সাইবার
সাইবার অপরাধ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করুন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম একটি বড় সমস্যা, এর কোনো শেষ নেই। সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিত অনেক কিছু যেমন সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ এখানে বিস্তার লাভ করে এবং অন্যান্য নানা বিষয়ও ঘটে। সেটা মাথায় রেখে, (সাইবার) নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জনগণকে সচেতন করতে হবে যে সাইবার অপরাধ সমাজ, ব্যক্তিগত জীবন থেকে পারিবারিক জীবন ও দেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সফল হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বকে কাছাকাছি এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ভালো ও মন্দ উভয় দিকই রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন তাদের বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে হবে।
তিনি দেশের নিরাপত্তা ডিজিটালভাবে নিশ্চিত করার সর্বোত্তম সম্ভাব্য উপায়গুলো খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘এই বৈঠকটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্ব একটি অত্যন্ত সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়ছে। তাই আপনারা সুচিন্তিত মতামত দিন, যাতে আমরা দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি এবং দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কী করতে পারে তা খুঁজে বের করতে হবে এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।
বৈঠকে জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠব: প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা দরকার: আইজিপি
কোনো একক দেশের পক্ষে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ সম্ভব নয় উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে জোট গঠন ও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে তিন দিনব্যাপী ১১তম ‘ইন্টারপা’ বার্ষিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে সোমবার ঢাকায় বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব পুলিশ একাডেমি (ইন্টারপা) শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পেছনে ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প: আইজিপি
আইজিপি বলেন, বর্তমান বিশ্বে ডিজিটাল ডিভাইস ও প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে যেভাবে অপরাধ বাড়ছে, তা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য হুমকি
হয়ে উঠছে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সুরক্ষায় পুলিশের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
আইজিপি আরও বলেন, সফলভাবে অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
তিন দিনব্যাপী ‘ইন্টারপা’ সম্মেলন সফল উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোতে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
সম্মেলনে যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ ছিল, যা সাইবার জগতের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে, তিনি যোগ করেন।
আরও পড়ুন: ইউএনকপে আইজিপি’র নাম অন্তর্ভুক্তি: ফখরুলের সমালোচনা
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইন্টারপা’র সভাপতি ও তুরস্কের ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমির রেক্টর প্রফেসর ইলমাজ কোলাক এবং পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের রেক্টর (অতিরিক্ত আইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক।
তিনদিন দিনব্যাপী ‘ইন্টারপা’ বার্ষিক সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল 'পুলিশিংয়ের ডিজিটালাইজেশন'।
সম্মেলনের বিভিন্ন কার্য অধিবেশনে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা ১৩টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে বিশ্বের ৪৪টি দেশের ১২৭ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
ভারতে ২০২৩ সালে পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানের সঙ্গে আইজিপি’র ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠক
সাইবার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ: পলক
বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সাইবার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এছাড়া দেশের সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইসিটি বিভাগের বিজিডি ই-গভ সার্ট কাজ করছে পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাইবার হামালার সম্ভাব্য ঝুঁকি ও রক্ষার বিষয়ে অবহিত করছে।
সোমবার প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল মিলনায়তনে আইসিটি বিভাগের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’র উদ্যোগে ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে জাতীয় পর্যায়ে উদীয়মান (ইমার্জিং) সাইবার হুমকির’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত একা কোনো দেশের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় বরং আন্তঃদেশীয় যোগাযোগের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
কিন্তু হ্যাকারদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাংকিং ও সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সঞ্চালন লাইনগুলো ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:নারীদের সাইবার সুরক্ষায় ডিজিটাল লিটারেসি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দিতে হবে: পলক
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাইবার স্পেসকে নিরাপদ রাখতে মূলত চারটি পূর্ব শর্ত নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ। এছাড়া ওপেনসোর্স ইন্টিলিজেন্স বা ওএসআইএনটির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে স্টেট স্পন্সর হ্যাকারদের তৎপরতা বেড়েছে। সে জন্য তিনি সবাইকে সতর্ক ও প্রযুক্তি দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, গোপনে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে। আর্থিক ও পাওয়ার সেক্টর ছাড়াও এবার দেশের মোবাইল অপারেটরদের ওপর দৃষ্টি পড়েছে সংঘবদ্ধ হ্যাকারদের। ইতোমধ্যেই একাধিক মোবাইল অপারেটর ইনফেক্টেড। অপারেটরগুলোর ডেটাবেজ, সার্ভার ও পরিকাঠামো ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে।
এজন্য দ্রুত আইটি অডিট করার আহ্বান জানিয়ে ডিএসএ-তে একটি সফটওয়্যার টেস্টিং ল্যাব থেকে সংশ্লিষ্টদের নিরীক্ষা করিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক মো. খায়রুল আমিন এবং বিডিজিডি ই-গভ সার্ট পরিচালক তারেক মোসাদ্দেক বরকতউল্লাহ।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে অটোমেটেড ও ডিজিটাইজড করা হবে: পলক
‘ডিজিটাল ডেটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ হচ্ছে: পলক
নারীদের সাইবার সুরক্ষায় ডিজিটাল লিটারেসি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দিতে হবে: পলক
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, নারীদের সাইবার দুনিয়ায় সুরক্ষিত রাখতে এবং অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সাইবার হাইজিন, অ্যাওয়ারনেস ও ডিজিটাল লিটারেসি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দিতে হবে।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’- এর উদ্যোগে ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি এন্ড ফিউচার বাংলাদেশ: ভয়েসেস ফ্রম ইয়ং জেনারেশনস’- শীর্ষক বিশেষ অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মো. এনামুর রহমান ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক দলনেতা ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করে ইতোমধ্যেই অনেক নারীর সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে এখন যে কেউ ন্যশনাল হেল্প লাইন ৩৩৩ কলসেন্টারে ফোন করে সহজেই বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের জন্য অথবা সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে কোনো পরামর্শ, সুপারিশ কিংবা আইনের আশ্রয় নিতে পারে।
আরও পড়ুন: নারীদের প্রযুক্তি খাতে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব না: পলক
তিনি বলেন, কলসেন্টার ৯৯৯- এ ফোন করে পাঁচ বছরে ৯ কোটি মানুষ সেবা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যেই আমরা আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন করেছি।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ চাইলে দেশজুড়ে সাইবার সিকিউরিটি ও সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে একসঙ্গে করবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, গ্রামীণ তরুণদের আইসিটিতে সংযুক্ত করতে ২০১০ সালে ইউনিয়ন সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের সময় একজন ছেলের সঙ্গে মেয়ে উদ্যোক্তা নিয়োগের যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এবার বেকারসমস্যা সমাধানে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানো ও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ২০০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা-প্রশিক্ষণ নিয়ে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে দেশের সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসেই প্রায় ৫০০ মিলিয়নের বেশি এক্সপোর্ট আর্নিং করছে। করোনাতেও আইসিটি বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পে ৪০ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ নারী অংশগ্রহণ করেছে। শিপাওয়ার প্রকল্পে ১৩ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে। এবার ২৫০ কোটি টাকার হার প্রকল্পের অধীনে আরও ২৫ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করার লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।
আরও পড়ুন: ‘ডিজিটাল ডেটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ হচ্ছে: পলক
পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে অটোমেটেড ও ডিজিটাইজড করা হবে: পলক
সংকট মোকাবিলায় আসিয়ান নেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এ অঞ্চলের সংকট মোকাবিলায় আসিয়ান নেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন ।
শুক্রবার আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ)২৮তম সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় এই আহবান জানান তিনি । এ সময় ড. মোমেন এআরএফ এর গৃহীত পদক্ষেপে বাংলাদেশের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা সম্পর্কেও মোমেন সভাকে অবহিত করেন। তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু অগ্রগতি সাধনের নিমিত্তে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নেতাদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুনঃ আগামী সপ্তাহে সিনোফার্মের ৩৪ লাখ ডোজ টিকা আসছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যু যেমন রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিকায়ন, সাইবার নিরাপত্তা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সমস্যা সম্পর্কে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় করেন। এআরএফ- এর গতিশীল নেতৃত্বে, এ অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সুশাসন এবং শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত রচিত হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় জনকল্যাণের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় তিনি টিকাকে ‘পাবলিক গুডস’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এর প্রযুক্তি সকলের মধ্যে সমভাবে বণ্টন হওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেবে সরকার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি সাশ্রয়ী মূল্যে টিকা উৎপাদনের উপরও জোর দিয়ে বলেন, যদিও বাংলাদেশ ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের স্বাক্ষরকারী নয়, তথাপি শুধুমাত্র মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ১দশমিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ছয় হাজার ৮০০ একর সার্বভৌম বনভূমি আপোষ করে বাংলাদেশের পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। অধিকন্তু, এ অঞ্চলের জলবায়ুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনের জন্য তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এআরএফ সদস্য দেশ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একমত প্রকাশ করেন। তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ স্বদেশ প্রত্যাবাসনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আরও পড়ুনঃ জাপান থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার আড়াই লাখ টিকা দেশে পৌঁছেছে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরস্ত্রীকরণকে বাংলাদেশের শান্তিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির একটি মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির উপর গুরুত্বারোপ করায় বাংলাদেশ সবসময় স্ব-প্রণোদিত হয়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং অস্ত্রীকরণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে। জাতিসংঘের সদস্য হওয়া পর থেকে বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ কূটনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৯-১৯৮০ এবং ২০০০-২০০১ সময়কালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি ও অন্যান্য দলিলের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্তকরণসহ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আসিয়ান একটি বহুপক্ষীয় আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম যা এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ধারাকে ত্বরান্বিত করতে এবং দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। ২৮তম আশিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ)- সভা আজ ব্রুনেই-এ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহ ২৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এবারের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এবারের সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্রুনেই এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাটো এরিওয়ান পেহিন ইউসুফ।
সাইবার যুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরাজিত করার আহ্বান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সামনে আরেকটি যুদ্ধ অপেক্ষমান। আর সেটি হচ্ছে সাইবার যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সাইবার জগতে নানা মিথ্যা ও অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের মহান স্বাধীনতার অর্জনকে ধূলিস্যাৎ করতে চাইছে। সরকারের বিরুদ্ধে ভূয়া ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল যোদ্ধা হিসেবে এই অপশক্তিকে সাইবার যুদ্ধে পরাজিত করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে এলআইসিটি প্রকল্প আয়োজিত আমার মুজিব ক্যাম্পেইনের আওতায় ‘আমাদের মুজিব’ শীর্ষক রচনা ও ‘মুজিবের কাছে চিঠি’ লেখা প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ডিজিটাল প্লাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
তরুণ প্রজন্মকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত ও দেশপ্রেম জাগ্রত করা, সুনাগরিক এবং দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আমার মুজিব ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) এলআইসিটি প্রকল্পের জনপ্রিয় প্লাটফর্ম ‘দুর্বার’এর মাধ্যমে।
বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন ও আদর্শ অনুসরণ করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর মানবিকতা, শোষণ-বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংগ্রাম, সাহস, দূরদর্শিতা ও নৈতিকতার গুণাবলির মধ্যে নিহিত রয়েছে একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষা।
পলক বলেন, যিনি বঙ্গবন্ধু মুজিবের লেখা তিনটি বই- ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী,’ ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পড়বেন তিনি মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শিক্ষা পাবেন। তিনি ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’ কে প্রাথমকি স্কুল পর্যায়ে পড়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানান।
বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ, এলআইসিটি প্রকল্পের আইটি-আইটিইএস পলিসি এডভাইজার সামি আহমেদ, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, বাক্কো’র মহাসচিব তৌহিদ হোসেন, ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার, বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু, উই ফোরামের সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা। অনুষ্ঠানে ‘মুজিবের কাছে চিঠি’ লেখা প্রতিযোগিতায় ৯ম ও ১০ম শ্রেণি ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন নন্দী মজুমদার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর চিঠিটি পড়ে শোনান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন এলআইসির প্রকল্পের ডিজিটাল কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ হাসান বেনাউল ইসলাম।
উল্লেখ্য, সর্বমোট ৮১৪ রচনা এবং ৩৪১টি চিঠি বিচারকমন্ডলীর মাধ্যমে বাছাই করে শ্রেণিভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে মোট ১৫ জনকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। এর মধ্যে ৯ জন রচনায় এবং ৬ জন চিঠিতে। মুজিবের কাছে চিঠি লেখা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলেন: ১ম ও ২য় শ্রেণি ক্যাটেগরিতে ব্রাম্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মডেল একাডেমির ফাইজা তাবাসসুম নুসরাত (চ্যাম্পিয়ন) ও ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নওশীন আজাদ (রানার আপ), ৪র্থ থেকে ৫ম শ্রেণি ক্যাটেগরিতে রংপুরের শঠিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লামিয়া মারজান (চ্যাম্পিয়ন) ও সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নিহাল আহমদ ও মতিঝিল সরকারি মডেল স্কুল থেকে মেধা সরকার (যুগ্মভাবে রানার আপ), ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি ক্যাটেগরিতে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের রণিত অধিকারী (চ্যাম্পিয়ন) ও ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ থেকে সাফওয়ান আজমাঈন (রানার আপ), ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণি ক্যাটেগরিতে গোপালগঞ্জের সরকারি কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের নন্দী মজুমদার (প্রথম) ও ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের মো. মুনতাজিম রহমান সায়মন (রানার আপ) এবং আমাদের মুজিব রচনা প্রতিযোগিতায় একাদশ থেকে দ্বাদশ ক্যাটাগরিতে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের তাসনীম তিশা (চ্যাম্পিয়ন) ও ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্রান্ড কলেজের ইকরা আলম রেজা এবং একই প্রতিষ্ঠানের অথৈ দাস শৈতী (যুগ্মভাবে রানার আপ) এবং স্নাতক ১ম ও শেষ বর্ষ ক্যাটেগরিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. সাগর হোসেন চ্যাম্পিয়ন ও ঢাকা কলেজের আল মামুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল কাইউম যুগ্মভাবে রানার আপ ।
উল্লেখ্য, ১৫ জন বিজয়ীদের মধ্যে ৮ জনই মেয়ে এবং তূলনামূলকভাবে ঢাকার বাইরের অংশগ্রহণকারীরা অনেক ভালো করেছে।
বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তায় বাংলাদেশের ২৫ ধাপ উন্নতি
আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিউ) করা আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা সূচক-২০২০ এ ২৫ ধাপ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সাইবার নিরাপত্তায় গৃহীত আইনী ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সাংগঠনিক ব্যবস্থা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এবারের সূচকে।
আরও পড়ুনঃ মাই রেসপন্স: সাইবার বুলিং বন্ধে ইউএনডিপির অন্যন্য উদ্যোগ
বাংলাদেশ বর্তমান সূচকে ৮১.২৭ নম্বর পেয়ে ৫৩তম স্থানে উঠে এসেছে। এর আগে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৮তম।
আইটিউ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ সূচকে ১০০ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ৯৯ দশমিক ৫৪ সমসংখ্যক স্কোর নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব এবং ৯৯ দশমিক ৪৮ নম্বর নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে এস্তোনিয়া।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে কি করবেন
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। ৯৮.৫২ স্কোর নিয়ে এই অঞ্চলে প্রথম অবস্থানে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। ভারত আছে ৪ নম্বর অবস্থানে।
বাংলাদেশের সরকারের সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করা বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি-এর প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, ‘এটা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সক্ষমতারই প্রতিফলন, যা ভবিষ্যতে আরও দক্ষতার সাথে সাইবার হামলা প্রতিহত করতে উৎসাহিত করবে।’
চীনে গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার উদ্বোধন করল হুয়াওয়ে
চীনের ডংগুয়ানে নিজেদের সর্ববৃহৎ গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি প্রটেকশন ট্রান্সপারেন্সি সেন্টার উদ্বোধন করেছে হুয়াওয়ে।
বৃ্হস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জিএসএমএ, এসইউএসই, ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড ইন্সটিটিউশনের প্রতিনিধিরা এবং সংযুক্ত আরব-আমিরাত ও ইন্দোনেশিয়ার নিয়ন্ত্রকরা বক্তব্য দেন ।
নতুন সেন্টার চালু করার পাশাপাশি হুয়াওয়ে এর প্রোডাক্ট সিকিউরিটি বেজলাইনও প্রকাশ করেছে। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো প্রডাক্ট সিকিউরিটি বেজলাইন ফ্রেমওয়ার্ক ও ব্যবস্থাপনা অনুশীলন পুরো খাতের জন্য উন্মুক্ত করে হুয়াওয়ে। এ পদক্ষেপ প্রতিষ্ঠানটির খাতজুড়ে সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে ক্রেতা, সাপ্লায়ার, মানদণ্ড সংশ্লিষ্ট নির্ধারক সংস্থা এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে যৌথভাবে কাজের প্রচেষ্টা গ্রহণের বিস্তৃত পদক্ষেপের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুনঃ উন্নত সেবার জন্য বিকাশ থেকে অ্যাওয়ার্ড পেল হুয়াওয়ে
হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘একীভূত শিল্পখাত হিসেবে আমাদের একসাথে কাজ করা প্রয়োজন এবং শাসন ব্যবস্থা, মানদণ্ড, প্রযুক্তি ও যাচাইকরণে নিজেদের মধ্যে সর্বোত্তম অনুশীলনীগুলো আদান-প্রদান করতে হবে। সাধারণ মানুষ এবং নিয়ন্ত্রকরা যেনো প্রতিদিনকার ব্যবহৃত পণ্য ও সেবার নিরাপত্তার ব্যাপারে আস্থা রাখতে পারেন, আমাদের সে কারণ তৈরি করতে হবে। একসাথেই আমরা ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিশ্বে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের সঠিক ভারসাম্য বজায়ে কাজ করতে পারি।’
সাইবার গভর্নেন্স নিয়ে খাত-সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দক্ষতার আদান-প্রদানে, পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে একসাথে কাজ করার জন্য হুয়াওয়ে ডংগুয়ানে এর নতুন গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি প্রটেকশন ট্রান্সপারেন্সি সেন্টার চালু করেছে। এ সেন্টারের মাধ্যমে নানা সমাধান প্রদর্শন করা হবে ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান করা হবে, যোগাযোগ ও যৌথ উদ্ভাবন বৃদ্ধিতে কাজ করা হবে এবং সিকিউরিটি টেস্টিং ও ভেরিফিকেশনে সহায়তা প্রদান করা হবে।
সেন্টারটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্বাধীন তৃতীয় পক্ষ টেস্টিং প্রতিষ্ঠান, মানদণ্ড সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং হুয়াওয়ের ক্রেতা, অংশীদার ও সাপ্লায়ারদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
জিএসএমএ’র মহাপরিচালক ম্যাটস গ্র্যানরিড হুয়াওয়ের নতুন সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বলেন, ‘ফাইভজি যুগে বিদ্যমান ও নতুন সেবা প্রদান বিশেষভাবে নির্ভর করবে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানগুলোর কানেক্টিভিটি সেবা এবং মূলত নির্ভর করবে এ প্রযুক্তি সুরক্ষা এবং এর ওপরে আস্থার ওপরে।‘ তিনি বলেন, ‘অংশীজনদের সহায়তা করতে জিএসএমএ ফাইভজি সিকিউরিটি নলেজ বেসের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে তারা নেটওয়ার্কের ঝুঁকি বুঝতে পারেন এবং এ ঝুঁকি প্রশমনে কাজ করতে পারেন। অন্যদিকে, শিল্পখাতজুড়ে নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের বিকাশ ও নিরাপত্তার উন্নয়নে শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটি অ্যাসুরেন্স ফ্রেমওয়ার্ক ‘এনইএসএএস’ করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে পণ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় এক দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা, বিস্তৃত পরিসরের বাহ্যিক বিধিমালা অন্তর্ভুক্তিকরণ, কারিগরি মানদণ্ড এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজনীয় বিষয় সমন্বিত প্রডাক্ট সাইবার সিকিউরিটি বেজলাইন প্রকাশ করেছে হুয়াওয়ে।
হুয়াওয়ের গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি প্রটেকশন অফিসের পরিচালক শন ইয়াং বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা শুধুমাত্র আমাদের মূল সাপ্লায়ারই নয়, বরং সম্পূর্ণ খাতের সামনেই আমাদের সিকিউরিটি বেজলাইন ফ্রেমওয়ার্ক তুলে ধরেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রেতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, মানদণ্ড সংশ্লিষ্ট সংস্থা, প্রযুক্তি সেবা দাতা এবং টেস্টিং প্রতিষ্ঠান সহ সকল অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানাই আমাদের সাথে কাজ যুক্ত হয়ে একসাথে সাইবার সিকিউরিটি বেজলাইন নিয়ে আলোচনা করার ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। একসাথে আমরা ধারাবাহিকভাবে এ শিল্পখাতে পণ্যের নিরাপত্তার উন্নয়নে কাজ করতে পারি।’
বাংলাদেশে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে কি করবেন?
বাংলাদেশে যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তাদের শতকরা ৮০ ভাগই নারী। সবচেয়ে ভীতিকর ব্যাপার হলো, এদের বয়সের পরিধি ১৪ থেকে ২২ বছর। এমনকি শিশুরাও এই ঝুকির বাইরে নয়। বৃহৎ পরিসরে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দরুণ অনেক জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই সাইবার বুলিংয়ের কারণে। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়নের ফলে পারস্পরিক যোগাযোগ প্রতিনিয়ত সহজলভ্য হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সংখ্যালঘু দুষ্ট চক্রের বিকৃত মানসিকতার কারণে সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সবাইকে।
কি এই সাইবার বুলিং
এক কথায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে কারো উপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা নাশকতা চালানোকে সাইবার বুলিং বলা হয়। যারা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে গোপনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারে তাদের হ্যাকার বলা হয়। হ্যাকিং একটি পারদর্শিতা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর অসদ্ব্যবহারই হয়ে এসেছে। হ্যাকারদের মধ্যে যারা নিজেদের এই ক্ষমতাটি অন্যের ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করে তারাই মুলত সাইবার বুলিং এর জন্য দায়ী।
কিভাবে হচ্ছেন সাইবার বুলিংয়ের শিকার
বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কারণে আপনি সারা বিশ্বের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছেন। আপনার তথ্যগুলো যেহেতু অনলাইন সামাজিক মাধ্যম ইমেইল, মোবাইল ফোন দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত, তাই হ্যাকাররা হয়রানির জন্য এগুলোকেই ব্যবহার করে। অধিকাংশ হ্যাকাররা ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সের হয়ে থাকে। অন্যদিকে এদের শিকার নারী ও শিশুরা হলেও, এখন সব বয়সের এবং সব পেশার লোকেরাই বিপদে পড়ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সাইবার নিরাপত্তা হাব হিসেবে গড়ে তোলা হবে: পলক
সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে যা যা করণীয়
→ সকল নেতিবাচকতা অগ্রাহ্য করা
অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন, ম্যাসেজ অথবা অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত কমেন্ট, ম্যাসেজ আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে। এমনকি হয়ত আপনার ব্যাপারে রটে যাওয়া ভুল ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকেও কথা শুনতে হতে পারে। ব্যাপারটাকে গভীরভাবে না দেখে এড়িয়ে যান। কেননা আপনি পাত্তা দিলেই উত্যক্তকারীর উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে।
→ অভিভাবক মহলের সাথে পরামর্শ করা
বাবা-মা, বড় ভাই-বোন, প্রিয় শিক্ষক অথবা এমন কারো সাথে ব্যাপারটি শেয়ার করুন যে আপনার দুর্বলতার সুযোগ নেবে না বলে আপনি দৃঢ়ভাবে বিঃশ্বাস করেন। আবেগপ্রবণ না হয়ে নিজের অবস্থানটা স্পষ্ট করে তুলে ধরুন। এতে সামাজিকভাবে আপনি একটা পৃষ্ঠপোষকতা পাবেন।
আরও পড়ুন: ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ এ গৃহবধুর অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল গ্রেপ্তার
→ প্রমাণ রাখা
অনলাইন অথবা ফোন যে মাধ্যমেই বুলিংটা হোক না কেন চেষ্টা করুন যে কোনো ভাবেই তার একটা অফলাইন কপি রাখতে। পরবর্তী আইনী সহায়তা নেবার সময় এগুলো প্রমাণ হিসেবে আপনার কাজে লাগবে।
→ রিপোর্ট করা
প্রতিটি ওয়েবসাইটেরই অভিযোগ বক্স বা রিপোটিং পদ্ধতি আছে। সেগুলো অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলুন। এতে বুলিং কন্টেন্ট মুছে যাওয়ার পাশাপাশি অপরাধীও সেই সাইট চিরতরে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
→ সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত থাকা
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে নিজেকে নিজের কাজে মগ্ন রাখুন। বিশেষত সৃজনশীল কাজের দিকে মনযোগ দিন।
→ আত্মবিশ্বাসের সাথে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া
এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশী দরকার। প্রায় দেখা যায়, সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তি জনসম্মুখে নিজেকে প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন। তা না করে বরং প্রতিটি সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সাবলীলভাবে উত্তর দিন। এখানে যেহেতু আপনি কোন দোষ করেন নি সেহেতু নিজেকে লুকিয়ে রাখার কোন অর্থ নেই। বরং আপনার ইতিবাচক সাড়া অপরাধ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে ইন্ধন যোগাবে।
শেষ কথা
প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে আপনার নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তীতে সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্ম দিবে। তাই নিজেকে গুটিয়ে না রেখে নেতিবাচকতাগুলো উপেক্ষা করে আত্মবিঃশ্বাসের সাথে নিজের স্বপক্ষে কথা বলুন।
আরও পড়ুন: ফেসবুক একাউন্ট হ্যাকড হলে সহায়তা দিবে ‘সাইবার সিকিউরিটি হেল্প ডেস্ক’: পলক