ইলিশ মাছ প্রজননের ভরা মৌসুম চলছে এখন। দেশের প্রধান নদীগুলোতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার, যা বলবৎ থাকবে চলতি মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু অসাধু চক্রগুলো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ ধরার মহোৎসবে মেতেছে।
কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার ৩৫ কিলোমিটার পদ্মা নদী এলাকা জুড়ে চলছে ইলিশ শিকার। প্রতিদিন ধরা পড়ছে কয়েক শ মণ মা ইলিশ। চরে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ৫০০ ও জাটকা ইলিশ ৩৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, চর থেকে শহরের ক্রেতাদের কাছে ইলিশ মাছ পৌঁছানোর নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম, আমলাবাড়িয়া, কুঠিপাড়া, আমবাড়িয়া, মকলুর চর ও খাস চরসহ আশপাশের গ্রামগুলো।
নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চরের নারী ও শিক্ষার্থীদের মাছ পাচারে ব্যবহার করছেন প্রভাবশালীরা।
মাছ বহনকারীরা জানান, পদ্মা নদী থেকে শহরে মাছ পৌঁছাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। সেই সাথে নদী তীরের ফাঁড়ির
পুলিশ তাদের মাছ কেড়ে নিচ্ছে। আবার ছাড়া পাওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকাও গুনতে হচ্ছে।
সোমবার ভোরে খাস চরের কোলের ঘাটে গিয়ে ইলিশ মাছ কেনাবেচার মহোৎসব দেখা যায়। মাছ বিক্রি হচ্ছিল নদী চরের কাশ বনে, আখ আর ধান খেতে।
মাছ কেনাবেচার এমন দৃশ্য আগে কখনো চোখে পড়েনি বলে জানান বৃদ্ধ আছির প্রামানিক। তিনি বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে এবারই সব থেকে বেশি মাছ ধরা পড়ছে।
এর আগে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খাস চরের কোলের ঘাটে একটি নৌকা থেকে তিনটি বাজারের ব্যাগসহ চার যাত্রীকে নেমে আসতে দেখা যায়। প্রতিটি ব্যাগে ছিল ১০ কেজির বেশি সদ্য ধরা পড়া ইলিশ মাছ।
তাদের মধ্যে একজন নিজেকে সরকারি অফিসের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, একজন মুমূর্ষু রোগী পদ্মা নদীর ইলিশ খেতে চেয়েছেন। তাই তিনি মাছ কিনতে পদ্মায় এসেছেন।
এছাড়া, উপজেলা মৎস্য অফিসের অফিস সহায়ক আবু বক্কর সিদ্দিককে মোটরসাইকেলে করে ৫ কেজি জাটকা নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, মাছ ফেলে পাচারকারী পালিয়ে গেছেন। কিন্তু পরে যাচাই করে দেখা যায়, পচাই নামে এক ক্রেতার কাছ থেকে তিনি মাছগুলো জোর করে নিয়ে এসেছেন।
মাছ পাচারের কাজে নিয়োজিত পাংশা মহাবিদ্যালয়ের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাকে মাছ বহনে বাধ্য করা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালী মহাজনের এ কাজ করে না দিলে তাদের চরে বাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। কৃষক হজরত আলীও একই অভিযোগ করেন।
শুক্রবার ভোরে জয়ন্তী হাজরা গ্রামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ২ মণ ইলিশ মাছ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে এ ব্যাপারে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান খানের অভিযোগ, তার এলাকার দুজন মেম্বার মাছ ধরার সাথে জড়িত। তার ইউনিয়নসহ পদ্মা তীরের কয়েকটি ইউনিয়নের ১৯ হাজার লোকের মধ্যে ৩ হাজার প্রত্যক্ষভাবে পদ্মায় মাছ ধরার সাথে জড়িত বলেও দাবি করেন তিনি।
ভবানীগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আইসি) এএসআই কামাল হোসেন বলেন, তারা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে অভিযানে থাকেন। নিজেদের মাছ আটক করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ মিথ্যা বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদ হাসান জানান, ইলিশ শিকারের দায়ে ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় শ কেজি মাছ উদ্ধার করা হয়েছে।