বিশেষ-সংবাদ
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি: স্বপ্ন নাকি অধরা বাস্তব?
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজ নিয়ে `ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ (ডিসিউ) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অনিশ্চয়তা-অনৈক্য যেন কাটছেই না।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় পেলেও ক্লাস শুরু না হওয়া, অধ্যাদেশ জারি, প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোয় বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের অন্তভুক্তি, নারী শিক্ষার্থীদের কাঠামোগত শঙ্কা, ঐতিহ্যবাহী উচ্চ মাধ্যমিক স্তর নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাত্রা
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ— জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা এই ৭ কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন।
২০২৪ সালের ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে’ দেশের পট পরিবর্তনের পর সে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। পরে, সাত কলেজের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে গত ২৭ জানুয়ারি কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মঞ্জুরি কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একটি কাঠামো করার প্রস্তাব দেয়।
ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকার সরকারি সাত কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়, এই পুরো কার্যক্রমের ওপর নজরদারির দায়িত্ব রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য।
এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি’ নামটি চূড়ান্ত হয়। নাম চূড়ান্ত করার আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন অংশীজনের মত নেয়।
চলতি বছরের ১৮ মে অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসকের হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জুলাই মাসে প্রস্তাবিত ডিসিউ স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর ২৬ আগস্ট ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে—বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান— ৩ ইউনিটে মোট আসন সংখ্যা ১১ হাজার ১৫০টি। তিন ইউনিটে প্রায় ৭২ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত রূপরেখা তৈরি করে। বর্তমানে সংসদ কার্যকর না থাকায়, অন্তর্বর্তী সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাদেশ আকারে জারির উদ্যোগ নেয়।
অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব পড়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটির ওপর। প্রস্তাবিত প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কাঠামো নিয়ে অংশীজনদের মতামত জানতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে।
যারা এই সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই ২০১৯–২০, ২০২০–২১ ও ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
খসড়া অধ্যাদেশের ৫২ (খ) অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ ও ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্ররা ঢাকেবির অন্তর্ভুক্ত।
খসড়া অধ্যাদেশে প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনৈক্য চরমে ওঠে।
এক বছরের সেশনজটে ডিসিইউ
প্রস্তাবিত ডিসিইউতে প্রথমবারের মত ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২৩ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু হয়নি। অথচ দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস চার-পাঁচ মাস ধরে চলছে। এমনকি ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের দুটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং অন্যান্য স্বায়ত্বশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন চলছে।
ফলে প্রস্তাবিত ডিসিইউ’র প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার আগেই এক বছরের সেশনজটে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা অতি দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবিতে গত ৩০ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
বিশ্ব সঙ্গীতশিক্ষাকে গুরুত্ব দিলেও উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ
২২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তির তারিখ ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ায়, এবং ৩০ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর কথা জানানো হয়। পুনর্নির্ধারিত তারিখেও ক্লাস শুরু না হওয়ায় এদিনই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
স্কুলিং নিয়ে অনৈক্য
খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়, সাতটি কলেজ ক্যাম্পাসকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজ, স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসে বিভক্ত করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালানো হবে।
ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস, ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে স্কুল অব সায়েন্স।
ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে অ্যাপ্লাইড ম্যথেমেটিক্স, জুলোজি, ড্যাটা সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিজিক্স, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি, বোটানি ও ফরেনসিক সাইন্স ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে সাইকোলজি, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ স্কুলটি সরকারি বাঙলা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে।
এই ক্যাম্পাসে জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ইকোনোমিকস, ফিল্ম স্টাডিজ, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব বিজনেস স্কুলটি সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। এ ক্যাম্পাসে অ্যাকাউন্টিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, হোটেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, ব্যাংক অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
মানবপাচার, অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশি পাসপোর্টের প্রতি বৈশ্বিক আস্থা কমছে
স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস স্কুলটি কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে।
তবে, খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশের পর থেকেই এই হাইব্রিড বা স্কুলিং পদ্ধতির বিরুদ্ধে নানামহল থেকে বিরোধীতা করা হচ্ছে।
ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত সিস্টেমের মাধ্যমে ক্যাম্পাসগুলোর স্বাতন্ত্র্য ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের একাংশ। এমনকি ঢাকা কলেজের স্বকীয়তা রক্ষায় খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কলেজটির প্রাক্তন ছাত্ররা।
প্রকাশিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি হাইব্রিড পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ৩৫%-৪০% ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এবং সকল পরীক্ষা সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
স্বকীয়তা বনাম নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
এমনকি শিক্ষার্থীদের একাংশ এখনো ৭ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান নি।
৭টি কলেজের অবকাঠামো ও ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ সময়সীমা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) কলেজ ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে, ইডেন কলেজকে শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষিত করার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু হলে, তা এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইডেন কলেজের স্বতন্ত্রতা রক্ষায় সকালে সড়ক অবরোধ করেন কলেজটির ছাত্রীরা। পরে ইডেন কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজে আসে ছাত্রীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন ইডেন কলেজের শিক্ষকরাও।
ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র শেখ ইউএনবিকে বলেন, ‘৭ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার প্রস্তাবটি বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, গবেষণাসুবিধা ও স্থায়ী শিক্ষকসংখ্যা এসব মৌলিক শর্ত পূরণ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদা শুধু নামেই মূল্য যোগ করবে, শিক্ষার মানে নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি না করে বিদ্যমান কলেজগুলোর শিক্ষার স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। উন্নয়নকে নামের সম্প্রসারণ নয়, মানের নিশ্চয়তা দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত।
শিক্ষকদের আপত্তি
খসড়া অধ্যাদেশের ২ (ফ) অনুযায়ী, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা ঢাকেবির শিক্ষক নন, তাই ওই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস–পরীক্ষা নেওয়ার এখতিয়ার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের নেই। এদিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জনবল নিয়োগ দেয়নি, ফলে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কুকি-চিনের উত্থান বনাম বান্দরবানের পর্যটন: ক্ষতির পাহাড়
ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদ আছে দেড় হাজার। এর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক স্থায়ী পদ প্রায় ১১০০। আর ডেপুটেশনের পদ আছে চারশ।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয় বিষয়ভিত্তিক পদের বিপরীতে। সাতটি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হলে এ দেড় হাজার পদ শিক্ষা ক্যাডার থেকে বিলুপ্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা, যা তাদের ‘নানা জটিলতায় জর্জরিত’ পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করবে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটির ‘স্কুলিং’ পদ্ধতি বাতিল এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করে আইন করার দাবি জানিয়েছেন কলেজগুলোর শিক্ষকরা। ‘সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কমিটি’ ব্যানারে তারা এ দাবি জানান।
এর আগের দিন, সোমবার শিক্ষকরা চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করলে তাৎক্ষণিকভাবে দেশের সব সরকারি কলেজ ও দপ্তরে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক কর্মবিরতির হুশিয়ারি দেন।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শঙ্কা
এদিকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রস্তাবিত কাঠামোতে হলে তা কলেজগুলো ‘স্বকীয়তার’ জন্য হুমকি হবে বলে মনে করছেন কলেজগুলো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট মোড় অবরোধ করে ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।
যেখানে নায়কেরা শুয়ে আছেন, সেই তিন নেতার মাজার মাদকসেবীদের দখলে
ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক বহাল রাখা এবং কলেজের স্বকীয়তা রক্ষার দাবিতে এর আগেও আন্দোলন করেছেন শিক্ষালয়টির উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি খসড়া আইনে উচ্চ মাধ্যমিক বহাল রাখার কথা বলা হলেও ধীরে ধীরে তা তুলে দেওয়া হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ৭ কলেজের মধ্যে ৫টি— ঢাকা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, কবি নজরুল ও সরকারি বাঙলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চালু রয়েছে।
চূড়ান্ত অধ্যাদেশ ‘সময়সাপেক্ষ’
চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সুধীজনের কাছ থেকে ছয় হাজারের বেশি মতামত পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব মতামত বিবেচনায় নিয়ে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত সময়সাপেক্ষ বিবেচনা করে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়।
তবে, এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে রাস্তা অবরোধ এবং আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলনরত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা বন্ধ করে রাখেন। যে কারণে নিউমার্কেট থেকে শাহবাগ ও আজিমপুরমুখী রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।
এরপর তারা আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দেন। এর মধ্যে অধ্যাদেশ জারি না হলে রবিবার থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবেন।
ডাকসু: নজর কাড়ছে লিগ্যাল নোটিশ, ডলারসহ জেন-জি প্রচারণা
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।”
ইউজিসির সদস্য ও ৭ কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে গঠিত কমিটির সদস্য ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ৭ কলেজ নিয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমাদের টার্মস অব কন্ডিশন অনুযায়ী আমাদের যে দায়িত্ব ছিল, তা আমরা সম্পন্ন করেছি। এরপর আমাদের আর কোন ভূমিকা নেই, বিষয়টি এখন সম্পূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে।
এমতাবস্থায়, এখন পর্যন্ত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি স্বপ্ন ও স্থবিরতার মধ্যে আটকে আছে। অবিশ্বাস, প্রশাসনিক শূন্যতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়, স্বায়ত্তশাসন ও শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতেই তোলা।
১৪ ঘণ্টা আগে
সিলেটে মশার উপদ্রব, নগরবাসীকে ‘পরিচ্ছন্ন’ থাকতে বলছে কর্তৃপক্ষ
সিলেটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। ঘরের ভেতরেও মিলছে না স্বস্তি। মশা কমাতে নগর কর্তৃপক্ষ বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও বাস্তবে তার কোনো প্রভাব নেই। ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছড়ানো ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে নগরবাসীর দাবি, মশার কামড়ে নগরজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গু-আতঙ্ক। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলার্জি-জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। অপরদিকে, আর্থিক সঙ্কটের কারণে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ‘নগরবাসী সচেতন হলে ও নগরকে আবর্জনামুক্ত রাখতে পারলে বছরে এক-দুইবার অভিযানই যথেষ্ট।’
চলতি অর্থবছরে মশা নিধনে ২ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। গত অর্থবছরেও সমপরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। এত ব্যয়ের পরও সেই একই অবস্থা। মশার কামড় সহ্য করা নগরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
মশার উপদ্রব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগরজুড়ে ডেঙ্গুর আতঙ্কও বাড়ছে। সিলেটে প্রতি দিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। থেমে নেই মৃত্যুও; চলতি বছরে সিলেটে ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য সিসিকের দাবি, ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে নগরীর বাসিন্দাদের সংখ্যা কম। বেশিরভাগ রোগীই বিভিন্ন উপজেলার।
জানা গেছে, মশক নিধনে সিসিকের স্থায়ী কোনো কর্মী নেই। প্রতি বছর দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কিছু সংখ্যক কর্মীকে দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করানো হয়।
সিসিক জানায়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে মশা দমনে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার ৪ হাজার লিটার লার্ভিসাইড (টেমেপস ৫০ ইসি) এবং ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড (ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি) কেনা হয়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সমপরিমাণ ওষুধ কিনেছিল কর্তৃপক্ষ।
বছরে কোটি কোটি টাকার ওষুধ ক্রয় করলেও সে তুলনায় সেবা মিলছে না। যদিও সিসিকের দাবি, ৩০-৪০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন, কিন্তু বাস্তবে এসব কর্মীদের নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে দেখা যায় বছরে মাত্র এক-দুইবার।
নগরীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাশে বসা কলেজছাত্র সুমন শাওন জানান, বিকেল বেলাও বন্ধুদের সঙ্গে বসে গল্প করা যায় না। মশা এমনভাবে কামড়ায় যে দাঁড়িয়ে থাকাও দায় হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, ‘আধা ঘণ্টাও হয়নি বন্ধুদের সঙ্গে শহিদ মিনারে এসেছি, কিন্তু মশার তাণ্ডবে না পারছি দাঁড়িয়ে থাকতে, না পারছি বসে গল্প করতে।’ কিছুক্ষণ পর একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই বন্ধুদের নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যে হারে মশার উপদ্রব বাড়ছে, খুব দ্রুত ড্রেন, নালায় সিসিকের কীটনাশক ব্যবহার করা জরুরি।’
নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অপু বলেন, ‘এমনিতেই চারদিকে জ্বর-সর্দি ছড়িয়ে পড়ছে। কোনটা ডেঙ্গু আর কোনটা সাধারণ জ্বর, তা বোঝা যাচ্ছে না। ফলে মশার কারণে সাধারণ জ্বর হলেও অনেকে ডেঙ্গুর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মশার কামড়ে শরীরের হাত-পায়ের বিভিন্ন স্থানে এলার্জি-জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশনের লোকেরা এসে ড্রেন, খোলা জায়গা ও বাসার আঙিনায় ধোঁয়া স্প্রে করে যান। এতে সাময়িকভাবে মশার আক্রমণ থেকে কিছুটা রেহাই মিলেলেও স্থায়ী কোনো সুফল মিলছে না।’
সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নগরীতে মশা নিধনের জন্য প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৪৫ জন মশক নিধনকর্মী ও ৭ জন সুপারভাইজার দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছেন, যা যথেষ্ট নয়। ওয়ার্ডভিত্তিক কমপক্ষে ৪-৫ জন কর্মী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দিতে হবে। এ হিসেবে সিলেট নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডে দুইশতাধিক কর্মী প্রয়োজন। এসব কর্মীদের বেতন-ভাতা সিসিকের পক্ষে একা বহন করা সম্ভব নয়। তাই আর্থিক সংকটের কারণে স্থায়ীভাবে কোনো কর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ২০২১ সাল থেকে কর্মী নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে আসছি, কিন্তু নানা জটিলতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। মশা নিধনের জন্য নগরীতে বছরে ২-৩ বার বিভিন্ন স্থানে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। নিয়ম হচ্ছে প্রতি মাসে কীটনাশক ব্যবহার করা। তাই বাস্তবিকভাবে স্থায়ী সুফল পাওয়া সম্ভব হয় না। সীমিত সামর্থ্য থেকে সিসিক যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত নগরবাসী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন না করবে এবং সচেতন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। নগরবাসী সচেতন হলে ও নগরকে আবর্জনামুক্ত রাখতে পারলে বছরে এক-দুইবার অভিযানই যথেষ্ট। অতিরিক্ত ওষুধ কিনে পরিকল্পনামতো কাজ করতে না পারলে এটি অপচয় হবে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।’
২ দিন আগে
বন্যার পলিতে উর্বর উত্তরের চরাঞ্চল, চাষাবাদের ধুম
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের নদ-নদীগুলোর তীর এখন ধুঁ ধুঁ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বালুময় জমিগুলোর ওপর বন্যার রেখে যাওয়া পলি জমে বেলে-দোআঁশে পরিণত হওয়ায় চাষাবাদের ধুম পড়েছে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে।
কৃষি বিভাগ বলছে, উত্তরের এসব নদীতে প্রায় ৭৮৬ টি চর রয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চরের মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এসব চরে এবার ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, আর বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার টন।
কৃষি বিভাগ মনে করে, চরের ফসলে ঘুরে দাঁড়াবে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। এক ফসলেই তাদের সারা বছর চলে যায়, বলেন এই কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার তিস্তা নদীর চরে কৃষিজমিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে আলু, বেগুন, মরিচ, ছিটা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শিম, ধনেপাতা, গাজর, কপি, মুলা, লাউ, গম, তিল, তিশি, সরিষা, ভুট্টার আবাদ হয়েছে। সব ফসলেরই ভালো ফলন আশা করছেন চাষিরা।
রংপুরের গঙ্গাচরার ইচলির চরের হোসেন মিয়া বলেন, তিস্তার চরে ৩ বিঘা জমিতে আলু, তিন বিঘায় বেগুন ও ২০ শতক জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছি। ফলন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে এ মৌসুমে দেড় লাখ টাকা আয় হবে।
শুধু হোসেন নন ওই এলাকার কৃষক হাবিবুর, রহিম ও খায়রুল বলেন প্রায় একই কথা। তাদের দাবি, যেটুকু জমিতে আবাদ করেছি, ফলন ভালো হলে ৬০-৭০ হাজার টাকা করে লাভ হবে তো হবেই।
লক্ষ্মীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষি জোনে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ফসল বাজারে উঠতে শুরু করেছে। অনেকে নতুন করে চাষাবাদ করছেন। চরের কৃষকের একটাই দুঃখ; উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ, বাজারে সরবরাহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন থেকে বঞ্চিত হন।
তিনি আরও বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে যেসব ফসল উৎপাদন হয়, তাতে অন্তত ২-৩টি হিমাগার প্রয়োজন। অথচ গংগাচড়ায় আছে মাত্র একটি হিমাগার। তাছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় চরাঞ্চল থেকে কৃষক উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারে নিতে পারেন না।
কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলের মাটিতে পলি জমায় তা অনেক উর্বর। রাসায়নিক সার ছাড়াই বিভিন্ন ফসলের ফলন ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে ভুট্টা, গম, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, তিল, তিশিসহ শাকসবজি চাষ বেশি হচ্ছে।
চর নিয়ে কাজ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, বন্যা চলে যাওয়ার পর চরের জমিতে যে পলি থাকে, তা অত্যন্ত উর্বর। এ কারণে প্রতি বছরই বন্যার পর কৃষিতে বাম্পার ফলনের দেখা পান চরের কৃষকরা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ন্যায্য মূল্য পান না চাষিরা।
তিনি মনে করেন, তিস্তাসহ অন্যান্য নদী যদি খনন করা হয়, তাহলে চরের জমিগুলো জেগে উঠবে এবং উত্তরের মানুষের আর অভাব থাকবে না।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরের ৮ জেলার ৭৮৬টির বেশি চরে যে ফসল উৎপাদন হবে, তাতে ২০০ কোটি টাকা আয় হওয়া সম্ভব।
ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রণোদনাসহ কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা। বন্যায় চরের যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ইতোমধ্যেই সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রংপুর অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।
৩ দিন আগে
সেতু নির্মাণে স্থবিরতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিন ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নরেন্দ্রপুরের কাঁচরার খালের ওপর নির্মাণাধীন একটি সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন শাহজাহানপুর, আলাতুলী ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। ফলে প্রতিদিন প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
জানা গেছে, সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর কাঁচরার খালের ওপর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৯০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০২৩ সালে কাজ শুরু করে। চলতি বছরের ৬ মার্চ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ আর এগোয়নি। পরে সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকলেও সংযোগ সড়কসহ বাকি কাজ আটকে আছে।
৪ দিন আগে
দর্শনার্থী বরণে প্রস্তুত কুমিল্লার শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর
বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অমূল্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর অন্যতম। লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ি অঞ্চলের কোলে, সবুজে মোড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিহার শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতা, স্থাপত্যশৈলী ও সংস্কৃতির জীবন্ত সাক্ষ্য।
হেমন্তের শেষভাগে শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে স্বাগত জানাতে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর এলাকা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন এ দুই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ঘিরে সাজানো হয়েছে ফুলের বাগান, উন্নত করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর দেওয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় দিনরাত কাজ করছেন।
কুমিল্লা সদর উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত শালবন বৌদ্ধ বিহারটি খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ৩৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ এবং চারপাশের দেওয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ মিটার। কেন্দ্রে অবস্থিত মূল মন্দিরটি ঘিরে রয়েছে ১১৫টি কক্ষ, যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিদ্যা ও ধর্মচর্চায় নিমগ্ন থাকতেন। প্রতিটি কক্ষে তিনটি করে কুলুঙ্গি ছিল, যেখানে রাখা হতো দেবমূর্তি, প্রদীপ ও ধর্মীয় সামগ্রী।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে পাওয়া গেছে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়া মাটির ফলক, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি, যা এ অঞ্চলে একসময়কার সমৃদ্ধ বৌদ্ধ সভ্যতার বিকাশ ঘটার প্রমাণ। বিহারের নামকরণ হয়েছে এখানকার শাল-গজারির ঘন বন থেকে, যার অবশিষ্ট কিছু এখনো টিকে আছে।
৮ দিন আগে
বিশ্ব সঙ্গীতশিক্ষাকে গুরুত্ব দিলেও উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর গানের মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ।
গত রবিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এ গানের মিছিল শুরু করে। গানের মিছিলটি সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা ভবনের সামনে এলে পুলিশ বাধা দেয়।
এ সময় উদীচীর শিল্পীরা বলেন, তারা গানের মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার গেট পর্যন্ত যাবেন। প্রধান উপদেষ্টাকে গান শোনাবেন। কিছুক্ষণ তর্কবিতর্কের পর পুলিশ গানের মিছিল ছেড়ে দেয়, ২ মিনিট পর মিছিলটি পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় অতিক্রম করার পর আবার সেটিকে থামিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর আর মিছিলটিকে সামনে যেতে দেয়নি পুলিশ। এ সময় সড়কে অবস্থান করে গান পরিবেশন করে উদীচীর শিল্পীরা।
এর আগে গত ২ নভেম্বর, সরকার প্রকাশিত সংশোধিত বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে।
সচিব কমিটির সুপারিশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরে এসেছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রেস উইং বলছে, সচিব কমিটি মনে করে, প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এত অল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না এবং এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই প্রস্তাবিত নিয়োগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। ক্লাস্টার ভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলে একই শিক্ষককে ২০টির অধিক বিদ্যালয়ে যুগপৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ফলে তার পক্ষে কর্মঘণ্টা ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না বলে সচিব কমিটি মনে করে।
এর আগে, এ বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিকে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে সরকার। এতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়। এর দুই মাসের মাথায় এসে সেই প্রজ্ঞাপন পরিবর্তন করা হলো।
সংশোধিত বিধিমালা প্রকাশের পরই নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। সংস্থাটি মনে করে করে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত কেবল অযৌক্তিকই নয়, বরং একটি গোষ্ঠীর চাপে নতজানু হয়ে প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো থেকে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সমাজের এক ক্ষুদ্র গোষ্ঠী নিজেদের চিন্তার সংকীর্ণতা থেকে ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে এর বিপরীতে অবস্থান ঘোষণা করলে সরকার সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিধান বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে।’ এদিকে, শনিবার বিকালে সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চার শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের পদ পুনর্বহালের দাবিতে ৫ নভেম্বর ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।
অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. প্রিয়াংকা গোপে একটি স্মারকলিপি পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে নৃত্যকলা বিভাগের লাবনী বান্যা, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ এবং বিভিন্ন হলের সাংস্কৃতিক সম্পাদকরা উপস্থিত থেকে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান।
প্রাথমিকের ‘সংগীত’ ও ‘শারীরিক শিক্ষা’ শিক্ষক পদ বাতিল
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের ভবিষ্যৎ শিল্পচর্চা ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির জন্য বড় হুমকি।
গানে গানে প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
ভিন্ন বৈশ্বিক বাস্তবতা
বৈশ্বিক বাস্তবতায় দেখা যায় বিশ্বের প্রায় সব দেশে, এমনকি বিশ্বের মুসলমানদের প্রাণ কেন্দ্র সৌদি আরব থেকে শুরু করে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়াতে সঙ্গীত শিক্ষা দেওয়া হয়। । ইসলামের প্রাণ কেন্দ্র সৌদি আরব, সম্প্রতি ভিশন ২০৩০’র অংশ হিসেবে সরকারি স্কুলে সঙ্গীত শিক্ষা চালু করতে ৯,০০০-এর বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে এই সংস্কার শিল্প, বিনোদন ও শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশটি হাজারো কিন্ডারগার্টেন শিক্ষককে সঙ্গীত দক্ষতায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ২০২২ সালের শেষদিকে সরকারি ও বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ১২,০০০-এর বেশি নারী শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নতুন পর্যায়ে প্রায় ১৭,০০০ নারী শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলো—মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও মিশরেও জাতীয় পাঠ্যক্রমে সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় ১৯৮৩ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক সঙ্গীত শিক্ষা চালু হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত বাধ্যতামূলক এবং ২০২২ সালের নতুন পাঠ্যক্রমেও তা বহাল আছে। তুরস্কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১ম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সপ্তাহে এক ঘণ্টা সঙ্গীত শিক্ষা পায়, এবং ৫ম থেকে ৮ম শ্রেণিতে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টার ঐচ্ছিক পাঠ থাকে। মিশরে ১৯৩১ সাল থেকে সরকারি স্কুলের পাঠ্যক্রমে আরবি ও পাশ্চাত্য সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত।
প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী পদক্ষেপ নেবে না সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা
যুক্তরাজ্যের (ইংল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস) বিদ্যালয়গুলোতেও বয়সভেদে সঙ্গীত বাধ্যতামূলক। ইউরোপের ২০ দেশের ওপর পরিচালিত এমইনেট গবেষণা দেখিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সঙ্গীত বাধ্যতামূলক; মাধ্যমিক পর্যায়ে এটি সাধারণত ঐচ্ছিক। এদিকে জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও নৃত্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
যুক্তরাষ্ট্রের এনসিইএস (জানুয়ারি ২০২৫) অনুযায়ী, সরকারি বিদ্যালয়ের ৭৩% শিক্ষার্থী অন্তত একটি আর্টস কোর্স করতে বাধ্য, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঙ্গীত (৮৪%) ও চিত্রকলা (৮২%)।
চীনে বাধ্যতামূলক নয় বছরের শিক্ষার সময় সঙ্গীত বিষয় অন্তর্ভুক্ত এবং সাম্প্রতিক শিক্ষামূলক মানদণ্ডে এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে, বিশ্বজনীন প্রবণতার বিপরীতে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন ও রাজনৈতিক দল——সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের বিরোধিতা করছে। তারা এর বিপরীতে ধর্মীয় শিক্ষকের দাবি তুলেছে।
গত সেপ্টেম্বরে ইন্সটিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না হলে সড়ক আন্দোলনেরও হুমকি দেন তারা।
গবেষণা যা বলছে
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে— সঙ্গীত শেখা মস্তিষ্কের স্মৃতি, মনোযোগ, বিশ্লেষণ, ভাষা ও সমস্যা সমাধান–সংক্রান্ত অংশগুলোকে একইসঙ্গে সক্রিয় করে। মস্তিষ্কের দুই গোলার্ধ একযোগে কাজ করায় শিশুদের একাডেমিক সক্ষমতা, শৃঙ্খলা, মনোযোগ এবং আবেগ–নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। গবেষকেরা বলছেন, দলগত সঙ্গীতচর্চা নেতৃত্ব, যোগাযোগ ও সহযোগিতার দক্ষতা গড়ে তোলে, যা পরবর্তী জীবনে প্রযুক্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ দিন আগে
জেলা প্রশাসক নিয়োগ ঘিরে ফের বিতর্ক, নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি ২৯ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) বদলি ও নিয়োগ দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই নিয়োগ ঘিরে আবারও উঠেছে বিতর্ক।
অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ পদায়নই হয়েছে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে। এতে প্রশাসনের ভেতরে ক্ষোভের পাশাপাশি নিরপেক্ষতা ও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। মাঠ প্রশাসনে ঝুঁকি ও আস্থাহীনতার আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নির্বাচনের আগে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক পদে এই পদায়নকে অনেকেই দেখছেন ‘নির্বাচনী মাঠ দখলের কৌশল’ হিসেবে। আর এ কারণে জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসনের বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না—বরং নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা, বর্তমানে অন্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন, এমন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, সামনে নির্বাচন, এই সময়ে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী অন্তত ১০ থেকে ১২ জন কর্মকর্তা।
পাশাপাশি, মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তিনজন ইকনোমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিজ্ঞতা নাই বললে চলে—এমন অযোগ্যদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ হয়েছে। এতে একদিকে যেমন নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনে বড় ঝুঁকির শঙ্কা রয়েছে, তেমনই যোগ্য ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বঞ্চনার ভার আরও বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।
সামাজিক মাধ্যমে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়া ভিডিও ভাইরাল হওয়া আজাদ জাহানকে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করেছে সরকার।
এর আগে তিনি ভোলার জেলা প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ এলাকায় শত একর জমিতে মৎস্য ঘের তৈরির অভিযোগ রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাকে নির্বাচনকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলা গাজীপুরের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় প্রশাসনের ভেতরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
একইভাবে, সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের ছবি ও বার্তা শেয়ার করা উপসচিব আফসানা বিলকিসকে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে তিনি শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, এমনকি টিউলিপ রেজওয়ানার ছবিও নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও এমন দলীয় সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ্যে আনায় প্রশাসনের ভেতর সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, নড়াইলের সাবেক ডিসি শারমিন আক্তার জাহানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি করা হয়েছে। উপসচিব পদে পদোন্নতির পরই তিনি ও কিছু আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শপথ’ নেন। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের ডিসি থাকাকালীন আর্থিক অনিয়ম ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ইস্যুর অভিযোগও রয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামকে।
সাইফুল ইসলাম আওয়ামী শাসনামলে অর্থ বিভাগ, বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, একই জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে কাজ করেছেন। আওয়ামী সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা ফেনীর জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেই এক আওয়ামী লীগ নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হন। তার এই পদায়ন নিয়েও উঠেছে নানা বিতর্ক।
এ ছাড়া ইকোনমিক ক্যাডারের অন্তত তিন কর্মকর্তা—যাদের মাঠ প্রশাসনে কাজের অভিজ্ঞতা সীমিত—তাদেরও জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহের নতুন ডিসি সাইফুর রহমান ও মানিকগঞ্জের ডিসি নাজমুন আরা সুলতানা। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের পদায়ন প্রশ্ন তুলছে দক্ষ ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে।
একইভাবে, আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাগেরহাটের সাবেক ডিসি আহমেদ কামরুল হাসানকে নোয়াখালীর ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তারও মাঠ প্রশাসনে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা না থাকলেও দুই জেলার ডিসি পদে পরপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বিতর্কিত ২০১৪ সালের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার (এআরও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ ও লুত্ফুন নাহারকেও যথাক্রমে বরগুনা ও মেহেরপুরের ডিসি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা ও নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোখলেসুর রহমানের সময় থেকেই ডিসি নিয়োগ নিয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ চলে আসছে।
তখন পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদে নেমেছিলেন। সেই বিতর্ক এখন নতুন আঙ্গিকে আবারও ফিরে এসেছে, বিশেষ করে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে।
সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আউয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দিলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নষ্ট হয়—এটাই সবচেয়ে বড় বিপদ। নির্বাচনকালীন সময়ে ডিসিরা মাঠ প্রশাসনের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। তাদের নিরপেক্ষ আচরণের ওপরই নির্ভর করে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও শান্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এখনই এ ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করা উচিত। অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার না দিলে প্রশাসনের ভেতর বিভাজন আরও গভীর হবে, যা রাষ্ট্রীয় সেবার মানকেও ক্ষুণ্ণ করবে।’
২১ দিন আগে
চোখে অন্ধকার, তবে আলমডাঙ্গার মিস্ত্রি জহুরুলের হাতে আলো
চোখে আলো নেই, তবু তার হাতে যেন জাদু। যন্ত্রের ক্ষুদ্রতম ত্রুটিও চোখ ছাড়াই বুঝে ফেলেন তিনি—কোন স্ক্রু ঢিলা, কোন নাট খুলতে হবে, কোন রেঞ্চ ব্যবহার করতে হবে—সবকিছু হাতের স্পর্শেই যেন অনুভব করেন।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের বুড়োপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব জহুরুল ইসলাম মঙ্গল দৃষ্টি হারালেও দক্ষতায় হার মানান যেকোনো অভিজ্ঞ মিস্ত্রিকে।
জন্মগত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই মানুষটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সাইকেল, ভ্যান, শ্যালো ইঞ্জিন, পাওয়ারট্রলি থেকে শুরু করে টিউবওয়েল বসানো পর্যন্ত সব কাজই একাই করেন।
জহুরুল মঙ্গল বলেন, ‘চোখে না দেখেও কাজ করতে পারি—এটা আল্লাহর রহমত। আমার বাহিরের চোখ নেই, কিন্তু অন্তরের চোখ দিয়েই দেখি। কোন স্ক্রু কোথায় লাগবে, কোন রেঞ্চ ধরতে হবে, হাতই আমাকে বলে দেয়।’
মাত্র সাত বছর বয়সে সাইকেলের প্রতি আগ্রহ থেকে এক দোকানে মিস্ত্রির কাজ শেখেন তিনি। ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গেটসংলগ্ন স্থানে নিজের দোকান খোলেন। পরে গ্রামে ফিরে শ্যালো ইঞ্জিন ও পাওয়ারট্রলির কাজেও দক্ষতা অর্জন করেন। ২০০৪ সাল থেকে বুড়োপাড়াতেই চলছে তার স্থায়ী দোকান।
সরেজমিনে দেখা যায়, এক কৃষকের শ্যালো ইঞ্জিন নষ্ট হলে জহুরুল মঙ্গল সাইকেলে চড়ে মাঠে যান। শুধু হ্যান্ডেল ঘোরাতেই সমস্যাটি বুঝে ফেলেন। কয়েক মিনিটেই ইঞ্জিন সচল হয়ে যায়। এরপর আবার টিউবওয়েল মেরামতে ছুটে যান অন্য এক বাড়িতে— কোনোরকম সহযোগিতা ছাড়াই।
গ্রামের কৃষক তাইজাল শেখ বলেন, ‘৪০ বছর ধরে মেশিন চালাই, কিন্তু একটা নাটও খুলতে পারি না। মঙ্গল ভাই না দেখেই মেশিন ঠিক করেন—এটা আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা।’
২৩ দিন আগে
রংপুর অঞ্চলে বেড়েছে খড়ের কদর, আগাম ধানে কৃষকের মুখে হাসি
রংপুর অঞ্চলে শুরু হয়েছে আগাম আমন ধান কাটা ও মাড়াই। ধানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে খড়ের চাহিদা। খড়েরও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই আগাম ধানের ভালো ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে খড়ের দাম গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধানের ফলন হ্রাস এবং চারণভূমির অভাব।
রংপুর সদরের মমিনপুর গ্রামের খামারি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আগে মাঠে গরুকে ঘাস খাওয়ানো যেতো, কিন্তু এখন পতিত জমি বা নীচু জমি আর ফাঁকা থাকে না। ফলে চাষ করা ঘাস ও খড়ের ওপর গরুর খাদ্যের নির্ভরশীলতা বেড়েছে।’
খামারি সিরাজ জানান, গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের বন্যার কারণে এ অঞ্চলের সব উন্মুক্ত এবং চাষ করা তৃণভূমি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ঘাসের সংকটও দেখা দিয়েছে। এ কারণে যারা আগাম ধান চাষ করেছেন তাদের খড়ের চাহিদাটা অনেক বেশি এবং তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
চলতি মৌসুমে আগাম ধান ও খড় বিক্রি করে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আগাম আমন ধান উৎপাদন হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। একই ধানের খড় বিক্রি করে কৃষকদের বাড়তি আয় হবে আরও ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ২০ আটির বোঝা ২২০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন ২০টি আটি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা।
বিক্রেতা আল আমিন জানান, নতুন ধানের সঙ্গে সঙ্গে খড়ের দাম ভাল পাওয়ায় তিনি খুশি।
ক্রেতা রানা মিয়া বলেন, গো খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে এই অবস্থায় খড়ই গরুর জন্য উত্তম খাদ্য। তবে দাম একটু বেশি হওয়া গবাদিপশুর খাদ্য যোগান দিতে খরচ বাড়ছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দোন জমিতে (২৪ শতক) খড় পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ আটি। সেই হিসেবে এক একর জমিতে পাওয়া যায় ২ হাজার আটি। এক হেক্টরে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার খড়ের আটি পাওয়া যাবে।
আটি প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা করে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে আটি বিক্রি করে কৃষকদের আয় হবে ৩০ থেকে ৩৪ হাজার টাকা। এই হিসেবে এক লাখ হেক্টরে ধানের আটি বিক্রি করে আয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।
অন্যদিকে, চলতি মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় বিনা-৭ ব্রি -৩৩, ৩৯, ৫৬, ৫৭ ও ৬২, ৭১.৭৫, ৮৭, ১০৩ সহ হাইব্রিড ধান উৎপাদন হয়েছে এক লাখ হেক্টরের ওপরে। বিনা-৭ ও ১৭ ধানও হচ্ছে এই সময়ে। ১২০ দিনের মধ্যে এসব ধান ঘরে তোলা যায়।
২৪ দিন আগে
জৈন্তাপুরের লাল শাপলার বিল কচুরিপানার দখলে, প্রশাসনের সুরক্ষা কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অন্যতম লাল শাপলা বিল বর্তমানে প্রকৃতিগতভাবে কচুরিপানার বিস্তার নিয়ে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অচিরেই কচুরিপানা বিল বলে পরিচিতি লাভ করবে লাল শাপলা বিলটি।
প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিল রক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসনের গঠিত লাল শাপলা সুরক্ষা কমিটি কি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে?
সরেজমিনে ঘুরে বিভিন্ন পেশার স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবিরহাওর (ইয়াম-হরফকাটা-ডিবি-কেন্দ্রী) এলাকায় ৯শত একর জায়গাজুড়ে চারটি প্রকৃতিগত লাল শাপলা বিল অবস্থিত। ২০১৬ সালে এই বিলগুলো সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে সারাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পায়। দেশি-বিদেশী পর্যটকরা বিলের সৌন্দর্য্য দেখে প্রশংসা করেছেন।
তবে চলতি বছরে একটি বিলের (ইয়ামবিল) অর্ধেকের বেশি এলাকা কচুরিপানার দখলে চলে গেছে। দ্রুত বিস্তারমান কচুরিপানার কারণে লাল শাপলা বিলের ধ্বংস হচ্ছে। পর্যটকরা শীঘ্রই লাল শাপলার পরিবর্তে কচুরিপানার বিল দেখতে আসতে পারে, যা জৈন্তাপুরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ বিনষ্ট করবে।
স্থানীয়রা জানান, লাল শাপলা সুরক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসন একটি সুরক্ষা কমিটি গঠন করেছে। কমিটির মূল কাজ হলো বিলের শাপলা রক্ষা, ধ্বংসকারী জলজ উদ্ভিদ চিহ্নিত করা এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা। পর্যটকদের নৌকা থেকে ১০০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করে বিলের বাঁধ ও পরিচর্যা কাজে ব্যয় করা হয়।
তবে ইয়ামবিলের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অর্ধেক এলাকা কচুরিপানার দখলে চলে গেছে। লাল শাপলার পরিবর্তে কচুরিপানার ফুল ফোটার কারণে বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়রা দ্রুত পরিবেশ সমীক্ষা করে লাল শাপলা রক্ষার দাবি তুলেছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জমিত্র চাকমা বলেন, লাল শাপলা বিলে জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানার কারণে শাপলা ধ্বংস হচ্ছে; বিষয়টি ইতোপূর্বে কেউ আমাকে অবহিত করেনি। তিনি আশ্বাস দেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে লাল শাপলা সুরক্ষায় কচুরিপানা সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
২৫ দিন আগে