এখানকার চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। ধানের বাজার বেড়ে গেলে চালের বাজার আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মিলার ও মিল মালিক সমিতির নেতারা।
জানা গেছে, দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে চালের যে চাহিদা তার সিংহভাগ যায় কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকাম থেকে। নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মোকামে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে।
খাজানগর মোকাম ঘুরে মিল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের জুনের পর থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। বিগত দুই বছরের তুলনায় চালের দাম সর্বনিম্ন ছিল এ সময়টাতে। বাইরের দেশ থেকে অব্যাহত চাল আসা ও অভ্যন্তরীণ বাজারের ধান ও চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দামও কমে আসে। দেশি চালের কেনাবেচাও কমে যায় যে কোনো সময়ের তুলনায়।
খাজানগরের সাড়ে তিন শতাধিক মিলের প্রচুর চালের মজুদ হয়ে যায়। এ সময় আঠাস, কাজললতা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকার নিচে। আর সরু চালে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকার সামান্য বেশি।
খাজানগরের মিল মালিক আব্দুল মজিদ বলেন,‘ ২০১৮ সালের চালের বাজার স্বাভাবিক ছিল। নির্বাচনী বছর হওয়ায় সরকার চালের বাজারকে ব্যাপক নজরদারিতে রাখে। অনেক মিলে অভিযান চালানো হয়। বাইরে থেকে চাল আনা হয়। এসব কারণে বাজার বাড়েনি। বরং বেশি দামে ধান কিনে মিল মালিকরা কম দামে চাল বিক্রি করেছেন। এখন ধানের সংকট আছে। আর বিভাগীয় ও জেলা শহর গুলোর আড়তে চালের চাহিদা থাকায় মোকামে কিছুটা দাম বেড়েছে। তবে যে দাম বেড়েছে সেটা যৌক্তিক।’
চালের দাম বাড়ার খবরে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বড় বড় শহরের পাইকাররা গত দুই সপ্তাহে বিপুল পরিমান চাল খাজানগর মোকাম থেকে কিনে নিয়ে গেছে। খাজানগরের মিলগুলো এখন চাল শূন্য বলা যায়।
মিল মালিকরা জানান, নির্বাচনের পর হঠাৎ করে পাইকাররা চালের অর্ডার দিতে থাকে। তারা বিপুল পরিমাণ চালে কিনেছে গত দুই সপ্তাহে। এ সময়টাতে চালের টান পড়ায় খাজানগরসহ দেশের সব মোকামে চালের দাম বেড়েছে। এখন পাইকাররা বেশি দামে চাল বিক্রি করছে। তারা বেশি লাভ করে দুষছে মিল মালিকদের।’
মিলগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিকরা এখন ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা বেশি ধান কিনে স্টক করে চাল তৈরি বাজারে ছাড়লে দাম পাওয়া যাবে। তবে সরকার যে কোনো সময় বাইরে থেকে কম দামে আমদানির সুযোগ দিলে তখন দেশি চাল বিক্রি কমে যেতে পারে। তখন লোকসানে পড়তে হতে পারে। এ কারনে অটো চালকল মালিকরা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রতিদিন ধান সংগ্রহ করছেন। যে দামে ধান কিনছেন সেই অনুপাতে উৎপাদন করে বাজারে চাল ছাড়ছেন।’
আর গত বছর মিলগুলোতে অভিযানের ঘটনার পর থেকে মিল মালিকরা দৃশ্যমান গোডাউনগুলোতে ধান রাখছেন না। অনেক মিল মালিকরা অন্যজেলায় তাদের যেসব গোডাউন রয়েছে সেখানে ধান মজুদ করছেন।
খাজানগরের অটো রাইস মিলগুলোতে গতকাল রবিবার কাজললতা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৫টাকা কেজি। আর সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৪৯ টাকা কেজি। নভেম্বর মাসে কাজললতা বিক্রি হয়েছে ৩৯ টাকা থেকে ৪০ টাকায়। আর মিনিকেট বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা পর্যন্ত। তখন ধানের দাম ছিল হাজারের নিচে। এখন সরু ধান বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকায়। আর কাজললতা বিক্রি হচ্ছে হাজারের নিচে। আর স্বর্ণা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। ধানের দাম পড়ছে ৭০০ টাকার মত।
কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন,‘ গত বছর দেশি চালের বাজার ছিল যে কোন সময়ের তুলনায় কম। সাধারণ মানুষ অনেক সস্তায় চাল ক্রয় করতে পেরেছে। সে সময় সরকারও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে নানা পদক্ষেপ নেয়। এছাড়া গত বছর আবহাওয়া ভাল থাকা কোন দুর্যোগ না হওয়ায় দেশি ধানের উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। খুচরা পর্যায়ে চাষিরা ধানের দাম পাইনি। পানির দামে ধান বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। এখন ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বাড়ছে।
তবে মন্ত্রীর সাথে মিল মালিকদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে চালের বাজার যাতে সামনে আর না বাড়ে সে ব্যাপারে মিল মালিকদের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ধানের বাজার যদি না বাড়ে চালের দামও সামনে আর বাড়বে না। বরং দু’এক টাকা কমতে পারে। তবে এখন ধানের দাম বাড়লেও তাতে চাষীদের কোন লাভ হচ্ছে না। লাভ হচ্ছে ফড়িয়াদের।’
এদিকে খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়ালেও মনিটরিং টিমকে এখন পর্যন্ত কোনো মিলে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। মনিটরিং জোরদার করা হলে বাজার স্থিতিশীল থাকার পাশপাশি দামও কমে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।