এনবিআর
জনগণকে হয়রানি না করে কর দিতে উৎসাহিত করুন: প্রধানমন্ত্রী
গত ১৪ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল উন্নতি হওয়ায় জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে তৃণমূলে প্রচারণা চালানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন।
‘আপনি যদি সেখানে (উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে) ভালোভাবে প্রচারণা চালান, তাহলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে (কর দিতে) এগিয়ে আসবে। তারা (করদাতারা) এখন সেবা পাচ্ছেন। সুতরাং, পরিষেবাগুলি পেতে কর দিতে হবে,’ তিনি বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাজস্ব সম্মেলন ২০২৩ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই দিনব্যাপী প্রথম এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৪ বছরে তৃণমূলসহ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও এমন লোক আছে যাদের কর দেয়ার ক্ষমতা আছে।’
আরও পড়ুন: দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এই প্রেক্ষাপটে, তিনি দেশের সমস্ত সক্ষম ব্যক্তিদের কর দিতে বলেন। কারণ সরকার তাদের জন্য পরিষেবা উন্নত করতে করের অর্থ ব্যয় করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে করের হার না বাড়িয়ে সরকার কর নেট বাড়াতে চায়। ‘আমাদের করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে,’ তিনি বলেছিলেন।
তিনি বলেন, দেশে আয়করদাতার সংখ্যা এখনও খুবই কম। প্রকৃতপক্ষে, এর কারণ হল মানুষ অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হয় এবং এখানে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
‘কোনো জবরদস্তি করা উচিত নয়। জনগণকে যেন কোনো ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা না হয়। জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে হবে,’ প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন।
কর ফাঁকি বন্ধ করে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে কাজ করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি করের নেট প্রসারিত করতে হবে এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যাতে বৃহত্তর সংখ্যক মানুষ কর প্রদান করে।’
দুই দিনের রাজস্ব সম্মেলনে ভ্যাট, শুল্ক, আয়কর এবং অনলাইন পরিষেবা সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়াতে চায়।
সম্মেলনের সাইডলাইনে ভ্যাট, শুল্ক ও আয়কর নিয়ে তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। কর সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য তথ্য বুথও থাকবে।
সম্মেলন পরিদর্শন করে জনগণ ভ্যাট, শুল্ক ও আয়কর সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং এনবিআর সদস্য আব্দুল মান্নান শিকদার ও প্রদ্যুত কুমার সরকার বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: পাতাল মেট্রোরেল বাংলাদেশের অগ্রগতির আরেকটি মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
নবনির্মিত রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এছাড়াও রবিবার প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় নবনির্মিত রাজস্ব ভবনের উদ্বোধন করেন, যেটি এনবিআরের প্রধান কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হবে।
তিনি ১২ তলা ভবনের নাম ফলক উন্মোচন করেন এবং সকালে রাজস্ব ভবন পরিদর্শন করেন।
৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
এ বছরের ১ মার্চ থেকে এনবিআর সম্পূর্ণভাবে নতুন ভবনে অফিস শুরু করবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ও আপ্যায়ন খরচ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস
ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়া যাবে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত
ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়ার সময়সীমা বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি বিবেচনায় সময়সীমা ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
আরও পড়ুন: আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ল: এনবিআর
বুধবার সময়সীমা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি এই সংস্থাটি।
এর আগে, পৃথক করদাতাদের কাছ থেকে সাড়া কম পাওয়ার কারণে রাজস্ব বোর্ড রিটার্ন জমা দেয়ার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত বাড়িয়েছিল।
আরও পড়ুন: ১ কোটি ১৬ লাখ মানুষের করযোগ্য আয় থাকলেও অধিকাংশই রিটার্ন জমা দেয় না: এনবিআর কর্মকর্তা
আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ল: এনবিআর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাণিজ্য সংস্থার আবেদন বিবেচনা করে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার তারিখ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
বুধবার ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ রাজস্ব ভবনের সভাকক্ষে জাতীয় আয়কর দিবস ২০২২ উপলক্ষে এক সেমিনারে বক্তৃতাকালে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম আনুষ্ঠানিকভাবে সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।
আরও পড়ুন: চার মাসে ৯০৯০১.৯৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় এনবিআরের
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২২ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে।
তিনি বলেন, অনেক নতুন করদাতা এ বছর স্বেচ্ছায় রিটার্ন জমা দিচ্ছেন এবং অনেক করদাতা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন। এসব বিবেচনায় সময় বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া সহজ করা হচ্ছে যাতে মানুষ ঝামেলামুক্ত পরিবেশে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করযোগ্য আয়ের সবাইকে রিটার্ন জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ৩৩০টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে এনবিআর
বড়ধরনের কর ফাঁকির জন্য লোকসান গুনছে এনবিআর
চার মাসে ৯০৯০১.৯৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় এনবিআরের
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে ৯৭ হাজার ৩০৬ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯০ হাজার ৯০১ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা আদায় করেছে।
এনবিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের (২২ অর্থবছর) তুলনায় অক্টোবরে এ পর্যন্ত রাজস্ব সংগ্রহ গড়ে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৯ হাজার ৬২২ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ৩৩০টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে এনবিআর
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৪০৪ দশমিক ৮৭ কোটি টাকার ঘাটতি দেখা গেলেও, জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে সামগ্রিক রাজস্ব আদায় রাজস্ব বোর্ডের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক বলে জানিয়েছেন এনবিআরের একজন সদস্য।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বিভিন্ন সংকট সত্ত্বেও এনবিআরের রাজস্ব আদায় এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক হয়েছে।
বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরে (জুলাই ২০২২-জুন ২০২৩) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: বড়ধরনের কর ফাঁকির জন্য লোকসান গুনছে এনবিআর
প্রথম ত্রৈমাসিকে রাজস্ব সংগ্রহ ১৩% কমেছে: এনবিআর
৩৩০টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে এনবিআর
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয় এমন ৩৩০টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের জন্য কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
শনিবার বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে দেশে কোনও প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হয়নি। আমদানি নিরুৎসাহিত করতে কতটা শুল্ক বাড়ানো যায় তা মূল্যায়ন করছে বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশন এবং এনবিআর।
আরও পড়ুন: বড়ধরনের কর ফাঁকির জন্য লোকসান গুনছে এনবিআর
বাণিজ্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, এসব পণ্য নিয়ন্ত্রণ করে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সরকার আমদানি নিরুৎসাহিত করতে গত মে মাসে ১৩৫টি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছিল।
তারপরও বাণিজ্য ঘাটতি খুব একটা কমেনি। ফলে অন্য কোনও পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো যেতে পারে কি না তা যাচাই করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশনকে অনুরোধ করে বলে জানায় সূত্রটি।
সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে কমিশন ৩৩০টি পণ্যের তালিকা তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে মন্ত্রণালয় তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠায়।
প্রধানত বিলাসিতা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পণ্য তালিকায় প্রাধান্য পায়।
আরও পড়ুন: প্রথম ত্রৈমাসিকে রাজস্ব সংগ্রহ ১৩% কমেছে: এনবিআর
২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর
বড়ধরনের কর ফাঁকির জন্য লোকসান গুনছে এনবিআর
ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া সত্ত্বেও প্রায় ২২ শতাংশ কোম্পানি তাদের ভ্যাট রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি কর নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছেন।
গত অর্থবছরে মোট ২৬ লাখ মানুষ বা ৫২ দশমিক ৪১ শতাংশ করদাতা তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। ৫০ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারকের মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ গত অর্থবছরে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আরও পড়ুন: ২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা
কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্য বা সেবার জন্য ভ্যাট নিলেও সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিচ্ছে না।
সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্মকর্তারা এনবিআরকে বিভিন্নভাবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদ ও খাতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বারবার দেশের রাজস্ব খাতকে এমনভাবে সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে করে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) করের অনুপাত অর্থনীতির আয়তন অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম। ২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার কর-জিডিপি অনুপাত নেপালে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ, ভুটানে ১৬ শতাংশ, ভারতে ১২ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মালদ্বীপে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং বাংলাদেশে এটি ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
সরকারি তথ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখালেও কর সংগ্রহে প্রায় বিপরীত প্রবণতা দেখা যায়।
জিডিপির শতাংশ হিসাবে কর সংগ্রহ ২০১৭ সালে প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে গেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন এবং বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশগুলোর একটি।
এটি অর্থনীতিবিদদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে প্রশ্ন করতে প্ররোচিত করে, কারণ রাজস্ব প্রাপ্তি অর্থনীতির সম্প্রসারণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ ইউএনবিকে জানান, বড় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন উপায়ে ভ্যাট এড়িয়ে যেতে পারে। সক্ষমতার অভাবে এনবিআর তা শনাক্ত করতে পারে না।
তিনি রাজস্ব খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজস্ব কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন, যাতে মানুষ ঝামেলামুক্ত পরিবেশে কর প্রদানে উৎসাহিত হয়।
আরও পড়ুন: প্রথম ত্রৈমাসিকে রাজস্ব সংগ্রহ ১৩% কমেছে: এনবিআর
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কিছু পরিসরে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসাগুলো ২০২২ অর্থবছরে মহামারির কারণে লোকসান থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে আসতে পারেনি। এতেই বড় কোম্পানিগুলো থেকে ভ্যাট সংগ্রহে কম প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ব্যাংকিং খাত থেকে কম সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বর্তমানে মুনাফায় মন্দাভাবের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।
মনসুর বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য মোট ভ্যাট ও কর খাতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘যা বড়ধরনের অমিল দেখায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি দেখায় যে জিডিপি বৃদ্ধি ও রাজস্ব সংগ্রহের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও অন্যান্য দেশে কর-জিডিপি অনুপাত অর্থনীতির বৃদ্ধির কারণেই বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটা ধাঁধা।’
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার কোম্পানি। যদিও এর মধ্যে দুই লাখ ৯০ হাজার কোম্পানি বা ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে জানা গেছে যে তবে এখনও প্রায় ২২ শতাংশ কোম্পানি ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয় না।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তিন লাখ ৭২ হাজার ব্যবসা ভ্যাট নিবন্ধন করেছে। তাদের মধ্যে দুই দশমিক ৪৩ লাখ বা ৮৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রিটার্ন দাখিল করেছেন।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, ৫০ লাখ টাকার নিচে বার্ষিক টার্নওভার আছে এমন কোম্পানির ভ্যাট নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর
প্রথম ত্রৈমাসিকে রাজস্ব সংগ্রহ ১৩% কমেছে: এনবিআর
চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩ এর প্রথম তিনমাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) রাজস্ব সংগ্রহ ১৩ শতাংশ কমেছে। সোমবার এনবিআরের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন দশমিক ৭০ লাখ কোটি টাকা।
এনবিআরের সাময়িক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
আরও পড়ুন: এনবিআর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে সহায়তা করে: চেয়ারম্যান
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবার রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করতে হলে অন্তত ৩১ শতাংশ আদায় বাড়াতে হবে।
যদিও এই লক্ষ্যমাত্রাকে অত্যন্ত ‘উচ্চাভিলাষী’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তারা।
আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় জুলাই-আগস্ট মাসে রাজস্ব বেড়েছে ২৩ শতাংশ। তারপরও প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধি কমেছে।
গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। সে তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব হ্রাস লক্ষ্য করা যায়।
রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি এনবিআর।
তবে আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায়ে এর প্রভাব পড়েছে।
ফলস্বরূপ, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে সামগ্রিক রাজস্ব সংগ্রহ হ্রাসের প্রবণতা দেখা যায়।
আরও পড়ুন: ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর
২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা
আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি
একজন নাগরিকের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার নিরিখে নির্ধারিত হয় তিনি প্রতি বছর কত টাকা কর দেবেন। বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ফর্মে নাগরিক কর্তৃক প্রদানকৃত নির্দিষ্ট অর্থ-বছরে (১ জুলাই থেকে পরের বছর ৩০ জুন) তার আয়ের সকল তথ্যাবলী যাচাই করে আয়কর কর্তৃপক্ষ এই আয়করের পরিমাণটি ঠিক করেন। ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেক টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) ধারীর জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক করেছে। এই হিসাবপত্রটি জমা না দিলে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জরিমানাসহ নানান ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই নথিপত্র জমা করা উচিত। চলুন, সরকারকে নিজের আয়ের বিবরণী জানানোর এই পদ্ধতিটি সম্বন্ধে জেনে নেয়া যাক।
কাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া জরুরি
করযোগ্য আয়কারী
* যাদের আয় বছরে ৩ লক্ষ টাকার উপরে
* নারী, তৃতীয় লিঙ্গ, এবং ৬৫ বছর থেকে শুরু করে তদুর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তি; যাদের আয় বছরে
৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার উপরে
* প্রতিবন্ধী; যাদের আয় বছরে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার উপরে
* গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা; যাদের আয় বছরে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার উপরে|
পড়ুন: ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর|
এছাড়াও যাদের জন্য রিটান দাখিল আবশ্যক
→ যারা ১২ অঙ্কের টিন সনদ গ্রহণ করেছেন
→ পূর্ববর্তী ৩ বছরের যেকোন বছরে যাদের আয় করযোগ্য হয়েছে কিংবা যাদের কর নির্ধারণ হয়েছে
→ যাদের নামে নির্দিষ্ট কোন কোম্পানির শেয়ার আছে
→ যারা কোন ফার্মের অংশীদার
→ যে সকল সরকারি কর্মকর্তার বেতন বছরের যে কোন সময় ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশী
→ কোন নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদের কর্মী
→ কর্ম থেকে অব্যাহতি পাওয়া বা আয় কমে যাওয়া অবস্থায় যারা করযোগ্য হয়েছেন
→ যারা কোন ধরনের মোটর গাড়ির মালিকানা পেয়েছেন
→ ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণকারি ব্যবসায়ী
→ মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীনে থাকা কোন সংঘের সদস্য
→ চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, আইনজীবী, অ্যাকাউন্টেন্ট, স্থপতি, প্রকৌশলী,
→ সার্ভেয়ার কিংবা এ জাতীয় কোন কাজের পেশাজীবী হিসেবে কোন স্বীকৃত সংস্থায় নিবন্ধিত ব্যক্তিরা
→ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধিত আয়কর কর্মকর্তা
→ শিল্প বিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংস্থার সদস্য ব্যাক্তিরা
→ সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী ব্যাক্তিরা
→ স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি, আধা সরকারি অথবা স্থানীয় সরকারের টেন্ডারে অংশগ্রহণকারি ব্যক্তিরা
→ কোম্পানির পরিচালনার পরিষদে নিযুক্ত ব্যক্তিরা
→ লাইসেন্স করা অস্ত্রের মালিকানা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা
→ স্থান, মোটরযান, বাসস্থান বা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড আর্থিক কার্যক্রম-এ অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা|
পড়ুন: ২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা|
যাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে না
→ যে অনিবাসিদের বাংলাদেশে স্থায়ী কোন ভিত্তি নেই
→ জমি বিক্রি করা বা ক্রেডিট কার্ড নেয়ার জন্য যাদেরকে ১২ অঙ্কের টিন করতে হয়েছে, অথচ কোন করযোগ্য আয় নেই
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা
প্রতি বছর কর দিবস ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই করদাতাকে তার আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হয়। জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে এই কর দিবসের মধ্যে যে কোন সময় রিটার্ন দেয়া যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই সময়ের ভেতর জমা করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে করদাতাকে রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ফর্মে উপকর কমিশনার বরাবর উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে।
আবেদন মঞ্জুর হলে বর্ধিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দেয়া যাবে। এখানে করদাতার উপর কোন জরিমানা আরোপ না হলেও বিলম্ব সুদ এবং অতিরিক্ত সরল সুদ আরোপিত হবে।
পড়ুন: এনবিআর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে সহায়তা করে: চেয়ারম্যান
আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বেতনভুক্তদের ক্ষেত্রে
* নির্দিষ্ট অর্থ-বছরে করদাতার বেতন বিবরণী
* প্রতি বছরের আয়ের কোন অংশ ব্যাংক সুদ থেকে আসলে, ঐ ব্যাংক হিসাবের নথি বা ব্যাংক সার্টিফিকেট
* বিনিয়োগ ভাতা বা বীমা প্রকল্প থাকলে তার প্রমাণাস্বরূপ নথি|
নিরাপত্তা জামানতের সুদের ক্ষেত্রে
* নির্দিষ্ট অর্থ-বছরে ক্রয়কৃত বন্ড বা ডিবেঞ্চারের অনুলিপি। বন্ড বা ডিবেঞ্চারটি ব্যাংক/কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করে থাকলে, সেই ব্যাংক/প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে প্রত্যয়নপত্র
* সুদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সুদ কেন্দ্রিক আয়ের জন্য সেই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়ন পত্র|
পড়ুন: ভ্যাট ফাঁকি রোধে ১০ হাজার ইএফডি বসাবে এনবিআর|
বাড়ি/জমি-সম্পত্তির মালিকদের ক্ষেত্রে
* এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র/ভাড়ার রশিদের অনুলিপি। এর সাথে প্রাপ্ত বাড়িভাড়া ব্যাংকে জমা রাখলে সেই ব্যাংক হিসাব বিবরণী
* পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন কর/ভূমি রাজস্ব প্রদানের রশিদের কপি
* বাড়ি ক্রয় বা নির্মাণের উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলন করলে ঐ ঋণের সুদের বিপরীতে ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং ব্যাংক সনদপত্র|
ব্যবসায়ী ও নির্দিষ্ট দক্ষতার পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে
* এক মালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসার এবং নির্দিষ্ট পেশা থেকে লব্ধ আয়-ব্যয়ের বিবরণী
মূলধনী লাভ থেকে আয়ের ক্ষেত্রে
* করদাতার স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর অথবা বিক্রি হলে তার দলিলের অনুলিপি
* মূলধনী উৎসে আয়কর জমা হলে তার চালানের অনুলিপি
* পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানীর শেয়ার লেনদেন থেকে আয় করলে তার বিপরীতে প্রত্যয়নপত্র|
পড়ুন: আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ১৩৫ পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এনবিআরের
অন্যান্য উৎসের আয়ের ক্ষেত্রে
* ব্যাংক/অন্য প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত নগদ টাকা থেকে লাভ গ্রহণ করলে তার ব্যাংক হিসাব এবং ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্টের অনুলিপি বা সনদপত্র
* ব্যাংক/অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত সুদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গার সময় কিংবা সুদ প্রাপ্তির সময় নেওয়া সনদের অনুলিপি
* এছাড়া অন্য কোন ধরনের উৎস থেকে আয় করলে ঐ উৎসের প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র
কর পরিশোধের প্রমাণ স্বরুপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* যারা ইতোমধ্যে কর দিয়েছেন, তাদের কর পরিশোধের বিপরীতে চালান কপি, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, একাউন্ট-পে-চেক
* উপরোক্ত যে কোন উৎস থেকে আয়ের ভিত্তিতে আয়কর প্রদান করা হলে কর আরোপকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র|
পড়ুন: বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আদায় তিন লাখ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই
আয়কর রিটার্ন ফরম
দরকারি সব কাগজপত্র প্রস্তুত হয়ে গেলে এবার রিটার্ন ফর্ম পুরনের পালা। এনবিআর(ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভেনিউ) থেকে প্রতি বছরই এই ফর্মে নতুন কিছু পরিবর্তন আনা হয়। নতুন বা পুরাতন যে কোন রিটার্ন ফর্ম করদাতা তার নিকটস্থ আয়কর অফিস থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন।
এছাড়াও এনবিআর-এর ওয়েবসাইট থেকেও প্রয়োজনীয় ফর্মগুলো ডাউনলোড করা যাবে। করদাতার জন্য প্রযোজ্য ফর্মগুলো নির্ভুল ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সরাবরাহের মাধ্যমে যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। এ সময় কোন বিষয় নিয়ে কোন রকম সন্দেহ বা বিড়ম্বনা সৃষ্টি হলে ব্যক্তিগত আইনজীবীর পরামর্শ নেয়া উত্তম।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে হিসাব জমা করার জন্য প্রথমে করদাতাকে এনবিআর-এর ওয়েবসাইটের ই-ট্যাক্স রিটার্ন পেজে প্রবেশ করতে হবে। এই পৃষ্ঠার মাধ্যমে করদাতা ইরিটার্ন সাইটে নিবন্ধন করতে পারবেন। এর জন্য সোজা চলে যেতে হবে ‘ইরিটার্ন’ অপশনে। পরের পৃষ্ঠায় নিচে লেখা ‘রেজিষ্ট্রেশন’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।
এবার এখানে ইংরেজিতে করদাতার ১২ অঙ্কের টিন সংখ্যা ও মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। অতঃপর ক্যাপচা বসানো, মোবাইল নাম্বার যাচাইয়ের জন্য ওটিপি দেয়া এবং পাসওয়ার্ড ঠিক করার মাধ্যমে নিবন্ধনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়ে যাবে।
পড়ুন: পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না: অর্থমন্ত্রী
এবার আবার ই-ট্যাক্স রিটার্ন সাইটে যেয়ে ১২ অঙ্কের টিন সংখ্যা ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ‘সাইন ইন’ করতে হবে। এরপরেই করদাতা ইরিটার্ন সাইটে তার নিজস্ব ইউজার ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করতে পারবেন। এখন বাম পাশের তালিকা থেকে ক্লিক করতে হবে ‘রিটার্ন সাবমিশন’-এ।
আর এর ফলেই তিনি পৌছে যাবেন অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়ার মুল অংশে। এখানে আয়ের উৎস ও হিসাব সহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সঠিক ভাবে সরবরাহ করতে হবে। প্রতি পৃষ্ঠাতেই তথ্য দেয়ার পর নিচের ‘সেভ এ্যান্ড কন্টিনিউ’ বাটনে ক্লিক করে পরের পৃষ্ঠায় যেতে হবে।
সবগুলো পৃষ্ঠায় তথ্য দেয়া শেষ হলে চূড়ান্ত ভাবে আয়কর রিটার্নের সারসংক্ষেপ দেখানো হবে। এখানে তথ্য সব ভালো ভাবে যাচাই করার পর ‘ভিউ রিটার্ন’ বাটনে ক্লিক করলে তা করদাতাকে তার রিটার্ন ফর্মটি সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা অবস্থায় দেখাবে। এখান থেকে সবকিছু আরো একবার নিরীক্ষা করে নিয়ে নিচের দিকে ‘ভেরিফিকেশন’-এ টিক মার্ক দিয়ে দিতে হবে। সবশেষে ‘সাবমিট রিটার্ন’ বাটনে ক্লিক করলেই সফলভাবে দাখিল হয়ে যাবে আয়কর রিটার্ন।
জমাকৃত আয়কর রিটার্নের একটি কপি ডাউনলোডের পর প্রিন্ট করে পরবর্তী প্রয়োজনের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ
কোথায় আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়
কর প্রদানকারিদের শ্রেণীর উপর ভিত্তি করে রির্টান দাখিলের পৃথক পৃথক আয়কর সার্কেল নির্দিষ্ট করা থাকে। যেমন- ঢাকা জেলায় অবস্থিত যে সকল বেসামরিক সরকারি ও পেনশনভুক্ত কর্মকর্তার নাম এ, বি এবং সি অক্ষরগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে, তাদেরকে ঢাকা কর সার্কেল-৭১ ও কর অঞ্চল-৪-এ রিটার্ন জমা দিতে হয়।
নতুন করদাতারা তাদের নাম, চাকুরিস্থল অথবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যে কর অঞ্চলের অধীনে পড়েছে সেখানে গিয়ে ১২ অঙ্কের টিন সংখ্যা উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এছাড়া প্রয়োজনে তারা নিকটস্থ আয়কর অফিস কিংবা কর পরামর্শ কেন্দ্র থেকে সার্কেল অফিস সম্বন্ধে জেনে নিতে পারবেন।
শেষাংশ
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের টাকা নাগরিকদের আয়কর থেকে আসে। সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর বেতন-ভাতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের একটা বেশ বড় অংশই নির্ভর করে এই আয়করের উপর। তাছাড়া সরকারি যাবতীয় পরিষেবাগুলোকে সুষ্ঠুভাবে নাগরিকদের কাছে পৌছে দিতে আয়করের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। তাই নিজেদের স্বার্থেই আয়কর নিশ্চিত করতে প্রতিটি সচেতন নাগরিকের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া উচিত।
পড়ুন: আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ল
২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট জমা দেয়ার নিয়ম বাতিল নিয়েছে।
রবিবার রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। যা ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: ভ্যাট ফাঁকি রোধে ১০ হাজার ইএফডি বসাবে এনবিআর
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৩৮টি বিভাগের অধীনে সেবা পেতে ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট দেখানোর নিয়ম চালু করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণের জন্য ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলক ছিল।
সংশোধিত নির্দেশনা অনুসারে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কর সংক্রান্ত নথি দেখাতে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় ব্যবসায়ী সংগঠনের অনুরোধের ভিত্তিতে এনবিআর তাদের শর্ত শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কুটির,ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) ঋণ বিতরণের সর্বোচ্চ সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ঋণের জন্য বাধ্যতামূলক ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট এর কারণে গ্রামীণ পর্যায়ে ঋণ বিতরণ ধীর গতিতে হয়।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজস্ব বোর্ড ঋণগ্রহীতার করযোগ্য আয় না থাকলে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট দেখানোর শর্ত বাদ দেয়।
আরও পড়ুন: আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ১৩৫ পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এনবিআরের
২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা
২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা
সাধারণ ক্ষমার আওতায় কালো টাকার মালিকদের কর প্রদানের হার ৮০ দশমিক ৮৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই হাজার ৩০০ জন হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১২ হাজার।
সোমবার বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ তথ্য থেকে এসব জানা যায়।
গত অর্থবছরে শেয়ারবাজারে সমন্বয়, জমি-ফ্ল্যাট ক্রয়, ব্যাংকে টাকা রেখে সব ধরনের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল।
তবে বছর শেষে দেখা গেছে, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মাত্র দুই হাজার ৩০০ করদাতা এগিয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুন: এনবিআর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে সহায়তা করে: চেয়ারম্যান
এত কম সাড়াদানের পেছনে গত বছর উচ্চ কর আরোপকে দায়ী করা হচ্ছে।
অর্থবছর ২২ এর ২৫ শতাংশের তুলনায় অর্থবছর ২১ এ করের হার ছিল ১০ শতাংশ।
এছাড়া কালো টাকা সাদা করতে ওই করের ওপর পাঁচ শতাংশ জরিমানাও দিতে হতো। এতে মোট করের হার দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এ কারণে সাড়া কম ছিল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, এ ধরনের সুযোগ দেয়া অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থী।
আরও পড়ুন: ভ্যাট ফাঁকি রোধে ১০ হাজার ইএফডি বসাবে এনবিআর
তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয় নৈতিকতার বিনিময়ে এই ধরনের সুযোগ থেকে খুব কমই লাভ হয়েছে।
এ ধরনের সুযোগ শুধু দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেয় এবং দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে বলেও জানান টিআইবি প্রধান।