১৩ বছর আগে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া ও উদ্ধারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই জলদস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এমভি আব্দুল্লাহ ও ২৩ নাবিকদের সুস্থভাবে মুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।
আজ রবিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদ গোসাইলডাঙ্গাস্থ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করীম বলেন, ‘আমাদের আরেকটি জাহাজ ‘জাহান মনি’ জিম্মি হয়েছিল। তখন আমাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে জাহাজটি মুক্ত করতে সময় লেগেছিল। তবে তখনকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আমরা দ্রুত এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, জাহাজের সব নাবিক-ক্রু সুস্থ আছেন। কারো কোনো ক্ষতি হয়নি।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক চাপ ও আলোচনায় জলদস্যুদের হাত থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত: খালিদ
তবে মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরুল করীম সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি ছেড়ে দেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ভোর পৌনে ৪টার বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে জাহাজ মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মালিকপক্ষ।
জাহাজ মুক্ত করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে মেহেরুল করীম বলেন, ‘জাহাজটি জিম্মি হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিনিয়ত সেটির পজিশন ট্র্যাক করতাম। কোথা থেকে কোথায় নেওয়া হচ্ছে তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিম্মির কয়েকদিন পর জলদস্যুদের একজন যিনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এরপর সব আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে আমরাও আমাদের দিক থেকে যোগাযোগ শুরু করি। এভাবে টানা মাসখানেকের যোগাযোগের সফলতাতেই মুক্ত হয় এমভি আবদুল্লাহ।’
আরও পড়ুন: জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে ২৩ নাবিকসহ এমভি আব্দুল্লাহ
মেহেরুল করীম বলেন, ‘দুদিন আগে আমরা আমাদের জাহাজের প্রতিটি ক্রু-নাবিকের ভিডিও নিয়ে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করি। প্রতিটি নিয়ম মেনে কাজ করা হয়েছে। জাহাজে ৬৫ জন জলদস্যু ছিল। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাকে জানান জলদস্যুরা জাহাজ থেকে স্পিডবোটে করে নেমে গেছে।’
সাংবাদিকেরা মেহেরুল করীমের কাছে মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্ষমা চাচ্ছি। কোনো মুক্তিপণের বিষয়ে আমি আপনাদের কিছু বলতে পারব না। সবার সঙ্গে আমাদের এই বিষয় নিয়ে এগ্রিমেন্ট হয়েছে। আমি এগ্রিমেন্টের বাইরে যেতে পারব না।’
সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএম গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘কিছু জিনিস আমাদের গোপন রাখতে হবে। আমরা জলদস্যুতাকে প্রোমট করতে পারি না।’
শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘১৯ বা ২০ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ দুবাই পৌঁছাবে। এরপর নাবিক-ক্রুরা ফ্লাইটে বা জাহাজে করে নাবিকেরা বাংলাদেশে ফিরে আসবে।’
তিনি জানান, নাবিক ও ক্রুদের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করা হবে তারা কীভাবে দেশে আসবেন।
উল্লেখ্য, মোজাম্বিক থেকে ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
আরও পড়ুন: ঈদের আগে জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করা কঠিন: জাহাজের মালিকপক্ষ