চীন
শি-হাসিনার বৈঠক: বাংলাদেশকে অনুদান ও ঋণ সহায়তা দেবে চীন
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, বাংলাদেশকে চারটি ক্ষেত্রে- অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ সহায়তা দেবে চীন।
তিনি বলেন, এজন্য চীনের একটি টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে খুব শিগগিরই দেশটিতে যাবে।
বুধবার(১০ জুলাই) বিকালে গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে শি জিনপিং এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানিয়ে বলেন, বৈঠকটি 'ফলপ্রসূ' ও 'অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে' অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ করতে চায় চীন।
বাংলাদেশ ও চীন তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করবে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে শি 'কৌশলগত ও গভীর সম্পর্ককে দ্বিতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
শেখ হাসিনা গত কয়েক দশকে চীনের অভূতপূর্ব উন্নয়নকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর সংক্ষিপ্ত হয়নি, কর্মসূচি অপরিবর্তিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যু উল্লেখ করার আগে শি বলেন, 'আমি জানি আপনারা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। এটি আপনার জন্য একটি চলমান সমস্যা। আমরা এটি সমাধানে আপনাকে সহায়তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে শি বলেন, প্রয়োজনে তারা মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মোহাম্মদ নাইমুল ইসলাম খান প্রেস ব্রিফিংয়ে ছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা চীনা প্রধানমন্ত্রীর: হাছান মাহমুদ
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনকে সহায়তা করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা কামনা করেছেন।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) চীনে সফরকালে দেশটির নেতার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ওয়াং হানিংয়ের নেতৃত্বাধীন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা ন্যাশনাল কমিটি অব দ্য পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত করে বলেন 'রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আমাদের সহায়তা করুন।’
গত জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর চীনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমানো, আগামী বছর দু'দেশের মধ্যে অর্থবহ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা সাড়ে ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে এবং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: বুধবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে বেইজিং ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী
হাছান মাহমুদ বলেন, 'এই বিষয়টি বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
সিপিপিসিসি চেয়ারম্যান বলেন, তারা বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং এ বিষয়ে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করবেন।
তিনি বলেন, 'আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।’
মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এম নাঈমুল ইসলাম খান এবং বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ঋণের সুদের হার কমাতে এআইআইবির প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বান
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে সই হতে পারে ২০ সমঝোতা স্মারক
চার দিনের সরকারি সফরে আগামীকাল সোমবার (৮ জুলাই) চীনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে প্রায় ২০টির মতো সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে। এছাড়াও কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণাও আসতে পারে।
রবিবার (৭ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা আছে।’
প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত ব্যাংকুয়েটের (ভোজের) মাধ্যমে গ্রেট হলে এসবের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব ও অন্যান্য সচিবসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।
সোমবার (৮ জুলাই) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইট যোগে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী। একই দিন চীনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।
সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানানো হবে।।
পরদিন (৯ জুলাই) সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
একই দিন সাংগ্রিলা সার্কেলে ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনটিতে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করবে।
ওইদিন দুপুরে চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হিউনিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকালে ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর রাতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।
মঙ্গলবার (১০ জুলাই) সফরের তৃতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
আরও পড়ুন: সবার সঙ্গে দেশের সুসম্পর্ক দেখে গাত্রদাহ হচ্ছে বিএনপির : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানের পর শেখ হাসিনা ও লি ছিয়াং দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন।
এরপর দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে এবং কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে।
এদিন বিকালে গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ ও চীন একটি যৌথ বিবৃতি দেবে।
বুধবার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী চীন ত্যাগ করবেন এবং দুপুর ২টায় ঢাকায় পৌঁছাবেন।
সফরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন দেবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৯৫২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা হয়। সে সময় চীনের তৎকালীন নেতা মাও সে-তুংয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বঙ্গবন্ধু রচনা করেন “আমার দেখা নয়াচীন” বইটি।
ড. হাছান বলেন, চীন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, যার ধারাবাহিকতায় দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক “কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্ব”পর্যায়ে উন্নীত হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর চীনের পক্ষ থেকে সরকারি সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
চীন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশের অগ্রাধিকার
এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অগ্রাধিকার পাবে।
তিনি আরও জানান, কোনো চুক্তি হবে না, দুই দেশের মধ্যে শুধু সমঝোতা স্মারক সই হবে।
চীনের বিভিন্ন প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের চাহিদা ও নির্ধারিত প্যারামিটারগুলো পূরণ হলে যেকোনো প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, 'চীনের যেকোনো প্রস্তাব অবশ্যই আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক, তবে আমরা যাচাই-বাছাই করে পরে সিদ্ধান্ত নেব।’
অফশোর ব্যাংকিং সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যেকোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি বাংলাদেশে এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে।
তিনি বলেন, 'কোনো দেশ যদি আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখতে চায়, তারা রাখতে পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাদের সঙ্গে আমরা স্বস্তি পাই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) মধ্যে সমঝোতা স্মারক নবায়ন এই সফরের সময় নয়, পরে হতে পারে।
সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা গেলে প্রেসিডিয়াম সদস্যের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পরে চীন যাবে বলে জানান তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধান রয়েছে এবং দুই দেশ অ-শুল্ক বাধা দূর করে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি রপ্তানির উপায় খুঁজে বের করবে।
তিনি আরও বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সফর এই সম্পর্ক জোরদার ও সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।
তিস্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তিস্তা ভারতের সঙ্গে যৌথ নদী এবং তারা একটি ভালো প্রস্তাব দিয়েছে।
এর আগে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, স্টেট কাউন্সিলের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুলাই চীনে সরকারি সফর করবেন। নতুন মেয়াদ শুরু হওয়ার পর এবং চীনে তার শেষ সফরের পাঁচ বছর পর এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম চীন সফর।
মুখপাত্র বলেন, 'দুই দেশের নেতারা কীভাবে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব গভীর করা যায় এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সহযোগিতা প্রসারিত করা যায়। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে গভীরভাবে মত বিনিময় করবেন।’
মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই সফরের মাধ্যমে পাঁচটি মূলনীতির চেতনা সামনে রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। মূলনীতিগুলো হলো- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা গভীর করা, উন্নয়ন কৌশল আরও সমন্বয় করা, উচ্চমানের বেল্ট-রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়া, বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ-বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন স্তরে উন্নীত করা।'
আরও পড়ুন: বিএনপি কানেক্টিভিটির মর্ম বোঝে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার একমাত্র বাংলাদেশের উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তিস্তা নদী নিয়ে যে প্রকল্পই হোক না কেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের। এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিস্তা নদী নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিক্যাব টকে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর বিভিন্ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন রূপরেখা দেবে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দুই দেশের অবস্থানের সমন্বয় করার সুযোগ দেবে বলে আশা ব্যক্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: চীন-বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারে শেখ হাসিনার আসন্ন সফর: রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশের অনুরোধে চীন তিস্তা নদী নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে কী করা যায়, তা সম্পূর্ণ বাংলাদেশেরই সিদ্ধান্ত।’
ভারতও তিস্তা প্রস্তাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং তিস্তা নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে গত ২৫ জুন সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পে অর্থায়ন প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের জন্য সবচেয়ে লাভজনক কোনটি সেটি বিবেচনা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা তিস্তা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এতে অর্থায়নের জন্য চীন ও ভারত পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে। যে প্রস্তাব আমাদের দেশের জনগণের জন্য আরও লাভজনক হবে অবশ্যই সেটি গ্রহণ করতে হবে।’
রাষ্ট্রদূত ইয়াও পৃথক এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ও এর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘এটা আপনাদের জাতীয় পররাষ্ট্রনীতির সফলতা। তাই আমরা সুসম্পর্ক দেখতে চাই। আমরা চাই আমাদের সম্পর্ক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করুক এবং অন্যান্য দেশ এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখুক। সুতরাং এটি একটি উভয় পক্ষের জয়সূচক সহযোগিতা এবং এটি সব পক্ষকে উপকৃত করবে।’
এই প্রকল্প নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমি কোনো উত্তেজনা দেখছি না। আমরা চাই শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হোক। প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের এই প্রকল্প প্রয়োজন, তাই এটি শিগগিরই শুরু ও সময়মতো শেষ করা যায় কি না সেটিই দেখছি আমরা।’
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে, এটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব এবং এই উন্নয়নে সহায়তার মাধ্যমে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে চীনের সম্পৃক্ত হওয়ার এটি একটি ভালো সুযোগ এবং এ প্রস্তাবে আমাদের খুব সক্রিয় ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।’
আরও পড়ুন: ইকোনোমিক জোনে ২১.৮৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে চীনের কোম্পানির চুক্তি সই
রাষ্ট্রদূত বলেন, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের মানবিক চেতনার ভূয়সী প্রশংসা করে চীন।
চীন যুদ্ধবিরতি ও সংলাপের জন্য মিয়ানমার সংঘাতে জড়িত সব পক্ষকে সক্রিয়ভাবে চাপ দিচ্ছে। এভাবে দেশটি শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের পথ প্রশস্ত করছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
ইয়াও বলেন, ‘বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। পাশাপাশি যৌথভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী চীন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরে শিক্ষা, গণমাধ্যম, অবকাঠামো, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ, বাংলাদেশ থেকে কৃষি আমদানি এবং ডিজিটাল ইকোনমির মতো খাতে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক বর্তমানে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে এবং উন্নয়নেরও অনেক সুযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আগামী বছর বাংলাদেশ ও চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে। কীভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বাড়ানো যায়, বিনিময়ের পরিধি বাড়ানো যায়, সহযোগিতার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায় এবং দুই দেশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালো, গভীর ও ঘনিষ্ঠ করা যায় সে বিষয়ে উভয় পক্ষেরই চেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং অতীতের অর্জনগুলোর ওপর ভিত্তি করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এই সফর নিঃসন্দেহে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। পাশাপাশি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে নতুন সাফল্য এনে দেবে এবং সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে।’
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর সবার কাছে বহুল প্রত্যাশিত। ‘এই সফর আগামী পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময় চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, বেশ কয়েকটি সহযোগিতা দলিল সই এবং যৌথভাবে বড় ধরনের সহযোগিতার বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।
এই সফরের মাধ্যমে উভয় পক্ষ দৃঢ়ভাবে একে-অপরকে সমর্থন করবে এবং সব ক্ষেত্রে যোগাযোগ আরও গভীর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের চতুর্থ বৈদেশিক ঋণদাতা চীন; ঋণ পরিশোধের সময়কাল নিয়ে উদ্বেগ বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নে চীনকে প্রয়োজন: শাহরিয়ার আলম
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, দ্রুত শিল্পায়নের জন্য চীনকে বাংলাদেশের প্রয়োজন। গত ১৫ বছরে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গত এক দশকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক গভীর হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'শিল্পোন্নত বাংলাদেশের জন্য চীনকে প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য, গত এক দশকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।
বুধবার (৩ জুলাই) এক গোলটেবিল আলোচনায় উদ্বোধনী বক্তব্যে শাহরিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক সত্যের কথা স্মরণ করেন। পাশাপাশি গত দেড় দশকে চীনের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের তুলনা করার কোনো কারণ নেই।
শাহরিয়ার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরকে ঘিরে চলমান অপপ্রচারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজ (বিএফআরএস) আয়োজিত এই আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য-বিনিয়োগ, অবকাঠামো ও নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ-জাপানের আলোচনা
সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের (সিএ) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান, বিজিএমইএর পরিচালক শামস মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ওক্যাবের সাধারণ সম্পাদক জুলহাস আলম, অধ্যাপক রুমানা ইসলাম, ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব, ডিক্যাবের সাবেক সভাপতি রাহীদ এজাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সহ চালু করা নতুন বিষয়গুলোও আলোচনায় এসেছে।
আলোচনার শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির।
প্রবন্ধে বলা হয়, ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এতে বলা হয়, ২০১০ ও ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর দুই দেশের মধ্যে বর্তমান উষ্ণ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ককে 'সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে' উন্নীত করেছে।
ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ২১টি চুক্তি সই হয়। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলসহ বড় বড় প্রকল্পে সহযোগিতা করে অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে চীন। এ পর্যন্ত ২১টি সেতু, ১১টি মহাসড়কসহ ৫৫০ কিলোমিটার সড়ক এবং ২৭টি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে চীন।
আরও পড়ুন: আইওসি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠক: আইওসিইন্ডিও কার্যক্রমের জন্য বাজেটের বিধান নির্ধারণ
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও বাড়ছে। ২০২০ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে চীন। পরে তা বাড়িয়ে ৯৮ শতাংশ করা হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে, চীন ছিল বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানির পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও তার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর খুবই ফলপ্রসূ হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর খুবই ফলপ্রসূ হতে যাচ্ছে।’
চীনের মন্ত্রী বলেছেন, 'সুতরাং আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে আমাদের দুই দেশের সরকার ও সরকারি সংস্থাগুলো আগামীতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি সাধারণ পরিকল্পনা তৈরি করবে।’
তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সম্পর্কের ইতিহাস এবং বন্ধুত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে অত্যন্ত গভীর ও বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে।
জিয়ানচাও বলেছিলেন, ‘প্রায় ৫০ বছরে এই বন্ধুত্ব পাকাপোক্ত হয়েছে। যেহেতু আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অর্জনের অভিযান, ভিশন-২০৪১ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ও দৃঢ় অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের অংশীদার চীন।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের আধুনিকায়ন অভিযানে প্রতিবেশী ও অংশীদার হিসেবে চীন একটি ব্র্যান্ড হিসেবে রয়েছে। তাই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের কাঠামোর মধ্যেই আমরা এটা করব।’আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো সুযোগের পক্ষে ফ্রান্স
বাংলাদেশের চতুর্থ বৈদেশিক ঋণদাতা চীন; ঋণ পরিশোধের সময়কাল নিয়ে উদ্বেগ বিশেষজ্ঞদের
চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নের অন্যতম প্রধান উৎস ও চতুর্থ বৃহত্তম ঋণদাতা। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে দেওয়া ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতির পর বেড়েছে চীনা ঋণ, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্ষিক ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঋণ ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ১৫ শতাংশের মধ্যে সুদের হার ধরা হয়। যা পরিশোধের সময় মাত্র ১০-১৫ বছর। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো ঐতিহ্যবাহী ঋণদাতারা ৩০ থেকে ৪০ বছর সময় দেয়।
ঋণ পরিশোধের এই সময়কাল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থার ওপর চাপ পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: জলের যুদ্ধে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে পরাজিত সাঁতারু তাহেরা
এছাড়াও এসব ঋণের সঙ্গে যুক্ত প্রকল্পে সীমিত ঠিকাদার বাছাই প্রক্রিয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদরা, যা প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও ব্যয়-কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধের ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যেতে পারে, যার ফলে বড় ধরনের ঋণের বোঝা দেখা দিতে পারে।
গত চার অর্থবছরে চীন প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেওয়া তাদের মোট ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশ। ঋণের এই প্রবাহ সত্ত্বেও, এখনও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনের থেকে এগিয়ে জাপান, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বার্ষিক ঋণের প্রায় ১০ শতাংশ চীন থেকে আসে, গত দুই বছরে বছরপ্রতি অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর চীনা ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি শ্রীলংকার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে বড় ঋণ নেওয়ার ফলে ঋণ পরিশোধের মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়।
ড. মনসুর বলেন, চীনা ঋণ ডলারে পরিশোধ করা হয়, যা ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার নিম্নমানের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়ায়।
বিশ্বব্যাংক, এডিবি বা জাপান থেকে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়, যা চীনা ঋণকে কম জনপ্রিয় করে রাখে।
এই উদ্বেগ সত্ত্বেও, ড. মনসুর চীনা ঋণের একটি ইতিবাচক দিকের কথা তুলে ধরে বলেন, তাদের রাজনৈতিক সমঝোতার পরিবর্তে বাণিজ্য কৌশলের ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে চীন ৬০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়, পরের বছর তা ২৪০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে পরের বছর ১.১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে তৈরি পরিবেশবান্ধব কাঠের বাড়ি যাচ্ছে ইউরোপে
চীন গত চার অর্থবছরে বাংলাদেশকে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, যার মধ্যে ১৯৭৫ সাল থেকে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ছিল বিশ্বব্যাংক- ১.৯৩ বিলিয়ন ডলার, দ্বিতীয় স্থানে জাপান- ১.৯ বিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় স্থানে এডিবি- ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার। আর ১.১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে চীন। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে বিভিন্ন ঋণদাতার কাছ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে ৯.২৬ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চীনের মতো সাশ্রয়ী শর্তে অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ পাওয়া চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হয়, যেখানে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপানের মতো শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক ঋণদাতারা প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করতে পারে।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের মতিঝিল-কমলাপুর রুটের ৪০ শতাংশের বেশি নির্মাণকাজ সম্পন্ন
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও বলেছেন, চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সহজতর করতে মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কাজ করছে।
সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদ ভবন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি নিজ দেশের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পরিস্থিতির উন্নতি কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি।’
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এম নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, লিউ উল্লেখ করেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি জটিল এবং এটি অভ্যন্তরীণভাবে সেখানে অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এমনকি মিয়ানমার সরকারেরও (এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা) বাস্তবায়নের মতো অবস্থা নেই। সেখানে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি জটিল আকারে পরিণত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, চীন বুঝতে পেরেছে যে রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সমর্থন করায় তারা বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
প্রেস সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী চীনের সমর্থন চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশের ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। সমাধানের অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশ এখন রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক ও উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, 'এটি (আমার পক্ষ থেকে) চীনের প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে দেওয়া (রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে) একটি বিশেষ বার্তা।’
তিনি মন্ত্রীকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন: ভারত সফর নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী
চীনের গুয়াংডংয়ে বন্যায় ৯ জনের মৃত্যু, সতর্কতা জারি
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশের গ্রামীণ এলাকায় বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় ৯ জন মারা গেছেন এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৬ জন।
বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় শুক্রবার (২১ জুন) সকালে অন্যান্য স্থানেও সতর্কতা জারি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, গুয়াংডংয়ের মেইঝৌ শহরের মেক্সিয়ান জেলায় ৪ জন নিহত ও ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। মেইঝৌ প্রদেশের জিয়াওলিং কাউন্টিতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
সিসিটিভি জানিয়েছে, রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে দেশটিতে। এতে গাছ উপড়ে পড়াসহ ভেঙে পড়েছে বাড়িঘর। ভারী বৃষ্টিপাতের সময় মেক্সিয়ান জেলার একটি প্রধান সংযোগ সড়ক পুরোপুরি ধসে পড়েছে। মেইঝৌয়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সোংইয়ুয়ান নদীতে সবচেয়ে বড় মাত্রার বন্যা দেখা গেছে বলে টেলিভিশন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-উ. কোরিয়ার মধ্যে সই হওয়া চুক্তির জানা-অজানা তথ্য
এই বন্যার ফলে জিয়াওলিং কাউন্টিতে আনুমানিক ৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ইউয়ান (৫০২ মিলিয়ন ডলার) এবং মেক্সিয়ান জেলায় ১ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ইউয়ান (১৪৬ মিলিয়ন ডলার) সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র(এনএমসি) দক্ষিণের বেশ কয়েকটি প্রদেশ এবং উত্তরের কয়েকটি পৃথক জায়গায় সতর্কতা জারি করেছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য অংশেও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত এবং চরম আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হবে বলেও উল্লেখ করেছে এনএমসি।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, মধ্য চীনের হেনান ও আনহুই প্রদেশের পাশাপাশি উপকূলের জিয়াংসু প্রদেশ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় গুইঝৌ প্রদেশে শিলাবৃষ্টি ও শক্তিশালী বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টির কারণে ২৭ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে চীন
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, হেনান, আনহুই ও হুবেই প্রদেশে একদিনে ৫০ মিলিমিটার থেকে ৮০ মিলিমিটার (১ দশমিক ৯ থেকে ৩ দশমিক ১৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।
গত সপ্তাহে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ফুজিয়ান ও গুয়াংজি প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে ভূমিধস ও বন্যা দেখা দেয়। গুয়াংজিতে বৃষ্টিতে ভরে ওঠা নদীতে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: চীনের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় নিহত ২, নিখোঁজ ৫
চীনের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় নিহত ২, নিখোঁজ ৫
চীনের পূর্বাঞ্চলে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় দুইজন নিহত এবং আরও ৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের হুয়াংশান শহরে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে বৃষ্টিপাতের ফলে ২০০ জনেরও বেশি বাসিন্দাকে জরুরি উদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জনেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: চীনের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বন্যা; চতুর্থ স্তরের জরুরি অবস্থা জারি
শহরটি বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তার জরুরি প্রতিক্রিয়া তৃতীয় স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তরে উন্নীত করেছে।
চীনে চার স্তরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম স্তরটি সবচেয়ে মারাত্মক।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টির কারণে ২৭ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে চীন
ভারী বৃষ্টির কারণে ২৭ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে চীন
সর্বশেষ দফায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ফুজিয়ানের নানপিং, সানমিং ও অন্যান্য শহরের প্রায় সাড়ে ৫১ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে প্রায় ২৭ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
প্রাদেশিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারী বর্ষণের এই সময়ের মধ্যে ফুজিয়ানে ৩ হাজার ১৩৩ হেক্টরেরও বেশি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: চীনে বন্যায় ১১ জন নিহত, ২৭ জন নিখোঁজ
গত ৯ জুন সকাল ৮টা থেকে ১৪ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত ফুজিয়ানের ৫৫টি কাউন্টির ৩৮৬টি শহরতলিতে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
স্থানীয় আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নানপিং শহরের হুয়াংকেং টাউনশিপে সবচেয়ে বেশি ৫৮১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
প্রদেশটিতে ভারী বৃষ্টিপাতের পর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সরঞ্জাম ও জেনারেটরের সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে স্থানীয় জরুরি মেরামত কর্মীরা নানপিংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুন: চীনে বন্যায় নিহত ২০, নিখোঁজ ২৭