কক্সবাজার
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসডিজি অ্যাডভোকেট বেলজিয়ামের রানী ম্যাথিল্ডে
জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অ্যাডভোকেট বেলজিয়ামের রানী ম্যাথিল্ডে মঙ্গলবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।
এ সফরে রানী ম্যাথিল্ডের সঙ্গে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ অন্যরা।
এসময় তিনি একটি শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করা নারীদের সঙ্গে এক আলোচনায় অংশ নেন, বিভিন্ন নতুন প্রশিক্ষণ নেয়া নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কাজ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে যোগ দেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তার।
আরও পড়ুন: জার্মানি ও বেলজিয়ামে বন্যায় ১২৫ জনের মৃত্যু, বহু নিখোঁজ
সোমবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিম রানী ম্যাথিল্ডকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ধারা স্থবির ও নিম্নমুখী হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মানুষের জীবন-যাপনের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় জানায়, এই সফর ‘এসডিজির বর্ধিত গুরুত্ব বোঝায় এবং বাংলাদেশের গতিশীলতা ও প্রতিশ্রুতিও তুলে ধরে।’
দেশে তার সফরের প্রথম দিনে বেলজিয়ামের রানী নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা ‘ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড’- পরিদর্শন করেন।
কারখানার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মচারী নারী। তারা বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রামের মাধ্যমে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৪৭টি ব্র্যান্ড এবং নিয়োগকর্তা সমিতির সঙ্গে মিলে বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম ৪৫০টি কারখানাকে সমর্থন করে এবং বাংলাদেশের ১ দশমিক ২৫ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিককে উপকৃত করেছে।
এই উদ্যোগটি লিঙ্গ সমতা অর্জন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রচার এবং সবার জন্য উপযুক্ত কাজ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বেলজিয়ামের রানী ম্যাথিল্ডে: টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ
বেলজিয়ামের রানী কারখানায় কর্মরত কিছু নারীর সঙ্গে দেখা করেন এবং চাইল্ডকেয়ারগুলো পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশের জন্য আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পাউটিয়ানেন বলেছেন, ‘আমি আনন্দিত যে বেলজিয়ামের রানী বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় কাজ এবং এসডিজির পক্ষে কথা বলার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। যা দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশসহ বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে এসডিজির অগ্রগতিতে অবদান রাখবে।’
এরপরে, তিনি ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় একটি অ্যাবিলিটি বেইজড অ্যাক্সিলারেটেড লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন। যেখানে তিনি কোভিড-১৯ মহামারি কীভাবে তাদের জীবন ও শিক্ষাকে ব্যাহত করেছে সে বিষয়ে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন।
মানসম্পন্ন শিক্ষার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অনুসারে, ইউনিসেফ-সমর্থিত শিক্ষাকেন্দ্র এবং ক্যাচ-আপ প্রোগ্রাম স্কুল থেকে ঝরে পড়া বা ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা ৭-১৪ বছর বয়সী ৮০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিশুকে শিক্ষা প্রদান করে।
রানী ম্যাথিল্ডে ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
তিনি নিখোঁজ ও যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুদের জন্য গঠিত প্রতিষ্ঠান ‘চাইল্ড ফোকাস ফাউন্ডেশন’ ও ইউনিসেফ বেলজিয়াম উভয়েরই সম্মানসূচক সভাপতি।
অসহায় মানুষদের জন্য তিনি ২০০১ সালে ‘প্রিন্সেস ম্যাথিল্ডে ফান্ড’ (বর্তমানে রানী ম্যাথিল্ড ফান্ড) প্রতিষ্ঠা করেন। এসডিজির অ্যাডভোকেট হিসেবে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।
আরও পড়ুন: বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার আহ্বান
তুমব্রু থেকে দ্বিতীয় দফায় ২৭৩ রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে
কক্সবাজারের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের সংঘাতের জেরে বাসে করে দ্বিতীয় দফায় ২৭৩ জন রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে।
সোমবার সকাল ১০টা থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী উপস্থিত থেকে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের সরানোর কার্যক্রম শুরু হয়।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, সীমান্তে থাকা রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দফায় মোট ২৭৩ জনকে (৫৩ পরিবার) কুতুপালংস্হ ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদেরকে নিবন্ধন যাচাই করে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। এখানে আগত যেসব রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাবে, তাদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হবে বলেও জানিয়েছেন মিজানুর রহমান।
দুই দফায় এই পর্যন্ত ৪৫৯ জনকে তুমব্রু সীমান্ত থেকে কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: তুমব্রু থেকে ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে ১৮০ রোহিঙ্গাকে
‘তুমব্রু সীমান্তে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গারা নিবন্ধিত কি না যাচাই করা হবে’
তুমব্রুতে ডিজিএফআই অফিসারকে মাদককারবারীদের গুলির সত্যতা প্রকাশ হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কক্সবাজারে হত্যা মামলায় একই পরিবারের ৩ জনের যাবজ্জীবন
কক্সবাজার টেকনাফে কৃষক আব্দুল করিম হত্যা মামলায় একই পরিবারের তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে একজনকে ৫০ হাজার টাকা ও অপর দুইজনকে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৫ এর বিচারক নিশাত সুলতানা এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী গ্রামের মো. মকবুলের ছেলে মঞ্জুর, মঞ্জুরের স্ত্রী আমিনা খাতুন ও তাদের ছেলে মো. ফোরকান।
মামলার প্রধান আসামি ফোরকান পলাতক রয়েছেন। অন্য দুজন আদালতে হাজির ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে নানিকে হত্যার দায়ে নাতির যাবজ্জীবন
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় টেকনাফের বাহারছড়ার উত্তর শীলখালী বইল্যাছড়া এলাকায় আব্দুল করিম নামে এক ব্যক্তির ওপর হামলা করা হয়। পরদিন তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় মামলা করেন নিহত আব্দুল করিমের স্ত্রী খোরশিদা বেগম। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করা হয়। তার আগে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট মোজাফ্ফর আহমদ হেলালী এবং আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট সেলিমুল মোস্তফা ও অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম (৪) মামলাটি পরিচালনা করেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ইয়াবা পাচারের দায়ে ৮ রোহিঙ্গার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ময়মনসিংহে প্রতিবেশীকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
কক্সবাজারে ৫ আরসা সদস্য গ্রেপ্তার
কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডারসহ পাঁচজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালাম চৌধুরী।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আরসা কমান্ডার ডা. রফিক (৫৪), সদস্য মোহাম্মদ রফিক (২০), নুরুল আমিন (৩৪), মোহাম্মদ রফিক (২১) খায়রুল আমিন (৩২)। তারা সবাই উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে উখিয়া বাজারে আরসা’র আহত সদস্যদের জন্য ওষুধ সংগ্রহ করতে এলে অভিযান চালায় আর্মড পুলিশ ও র্যাবের দল। এসময় পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ধাওয়া করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও পুলিশ লাঞ্ছিতসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
তাদের মামলা দিয়ে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র্যাব।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ৫ ‘হুজি জঙ্গি’, ১ ‘আল কায়েদা সদস্য’ গ্রেপ্তার: সিটিটিসি
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা খর্ব করা যাবে না: শাহরিয়ার
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার সমস্যা মোকাবিলা করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ এবং এ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা খর্ব করা যাবে না।
শনিবার প্রতিমন্ত্রী ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ও ইন্দো-প্যাসিফিক সহযোগিতা: অগ্রাধিকারমূলক সমস্যা এবং উদ্বেগ’- শীর্ষক সিনিয়র পর্যায়ের সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের জন্য দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টার সমন্বয় করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স আয়োজিত সংলাপটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর শাহাব এনাম খান।
সেক্রেটারি, মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট (এমএইউ) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হুসাইন এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুগুলো সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি যোগ দেয়ার বিষয় না। এটি কিছু নীতির ওপর নির্ভর করে এবং এ বিষেয়ে কোনও ভুল ধারণা থাকলে তা দূর করা দরকার।
কক্সবাজারে ৫০০ বেডের হাসপাতাল করা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কক্সবাজারে ৫০০ বেডের হাসপাতাল করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেছেন, ‘কক্সবাজারে দেশ বিদেশ থেকে প্রতি বছরই লাখ লাখ পর্যটক আসেন। এর সঙ্গে কক্সবাজারে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাস করছে। এখানে প্রায় ২৮ লাখ স্থানীয় বাসিন্দা আছেন। প্রতিদিনই এখানকার সরকারি হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অনেক রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে, কক্সবাজারে চিকিৎসা সেবা আরও বৃদ্ধি করা জরুরি।
আরও পড়ুন: ষাটোর্ধ্বদের করোনা টিকার ৪র্থ ডোজ দেয়া হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের বর্তমানে আড়াইশ’ বেডের জেলা সদর সরকারি হাসপাতাল থাকলেও সেখানে ছয় থেকে সাতশ’ রোগী প্রতিদিনই চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। এত রোগীর চাপে হাসপাতালের ফ্লোরেও রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এজন্য এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। তাই, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কক্সবাজারের হাসপাতালে অচিরেই আড়াইশ’ বেড থেকে বাড়িয়ে পাঁচশ’ বেডের হাসপাতাল করা হবে। এর পাশাপাশি এই হাস্পাতালে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়ারও ব্যবস্থা করা হবে।’
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা সদর ২৫০ বেড হাসপাতালে নবনির্মিত ‘ডা. আব্দুর নূর বুলবুল ভবন’ এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
কক্সবাজারের বর্তমানের আড়াইশ’ বেড হাসপাতালটি এখন তিন তলা বিল্ডিং হিসেবে এখানকার প্রায় ২৮ লাখ স্থানীয় বাসিন্দাসহ অন্যদেরও সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারে নতুন করে পরিত্যক্ত জায়গা পাওয়া অনেক কঠিন। তাই এই তিন তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটিকে ১০ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালে পরিণত করতে পারলে এখানকার পর্যটকসহ স্থানীয় ২৮ লাখ মানুষের সেবার মান বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে সভায় জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এক্ষেত্রে বিদেশি সাহায্য না পাওয়া গেলে সরকারিভাবেই এই উন্নয়ন কাজটি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ঢাকা শহরে কোনো অননুমোদিত ক্লিনিক নেই: সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানারকম সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ, এখন সেটি আরও কয়েক লাখ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের কারণে এদেশের মুল্যবান বন বিভাগের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আরও বেড়ে গেলে তা দেশের জন্য স্বস্তির হবে না বলে জানান মন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবেই বলে সভায় উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা সদর ২৫০ বেড সরকারি হাসপাতালের ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজারের উখিয়া, রামু অঞ্চলের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি'র সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, ইউএনএইচসিআর কক্সবাজারের হেড অব অপারেশন ইউকো আকাসাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হাসান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা সদর ২৫০ বেড সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোমিনুর রহমান, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ড. মাহাবুবুর রহমানসহ অন্যান্য উধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: সবাইকে স্বাস্থ্যকার্ড দেয়া হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কক্সবাজারে ডাকাতদের হাতে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক খুন
কক্সবাজারের রামুতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে খুন করে দু’টি গরু লুট করেছে ডাকাত দল। ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতদের চিনে ফেলায় ওই যুবককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মীর কাশেম ওই এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।
লুট হওয়া গরু দু’টির মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, রাত ৩টার দিকে তার গোয়াল ঘরে থাকা সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাত দল। তার মেয়ে রাতে দেখতে পান গোয়ালঘর খালি। এসময় বাড়িতে থাকা জামাই ফারুকসহ পরিবারের সদস্যরা ছুটাছুটি শুরু করে। প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান ডাকাত দল সাতটি গরু গাড়িতে তুলতে শুরু করে। এসময় তারা গরুগুলো কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। তখন ডাকাতরা ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান ফারুক।
তিনি আরও জানান, নিহত মীর কাশেম তার ভাতিজা। রাতে ঘটনার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে স্থানীয়রা মীর কাসেমের মৃতদেহ পাশ্ববর্তী সবজি ক্ষেতে দেখতে পান। রাতে ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলায় ডাকাতরা তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং হাত-পা-মুখ বেঁধে সেখানে ফেলে যায়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে অজ্ঞাত বৃদ্ধের লাশ
গরু লুট করতে আসা ডাকাতরাই মীর কাশেমকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন মোহাম্মদ আলী।
সকালে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার অভিযোগ করেন যে ডাকাতি চলাকালে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ১ ঘন্টারও বেশি সময় পরে। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। দেরিতে আসার পরও পুলিশের এক কর্মকর্তা বাড়ির সদস্যদের ৯৯৯-এ কল করায় তাদের বকাঝকা করেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চুরি হলে আমরা কি করবো, ডাকাতি হলে আসতাম। এসময় স্কুলছাত্রী শামীমাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তুমি ক্লাস নাইনে পড়, নাইন বানান জানো?
তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি। সকাল ১০টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানান, রাতে গরু ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলে। মীর কাশেম মানসিক ভারসাম্যহীন। সে অপরিচিত লোকজন দেখলে চিল্লাচিল্লি করে। তাছাড়া গভীর রাত হওয়ায় সে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিল। এজন্য ডাকাতরা তাকে মারধর করে এবং হাত-পা-মুখ বেঁধে হত্যা করে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে বিদেশি অস্ত্রসহ ৬ রোহিঙ্গা ডাকাত আটক
মোহাম্মদ আলীর জামাই ফারুক জানান, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় দুজন ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে এবং তাকেও বেঁধে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় তিনি একজনকে ধরে রাখলে আরও চারজন ডাকাত এসে তাকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরে বড়সড় দুটি গরু নিয়ে ডাকাতরা গাড়িযোগে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, যে মারা গেছে সে মানসিক রোগী। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে সকালে। বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।
উল্লেখ্য, রামুতে সাম্প্রতিক সময়ে গরু ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচদিন পূর্বে রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার নুরুল হকের বাড়িতেও ডাকাত দল হানা দিয়ে চারটি গরু লুট করেছে। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ডাকাতির সময় হত্যার দায়ে ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বিকাশমান সমুদ্র অর্থনীতির সফলতা নির্ভর করছে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর
বাংলাদেশে বিকাশমান সমুদ্র অর্থনীতির সফলতা নির্ভর করছে এ খাতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর।
সোমবার কক্সবাজার জেলার সামুদ্রিক শুকনো মাছের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ওপর বিশ্লেষণ এবং নীল অর্থনীতি অর্জনে সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জসমূহের ওপর গবেষক ও বিশেষজ্ঞ সমেত তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেছেন।
তারা কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ওপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত সামুদ্রিকখাদ্য, শুকনো মাছ উৎপাদন, অন্তঃদেশীয় ও বৈদেশিক বিপণনের ক্ষেত্রে সকল বাধা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানান।
এতে সভাপতিত্ব করেন কানাডা প্রবাসী লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল চৌধুরী, ডিপার্টমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সাবেক মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)।
প্রধান আলোচক ছিলেন, প্রফেসর ড. এস.এম. রফিকুজ্জামান, ডিন, ফিশারিজ অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: নৌবাহিনীকে সমুদ্র অর্থনীতির পতাকাবাহী হওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
অধ্যাপক, গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক এবং স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. এস. জে আনোয়ার জাহিদ, প্রশিকার প্রোগ্রাম পরিচালক, সাঈদ হাসান, উন্নয়ন কনসালটেন্ট বাবু অশোক সরকার, আবেদ আহসান সাগর, মাহবুব উল আলম এবং অংশগ্রহণ করেন খায়রুল আহসান মানিক, কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসাইন, নজরুল ইসলাম বাবুল, শামসুল হাবিব, শিরিন ফেরদৌসী, নাজমা রেশমী, ইভানা হোসাইন ও এসরার জাহিদ।
সম্মানিত অতিথি কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী তার ভাষণে বলেন, সমুদ্র অর্থনীতির সদ্ব্যবহার বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে যদি আমরা এ খাতে প্রথাগত পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকে নিশ্চিত করতে পারি।
ইতোমধ্যে সরকার কৌশলগত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং বিদেশি কয়েকটি সংস্থা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধন ও চ্যালেঞ্জের বিষয়।
বাংলাদেশে খাদ্য সংস্কৃতি পরিবর্তনের ওপর আমাদের জোরারোপ করতে হবে এবং সামুদ্রিক-খাদ্যকে আমাদের খাদ্য তালিকায় নিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে মার্কেট ভ্যালু চেইন এর ওপর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দান বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে এর সুফলতা আসতে শুরু করেছে।
সাসটেইনেবল ব্লু ইকোনমির জন্য পরিবেশগত অবক্ষয় এবং সমুদ্রের পানির দূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণের ওপর বাংলাদেশের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
প্রধান আলোচক প্রফেসর ড. এস.এম. রফিকুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার জেলার সামুদ্রিক খাদ্য ও শুকনো মাছের স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন ও এগুলো বাজারজাতকরণের ওপর নিবিড় গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এর ওপর কাজ হচ্ছে, দেশে বিচ্ছিন্নভাবে প্রযুক্তি ও আসছে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি এর ডিমান্ড যথাযথভাবে আলোচনায় উঠে আসছে না।
এছাড়া দেশে মৎস্যখাত নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে একে অগ্রাধিকার তালিকায় নিতে হবে।
বার্ড এর সাবেক পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ আলোচকদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ বিশেষ করে শুকনো মাছের উৎপাদনের অতীত ও বর্তমান অবস্থার ওপর কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালিত গবেষণা ও সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর আলোকপাত করেন। ভেলু চেঞ্জ এনালাইসিস সমীক্ষার মাধ্যমে যারা মৎসজীবী, ট্রলার মালিক, মাছ ও শুঁটকি বিক্রয়কারী মার্চেন্ট এজেন্ট মধ্যস্বত্ব ভোগী যেমন: আড়ৎদার, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী, সংরক্ষণকারী ও মহাজন তাদের প্রতি কেজি বা ১০০ কেজিতে মুনাফা বা লাভের অংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
এতে মার্কেটিং চ্যানেলে জড়িত অধিক সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা যাবে এবং এতে সরকারি বিভাগ ও বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা তাদের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। মাছ ধরার এলাকায় মাছ সংরক্ষণ (স্টোরেজ) এবং স্থানীয়ভাবে শুঁটকি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে তা অভ্যন্তরীণ ক্রেতা-ভোক্তার সাশ্রয় ও রপ্তানি বাজারে এর অধিক সুফল পাওয়া যাবে, প্রশিকার প্রোগ্রাম, পরিচালক, সাঈদ হাসান পরিবেশগত অবক্ষয় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সমুদ্র উপকূলের আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের ওপর জোরারোপ করেন।
কনসালটেন্ট বাবু অশোক সরকার বলেন, মৎস্যখাতের মার্কেটিং চেইনে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে প্রোডাক্টের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এর প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। এ খাতে শ্রমিক কল্যাণ অনেক অবহেলিত এবং নারী শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক আবেদ আহসান সাগর বলেন, বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় মাছের বাজার প্রায় ৮০ ভাগ। টেকনোলজি ব্যবহার, প্রক্রিয়া ও গুদামজাত করণে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, প্রোডাক্টের মূল্য পেতে ও দীর্ঘ সঙ্কট তৈরি হয়।
এছাড়া সরকারের সাবসিডি ছাড়া এ খাতের টেকসই উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
মাহবুব উল আলম বলেন, স্থানীয়রা মৎস খাতের ব্যবসায় পারিবারিকভাবে এ পেশাকে গ্রহণ করে। এখনও শিক্ষিত লোকজন এ পেশায় আসছেন না তাই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ ও বিলম্বিত হচ্ছে, মেটেরিয়ালের দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে এবং এগুলো মনিটরিং এর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।
এছাড়া মৎস্যখাতকে দেশে বিদেশে ব্র্যান্ডিং করতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা দরকার।
সভাপতি দেলোয়ার জাহিদ বলেন, দারিদ্র্য বিলোপ, ক্ষুধা মুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, জলবায়ু কার্যক্রম এবং জলজ জীবনকে অর্থবহ ও সমুদ্র অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে কানাডার মতো উন্নত দেশের অংশীদারিত্ব গ্রহণের ওপর জোর দিতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ ও আলোচনার ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধানে কিছু সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশে সামদ্রিক খাদ্য ও শুঁটকি উৎপাদন গতানুগতিকভাবে চলে আসছে। দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে তাদের চাহিদা ও অনেক বেড়েছে। অতীতে শুঁটকি খোলা জায়গায় শুকানো হতো এবং রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে মৎস্য অধিদপ্তর, চেম্বার অব কমার্স ও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানাবিদ উদ্যোগ নেয়ার ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বিপণন ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটছে। দেশের অভ্যন্তরে শুঁটকির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছু সংখ্যক শুঁটকি যেমন চিংড়ি, ছুড়ি, লোট্টা, রূপচাঁদা প্রভৃতি চায়না হংকং হয়ে আমেরিকা, কানাডায় রপ্তানি হচ্ছে।
উপলব্ধ কতিপয় বিষয়ে সুপারিশমালা তোলে ধরা হলো-
১. বাংলাদেশের বিশাল সুমুদ্র সীমার মধ্যে প্রায় ৮০ মিলিয়ন মেট্রিকটন মাছের মুজুদ রয়েছে। এর থেকে আহরণের পরিমাণ মাত্র ৩.৫৫ মিলিয়ন মেট্রিকটনের প্রেক্ষিতে বেশি মৎস আহরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
২, মৎস্য আহরণে আধুনিক প্রযুক্তি ও জনবল বৃদ্ধি, বিদেশি শুঁটকিতে করারোপসহ উন্নত মানের উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
৩. সরকারি উদ্যোগে প্রধান মৎস আহরণ, শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে সংরক্ষণাগার তৈরি করাও প্রয়োজন।
৪. সমন্বিত উদ্যোগ, টেকসই প্রযুক্তি, অ্যাকশন রিসার্চ ও ভ্যালু চেইন এনালিসিস করে সমীক্ষা প্রকাশ করাও প্রয়োজন।
৫. উৎপাদন ও রপ্তানিকে বেগবান ও উৎসাহিত করতে স্বল্প সুদে ঋণদান ও প্রয়োজনে ভূর্তকি প্রদান করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: সমুদ্র অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
যোগাযোগ প্রযুক্তি ও সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশের সাথে কাজে আগ্রহী মাদাগাস্কার
টেকনাফে ৪ কৃষক অপহরণের অভিযোগ
কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড় থেকে চার স্থানীয় কৃষককে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) ভোরে হ্নীলার লেচুয়াপ্রাং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অপহৃতদের স্বজনরা জানিয়েছেন।
অপহৃতরা হলেন- লেচুয়াপ্রাং এলাকার আব্দুস সালাম, আব্দুর রহমান, মুহিবুল্লাহ ও আব্দুল হাকিম। তারা সবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
আরও পড়ুন: টেকনাফে অস্ত্রধারীদের হাতে ৮ জন অপহৃত
অপহৃত আব্দুস সালামের বড় ভাই মুন্সি রফিক জানান, পাহাড়ের পাদদেশে তাদের জমি আছে। যেখানে প্রায় প্রতিদিন পাহাড় থেকে হাতি নেমে ফসলের খেত নষ্ট করে ফেলে। তাই হাতি থেকে ক্ষেতের বাগান রক্ষায় শনিবার (৭ জানুয়ারি) রাতে পাহাড়ে যায় চারজন। কিন্তু প্রতিদিনের মতো ভোরে ফিরে আসার কথা থাকলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত চারজনের কেউ বাড়ি ফিরেননি।
তিনি ধারণা করছেন, তার ভাইসহ চারজনকে অপহরণ করেছে ডাকাতরা।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, অপহরণের খবরটি শুনে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টেকনাফে ইয়াবাসহ ইউপি সদস্য আটক, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
টেকনাফে পর্যটকবাহী জাহাজে আগুন
১২ ঘন্টায় ব্যবধানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরও ১জন খুন
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে আরও এক রোহিঙ্গা নেতা (সাব মাঝি) নিহত হয়েছেন। রবিবার (৮ জানুয়ারি) ভোরে উখিয়া বালুখালী ক্যাম্প-৮ ইস্টে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহাম্মদ সেলিম (৩৫) উখিয়া উপজেলার বালুখালী ৮- নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-ব্লকের আব্দুস সোবহানের ছেলে। তিনি ওই ক্যাম্পের বি-ব্লকের সাব মাঝি।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ছুরিকাঘাতে রোহিঙ্গা নেতা নিহত
ওসি বলেন, ভোরে ঘর থেকে ঢেকে নিয়ে আরসা নামধারী একদল দুষ্কৃতিকারী মাঝি সেলিমকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই ঘটনার ১২ ঘন্টা আগে ৭ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে পালংখালী ইউপিস্থ জামতলী এফডিএমএন ক্যাম্প-১৫, ব্লক-এ/৫, এর হেড মাঝি রশিদ আহমদ কে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে বিদেশি অস্ত্রসহ ৬ রোহিঙ্গা ডাকাত আটক
উখিয়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা নিহত