মালিতে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহীদের দুটি হামলায় ১৫ সেনা সদস্য ও ৪৯ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দেশটির অশান্ত উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক জান্তা।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সামরিক জান্তার একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাইজার নদীর তীমবুকটু শহরের কাছে একটি যাত্রীবাহী নৌকা এবং গাও অঞ্চলের আরও নিচের দিকে বাম্বাতে মালির একটি সামরিক অবস্থানে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি ছায়া জোট জেএনআইএম এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
মালির সরকার হামলার জবাবে প্রায় ৫০ জন হামলাকারীকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে।
হামলায় নিহত বেসামরিক ও সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার থেকে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে।
আরও পড়ুন: প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করল সুদানের সামরিক প্রধান
জাতিসংঘ গত মাসে একটি প্রতিবেদনে বলেছে, আল-কায়েদার সহযোগী এবং ইসলামিক স্টেট-সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলো এক বছরেরও কম সময়ে মালিতে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের পরিধি প্রায় দ্বিগুণ করেছে। কারণ তারা একটি দুর্বল সরকার এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ২০১৫ সালে করা শান্তিচুক্তির সুবিধা গ্রহণ করছে।
তারা বলেছে, শান্তি চুক্তির স্থবির বাস্তবায়ন এবং সম্প্রদায়ের উপর অবিরাম আক্রমণ আইএস গ্রুপ এবং আল-কায়েদার সহযোগীদের ‘২০১২ সালের পরিস্থিতি পুনরায় কার্যকর করার’ সুযোগ দিয়েছে।
ওই বছরই পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং দুই মাস পর উত্তরাঞ্চলের বিদ্রোহীরা একটি ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন করে। চরমপন্থী বিদ্রোহীরা ফরাসি নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের কারণে উত্তরের ক্ষমতা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। তবে তারা ২০১৫ সালে শুষ্ক উত্তর থেকে আরও জনবহুল মধ্য মালিতে চলে যায় এবং সক্রিয় থাকে।
২০২০ সালের আগস্টে মালির রাষ্ট্রপতি একটি অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন যার মধ্যে একজন সেনা কর্নেল ছিলেন যিনি দ্বিতীয় অভ্যুত্থান করেছিলেন এবং ২০২১ সালের জুনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন। তিনি রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এবং রাশিয়ার ওয়াগনার ভাড়াটে গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন যার প্রধান ছিলেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। চলতি বছরের ২৩ আগস্ট রাশিয়ায় একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিগোজিন।
আরও পড়ুন: কঙ্গোতে ভূমি অধিকার ও কর নিয়ে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ১০
মালিয়ান সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে শক্তিবৃদ্ধি মোতায়েন করার পর থেকে টিমবুকটু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল। বিদ্রোহীরা মরুভূমির শহরটিকে মৌলিক পণ্য সরবরাহ করার কাজে বাধা দিচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার আগস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা শহর এবং আশেপাশের অঞ্চল থেকে পালিয়ে গেছে।
সরকারের অনুরোধে মালি থেকে জাতিসংঘ তার ১৭ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী শান্তিরক্ষা মিশন এমআইএনইউএসএমএ প্রত্যাহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময়ে এই মারাত্মক হামলাগুলো ঘটে। এ বছরের শেষ নাগাদ প্রত্যাহার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৩ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করেছিল এবং এমআইএনইউএসএমএ বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জাতিসংঘের মিশন হয়ে উঠেছে, যেখানে ৩০০ জনেরও বেশি কর্মী নিহত হয়েছে।
মালিতে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা পশ্চিম আফ্রিকার অস্থির সাহেল অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে। ২০২০ সাল থেকে মালিতে দুটি অভ্যুত্থান হয়েছে যেখানে জিহাদি সহিংসতা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সামরিক বাহিনী।
আরও পড়ুন: ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে জুলাই থেকে অস্থিরতায় নিহত ১৮৩: জাতিসংঘ