শনিবার রাজধানীর সিক্স সিজন্স হোটেলে ‘কসমস ডায়লগ’ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবং ত্বরান্বিত করা, অবশ্যই নতুন সরকারের জন্য প্রকৃত চ্যালেঞ্জ।’
নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি ও ত্বরান্বিত করার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র চর্চায় তারা তাদের অবদান ও সহায়তা অব্যাহত রাখবেন। কারণ এটি ছাড়া টেকসই উন্নয়ন হবে না।
কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ছিল একটি ধারাবাহিক বক্তব্যের অংশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের (আইএসএএএস) প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ইইউ এর মধ্যেকার সম্পর্ক অনেক পরিপক্ক এবং গতিশীল (ডায়নামিক)। কারণ উভয় পক্ষই একে অপরের বিষয়গুলো ভালো বোঝেন।
শহীদুল হক আরও বলেন, ‘আপনারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে, আমরা শুধু ইইউ-এর দিকেই তাকিয়ে নেই, তবে এটি আমাদের বিদেশ নীতির কেন্দ্রস্থল।’
অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের সুফল বিতরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, সকল মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল বণ্টন করতে না পারলে দাবিদ্র্য কেবল আংশিকভাবে দূর হবে।
জিএসপি প্লাস ও বাংলাদেশ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্ত্র ছাড়া সবকিছু (এভরিথিং বাট আর্মস বা ইবিএ) কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পেয়ে আসছে। জিএসপি প্লাস বাণিজ্য সুবিধা প্রসঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, জিএসপি প্লাস এমন কোনো বিষয় নয় যে বাংলাদেশ এমনি এমনি যোগ্য হয়ে উঠবে।
‘এজন্য বাংলাদেশকে মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার, পরিবেশগত বিষয় এবং সুশাসনের ২৭টি বিশেষ রীতিনীতি অনুমোদন, বাস্তবায়ন ও গ্রহণ করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
ইইউ রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক আরও বলেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ (জিএসপি প্লাসের দিকে এগিয়ে যাওয়া)। আমি মনে করি এটাকে প্রাধান্য দেয়া ভালো হবে এবং এ লক্ষে বহু-বার্ষিক কিছু কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব হক বলেন, তারা এখন জিএসপি প্লাস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন এবং এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার সময়।
রোহিঙ্গা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ:
রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত তেরিঙ্ক বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।’
রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসনে ইইউ’র সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে আশ্রয়দানে মহানুভবতা দেখানোর জন্য আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ দিতে হবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা এই সংকটের স্থায়ী সমাধান নিয়ে সহায়তা করার জন্য দ্বিপক্ষীয় ও বহু-পক্ষীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক সহায়তা, মানবিক সহায়তা জোরদার করার তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
ইউরোপ ও বাংলাদেশ উভয়ই তাদের সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিতে হবে উল্লেখ করে ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, এটা কী খুব বেশি আশা করা হয়? আমরা কি খুব বেশি প্রত্যাশা করে ফেলছি? আমরা কি খুব বেশি উচ্চাভিলাশী? আমি তা মনে করি না।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই প্রথাগতভাবে যুক্তরাজ্যকে ইউরোপের প্রবেশের পথ হিসেবে দেখে। আমাদেরকে সরাসরি ইউরোপের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, এই আয়োজন কসমস ফাউন্ডেশনের নিয়মিত সংলাপ অংশ এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ, অতিথি বক্তা এবং বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়) মাহবুব জামান, ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ, ফরাসি রাষ্ট্রদূতম্যারি আনিক বুখডা, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ক্যানবার হোসেইন-বর, খ্যাতিমান ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন কাশেম খান, মোহাম্মাদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রুবানা হক ও সাবেক কূটনৈতিকরা।
নয় মাস যুদ্ধ শেষে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের সাথে ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকেই ইইউর বন্ধন তৈরি হয়। তখন থেকেই তারা বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সঙ্গী এবং তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। গত কয়েক দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে এবং তা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সমুদ্র অর্থনীতির মতো বৈচিত্রময় খাতে প্রবেশ করেছে।