ছেলের বাড়ি থেকে বের হয়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী মায়ের কাছে না আসলেও অবশেষে নিথর দেহ নিতে আসলেন সিলেট নগরের সেই ধনাঢ্য ছেলে।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ (এসওএমসি) হাসপাতালের মর্গ থেকে বৃদ্ধা শুকুরা বেগমের (৭৫) লাশ গ্রহণ করেন ছেলে সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী। নিহত শুকুরা বেগম কানাইঘাট উপজেলার চাপনগর এলাকার মৃত জোয়াহিদ আলীর স্ত্রী।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এসওএমসি হাসপাতালে ভর্তি হন শুকুরা বেগম। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে মারা যান তিনি। পরে ময়না তদন্ত শেষে বুধবার তাঁর লাশ হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন: সিলেটে গণপিটুনিতে ডাকাত নিহত, গুলিবিদ্ধ ৫
আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুকুরা বেগম অভিযোগ করেছিলেন, ছেলে সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী তাকে নগরীর জালালাবাদ এলাকার বাসা থেকে রাতের আঁধারে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাকে এক কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়। তাই তিনি আর ছেলের বাসায় ফিরতে চান না।
তবে প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শুকুরা বেগমের চিকিৎসার দায়িত্ব নেননি ছেলে সিরাজ উদ্দিন। তখন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলামের নির্দেশে ওই নারীর দেখভালের দায়িত্ব নেন এসওএমসি হাসপাতালে সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা পুলিশ সদস্য মো. জনি।
এদিকে ঘটনার পরপরই বৃদ্ধা শুকুরা বেগমের মেয়ের ঘরের নাতনী সানজিদা সুলতানা জানিয়েছিলেন, তাঁর নানীকে গ্রামের বাড়ি থেকে এনে নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকার বাসায় মামা সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী বন্দি করে রাখেন। এক বছর ধরে তিনি বন্দি ছিলেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হয়ে পাশের ঘরে যাওয়ার অপরাধে রাত ১০ টার দিকে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন ছেলের স্ত্রী। তাই নগরীর পথে পথে হেঁটে ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করে রাত কাটিয়ে পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কানাইঘাট এলাকায় নিজের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পান এবং বাম পা ভেঙ্গে যায়। সেখান থেকে খবর পেয়ে নানীর ভাইয়ের ছেলে তাজুল ইসলাম তাকে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে এসওএমসি হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু ঘটনার খবর পেয়েও মামা সিরাজ উদ্দিন কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ শুকুরা বেগমের কাছে আসেননি।
আরও পড়ুন: সিলেটে বোমা বিস্ফোরণে আহত শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন
এ ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন সানজিদা সুলতানা।
অপরদিকে ওই নারীর দেখভালের দায়িত্ব নেয়া পুলিশ সদস্য মো. জনি বুধবার লাশ হস্তান্তরের পর বলেন, প্রথমে সিরাজ উদ্দিন মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব না নিলেও মৃত্যুর আগে শেষ তিনদিন মায়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করেন। দেখভালের জন্য একজন নারীকেও হাসপাতালে নিযুক্ত করেন তিনি। তবে সিরাজ উদ্দিন নিজে মায়ের কাছে উপস্থিত হননি। কিন্তু শুরু থেকেই মেয়ের ঘরের নাতনী সানজিদা সুলতানা নানীর পাশে ছিলেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে ২ নারীকে হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড
এদিকে তাঁর মাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে দাবি করেছেন সিরাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ছেলে হিসেবে যা করার আমি তা করেছি। এটা আমার কর্তব্য। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে একটি চক্রান্ত করা হয়েছিল। যা প্রশাসন বুঝতে পেরেছে। তাই আমার মায়ের লাশ আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।