ইরান
ইরানের নতুন পার্লামেন্টে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারের ভাষণ
গত সপ্তাহে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মাদ মোখবার।
সোমবার (২৭ মে) দেশটির নতুন সংসদে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন তিনি।
রাইসির মৃত্যুর মাত্র এক মাসের মধ্যেই তার রেখে যাওয়া দায়িত্বভার যোগ্য মানুষের হাতে দিতে ইরানে যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, সে সময় মোখবারের এ ভাষণ জানান দিলো পর্দার আড়ালে থাকা এই আমলাও নামতে পারেন লড়াইয়ে।
এদিকে, ইরানের নতুন কট্টরপন্থী পার্লামেন্ট মঙ্গলবার তাদের নতুন স্পিকার নির্বাচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাইসির মৃত্যুতে যেভাবে অস্থির হয়ে উঠতে পারে ইরানের ভবিষ্যৎ
ভাষণে রাইসির ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের প্রশংসা করে মোখবার বলেন, দেশের হার্ড কারেন্সির মূল উৎস ইরানের অপরিশোধিত তেল উৎপাদন- যা প্রতিদিন ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি বেড়েছে।
রবিবার (২৬ মে) ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান এখন প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে।
মোখবর আরও জোর দিয়ে বলেন, ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাক, ইসরায়েল ও পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও রাইসির অধীনে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল।
মোখবার বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে আঘাত করেছিলাম। তবুও লোকেরা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে হার্ড কারেন্সি, মুদ্রাস্ফীতি, তারল্য, দাম আগের মতোই এবং বাজারও মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পূর্ণ। এই শক্তি, বন্দোবস্ত এবং ক্ষমতা কোনো সাধারণ জিনিস নয়। এগুলো সবই সর্বোচ্চ নেতার দিকনির্দেশনা এবং আয়াতুল্লাহ রাইসির আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছিল।’
গত ২০ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি পার্বত্য অঞ্চল থেকে রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআবদুল্লাহিয়ান ও অন্যদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আগামী ২৮ জুন রাইসির স্থলাভিষিক্ত কে হতে যাচ্ছে সেটি নির্ধারণ করতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে লড়তে প্রার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে বৃহস্পতিবার(৩০ মে) থেকে পাঁচ দিনের সময় দেওয়া হবে। মোখবার প্রার্থী হিসেবে নাম লেখাতে পারেন বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
আরও পড়ুন: ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
এদিকে, দেশটিতে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর সর্বনিম্ন ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়ে নবনির্বাচিত সংসদের প্রথম দিন ছিল সোমবার (২৭ মে)। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের জরিপ অনুযায়ী, গত মার্চে অনুষ্ঠিত ২৯০ আসনের এই নির্বাচনে কট্টরপন্থীরা ২৩০টির বেশি আসন পেয়েছিল।
দেশ পরিচালনায় ইরানের সংসদ মুখ্য ভূমিকা পালন না করলেও বার্ষিক বাজেট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এটি প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা
রাইসির মৃত্যুতে যেভাবে অস্থির হয়ে উঠতে পারে ইরানের ভবিষ্যৎ
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত হওয়ার পর দেশটির শাসন ব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ রদবদলের আভাস পাওয়া গেছে গতকালই। তবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হয় বলে সরকারে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে হবে না ইরানের নাগরিকদের।
আলোচনাটা সর্বোচ্চ নেতার পদটি নিয়েই। ৮৫ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে রাইসিকেই দেখা হচ্ছিল। তবে তার মৃত্যুতে দেশ পরিচালনার গুরুভার কার ওপর বর্তাবে, তা নিয়ে এখন থেকেই শুরু হয়েছে মাথাব্যথা।
রাইসির মৃত্যুর পর খামেনির ছেলেই পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ক্ষমতার বংশগত উত্তরাধিকার ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দেশটির সংকট আরও বাড়াবে। কারণ রাজতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও দেশটির নাগরিকদের অনেকে এই শাসন ব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী শাসন হিসেবে দেখেন।
ইরানের শাসন ব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে
রাষ্ট্রপতি ও সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য ইরানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন সর্বোচ্চ নেতা। তিনিই সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে কাজ করেন এবং শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডকে (আইআরজিসি) নিয়ন্ত্রণ করেন।
১২ সদস্যবিশিষ্ট গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অর্ধেক সদস্যও তার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। দেশটির রাষ্ট্রপতি, সংসদ সদস্য, এমনকি সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ পরিষদের প্রার্থীদেরও যাচাই করে এই গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা
কাগজে-কলমে, দেশে ইসলামি আইন বজায় রাখতে সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করে থাকেন গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্যরা (ধর্মগুরু)। তবে বাস্তবতা হলো, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নিজ স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা ও তার নিজস্ব অগ্রাধিকারগুলোকে এগিয়ে নিতে কেউ যাতে চ্যালেঞ্জ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করে সতর্কতার সঙ্গে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন।
কট্টরপন্থী রাইসি ছিলেন খামেনির সমর্থক। ২০২১ সালের নির্বাচনে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কার্যত নিষ্ক্রিয় করে রাইসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করে বিশেষজ্ঞ পরিষদ। নির্বাচনে রুহানিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেও বাধা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ৮ বছর ধরে প্রেসিডেন্টের পদ সামলানো হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হন রাইসি। ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে সেবারের নির্বাচনে।
রাইসির মৃত্যুর পর দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ইরানের সংবিধান অনুসারে ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে কাকে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আনা হবে, সে কাজটি সাবধানতার সঙ্গে করতে হবে খামেনিকে।
এর অর্থ এই দাঁড়াচ্ছে যে, দেশটিতে কড়া ইসলামি শাসন আরোপ চলতে থাকবে এবং ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাবে ইরান। এছাড়া দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন ও পশ্চিমাদের গভীর সন্দেহের চোখে দেখা চলমান থাকবে।
ক্ষমতার উত্তরাধিকারের বিষয়ে যা হবে
ইরানের ক্ষমতায় রাষ্ট্রপতি আসবেন, যাবেন। কেউ কেউ কট্টরপন্থী, কেউবা মধ্যপন্থী হতে পারেন, তবে প্রত্যেককেই শাসন ব্যবস্থার প্রতি অনুগত হয়ে কাজ করতে হয়।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা রয়েছেন খামেনি। ফলে তার মৃত্যুর পরই কেবল ইরানে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
৮৮ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে গড়া পরিষদের মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করা হয়। ওই পরিষদের সদস্যরা আবার ১২ সদস্যের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মাধ্যমে ৮ বছর পর পর নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
খামেনির উত্তরাধিকারী কে হবেন- এ বিষয়ক আলোচনা বা যে কোনো কৌশল সাধারণ জনগণের অগোচরে হয়ে থাকে। ফলে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী কে হতে চলেছেন, সাধারণের পক্ষে তা আগে থেকে জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তবে বিশ্লেষকরা যে ২ ব্যক্তিকে খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে দেখছিলেন, তাদের একজন রাইসি, অন্যজন খামেনির ছেলে মোজতবা। ৫৫ বছর বয়সী মোজতবা একজন শিয়া ধর্মগুরু। তবে সরকারি দায়িত্ব পালনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই তার।
মোজতবা ইরানের সর্বোচ্চ পদে বসলে যা হতে পারে
বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দেশটির নেতারা ইরানকে শুধু পশ্চিমা ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্রের চেয়ে নয়, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিরাজমান সামরিক একনায়কতন্ত্র ও রাজতন্ত্র থেকেও অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
তবে খামেনির ছেলে সর্বোচ্চ নেতার আসনে বসলে ফের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে ইরানে। শুধু ইসলামি শাসনের সমালোচকদের কাছেই নয়, দেশের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা যেসব ইরানি ‘অনৈসলামিক’ বলে বিবেচনা করে, তাদের মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার করতে পারে ক্ষমতার এই উত্তরাধিকার।
পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে ইরানের ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। আর ইসলামি শাসন যা রাইসির আমলে আরও তীব্র আকার ধারণ করে, দেশের নারী ও যুবাদের আরও বিচ্ছিন্ন করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছে ইরান। ২০২২ সালে মাহসা আমিনি গ্রেপ্তারের পর দেশটি বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠা এর বড় উদাহরণ। চুল না ঢেকে রাস্তায় বের হওয়ার কারণে আমিনি গ্রেপ্তার হন। এর বিরুদ্ধে ইরানজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই বিক্ষোভ থেকে দেশজুড়ে ৫ শতাধিক মানুষ নিহত ও ২২ হাজারের বেশি নাগরিক আটক হন।
রাইসির মৃত্যুতে তাই নতুন সর্বোচ্চ নেতা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি আরও জটিল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশটিতে ফের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন: ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় এ পর্যন্ত যা জানা গেল
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (২১ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিদেশের মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কুয়াশাচ্ছন্ন পার্বত্য অঞ্চলে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার (২০ মে) দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্যদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুতে বিএনপির শোক
ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অঞ্চলে ইরানের বেশ গভীর ও বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছে ইরান। যার ফলে এই দেশগুলো শক্তি প্রদর্শন করতে এবং ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের কট্টর শত্রু যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের হামলা প্রতিহত করতে পারে।
গত মাসে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলায় দুই ইরানি জেনারেল ও পাঁচ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার জবাবে রাইসি ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বে ইসরায়েলে ইরানের শত শত ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা তুঙ্গে উঠে।
আরও পড়ুন: ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর গভীর শোক
অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জর্ডান এবং অন্যান্যদের সহায়তায় ইসরায়েল প্রায় সব হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।
কিন্তু জবাবে ইরানের ইস্পাহান শহরে একটি বিমান প্রতিরক্ষা রাডার সিস্টেমের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এই হামলা একটি সতর্ক বার্তাই ছিল বলা যায়।
বছরের পর বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে গোপন অভিযান ও সাইবার হামলার মতো আড়ালে যুদ্ধ চললেও গত এপ্রিলে গোলাগুলি ছিল তাদের প্রথম সরাসরি সামরিক সংঘাত।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধে ইরানের অন্যান্য মিত্ররাও জড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে হামলা-পাল্টা হামলা বড় এক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যার কারণে রবিবারের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মতো অপ্রত্যাশিত মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে।
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। তেহরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইসরায়েলকে ধ্বংসের শপথ নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ইরানকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখে আসছে ইসরায়েল।
অন্যদিকে ইরানও নিজেকে ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেখে এবং দেশটির শীর্ষ নেতারা বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
আরও পড়ুন: ইরানের অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত রাইসি যিনি খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন তিনি গত মাসে ইসরাইলের সমালোচনা করে বলেন, 'ইহুদিবাদী ইসরাইল ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, 'প্রথমত দখলদারদের বিতাড়িত করতে হবে, দ্বিতীয়ত, তারা যে ক্ষতি করেছে তার মূল্য আদায় করতে হবে এবং তৃতীয়ত, অত্যাচারী ও দখলদারকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
ধারণা করা হয়, ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে কয়েক বছর ধরে ইসরায়েল অসংখ্য হামলা চালিয়েছে।
তবে রবিবারের হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ইরান বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে। হামাসের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা, যা গাজা যুদ্ধের সূত্রপাতের কারণ। তবে এর সঙ্গে হামলায় ইরান সরাসরি জড়িত ছিল এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইরানের নেতারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আসছেন। এ অঞ্চলে তাদের মিত্ররা অনেক দূর এগিয়েছে।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননের উগ্রপন্থী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই দুই পক্ষের মধ্যে হামলা চলছে, যার ফলে উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত এই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়নি তবে সেটা উভয় দেশের জন্যই বিপর্যয়কর হবে।
ইরানের আরেক মিত্র ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলকে প্রতিহত করার নামে বারবার আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এক্ষেত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে আপাত সম্পর্ক নেই এমন জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করেও হামলা চালায় তারা। সেখানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জাহাজও পাল্টা হামলা চালায়।
শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইরান বিশ্বের অন্য অঞ্চলগুলোতেও প্রভাব বিস্তার করেছিল।
আরও পড়ুন: ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় এ পর্যন্ত যা জানা গেল
ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করে আসছে যে, শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির আড়ালে ইরান পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ করছে।
বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য।
জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার ক্যামেরা ও পরিদর্শকদের নিষিদ্ধ করেছে ইরান। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বরাবরই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে বলে দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যরা মনে করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তাদের সক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ছিল।
ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হলেও তাদের কাছে এ ধরনের অস্ত্র থাকার কথা কখনোই স্বীকার করেনি।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর ইরান রাশিয়ার প্রধান মিত্র হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে। ইউক্রেনের শহরগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো বিস্ফোরক ড্রোনগুলো ইরানের সরবরাহ করা এমন অভিযোগ এসেছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাইসি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করেনি।
ইরানি কর্মকর্তারা ড্রোন সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করলেও মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহারই বলে দেয় যুদ্ধ শুরুর পর এই অস্ত্রের সরবরাহও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: ইরানের প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লাশ উদ্ধার
ইরান হামলা করলে আত্মরক্ষায় পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত ইসরায়েল
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে, সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে প্রাণঘাতী বিমান হামলার প্রতিশোধ নিলে তারা আত্মরক্ষা করতে এবং পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত রয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় ইরানি কনুলেটে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে তেহরান। ওই হামলা ইসরায়েল চালিয়েছে বলে বিশ্বাস করে মার্কিন সামরিক বাহিনীও। তবে ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গাজায় ছয় মাসের যুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে মানবিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে।
আরও পড়ুন: রুশ নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রে ড্রোন হামলা
ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রধান সামান্থা পাওয়ার বুধবার আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে যে 'বিশ্বাসযোগ্য' প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহে বলেছেন, গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবাহ বাড়াতে ইসরায়েল যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা ও স্থল হামলায় অন্তত ৩৩ হাজার ৩৬০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭৪ হাজার ৯৯৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কতজন বেসামরিক ও কতজন যোদ্ধা রয়েছে তা আলাদা করে জানাতে না পারলেও নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর যুদ্ধ শুরু হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরান হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে তারা দেশটিকে রক্ষা করতে এবং পাল্টা হামলা চালাতে প্রস্তুত রয়েছে।
ইরান গত সপ্তাহে দামেস্কে বিমান হামলায় নিহত তার দুই জেনারেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। তারা এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করলেও ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইরান বা ওই অঞ্চলে সমর্থিত বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট প্রস্তুত রেখেছে এবং অন্যান্য সেনাদের সক্রিয় করেছে।
সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইরানি ভূখণ্ড থেকে হামলা হলে এটি স্পষ্ট যে, মধ্যপ্রাচ্যকে উত্তেজিত করতেই ইরান হামলা চালাবে। ’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েল আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করেছে। 'যেখানে প্রয়োজন সেখানে কীভাবে কাজ করতে হবে তা আমরা জানব।’
হাগারি বলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল এরিক কুরিলা ইসরায়েলি সামরিক নেতাদের সঙ্গে কৌশলগত মূল্যায়নের জন্য ইসরায়েলে পৌঁছেছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে তীর্থযাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সপ্তাহে বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এখনো আগের মতোই দৃঢ়।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বিক্ষোভ, জিম্মি মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং গাজায় হামাসের হাতে আটক কয়েক ডজন জিম্মির মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে তেল আবিবের রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা জিম্মিদের বড় বড় ছবি এবং ইংরেজি ও হিব্রু ভাষায় লেখা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।
অক্টোবরে দেশটিতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে চলতি মাসের শুরুতে হাজার হাজার ইসরায়েলি জেরুজালেমে জড়ো হয়, যা সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। প্রায় ছয় মাসের যুদ্ধ নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে বিভক্তি তৈরি করেছে, যদিও দেশটির অধিকাংশই মূলত যুদ্ধের পক্ষে রয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, আগাম নির্বাচন ইসরায়েলকে ছয় থেকে আট মাসের জন্য অচল করে দেবে এবং জিম্মি আলোচনাকে থামিয়ে দেবে। তিনি হামাসকে ধ্বংস করার এবং সমস্ত জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে সেই লক্ষ্যগুলো অধরা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বৃহস্পতিবার বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি "আসন্ন", ইউএসএআইডি প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারকে নরম করে বলেছেন, সেখানে এরইমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে তা "বিশ্বাসযোগ্য"।
জিন-পিয়েরে বলেন, ‘এ কারণেই আমরা গাজায় পৌঁছানো মানবিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজায় ত্রাণ বহনকারী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি গাজার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তাই আমরা অবশ্যই এই প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছি, যাতে গাজায় আরও বেশি সহায়তা পাওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ত্রাণের প্রবাহ বাড়াতে ইসরাইলকে চাপ দেওয়া অব্যাহত রাখবে।
মার্কিন চাপের মুখে ইসরায়েল নাটকীয়ভাবে গাজায় সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত সপ্তাহে বলেছে যে তারা আরও একটি কার্গো ক্রসিং খুলবে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আগের চেয়ে আরও বেশি ট্রাক পাঠাবে। কিন্তু কয়েকদিন পরও এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা বলছেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর গাজায় বিপুল সংখ্যক লোক অনাহারে রয়েছে।
যদিও ইসরায়েল বলছে, তারা এই অঞ্চলে প্রবেশকারী ত্রাণ ট্রাকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়েছে, জাতিসংঘের কর্মীরা কেবল সামান্য বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সরাসরি ইরানে হামলা চালানোর হুমকি ইসরাইলের
জয়ার 'ফেরশতে' পেল ইরানের জাতীয় পুরস্কার
জয়া আহসান অভিনীত বাংলাদেশ-ইরানের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘ফেরেশতে’ চলচ্চিত্রটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ইরানের জাতীয় পুরস্কার জিতেছে।
খবরটি জয়া আহসান তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন।
জয়ার পোস্ট থেকে জানা যায়, প্রতি বছর ফজর চলচ্চিত্র উৎসবের পর, মানবাধিকার, শিক্ষা, পরিবেশ, দাতব্য কাজ ইত্যাদি বিভাগে 'জাতীয় ইচ্ছার প্রতিফলন/বহিঃপ্রকাশ' নামে সমাজের জন্য অনুকরণীয় চলচ্চিত্রগুলোকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এই পুরস্কারটি 'খয়র-ই-মান্দেগার' নামক একটি প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদান করা হয়, যা ইরানের সমস্ত দাতব্য প্রতিষ্ঠান, দাতা, এনজিও-এর প্রতিনিধিত্ব করে এবং প্রতিষ্ঠানটি ইরানে ইউনিসেফের মতো সক্রিয়।
আরও পড়ুন: তেহরানে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জয়া আহসান
এই পুরস্কারের পাশাপাশি, 'ফেরেশতে' চলচ্চিত্রের প্রধান দুই অভিনেতা জয়া আহসান এবং সুমন ফারুককে 'খয়র-ই-মান্দেগার' স্মারক প্রদান করে সম্মানিত করা হয়।
সিনেমাটির পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম। চিত্রনাট্য লিখেছেন বাংলাদেশের মুমিত আল-রশিদ। ফারসি ও বাংলা অনুবাদ করেছেন মুমিত আল-রশিদ ও ফয়সাল ইফরান।
আরও পড়ুন: বলিউডেও দ্যুতি ছড়ালেন জয়া
ইরান-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘ফেরেশতে’ সিনেমাতে সহপ্রযোজক হিসেবে আছে ইমেজ সিনেমা, সি তে সিনেমা এবং ম্যাক্সিমাম এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, ইরানি বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্রগুলোর পাশাপাশি 'ফেরেশতে' চলচ্চিত্রটি ফজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান বিভাগের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসাবে জনগণ, সংবাদপত্র এবং সমালোচকদের দ্বারা সমাদৃত হয়েছিল।
এ চলচ্চিত্রে জয়া আহসান ও সুমন ফারুক ছাড়াও বাংলাদেশের আরও বেশ কজন শিল্পী রিকিতা নন্দিনী শিমু, শহীদুজ্জামান সেলিম, শাহেদ আলী, শাহীন মৃধা, শিশুশিল্পী সাথী অভিনয় করেছেন।
আরও পড়ুন: কড়ক সিং: জয়ার প্রথম হিন্দি সিনেমা আসছে ওটিটির পর্দায়
ইরানে কাসেম সোলাইমানির স্মরণসভায় বোমা হামলায় নিহত ১০৩
২০২০ সালে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ১৪১ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানায়।
গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যেই বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটল। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই বিস্ফোরণকে 'সন্ত্রাসী' হামলা বলে অভিহিত করেছেন।তবে কারা এ হামলার পেছনে রয়েছেন সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
দেশটির জরুরি বিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়েকতাপারস্তকে উদ্ধৃত করে হতাহতের এ সংখ্যা প্রকাশ করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক 'ঠিক দিকেই এগোচ্ছে': ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিপ্লবী গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ হামলা চালানো হয়। যিনি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় মারা যান। রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৮২০ কিলোমিটার (৫১০ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে কেরমানে তার সমাধিস্থলের কাছে বিস্ফোরণটি ঘটে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন আহত হয়েছ।
একটি ফুটেজে দেখা গেছে, প্রথম বিস্ফোরণের প্রায় ১৫ মিনিট পর দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে। সাধারণত জরুরি অবস্থার সেবাদানকারী কর্মীদের লক্ষ্য করে এবং হতাহতের সংখ্যা বাড়াতেই দ্বিতীয়বার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।
রাষ্ট্রীয় টিভি ফুটেজে লোকজনকে চিৎকার করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: শান্তিতে নোবেল পেলেন ইরানের সমাজকর্মী নার্গেস মোহাম্মদি
কেরমানের ডেপুটি গভর্নর রহমান জালালি এই হামলাকে 'সন্ত্রাসী' আখ্যায়িত করেছেন।
ইরানের একাধিক শত্রু রয়েছে যারা এই হামলার পেছনে থাকতে পারে। এরমধ্যে নির্বাসিত গোষ্ঠী, জঙ্গি সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় ভূমিকা রয়েছে। ইরান হামাসের পাশাপাশি লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছে।
সোলাইমানি ছিলেন ইরানের আঞ্চলিক সামরিক কার্যক্রমের স্থপতি এবং ইরানের ধর্মতন্ত্রের সমর্থকদের মধ্যে জাতীয় আইকন হিসেবে প্রশংসিত হন। তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের সরকারকে সুরক্ষিত রাখতেও সহায়তা করেছিলেন। ২০১১ সালের আরব বসন্তের পর তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে এটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হয়েছিল যা আজও চলছে।
২০২০ সালে তার শেষকৃত্যের সময় পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৫৬ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি আহত হন।
আরও পড়ুন: ব্রিকস জোটে যোগ দিতে যাচ্ছে ইরান, সৌদি আরব ও মিশরসহ ৬ দেশ
ওটিটিতে ঝড় তুলছে দিন-দ্য ডে!
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ-তে এসেছে অনন্ত জলিল ও বর্ষা অভিনীত চলচ্চিত্র দিন-দ্য ডে। ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত অ্যাকশনধর্মী এই ছবি গত ২৩ নভেম্বর রিলিজ পায়।
রিলিজের পর পরই সিনেমাটি দর্শক মহলে দারুণ সাড়া ফেলে দিয়েছে। মাত্র ৩ দিনে দুর্দান্ত ভিউজ পেয়েছে মুভিটি।
এই সিনেমায় নায়ক অনন্ত জলিলকে একজন আন্তর্জাতিক সংস্থার পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে দেখা যায়। নানা সন্ত্রাসগোষ্ঠী দমনে অভিযানে অংশ নেন তিনি।
সেই সূত্র ধরে তিনি আফগানিস্তানে একটি মিশনে যান। সেখানে মুখোমুখি হোন দুর্ধর্ষ টেরোরিস্ট আবু খালিদের সঙ্গে। জড়িয়ে পড়েন জীবন-মৃত্যুর এক কঠিন লড়াইয়ে!
সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন ইরানি পরিচালক মোর্তেজা অতাশ জমজম। বাংলাদেশ ছাড়াও সিনেমাটির শুটিং হয়েছে ইরান, তুরস্ক ও আফগানিস্তানে।
আরও পড়ুন: নতুন সিনেমার লুক প্রকাশ করলেন অনন্ত জলিল
এত কম সময়ে এত ভিউ পাওয়ায় দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ কর্তৃপক্ষ।
তারা বলেন, ‘দিন-দ্য ডে’র মাত্র তিন দিনে এত জনপ্রিয় হয়ে যাওয়া ওটিটিতে একটা বড় ব্যাপার। অনন্ত জলিলের এটি অন্যতম বিগ বাজেটের মুভি। মুভিটি আনার জন্য দর্শক অনেকদিন ধরেই আমাদের স্যোশাল মিডিয়াতে অনুরোধ করছিলেন। মুভিটি আনতে পেরে এবং এত ভালো সাড়া পেয়ে আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ! আমরা আশা রাখি, সামনের দিনগুলোতেও দর্শক আমাদের এভাবেই ভালোবেসে যাবেন!’
উল্লেখ্য, দিন-দ্য ডে সিনেমাটি ২০২২ সালের ঈদুল আজহায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে পাঁচটি ভাষায় মুক্তি পায়। তবে মুক্তির পর সিনেমাটিকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন অনন্ত জলিল।
আরও পড়ুন: ‘দিন: দ্য ডে’ এর বাজেট নিয়ে বিতর্ক, যা বললেন অনন্ত জলিল
অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে মামলা করবেন ‘দিন: দ্য ডে’র পরিচালক
শান্তিতে নোবেল পেলেন ইরানের সমাজকর্মী নার্গেস মোহাম্মদি
ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন কারাবন্দি সমাজকর্মী নার্গেস মোহাম্মদি।
অসলোতে পুরস্কারের ঘোষণা দেন নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসন। তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কার ইরানের অবিসংবাদিত নেতা নার্গেস মোহাম্মাদির সঙ্গে পুরো আন্দোলনের স্বীকৃতি।’
তিনি আরও বলেন, 'নোবেলের প্রভাব নিয়ে নোবেল কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে না। আমরা আশা করি, এই আন্দোলন যেভাবেই উপযুক্ত মনে হোক না কেন, কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণা।’
আরও পড়ুন: ফিলিপাইনের নোবেল বিজয়ী মারিয়া রেসা কর ফাঁকির মামলায় খালাস
২০১৯ সালের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে নিহত একজনের স্মরণসভায় যোগ দেওয়ার পর গত নভেম্বরে মোহাম্মদিকে গ্রেপ্তার করে ইরানের কর্তৃপক্ষ। রিস-অ্যান্ডারসন বলেন, মোহাম্মদি ১৩ বার কারারুদ্ধ হয়েছেন এবং পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে তাকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০০৩ সালে মানবাধিকার কর্মী শিরিন এবাদির পর তিনি ১৯তম নারী যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন এবং দ্বিতীয় ইরানি নারী।
কারাগারে যাওয়ার আগে মোহাম্মদি ইরানের নিষিদ্ধ ডিফেন্ডারস অব হিউম্যান রাইটস সেন্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবাদির ঘনিষ্ঠ ছিলেন নার্গেস মোহাম্মাদি।
২০১৮ সালে ‘আন্দ্রেই সাখারভ’ পুরস্কার পান প্রকৌশলী মোহাম্মদি।
নোবেল পুরস্কারের জন্য নগদ ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার) দেওয়া হয়। ডিসেম্বরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ীরা একটি ১৮ ক্যারেট স্বর্ণপদক ও সনদ পান।
নরওয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল ৩৫০ টিরও বেশি মনোনয়নের তালিকা থেকে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কারবিজয়ীকে বেছে নিয়েছে।
গত বছর ইউক্রেন, বেলারুশ ও রাশিয়ার মানবাধিকার কর্মীরা এই পুরস্কার জিতেছিলেন। এটিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং বেলারুশ ও মিত্রদের প্রতি কঠোর তিরস্কার হিসেবে নিয়েছিল অনেকে।
এর আগে নেলসন ম্যান্ডেলা, বারাক ওবামা, মিখাইল গর্বাচেভ, অং সান সু চি ও জাতিসংঘ এই পুরস্কার পেয়েছে।
স্টকহোমে নির্বাচিত এবং ঘোষিত অন্যান্য নোবেল পুরস্কারের বিপরীতে, প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেল পাঁচ সদস্যের নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি দ্বারা অসলোতে শান্তি পুরস্কারের সিদ্ধান্ত এবং পুরস্কার দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। স্বাধীন প্যানেলের সদস্যদের নরওয়ের সংসদের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়।
শান্তি পুরস্কারটি এ বছরের ঘোষিত পুরস্কারের মধ্যে পঞ্চম। এর একদিন আগে নোবেল কমিটি সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা করে। এটি পেয়েছেন নরওয়ের লেখক জন ফসে। এ ছাড়া এ বছর রসায়নে নোবেল পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী মাউঙ্গি বাওয়েন্দি, লুই ব্রুস ও আলেক্সি ইকিমোভ।
পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পেয়েছেন ফরাসি-সুইডিশ পদার্থবিজ্ঞানী অ্যান এল'হুইলিয়ার, ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি এবং হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত ফেরেঙ্ক ক্রাউজ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান ক্যাতালিন কারিকো ও আমেরিকান ড্র ওয়াইজম্যান।
আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে ব্যাংক অব সুইডেন প্রাইজ ইন ইকোনমিক সায়েন্সেস নামে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচিত অর্থনীতির নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার নোবেল পুরস্কারের এবারের মৌসুম শেষ হবে।
ডিসেম্বরে অসলো ও স্টকহোমে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন নরওয়ের লেখক জন ফসে
চিকিৎসায় নোবেল জিতেছেন ২ বিজ্ঞানী
ইরানের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে নারীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের আহ্বান শেখ হাসিনার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসিকে ইরানের নারীরা যাতে শিক্ষার সমান সুযোগ পেয়ে মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে এবং পুরুষদের সঙ্গে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রচেষ্টা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার বিকালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট তাকে ফোন করলে তিনি এ আহ্বান জানান।
পিএমওর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর দুই নেতা দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
হাসিনা উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ নারীর মর্যাদা সংক্রান্ত কমিশন থেকে ইরানকে অপসারণের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইসিওএসওসি) প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
২২ মিনিটের টেলি-কনফারেন্স চলাকালীন তিনি স্মরণ করেন, ওআইসি ও ডি ৮-এর সদস্য হওয়ায় বাংলাদেশ ও ইরান অনেকক্ষেত্রে একে অপরকে সমর্থন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে, বিশেষ করে জাতিসংঘে ইরানকে সমর্থন বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি মানবাধিকার কাউন্সিলে কানাডার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভোটের উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ও ইরানের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও জ্বালানি সম্পর্ক জোরদারের আলোচনা
শেখ হাসিনা টেলিফোন কলের জন্য প্রেসিডেন্ট রাইসিকে ধন্যবাদ জানান এবং ইরানের নতুন প্রশাসন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও সুসংহত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ সত্যিকারের সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসা বাড়াতে উভয় পক্ষেরই আরও সম্পৃক্ততা গ্রহণ করা উচিত।
দুই দেশের চেম্বার সংস্থার মধ্যে একটি জয়েন্ট বিজনেস কমিশন (জেবিসি) গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ চলতি বছরের কোনো এক সময়ে তেহরানে ষষ্ঠ বৈঠক আহ্বানের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই বিষয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের প্ল্যাটফর্ম উভয় পক্ষকে বাণিজ্য বাধা, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যাংক লেনদেনে সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার উপায়গুলো খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
শেখ হাসিনা জানান, ক্রমবর্ধমান উৎপাদন শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক দামে মানসম্পন্ন আমদানির উৎস হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পশ্চিমা বাজারে বিশ্বমানের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল পণ্য, চীনামাটির বাসন, ওষুধ, হিমায়িত মাছ ও সামুদ্রিক খাবার, চামড়াজাত পণ্য, পাটের সুতা, আইটি, হালকা প্রকৌশল, ছোট ও মাঝারি আকারের জাহাজ, কৃষি পণ্য এবং আরও অনেক পণ্য ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে আসছে।
তিনি ইরানেও সেইসব পণ্য রপ্তানি করতে বাংলাদেশের আগ্রহ ও সক্ষমতার কথা জানান।
সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইরানকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।
তিনি প্রশংসা করেন যে এটি একটি সফল কূটনৈতিক কৌশলের ক্লাসিক উদাহরণ, যা উপসাগরীয় অঞ্চলে এবং তার বাইরেও বৃহত্তর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করবে।
আরও পড়ুন: ইরানের উপমন্ত্রী ও শাহরিয়ার আলমের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসন, আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট এবং ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর হামলার নিন্দা জানান।
তিনি জানান যে তার সরকার ইসরায়েলি বাহিনীর এই ধরনের বেআইনি কাজের নিন্দা করেছে।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর্থিক সহায়তা হ্রাস সত্ত্বেও পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি প্রসারিত মানবিক আচরণ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট রাইসিকে অবহিত করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে তিনি ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যকে সমর্থন করার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানান।
হাসিনা প্রেসিডেন্ট ও ইরানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে পবিত্র রমজান এবং বিলম্বিত নওরোজ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তিনি তাকে ধন্যবাদও জানান।
প্রধানমন্ত্রী এসময় ১৯৯৭ সালে অষ্টম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এবং ২০১২ সালের আগস্টে তেহরানে ১৬তম ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য তার ইরান সফরের কথা স্মরণ করেন।
তিনি আরও বলেন যে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যকার দৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা ভাগ করা ইতিহাস, বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইরানের প্রেসিডেন্টকে তার সুবিধামত বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি তাকে এবং ইরানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।