বসু নরসিংহদিয়া গ্রামের মাঠে সরেজমিন গবেষণা বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে অপ্রচলিত এ ফসলের আবাদে সফলতাও পেয়েছে কৃষি বিভাগ।
ফরিদপুরের বসু নরসিংহদিয়া গ্রামের মাঠে কৃষি মিউজিয়ামে ওটস ছাড়াও সমজাতীয় ফসল কাউন ও বার্লির আবাদ করে সফলতা অর্জিত হয়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. হযরত আলী আগ্রহী কৃষকদের ওটসসহ অপ্রচলিত দানাদার ফসল আবাদে কারিগরি সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, উচ্চমূল্যের এ ফসলটি আবাদে কৃষকদের লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে ‘বারি বেগুন-১২’ চাষে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া
সরেজমিন গবেষনা বিভাগের ফরিদপুর অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহমেদ জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ থেকে অপ্রচলিত দানাদার ফসলের কিছু আধুনিক ও উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, যার মধ্যে ওটস, কাউন ও বার্লি উল্লেখযোগ্য। এ তিনটি জাত কম সেচ ও কম উর্বর জমিতে আবাদযোগ্য।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মহা পরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার ফরিদপুরের বসু সরসেংহদিয়া এলাকায় এ ফসলগুলোর আবাদ পরিদর্শনকালে জানান, প্রতিবছর দেশে এক শতাংশ করে কমছে কৃষি জমি, তাই পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওটস, কাউন ও বার্লিসহ এ জাতীয় ফসলের আবাদ সম্প্রসারণ করা জরুরী।
সিলেটে ‘বারি বেগুন-১২’ চাষে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া
সিলেটে প্রথমবারের মতো বারি বেগুন-১২ চাষ করে বাজিমাত করেছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মন্দিরখলার কৃষক সৈয়দুর রহমান। দেখতে লাউয়ের মতো, আকারে বেশ বড় ও খেতে সুস্বাদু শীতকালীন এই বেগুন চাষে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ব্যতিক্রমী এই বেগুন চাষ এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক সৈয়দুর রহমান।
জানা গেছে, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, সিলেটের মাধ্যমে কৃষক সৈয়দুর রহমানকে পরীক্ষামূলকভাবে বিনামূল্যে বেগুনের বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে সৈয়দুর রহমানের রোপনকৃত বেগুনগাছে বেশ ভালো ফলন এসেছে। অনান্য বেগুনের চেয়ে এ জাতের দামও বেশি। বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক। একটি বেগুন প্রায় দেড় কেজি পর্যন্ত হয়।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো আবাদে ব্যস্ত চাষিরা
জেলার দক্ষিণ সুরমার কামালবাজার এবং লালাবাজার এলাকায় প্রথমবারের মতো বারি বেগুন-১২ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দুপুরে কৃষক সৈয়দুর রহমান বারি বেগুন-১২ এর মাঠ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (ফার্মগেইট, ঢাকা) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, সিলেটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুলসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
কৃষক সৈয়দুর রহমান ২০ শতক জমিতে বারি বেগুন-১২ এ বেগুন চাষ করেছেন। প্রত্যেকটি গাছেই ফলন এসেছে।
তিনি জানান, এ বেগুনটা দেখতে সবুজ এবং এতটাই বড়, মনে হবে অনেকটা লাউয়ের মতো। যেখানে অন্য বেগুনের দাম কেজিতে ২৫ টাকা সেখানে বারি বেগুন-১২ এর পাইকারি দাম ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এখন পর্যন্ত গাছে কোন রোগ-বালাই বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে।
এ পর্যন্ত ২৭ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
কৃষক সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘আমার বেগুন খেত এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। বড় আকারের বেগুন দেখতে কৃষকরাও ভিড় করছেন। আগামীতে এখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে এ জাত চাষের ইচ্ছা রয়েছে। এমন আরও একাধিক কৃষক বারি-১২ জাত চাষে আগ্রহের কথা বলেছেন।’
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, সিলেটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এ বছরই জাতটা আবিষ্কার করেছে। স্থানীয়ভাবে কৃষকদের মাঝে এর বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লাল বাঁধাকপি চাষ: বদলে দিয়েছে কৃষক বেলালের ভাগ্য
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দক্ষিণ সুরমার কামালবাজারে প্রথমবারের মতো বারি বেগুন-১২ চাষ করা হয়েছে। মূলত এ বেগুন শীতের সময়ে ভালো হয়। তাই এটাকে শীতকালীন বেগুন বলা হয়।
মাহমুদুল ইসলাম নজরুল জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চারা রোপণ করা হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতটি এ অঞ্চলে ব্যাপক আকারে চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
‘ভোজ্য তেলের আমদানির পয়সায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে’
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, কয়েক বছরের ভোজ্য তেলের আমদানির পয়সা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে। তাই আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। এজন্য কৃষকদের সরিষা উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে।
বুধবার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার এতবারপুরে আয়োজিত মাঠ দিবসে ভার্চুয়ালি দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, দূষিত তেলের কারণে হৃদরোগ,ডায়বেটিস ও গ্যাসট্রিকসহ বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রতিকূলতা সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল বিনা সরিষা-৪ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আয়োজিত মাঠ দিবসে সভাপতিত্ব করেন বিনা কুমিল্লার উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।
আরও পড়ুন: কোনভাবেই চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে দেয়া হবে না: খাদ্যমন্ত্রী
এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বিনা কুমিল্লার উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন, বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা. আফরিনা আক্তার।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সরিষার অপার সম্ভাবনাময় কুমিল্লা জেলা। যখন সরিষা বপন করা হয় তখন ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আঘাত হানে। সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। মাঠে প্রচলিত স্থানীয় ও অন্যান্য সরিষা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ভারী বৃষ্টিজনিত সাময়িক জলাবদ্ধতা সহনশীল বিনা সরিষা-৪ প্রতিকূলতা কাটিয়ে ভালো ফলন দেয়। এ জাতটি পাতা ও ফলের ঝলসানো রোগ প্রতিরোধী, মাটির অতিরিক্ত আর্দ্রতায় চাষবিহীন জমিতে বপনযোগ্য। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৪ শতাংশ, জীবনকাল ৮২-৮৫ দিন। গড় ফলন প্রতি একরে ২০ মণ। দেশে দুই ফসলি জমির আমন ও বোরোর মাঝের সময়ে প্রায় ২২ লাখ হেক্টর জমি পতিত থাকে। আমন আর বোরোর মাঝে যদি আমরা এই পতিত জমি চাষের আওতায় আনা যায় তাহলে বছরে তেলের উৎপাদন আট থেকে ১০ লাখ টন বাড়বে। এতে আর তেল আমদানি করতে হবে না।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিনা কুমিল্লার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুয়েল সরকার, অর্পিতা সেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও শতাধিক কৃষক-কৃষাণী।
আরও পড়ুন: কৃষিতে আজীবন সম্মাননা পেলেন কৃষিমন্ত্রী
মাটির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক উদ্যোগ জরুরি: কৃষিমন্ত্রী