রাজধানীতে যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণের সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের থেকে অনুমোদন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে গিয়ে যাতে করে কেউ হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে মেয়রদের সতর্ক থাকার কথাও জানান মন্ত্রী।
রবিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দপ্তর/সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি কর্তৃক বাসাবাড়িসহ সকল ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিতে হবে। আর শুধু অনুমোদন দিলেই হবে না। অনুমোদকৃত স্থাপনা নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচনে সরকারের নজরদারি রয়েছে: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা শহর এবং এর আশপাশে অনেকগুলো সেতু রয়েছে। যেগুলোর নেভিগেশন ফেসিলিটি নেই। এই সেতু ভেঙ্গে নৌ চলাচল সুবিধা রেখে নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সকল খাল সংস্কার করে একটি খালের সঙ্গে অন্যটির সংযোগ এবং খালের দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করলে নগরবাসীকে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন শহর উপহার দেয়া সম্ভব।
সেখানে ওয়াটার রিটেইশন পন্ডের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন কাজ করছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরের বসিলায় খাল দখল করে ট্রাক স্ট্যান্ড, মার্কেট এবং আবাসিক বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কল্যাণপুরে ১৭৩ একর জমির মধ্যে তিন একর জমি বাদে সব জমি দখল হয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে অভিযান চালিয়ে খালের জমি উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু উত্তর সিটি করপোরেশন নয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। অবৈধভাবে যে কেউ খাল দখল করুক না কেন, তা উদ্ধার করা হবেই।
আসন্ন বর্ষায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতা হবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে যেন জনভোগান্তি না হয় সে লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। শুধু ফরমাল সভা করে পরিকল্পনা করলে হবে না ফলাফল আনতে হবে। এজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর হাটে লোকসমাগম কমানোর আহ্বান স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, দাবি স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ঢাকায় জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ খাল ও জলাশয় দখল করে অবকাঠামো নির্মাণ। ওয়াসা থেকে খালগুলো দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করায় খাল সংস্কার, দখলমুক্ত এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমি আশা করি এবছর রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। এসময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার চলমান সকল প্রকল্পের কাজ সমন্বয় করার তাগিদ দেন মন্ত্রী। জনস্বার্থে যে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মেয়রদের দিকনির্দেশনাও দেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, খাল উদ্ধার, সংস্কার, দখলমুক্ত এবং দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি সাব কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত দেন মন্ত্রী।
এসময় উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম (ভার্চুয়ালি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্ট্রগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারসহ স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।