ইউরোপ
ইউক্রেন শান্তি চুক্তি যে আর দূরে নয়, তা নিশ্চিত: ক্রেমলিন
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। তবে সফল চুক্তিতে পৌঁছাতে আরও কাজ বাকি আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ক্রেমলিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান উশাকভ।
শান্তি চুক্তিতে পৌঁছার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পুতিন। তবে কোনো পক্ষই আলোচনার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি।
উশাকভ এই আলোচনাকে কার্যকর, গঠনমূলক ও বাস্তবসম্মত বলে অভিহিত করেছেন। সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনার পরিবর্তে শান্তি চুক্তির কাঠামো নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন বলে জানান তিনি।
শান্তি চুক্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পুতিনের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘সেটি যে আর দূরে নয়, তা নিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘তবে মস্কো ও ওয়াশিংটনে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। এ বিষয়ে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে এবং যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।’
১ দিন আগে
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা এগোলেও ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা জটিলতাই প্রধান অন্তরায়
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শান্তি উদ্যোগ জোরালো হওয়ার মাঝেই কূটনীতিকরা এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত প্রাথমিক শান্তি প্রস্তাবে দুটি মুখ্য বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে—ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া এবং কিয়েভের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা।
গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল। এবার রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে এ সপ্তাহেই ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা মস্কো সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গত মাসে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশের পর তা রাশিয়ার স্বার্থের অনুকূলে বলে কিয়েভ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দেয়। পরে গত সপ্তাহে জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের এক দফা আলোচনার পর পরিকল্পনায় সংশোধন আনা হয়।
এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, সংশোধিত পরিকল্পনাটি ‘কার্যকর করার মতো’। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে ভবিষ্যৎ শান্তি চুক্তির ‘সম্ভাব্য ভিত্তি’ বলে উল্লেখ করেন। আর গেল রবিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তিতে পৌঁছানোর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।’
তবে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে এখনও অনেক পথ বাকি বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। কারণ ইউক্রেন নিজেদের ভূমি ছাড়বে কিনা এবং ভবিষ্যতে তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে কতটা নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে—এমন মূখ্য কিছু বিষয় নিয়ে এখনও কোনো মীমাংসা হয়নি।
কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, এবার মস্কো
ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। ফ্লোরিডার হ্যাল্যারেন্ড বিচের শেল বে ক্লাবে স্থানীয় সময় রবিবার (৩০ নভেম্বর) ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলে ওই আলোচনা।
বৈঠকে ইউক্রেনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান রুস্তেম উমেরভ, সেনাপ্রধান অ্যান্ড্রি নাটভ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সান্দার বেভজসহ আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
বৈঠকের পর রুবিও জানান, ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে, তবে যুদ্ধের অবসানে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আরও অনেক কাজ বাকি। অপরদিকে, উমেরভ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রশংসা করলেও আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেননি।
এবার মস্কোর আলোচকদের সঙ্গে মার্কিন আলোচকরা বৈঠকে বসবেন।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে রাশিয়ায় পাঠাবেন। এব বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার নিশ্চিত করেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন।
এমনকি, এই চুক্তির আশানুরূপ অগ্রগতি হলে ট্রাম্প ভবিষ্যতে পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে বসতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
দুই পক্ষের কার কী অবস্থান
ট্রাম্পকে খুশি করতে কিয়েভ ও মস্কো উভয় পক্ষ থেকেই শান্তি পরিকল্পনার বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করেনি রাশিয়া। ফলে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানো যে এখনো অনেক দূরের বিষয়, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে পুতিন বলেন, তিনি তার লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল দখল করেছে, ইউক্রেন যদি সেখান থেকে তাদের সেনাবাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়, কেবল তখনই তিনি হামলা বন্ধ করবেন।
যদিও ওই অঞ্চলগুলোতে এখনও পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি রাশিয়া, তারপরও পুতিনের দাবি, ‘যদি তারা (ইউক্রেনীয় বাহিনী) না সরে, আমরা জোর করে তা আদায় করব, ব্যাস।’
এর মধ্যে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, এটি ‘ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি’ হতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত করতে হলে এ বিষয়ে ‘গুরুতর আলোচনা’ প্রয়োজন।
অন্যদিকে, জেলেনস্কি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কথা না বলে কেবল ট্রাম্পকে তার (শান্তি স্থাপন) প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি চান, এই প্রক্রিয়ায় ইউরোপের যুক্ত থাকুক, কারণ এতে ইউরোপের স্বার্থও সম্পৃক্ত। এ ছাড়া ইউক্রেনের স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের উপস্থাপিত পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়ায় রাশিয়ার কয়েকটি মূল দাবি মেনে নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, ইউক্রেন যেগুলোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে খারিজ করে দেয়। দাবিগুলো ছিল, ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া এখনও পুরোপুরি দখল করেনি, সেগুলোও রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে ইত্যাদি।
জেলেনস্কি বারবার বলেছেন যে ভূখণ্ড ত্যাগ করা কোনো বিকল্প হতে পারে না। গত বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে ইয়েরমাকও দ্য আটলান্টিককে বলেন, জেলেনস্কি ভূখণ্ড ছাড়ার শর্তে কোনো চুক্তিতে সই করবেন না।
জেলেনস্কির মতে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে সহজ পথ হলো দেশটিকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া। ন্যাটোর ৩২ সদস্য দেশও গত বছর বলেছিল যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোয় অন্তর্ভূক্তির বিকল্প নেই। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হবে না।
ওদিকে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পশ্চিমা শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে না দেওয়াই ছিল চলমান এই হামলা শুরুর মূল উদ্দেশ্য।
সময় পুতিনের পক্ষে
এদিকে, নিজ দেশেই সম্প্রতি রাজনৈতিক চাপে পড়েছেন জেলেনস্কি। ইয়েরমাকের পদত্যাগ জেলেনস্কির জন্য বড় ধাক্কা, যদিও দুজনের কারো বিরুদ্ধেই কোনো অনিয়মের অভিযোগ আনেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া চায় ইউক্রেন ভুল করুক। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। আমাদের কাজ চলমান, আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। একে শেষ পর্যন্ত না নিয়ে যাওয়ার অধিকার আমাদের নেই।
ইয়েরমাকের পদত্যাগে সাময়িক চাপে পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ইউক্রেনের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করেন দেশটির বেসরকারি দুর্নীতি দমন কেন্দ্রের অ্যাক্টিভিস্ট ভ্যালেরিয়া রাডচেঙ্কো। তার মতে, এর ফলে সরকারের মধ্যে একটি ‘সংস্কারের সুযোগ’ তৈরি হবে।
তবে, এর মধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে তা নিয়ে গর্ব করছেন পুতিন। এ বিষয়ে কার্নেগি রাশিয়া ও ইউরেশিয়া সেন্টারের তাতিয়ানা স্তানোভায়া এক্স-এ লিখেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের ময়দানে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। তিনি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাই তিনি (পুতিন) কিয়েভের পরাজয় মেনে নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় বাধ্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
স্তানোভায়া বলেছেন, ‘আমেরিকা যদি সমস্যা সমাধানের এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতা করে, তাহলে ভালো। আর যদি না করে, সেক্ষেত্রে তিনি (পুতিন) জানেন কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এটিই হচ্ছে ক্রেমলিনের বর্তমান যুক্তি।’
ধাঁধায় ইউরোপ
ইউক্রেন ইস্যুতে এ সপ্তাহে বেশ কিছু বৈঠক করছে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সোমবার প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি। অন্যদিকে, ব্রাসেলসে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেনিস শ্মিহালের সঙ্গে বৈঠক করছেন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। একইসঙ্গে সামরিক সহায়তা ও নিজেদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ ইউক্রেনের আলোচনা করছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আবারও ব্রাসেলসে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন।
ইইউয়ের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, বেলজিয়ামে জব্দ করা রুশ সম্পদের কী হবে? ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়ায় অবশ্য এগুলো যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েন এসব তহবিল ইউক্রেনকে সাহায্য করতে ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপরও চাপ বজায় রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু খোদ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী জব্দ করা এই সম্পদ ইউক্রেনের জন্য ব্যবহারের পক্ষে নন। এর আইনি বৈধতা, ইইউয়ের ওপর প্রভাব এবং রাশিয়ার প্রতিশোধের বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নাইজেল গোল্ড-ডেভিস বলেছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ফলে যে নতুন কূটনীতি শুরু হয়েছে, তা ইউরোপের দুর্বলতাকে ‘নিদারুণভাবে’ উন্মোচিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তাকারী হিসেবে উল্লেখ করে গোল্ড-ডেভিস বলেন, (ইউক্রেন) যুদ্ধ কূটনীতিতে প্রায় উপেক্ষিত। খসড়া প্রস্তাবে কিছু সংশোধন ছাড়া কিছুই করতে পারেনি তারা।’
২ দিন আগে
রাশিয়ায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ, ক্ষুব্ধ জনগণ
রাশিয়ায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দৈনন্দিন কাজে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দেশটির নাগরিকেরা। গণপরিবহনের ভাড়া দেওয়া থেকে শুরু করে অসুস্থ শিশুদেরও কর্মক্ষেত্র থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারছে না তাদের বাবা-মায়েরা।
দেশটির সরকারের দাবি, ইন্টারনেটের এই শাটডাউন ইউক্রেনের ড্রোন হামলা থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাটডাউনের এই পদ্ধতি ড্রোন আক্রমণ কমাতে পারে না।
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের চলাকালে সরকার অনুমোদিত কিছু তালিকাভুক্ত ওয়েবসাইটে কেবল প্রবেশ করা যাচ্ছে। এর ফলে জনগণের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল স্বাধীনতা হারানোর ব্যাপারে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
নতুন এই বিধিনিষেধের কারণে বিদেশি ও অব্যবহৃত সিম কার্ড বন্ধ করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির মতো জরুরি পরিষেবার মিটার ও গাড়িসহ বিভিন্ন ডিভাইস, যেগুলো মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল, সেগুলো চালাতে সমস্যা হচ্ছে।
বার্তা আদানপ্রদানের জনপ্রিয় অ্যাপ টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ চালাতেও সমস্যা হচ্ছে। এর পরিবর্তে রাশিয়ার নিজস্ব বার্তা আদানপ্রদানের অ্যাপ ‘ম্যাক্স’ ব্যবহারে উৎসাহিত করছে সরকার, যাকে ব্যক্তি-নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য শেয়ার করতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
রাষ্ট্র-আরোপিত এই বাধাকে উপেক্ষা করে অনেকে অবশ্য ভিপিএন ব্যবহার করে ইন্টারনেট চালাচ্ছেন। তবে তাদেরও নিয়মিতভাবে ব্লক করে দিচ্ছে সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে সরকার জনগণকে রাষ্ট্র অনুমোদিত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আসতে পারে।
১১ দিন আগে
ইউক্রেনে ৫ শতাধিক ড্রোন ও মিসাইল ছুড়েছে রাশিয়া
ইউক্রেনে পাঁচ শতাধিক ড্রোন ও অন্তত দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। কিয়েভের বেসামরিক অবকাঠামো, বিশেষত জ্বালানি স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে মস্কো এসব হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে জেলেনস্কি প্রশাসন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদারের চলমান তৎপরতার মধ্যেই এ হামলা চালাল মস্কো।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতভর এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় এসব হামলা চালানো হয়েছে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা।
গত কয়েক মাস ধরেই আকাশপথে হামলা ও সম্মুখসারির ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ভাঙার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে যুদ্ধ বন্ধের তৎপরতা চালালেও পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় জেলেনস্কি সম্মতি জানালেও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এদিকে বেইজিং সম্মেলনে গিয়ে পুতিন বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, টানেলের শেষে একটুখানি আলো আছে। দেখা যাক পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়।’
এ সংঘাত সমাধানে ‘কমন সেন্সের’ প্রাধান্য থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তা ছাড়া সমাধান খুঁজতে ট্রাম্পেরও আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পুতিন জানান, তিনি জেলেনস্কিকে মস্কোয় আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে রাজি আছেন, তবে বৈঠকটি ‘ভালোভাবে প্রস্তুত’ হতে হবে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
যদিও ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছেন, যেকোনো শীর্ষ সম্মেলন কেবল তখনই সম্ভব, যখন নিম্নপর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিক চুক্তি চূড়ান্ত হবে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার এ হামলাকে পুতিনের ‘দায়মুক্তি দেখানো’ বলে অভিহিত করেছেন জেলেনস্কি। যুদ্ধ অর্থনীতির ওপর বেশি চাপ না থাকার কারণেই পুতিন এ আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ফোনালাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
বেইজিং বৈঠকে রাশিয়ার সমর্থকরা
সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজে অংশ নিতে বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন পুতিন। সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ছাড়া কুচকাওয়াজে যোগ দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন।
এই তিন নেতাই ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন করছেন বলে অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন। তাদের দাবি, উত্তর কোরিয়া মস্কোকে সেনা ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে আর চীন-ভারত রুশ তেল কিনে রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে।
বুধবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সম্মেলনে ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাস বলেন, ইউক্রেনে হামলায় রাশিয়া একা নয়, চীনও আছে সঙ্গে। তারা মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। ফলে ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ইউক্রেন ও মিত্রদের নতুন সামরিক সহায়তার আলোচনা
রাশিয়া হামলার মাত্রা বাড়ানোর পর থেকে নিজদেশের প্রতিরক্ষা জোরদারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
নতুন সামরিক সহায়তা ও কূটনৈতিক সমর্থন পেতে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ডেনমার্ক সফর করেছেন জেলেনস্কি। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আনার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। প্রতি মাসে এ তহবিলে আরও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার যোগ করার লক্ষ্য রয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
এরপর যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে বুধবার ফ্রান্সে যান জেলেনস্কি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো তাকে প্যারিসে সমর্থন জানিয়েছেন।
শান্তি চুক্তি সই হওয়ার দিন থেকেই তারা ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলেও জানান মাঁখো। তবে রাশিয়া চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিকতা ও প্রতিশ্রুতি অটুট রাখবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে কিয়েভ সফর করেছেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি।
জেলেনস্কি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, রাশিয়ার কাছ থেকে এখনো আমরা যুদ্ধ শেষ করার কোনো ইঙ্গিত পাইনি। তা সত্ত্বেও ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে কিয়েভের ঐক্য কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, প্যারিস বৈঠকের পর স্পষ্ট হবে কে কী ধরনের সহায়তা দিতে পারবে।
৯১ দিন আগে
কেন জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসতে নারাজ পুতিন?
সম্প্রতি আলাস্কা সম্মেলনের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার পরবর্তী ধাপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হন।
তবে এ বিষয়ে ত্রেমলিনের জবাবের প্রতীক্ষায় ছিল সবাই। এরপর সোমবারের (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউসের বৈঠকের পর নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে মস্কো এবং তা ইউরোপ-আমেরিকার নেতাদের সঙ্গে মিলছে না।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্রেমলিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি পর্যায় উন্নতকরণের সুযোগের ধারণাটি আলোচনায় এসেছে। তবে কোন নেতা বা প্রতিনিধিকে সেই পর্যায়ে উন্নীত করা হতে পারে— এমন কোনো নাম তিনি উল্লেখ করেননি এবং সুস্পষ্ট করেও কিছু বলেননি।
এরপর মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আরেকটু সমঝোতার সুরে বলেন, দ্বিপক্ষীয় কিংবা ত্রিপক্ষীয় কোনো কাজই আমরা প্রত্যাখ্যান করছি না। তবে যেকোনো আলোচনায় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
পুতিনের আপত্তির কারণ কী হতে পারে?
এসব বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠকের বিষয়ে সম্মত হওয়ার মতো অবস্থানে পৌঁছায়নি ক্রেমলিন।
অবশ্য এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। কারণ এই যুদ্ধ একতরফাভাবে পুতিনই শুরু করেছিলেন। পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত ‘পিপলস রিপাবলিক’ দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেশটিতে হামলা শুরু করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
পুতিন এ-ও মনে করেন, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মিক জায়গা থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ইউক্রেনকে আলাদা করা ছিল ‘ঐতিহাসিক ভুল’।
চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া কর্মসূচির পরিচালক ওরিসিয়া লুতসেভিচ বলেন, যদি এই বৈঠক হয়, তাহলে পুতিনকে এই ব্যর্থতা মেনে নিতে হবে যে তিনি এমন এক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন, যাকে তিনি হাসির পাত্র বলে পরিহাস করেন এবং যে দেশের অস্তিত্বই তিনি স্বীকার করেন না।
তাছাড়া রাশিয়ার মানুষদেরও বোঝানো কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি। ওরিসিয়া বলেন, দিনের পর দিন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে রুশ নাগরিকদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে যে, জেলেনস্কি একজন নাৎসি, ইউক্রেন হলো পশ্চিমাদের হাতের পুতুল রাষ্ট্র… জেলেনস্কির সরকার অবৈধ। তাহলে হঠাৎ তিনি কেন তার সঙ্গে কথা বলতে যাবেন? ক্রেমলিন এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে— বৈঠক হলে সেটিই হয়ে উঠবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মস্কো যে শুধু জেলেনস্কি সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে চলেছে, তা-ই নয়। তারা দেশটির নির্বাচনের স্থগিতাবস্থা নিয়েও বারবার প্রশ্ন তুলেছে। যদিও সামরিক আইনের আওতায়ই ইউক্রেনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।
সর্বশেষ শান্তি আলোচনার প্রস্তাবে যেকোনো চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির আগে ইউক্রেনে নির্বাচনের দাবি করেছে মস্কো। এমনকি তারা জেলেনস্কির নামও মুখে নেন না, বলে কিয়েভ প্রশাসন।
একটু পেছনে ঘুরে তাকালে দেখা যাবে, এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি তুরস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে প্রথম সরাসরি আলোচনায় জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে এক ইতিহাসের বই লেখকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন পুতিন।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ফেলো এবং রাশিয়া বিষয়ক খবর ও বিশ্লেষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আর পলিটিকের প্রতিষ্ঠাতা তাতিয়ানা স্তানোভায়ার ভাষ্যে, আসলে ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না পুতিন। তার কাছে এই যুদ্ধ মূলত ইউক্রেনের সঙ্গে নয়, বরং পশ্চিমাদের মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে। তবে পুতিন যদি মনে করেন যে বৈঠক সফল হতে পারে, তাহলে আবার এতে রাজি হতেও পারেন।
তাতিয়ানা আরও মনে করেন, বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে সেখানে অবশ্যই মূল বিষয়গুলো আলোচনার জন্য থাকতে হবে। এর মধ্যে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ার মতো বিষয় রয়েছে। কিন্তু জেলেনস্কি শুরু থেকেই মস্কোর এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। আর এক্ষেত্রে ট্রাম্প পরিবর্তন আনতে পারেন বলে ধারণা পুতিনের।
আরও পড়ুন: ‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
তিনি বলেন, রাশিয়া যা চাইছে তা অর্জনে ট্রাম্প সহায়ক হতে পারে বলে মনে করে মস্কো। এ কারণে রুশ দাবিগুলো নিয়ে কিয়েভকে আরও নমনীয় ও খোলামেলা হতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তাতিয়ানা।
তার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রাখতে এবার হয়তো উশাকভের প্রস্তাব অনুযায়ী ইস্তানবুলে বৈঠকে বসতে রাজি হতে পারেন পুতিন। সেখানে প্রতিনিধি দলে উশাকভ ও ল্যাভরভকেও পাঠাতে পারেন প্রেসিডেন্ট। তবে জেলেনস্কির সঙ্গে এমন কোনো বৈঠকে বসবে না ত্রেমলিন, যেখানে তাদের সব দাবি প্রত্যাখ্যান করা হবে।
এদিকে, সোমবার রাতে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে এক বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
ওই পোস্ট দিয়ে তিনি ঘুমাতে গেলেন, আর উঠে বুঝতে পারলেন যে বিষয়টি এখনো চূড়ান্তই হয়নি। পরে সুর বদলে ফক্স নিউজে বলেন, আমি একভাবে পুতিন আর জেলেনস্কির মধ্যে সেট-আপটা করেছিলাম। তবে জানেনই তো, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তো তাদের! আমরা তো ৭ হাজার মাইল দূরে।’
কিন্তু কোনো ছাড় না দিয়েই পুতিন যখন আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সম্মানিত হয়েছেন, তখন বর্তমান পরিস্থিতিতে তার এই বৈঠকে রাজি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এমনকি আগস্টের শুরুর দিকে ইউক্রেনে ড্রোন হামলার মাত্রা সামান্য কমালেও সোমবার রাত থেকে আবার তা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে সোমবার রাতভর মোট ২৭০টি ড্রোন ও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে মস্কো।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জেলেনস্কির ওপর ট্রাম্পের চাপে যদি কাঙ্ক্ষিত ফল না পায় রাশিয়া, তাহলে তাদের সামরিক শক্তি তো আছেই।
তবে যে প্রশ্নের উত্তর আসলে কেউই জানে না, সেটি হলো— এই আলোচনা ব্যর্থ হলে এর দায় কার ঘাড়ে চাপাবেন ট্রাম্প?
১০৬ দিন আগে
‘দনবাস’ কেন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে
গত শুক্রবারের আলাস্কা সম্মেলনে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের প্রধান শর্ত হিসেবে পুরো দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চেয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে দনবাস অঞ্চল গঠিত। এটি পূব ইউক্রেনে অবস্থিত। এর মধ্যে লুহানস্ক প্রায় পুরোপুরি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক শহরসহ দোনেৎস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো এখনো ধরে রেখেছে ইউক্রেন। তাই ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অঞ্চল পুরোপুরি দাবি করেছেন পুতিন।
তবে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব বরাবরই প্রত্যাখান করে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার কাছে হস্তান্তরের বিরোধিতা করছেন দেশটির প্রায় ৭৫ শতাংশ নাগরিক। ফলে দনবাস অঞ্চলটি ঘিরেই শান্তি আলোচনায় একপ্রকার অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা করছেন বিষেশজ্ঞরা।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে মস্কোর প্রধান লক্ষ্যবস্তু। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে রুশ বাহিনী। পরে ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু পর অঞ্চলটির বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় রাশিয়া।
বর্তমানে দনবাসের ৪৬ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার বা ৮৮ শতাংশই রাশিয়ার দখলে। এর মধ্যে লুহানস্কের পুরোটাই এবং দোনেৎস্কের এক তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো। তবে দোনেৎস্কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর বেশিরভাগই এখনও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেন। এর জন্য অবশ্য চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে কিয়েভের। এই অঞ্চলের দখল ধরে রাখতে হাজার হাজার মানুষের জীবন গিয়েছে।
দনবাসের অবস্থান এবং কেন এটি চান পুতিন?
দনবাস আসলে দোনেৎস বেসিনের সংক্ষিপ্ত রূপ। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দনবাস মূলত কয়লা ও ভারী শিল্পে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের অনেক মানুষই রুশ ভাষায় কথা বলেন। সোভিয়েত ইউনিয়েনের সময়ে সেখানকার কয়লা খনি ও ইস্পাত কারখানাগুলো সোভিয়েতে শিল্পায়নের মূল চালিকাশক্তি ছিল।
সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পরও রাশিয়ার প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক আনুগত্য বজায় ছিল। তবে ২০১৪ সালে ক্ষমতাচ্যুত ক্রেমলিনপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার পর দনবাসে সংঘাত শুরু হয়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন দোনেৎস্ক ছেড়ে দিলে শান্তিচুক্তি সম্ভব: ট্রাম্প
এর পরপরই ক্রিমিয়া দখল করে মস্কো এবং পূর্ব ইউক্রেনজুড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। রুশ অস্ত্র ও যোদ্ধাদের সহায়তায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে স্বঘোষিত ‘পিপলস রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।
এই বিচ্ছন্নতাবাদীদের তৎপরতা দোনেৎস্কতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে। এরপর ২০১৯ সালে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে সংঘাতের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার নিয়ে প্রচার চালান বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি নিজেও রুশভাষী। এই নির্বাচনে দোনেৎস্কের মানুষই জেলেনস্কিকে নির্বাচিত করেন।
এরপর ২০২২ সালে দনবাসের অধিবাসীদের সুরক্ষা দেওয়ার অজুহাতেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেন পুতিন। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি দাবি করেছিলেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বঘোষিত ‘পিপলস রিপাবলিক’ তার কাছে সাহায্য চেয়েছে, কারণ কিয়েভ সেখানকার রুশভাষী অধিবাসীদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে।
তবে এটি নিছক একটি অজুহাত বলেই মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। কারণ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই এই অঞ্চল ছাড়িয়ে কিয়েভ অভিমুখে অগ্রসর হতে শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী। জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত করে পুরো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াই মস্কোর উদ্দেশ্য ছিল।
১০৭ দিন আগে
সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করলেন রুশনারা আলী
সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের গৃহহীনতা-বিষয়ক মন্ত্রী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনীতিক রুশনারা আলী। পুরোনো ভাড়াটিয়াকে সরিয়ে ব্যক্তিগত একটি সম্পত্তির ভাড়া রাতারাতি ৭০০ পাউন্ড বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিট তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় আবাসন-বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার কয়েক ঘণ্টা পর পদত্যাগের ঘোষণা দেন রুশনারা। বাড়িটি বিক্রি না হওয়ার পর বেশি দামে পুনরায় ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং ভাড়াটেদের উচ্ছেদের ঘোষিত কারণের মধ্যে বিরোধিতা নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তিনি চাপে ছিলেন।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। গত বছর লেবার পার্টি সরকার গঠনের পর গৃহায়ন, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হন তিনি।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ‘দ্য আই পেপার’ এর এক প্রতিবেদনে এই বিতর্ক শুরু হয়। তাতে বলা হয়, গত নভেম্বর মাসে রুশনারা আলীর পূর্ব লন্ডনের বাড়িটির ভাড়াটেদের জানানো হয়েছিল, তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি নবায়ন করা হবে না, কারণ বাড়িটি বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে। এরপরই ওই সম্পত্তিটি ভাড়া দিতে পুনরায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তবে আগের ভাড়ার চেয়ে মাসিক ৭০০ পাউন্ড বেশি চাওয়া হয়।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ভাড়াটেদের অধিকার-সংক্রান্ত এমন একটি আইন আগামী বছর কার্যকর হওয়ার কথা যেখানে সম্পত্তি বিক্রির জন্য ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করে পরে বেশি ভাড়ায় পুনরায় ভাড়া দেওয়া যাবে না। তাছাড়া নির্দিষ্ট মেয়াদে ভাড়ার চুক্তিও করা যাবে না।
আরও পড়ুন: অবশেষে পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক
রুশনারা আলীকে নিয়ে এই বিতর্কের পর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সমালোচনা করে কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান কেভিন হলিনরেক বলেন, তিনি ‘ভণ্ডামি ও স্বার্থসেবামূলক’ একটি সরকার পরিচালনা করছেন। রুশনারার পদত্যাগকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে রুশনারার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভাড়াটেরা তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি অনুযায়ী ছিলেন। সম্পত্তি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে থাকতে পারেন বলেও জানানো হয়েছিল, কিন্তু ভাড়াটেরা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি এবং সম্পত্তি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন
কিয়ের স্টারমারকে লেখা পদত্যাগপত্রে রুশনারা আলী লিখেছেন, তিনি সব আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছেন এবং গুরুত্ব সহকারে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি পদে থাকলে বিষয়টি সরকারের উচ্চাভিলাষী কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেবে। তাই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পদত্যাগের পর রুশনারার শ্রম ও নিবেদনের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। তার অনুপস্থিতি হাউজিং, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আশাপ্রকাশ করেন, রুশনারা আলী পেছন থেকে সরকারে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন এবং বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের জনগণের সেবা করে যাবেন।
এর আগে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এই ঘটনা সরকারি পদে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার তালিকায় আরেকটি সংযোজন।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে টিউলিপের চিঠি
২০১০ সালে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রুশনারা। গতবছরের নির্বাচনে তিনি টানা পঞ্চমবারের মত পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।
রুশনারার জন্ম ১৯৭৫ সালে সিলেটে। মাত্র সাত বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে চলে যান লন্ডনে।
বাংলাদেশে রুশনারার পৈতৃক নিবাস সিলেটের বিশ্বনাথের বুরকি গ্রামে। রাজনীতি, অর্থনীতি ও দর্শন পড়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। তিনি পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক।
১১৮ দিন আগে
রাশিয়ায় ৫০ বছর পুরোনো বিমান বিধ্বস্তে সব আরোহী নিহত
রাশিয়ায় ক্রু ও যাত্রীসহ ৪৮ আরোহীকে নিয়ে এএন-২৪ নামের ৫০ বছর পুরোনো বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সব আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দেশটির আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিমানে থাকা ৪৮ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন। তিনি ঘটনাটিকে একটি ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে আমুর অঞ্চলে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
দেশটির স্থানীয় জরুরি পরিষেবা মন্ত্রণালয় তথ্যনুযায়ী, গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির দূর প্রাচ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানে ৬ শিশুসহ ৪২ যাত্রী ও ৬ জন বিমান ক্র ছিলেন।
দুর্ঘটনার পর গভর্নরের দপ্তর থেকে ৪৯ জন আরোহীর থাকার কথা বলা হলেও পরে সেটি সংশোধন করে ৪৮ করা হয়। তবে সংখ্যাগত ভিন্নতার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি।
মন্ত্রণালয় জানায়, দূর প্রাচ্যের তিন্দা শহরের উদ্দেশে রওনা হওয়া বিমানটি রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর ধ্বংসাবশেষ একটি পাহাড়ি জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্ঘটনার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বিধ্বস্তের সময় ওই এলাকায় খারাপ আবহাওয়া বিরাজ করছিল।
প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো সোভিয়েত আমলের বিমানটি খাবারোভস্ক থেকে যাত্রা শুরু করে ব্লাগোভেশচেনস্কে পৌঁছে পরে তিন্দার দিকে যাচ্ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ছবিতে দেখা যায়, বিমানের ধ্বংসাবশেষ ঘন জঙ্গলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আছে এবং সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছিল।
দূরপ্রাচ্যের পরিবহন প্রসিকিউটরের অফিস জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলটি তিন্দা থেকে ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। একটি অনলাইন বিবৃতিতে অফিসটি জানিয়েছে, বিমানটি অবতরণের জন্য দুইবার চেষ্টা করে। দ্বিতীয়বার অবতরণের চেষ্টার পর এটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
পড়ুন: ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স: মাখোঁ
স্থানীয় জরুরি সেবা বিষয়কমন্ত্রী বলেন, সাইবেরিয়াভিত্তিক আনগারা নামের একটি এয়ারলাইন্স বিমানটি পরিচালনা করতো। বিমানটির নাম এএন-২৪।
‘উড়ন্ত ট্রাক্টর’ নামে পরিচিত এএন-২৪ বিমানগুলোকে রাশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব পুরোনো বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
নতুন লাদোগা বিমানের ব্যাপক উৎপাদন ২০২৭ সালের আগে শুরু হবে না বলে জানা গেছে। এই অবস্থায় রাশিয়ার গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে পরিবহনের জন্য এখনও পুরোনো ‘উড়ন্ত ট্রাক্টর’-এর ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
বিমানের বয়স ৫০!
রাশিয়ানপ্লেইনস নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, আনগারা এয়ারলাইন্স মূলত রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল ও সাইবেরিয়ার দুর্গম এলাকায় ফ্লাইট পরিচালনা করে। তারা বর্তমানে ১০টি এএন-২৪ বিমান পরিচালনা করে, যেগুলো ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে তৈরি।
সোভিয়েত আমলে মোট ১ হাজার ৩৪০টি এএন-২৪ তৈরি হয়। রাশিয়ানপ্লেইনসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এর মধ্যে ৮৮টি দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়েছে, ৬৫টি গুরুতর ঘটনার শিকার হয়েছে যাত্রী হতাহতের ঘটনা ছাড়াই এবং বর্তমানে মাত্র ৭৫টি বিমান চালু রয়েছে। বিমানগুলোর বয়স বহুদিন ধরেই উদ্বেগের বিষয়। ২০১১ সালে সাইবেরিয়ায় এক এএন-২৪ বিমান দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এই বিমানগুলো গ্রাউন্ড (পরিচালনা বন্ধ) করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।বর্তমান পরিস্থিতি এই বিমানের পরিচালনা ও ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
১৩২ দিন আগে
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেনের প্রতি লন্ডনের মেয়রের আহ্বান
ফিলিস্তিনকে অবিলম্বে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। যা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সাদিক খান গাজা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত মর্মান্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় বর্তমানে ক্ষুধার্ত শিশুরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খাবার খুঁজছে। এদিকে, খাবারের সন্ধানে বের হওয়া মানুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে ইসরায়েলি সেনারা।’
পোস্টে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—যার মধ্যে আমাদের সরকারও রয়েছে—ইসরায়েলি সরকারকে এই নৃশংস ও অযৌক্তিক হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে এবং জরুরি মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেওয়ার বিষয়ে আরও কঠোর চাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন ন্যাক্কারজনক হত্যাযজ্ঞ কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত করার সুযোগ নেই।’
লন্ডনের মেয়র বলেন, ‘যুক্তরাজ্যকে অবিলম্বে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যদি ফিলিস্তিন নামে কোনও রাষ্ট্রই না থাকে, তাহলে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কোনো ভিত্তি নেই।’
পড়ুন: ‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
সাদিক খানের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের নেতৃত্বে নিজ দল লেবার পার্টির ভেতর থেকেই চাপ বাড়ছে। দলটির একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে এবং বেসামরিক প্রাণহানি ঠেকাতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিংও একই সুরে বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। ইসরায়েল যে আত্মরক্ষার কথা বলে, সে বৈধ আত্মরক্ষার সীমা বহু আগেই ছাড়িয়ে গেছে।’
এদিকে, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, সেভ দ্য চিলড্রেন, অক্সফামসহ ১১১টি মানবিক সংস্থা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাস্ত্র’ ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘ক্ষুধার্ত বেসামরিক মানুষদের গুলি করে হত্যা করার দৃশ্য দেখে আমি হতভম্ব, বেদনায় ভারাক্রান্ত।’ সম্প্রতি তিনি জানান, যুক্তরাজ্য দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করবে।
১৩৩ দিন আগে
ক্রুসহ ৪৯ যাত্রী নিয়ে রুশ বিমান নিখোঁজ
রাশিয়ার সুদূর পূর্বাঞ্চলের আমুর এলাকা থেকে একটি যাত্রীবাহী বিমান নিখোঁজ হয়েছে। বিমানটিতে ছয়জন ক্রুসহ ৪৯ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। আঞ্চলিক গভর্নরের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
স্থানীয় জরুরি সেবা বিষয়কমন্ত্রী বলেন, সাইবেরিয়াভিত্তিক আনগারা নামের একটি এয়ারলাইন বিমানটি পরিচালন করতো। এটির নাম এএন-২৪। কিন্তু আমুরের তিয়ান্দা শহরের আসার সময় এটি রাডারের পর্দা থেকে হারিয়ে যায়।
চীনের সীমান্তবর্তী অঞ্চল আমুরের গভর্নর ভাসিলি অর্লভ বলেন, বিমানটিতে ৪৩ যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে পাঁচটি শিশুও রয়েছে। এছাড়াও ছয় ক্রু সদস্য ছিলেন আকাশযানটিতে।
পড়ুন: ‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, বিমানটির খোঁজে প্রয়োজনীয় সব বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। যন্ত্রপাতিও প্রস্তুত রয়েছে।
জরুরি সেবা বিভাগের বরাতে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, খাবারোভস্ক-ব্লাগোভেশচেনস্ক-তিয়ান্দা রুটে একটি এএন-২৪ যাত্রীবাহিনী বিমান উড়ছিল।
কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই নিরাপত্তা তল্লাশি অতিক্রম করতে এটি ব্যর্থ হয়েছে। বিমানটির সঙ্গে এখন কোনো যোগাযোগ নেই।
১৩৩ দিন আগে