সোমবার দুপুরে লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের খলাইঘাটে গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ইউনিয়ন বিএনপির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেন স্মরণে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে দলটি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যে দলটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে তারাই এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে লুট করেছে। ডাকাতি করেছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ইউএনও, ডিসি, সেনাবাহিনী নিয়োগ করে তাদেরকে দিয়ে ভোটের রাতে সিল মেরে রাখে এবং ভোটের দিন আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতি করেছে।’
বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ভোট চুরি ও দিনে ডাকাতির ক্ষোভ এবং খুন, গুম ও ধর্ষণের শোককে শক্তিতে পরিণত করে আন্দোলন মুখর হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলন দুর্বার তরঙ্গে রূপ নেবে। আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামধারী এই গণশত্রুকে সরিয়ে দিতে হবে।’
অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ফলাফল বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান ফখরুল। তা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
খুন হওয়া বিএনপি নেতা তোজাম্মেল হোসেন গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক গুন্ডারা রাজপুরের তোজাম্মেল হককে হত্যা করেছে। তোজাম্মেল গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন। এরকম আরও ২২ জন নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের গুন্ডারা ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য নোয়াখালীতে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে। আমাদের এক যুবদলের নেতার স্ত্রীকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য ধর্ষণ করেছে।’
এসময় রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম মিজু, সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজেকা সুলতানা ফেন্সি, জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সেক্রেটারি রইচ আহমেদ, জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রোকন উদ্দিন বাবলু, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লেমন, জেলা যুবদল সভাপতি জাহিদুল ইসলাম খোকন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, জেএসডির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলা সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি, সেক্রেটারি ডা. সাদেক আলী, হারাগাছ পৌরসভা সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় এবং রংপুর ও লালমনিরহাটের নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশের আগে মির্জা ফখলরুল ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে নিহত তোজাম্মেলন হোসেনের কবরে ফাতেহা পাঠ শেষে মোনাজাতে অংশ নেন। পরে তারা নিহত তোজাম্মেল হোসেন ও আহতদের পরিবারের সাথে দেখা করে তাদের সমবেদনা জানান এবং আর্থিক অনুদান দেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন লালমনিরহাট সদরের রাজপুর ইউনিয়নের পাগলাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ভোট দিতে গেলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোফার নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেনকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এসময় আরও ৯ জন আহত হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান মোফাসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেন নিহতের পুত্র মোস্তফা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।