সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের
দেশের উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুরমা নদীসহ জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীর পানি কমলেও ভোগান্তি বেড়েছে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের। নদীর পানি ধীরে কমায় ভোগান্তি দীর্ঘ হচ্ছে তাদের।
সরজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের উঁচু এলাকায় পানি অনেকটাই কমেছে, তবে নিচু এলাকায় পানি এখনো স্থির হয়ে রয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘরে এখনও পানি রয়েছে। জনবসতি ও সড়কে হাঁটু পানি। এছাড়া ভোগান্তিতে পড়েছেন সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, ছাতক, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সুরমা নদীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ৩
সদর উপজেলার খাইমতর গ্রামের জহুর উদ্দিন বলেন, ‘বাড়ি থেকে কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। সকালে কলেজে গেছিলাম পানিতে ভিজে। রাস্তাঘাট ভাঙা, কাদা মাটি ভরা। গাড়ি চলে না। অনেক জায়গা হেঁটে হেঁটে যাওয়া লাগছে।’
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাসননগর এলাকার মামুন আলী বলেন, ‘বন্যার পানি কমায় আমরা খুব অসুবিধায় আছি। ঘরের ভেতর থাকার মতো আর অবস্থা নেই। ঘরে এখনও হাটু পানি, হাওরের ঢেউয়ে ঘরের টিন সব ভেঙে ফেলছে। খাবার দাবারও ঘরে নেই।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের তথ্য মতে, রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় (১৩ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত) সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কমেছে ১৭ সেন্টিমিটার। এই ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ মিলিমিটার।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করেছে। দেশের উজানে বৃষ্টি কম হচ্ছে। যার কারণে পাহাড়ি ঢলের তোড় কমে আসছে। সুনামগঞ্জেও বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে। এখন বন্যা পরিস্থিত উন্নতির দিকে।’
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে তৃতীয় দফায় বন্যা, লাখো মানুষ পানিবন্দি
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৩ লাখ ডলার সহায়তা
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৩ লাখ ডলার সহায়তা
জুন মাসের মৌসুমি বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বহুমুখী নগদ সহায়তা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই অর্থ বিতরণ করবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের কারণে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫ লাখের বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ৩০ হাজার মানুষ।
ভারী বৃষ্টিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে আরও একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে জরুরি সহায়তার প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসএআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মধ্যে দিয়ে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও পানি কেনা, জীবিকা নির্বাহ, আশ্রয়কেন্দ্র মেরামত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বাংলাদেশের জন্য ইউএসএআইডি উন্নয়নখাতে ২০০ মিলিয়ন ডলার এবং মানবিক সহায়তায় আরও ১০০ মিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাজেট করেছে। এ অর্থ বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়ানো, দুর্যোগ ঝুঁকি কমানো, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনের প্রচার, পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীলতা বাড়ানোতে ব্যয় করা হবে।
চেরাপুঞ্জিতে ঢল, ফের পানিবন্দি সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা
প্রথম দফার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবারও বন্যার কবলে পড়ছে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বাড়ছে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটাসহ সকল নদনদীর পানি।
সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ডুবেছে সুনামগঞ্জ শহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল। সেইসঙ্গে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক। আর এতে আবারও বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছেন ভাটির এ জেলার ২৫ লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন: সিলেট-সুনামগঞ্জে আবারও বন্যার আশঙ্কা
এদিন ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, সাহেববাড়ি ঘাট ও পুরানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট।
এমনকি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দূর্গাপুর সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে আবারও তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক এখন পানির নিচে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওইসব অঞ্চলের পাঁচ লাখের বেশি মানুষকে।
তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘সকল নদীর পানি আবারও বাড়ছে। সড়কে পানি ওঠায় জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন সুনামগঞ্জে যেতে হচ্ছে নৌকায়। বন্যা আমাদের অবস্থা একদম নাজেহাল করে দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন: সিলেটে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, তৃতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা
সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে ফের বন্যার আশঙ্কা
সিলেট-সুনামগঞ্জে আবারও বন্যার আশঙ্কা
গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদনদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। তবে জুলাইয়ের শুরুর দিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নদীগুলো পানি ফের বেড়ে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বন্যার মধ্যমেয়াদি পূর্বাভাস সম্পর্কিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু দেশের ওপর সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। ফলে, দেশের ভেতরে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা অববাহিকার উজানের কিছু স্থানে বিভিন্ন সময়ে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাঝারি থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।’
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যায় সড়কের ক্ষতি ২২০ কোটি টাকা
সুনামগঞ্জে ট্রাকচাপায় শিশু নিহত
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ট্রাকের চাপায় মরিয়ম আক্তার (৭) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুন) সকাল ১১টায় উপজেলার সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের আব্দুল মজিদ কলেজের সামনে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহত মরিয়ম উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের ইমদাদুল হকের মেয়ে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক পার হওয়ার সময় সিলেট থেকে সুনামগঞ্জগামী একটি ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মরিয়ম। এসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। খবর পেয়ে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরিয়মের লাশ উদ্ধার করে।
জয়কলস হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।’
সিলেট-সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
বৃষ্টি ও উজানের ঢল কমে আসায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে নদ-নদীর পানিও কমেছে।
গত দুই দিন রৌদ্রজ্জ্বল থাকায় বন্যার পানি কমেছে সিলেটের উপজেলাগুলোতে।
সিলেট শহরে সুরমা নদীর পানি কমে বর্তমানে বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাসাবাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। কিছু এলাকায় পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে অনেক পরিবার বাড়িতে চলে গেছেন।
তবে সিলেট শহর এলাকার ড্রেন, ছড়া, খাল পরিষ্কার না থাকা এবং এক ড্রেনের সঙ্গে অন্য ড্রেনের সংযোগ না থাকায় পানি নামছে না। ড্রেনের ময়লা উপরে উঠে এসে ভয়ংকর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। বাসাবাড়িতেও জমে আছে ময়লা পানি।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ের পর আর কোনো বৃষ্টি হয়নি। তবে আগামী ৩ দিন সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার (২২ জুন) সকালে সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি অন্যান্য পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।
সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে শনিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে শনিবার সকালে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
শনিবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শুক্রবার এই পয়েন্টে পানি ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার সকাল ৯টায়ও একই মাত্রায় প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে গতকালের তুলনায় আরও কমেছে। শনিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে শুক্রবার এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়া আজ শনিবার লোভা, সারি, ডাউকি, সারিগোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি আরও কমেছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে।জেলা প্রশাসন জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে সূর্য ওঠায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সুরমা, খাসিয়ামারা ও চিলাই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে কিছু কিছু স্থানে এখনো পানি রয়েছে।
পানি নেমে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
স্থানীয়রা জানান, খাবারের সংকট রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
আরও পড়ুন: বন্যায় বিদ্যুৎহীন সিলেটের ১২ হাজার গ্রাহক
বাজিতপুরের মো. কামাল উদ্দিন বলেন, পানিতে দুই বার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমবার ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও দ্বিতীয়বার সব শেষ হয়ে গেছে। গ্রামের অনেকেরই এখন ঘরে থাকাই বিপজ্জনক হয়ে গেছে।
শ্মশানঘাট এলাকার উৎস রেস্টুরেন্টের মালিক বিশ্বনাথ রায় বলেন, নদীর পানি শুক্রবার থেকে দ্রুত নামতে শুরু করেছে। এতে এ এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
এদিকে হাওর পাড়ের ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা কাটছে না। শ্রীপুর, পলিরচর, আফছন নগর, ডালার পার ও হাওড় পাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহার নিগার তনু বলেন, পানি কমতে শুরু করলেও দুর্গত মানুষদের ত্রাণ সহায়তা পেতে কোনো সমস্যা হবে না। পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা রয়েছে।
হবিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্ট শেরপুর, মার্কুলী ও আজমিরীগঞ্জ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যায় এ পর্যন্ত ৭৮৩ হেক্টর আউশ ও ১৭৫ হেক্টর শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নোমান হোসেন বলেন, বন্যার পানি কিছুটা কমছে। বন্যায় এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া এলজিআরডি'র ৫৭ কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
এদিকে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যার্তদের জন্য ২ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫১০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, প্লাবিত শতাধিক গ্রাম
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে করে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ মানুষ।
এছাড়া চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছে সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষ।
এদিকে সুনামগঞ্জে নদীর পানি কমলেও বাড়ছে হাওরের পানি। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকেই উঠেছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
জানা যায়, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, পশ্চিম হাজিপাড়া, কালিপুর, মল্লিকপুর, হাছননগর, শান্তিবাগ, ধোপাখালি, ষোলঘর, নবীনগর, বাঁধনপাড়া, কাজির পয়েন্ট, ওয়েজকালী সুলতানপুরসহ সবকটি পাড়া-মহল্লার বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
এছাড়া শহরের মধ্যবাজার, কাঁচাবাজার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: টেকনাফে ভারী বৃষ্টিতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা মাফুজ আলী বলেন, আমার বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। বাসার আসবাবপত্রসহ জরুরি জিনিস গুছিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি।
ওয়েজকালী এলাকার বাসিন্দা জালালি বলেন, আমার বাসায় পানি উঠেছে। ঘরবন্দি আছি।
মোহনপুর ইউনিয়নের খামারি তৈয়বুর বলেন, আমার খামারে পানি ঢুকে পড়েছে। পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। এলাকার মানুষ পানিবন্দি আছেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ২০০ হেক্টর আউশ ধানের ক্ষতি হয়ে গেছে। পানি কমে গেলে দেড় কোটি টাকার ধান উৎপাদন হতো।
মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম বলেন, জেলার দুই হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। টাকার অংকে অনুমান পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জ পৌর শহরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে, সেজন্য পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ভারী বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের কিছু পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে ছাতক, সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শহরের কিছু জায়গা প্লাবিত হয়েছে। জেলায় আমরা ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। যাদের প্রয়োজন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে, আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৫ পরিবার
সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, আরও ৩ জেলায় বন্যার আশঙ্কা
বন্যাকবিলত সুনামগঞ্জে ঈদের আনন্দ মাটি
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। শহরের বেশিরভাগ সড়কে হাঁটু পানি।
অনেকের বাসা-বাড়ি ও দোকানে পানি ঢোকায় দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শহরের অনেক ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যাকবলিত অঞ্চলের এইচএসসি পরীক্ষা পরে নেওয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী
সোমবার সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নিন্মাঞ্চল। এদিকে প্রচণ্ড ঝড় ও বজ্রপাতের কারণে রাত থেকে নেই বিদ্যুৎ।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ঝড় ও বজ্রপাতের কারণে ৩৩ কেভি লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে ভল্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে। তারা সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, উপত্যকা, হাছননগর, আরপিননগর, উকিলপাড়া, ডিএস রোড, ষোলঘর, শান্তিবাগসহ বিভিন্ন সড়কে পানি উঠেছে। অনেকের দোকানের জিনিসপত্র ভিজে গেছে। ভোর থেকেই দোকানের মালামাল উপরে তোলা অথবা স্থানান্তর করা নিয়ে ব্যস্ত দোকানিরা। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও আবাসিক এলাকার উপর দিয়ে পানি গিয়ে পড়ছে ঝাওয়ার হাওরে।
মুজিবুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উঠানে ও সড়কে পানি উঠেছে। শহরের বেশিরভাগ সড়কেই পানি। বৃষ্টিতে ভিজে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। এর আগে কোনো ঈদে এভাবে বৃষ্টি হতে দেখিনি। এবারে ঈদে কোনো আনন্দ নেই, ২০২২ সালের জুনের মতো বন্যা আতঙ্কে আছে মানুষ।
নুরুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেছেন, ‘যে পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে নদী, হাওর-বাওর, খাল-বিল, পুকুর সব পানির নিচে। ঈদের আনন্দ সব মাটি হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ রহম করো।’
সুনামগঞ্জ শহরের রাস্তায় সুরমা নদীর পানি উঠে গেছে। আলিমাবাগ উকিলপাড়া রাস্তায় প্রায় হাঁটু পানি।
নতুন পাড়ার মুদি দোকানি অমল দাস বলেন, ‘এভাবে পানি বাড়বে বুঝতে পারিনি। আমার দোকানের বেশিরভাগ মালামাল পানিতে ভিজে গেছে। ভোরে দোকানে এসে মালামাল উপরে তুলছি।’
তিনি বলেন, মাঝে বৃষ্টি থামায় পানি কিছুটা কমেছিল, বৃষ্টিতে এখন আবার পানি বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ৭ দিন বন্ধ থাকার পর সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্র চালু
পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে সুনামগঞ্জের একাধিক বেড়িবাঁধ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে টানা বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে সুনামগঞ্জের একাধিক স্থানের বেড়িবাঁধ।
পাহাড়ি ঢলে রাস্তা ভেঙে ও তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ছোট-বড় সব ধরনের যান চলাচল। গৃহহীন হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার।
এদিকে, সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা খাসিয়ামারা নদীর স্রোতে লক্ষীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া, ইদ্রিসপুর, চৌকিরঘাট বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন হাওরে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানি প্রবেশ করায় আমনের বীজতলা, আউশ ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত
অন্যদিকে, বোগলাবাজারে চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাও-টেংরাটিলা যাতায়াত রাস্তা ভেঙে গেছে। মহব্বতপুর বাজার-লিয়াকতগঞ্জ বাজার সড়কে নোয়াপাড়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদরের সঙ্গে লক্ষীপুর ইউনিয়নের ২৮টি ও সুরমা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামসহ সীমান্তের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া, চৌধুরী পাড়া, মৌলারপাড়, চিলাইপাড়, পুরান বাশতলা গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, খাশিয়ামারা নদীর স্রোতে আমার ইউনিয়নে নোয়াপাড়া, ইদ্রিসপুর ও চৌকির গাঁটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে বেশ কিছু গ্রাম।
শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো করা হয়েছে বলে জানান লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান।
সুরমা ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, খাশিয়ামারা নদীর স্রোতে সুরমা ইউনিয়নের কিছু সংখ্যক বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের জন্য শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিলন খান বলেন, চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বোগলাবাজার ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পুকুরের মাছ ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন দোয়ারাবাজারে নিকট সুরমা নদী ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তিন দিন ধরে টানা বর্ষণ ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার সুরমা, চেলা, চলতি, মরা চেলা, খাসিয়ামারা, মৌলা, কালিউরি, ধূমখালিসহ উপজেলার সব নদী-নালা, হাওর ও খাল-বিলের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে বলেও জানান সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫০০ পরিবার পানিবন্দি
কয়রায় অনেক বেড়িবাঁধ অরক্ষিত, আতঙ্কে খুলনার উপকূলবাসী
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ।
তিনি বলেন, ‘ধানের দাম নির্ধারণের জন্য দুদিন পর আমাদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান সেদিকে খেয়াল রাখব। আমরা চাই কৃষকেরা যাতে ধান চাষে উৎসাহিত হন, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে।’
শুক্রবার সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার দেখার হাওরে বাহাদুরপুর গ্রামে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আয়োজিত বোরো ধান কাটা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রকৃত কৃষকেরাই যেন সঠিক দামে ধান বিক্রি করতে পারেন, সেদিকে কঠোরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। ধানের দামে যেন মধ্যস্বত্বভোগী কেউ সুবিধা নিতে না পারেন। ধান বিক্রিতে যেন কোনো সিন্ডিকেট তৈরি না হয়, সেজন্য ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হাওরের ফসলকে ঝুঁকিমুক্ত করতে বর্তমান সরকার বহুমুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। পাকা ধান যাতে দ্রুত কৃষকের ঘরে তোলা যায়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্র জন্য কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার দিচ্ছেন।
হাওরে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে তাই আগাম ও স্বল্পজীবনকালীন জাতের ধান চাষ করতে কৃষকদের পরামর্শ দেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধান, যেগুলোর উৎপাদন অনেক বেশি, সেগুলো চাষে এগিয়ে আসুন। বন্যা মোকাবিলা করে ফসল উৎপাদন যাতে চালিয়ে যেতে পারি সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী কৃষকদের মধ্যে কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করেন।
এ সময় সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জে এক হাজারের বেশি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা চলছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৮৫৫ হারভেস্টার ও অন্য জেলা থেকে নিয়ে আসা ২০০ হারভেস্টার রয়েছে।
এছাড়া, এ বছর ব্রি ২৮, ব্রি২৯ ধানের চাষ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এমএ মান্নান, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক, সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মলয় চৌধুরী, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।