সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের বক্তারমুন্সি বাজার ও মজলিশপুর ইউনিয়নের কুঠিরহাট বাজারে দুটি মার্কেটের দোকানগুলো এখন পুরুষ ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে। নামেই মহিলা মার্কেট কিন্তু দোকানগুলোতে নারী ব্যবসায়ীদের দেখা মিলে না।
একইভাবে সোনাগাজী পৌরসভার আওতাধীন মহিলা মার্কেটের দোকানে পুরুষ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে। এখানেও কোনো নারী উদ্যোক্তার দেখা পাওয়া যায়নি, আর মার্কেটের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পুরুষরা ব্যবসা করে চলছেন। এতে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে।
উপজেলা এলজিইডি বিভাগের তদারকি না থাকায় ২টি মার্কেটের ৯টি দোকানের ৮টিতে পুরুষ ব্যবসায়ীরা পরিচালনা করছে। শুধুমাত্র কুঠিরহাট ১টি দোকান মহিলা পরিচালনা করেন। তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত বাজার উন্নয়ন পরিচালনা কমিটির তদারকি না থাকায় উপজেলার ২টি মহিলা মার্কেটের ১টি দোকান ছাড়া সবকটি দোকানই পুরুষদের দখলে রয়েছে। কুঠিরহাট মহিলা মার্কেটে রয়েছে ৪টি দোকান। এর মধ্যে একটি দোকানে একজন নারী দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। আর বাকি ৩টি দোকান রয়েছে পুরুষদের দখলে।
অভিযোগ রয়েছে, নারী ব্যবসায়ী না থাকার অজুহাতে তাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে এক যুগ ধরে ব্যবসা করছেন পুরুষরাই। সরকারের নেয়া দরিদ্র নারী উন্নয়ন উদ্যোগ ব্যাহত হলেও তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নারীদের নামে বরাদ্দ নিয়ে মোটা অংকের (সিকিউরিটি মানি) টাকা নিয়ে অন্যদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কুঠিরহাট মহিলা মার্কেটের একমাত্র নারী দোকান মালিক চন্দনা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্তাধিকারী চন্দনা বড়ুয়া জানান, গ্রামের বাজারগুলোতে নারীরা দোকান চালাবে এটা সবাই ভালো চোখে দেখে না। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি নারী দেখে অনেক ক্রেতা আমার দোকানে আসতে চায় না।
এ বিষয়ে বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন জানান, নারীদের নামে বরাদ্দকৃত দোকান পুরুষ ব্যবসায়ীরা করছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তিনি সরেজমিনে এসে সত্যতাও পেয়েছেন। বখতারমুন্সী বাজারের মহিলা মার্কেটে ৫টি দোকান রয়েছে, সবগুলোই পুরুষদের দখলে।
এদিকে মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদল জানান, বখতারমুন্সীর মহিলা মার্কেটের নারী দোকান মালিকদের বার বার বলার পরও তারা দোকান করেন না। ৫টি দোকানেই পুরুষরা ব্যবসা করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সোনাগাজী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, মহিলা মার্কেটে পুরুষ ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে সোনাগাজী পৌরসভার আওতাধীন কাঁচা বাজারের পাশেই পাশেই মার্কেটে নারীদের জন্য ৫টি দোকান বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি দোকানে নারী ব্যবসায়ী আয়েসা আক্তার ও শাহানা আক্তার পারুলকে কদাচিৎ দেখা গেলেও বাকি সময় তার স্বামী-ভাই ও ৩টি দোকান পুরুষ ব্যবসায়ীরা পরিচালনা করছে।
তবে মহিলা মার্কেটে নারীরা দোকান করতে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূর নবী।
সোনাগাজী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র শেখ কলিমুল্যাহ রয়েল বলেন, যতটুকু জানি দোকানগুলো আগের মেয়র নারী ব্যবসায়ীরদের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।
মহিলাদের মার্কেট পুরুষ ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল পারভেজ বলেন, মহিলাদের মার্কেটে নারীরাই ব্যবসা করবে, পুরুষ ব্যবসায়ী দোকান করার কোনো সুযোগ নাই। যেসব নারী দোকান মালিক নিজে ব্যবসা না করে পুরুষ ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিবেন তাদের চুক্তি বাতিল করা হবে।
অতি দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।