ফেনী
ফেনীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস উল্টে পড়ল দোকানে, নিহত ৩
ফেনীর দাগনভূঞায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস উল্টে গিয়ে সড়কের পাশের দোকানে পড়েছে। এতে দুই নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সিলোনিয়া বাজারসংলগ্ন লাকি রোডের মুখে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন—ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার খুশিপুর এলাকার শহিদুল্লাহর স্ত্রী শামীম আরা বেগম (৫০) ও একই উপজেলার দক্ষিণ জয়লস্কর গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে মো. শ্রাবণ (২০)। নিহত অন্য নারীর এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, ফেনীর মহিপাল থেকে নোয়াখালীগামী সুগন্ধা পরিবহনের বাসটি সিলোনিয়া বাজারসংলগ্ন লাকি রোডের মুখে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা দেয়। পরে বাসটি উল্টে একটি দোকানের ভেতরে পড়ে।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র নিহত
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডা. শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহত একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত বেপরোয়া গতি ও বৃষ্টির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬৩ দিন আগে
ফেনীতে ট্রাকে বাসের ধাক্কায় নিহত ২
ফেনীতে একটি বালুভর্তি ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন হলেন বাসের সুপার সুপারভাইজার রবিউল (৩০)। অপরজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপোল হাফেজিয়া এলাকায় ঢাকামুখী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের লালপোল হাফেজিয়া এলাকায় বালুভর্তি একটি ট্রাক হঠাৎ ব্রেক কষলে বেপরোয়া গতির শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস তার পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে শ্যামলী পরিবহনের হেলপার ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ ছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় বাসের সুপারভাইজার ও চালককে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সুপারভাইজারেরও মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত চালককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ট্রাকচালক পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে বাস দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৫
মহিপাল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ট্রাকচালককে আটকের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও ট্রাক দ্রুত সড়ক থেকে অপসারণ করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৮৮ দিন আগে
ফেনীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৫
ফেনীর পরশুরামে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মঞ্চের সামনে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে দলটির দুপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পরশুরাম জিরো পয়েন্ট এলাকায় স্টেশন রোডে পরশুরাম উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে এই র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হালিম মানিক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালেবের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দলের নেতা ও পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় আধা ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আহতদের মধ্যে চিথলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইসমাইলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
পরশুরাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল হালিম মানিক জানান, গ্রাম ও ইউনিয়ন থেকে আগত নেতাকর্মীরা মঞ্চের সামনে আসতে চাইলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয় হবে বলেও জানান তিনি।
পড়ুন: হত্যার উদ্দেশ্যেই নুরকে আঘাত করা হয়: মির্জা ফখরুল
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালেব জানান, দলীয় কোনো পক্ষ নেই। মঞ্চের সামনে বসাকে কেন্দ্র করে যারা বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরশুরাম মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম জানান, বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও ফেনী ১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল আলম মজনু।
৯২ দিন আগে
অস্ট্রেলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ফেনীর শিক্ষার্থী নিহত
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় মো. আদিব ফারহান (২০) নামে এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রবিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় ভোর ৬টার দিকে নিউক্যাসল শহরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত আদিব ফারহান ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামের মোশাররফ হোসেনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তার পরিবার ঢাকার নাখালপাড়া এলাকায় বসবাস করছে। ছয় মাস আগে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যান তিনি।
পড়ুন: যশোরের মনিরামপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রী নিহত, আহত বাবা-মা
পরিবার সূত্রে জানা যায়, আদিব চার বন্ধুসহ ভোরে নাশতা করতে বেরিয়েছিলেন। পথে তাদের প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে আদিব ফারহানসহ সবাই গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক আদিবসহ দুই শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্য দুজনও চিকিৎসাধীন।
নিহতের চাচা আবুল হাসনাত বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদিব ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। তিনি এ লেভেল, ও লেভেল শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন। মাত্র দুই মাস আগে তিনি ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ছেলের মৃত্যুর খবরে মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন, বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
এ ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আদিবের লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
৯৫ দিন আগে
ফেনীতে নদীর করাল গ্রাসে বিদ্যালয় ভবন
ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার কাটাখালী নদীর ভাঙনে মাতুভূঞা ইউনিয়নের করিম উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিপাত ও নদীর তীব্র স্রোতে ধুয়ে গেছে ভবনের নিচের মাটি। এতে ভবনের উত্তর পাশের একটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে যেকোনো সময় ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ভবনটি।
এমনকি ভাঙন অব্যাহত থাকায় যেকোনো সময় পুরো ভবনটি নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের অংশ ভেঙে নদীর দিকে ঝুলছে এবং ভবনের পাশে লাগোয়া শহীদ মিনারের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টির কারণে নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা রহিম উল্যাহ চৌধুরীর দুই ছেলে তারেক মাহতাব রহিম ও জাবেদ সালাম রহিম তাদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে ২০১৬ সালে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করেন। ভবনটিতে সপ্তম শ্রেণির পাঠদান ছাড়াও নবম ও দশম শ্রেণির গ্রুপ বিষয়গুলোর পাঠদান, বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ও ছাত্রীদের জন্য নামাজ স্থান রয়েছে।
আরও পড়ুন: কাজ শেষ হওয়ার আগেই রংপুরে নদী তীর রক্ষা বাঁধে ধস
দশম শ্রেণির ছাত্র আদনান বিন আলম বলে, ওই ভবনে আমাদের দশম শ্রেণির গ্রুপ বিষয়গুলোর পাঠদান চলে। কখন পুরো ভবন নদীতে তলিয়ে যায়, তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। বিদ্যালয়ের এই ভবনটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
১০০ দিন আগে
ভারতে অনুপ্রবেশ করা ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ
অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা পাঁচ বাংলাদেশিকে ফেনী সীমান্তে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। কাজের সন্ধানে ভারতে যাওয়ার পর ওই দেশের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে ছিলেন তারা।
সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির নিকট হস্তান্তর করা হয়। পরে রাতে তাদের ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি।
সীমান্তে অপমানজনক পুশইনের ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হওয়ায় এবার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।
হস্তান্তর করা বাংলাদেশিরা হলেন— ফেনীর পরশুরাম উপজেলার উত্তর গুথুমা গ্রামের খায়েজ আহাম্মদের ছেলে সাইদুজ্জামান ভূঞা (২৯), একই উপজেলার নিজকালিকাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো. এমদাদ হোসেন (২৭), ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার দূর্গাপুর সিংহ নগরের ফয়েজ আহাম্মদের ছেলে মো. গিয়াস উদ্দিন (২৯), নওগা জেলার আবু জাফরের ছেলে মো. রাফি (২৫) ও চাঁদপুর জেলার কদরা গ্রামের হেদায়েত উল্লাহর ছেলে আবুল বাশার (৫৫)।
আরও পড়ুন: মেহেরপুর সীমান্তে ৩৯ নারী পুরুষকে হস্তান্তর বিএসএফের
পুলিশ ও বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, ওই পাঁচজনের মধ্যে সাইদুজ্জামান, এমদাদ, গিয়াস ও রাফিকে ১২ এপ্রিল ভারতের মনুমুখ এলাকা থেকে আটক করে দেশটির পুলিশ। ভারতের অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে আটকের পর তারা ৩ মাস যাবৎ সেখানে কারাগারে ছিলেন। মুক্তির পর ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়, পরে বিএসএফের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
অন্যদিকে, আবুল বাশারকে ৯ জুন ভারতের উদয়পুর থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ১ মাস যাবৎ ভারতীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।
ফেনী মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, বিজিবির মাধ্যমে ৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আমরা তাদের নাম ঠিকানা যাচাই করে দেখছি। তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।
এর আগে, ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে আইনবহির্ভূতভাবে ৪ দফায় ৬৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করে বিএসএফ।
১০১ দিন আগে
সংস্কার হয়নি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৮৪ বিদ্যালয়, ফেরত গেল সাড়ে ১২ কোটি টাকা
ফেনীর ৬ উপজেলায় ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩১৪টি ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কারের জন্য ১২ কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার ৮১২ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। তার মধ্যে ৩০টি বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কার কাজে মাত্র ৩১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৪ টাকা ব্যয় হলেও বাকি ২৮৪টি বিদ্যালয়ের সংস্কার না করেই অবশিষ্ট ১২ কোটি ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ টাকা ফেরত গিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় বিদ্যালয়গুলোর মেরামত সম্ভব হয়নি। যে কারণে বরাদ্দকৃত টাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ফেরত চলে গিয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়গুলোর সংস্কারে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সময়মতো ২৮৪টি বিদ্যালয়ের সংস্কার কার্যক্রম শুরু না করায় সেই অর্থ ফেরত চলে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বন্যা: সব হারিয়ে নিঃস্ব ৪৯ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ৯১৫ ঘরবাড়ি
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেড় লাখ টাকার নিচে বরাদ্দ পাওয়া ৩০টি বিদ্যালয় মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২৮৪টি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি দেড় লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়ায় সেগুলো মেরামতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে চিঠি দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী মেরামত কাজে অনীহা প্রকাশ করেন। এরপর সময়মতো টেন্ডার আহ্বান না করায় প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের মেরামত বাকি থাকলেও বরাদ্দকৃত অবশিষ্ট টাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ফেরত যায়।
ফেনীতে ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৫টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৫ কোটি ২ লাখ ২৬ হাজার ৫১৪ টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৬২ হাজার ১৫৯ টাকা ব্যয়ে মাত্র পাঁচটি বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১১০টি বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫৫ টাকা ফেরত গেছে।
দাগনভূঞা উপজেলায় ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গত বছরের বন্যায় ১৬টি বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রসহ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরামতের জন্য সেখানে মোট ৭৬ লাখ ১১ হাজার ৯৬০ টাকা বরাদ্দ পেলেও মেরামত কাজ বাস্তবায়নের জন্য দাগনভূঞা উপজেলা প্রকৌশলীর কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় টাকাগুলো ফেরত চলে যায়।
সোনাগাজী উপজেলার ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০২টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৪১ টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে ২৫টি বিদ্যালয়ের সংস্কারে ২৬ লাখ ১১ হাজার ১৭৫ টাকা ব্যয় করা হয়। বাকি ৭৭টি বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৫৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৬৬ টাকা ফেরত গেছে।
এ ছাড়া ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৭৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৫টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৩ কোটি ৫১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৭৮ টাকা, পরশুরাম উপজেলায় ৭টি বিদ্যালয়ের জন্য ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং ফুলগাজী উপজেলায় ৯টি বিদ্যালয়ের জন্য ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৬ টাকা ফেরত চলে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকরা জানান, সময় কম থাকায় বরাদ্দ পেলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। এতে বিদ্যালয়গুলো পাঠদানের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে নিজ পকেটের টাকা খরচ করে জরুরি সংস্কার কাজ করেছেন যা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারেও এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরিন কান্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বরাদ্দ বাস্তবায়নে দরপত্র করার মতো সময় ছিল না বলেই অর্থ ফেরত গেছে। তবে বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ, তাই আগামী অর্থবছরে ফের বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে ফেনীবাসী
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মেদ বলেন, ‘গত অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই এই বরাদ্দ আসে। সময় কম থাকায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হয়নি। তবে বছরের শুরুতে এই বরাদ্দ এলে বা মেয়াদ বৃদ্ধি করলে তা সংস্কার কাজে ব্যয় করা যেত।’
তিনি আরও জানান, দেড় লাখ টাকার কম বরাদ্দ হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি খরচ করতে পারে। তার বেশি হলে উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে ব্যয় করতে হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কার কাজের বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাওয়ার কথা জানা নেই। এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।’
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি, চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসের মধ্যে অর্থ ফেরত পাব এবং নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।’
১০৪ দিন আগে
ফেনী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার মজুমদার তপনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শান্তি নগরের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার খায়রুল বশর মজুমদার তপন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার ধনিকুন্ডা গ্রামের আবুল বশরের ছেলে।
গ্রেপ্তার তপনের স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম শিমু বলেন, ডিবি পুলিশের সদস্যরা রাত ১০টার দিকে বাসায় এসে তাকে আটক করে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে অসুস্থ হওয়ায় গত কদিন ধরে বাসায় অবস্থান করছিলেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খায়রুল বশর মজুমদার তপন আত্মগোপনে চলে যান।
গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের একদফা কর্মসূচির সমর্থনে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। দুপুর দেড়টার দিকে ট্রাংক রোড থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকেন। এসময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের চারপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এসি মার্কেট সংলগ্ন এলাকা থেকে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলি করতে করতে সামনে এগোতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। সেদিন মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে থেকে শুরু করে সার্কিট হাউস রোডের পাসপোর্ট অফিসের সামনে একে একে পড়ে ছিল শ্রাবণ, শিহাব, শাহীসহ ৭ জনের রক্তাক্ত লাশ। আহত হন শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী, পথচারীসহ অন্তত চার শতাধিক মানুষ।
আরও পড়ুন: আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ: মেজর সাদেকের স্ত্রী গ্রেপ্তার
এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, রাজধানীর শান্তিনগর থেকে খায়রুল বাশার মজুমদার তপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে।
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় ২২টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে সাতটি হত্যা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টা মামলা। এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন এজাহারভুক্ত এবং ৪ হাজার অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে ১ হাজারের বেশি আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ১১ জন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরইমধ্যে একটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
১১৭ দিন আগে
ফেনীতে বিএনপির গণঅভ্যুত্থান দিবসের র্যালিতে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৭
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিজয় র্যালিতে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে দাগনভূঞা পৌর শহরের জিরোপয়েন্টে এ হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন।প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপি গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে এ বিজয় র্যালির আয়োজন করে। শান্তিপূর্ণ র্যালিটি চৌমুহনী রোড থেকে দাগনভূঞা পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে পৌঁছালো সেখানে পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা দলের অন্য একটি পক্ষ মিছিলে অতর্কিত হামলা করে নেতাকর্মীদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ও তাদের মারধর করে।
পড়ুন: জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগই হবে আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা: প্রধান উপদেষ্টা
এসময় পিছন থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও অতর্কিত হামলায় উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি জাহানারা বেগম, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইমুন হক রাজীব, সদস্য সচিব তৌহিদুল ইসলাম মানিক, ইঞ্জিনিয়ার সোহেল ও সরোয়ারসহ প্রায় ১২ জন নেতাকর্মী আহত হন।
দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেনের অভিযোগ, হামলায় অংশ নিয়েছেন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুর রহমান স্বপন, আবুল হাশেম বাহাদুর ও ছাত্রদল থেকে বহিস্কৃত ফটিক। বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদের হামলার কোনো প্রতিবাদ না করিনি, বলেন তিনি।
আকবর আরও বলেন, আজকের বিজয় র্যালিতে হামলার ঘটনা একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। বিএনপিকে সাধারণ মানুষের কাছে বিতর্কিত করতে এই ষড়যন্ত্রকারীরা আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না। এ ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে আমরা কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা ধৈর্য্যধারণ করছি, আরও করে যাবো।
বিএনপির বিজয় র্যালিতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুর রহমান স্বপন বলেন, আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে জিরোপয়েন্টে রক্তদান কর্মসূচি পালন করছি। এসময় তারা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় মিছিল থেকে তাদের কিছু নেতাকর্মী আমাদের কটাক্ষ করে মন্তব্য করে। তখন আমাদের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে আমরা তা নিবৃত্ত করি। আমাদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে এ অভিযোগটি সত্য নয়। বরং তাদের হামলায় আমাদের বেলাল, সিফাত, মিলনসহ ৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
দাগনভূঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, বিএনপির বিজয় র্যালিকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক তা নিবৃত্ত করে। এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।
১২১ দিন আগে
মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে ফেনীবাসী
ফেনীর তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ায় গত ৮ জুলাই ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৪২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো সেসব বাঁধ মেরামত করা হয়নি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার এক বছর পার না হতেই বন্যায় আবারও বাঁধ ভাঙায় আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা।
আকাশে মেঘ জমলেই আতঙ্ক দেখা দেয় ফেনীর নদীতীরের বাসিন্দাদের মনে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই এ বছর আবারও বৈরী আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। সাগরে নিম্নচাপ বা টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখলেই কপালে পড়ছে শঙ্কার ভাঁজ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ফেনীতে গত শনিবার থেকে দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। ভারী বৃষ্টির কারণে শহরের বেশ কিছু নিচু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
অপরদিকে, গত ২০ জুলাই বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করলেও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় মেরামত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধ মেরামত করতে না পারায় গত ২১ জুলাই ভারতের উজানের পানির চাপে ভাঙ্গা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে চিথলিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হয়।
টেকসই বাঁধ নির্মাণসহ ৮ দফা দাবিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অভিমুখে পদযাত্রাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মহিপাল পানি উন্নয়ন বোর্ড অভিমুখে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করে বন্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য গত প্রায় এক মাস ধরে মানববন্ধন করে যাচ্ছে। সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে আয়োজিত ও ফেনী প্রবাসী উদ্যোগের সার্বিক সহযোগিতায় এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে, পরশুরামে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ৫৬টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এরই মধ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এতে ভাঙা বাঁধ দিয়ে আবারও নদীর পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, বেড়িবাঁধে ভাঙন
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বার্তা অনুযায়ী, দেশের বেশ কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। টানা বৃষ্টি হলে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি আবারও বেড়ে যাবে।
গত ৮ জুলাই ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৪২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ওইসব স্থান দিয়ে পানি ঢুকে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ; ক্ষতি হয়েছে ফসল, সড়ক, সেতু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিতে স্থানীয় আবু তালেব রিপন বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থানগুলো এখনো মেরামত হয়নি। বৃষ্টি বেড়ি গেলেই ভাঙনকবলিত বাসিন্দারা আবারও বন্যার কবলে পড়বেন। তাই বাঁধ-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।’
পরশুরামের নিজ কালিকাপুরের বাসিন্দা শফিক আহম্মদ বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় সব হারিয়েছি। বাশেঁর বেড়ার ঘরে জোড়াতালি দিয়ে বসবাস করছি। রাত এলেই ভয়ে থাকি, কখন পানি এসে আবার সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, মুহুরী নদীর বাঁধের যে স্থান দিয়ে পানি ঢুকেছিল সেই বাঁধটির কাজ এখনো হয়নি। ভারি বৃষ্টি হলেই সেখান দিয়ে পানি ঢুকবে।’
ফুলগাজী উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘গত বছরের বন্যা আতঙ্কের কারণে বৃষ্টির শুরু হওয়ায় স্থানীয় লোকজন বন্যার আশঙ্কায় রাত জেগে ঘরের সামনে বসে থাকে।’
পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামের গত ৮ জুলাইয়ের বন্যায় বসতঘর হারানো মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘আকাশে মেঘ জমলে শরীরে কাপন শুরু হয়। নদীর পাড়ে ভাঙ্গা স্থানে গিয়ে বসে থাকি, কখন আবার পানি লোকালয়ে ঢুকে আবারও নিঃস্ব করে দিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বারবার দাবি জানিয়েছি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে আমাদের বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। বাঁধ মেরামত না হওয়ায় প্রতিটি রাত আতঙ্কে কাটতে হয়।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার দি নিউ ট্রেড লিংকের স্বত্ত্বাধিকারী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পরশুরামের পশ্চিম অলকা গ্রামের মুহুরী নদীর ৮০ মিটার ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত কাজ শুরু হয়েছিল। রাতে হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে গিয়ে মাটি খনন যন্ত্রসহ মেরামত শ্রমিকদের বিভিন্ন সরঞ্জাম পানির স্রোতে নিয়ে যায়। পানি কমে গেলে আবারও বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করা হবে।’
আরও পড়ুন: নিম্নচাপ: পটুয়াখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘চলতি বছরের ৮ জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যায় পরশুরামের ১৫টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু গত ২০ জুলাই দ্বিতীয় দফা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ মেরামত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নদীর পানি কমে গেলে আবার মেরামত কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
১২৫ দিন আগে