স্বাস্থ্য
বৈশ্বিক টিকাদান অঙ্গনে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে বায়ো ফার্মা ও ডিসিভিএমএন
বিশ্বব্যাপী সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও মানসম্মত টিকার ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা উৎপাদনকারী নেটওয়ার্ক বা ডিসিভিএমএন-এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় ওষুধ ও টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পিটি বায়ো ফার্মা (পারসেরো)।
২০০০ সালে নেটওয়ার্কটি গঠনের পর থেকেই বায়ো ফার্মা উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা স্বনির্ভরতা ও জনস্বাস্থ্য সক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।
বায়ো ফার্মা ও ডিসিভিএমএনের এই সহযোগিতামূলক যৌথ কার্যক্রম শুরু হয় নেটওয়ার্কের সূচনালগ্নেই। ২০০০ সালে নেদারল্যান্ডসের নর্ডউইকে অনুষ্ঠিত নেটওয়ার্কটির প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভায় বায়ো ফার্মা ছিল ১০টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একটি। পরের বছর, অর্থাৎ ২০০১ সালের এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার ব্যান্ডুংয়ে দ্বিতীয় বার্ষিক সভার আয়োজন করে বায়ো ফার্মা, যেখানে নেটওয়ার্কের কাঠামো ও পরিচালনব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। বায়ো ফার্মার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডিরেক্টর থামরিন পুয়েলোয়েংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাটি ইন্দোনেশিয়াকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে টিকা সহযোগিতা ও জ্ঞান বিনিময়ের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডিরেক্টর শাদিক আকাসিয়া বলেন, বায়ো ফার্মার সক্রিয় অংশগ্রহণ ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় স্বার্থ ছাড়িয়ে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
তিনি বলেন, “ডিসিভিএমএন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বায়ো ফার্মার নেটওয়ার্কটিতে সম্পৃক্ত হওয়া কেবল প্রতিনিধিত্বের জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক টিকা স্বনির্ভরতা অর্জনে সত্যিকারের অবদান রাখার জন্য। সহযোগিতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা সবার জন্য ন্যায্য ও টেকসই স্বাস্থ্যসমাধান দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
আকাসিয়া আরও বলেন, “সহযোগিতার মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা শিল্পের প্রকৃত শক্তি নিহিত। ডিসিভিএমএনে সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে প্রত্যেক দেশ নিরাপদ, মানসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী টিকার নাগাল পাবে— যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় ইন্দোনেশিয়ার বাস্তব অবদানের প্রতিফলন।”
২০০৪ সালে নেদারল্যান্ডস ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বায়ো ফার্মা ডিসিভিএমএনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে পেন্টাভ্যালেন্ট (ডিপিটি–হেপবি–হিব) টিকার প্রাপ্যতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি প্রমাণ করে, এই নেটওয়ার্কে বায়ো ফার্মার অবদান শুধুমাত্র প্রতীকী নয়, বরং প্রযুক্তিগত ও বাস্তবধর্মী।
২০১২ সালে বালিতে পুনরায় ডিসিভিএমএনের ত্রয়োদশ বার্ষিক সভা আয়োজন করে ইন্দোনেশিয়া। সে সময় বায়ো ফার্মার পরিচালক মাহেন্দ্র সুফারদোনো ডিসিভিএমএনের নির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে (২০১৩–২০১৪ মেয়াদে) নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০২৩–২০২৫ মেয়াদের জন্য নেটওয়ার্কের বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয় বায়ো ফার্মা, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা শিল্পে ইন্দোনেশিয়ার নেতৃত্বের স্বীকৃতি বহন করে।
সহযোগিতার বাইরে বায়ো ফার্মা উদ্ভাবনেও অগ্রগামী। ২০২০ সালে তাদের তৈরি nOPV2 টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি ব্যবহার তালিকায় (ইমার্জেন্সি ইউজ লিস্টিং) অন্তর্ভুক্ত প্রথম টিকা হয়, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটে দ্রুত টিকা ব্যবহারের পথ খুলে দেয়। এই অর্জন কেবল বায়ো ফার্মার বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতার প্রমাণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক তহবিলদাতা, গবেষক, নীতিনির্ধারক, বিজ্ঞানী ও টিকা নির্মাতাদের সঙ্গে সমন্বিত কার্যকর সহযোগিতার ফলাফল।
এই সাফল্য দেখিয়েছে যে, উন্নয়নশীল দেশের একটি প্রতিষ্ঠানও নিরাপত্তা, মান ও কার্যকারিতার সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান পূরণ করে বিশ্বমানের উদ্ভাবন করতে পারে। nOPV2 কেবল বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয়, এটি প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার প্রতীক এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় ইন্দোনেশিয়ার সক্ষমতার প্রতি আস্থার প্রতিফলন। এই অর্জন গবেষণা, উদ্ভাবন ও উৎপাদন সক্ষমতা জোরদারেও ডিসিভিএমএনের সদস্যদের অনুপ্রাণিত করেছে।
বায়ো ফার্মা বছরে ৩৫০ কোটি (৩.৫ বিলিয়ন) ডোজ টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে এবং বর্তমানে ১২ ধরনের টিকার জন্য ডব্লিউএইচও প্রাক-যোগ্যতা (প্রিকোয়ালিফিকেশন) সনদপ্রাপ্ত। প্রতিষ্ঠানটি ১৫০টিরও বেশি দেশে টিকা সরবরাহ করে এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর টিকা উন্নয়ন, উৎপাদন ও বিতরণে উৎকর্ষ কেন্দ্র (সেন্টার অব এক্সেলেন্স) হিসেবে স্বীকৃত।
আগামী ২৯ থেকে ৩১ অক্টোবর আরও একবার ডিসিভিএমএনের বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করতে চলেছে ইন্দোনেশিয়া। বালিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কূটনীতিতে নেতৃত্ব পুনর্নিশ্চিত করতে দেশটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে বায়ো ফার্মা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভাবন, সহযোগিতা ও টিকা স্বনির্ভরতার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার অঙ্গীকার করেছে, যাতে আরও টেকসই ও ন্যায্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
ডিসিভিএমএন
উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা উৎপাদনকারী নেটওয়ার্ক বা ডিসিভিএমএন ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বৈশ্বিক জোট, যার সদস্য ১৭টি উন্নয়নশীল দেশের ৪৬টি টিকা নির্মাতা সংস্থা। এর লক্ষ্য হলো মানসম্পন্ন টিকার ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করা। সংগঠনটি সদস্যদের মধ্যে যৌথ গবেষণা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং প্রতিটি দেশকে সাশ্রয়ী ও জীবনরক্ষাকারী টিকা উৎপাদনে সক্ষম করে তুলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, জিএভিআই, সিএপিআই, পিএটিএইচ, সিএইচএআই ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।
বায়ো ফার্মা
পিটি বায়ো ফার্মা (পারসেরো) ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবনবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক। ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি ব্যান্ডুংয়ে সদর দপ্তর স্থাপন করার পর থেকে ১৫০টিরও বেশি দেশে টিকা সরবরাহ করছে। বায়ো ফার্মা বায়োটেকনোলজি গবেষণা, উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা জোরদারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ডিসিভিএমএনের সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী টিকার ন্যায্য প্রাপ্তি ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অবদান রেখে চলেছে।
সূত্র: এশিয়া নেট
৪২ দিন আগে
ঢামেকে ৬ সন্তানের জন্ম দিলেন এক নারী
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ছয় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন প্রিয়া নামের এক প্রসূতি। ওজন কম হওয়ায় তিনটি শিশুকে ঢামেকে এবং অপর তিনটিকে বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে (নবজাতকের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ঢামেকের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে তিনটি ছেলে ও তিনটি মেয়ে প্রসব করেন ওই নারী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের এক নম্বর ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, ‘গতরাতে আমাদের এখানে প্রিয়া নামের এক গর্ভবতী নারী ভর্তি হন। পরে আজ সকালে তিনি ছয়টি সন্তানের জন্ম দেন।’
‘তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি ‘বেবি’ বলা যায় না, এটি আসলে ২৭ সপ্তাহের ইনএবিটেবল অ্যাবরশন।’
তিনি জানান, এর আগে একটি পূর্ণবয়স্ক শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন প্রিয়া, কিন্তু সেটি ডেলিভারির সময় মারা যায়। এবার জন্ম নেওয়া ছয় নবজাতকের মধ্যে তিনটির ওজন ৯০০ গ্রামের মতো এবং বাকি তিনটির ওজন প্রায় ৮০০ গ্রাম।
ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, ‘শিশুদের মধ্যে তিনটি ঢামেকের এনআইসিইউতে এবং অন্য তিনটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ সবাই জীবিত আছে, ভালো আছে।’
এই চিকিৎসকের মতে, আমাদের দেশে চিকিৎসকেরা ২৮ সপ্তাহকে ভ্রূণের জীবনোপযোগী বয়স হিসেবে গণ্য করেন। কিন্তু এই নারীর ক্ষেত্রে সেই সময়ের আগেই ডেলিভারি হয়েছে। ফলে শিশুদের প্রাণ-সংকট রয়েছে। তবে ঢামেকের উন্নত এনআইসিইউ সুবিধা থাকায় ভাগ্যে থাকলে তারা বেঁচে যেতেও পারে।
৮১ দিন আগে
রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ কেন হয়? জেনে নিন প্রতিরোধের উপায়
বাংলাদেশে রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরনের দুর্ঘটনা সাধারণত বিদ্যুৎ সংযোগের ক্রুটিপূর্ণতা, কম্প্রেসারের অতিরিক্ত গরম হওয়া, শর্ট সার্কিট, এবং পুরনো বা নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে ঘটে থাকে।চলুন জেনে নেই ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত।
রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার কি? এটি কিভাবে কাজ করে?
রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার হচ্ছে ফ্রিজের মূল চালিকা শক্তি, যেটি রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসকে চাপ দিয়ে সঞ্চালন করায় এবং ঠান্ডা করার পুরো প্রক্রিয়াটি সচল রাখে।
এই যন্ত্রাংশটি রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসকে কম চাপ থেকে উচ্চচাপে রূপান্তরিত করে কনডেনসারে পাঠায়, যেখানে গ্যাস তরলে পরিণত হয়ে তাপ বাইরে ছড়িয়ে দেয়। এরপর সেই তরল গ্যাস ইভ্যাপোরেটরে গিয়ে আবার গ্যাসে পরিণত হয় এবং আশেপাশের তাপ শোষণ করে ফ্রিজের ভেতরের অংশকে ঠান্ডা রাখে।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় কম্প্রেসার মোটরের সাহায্যে গ্যাসকে বারবার চাপ দেয় এবং সঞ্চালন ঘটায়, যার ফলে ফ্রিজ ক্রমাগত ঠান্ডা হতে থাকে। মূলত কম্প্রেসার ছাড়া ফ্রিজ কোনোভাবেই কাজ করতে পারে না, কারণ এটি না থাকলে গ্যাসের চাপ পরিবর্তন ও সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাবে, আর ফ্রিজ ঠান্ডা করার ক্ষমতা হারাবে।
আরো পড়ুন: গরম পানির গিজার: জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, মডেল, ধরন ও দাম
রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের কারণ কি
রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের মূল কারণ সাধারণত কয়েকটি বিষয় থেকে হয়ে থাকে।
প্রথমত, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা তারের সমস্যা হলে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয়ে কম্প্রেসার অতিরিক্ত গরম হয় এবং ভেতরে চাপ (Pressure) বেড়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
দ্বিতীয়ত, গ্যাস লিকেজ বা অতিরিক্ত গ্যাস ভরা থাকলে সেটি কম্প্রেসারের ভেতরে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি করে এবং তাপমাত্রা বেশি হয়ে গেলে বিস্ফোরণ হতে পারে। তৃতীয়ত, ভেতরে তেল বা গ্যাসের রাসায়নিক বিক্রিয়া (যেমন অশুদ্ধ রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার) হলে তা দাহ্য অবস্থার সৃষ্টি করে।
এছাড়া কম্প্রেসারের ভেতরে ভেন্টিলেশনের সমস্যা বা কুলিং ফ্যান না চললে অতিরিক্ত তাপ জমে যায়, যা বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ায়।
এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বদা সঠিক ভোল্টেজ ব্যবহার করা, মানসম্মত স্ট্যাবিলাইজার লাগানো, অনুমোদিত টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে সার্ভিস করা এবং নকল বা অশুদ্ধ রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার না করা জরুরি।
আরো পড়ুন: ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়
রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ প্রতিরোধের উপায়
রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ প্রতিরোধের জন্য কিছু বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলা প্রয়োজন।
- খেয়াল রাখতে হবে ভোল্টেজ ওঠানামা যেন কম্প্রেসারের ক্ষতি না করে, তাই একটি মানসম্মত ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা নিরাপদ। - সবসময় অনুমোদিত ও সঠিক রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করতে হবে, কারণ নকল বা ভুল ধরনের গ্যাস ভেতরে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ায়। - নিয়মিত সার্ভিস ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে গ্যাস লিক, বৈদ্যুতিক তার এবং কম্প্রেসারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত, এতে সম্ভাব্য সমস্যা আগেই ধরা যায়। - ফ্রিজের তার বা প্লাগ যেন কখনও ক্ষতিগ্রস্ত বা ঢিলা না থাকে, কারণ সেখান থেকে শর্ট সার্কিট হতে পারে। - কম্প্রেসারের চারপাশে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অতিরিক্ত তাপ জমে না থাকে। - টেকনিশিয়ানদের দিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ভরানো থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এতে প্রেসার বেড়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। - ফ্রিজ সবসময় সমতল স্থানে স্থাপন করতে হবে যাতে কম্প্রেসারের ভেতরে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি না হয় - ঘরে অগ্নি-নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা উচিত। রান্নাঘরে বা ফ্রিজের পাশে ছোট ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখুন, জরুরি সময় কাজে আসবে।
সব মিলিয়ে সঠিক ব্যবহার, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপদ বৈদ্যুতিক সংযোগ নিশ্চিত করলে রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ঝুঁকি সহজেই এড়ানো সম্ভব।
আরো পড়ুন: মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ: কারণ ও বাঁচার উপায়
১০৩ দিন আগে
সাপে কাটলে কী করবেন? কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা জরুরি?
বৃষ্টি মৌসুমগুলোতে ভারী বর্ষণের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে দেখা দেয় বন্যা। আর বন্যা মানেই নানা ধরণের কীট-পতঙ্গের পাশাপাশি শুরু হয় সাপের উপদ্রব। এমনকি এই চিত্র কেবল গ্রামেরই নয়, শহরাঞ্চলগুলোরও একই অবস্থা। এছাড়া যারা বর্ষার সময় বনে বা পাহাড়ে ঘুরতে যান তাদেরও প্রায় সময় সাপের কবলে পড়তে হয়। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে দেশ জুড়ে সাপে কাটার ঘটনা আশঙ্কাজনক মাত্রায় রয়েছে। সব থেকে উদ্বেগের ব্যাপার হলো- সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। তাই চলুন, সাপে কামড়ালে কী করণীয় এবং কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক।
সাপে কাটলে কী করা উচিত
সাপে কাটা ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। হাসপাতালে যাওয়ার পথে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণরক্ষার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত:
- সাপে কামড়ানো ব্যক্তি প্রায় ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে এই মানসিক অবস্থা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির ভয় দূর করে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাহস দিতে হবে। বিশেষত নির্বিষ সাপের দংশনে মৃত্যু হয় না। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপেরই বিষ নেই। বিষধর সাপের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া এগুলো অধিকাংশ সময় শিকারের শরীরে পর্যাপ্ত বিষ ঢুকিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়।
আরো পড়ুন: বর্ষা-বন্যায় বসতবাড়িতে সাপের উপদ্রব মোকাবিলা করবেন যেভাবে
- ব্যক্তির আক্রান্ত অঙ্গকে অবশ্যই স্থির করে রাখতে হবে। খুব বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। হাঁটাচলা বা অধিক ঝাঁকুনির সম্মুখীন না করে স্থির ভাবে আধশোয়া অবস্থায় রাখা উত্তম।
- ক্ষতস্থানে একটু চাপ প্রয়োগ করে ব্যান্ডেজ বেধে দিতে হবে। এই প্রাথমিক চিকিৎসাটি প্রেসার ইমোবিলাইজেশন নামে পরিচিত। ব্যান্ডেজের বদলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
- রোগী শ্বাস না নিলে অবিলম্বে তার মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- আক্রান্ত স্থান জীবাণুমুক্ত করার জন্য সাবান দিয়ে ধুয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে হাল্কা ভাবে মুছে নিতে হবে।পড়নে অলঙ্কার বা ঘড়ি কিংবা তাগা, তাবিজ থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। নতুনবা এগুলো রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর।
আরো পড়ুন: মরণঘাতী ড্রাগ ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ থেকে বাঁচতে করণীয়
১৪৭ দিন আগে
খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি, বাড়ছে উদ্বেগ
খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। গত এক সপ্তাহে বিভাগের ১০ জেলায় মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১৭ জন। তাদের মধ্যে ৫৭ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেক রোগীর শরীরে দেখা দিচ্ছে নতুন উপসর্গও।
আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম ধরা হলেও এ বছর জুন-জুলাই মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী তানজিলা আক্তার বলেন, ‘জ্বর হওয়ার পর শরীর কাঁপতে থাকে, তারপর বমি শুরু হয়। ডাক্তাররা বলেছেন, ডেঙ্গু। আগে কখনো এমন হয়নি।’
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে খুমেকে ভর্তি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোলাইমান মিয়া। সঙ্গে ছিলেন তার বোন। এই নারী বলেন, ‘বড় ভাই খেত-খামারে কাজ করে। হয়তো সেখান থেকে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হতে পারে। প্রথমে তাকে শরণখোলা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। জ্বর না কমায় পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে খুলনায় নিয়ে আসি।’
আরেক রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। আলাদা ব্যবস্থা না থাকলে সবার জন্যই রিস্ক (ঝুঁকি)।’
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্তের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বরিশালে একজনের মৃত্যু
চিকিৎসকদের ভাষ্য, এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বরের সঙ্গে ঝাঁকুনি, বমি, ও অতিরিক্ত দুর্বলতার উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি বরগুনায় ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। এই জেলায় এমন ডেঙ্গু সংক্রমণের কারণ হিসেবে সূত্র জানিয়েছে, বরগুনায় সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি থেকেই ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছে এই রোগ।
একই রকমভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ৭ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ ড্রাম, ট্যাংক বা অন্যান্য পাত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেন। এসব জায়গা সহজেই এডিস মশার প্রজননস্থলে পরিণত হচ্ছে। ফলে খুলনা বিভাগের এসব উপজেলার মানুষও একই রকম ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা থাকলেও সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। আগের তুলনায় আরও বেশি মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার প্রয়োজন হলেও মনে হচ্ছে আগের থেকে তা কমিয়ে ফেলেছে তারা।’ হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর অন্য সময়ের চেয়ে আগেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে দেখা গেছে। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে নতুন লক্ষণও দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ডেঙ্গু ওয়ান সেরোটাইপ। প্রতিটি সেরোটাইপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র লার্ভিসাইড স্প্রে করে পরিবর্তিত সেরোটাইপের কারণে কিন্তু সেভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়! এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা বলছি যে, সমন্বিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম প্রয়োজন এবং সেটি এখনই।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মজিবুর রহমান জানান, মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার এবং হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে প্রতিটি জেলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১৫৩ দিন আগে
ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ধরন নারী-পুরুষ ভেদে ভিন্ন: গবেষণা
ক্যানসার বিশ্বব্যাপী এক মরণব্যাধি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে শরীরের কোন অংশে এই ব্যাধি দেখা দেবে, তা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন—এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি নতুন গবেষণায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্যানসার রিসার্চ ইউকে (সিআরইউকে) সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে চলতি বছর ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে ৪ জনের পিঠ, বুক ও পেটে মেলানোমা ধরনের ত্বক ক্যানসার দেখা দেয়। বছরে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ পুরুষ এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ত্বকের সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্যানসার হলো মেলানোমা।
অন্যদিকে, ৩৫ শতাংশ নারীর কোমর থেকে পা পর্যন্ত অংশে এ ক্যানসার দেখা দেয়। প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ২০০ নারী এতে আক্রান্ত হন।
গবেষকরা মনে করেন, নারী-পুরুষের আচরণগত পার্থক্যের কারণেই এ ভিন্নতা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষরা প্রায়ই রোদে শার্ট ছাড়াই বের হন, আর নারীরা গরমকালে শর্টস বা স্কার্ট পরতে পছন্দ করেন।
আরও পড়ুন: স্তন ক্যান্সার শনাক্তে ভুমিকা রাখতে পারে এআই: গবেষণা
গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসার কারণেই ৮৭ শতাংশ মেলানোমা ক্যানসার হয়। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হন।
‘মেলানোমা’ শব্দের অর্থ ‘কালো টিউমার’। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের যেকোনো অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে।
সিআরইউকের তথ্যানুসারে, গত বছর যুক্তরাজ্যে মেলানোমা আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। ২০০৭–০৯ সাল থেকে ২০১৭–১৯ সালের মধ্যে নতুন রোগীর হার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেড়ে প্রতি লাখে ২১ জন থেকে ২৮ জনে পৌঁছেছে।
৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে মেলানোমার হার ৫৭ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭ শতাংশ বেড়েছে। সিআরইউকের অনুমান, চলতি বছর এ সংখ্যা ২১ হাজার ৩০০ জনে পৌঁছাতে পারে।
সিআরইউকের প্রধান নির্বাহী মিশেল মিচেল বলেন, ‘গবেষণার অগ্রগতির ফলে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তদের বেঁচে থাকার হার বাড়ছে। তবে মেলানোমায় আক্রান্তের সংখ্যা, বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে, বাড়ছে—এটা উদ্বেগজনক।’
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রতিরোধই এ ব্যাধি থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায়।
ত্বকে নতুন কোনো তিল, তিলের আকার বা রঙের পরিবর্তন, অথবা অস্বাভাবিক কোনো দাগ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিশেল মিচেল। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
আরও পড়ুন: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়: অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণা
সিআরইউকের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য বিভাগের প্রধান ফিয়োনা ওসগুন এ বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া গরম হলে রোদে সাবধানে থাকতে হবে। প্রতি কয়েক বছর পরপর রোদে পুড়ে গেলেই মেলানোমার ঝুঁকি তিনগুণ বেড়ে যায়। শুধু গরম নয়—রোদেলা যেকোনো দিনেই, এমনকি মেঘলা বা শীতল দিনেও, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।’
তিনি আরও জানান, যুক্তরাজ্যে মার্চ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অতিবেগুনি রশ্মি ক্ষতিকর মাত্রায় থাকে।
ফিয়োনার পরামর্শ অনুযায়ী, কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন—বেলা ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে ছায়ায় থাকা, সান হ্যাট ও সানগ্লাসসহ এমন পোশাক পরা যাতে ত্বক ঢাকা থাকে, এবং অন্তত এসপিএফ ৩০ ও ৪ বা ৫ তারকা মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।
ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসারবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক পিটার জনসন বলেন, ‘ত্বকের ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো উপায়। সূর্যের রশ্মি তীব্র হলে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় হলে তা প্রতিরোধযোগ্য।’
১৯১ দিন আগে
কেমন হওয়া উচিত সকালের শুরুটা?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক কিছুই বর্তমানে বেশ সাড়া ফেলে, সম্প্রতি এক ইনফ্লুয়েন্সারের সকালের রুটিনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, কয়েক কোটি ভিউ পেয়েছে সেটি।
ভিডিওতে দেখা যায় আস্টন হল নামের ওই ইনফ্লুয়েন্সার ভোর চারটার আগে উঠে দাঁত ব্রাশ করছেন, এরপর তিনি সাঁতার কাটছেন, ধ্যান করছেন, জার্নাল পড়ছেন, কলার খোসা দিয়ে মুখ ঘষছেন, ওয়েট লিফটিং করছেন, বরফের মধ্যে মুখ ডোবেচ্ছন, এমন আরও অনেক কিছু করে শেষমেষ সকাল সাড়ে নয়টায় তিনি নাস্তা করেন।
তার এই রুটিন দেখে নেট দুনিয়ায় আলোচনার ঝড় উঠেছে; কিভাবে দিনের শুরু করা উচিত। যদির আস্টনের মতো ছয়ঘণ্টা ধরে দিনের শুরু করাকে বেশিরভাগের মানুষই বিলাসিতা বলেছেন।
তবে ছয়ঘণ্টা ধরে দিনের শুরু না করলেও সুন্দরভাবে শুরু করাটা আবশ্যক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই জানেন না, কিভাবে দিনের শুরু করা উচিত। আসুন, তবে জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞরা কি বলেন।
আরও পড়ুন: শিশুদের পেটের মেদ কমাতে কী করবেন?
কিভাবে একটি সুন্দর দিনের শুরু করা যায়?
ইংল্যান্ডের সাইকোথেরাপিস্ট (মানসিক রোগের চিকিৎসা করেন যিনি) কামাল্যান কর বলেন, ‘দিনের শুরু ভালোভাবে করতে ডজনখানেক কাজ করার দরকার নেই। তবে সুস্থ, স্বাভাবিক ও গঠনমূলক একটি দিন অতিবাহিত করার জন্য সকালের কাজগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা যেতেই পারে। যে কাজগুলো ব্যক্তির মন উৎফুল্ল রাখতে সহায়তা করে, পাশাপাশি সারাদিনের জন্য শক্তি যোগায়— সেগুলো জানা প্রয়োজন।’
কামাল্যান বলেন, ‘আপনি যদি সকালটি ভালোভাবে শুরু করেন, আপনার সারাদিন ভালো কাটবে, আপনি বেশ গোছালোভাবে আপনার দিনটি অতিবাহিত করতে পারবেন।’
মানুষের কাজকর্ম ঠিক কিভাবে তার জীবনকে প্রভাবিত করে, সেটি নিয়ে কয়েক বছর ধরে গবেষণা করছেন ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক শন ম্যাকক্লেইন।
প্রতিদিন সকালে রুটিনমাফিক একই ধরনের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শন বলেন, মানুষ যদি প্রতিদিন সকালে একই ধরনের কাজ করেন, তাহলে তার আলাদাকরে চিন্তা করতে হয় না। এতে অন্যসময়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য মস্তিস্কে শক্তি সঞ্চিত হয়। সকালে রুটিন মাফিক কাজ করা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক শর্টকার্ট।তিনি বলেন, মানুষের মস্তিস্ক সাধারণত অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তেমন চিন্তাভাবনা করতে পছন্দ করে না। চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে মানুষকে কৃপণ বলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ধীরেসুস্থে খাবার না খেয়ে বিপদ টানছেন নাতো?
শনের গবেষণার তথ্যমতে, যেসব মানুষ কোনোরকম বিঘ্ন ছাড়া দিনের শুরুটা ভালোভাবে করেন, তারা কর্মক্ষেত্রে ভালো করেন, তারা শান্ত মেজাজে নিজেদের কাজগুলো করতে পারেন। অন্যদিকে যারা বিশৃঙ্খলভাবে দিনের শুরু করেন, তারা সারাদিন মানসিক ক্লান্তিতে ভোগেন।তিনি বলেন, সকালের রুটিনে কোনো বিঘ্ন ঘটলেই সারাদিন এলোমেলো হয়ে যায়।
একবার তার মেয়ের একটি প্রোগ্রামের কথা ভুলে অন্য কাজ করছিলেন বলেও জানান এই গবেষক।
সকালের রুটিনে কোন বিষয়গুলো থাকা ভালো?
শন বলেন, ‘প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু রুটিন থাকে। তবে খুব কম মানুষই সেটি ভেবেচিন্তে ঠিক করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ করতে করতে সেটিই রুটিন হয়ে গেছে— বিষয়টি এমন।’
ঠিক কোন কাজগুলো সকালে করা ভালো এটি নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন বলে মনে করেন তিনি। কারণ একজনের জন্য যেটি কার্যকর সেটি আরেকজনের জন্য না-ও হতে পারে। তবে কিছু কাজ সবার ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর।
কামাল্যান কর বলেন, সকালে তাড়াহুড়ো করে গোসল করা, খাওয়া কিংবা বাসা থেকে বের হওয়া এগুলো খারাপ জিনিস। এর ফলে মানুষের শরীর থেকে অতিরিক্ত কর্টিসোল হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনটি মানুষের সার্কাডিয়ান রিদমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সার্কাডিয়ান রিদম হলো দিনভর একটি মানুষের শরীর কিভাবে কাজ করবে, তা পরিচালনার জন্য একটি ঘড়ির মতো ব্যবস্থা। যেখানে মানুষের ঘুমিয়ে পড়া, জেগে ওঠা, শরীরের তাপমাত্রা থেকে শুরু করে মানসিক অবস্থা, সব ধরনের ক্ষুধা সবই নিয়ন্ত্রিত হয়।
কামাল্যান বলেন, এই সার্কাডিয়ান রিদমের কারণেই মানুষ সকালে জেগে ওঠে। তবে অতিমাত্রায় কর্টিসোল নিঃসৃত হলে সেটি মানুষের মধ্যে উদ্বিগ্নতা ও অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
খালি পেটে কফি খেলে শরীরের যে ক্ষতি হয়, এক্ষেত্রেও ঠিক সেরকম বলে জানান তিনি।
সকালে যেসব মানুষের এমন তাড়াহুড়ো হয়ে থাকে, তাদের এলার্ম ৩০ মিনিটি আগে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কামাল্যান। তবে এলার্ম দিয়ে আরেকটু ঘুমানোর জন্য ‘স্নুজ বাটন’ চাপতে নিষেধ করেছেন তিনি। এতে বরং মানুষ সারাদিন তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: কতটুকু ঘুম দরকার সুস্থ মানুষের?
সকালে উঠে এমন অন্তত দুই বা তিনটি কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন কামাল্যান যেটি ব্যক্তির মন ভালো করতে সহায়ক হয়। উদাহরণস্বরুপ তিনি বিছানা গোছানোর কথা বলেছেন। কারণ অগোছালো পরিবেশ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, আর সকালে প্রথম যে কাজটা করা হয় সেটি ভালো অনুভব করার জন্য ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত করে।
এরপর এক গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রাতভর ঘুমশেষে শরীর কিছুটা শুষ্ক (ডিহাইড্রেট) হয়ে যায়, তাই পানি প্রয়োজন। পাশাপাশি নাস্তা না করা পর্যন্ত কফি জাতীয় কিছু না খাওয়ার জন্য বলেছেন কামাল্যান।
এছাড়া ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাকৃতিক আলোতে কিছুটা হাঁটার পরামর্শ দেন তিনি। এমনকি মেঘলা আবহাওয়া হলেও এই হাঁটা সার্কাডিয়ান রিদমের জন্য ফলপ্রসূ বলে জানান এই চিকিৎসক।
কামাল্যান বলেন, সারাদিন ভালোভাবে চলার জন্য, ‘ঠিকঠাকভাবে নিজের কাজ করার জন্য এই অভ্যাসগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
২২৬ দিন আগে
শিশুদের পেটের মেদ কমাতে কী করবেন?
পেটের মেদ বা ভুড়ি নিয়ে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন থাকেন না এমনটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরিণত বয়সের সচেতন সবাই এটি নিয়ন্ত্রণে বেশ চেষ্টা করেন—নিয়ন্ত্রণ করেন খাদ্যাভাস, করেন নানারকম ব্যায়াম বা শরীরচর্চা।
তবে এটি যে শুধু পরিণতদের জন্য জরুরি, তা কিন্তু নয়—শিশুদের জন্যও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিশুদের পেটের চর্বি কমাতেও সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। শিশুদের খাদ্যাভাস কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কীভাবে শরীরচর্চা করে চর্বি কমানো যায়, আজ সে বিষয়ে গবেষকদের মতামত তুলে ধরব।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা বলছেন, শিশুদের পেটের অতিরিক্ত মেদ কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো একটি মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করা। শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চ বা ব্যায়াম হলো এই মিশ্র পদ্ধতি।
আরও পড়ুন: কতটুকু ঘুম দরকার সুস্থ মানুষের?
শনিবার (১২ এপ্রিল) প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের সমন্বয় শিশুর স্থূলতা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৮ হাজার ১০০টির বেশি শিশুর ওপর পরিচালিত ৩৪টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
চার্লস স্টার্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, পেট এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর চারপাশে জমা হওয়া চর্বি সাধারণ স্থূলতার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। কারণ এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী।
জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, কোমরের আকার কমাতে শুধু খাদ্যাভ্যাস, শুধু ব্যায়াম, সম্পূরক বা ওষুধের মতো স্বতন্ত্র কৌশলগুলোতে উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখা যায়নি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, সবচেয়ে সফল কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরীয়-ধাঁচের বা কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং সপ্তাহে ১৫০ মিনিট পর্যন্ত শারীরিক ব্যায়াম বা কার্যক্রম পরিচালনা করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী শৈশবকালীন স্থূলতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে সারা বিশ্বে আনুমানিক ৯ কোটি ৪০ লাখ মেয়ে এবং ৬ কোটি ৫০ লাখ ছেলেকে প্রভাবিত করেছিল। তাই এই সংখ্যানুপাতিক ফলাফল জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, উদ্ভুত এই সমস্যাগুলোর সমাধানে সরকার, স্কুল এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আর এমন উদ্যোগ নিলে এর ফলাফলগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে অপুষ্টি দূরীকরণ এবং অসংক্রামক রোগে মৃত্যু হ্রাস করার বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলোকে পূরণে সহায়তা করবে।
২৩৫ দিন আগে
কতটুকু ঘুম দরকার সুস্থ মানুষের?
ধরুন ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১২টা বাজছে, আপনি হয়তো তখন এই খবরটি পড়ছেন। এর মানে আপনি গত রাতে ঘুমিয়েছিলেন, তাই এখন জেগে রয়েছেন। আচ্ছা জেগে তো রয়েছেন, আপনি কি নিজেকে সজীব-সতেজ অনুভব করছেন? প্রতিদিনের কাজে নিজেকে প্রাণবন্ত অনুভব করছেন?
একজন মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর তার ঠিকঠাক বিশ্রাম অনুভব হচ্ছে কিনা, তার শরীরের অবসাদ বা ক্লান্তি ঘুমানোর পর কেটেছে কিনা; এই প্রশ্নটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য পরিমাণ মতো ঘুমানোর পাশাপাশি ঘুম পরিপূর্ণ হওয়াও জরুরি—বলেছেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা।
বেশিরভাগ মানুষ তার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ঘুমের জন্য ব্যয় করেন। তবে প্রতিরাতে আট ঘণ্টার বেশি বা কম ঘুমালেই সেটি যথেষ্ট। আবার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণেরও পরিবর্তন ঘটে।-খবর এপির
সাধারণত শিশু ও কিশোরদের তুলনামূলক বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ৬৫ বা তার বেশি বয়সী মানুষ ৭ থেকে ৯ ঘন্টা বা এরচেয়ে কিছুটা কম ঘুমালেও চলে।
তবে সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের কতটুকু ঘুমানো দরকার, এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ কোনো ভেদাভেদ রয়েছে কিনা; এই প্রশ্নও কিন্তু অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক, এ বিষয়ে ঘুম বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা বিজ্ঞানীরা কি বলেন।
আরও পড়ুন: রমজানে রোজা রাখার প্রস্তুতি: দেহ ও মনকে সুস্থ রাখতে করণীয়
বেশি ঘুমানোর থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘুম ভালো হওয়া
ঘুম যেন আস্ত একটি রহস্যের জগৎ। কত শত রহস্য যে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই, এই নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষেণাও হয়েছে অনেক। কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলেছে, কিছু অজানা। তবে সে যাই হোক, ঠিকঠাক ঘুম হওয়া মানুষের শরীরের সুস্থতার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় একটি জিনিস।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. রাফায়েল পেলায়ো বলেন, ‘আমরা কেন ঘুমাই, এটার কোনো নির্দিষ্ট কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ঘুম আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন, তাই আমরা প্রতিদিন ঘুমাই।’
তিনি বলেন, ‘ঘুমের সময় অসাধারণ কিছু ঘটে। ঘুম হলো মানুষের নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার সবচেয়ে স্বাভাবিক একটি পন্থা।’
জন হপকিংস হাসপাতালের ঘুম বিষয়ক চিকিৎসক মলি অ্যাটউড বলেন, ‘একজন ব্যক্তি দৈনিক সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমালে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকে। আবার ছয় ঘণ্টার কম বা নয় ঘন্টার বেশি ঘুমালে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যদিও সব মানুষের শারীরিক অবস্থা একরকম নয়।
বিহেভিয়ারাল স্লিপ মেডিসিন নিয়ে কাজ করেন এই গবেষক। মানে ঘুমের সমস্যা, ঘুম-সংক্রান্ত বিভিন্ন লক্ষণ ও অনিদ্রার চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তিনি।
তবে সাত কিংবা নয় ঘণ্টা ঘুমালেই হবে না, ঘুম ভালো হওয়াটা দরকারি বলে মত দিয়েছেন ড. রাফায়েল। তিনি বলেন, ‘আপনি কত ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন, তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ঘুম থেকে উঠে আপনি সতেজ বোধ করছেন কি না।’
আরও পড়ুন: ঠান্ডা না গরম পানি পান করবেন?
অনেকক্ষণ ঘুমানোর পরেও যদি কেউ শরীরে ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তির ঘুমে কোনো সমস্যা থাকতে পারে বলে ড. রাফায়েলের ধারণা।
তিনি বলেন, ‘প্রিয় খাবারের দোকানে গিয়ে কারও ক্ষুধার্ত হয়ে বের হতে নেই।’ অর্থাৎ একজন মানুষ ঘুমালেন কিন্তু তার শরীরে ক্লান্তি থেকে যাওয়াটা একদমই উচিত নয় বলে মত দিয়েছেন ড. রাফায়েল।
বয়সের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণে পরিবর্তন
ঘুম প্রতিটি মানুষের জন্যই প্রয়োজন। তবে পরিমাণে তারতম্য রয়েছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের প্রয়োজনীয়তায় পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন, নবজাতক শিশুর সবচেয়ে বেশি ঘুম প্রয়োজন—প্রায় ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা।
মলি বলেন, ‘শিশু ও কিশোরদের বেশি ঘুম দরকার। কারণ এ বয়সে তাদের খুব দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে থাকে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ২৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ৬৫ বা তার বেশি বয়সীদের কিছুটা কম (সাত ঘণ্টার কাছাকাছি), আর ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের সাত ঘণ্টার সামান্য বেশি ঘুম দরকার।
মানুষের ঘুম প্রায় প্রতি ৯০ মিনিটে একটি চক্রে আবর্তিত হয় বলে জানান মলি। তিনি বলেন, রাতের প্রথম ভাগে ঘুম চক্রে গভীর ঘুমের অংশ বেশি থাকে, এটি শরীরের সেরে ওঠা ও সতেজ করে তোলার জন্য অপরিহার্য। এই সময়েই শরীর থেকে ‘গ্রোথ হরমোন’ নিঃসৃত হয় বলে জানান তিনি। এই হরমোনটি মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও উচ্চতার জন্য প্রয়োজন। হাড়ের গঠন, পেশির বিকাশে এর অবদান রয়েছে।
রাতের শেষভাগের ঘুমে মানুষ সাধারণত স্বপ্ন দেখে থাকে। মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য এই ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ঘুম বিশেষজ্ঞ মলি। তিনি বলেন, শিশুরা অর্ধেক সময়ই গভীর ঘুমে থাকেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পরিমাণ কমতে থাকে।
ঘুমে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য রয়েছে কিনা
গবেষণাতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও গড়ে পুরুষদের তুলনায় নারীরা কিছুটা বেশি ঘুমান বলে মনে করেন মলি অ্যাটউড।
এই পার্থক্য ছোটবেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় উল্লেখ করে ড. রাফায়েল বলেন, ‘কিশোরদের তুলনায় কিশোরীরা সাধারণত কম ঘুমান। এমনকি কিছু কিছু কিশোরীকে অনিদ্রা নিয়ে অভিযোগ করতেও শোনা যায়।’
ইউসি বার্কলির ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট ও ঘুম গবেষক অ্যালিসন হার্ভে বলেন, প্রথমবার মা হওয়ার পরে রাতে বাচ্চার দায়িত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়েদের ওপর পড়ে, এতে তাদের ঘুম কম হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থা ও মেনোপজের সময় হরমোনের প্রভাবেও নারীদের ঘুমের পরিমাণ ও গুণগত মান পরিবর্তিত হতে পারে।
মায়ো ক্লিনিকের স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ডা. মিথরি জুনা বলেন, ‘মেনোপজের সময় বিশেষভাবে নারীদের ঘুমের মান কমে যায়। এসময় রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। এতে ঘুমের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়।’
মলি বলেন, মাসিক চক্র শুরু হওয়ার ঠিক আগে নারীদের কিছুটা বেশি ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মানুষের শরীর জানান দেয়, যে তার আরও কিছুটা ঘুম প্রয়োজন। এটি সবার গ্রাহ্য করা উচিত।’
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। ঠিকঠাক ঘুম না হলে মানুষের শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়, মেজাজে বিরক্তি আসে, অমনোযোগী হয়ে ওঠেন তারা। দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যাগুলো মারাত্বক হয়ে উঠতে পারে, এমনকি প্রাণঘাতিও হয়ে উঠতে পারে।
মলি জানান, যদি কোনো ব্যক্তির পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, অনিদ্রা বা স্লিপ এপনিয়া(ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, যাতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে) সমস্যা থাকলে, ঠিকঠাকভাবে চিকিৎসা না করানো হলে, তা হতাশা বাড়িয়ে দিতে পারে।
শুধু তাই নয়, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো হৃদরোগজনিত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ভিড়যুক্ত শপিংমল ও গণপরিবহনে করোনা সংক্রমণ: সাবধানতায় করণীয়
মলি বলেন, ‘ঘুমের ঘাটতি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, এমনটি অ্যালজাইমারস রোগেরও শিকার হতে পারেন কেউ কেউ।’
অ্যালজাইমারস এক ধরনের স্নায়বিক রোগ, এতে মানুষ ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হারাতে থাকেন। রোগটি অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়, এমনকি রোগীরে মৃত্যুও হতে পারে।
ঘুম নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হলে তা অবহেলা না করতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিনিয়ত ঘুমে সমস্যা হলে প্রাথমিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন মলি। এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, ঘুম বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
২৫৩ দিন আগে
ভিড়যুক্ত শপিংমল ও গণপরিবহনে করোনা সংক্রমণ: সাবধানতায় করণীয়
জাতিসংঘের হিউম্যানিটারিয়ান ইনফরমেশন সার্ভিস রিলিফওয়েব অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পুরো ঢাকা জুড়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ছিলো ৩২টি। এদের মধ্যে কারোরই মৃত্যু হয়নি। বরং পূর্বের ও জানুয়ারির এই রেকর্ড থেকে মোট আরোগ্য লাভের সংখ্যা দাড়িয়েছিলো ৭২-এ। মোটা দাগে সংক্রমণের এই অনুপাত নিম্নগামী, তবে এখনও তা একদম শূন্যের কোঠায় চলে যাইনি। সুতরাং করোনাকালীন সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো এখনও বজায় রাখা জরুরি। বিশেষ করে শপিংমল ও গণপরিবহনের মতো ভিড়যুক্ত স্থানগুলোতে সাবধানতা অবলম্বন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ এবং তা প্রতিরোধে করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
করোনা সংক্রমণের লক্ষণ
কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২ থেকে ১৪ দিন পরে দৃশ্যমান হতে শুরু করে উপসর্গগুলো। প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো নিতান্তই হাল্কা ভাবে দেখা দেয়। অবশ্য কারও কারও ক্ষেত্রে শুরুতেই গুরুতর আকার ধারণ করে।
কোভিডের নতুন ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলোতে বেশ পরিবর্তন দেখা যায়। মূলত টিকা দেওয়ার অবস্থার উপর নির্ভর করে এই পরিবর্তন হয়।
আরো পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
অধিকাংশ কেসগুলোতে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সেগুলো হলো-
জ্বর বা ঠান্ডা লাগা, কফ, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যাথা, সর্দি, স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি কমে আসা, প্রচন্ড ক্লান্তি, পেশী বা শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, এবং ডায়রিয়া।
ভিড়যুক্ত শপিংমলে ও গণপরিবহনে করোনা থেকে বাঁচতে করণীয়
.
মান সম্পন্ন মাস্ক পরিধান করা
করোনা ভাইরাস প্রবেশের জন্য মানবদেহের প্রধান অঙ্গগুলো হলো মুখ ও নাক। তাই মাস্ক পরিধানের মতো পুরনো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার কোনও বিকল্প নেই। শপিংমলে কেনাকাটার সময় বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, নানা ধরণের কাপড়-চোপড় ধরে দেখতে হয়। এমনকি এ যাবতীয় কার্যক্রম চলে অত্যন্ত ভিড়ের মধ্যে থেকে।
এছাড়া দেশের জনসাধারণের সবচেয়ে বড় অংশটিই যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনের উপর নির্ভর করেন। ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করায় এই যানবাহনগুলোতে অনিয়ন্ত্রিত ভিড় একদমি নতুন নয়। শিশু থেকে শুরু করে নারী ও বৃদ্ধ সকলেই এই ভিড়ের মধ্যেই কাটিয়ে দিচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা।
আরো পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
এই অপরিষ্কার জায়গাগুলোতে যে কোনও জীবাণু থেকে নিরাপদে থাকতে ভালো মানের মাস্ক পরা জরুরি। মুখ এবং নাক সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখে এমন সার্জিক্যাল মাস্ক ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর। একাধিকবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক ব্যবহার করলে তা নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। একই সাথে মাস্ক পরে থাকার সময় এটি বারবার স্পর্শ না করা এবং প্রয়োজন ছাড়া মুখ থেকে সরানো উচিত নয়।
হাত নিয়মিত স্যানিটাইজ করা
করোনাকালীন সময়গুলোতে হাত ধোয়াটা রীতিমত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। এই অভ্যাসটিই আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে, গণপরিবহনে ওঠা-নামার পর, এবং শপিংমলে প্রবেশের পর হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত। বাসায় সাবান-পানি ও ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করা জরুরি। আর বাইরে সার্বক্ষণিক একটি পকেট স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখতে হবে। বড়দের পাশাপাশি বাচ্চা ও বয়স্কদের পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর রাখা জরুরি। ঘরে ঢোকার পর, স্কুলে ও অন্যত্রে চলতে ফিরতে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাদেরকে সাহায্য করতে হবে।
অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলা
সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য ভিড় এড়ানো অত্যাবশ্যক। ঈদের মতো বিভিন্ন উপলক্ষগুলোতে নামকড়া দোকানগুলোতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হয় কাজে যেতে বা কাজ শেষে বাড়ি ফেরার জন্য যানবাহনে ওঠার সময়।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা ভেবে এই প্রবণতা থেকে সর্বদা দূরে থাকা উচিত। কেনাকাটার ক্ষেত্রে কখনোই অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়া যাবে না। যাতায়াতের জন্য একটু আগে ঘর থেকে বেরতে হবে।
আরো পড়ুন: নিরাপদে স্ট্রিট ফুড খাওয়ার ১০টি উপায়
বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে পারতপক্ষে বেশি ভিড়যুক্ত পরিবহন এড়িয়ে চলা উত্তম। অপেক্ষা করে তুলনামূলক ফাঁকা যানবাহনে উঠা যেতে পারে। বাসা ও কাজের জায়গা খুব বেশি দূরে না হলে পায়ে হেটে যাওয়া-আসা করা উপযুক্ত।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা
করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়েভের সময়ের মতো প্রতিটি ভবনেই সামাজিক দূরত্ব বজায়কে পুনঃবাস্তবায়ন করা দরকার। শপিংমলে কেনাকাটার বা গণপরিবহনের লাইনে সবক্ষেত্রে প্রত্যেকের মধ্যে কমপক্ষে ৩ ফুট (১ মিটার) দূরত্ব রাখা বাঞ্ছনীয়। এটি সম্ভব না হলে নিদেনপক্ষে গায়ে গা লেগে যায় এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে হবে।
বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের অবস্থানের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখা উচিত। বড় বড় শপিংমলগুলোতে লিফ্টের পরিবর্তে উপরে উঠার জন্য সিঁড়ি বেছে নিতে হবে।
গণপরিবহনে দরজার কাছে জটলা করা যাবে না। দুই সারি সিটের মাঝের চলাচলের জায়গাটিতে এক স্থানে ভিড় না করে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাড়ানো উচিত।
আরো পড়ুন: বাসা-বাড়ির রান্নায় সিলিন্ডার গ্যাসের খরচ কমাবেন যেভাবে
ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা
রাস্তাঘাটে ও বিভিন্ন ভবনে চলাফেরার সময় সর্বাধিক ব্যবহৃত উন্মুক্ত পৃষ্ঠগুলো ভাইরাস ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত। যেমন- প্রবেশ দরজার হাতল, চলন্ত সিঁড়ির রেলিং, লিফ্টের বোতাম, গণপরিবহনে সিলিং-এর হাতল ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহারের জন্য সাথে সার্বক্ষণিক টিস্যু রাখা যেতে পারে।
শিশুরা যেন এরকম কিছু না ধরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বয়স্করা গ্লাভ্স বা টিস্যু ব্যবহার করতে পারেন। যে জায়গাগুলোতে ঘন ঘন এরকম পৃষ্ঠের সংস্পর্শে যেতে হয়, সেখানে উৎকৃষ্ট হচ্ছে পকেট স্যানিটাইজার। এছাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে (যেমন দরজা) অনেকে কনুই বা কাঁধ ব্যবহার করে থাকেন।
লেনদেনে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা
নগদ টাকা লেনদেনে হাতের স্পর্শ থাকে বিধায় এখানে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। নগদবিহীন বা ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতিগুলো এক্ষেত্রে সেরা ও নিরাপদ বিকল্প। এখন ছোট থেকে বড় প্রায় সব ধরণের দোকানগুলো মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট বা কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা রাখে।
যাতায়াতের ক্ষেত্রে এ ধরণের লেনদেনের জন্য রাইড শেয়ার পরিষেবাগুলোই একমাত্র অবলম্বন। কেননা দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থায় এখনও এই সুবিধা সংযুক্ত করা হয়নি।
আরো পড়ুন: পবিত্র রমজান ২০২৫-এ ইফতারের জন্য ঢাকার সেরা ১০টি রেস্টুরেন্ট
পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল আছে এমন জায়গা বেছে নেওয়া
অতিরিক্ত লোকসমাগমের জায়গাটি যদি বদ্ধ হয় তাহলে তা এমনিতেই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। এমন পরিবেশ শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর। তাই গণপরিবহন বা শপিংমল যেখানেই থাকা হোক না কেন, যতটা সম্ভব উন্মুক্ত বায়ুপ্রবাহের দিকে সরে যাওয়া উচিত।
শপিংমলে লিফ্টে লোকসংখ্যা বেশি হয়ে গেলে বের হয়ে এসে সিঁড়ি ব্যবহার করা উত্তম। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে জানালার দিকের সিটে বসে জানালা খুলে দেওয়া যায়।
বয়স্ক ও শিশুদের জন্য পৃথক জায়গার ব্যবস্থা রাখার ক্ষেত্রে ঠিক এমন স্থানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বদ্ধ, গরম, ও বাতাসবিহীন স্থানে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যথাসম্ভব ঘরের বাইরে বের হওয়ার বিকল্প পন্থা অবলম্বন করা
করোনা পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করেছে অনলাইন যোগাযোগ এবং রিমোট জব। এতে অধিকাংশ প্রয়োজনীয় কাজগুলো ঘরে থেকেই করে ফেলা সম্ভব হয়। তাছাড়া কেনাকাটা ও বিনোদন সবকিছুই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাথে। এই জীবনধারা যে কোনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুগান্তকারি এক প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
আরো পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
তাই প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজের জন্য বাইরে না বেরিয়ে আগে ভাবা উচিত যে তা ঘরে থেকেই করা সম্ভব কিনা। গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এর জন্য মোবাইল থেকে শুরু করে ভিডিও কলিং-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। এগুলো এখন আর আগের মতো দুষ্প্রাপ্য নয়।
এই প্রবণতা যে শুধু ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে তা নয়। সময় বাঁচিয়ে কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্যও এটি যথেষ্ট উপযোগী।
পরিবহন ব্যবহারে অগ্রিম বুকিংকে অগ্রাধিকার দেওয়া
গণপরিবহনের জন্য দীর্ঘ লাইনে ভিড়ের মধ্যে দাড়িয়ে থাকা বিপুল সময় নষ্ট করে। একই সাথে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার জন্যও তৈরি করে সহায়ক পরিবেশ। চলন্ত বাসের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে লাফিয়ে পাদানি উঠে পড়া এখন হরহামেশাই দেখা যায়। কোনও রকম সামাজিক দূরত্বের কথা না ভেবে প্রতিদিনি এমন ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে চলেছেন হাজার হাজার যাত্রী।
কিন্তু সময় ও অর্থ সবকিছুর চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই যে কোনও মূল্যেই এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে অগ্রিম যানবাহন বুক করা দরকার। দূর পাল্লার যানবাহনগুলোতে অগ্রিম সিট বুকিং বিষয়টি স্বাভাবিক। কিন্তু শহরের ভেতরের যাতায়াতের ক্ষেত্রে এমন সুযোগ শুধু রাইড শেয়ারিং সেবাগুলোতেই রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির দিক দিয়ে ভাবলে এই সেবাগুলো সব দিক থেকে নিরাপদ।
আরো পড়ুন: তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে: জানুন কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
ব্যক্তিগত ব্যবহারের উপকরণগুলো সর্বদা সঙ্গে রাখা
ফুটপাত, শপিংমল, ও যানবাহনে খাবার খাওয়ার জন্য শুধুমাত্র নিজস্ব জিনিসপত্রের উপর নির্ভর করা উচিত। দোকান বা হোটেলে যে গ্লাস, প্লেট, চামচ, ছুরি দেওয়া হয় তা এড়িয়ে চলাই ভালো। পানি পানের জন্য ব্যক্তিগত বোতল বা ফ্লাস্ক অনেকেই সঙ্গে রাখেন। এর পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবহার্য ছোট-খাট সামগ্রীও বাসা থেকে ভালভাবে ধুয়ে ব্যাগে ভরে নিতে হবে। সেই সাথে ঘরের বাইরে সর্বত্রে নিজের খাবার ও এই ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এটি অতীব জরুরি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তারা যে কোনও সংক্রমণের সহজ শিকারে পরিণত হয়।
শেষাংশ
ভিড়যুক্ত শপিংমল ও গণপরিবহনে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে উপরোক্ত সাবধানতাগুলোর কোনও বিকল্প নেই। করোনাকালীন সময়গুলোর মতো মাস্ক পরিধান, হাত নিয়মিত স্যানিটাইজ, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের স্থানে থাকা, এবং যথাসম্ভব ঘরে থাকাটা এখনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভিড় এড়িয়ে চলা, অযাচিত স্পর্শকাতর স্থানগুলো এড়িয়ে চলা, এবং ডিজিটাল লেনদেন হতে পারে সামাজিক দূরত্ব বজায়ের অনুকূল পদক্ষেপ। এগুলোর সাথে কার্যকরি সংযোজন হতে পারে অগ্রিম পরিবহন বুকিং এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র সর্বদা সাথে রাখা। সর্বসাকূল্যে, এই করণীয়গুলোর মাঝে নিহিত রয়েছে একটি সুরক্ষিত জীবনধারণে অভ্যস্ত হওয়ার রূপরেখা।
আরো পড়ুন: মরণঘাতী ড্রাগ ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ থেকে বাঁচতে করণীয়
২৫৪ দিন আগে