কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই ভোট গণনা শুরু হয়েছে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু সকাল ৯টার দিকে নগরীর হোসামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাক্কু বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেন, তিনিও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
আরও পড়ুন: কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: পুলিশ সুপার
সকাল সোয়া ৯টার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট হাইস্কুলে ভোট দেন রিফাত।
পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারও একই কেন্দ্রে ভোট দেন।
সকালে বৃষ্টির মধ্যেও বিপুল সংখ্যক ভোটারকে ভোট দিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
৫ নং ওয়ার্ডের কুমিল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার ফজলুল করিম জানান, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারিগরি ত্রুটির কারণে ভোট কেন্দ্রে ৪২ মিনিট ভোটগ্রহণ ব্যাহত হয়।
কেন্দ্রের ছয়টি বুথের মধ্যে এক নম্বর বুথের ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।
পরবর্তীতে কারিগরি দল মেশিনটি মেরামত করে পরিবর্তন করার ৪২ মিনিট পর এ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
কেন্দ্রটি নারী ভোটারদের জন্য স্থাপন করা হয় এবং কারিগরি ত্রুটির কারণে ৫১ মিনিটে একটি ভোট পড়ে।
রেয়াজউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে এই প্রতিবেদক দেখতে পান, নৌকার ব্যাজ পরা কয়েকজন ভোটকেন্দ্রে ভিড় করছেন। একটি কেন্দ্রে অনেক লোকের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, তাদের মধ্যে থাকা আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন বলেন, মানুষ যেন সহজে ভোট দিতে পারে সে জন্য সহায়তা করার জন্য তারা সেখানে আছেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি থেকে কুমিল্লা সিটি মেয়র সাক্কু আজীবন বহিষ্কার
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছেন।
ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিচ্ছেন।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২০১১ সালে গঠিত হওয়ার পর এটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রথম নির্বাচন।
এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে মঙ্গলবার জানান জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘পুরো কুমিল্লা নগরী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে।’
মঙ্গলবার সকালে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, নির্বাচনে নিরাপত্তা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যত ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার দরকার সব নেয়া হয়েছে। নগরীর অন্তত ৭৫টি জায়গায় তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাক্কুর হ্যাটট্রিক নাকি রিফাতের প্রথম?
এই নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন উল্লেখ করে এসপি ফারুক আহমেদ বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি ভোটের মাঠে তিন হাজার ৬০৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মঙ্গলবার থেকেই কাজ করছেন।
২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন।