অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না কেউ অবৈধভাবে দেশত্যাগ করুক। আমরা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলি।’
সফররত যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়নবিষয়ক দপ্তরের ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মারি ট্রেভেলিয়ান বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের আলোচ্যবিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন,অ্যান-মারি অবৈধ অভিবাসনের বিষয়টি উত্থাপন করে বলেছে যুক্তরাজ্য বৈধ অভিবাসনকে স্বাগত জানায়।
অবৈধ অভিবাসন যুক্তরাজ্যের জন্য একটি সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব বাংলাদেশি নাগরিক যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন তাদের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে শিগগিরই একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সইয়ের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) আহ্বান জানান এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ১০টি উড়োজাহাজ কিনবে বলেও জানান তিনি।
এ সময় অ্যান-ম্যারি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো জানতে চান।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের জনাকীর্ণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। এজন্য তার সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আত্মকর্মসংস্থানের মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে ভাসানচরে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে।
তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা কামনা করেন, কারণ রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
হত্যা, ধর্ষণ ও নৃশংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
বৈঠকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান নজরুল ইসলাম।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, প্যারিস চুক্তির আলোকে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডে কেবল ব্রিটেনের অবদান রয়েছে। তবে অন্যান্য দেশগুলো থেকে এখনো উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে একটি জলবায়ু চুক্তি সই করেছে।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে গণমাধ্যমসহ সব খাত বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, যার সুফল এখন জনগণ ভোগ করছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তার সরকার রূপকল্প-২০২১ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার এখন ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে।
এ সময় সরকার পরিচালনায় তার সাফল্য কামনা করেন যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।