পররাষ্ট্র সচিব
বাংলাদেশ বৈষম্যহীন বৈশ্বিক ডিজিটাল ব্যবস্থায় আগ্রহী: পররাষ্ট্র সচিব
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ বৈষম্যহীন বৈশ্বিক ডিজিটাল ব্যবস্থা চায়। তাই সরকার গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্টকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্টের সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সরকারের যে লক্ষ্য তার যেন প্রতিফলন থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছেন পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি আরও বলেন, একটি দেশের অধিকার রক্ষায় কর্ম, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জীবন ব্যবস্থার আলোকে ডিজিটাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপির সহযোগিতায় বিআইজিএফ ও বিএনএনআরসি’র উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট: এন ওপেন, ফ্রি, অ্যান্ড সিকিউর ডিজিটাল ফিউচার ফর অল’ এবং ‘সামিট অব দ্য ফিউচার ২০২৪’ -এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এ পরামর্শ সভায় সরকার, নাগরিক ও যুব সমাজ, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম, কারিগরি সমাজ ও বেসরকারি খাতের শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: মানব পাচার ও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সহযোগিতার আহ্বান পররাষ্ট্র সচিবের
এ সময় প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতা ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের তাগিদ দেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (বিআইজিএফ) চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও ডিজিটাল রূপান্তরের কম্পনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল রূপান্তরকে নিরাপদ করতে হবে।
বৈশ্বিক সহযোগিতা ও কার্যকর বহুপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আগামী ২৫ বছরে বিশ্বকে কোথায় দেখতে চান ‘আওয়ার কমন অ্যাজেন্ডা’ রিপোর্টের মাধ্যমে জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর অনুরোধে সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের নিজের একটি ভিশন তুলে ধরা হয়।
১২টি অ্যাজেন্ডা নিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: ভারতে এআই প্রযুক্তি নিয়ে মাইক্রোসফটের নতুন কৌশল
১২টি অ্যাজেন্ডার মধ্যে মধ্যে অন্যতম ‘গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট’। প্রথমবারের মতো সকলের জন্য একটি উন্মুক্ত, অবাধ ও নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে সামিট অব দ্য ফিউচারের মাধ্যমে পাস হতে যাচ্ছে এই গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট ।
এ উদ্দেশ্যে আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘সামিট অব দ্য ফিউচার ২০২৪’।
অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় সেশনের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএস’র গবেষণা ফেলো তাহরীন তাহরিমা চৌধুরী । এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন ফরেন ইনভেস্টর’স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবির, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুরশিদ কাজি। দ্বিতীয় সেশনটি সঞ্চালনা করেন টিভি টুডে’র প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জরুল আহসান বুলবুল।
ফিউচার অব দ্য সামিট নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, ভূমিকা, ও কর্ম পরিকল্পনা কী হবে তা তুলে ধরেন আলোচকরা।
সমাপনীতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খলিল-উর-রহমান ও সম্মানিত অতিথি ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইসিটি ডিভিশনের অধীনে এইটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী।
মানব পাচার ও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সহযোগিতার আহ্বান পররাষ্ট্র সচিবের
মানব পাচার সমস্যার টেকসই সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ‘বালি প্রসেস’-এর কো-চেয়ার রাষ্ট্রদূত লিন বেল (অস্ট্রেলিয়া) ও রাষ্ট্রদূত ত্রি থারিয়াতের (ইন্দোনেশিয়া) নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি তুলে ধরেন। পাশাপাশি মানব পাচারের কারণগুলো তুলে ধরে সেগুলো রোধ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা ও বাধার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিচ্ছে বিবদমান পক্ষগুলো: মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব
পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃএকত্রীকরণের জন্য উন্নয়ন সহযোগী ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে গৃহীত কর্মসূচি ও কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন।
মানব পাচার রোধকে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং কাজ হিসেবে উল্লেখ করে এই সমস্যার সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় করার ওপর গুরুত্ব দেন বালি প্রসেস কো-চেয়াররা।
আরও পড়ুন: মানব পাচার প্রতিরোধে লক্ষ্যভিত্তিক সচেতনতা ও বিস্তৃত প্রচেষ্টা 'অত্যাবশ্যক': ব্লিঙ্কেন
এছাড়াও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দক্ষতা ও সক্ষমতার উন্নয়ন এবং ‘বালি প্রসেস’ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানব পাচার নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি জোরদার করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এছাড়াও বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে অসহায়ত্ব ও হতাশার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের অনিয়মিত স্থানান্তর বেড়ে যাওয়ায় কো-চেয়াররা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক-এডিবির ঋণ নয়, অনুদান চাই: টিআইবি
এ সময় রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে ‘বালি প্রসেস’-এর সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি আরও বলেন, এই দীর্ঘায়িত সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে এবং এটি সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চাপ অব্যাহত রাখছে যুক্তরাজ্য
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে একীভূত করার প্রস্তাব ঢাকার প্রত্যাখ্যান
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসে সব ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ইউএনএইচসিআর ও আইওএমসহ সব মানবিক সহায়তা সংস্থাকে অনুরোধ করেছেন।
তিনি দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
গত ১৩ মার্চ জেনেভায় রোহিঙ্গাদের জন্য ২০২৪ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাসুদ এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব মোমেন সতর্ক করে বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৌলবাদ ও চরমপন্থার ঝুঁকি থেকে উদ্ভূত হুমকি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপস্থিতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
তিনি বলেন, ন্যায্যতার ভিত্তিতে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায়িত্ব নিয়ে নীতি বাস্তবায়ন না করলে, শুধু বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ডব্লিউএফপির পক্ষে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য কার্যক্রম চালানো এবং সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। ক্রমবর্ধমান তহবিল সংকট কাটিয়ে ঊঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের প্রতিশ্রুত অনুদান আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর এর গুরুতর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও দেশটি গত ছয় বছর ধরে ১.১ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সর্ববৃহৎ দাতা দেশ এবং ২০২২ সালেই ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের চাপ কমাতে বিকল্প পথ অনুসন্ধানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কঠিন করে তুলেছে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রতি বছর ৩০ হাজার নবজাতক জন্ম নিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একীভূত করার সম্ভাবনা নাকচ করে, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে ইউএনএইচসিআর এবং আইওএমসহ সমস্ত মানবিক প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন মাসুদ।
এই বছর জেআরপিতে ১৯৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১.৩৫ মিলিয়ন রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৮৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে জেআরপি-২০১৪ এর প্রথম কৌশলগত উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই হবে এই সংকটের টেকসই সমাধান।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারীদের জন্য জাতিসংঘ ও সহযোগী সংস্থাগুলোর ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার আহ্বান
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এছাড়াও, তিনি রোহিঙ্গা ও নিজ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিতে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ক্রেডিট তহবিল থেকে অনুদান ও ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
হাই কমিশনার আরও বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ জেআরপির সম্পূরক তহবিল স্ফীত করবে।
মানবিক সহায়তা তহবিলের ক্রমবর্ধমান তহবিল ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ জানান আইওএম মহাপরিচালক এমি পোপ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে অনেক ইতিবাচক সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে তাদের চূড়ান্ত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে এই জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়াও কক্সবাজারের বাস্তুসংস্থান ও জীব-বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে উপস্থিত প্রতিনিধিগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বিশেষ করে উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল কক্সবাজারেই ছয় হাজার হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমির অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করতে বলেন।
ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিচ্ছে বিবদমান পক্ষগুলো: মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বিবদমান পক্ষগুলো ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিয়ে সংকটকে দীর্ঘায়িত করছে এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক এক সেশনে প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, গাজায় নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর ইসরাইলি নৃশংসতার বিষয়ে যে দ্বৈত নীতি অবলম্বন করা হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক।
আরও পড়ুন: জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
মাসুদ বিন মোমেন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনা সদস্যদের প্রতিশ্রুতি ও অব্যাহত অবদানসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর হৃদয় ও মন জয় করার বিষয় তুলে ধরেন।
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস অপারেশনসের নির্বাহী পরিচালক অ্যাস্ট্রিড ইরগাংয়ের সঞ্চালনায় প্যানেলে বক্তব্য রাখেন নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী, পর্তুগালের জাতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ইরাকে মিশন প্রধান ভলকার পার্থেস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল যোগানের বিকল্প নেই: মিউনিখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: পররাষ্ট্র সচিব
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, কয়েকটি বিরোধী দলের এক দফা অসাংবিধানিক দাবি সত্ত্বেও সরকার সংবিধান অনুযায়ী জনগণের অংশগ্রহণে 'অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ' নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আস্থা ও প্রস্তুতি অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে আমরা আশা করছি।’
আরও পড়ুন: এ অঞ্চলে যেকোনো দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ বাংলাদেশকে উন্নয়ন লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ বাংলাদেশি সাংবাদিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মাসুদ বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে এবং আসন্ন নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
অতীতে সামরিক, আধা-সামরিক এবং ছদ্ম-সামরিক শাসনামলে নির্বাচনী জালিয়াতির সম্ভাবনা নির্মূল করার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ভোটার আইডি এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই উপমহাদেশের জনগণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় ইস্যুতে রাজনৈতিকভাবে অধিকতর সচেতন ও সম্পৃক্ত। এ কারণেই উপমহাদেশের জরিপে ফলাফল বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত।’ এর ফলে নির্বাচনে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় যা প্রায়ই সহিংস হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: ভোট দিতে কোনো চাপ নেই, তবে 'একটি দলের' লিফলেটে না দিতে বলা হয়েছে: সিইসিকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র সচিব
তিনি বলেন, 'বিশ্বের এই অংশে হতাহতের ঘটনা, এমনকি মৃত্যুও একটি সাধারণ ঘটনা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটে, যেখানে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হয়।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ একটি তরুণ জাতি এবং পশ্চিমা গণতন্ত্র এখনো এখানে পূর্ণরূপ ধারণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, 'সম্প্রতি পরিপক্ক পশ্চিমা গণতন্ত্রেও ফাটল দেখা যাচ্ছে। সুতরাং, এটি ক্রমবর্ধমানভাবে অনুভূত হচ্ছে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থাই নিখুঁত নয় এবং সেই অর্থে কোনো গণতন্ত্র পরিপূর্ণ নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে জাতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক চর্চায় বৈশ্বিক মানদণ্ড অর্জনের চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের প্রচেষ্টায় বিশ্বজুড়ে আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে সমর্থন চাই।’
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে: সিইসি
তিনি আশা প্রকাশ করেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সফল হবে, যা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গর্ববোধ করবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সরকার বিশ্বাস করে যে, সাংবিধানিক বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা মানবাধিকারের রীতিনীতি ও চর্চা প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি।
সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন: ৬৯ দেশের অনারারি কনসাল ও কনসাল জেনারেলদের পররাষ্ট্র সচিবের সংবর্ধনা
ভোট দিতে কোনো চাপ নেই, তবে 'একটি দলের' লিফলেটে না দিতে বলা হয়েছে: সিইসিকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র সচিব
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল স্পষ্ট করে বলেছেন, ভোটারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য কোনো চাপ নেই, তবে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণের বিষয়ে চাপ দেখা যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৃহস্পতিবার ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের জন্য আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সিইসিকে উদ্ধৃত করে বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো চাপ নেই, এমনকি তার কাছেও এমন কোনো প্রমাণ নেই।’
ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার চাপের বিষয়ে এক কূটনীতিক তার বক্তব্য জানতে চাইলে সিইসি এ কথা বলেন।
এর জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন বর্জনকারী একটি রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) লিফলেট বিতরণ এবং জনগণকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানানোর বিষয়ে জানান।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে: সিইসি
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন আয়োজিত ব্রিফিংয়ে অর্ধশতাধিক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সিইসি আউয়াল ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে একটি আপডেট দেন, এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য এ ধরনের সুযোগ বিরল।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই ব্রিফিং কূটনীতিকদের তাদের বিস্তৃত প্রতিবেদনের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ দেশকে নির্বাচন সম্পর্কে জানাতে সহায়তা করবে।
মাসুদ মোমেন বলেন, কূটনীতিকরা ইসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং ঘন ঘন আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের আপডেট রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কূটনীতিকদের সব তথ্য জানানো হয়েছে এবং এ কারণেই খুব বেশি প্রশ্ন করা হয়নি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। তারা সুবিধাজনক মনে হলে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
সফলভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যাতে কোনো ঘাটতি না থাকে তা নিশ্চিত করেছে ইসি।
আরও পড়ুন: এবার নতুন ভোটার হয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ: ইসি
৬৯ দেশের অনারারি কনসাল ও কনসাল জেনারেলদের পররাষ্ট্র সচিবের সংবর্ধনা
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকায় ৬৯টি দেশের অনারারি কনসালদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি ও জাপানের অনারারি কনসাল মাহবুবুল আলম, গ্রিসের অনারারি কনসাল জেনারেল ফারুক হাসান, ইন্দোনেশিয়ার অনারারি কনসাল সুফি মিজানুর রহমান, কনস্যুলার কর্পস বাংলাদেশের (সিসিবি) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আসিফ চৌধুরী, সিসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মাল্টার অনারারি কনসাল শোয়েব চৌধুরী, জিবুতির অনারারি কনসাল আবদুল হক এবং মঙ্গোলিয়ার অনারারি কনসাল নাসরিন ফাতেমা আউয়াল অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেন।
আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল মাসুদ জামিল খান অন্যান্যদের মধ্যে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসে পালিত হয়েছে জাতীয় প্রবাসী দিবস
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন বলেন- অনারারি কনসাল ও কনসাল জেনারেলরা তাদের প্রতিনিধিত্বকারী দেশ এবং আয়োজক দেশের মধ্যে সুদৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মাসুদ মোমেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মতো অনারারি কনসালদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবেন।
আসিফ চৌধুরী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন- সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় থাকবে।
শোয়েব চৌধুরী বলেন, এ ধরনের কর্মসূচি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পৃক্ততা জোরদারে অবদান রাখে। তিনি অনারারি কনসাল ও কনসাল জেনারেলদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি আমলে নেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র সচিবকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রণালয়ের চিফ অব প্রটোকল নাঈম উদ্দিন আহমেদ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: এ অঞ্চলে যেকোনো দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ বাংলাদেশকে উন্নয়ন লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
এ অঞ্চলে যেকোনো দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ বাংলাদেশকে উন্নয়ন লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
বিশ্বের যেকোনো ধরনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, এ অঞ্চলে যেকোনো ধরনের সংঘাত বা যুদ্ধ বাংলাদেশকে তার উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন থেকে বিচ্যুত করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, সেটা সত্যিকারের যুদ্ধ হোক বা প্রক্সি যুদ্ধ হোক। আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কাউকে তার ভূমি অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করতে বা প্রতিবেশীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব এসব কথা বলেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশুরা সংঘাতের শিকার হওয়ায় বাংলাদেশ সবসময়ই যেকোনো ধরনের যুদ্ধের বিপক্ষে।
ভারত ও মিয়ানমারকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফোকাস আরও উন্নয়নের দিকে রয়েছে। তাই কোনো ধরনের সংঘাত, প্রক্সি বা অন্যথা হলে বাংলাদেশ তার লক্ষ্য অর্জন থেকে বিচ্যুত হবে।
মাসুদ মোমেন বলেন, ‘এ কারণে আমরা সবসময় সর্বোচ্চ সংযম ব্যবহার করি।’
আরও পড়ুন: ‘বর্তমান পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রদূত হাস ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ: মার্কিন দূতাবাস
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছিল তখন উস্কানিমূলক ঘটনা ঘটেছে।
বৃহৎ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে এবং এই ভারসাম্যমূলক কাজটি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী করছি না, আমরা সময়মত সাড়া দিচ্ছি এবং উদ্বেগের উত্তর দিচ্ছি যদি থাকে। অনেকেই বলছেন আমাদের কাছ থেকে শিখতে চান। তারা খুশি যে বাংলাদেশ কীভাবে এই সমস্ত প্রতিযোগিতামূলক চাহিদা ও স্বার্থ মোকাবিলা করছে।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মাসুদ মোমেন বলেন, সরকার আশা করছে একটি ভালো নির্বাচন হবে। ‘এই মুহূর্তে আমরা মনে করি না নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।’
উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ নির্বাচনে ভোট দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
আরও পড়ুন: ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স: 'মুক্ত, নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চলের' সুপারিশ মাসুদ মোমেনের
মাসুদ মোমেন বলেন, তারা কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহায়তা করতে পারেন সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটাই আমাদের ফোকাস। কোনো সমস্যা হলে আমরা তা মোকাবিলা করব।’
তিনি আরও বলেন, বিদেশি বন্ধুরা যেভাবে চায় তারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে চাই। বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ কোনো বিদেশিকে সন্তুষ্ট করার জন্য নির্বাচন করছে না, বরং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, সরকারের ধারাবাহিকতা ও জনগণ ভোট দিতে চাইলে ভোট দেবে।
তিনি বলেন, একটি বিশেষ দেশ কী ভাবছে বা কোনো বিশেষ দেশ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে কি না তা অপ্রাসঙ্গিক।
এর আগে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, তারা এই অঞ্চলে কোনো প্রক্সি যুদ্ধ দেখতে চান না এবং বৃহত্তর উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আমরা এখানে কোনো প্রক্সি যুদ্ধ দেখতে চাই না। সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা যেখানে প্রক্সি যুদ্ধ দেখি সেখানে সমস্যা থেকে যায়। ইউরোপ প্রক্সি যুদ্ধে পতিত হয়েছে এবং চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।’
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা হতে পারে।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ এ অঞ্চলে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছে এবং অন্যান্য দেশও তা স্বীকার করে। ‘এটি আমাদের জন্য ভালো।’
আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ক্ষমতায়নের আহ্বান মাসুদ বিন মোমেনের
বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্যান্য দেশের মন্তব্য অনভিপ্রেত: পররাষ্ট্র সচিব
বাংলাদেশ নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও পাল্টা মন্তব্যকে ‘অনভিপ্রেত’ বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। বাংলাদেশের কী হচ্ছে বা না হচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলতে পারি। তৃতীয় বা চতুর্থ দেশ নিজেদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা করছে... এ বিষয়ে আমি কী বলব- এটাকে অনভিপ্রেত বলা যেতে পারে।’
রবিবার (২৬ নভেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এসব কথা বলেন।
দুই বড় দেশের সাম্প্রতিক মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্র সচিব এ মন্তব্য করেন।
মারিয়া জাখারোভা ২২ নভেম্বর সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ‘স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি’ নিশ্চিত করার নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার বিষয়ে বারবার কথা বলেছে রাশিয়া।
আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের 'হস্তক্ষেপ' নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র সচিব
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং স্থানীয় বিরোধী দলের একজন উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধির মধ্যে অক্টোবরের শেষে একটি বৈঠকের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
রুশ পক্ষ জানিয়েছে, বৈঠকে তারা দেশে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে।
জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠক নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার 'ইচ্ছাকৃত ভুল ব্যাখ্যার' বিষয়ে তারা অবগত।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করে না যুক্তরাষ্ট্র।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পুনর্ব্যক্ত করেছে, বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, তারাও তাই চায়, আর তা হলো- শান্তিপূর্ণভাবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হোক।
আরও পড়ুন: এফওসি: বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা
দিল্লিভিত্তিক কূটনীতিকদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছে বাংলাদেশ
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের 'হস্তক্ষেপ' নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র সচিব
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, কোনো দেশ যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করবে এবং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবে যে, বাংলাদেশের উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ডব্লিউআইওএনের কূটনৈতিক প্রতিবেদক সিধান্ত সিবালকে তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, প্রতিটি দেশেরই তাদের অধিকার বা এখতিয়ার রয়েছে এবং তারা সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা ২+২ ভারত-মার্কিন বৈঠকের পর ভারতের অবস্থান কী তা আগেই বলেছেন।
তিনি বলেন, 'তিনি আমার কাছে এ কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং এই অবস্থানের প্রশংসা করেছেন যে নির্বাচন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান ও জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন করবে: মোমেন
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে এবং সরকারও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'বর্তমানে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ছাড়া সব রাজনৈতিক দল প্রার্থী মনোনয়ন, বাছাইয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেছে।’
আশা করে তিনি বলেন, জনগণের অংশগ্রহণে তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানোর জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যাতে তারা এসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং দেখতে পারে যে তারা কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, কিছু কিছু কৃষিপণ্য আছে যেখানে ঘাটতি রয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমরা যদি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিছু নিশ্চয়তা পেতে পারি যে দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো বাংলাদেশে সরবরাহ করা যেতে পারে, যদি না ভারতে কিছু অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতা যেমন ঘাটতি থাকে। সুতরাং, আপনি জানেন, যদি সেই আশ্বাস দেওয়া হলে আমরা তাতে নীতিগতভাবে একমত হব। তবে প্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠান ও প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলোকে বাছাই করার সমস্যা এবং এটি কীভাবে করা যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে নীতিগতভাবে এটি দুর্দান্ত।’
আরও পড়ুন: এফওসি: বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা
মাসুদ বলেন, শুক্রবার তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার সঙ্গে খুব ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন এবং অনেক দ্বিপক্ষীয় বিষয় এবং আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা ২০২৩ সালে সংঘটিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং কীভাবে আমরা নিকট ভবিষ্যতে অর্থাৎ ২০২৪ এবং তার পরেও নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করতে চাই।’
বাংলাদেশ সফলভাবে এলডিসি উত্তরণের মানদণ্ড পূরণ করেছে এবং ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করায় তারা সিইপিএ নিয়ে আলোচনা করেন।
মাসুদ বলেন, 'সুতরাং, সমস্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হবে, যদিও কিছু দেশ স্বতন্ত্রভাবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে কিছু রূপান্তর ব্যবস্থা দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: দিল্লিভিত্তিক কূটনীতিকদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত সাফটা'র বিধানসহ বিভিন্ন সহায়তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে সার্কের অধীনে স্বল্পোন্নত দেশগুলো নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
তাই ২০২৬ সালের পর পরিস্থিতি ভিন্ন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘তাই আমরা সিইপিএ বা কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট নিয়ে আলোচনা করছি এবং দুই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, তারা একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সিইপিএ চালু করতে পারি, বিশেষ করে ২০২৬ সালের নভেম্বরের মধ্যে।’
পররাষ্ট্র সচিব নয়া দিল্লিতে তার ভারতীয় সমকক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্র সচিব কানেক্টিভিটি, রোহিঙ্গা সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোটাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি ও রাষ্ট্রদূত হাসের বৈঠক সম্পর্কে মস্কোর 'ইচ্ছাকৃত ভুল ব্যাখ্যা' সম্পর্কে অবগত যুক্তরাষ্ট্র: ওয়াশিংটন