টিআইবি
দুর্নীতির অভিযোগে বদলি-বরখাস্ত ও অবসরে পাঠানোর পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়: টিআইবি
সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি রোধে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, বদলি, বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরের মতো পদক্ষেপগুলো অপর্যাপ্ত প্রতিবন্ধক এবং অজান্তেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি লালন করতে পারে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশাসনিক পদক্ষেপের পরিবর্তে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পুলিশের মতো সংস্থায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বদলি বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বদলি বা অবসরের মতো প্রশাসনিক পদক্ষেপ আশাব্যঞ্জক মনে হলেও তাতে দুর্নীতির মূল কারণগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের পদক্ষেপ এমন একটি চক্রকে স্থায়ী করতে পারে, যেখানে কঠোর আইনি পরিণতির অভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না।’
তিনি সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার সংশোধনী তুলে ধরে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যাপক দুর্নীতির জবাবদিহিতা দাবি করেছে টিআইবি
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের আইনি ফাঁকফোকরগুলো আইনের দৃষ্টিতে সমতার সাংবিধানিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগে ন্যূনতম শাস্তির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা একটি ক্ষতিকর বার্তা দেয়।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এটি ইঙ্গিত দেয় যে কিছু ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে, যা জনগণের আস্থা কমায় এবং নৈতিক শাসনের ভিত্তিকে নষ্ট করে।’
দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক আঁতাতসহ দুর্নীতির বিকাশ ঘটায় এমন পদ্ধতিগত বিষয়গুলোর দায়িত্ব নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
টিআইব প্রধান বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা জবাবদিহিতা এড়িয়ে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কার্যকরভাবে রোধ করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নৈতিক মান বজায় রাখতে, আমাদের এমন দৃঢ় পদক্ষেপ দরকার যা স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রতি সত্যিকারের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিরোধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন, যা অপরাধের তীব্রতাকে প্রতিফলিত করে। যাতে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে অসদাচরণ রোধ করা যায়।
আরও পড়ুন: কালো টাকা সাদা করার বাজেট প্রণয়ন অসাংবিধানিক ও দুর্নীতিবান্ধব: টিআইবি
কালো টাকা সাদা করার বাজেট প্রণয়ন অসাংবিধানিক ও দুর্নীতিবান্ধব: টিআইবি
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনায় নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) এক বিবৃতির মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবি জানায়, মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার এই ব্যবস্থা সৎ ও বৈধ আয়ের ব্যক্তি করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার সংস্কৃতি গড়ে তুলবে। ঘোষিত অর্থ ও সম্পদের ব্যাপারে কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখা দেশে দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করছে টিআইবি।
একইসঙ্গে, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারকে প্রহসনে পরিণত করা হবে বলে জানায় এ সংস্থা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “‘ডেটা ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা ডিভিএস’ চালু করার ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ ঘোষণায় আইনি জটিলতা এবং করদাতাদের অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে যেভাবে ‘অপ্রদর্শিত অর্থে’ ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা জমি কেনা বৈধ করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হলো- তা সত্যিই হতাশার।”
কালো টাকা সাদা করার সুযোগের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনে সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিপরীতে সৎ করদাতাদের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করের বিধান বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে ড. জামান বলেন, ‘বিষয়টি একজন সুনাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক, একইসঙ্গে তা সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। এ প্রক্রিয়ায় নৈতিক আপস করে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ের স্বপ্ন স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদে কখনোই বাস্তবায়িত হবে না।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘শুভবুদ্ধি, দূরদৃষ্টি, সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার করে নেবে- এমনটাই আশা।’
এছাড়াও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে কালো টাকার মালিকদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের মাধ্যমে কার্যকর জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যাপক দুর্নীতির জবাবদিহিতা দাবি করেছে টিআইবি
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার (৩ জুন ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।
টিআইবি জোর দিয়ে বলেছে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লাগামহীন ক্ষমতার অপব্যবহার 'ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মতো ব্যক্তিত্ব' তৈরি করে এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতাকে ক্ষুণ্ন করে। সংস্থাটি এ ধরনের নির্যাতনে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক পুলিশ প্রধান যাদেরকে নিজেদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেছিল- সেইসব লোকদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
খবরে বলা হয়েছে, সাবেক আইজিপি ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে জমি বিক্রি করতে মানুষকে বাধ্য করেছিলেন। মূলত তিনি প্রথমত সংখ্যালঘুদের বেছে নিয়েছিলেন। আর এই কাজগুলো করার জন্য তিনি নিজের এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থার কর্মীদের নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে জোরপূর্বক সম্পত্তি অর্জন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা কৌশলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে মূল অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:অনলাইনে জুয়া-বেটিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের মহোৎসবে টিআইবির উদ্বেগ
সাবেক আইজিপির দুর্নীতি নিয়ে চলমান তদন্তে তার অবৈধ সম্পদ সম্পর্কে নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব গুরুতর অভিযোগের পরও কীভাবে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ইফতেখারুজ্জামান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিদেশে অর্থ পাচারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ বা সহায়তায় সাবেক পুলিশ প্রধান দেশ ছাড়ার আগে ব্যাংক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ন্যায়বিচার হলে শুধু সাবেক আইজিপি নয়, যারা তাকে সহযোগিতা করেছেন তাদেরও বিচার করতে হবে।
তিনি সাবেক পুলিশ প্রধানের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। এটি সরকারের সম্পৃক্ততা বা তার দুর্নীতির সক্রিয় উৎসাহের ইঙ্গিত দেয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শনের জন্য সকল দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির নাম প্রকাশ এবং জড়িত সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে ডিইউজে-ডিআরইউ ও টিআইবি
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাকে নিছক নাটকীয়তা হিসেবে গণ্য করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের কাছে সব দুর্নীতিবাজের তথ্য আছে। এ ধরনের স্বীকৃতি বিরল হওয়া সত্ত্বেও একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা কীভাবে দুর্নীতির এমন সুস্পষ্ট সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তা সরকারকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।’
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শনের জন্য দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ ও এর সঙ্গে জড়িত সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এটি করতে ব্যর্থ হলে নাগরিকদের মধ্যে নিছক নাটকীয়তা হিসাবে এই ধারণাটি আরও দৃঢ় হবে।’
আরও পড়ুন: সবুজ জলবায়ু তহবিলের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে বঞ্চিত: টিআইবি
এমপিদের ব্লক বরাদ্দ: জনগণের অর্থের ‘অপব্যবহার’ ও 'অপচয়' নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ
প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যদের ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণার পর, সরকারি অর্থের অপব্যবহার ও অপচয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
একই সঙ্গে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) টিআইবির এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের বিষয় প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের সত্যতা ও সম্পদের বৈধতা যাচাইয়ের আহ্বান টিআইবির
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, প্রত্যেক সংসদ সদস্য তাদের নির্বাচনি এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ বছরে ২০ কোটি টাকা করে নিতে পারবেন।
এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান।
২০২০ সালের ১২ আগস্ট ‘সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দ: অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় পর্যায়ে অনেক স্কিমের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও স্কিম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ঠিকাদার ও তদারকি কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক যোগসাজশ এবং কমিশন বাণিজ্যের ফলে স্কিমের কাজের মান প্রত্যাশিত পর্যায়ের ছিল না এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে জনগণের অর্থের অপচয় হয়েছে এবং স্বার্থান্বেষী মহল লাভবান হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সময়ের সঙ্গে সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দ বাড়লেও তার সঠিক ব্যবহার ও সুশাসন নিশ্চিতের উদ্যোগ বরাবরই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। কেননা সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্যই অনুমোদিত কাজের অগ্রগতি তদারকি ও অভিযোগ নিষ্পত্তির একক দায়িত্বে থাকেন।
একইসঙ্গে, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন সদস্যদের একাংশ। ফলে এইসব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টিআইবির বক্তব্য 'জনমতের প্রতিফলন': বিএনপি
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই প্রকল্প সংসদ সদস্যের একাংশের জন্য স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে আসছে। ফলে এ ধরনের প্রকল্প অনিয়ম-দুর্নীতিকে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাভাবিকতায় পরিণত করেছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ২০২০ সালের গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ করেছিল টিআইবি। কিন্তু এই সুপারিশমালা আমলে নিয়ে সংসদ সদস্যদের থোক বরাদ্দ ব্যবহারে সুশাসন নিশ্চিতে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, প্রকল্প ও স্কিমসমূহে কার্যকর তদারকি এবং প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সততা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট অবশ্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
নতুন করে থোক বরাদ্দ কার্যক্রম শুরুর আগের বরাদ্দগুলোর নিবিড় ও নিরপেক্ষ নিরীক্ষার দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।
একইসঙ্গে, প্রকল্পের স্কিমসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চিতের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।
আরও পড়ুন: টিআইবির গবেষণা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পড়ে না: আরাফাত
২০২৩ সালের দুর্নীতির সূচকে ২ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ
দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২৩ অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দুই ধাপ পিছিয়ে ১৪৯তম স্থানে নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০২৩, বাংলাদেশ ১০০ -এর মধ্যে ২৪তম স্কোর পেয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, সিপিআই অনুযায়ী ২০২২ সালের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশের স্কোর এক পয়েন্ট কমে ২৪- এ দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের সত্যতা ও সম্পদের বৈধতা যাচাইয়ের আহ্বান টিআইবির
ক্রমানুসারে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান যৌথভাবে ১০তম এবং আরোহণক্রমে ১৪৯তম।
জরিপের ফলাফলে ১০০ এর মধ্যে ৯০ স্কোর নিয়ে ডেনমার্ককে সর্বনিম্ন দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে তালিকার শীর্ষে রাখা হয়েছে।
এছাড়া ৮৭ স্কোর নিয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় ও ৮৫ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড।
এদিকে সবচেয়ে কম ১১ স্কোর পেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সোমালিয়া।
এদিকে ১৩ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ভেনেজুয়েলা।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পারফরম্যান্স হতাশাজনক ও বিব্রতকর।’
এদিকে সরকার এই প্রতিবেদনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিহিত কর প্রত্যাখান করেছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টিআইবির বক্তব্য 'জনমতের প্রতিফলন': বিএনপি
টিআইবির গবেষণা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পড়ে না: আরাফাত
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টিআইবির বক্তব্য 'জনমতের প্রতিফলন': বিএনপি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বক্তব্যকে 'জনমতের প্রতিফলন' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নতুন কর্মসূচি দিয়ে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে তাদের দল।
আরও পড়ুন: বিএনপির নতুন কর্মসূচি আসছে: রিজভী
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টিআইবির বক্তব্যের বিরোধিতা করে মন্ত্রীদের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কে না বলেছে এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি? সবাই বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সুতরাং টিআইবি যা বলেছে তা জনমতের প্রতিফলন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যা বলছে তাও জনমতের প্রতিফলন। ‘তাই বিএনপির পছন্দ অনুযায়ী টিআইবি এটা (নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি) বলেনি। তারা যা বলেছে তা বাস্তবতা।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নেতৃত্বে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের নেতা-কর্মীরা।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি: মঈন খান
এর আগে গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একতরফা বলে মন্তব্য করে টিআইবি বলেছিল, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চেহারা দিতে সাজানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তাদের গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করে বলেছে, এ ধরনের নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে দেশি-বিদেশি সংগঠনগুলোর মতামতের প্রশংসা করেন নজরুল। তিনি বলেন, 'নিরপেক্ষভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে যারা কথা বলবেন আমরা তাদের স্বাগত জানাব। আমরা কী বলি সেটা গুরুত্বপূর্ণ, মানুষ কী বলছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: টিআইবি বিএনপির ‘দালাল’: কাদের
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারকে পছন্দ করে না, যারা বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। যারা অন্যায়, স্বৈরাচার, দমন-পীড়ন ও ভোট চুরির সমালোচনা করেন তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন তা আওয়ামী লীগ সরকার আবার ধ্বংস করেছে। ‘সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা আপনাদের জানাব।’
নজরুল ইসলাম বলেন, জিয়াউর রহমান বাকশালের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং খালেদা জিয়া এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছি। জিয়াউর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা নতুন করে শপথ নিয়েছি, এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সহযোগিতায় যত দ্রুত সম্ভব আমরা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।’
আরও পড়ুন: বিএনপির চাওয়ায় দেশের অমঙ্গল হবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার নানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল সেনা কর্মকর্তার হাতে নিহত হন জিয়া।
টিআইবির গবেষণা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পড়ে না: আরাফাত
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাচন নিয়ে যে গবেষণা করেছে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পড়ে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। তিনি বলেন, টিআইবি অযৌক্তিক কথা বলেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তথ্যপ্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা এই গবেষণা করেছেন, তাদের গবেষণার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাদের কোনো গবেষণা নেই।
টিআইবির গবেষণা বৈজ্ঞানিক মিসকন্ডাক্টকে (অসদাচরণ) ছাড়িয়ে গেছে। তারা অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে গবেষণা করে তার ফলাফল জনগণের সামনে তুলে ধরবে।’
টিআইবি যেটা করেছে, সেটা গবেষণা না, এটা তাদের মতামত বলে উল্লেখ করেন আরাফাত। তিনি বলেন, নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হলেও নিবাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা অনিয়ম করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নির্বাচন ছিল একতরফা ও কৃত্রিম প্রতিযোগিতা: টিআইবি
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের শক্ত অবস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং মিথ্যা ছড়িয়ে তাদের মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমি টিআইবিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি, চ্যালেঞ্জ করতে চাই; তারা আন্তর্জাতিক মানের কোনো জার্নালে গবেষণা পাঠিয়ে দেখুক, তারা এটা পাবলিশড করবে না। যদি পাবলিশ করে, তাহলে আমি মেনে নেব তাদের এটা গবেষণা হয়েছে।'
আরও পড়ুন: টিআইবি তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির হাতে ‘অস্ত্র তুলে দিচ্ছে’: হাছান মাহমুদ
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আপনাদের, আন্তর্জাতিক মানের কোনো জার্নাল এটি পাবলিশ করা তো পরের কথা, এটাকে গ্রহণই করবে না। কারণ এটি কোনো গবেষণার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কোনো পদ্ধতি অনুসরণ অনুসরণ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, 'সম্পূর্ণ গোজামিল দিয়ে একটি রিপোর্ট দাঁড় করানো হয়েছে। খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য যারা এখানে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের নির্বাচন, পলিটিক্যাল সায়েন্স-এ বিষয়গুলো নিয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাদের বেশির ভাগেরই কোনো পাবলিকেশন্স নেই।'
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুকন্যা আছেন বলেই দেশে সমৃদ্ধি ঘটছে: আরাফাত
টিআইবি তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির হাতে ‘অস্ত্র তুলে দিচ্ছে’: হাছান মাহমুদ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাচনবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির হাতে 'অস্ত্র তুলে দিতে' ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল প্রশ্ন তুলেছে।
তিনি বলেন, 'বিএনপি যা বলছে আর টিআইবি যা বলছে তার মধ্যে ভাষার দিক থেকে মিল আছে বলে মনে হচ্ছে। টিআইবি নির্বাচনবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিচ্যুত না হয়ে টিআইবি ‘একটি গোষ্ঠীর মুখপাত্রে’ পরিণত হবে না এবং এর সুনাম সমুন্নত রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, টিআইবির প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্নসহ বেশ কয়েকবার ফোন পেয়েছেন।
হাছান মাহমুদ দাবি করেন, টিআইবির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা কোনো গবেষণা না করেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বের দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: হাছান মাহমুদকে ল্যাভরভ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন একটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, ওআইসি ও অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এটিকে 'অবাধ ও সুষ্ঠু' বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, মনে হচ্ছে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য পরিশীলিত করেই টিআইবি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাতিলসহ কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশন বলিষ্ঠ ভূমিকা দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘টিআইবির প্রতিবেদনে ইসির প্রচেষ্টার কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি।’
টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল একতরফা তবে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চেহারা দেখানো হয়েছিল।’
'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং' শীর্ষক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। সেখানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত।’
আরও পড়ুন: ন্যাম সম্মেলন: রোহিঙ্গা ইস্যু মিয়ানমারের কাছে তুলবেন হাছান মাহমুদ
টিআইবি বিএনপির ‘দালাল’: কাদের
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনকে একপেশে ও সরকারবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ সময় তিনি সংস্থাটিকে বিএনপির দালাল বলেও মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘টিআইবি বিএনপির সুরে কথা বলে। ইতিহাস বলে- তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিল, বিএনপির পক্ষে কথা বলে। তাদের গবেষণার নিরপেক্ষতা আমরা খুঁজে পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলা কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা ১০০ মারা গেলে ৫০০ বানিয়ে দেয়। টিআইবিও তাদের মতো। এই টিআইবি বলেছিল পদ্মা সেতু অসম্ভব। একই কথা সিপিডিও (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) বলেছিল।’
মন্ত্রী বলেন, মামলা করে সবকিছুর সমাধান হয় না। তাদের রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে। কথা বা তর্কের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
বুধবার টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক’ হয়নি।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হবে: ওবায়দুল কাদের
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে রণকৌশল থাকবেই। আমাদের দ্বন্দ্ব-কোন্দল আছে, থাকবেই। সব দলেই থাকে। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে যত সমস্যায় থাকুক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, সামনের উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে করার বিষয় আওয়ামী লীগের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা হবে, সংসদ চালু হলেই তা বোঝা যাবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এজন্য শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ অন্য সব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলো বাস্তবতার নিরীখে তাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দীসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: ওবায়দুল কাদের
সরকারের সামনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ: ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশের নির্বাচন ছিল একতরফা ও কৃত্রিম প্রতিযোগিতা: টিআইবি
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক ছিল না বলে একটি প্রতিবেদনে বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) প্রকাশিত গত ৭ তারিখের ভোটের ফলাফল মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘লাভ-ক্ষতিসহ সামগ্রিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশুভ, যা গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ও স্বপ্নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক-এডিবির ঋণ নয়, অনুদান চাই: টিআইবি
আজ ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এতে বক্তব্য দেন।
টিআইবি তাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের অধীনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ৫০টিতে এই জরিপ পরিচালনা করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, 'দুই বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক পরস্পরবিরোধী ও অসহিষ্ণু অবস্থানের কারণে নির্বাচন অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি।’
এতে বলা হয়,‘এই পরস্পরবিরোধী কর্মসূচি এবং অসহিষ্ণুতা কারণে সংঘাতের কাছে গণতন্ত্রের ভবিষ্যতকে জিম্মি করার অবস্থা আরও তীব্র হয়েছে।
আরও পড়ুন: হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের সত্যতা ও সম্পদের বৈধতা যাচাইয়ের আহ্বান টিআইবির
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করার কর্মসূচি সফলভাবে অর্জিত হয়েছে। যার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা নাও হতে পারে। আর চ্যালেঞ্জ করা হলে টিকে নাও থাকতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক সততা, গণতান্ত্রিক ও নৈতিক মূল্যবোধের দিক থেকে এই সাফল্য চিরদিন বিতর্কের বিষয় হয়ে থাকবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ধারণা এবং অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সর্বোপরি অবাধ, উন্মুক্ত ও অবাধ প্রতিযোগিতার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের পূর্বশর্তের মতো জাতীয় আন্তর্জাতিক ভাল অনুশীলনের মূল উপাদানগুলো পূরণ করা হয়নি বলে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে।
তবে প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, 'নির্বাচন কমিশন কখনও সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতার নামে এবং কখনও নকশার মাধ্যমে একতরফা নির্বাচনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে মূল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনও একই ভূমিকা পালন করেছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'এটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশে নির্বাচনী রাজনীতির সমান সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। কোনো অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে এবং তার নিজস্ব 'স্বতন্ত্র' এবং অন্যান্য অনুসারী দলের বিরুদ্ধে বানোয়াট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এমনকি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হয়েছে। এর মধ্যে অস্বাস্থ্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সহিংস শত্রুতা রয়েছে। যেটির সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শ বা জনস্বার্থের কোনও সম্পর্ক নেই।’
আরও পড়ুন: গণপরিবহনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ হয়: টিআইবি
প্রতিবেদনের শেষ অংশে বলা হয়, 'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি যেমন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অশুভ অভিজ্ঞতা। তেমনি গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাসম্পন্ন দেশ ও জনগণকে কী করতে হবে এবং এড়ানো উচিত, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি কৌশল ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এটি একটি পাঠ হতে চলেছে।