ভাঙনকবলিত বহু মানুষ অন্য স্থানে গিয়ে পরের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে নদীর ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড আপাতত অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলছে। তবে, এতে ভাঙনরোধ হচ্ছে না।
পদ্মার ভাঙনে হরিরামপুর উপজেলার গোপিনাথ ইউনিয়নের ডেগিরচর, বাহাদুরপুর গ্রামের তিনশ বাড়িঘর ও বাহাদুরপুর বাজার, মসজিদ ভেঙে গেছে। এছাড়া পাশ্ববর্তী রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের দেড়শ’ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ভাঙনে আতংকে রয়েছে ওইসব গ্রামের বাকি মানুষজন।
সরেজমিন ভাঙনকবলিত গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বড় বাহাদুরপুর, ছোট বাহাদুরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো তাদের ঘর এবং আসবাবপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। অনেকেই তাদের বাড়ির আশেপাশে প্রতিবেশিদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় অস্থায়ী আশ্রয় গড়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিই পদ্মার ভাঙনের শিকার। এর মধ্যে লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি, আজিমনগর ও কাঞ্চনপুর-এই চার ইউনিয়নের বেশীরভাগই নদীতে বিলীন হয়েছে।
অপরদিকে হারুকান্দি, ধুলশুরা, বয়রা, রামকৃষ্ণপুর, গোপীনাথপুর ও বাল্লা ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই বছর নতুন করে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ছোট বাহাদুরপুর, বড় বাহাদুরপুর গ্রামের অধিকাংশই ভাঙনের শিকার হয়েছে।
উপজেলা সদরের ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে। ওই বাঁধের কয়েকটি অংশও ধসে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলা সদরের হরিরামপুর থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ ভবন, সরকারি ডাকবাংলো, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের ভবন, বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আন্ধারমানিক বাজার।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, হরিরামপুরে পদ্মার ভাঙনরোধে পাউবো ফ্লাড এন্ড রিভার ব্যাঙ্ক ইরোসন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেন্টমেন্ট কর্মসূচির আওতায় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর এলাকা থেকে ধুলশুরা ইউনিয়নের মীর্জানগর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি গুচ্ছে বাঁধটি নির্মাণ করে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম, এম বিল্ডার্স।
সূত্র জানায়, বাঁধের বিভিন্ন অংশে বস্তা নদীতে পড়ে বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে।
হরিরামপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ বলেন, বাঁধটি বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। পুরো বাঁধটি ভেঙে গেলে উপজেলা সদরের স্থাপনা ও ভবনগুলো রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়বে। দ্রুত বাঁধ রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মওলা মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলোতে বালির বস্তা ফেলে মোটামুটি সংস্কার করা হয়েছে। পুরো বাঁধটির দিকেও নজরদারি রাখা হয়েছে। এছাড়া বাহাদুরপুর, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ভাঙনরোধে নদীর ৫টি পয়েন্টে সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক এস, এম ফেরদৌস বলেন, এরই মধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন তিনি। পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি রয়েছে। বাঁধ ভেঙে ইছামতি নদীতে পানি ঢুকে পড়ায় ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কমেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভাঙনকবলিত ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ভাঙনের শিকার ৩০৬টি পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।
এছাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্থদের ঘর দিয়ে বসবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।