আজকের খবর - 09-07-2025
সকালের বৃষ্টির পরও ঢাকার বাতাসের মানে অবনতি
বর্ষাকালে সাধারণত ঢাকার বাতাসে মানে উন্নতি দেখা যায়। তবে সকালে বৃষ্টির পরও আজ বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে। রাতভর বৃষ্টি, এরপর সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টির পরও ঢাকার বাতাসের মানে গতকালের তুলনায় অবনতি লক্ষ করা গেছে।
বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টা ৫ মিনিটে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৯৭, যেখানে ১০০ স্কোর থাকলে সেটি ‘সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
গতকাল প্রায় একই সময়ে ঢাকার স্কোর ছিল ৭৮। এই স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার ২৩তম স্থানে ছিল ঢাকা। অথচ অবনতির কারণে আজ ঢাকা উঠে এসেছে তালিকার চতুর্দশ স্থানে।
অন্যদিকে, গতকাল এই তালিকার ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা ভারতের দিল্লি আজ অবস্থান করছে ৩৮তম স্থানে। একিউআই স্কোর ৬২ নিয়ে ‘মাঝারি’ বায়ুমান অর্জন করেছে শহরটি।
যদিও আজ ঢাকার বাতাসও বায়ুমান সূচক অনুযায়ী ‘মাঝারি’ পর্যায়ে রয়েছে, তবে সেটি সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠতে মাত্র ৩ পিছিয়ে।
আরও পড়ুন: লাহোরের বাতাসের মান আজ ভালো, ঢাকার কী অবস্থা?
একই সময়ে আজ ১৭৭ স্কোর নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহর কঙ্গোর কিনশাসা। এই সময় ১৫৯, ১৫৬ ও ১২৯ একিউআই স্কোর নিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দূষিত শহর ছিল যথাক্রমে উগান্ডার কাম্পালা, উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই।
সাধারণত বায়ুদূষণের সূচক (এইকিআই) শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তারপর থেকে ১০০ পর্যন্ত একিউআই স্কোর ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
৮ মিনিট আগে
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে কি ‘উইন-উইন’ অবস্থান হারাচ্ছে বাংলাদেশ?
এপ্রিলে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ‘উইন-উইন’ অবস্থান হারিয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এই বড় শুল্কের বোঝা পড়বে দেশের পোশাকখাতের ওপর, যেখানে এ খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
এপ্রিলে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ৯০ দিন সময় পেলেও কেন সুবিধা করতে পারল না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির বলেন, ‘এতদিন আমরা উইন-উইন অবস্থান নিয়ে ভেবেছিলাম, সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। ৯০ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর আলোচনা হয়েছে বলে মনে হয়নি। যদিও আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তবে বাংলাদেশকে যা করার এক সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে।’
ভিয়েতনাম বড় অঙ্কের শুল্ক কমিয়ে এনেছে। এখন যদি ভারত-পাকিস্তান আলোচনার টেবিলে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে সক্ষম হয় এবং বাংলাদেশ যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ ট্রাম্পের, ১ আগস্ট থেকে কার্যকর
শুল্ক কমানো প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চিঠির জবাব দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিসমূহ এবং বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী বাণিজ্যঘাটতি তৈরি হয়েছে তা থেকে সরে আসতে হবে। ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশের যেকোনো ধরনের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা সব খাতভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
উচ্চ শুল্কহার এড়াতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে তার ওপরও উচ্চ শুল্কহার আরোপ হবে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, তার তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যদি বাংলাদেশ এই শুল্কের জবাবে আরও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাধা দূর করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেও এত স্বল্প সময়ে শুল্ক কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। বিশেষ করে শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তা যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয় বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পরিচালক আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘এলপিজি, সয়াবিন ও তুলা নিয়ে বাংলাদেশ যেসব সুবিধার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে তা দেশটির কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়নি। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় পোশাক কোম্পানিগুলো আগাম পোশাক মজুদ করে রেখেছে। এতে করে সামনে পোশাকের অর্ডার কমে যাবে। সমাধানে আসতে হাতে যা সময় আছে তা একেবারেই কম। এতে করে নতুন সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের জন্য লাভজনক শুল্ক চুক্তির আশায় ঢাকা: শফিকুল আলম
তবে শুল্ক কমে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যোগ দিতে আজই ঢাকা ছাড়ছেন বাণিজ্য সচিব। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের (ইএসটিআর) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল শুল্ক প্রসঙ্গে আবারও আলোচনা হবে।
‘ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে’ শুল্ক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৭.৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা ওই সময়ের মোট রপ্তানির ১৭.০৯ শতাংশ।
এ সময়ে বাংলাদেশের ওভেন পোশাকের ২৫.৯৩ শতাংশ, নিট পোশাকের ১১.৭১ শতাংশ ও হোম টেক্সটাইলের ১৬.১২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা পোশাক খাতে আসবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান গতকাল (মঙ্গলবার) বলেন, ‘আগামীকালের (বুধবার) মিটিংয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। মিটিং ফলপ্রসূ হলে শুল্ক কমে আসার বড় সম্ভাবনা আছে।’
শামীম জানান, যদিও ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক ২৭ শতাংশ, তবে ট্রাম্প ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর ওপর আলাদা ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করতে পারেন। যদি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক সমঝোতায় পৌঁছায় তাহলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে। কিন্তু চীন আর ভারতের ওপর উচ্চ শুল্কহার বহাল থাকলে, বিশেষ করে চীনের ওপর শুল্কারোপ অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশের এখনো বাণিজ্য সুবিধা নেওয়ার সুযোগ আছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফলের আশা অর্থ উপদেষ্টার
১ আগস্টের পর শুল্ক বিষয়ে আর কোনো আলাপ-আলোচনার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্র রাখবে কিনা সোমবার সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি। তবে আলোচনার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি—এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় শুল্ক কমাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।
৫৯ মিনিট আগে