কুষ্টিয়ার স্কুলছাত্রী ফাতেমা হত্যার বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে চলেছে সন্তান হারানো এক পরিবার। এমনকি পরিবারের দেয়া তথ্যও পুলিশ আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
নিহত ফাতেমার পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।
লিখিত ওই আবেদনপত্রে মামলাটি সিআইডির হাতে হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে বলা হয়, ফাতেমাকে গলায় ফাঁস দিয়ে গলা, ঘাড়, মুখমণ্ডল, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে পুঁড়িয়ে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন: মরিশাসে কাজে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, ন্যায়বিচার চান নারী
পুলিশ এ ঘটনায় আপন নামে একজনকে একমাত্র আসামি দাবি করে `সে একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে’ এই মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে। কিন্তু ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও নৃশংসতা দেখে মনে হয় এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ধর্ষণসহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। কিন্তু এই মামলায় একজন মাত্র আসামিকে জড়িত দেখিয়ে জবানবন্দি রেকর্ড করার কারণে অন্য আসামিদেরকে আড়াল করা হচ্ছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফাতেমার বাবা সাইফুল ইসলাম জানান, হত্যার ঘটনার প্রথম দিকেই পুলিশের দেয়া ঘটনার বিবরণেও তাদের আপত্তি ছিল। ঘটনাস্থল থেকে ফাতেমার স্যান্ডেল উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এটি ফাতেমার স্যান্ডেল নয়, ফাতেমার স্যান্ডেল এখনও তাদের বাড়িতেই রয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেমঘটিত ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু খুনির পরিবারের সাথে তার মেয়ে ও পরিবারের লোকজনের কোনও সম্পর্ক ছিল না বলে জানান নিহত ফাতেমার বাবা। ফাতেমা হত্যার পর কয়েকজন যুবক এলাকা ছাড়া ছিল।
ফাতেমার বাবা আরও জানান, ঘটনার দিন তার মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার সময় সকালে বাড়ির সামনে একটি হাতের ব্রেসলেট ছেঁড়া অবস্থায় পড়েছিল। এসব তথ্য পুলিশকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে হত্যার মূল ঘটনাকে পুলিশ আড়াল করা হচ্ছে বলে দাবি করেন সাইফুল ইসলাম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই শেখ আবু সাইদ বলেন, এ হত্যা মামলায় আপন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি এখন কারাগারে। মামলাটি পুলিশ এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম জানান, মামলাটি তদন্তাধীন। বাদী পক্ষের অন্য সমীকরণ থাকতেই পারে। তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানিয়ে দাবি করেন সঠিকভাবেই মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
আরও পড়ুন: লকডাউন: সারাদেশে আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ বন্ধ থাকবে
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ভাঙা বটতলা এলাকায় একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই পুলিশ মিরপুর পৌরসভার কুরিপোল মধ্যপাড়া এলাকার রংমিস্ত্রি মিলনের ছেলে ও আমলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আপনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে জানান, আপনের সাথে স্কুল ছাত্রী ফাতেমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই মধ্যে আপন আরেক জনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ফাতেমা বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় আপন পরিকল্পিতভাবে একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।