জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইইউ'র বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, নির্বাচনি প্রচার সুষ্ঠু হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করছে। অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। 'কে কী বললেন সেটা আমাদের বিষয় নয়।’
শনিবার(৯ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইলেকশন এক্সপার্ট মিশন এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন নিয়ে মিশনের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য কিছু মৌলিক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করেনি। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য সমাবেশ, সংগঠন, আন্দোলন এবং বক্তব্যের স্বাধীনতাসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলো সীমাবদ্ধ ছিল। বিচারিক কার্যক্রম ও গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত ছিল।’
এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'পুলিশ বাহিনী ও আমাদের রাজনৈতিক দল(আওয়ামী লীগ) কোনো হামলা বা মামলা করেনি। তারা (বিএনপি) এটা করেছে। তারা যদি আমাদের অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে, আমরা এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আরেকটি ষড়যন্ত্র করতে চাইছে।’
আরও পড়ুন: আত্মসমর্পণ করে কারাগারে বিএনপির ৭ নেতা-কর্মী
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি প্রতিনিয়ত মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।
তিনি বলেন, 'তারা (আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো) কীভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছে, সেটা আমাদের বিষয় নয়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারি, তারা যা বলেছে দেশে তা ঘটেনি।’
তিনি বলেন, ‘দু-একটি বাদে সব দেশই আমাদের প্রশংসা করেছে। তারা মনে করেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বলছে, দেশে হাজার হাজার বন্দি আছে। আমাদের এখানে কোনো 'রাজবন্দি' নেই। আমরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বন্দি করে রেখেছি- যারা প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর করেছে, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, আনসার সদস্যদের পিটিয়ে হত্যা করেছে এবং নারীদের নির্যাতন করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বরাত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েই যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ইংল্যান্ডে বসে থেকে তিনি এদেশে তার দলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। তিনি দেশের মানুষ ও তার দলের নেতা-কর্মীদের মঙ্গল চান না।’
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, অতিরিক্ত আইজিপি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: রাজধানীর ৫৫ রেস্তোরাঁ থেকে ১২টি ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার, আটক ৫৭
অনুষ্ঠানে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সাত পুলিশ সদস্যের পরিবারকে স্মারক ও উপহার সামগ্রী দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও আইজিপি। ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ সদস্যদের পরিবারের খোঁজখবর নেন আইজিপি।
২০২৩ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৪ জন পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, একজন সহকারী পুলিশ সুপার, আটজন নিরস্ত্র বা নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক, ১২ জন উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র), দুজন সাব-ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), একজন সার্জেন্ট, একজন টিএসআই, ১৬ জন এএসআই (নিরস্ত্র), তিনজন নায়েক এবং ৮৭ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে প্রতি বছর ১ মার্চ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালন করা হয়। অনিবার্য কারণবশত এ বছর পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ১ মার্চের পরিবর্তে ৯ মার্চ পালিত হলো।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ আইনজীবী গ্রেপ্তার: ডিবি