ওই ঘটনায় শত শত মানুষ আহত হন। সেদিন শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতি ও সাক্ষীদের অসহযোগিতার কারণে ৩১ বছরেও এ মর্মান্তিক ঘটনা বিচার সম্পন্ন হয়নি।
জানা গেছে, মামলাটির মোট ৮ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি তৎকালিন চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদাসহ তিনজন মারা গেছেন। অন্য দুজন হলেন পুলিশ কর্মকর্তা আবদুস সালাম ও বশির উদ্দিন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিচার নিষ্পত্তির পথে মামলাটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। প্রধান আসামি মির্জা রকিবুল হুদার আমেরিকায় মারা যাওয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা হলেও হাই প্রোফাইলে আসামি সত্যিই দেশের বাইরে মারা গেছেন কিনা তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিচারকাজ চলার এক পর্যায়ে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে ২০০৭ সালে আসামি হুদা স্বপরিবারে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পালিয়ে যান এবং সেখানেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন বলে আদালতে আসা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার উপর গুলি করার সময় এক পুলিশ রাইফেলের কানেকশন বেল্ট খুলে ফেলায় তিনি বেঁচে যান। এসময় আইনজীবীরা শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে আইনজীবী সমিতি অফিসে নিয়ে রক্ষা করেন। নৃশংসতার ৩১ বছর পার হয়ে গেলেও নিহতদের স্বজনরা এখনও বিচার পাননি। ঝুলে আছে মামলার বিচার কাজ।
১৯৯৬ সালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি কর্মকর্তা কাদের খান আদালতে চার্জশিট দাখিল করার পর ২০০০ সালের মে মাসে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন (চার্জ ফ্রেম) করা হয়। ১৬৮ জনের মধ্যে ৪১ জন সাক্ষী ইতিমধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দেন।
অপরদিকে চট্টগ্রাম গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মরণে নগরীর কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাদদেশে নির্মাণ করা হয়েছিল স্মৃতিফলক। বছরের একটি দিন শহীদদের স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানালেও বাকি সময় আর কেউ খবর রাখে না তাদের। প্রতিবছর গণহত্যা দিবসে স্মৃতিস্তম্ভটির উন্নয়নের জন্য এবং একটি পুর্ণাঙ্গ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করার দাবি জানানো হলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এব্যাপারে সাংবাদিক নিরুপম দাশগুপ্ত বলেন, শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলির ঘটনা সেদিনের আন্দোলনে বারুদ ঢেলেছিল। এই গণহত্যার ৩০ বছর পর একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির উদ্যোগ মাত্র ২০ লাখ টাকার অভাবে অনিশ্চয়তায় পড়া খুবই দুঃখজনক। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জার।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে তৎকালীন ১৫ দলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহর ও জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। বৃষ্টির মতো এলোপাতাড়ি গুলিতে সেদিন শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় নেতারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান ২৪ জন ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী। আহত হয় আরও প্রায় তিন শতাধিক। এ ঘটনার চার বছর পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কাজী রকিবুল হুদা এবং কোতোয়ালি জোনের পুলিশ পরিদর্শক (পিআই) গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডলসহ মোট ৪৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ দিনটিকে চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।