রিজার্ভ
রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে: জিএম কাদের
রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, রিজার্ভের অর্থ আমরা বিদেশিদের ধার দিয়েছি, পায়রা বন্দরে খরচ করেছি, বিভিন্ন ভাবে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আমরা খরচ করে ফেলেছি। ফলে যখন দরকার তখন রিজার্ভ নেই।
তিনি বলেন, নিত্য খাদ্যপণ্য ও ওষুধ আমদানি করতে গিয়ে সরকার এলসি খুলতে পারছে না। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সমস্ত জিনিসের দাম বাড়ছে। এখন রিজার্ভ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে দেশ দেউলিয়াত্বের কাছাকাছি চলে গেছে।
কাদের বলেন, যদিও সরকার বার বার এটিকে অস্বীকার করছে। তবে এমুহুর্তে আমি মনে করি সরকারের কাছে যে রিজার্ভ রয়েছে তার চেয়ে বেশি দেনা রয়েছে। দেনা পরিশোধ করলে রিজার্ভে কোনও টাকা থাকবে না। এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কয়েকটি খাতে লুণ্ঠনের কারণে। ব্যাংকিং ও বিদ্যুৎ খাতে অবাধ লুণ্ঠনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কাদের রমজান মাসে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে রেশনিং কার্ড দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্রব্য মূল্য অনেক বেড়ে গেছে, আয় রোজগার কমে গেছে। তাই রমজান মাসে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদের রেশন কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: সরকার গোঁজামিল দিয়ে দেশ চালাচ্ছে: জিএম কাদের
হজের সরকার নির্ধারিত খরচের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সামনে হজের মওসুম। আমাদের দেশ থেকে এবার এক লাখ ২৭ হাজার মানুষ হজে যাওয়ার কথা। কিন্তু বার বার সময় বাড়ানোর পরও মাত্র এক লাখ লোক হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন। এর কারণ আমাদের দেশের মানুষ হজে যে দাম ধরা হয়েছে সেই দাম দিয়ে হজে যেতে পারছেন না। একটি মানুষ সারাজীবন কষ্টকরে হজে যাবার জন্য। কিন্তু প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে হজ করা এখন অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে যেটা অর্ধেক বা অর্ধেকের কম।
জাতীয় পার্টি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর নয়, রাজনীতির পরিবর্তন চায়। ক্ষমতা শুধু মানুষের মুখের পরিবর্তন নয়, বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগ বা আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপি, একই ধরনের লুটপাট, একই ধরনের দলীয়করণ, টেন্ডারবাজি ও মানুষের ওপর অত্যাচার। মানুষ এসব থেকে এখন মুক্তি চায়। জাতীয় পার্টি চায় দেশের মানুষ সুশাসন পাক, নাগরিক হিসেবে সবাই সমান সুযোগ পাক। প্রশাসন দলীয়মুক্ত হয়ে সরকরি কাজ করবে।
জাতীয় পার্টির গাজীপুর মহানগর সভাপতি এম এম নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান আবু হোসেন বাবলা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীরা ক্ষমতাসীন দলের সেবা করছে, জনগণের নয়: জিএম কাদের
যে যত বেশি লুণ্ঠন করতে পারে, সে তত বেশি সম্মানিত: জিএম কাদের
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি: ৬৯ বার পেছালো প্রতিবেদন জমার তারিখ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ নিয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় ৬৯ বার পেছানো হলো।
রবিবার মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। তাই ঢাকার মহানগহর হাকিম রাজেশ চৌধুরী প্রতিবেদন দাখিলের নতুন এ তারিখ ঠিক করেন।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা।
দেশের অভ্যন্তরে কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থপাচার করে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অলস না রেখে জনকল্যাণে ব্যয় করা ভালো: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রিজার্ভের টাকা অলস ফেলে রাখার চেয়ে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা ভালো।
সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দেশের ৫৯টি জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী জেলা পরিষদ চেয়াম্যানদের শপথবাক্য পাঠ করান এবং ৬২৩ সদস্যকে শপথবাক্য পাঠ করান এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: মানুষ কথা বলবে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কাজে বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আমরা এই (রিজার্ভ) টাকা নিয়ে অলস বসে থাকতে পারি না। আমাদের এটি জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও উন্নতির জন্য রিজার্ভের অর্থ ব্যয় করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে যোগাযোগ, পরিবহন, আমদানি সবকিছুই প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল। ফলে রিজার্ভের টাকা প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতেছিল, তখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয় এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ‘ফলস্বরূপ, উচ্চ পরিবহন ব্যয়ের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্রতিটি দ্রব্যের দাম বেড়েছে’ বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খরচ সত্ত্বেও সরকার সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে সবকিছু আমদানি করেছে।
তিনি বলেন, সরকার অনেক বেশি দামে খাদ্য, জ্বালানি তেল, গ্যাস, ভোজ্যতেল, গম ও ভুট্টা সংগ্রহ করছে।
তিনি বলেন, এক কোটি টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে সরকার কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করছে। এই সুবিধার আওতায় ৫০ লাখ মানুষ ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক: উশৈ সিং
তিনি বলেন, যারা সম্পূর্ণ অক্ষম তাদেরকে আমরা বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সরকার গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা অন্যের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে নিজেদের রিজার্ভের টাকা ব্যবহার করেছি।
তিনি বলেন, রিজার্ভ মানি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে উড়োজাহাজ কেনার জন্য ঋণ হিসেবে দেয়া হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছে।
রিজার্ভের টাকা নিয়ে বিএনপির অপপ্রচারের জবাবে তিনি বলেন, তাদের নেতা তারেক রহমান অর্থ পাচারের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তারা অবশ্যই এটি করবে।
শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এলজিআরডি সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
আরও পড়ুন: এখন মেগাপ্রজেক্ট নয় জনকল্যাণমুখী প্রকল্প নিয়ে আসুন: প্রধানমন্ত্রী
এখনও ৫ মাসের খাদ্য আমদানি করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যথেষ্ট: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের এখনও পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে, যা পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তারপরও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের জন্য পণ্য আমদানি করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যদি ৩ মাসের আমদানী পরিমান রিজার্ভ থাকে তাহলে সেটাই যথেষ্ট।’
রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেয়ার সময় সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সবাই এখন রিজার্ভের কথা বলে এবং সবাই এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। ১৯৯৬ সালে রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, কিন্তু তার প্রথম সরকার ২০০১ সালের মধ্যে এটি প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় এসে ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পায়- যা ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি তা ১৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ৩২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন, ২০২০ সালের ৩০ জুন ৩৬ দশমিক ০৪ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালের ৩০ জুন ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়।
আরও পড়ুন: কৃষি উৎপাদন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য সমবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: যুবকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর সময় আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য ব্যয় প্রায় বন্ধ থাকায় তা প্রায় ৪৮ বিলিয়নে উঠে গিয়েছিল।
পরবর্তী আমদানী বৃদ্ধি এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বস্তবায়ন এবং ক্যাপিটাল মেনিারিজ আমদানীর ফলে রিজার্ভ কিছুটা কমে বর্তমান ৩ নভেম্বর ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যখন কোভিড বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়, তখন পণ্য আমদানি স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তাই, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে।
তবে তিনি বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি হ্রাস এবং কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উচ্চ কর আরোপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
এছাড়া শেখ হাসিনা তার ভাষণে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করতে, ডলার সংকট নিরসনে, আমদানি ব্যয় কমাতে এবং ওএমএসসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সম্প্রসারণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করেন।
তিনি বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণ, রপ্তানি বৃদ্ধি, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, সরকারের ঋণের পরিমাণ এবং বৈদেশিক ঋণের কথাও তুলে ধরেন।
পরবর্তীতে ৬টি অধিবেশন স্থায়ী সংসদের ২০তম অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
গত ৩০ অক্টোবর শুরু হওয়া অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির স্থগিতাদেশ পাঠ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আরও পড়ুন: মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারি কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশও এর থেকে আলাদা নয়। বাংলাদেশও এর ফল ভোগ করছে।’
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি সংকটকে আরও গভীর করেছে।
ভর্তুকি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংকটের কারণে সরকারকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য আমদানি এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ভর্তুকির মোট চাহিদা ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
খাদ্যের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের কোষাগারে বর্তমানে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪৮৫ টন খাদ্যশস্য মজুদ থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এছাড়া সরকার আরও খাদ্য আমদানির পদক্ষেপ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ২৯ শতাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে এবং বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে এবং ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) স্কিম উপজেলায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ওএমএসের মাধ্যমে দরিদ্রদের আরও বেশি পরিমাণে প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যাতে দেশের মানুষ ভালো থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়কালে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ যথাক্রমে ৭ শতাংশ এবং ২ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে আমদানির জন্য খোলা এলসি ১১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে দেশে যাতে কোনো ডলার সংকট না হয় সেদিকে সরকার নজর রাখছে।
বৈদেশিক ঋণ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের মোট ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৬ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আমরা (বাংলাদেশ) ঋণ বা ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইনি এবং ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হব না।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘আমরা আমাদের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’
এ প্রেক্ষাপটে তিনি সকল মানুষকে মিতব্যয়ীতা অবলম্বন, সম্পদের অপচয় বন্ধ, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: দাম নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
আইএমএফের হিসাবে আরও কমে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ!
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা করতে সম্মত হয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায় আইএমএফের পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনা শুরু হতে একটু সময় লাগবে।
রবিবার একজন কর্মকর্তা এই তথ্য তুলে ধরেছেন।
আইএমএফের মানদণ্ড অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণ এবং রিজার্ভ থেকে দেশীয় প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যয় বাদ দিতে হবে।
আরও পড়ুন: আইএমএফের কাছে ঋণ চাইলেও অর্থনীতির অবস্থা খারাপ নয়: অর্থমন্ত্রী
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক রবিবার ইউএনবিকে বলেন, নীতিগতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ গণনা করতে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন,‘এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে রিজার্ভ ৩৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমে ২৭ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে।’
তিনি জানান, আইএমএফের ওই প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এটি কবে থেকে শুরু হবে সে বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
আইএমএফের মানদণ্ড অনুসরণ করার পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান মানদণ্ডের ভিত্তিতে করা হিসাবও প্রকাশ করা হবে।
আরও পড়ুন: ২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা: সপ্তাহে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা কী হারিয়েছেন
এইখাতের পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী হিসাব করা হয়।
কিন্তু বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ প্রকাশ করে নিট রিজার্ভ ও মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনা করে।
রিজার্ভের হিসাব বাংলাদেশ দুভাবে করছে। প্রথমত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। আরেকভাবে ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলের অর্থ বাদ দেয়া হচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন বিষয়ে আইএমএফের মানদণ্ড মেনে চলতে সম্মত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি: আগস্টে ৯.৫% শতাংশ, ১২ বছরে সর্বোচ্চ
ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী
গত এক বছরেরও বেশি সময় থেকে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) এর তথ্যানুসারে চলতি মাসের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২০ সালের জুলাই থেকে সর্বনিম্ন ৫২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক মাস ধরে কমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের সপ্তাহে ৫২৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের অক্টোবরে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৬৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল।
আরও পড়ুন: টুইটারের বহিষ্কৃত সিইও পরাগ আগরওয়াল পেতে পারেন ৪২ মিলিয়ন ডলার
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশিরভাগ বৈশ্বিক পরিস্থিতির চাপ মোকাবিলায় রুপিকে রক্ষা করতে তহবিল ব্যবহারের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে।
শুক্রবার প্রকাশিত আরবিআই-এর সাপ্তাহিক পরিসংখ্যানগত সাপ্লিমেন্টের তথ্যানুসারে ২১ অক্টোবরে শেষ হওয়া সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রা সম্পদ (এফসিএ) মোট রিজার্ভের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তিন দশমিক ৫৯৩ বিলিয়ন কমে ৪৬৫ দশমিক ০৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।
এফসিএ’র ডলারের পরিভাষায় প্রকাশিত, ইউরো, পাউন্ড এবং ইয়েনের মতো অ-মার্কিন মুদ্রার মূল্যায়ন বা অবমূল্যায়নের প্রভাবকে অন্তর্ভুক্ত করে যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রাখা হয়।
এটি আরও বলছে, স্বর্ণের রিজার্ভ ২৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূল্য হ্রাস পেয়ে ৩৭ দশমিক ২০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
শীর্ষ ব্যাংক জানিয়েছে, ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) বেড়ে ১৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাপ্তাহিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, আইএমএফের কাছে দেশের রিজার্ভের অবস্থান ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে চার দশমিক ৭৯৯ বিলিয়ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: কপ-২৭: উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত ১০ হাজার কোটি ডলার বাস্তবায়ন করতে বলবে বাংলাদেশ
অক্টোবরের দুই সপ্তাহে দেশে ৭৬৯.৮৮ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে
পায়রা সমুদ্রবন্দরে রিজার্ভের টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে ব্যাখ্যা করুন: সরকারের উদ্দেশে ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ পায়রা সমুদ্রবন্দরে কীভাবে ব্যয় হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন।
এক আলোচনা সভায় তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) জোর দিয়ে বলেছেন যে রিজার্ভ থেকে অর্থ পায়রা সমুদ্রবন্দরে ব্যয় করা হয়েছিল। আমরা জানতে চাই কিভাবে টাকা খরচ হয়েছে, কার দ্বারা খরচ হয়েছে এবং রিজার্ভের টাকা কোথায় গেছে।’
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আগামী নির্বাচন তদারকিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি পায়রা বন্দরে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: রাজধানীর জলাবদ্ধতা সরকারের অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্পের ফল: ফখরুল
অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল। রিজার্ভের টাকা গেছে পায়রা বন্দরে। রিজার্ভের টাকা গেছে দেশের জনগণের জন্য খাদ্য ও সার কিনতে। রিজার্ভের টাকা জনগণের কল্যাণে ও আমদানিতে ব্যয় হয়েছে। কেউ এই অর্থ আত্মসাৎ বা অপব্যবহার করেনি।’
রিজার্ভের টাকা পায়রা সমুদ্রবন্দরে যায় এমন মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, মজুদের টাকা বন্দর নির্মাণের জন্য নয়।
তিনি বলেন, রিজার্ভের অর্থ আমদানিকৃত পণ্যের বিল পরিশোধ এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করার কথা।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘সরকার ৪২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ নিয়ে বড়াই করত। তাহলে রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়?’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে (রিজার্ভ থেকে টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি) বলেন, ‘আপনারা রিজার্ভ চিবিয়ে খাননি, কিন্তু গিলেছেন। আপনারা বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতি গিলে ফেলেছেন।’
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের একমাত্র কাজ জনগণের টাকা লুটপাট করা। ‘তারা প্রতিটি সেক্টরে সবকিছু খেয়ে ফেলছে। তারা (সরকার) বাংলাদেশকে ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে না পারলে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন: দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে আ.লীগ: ফখরুল
বিশেষজ্ঞদের মতামত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পায়রা সমুদ্রবন্দর বন্দরে জাহাজ আসার প্রয়োজনীয় নাব্যতা না থাকায় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। ‘তারা এখন আরও অর্থ লুট করার জন্য মূলধন ড্রেজিংয়ের একটি প্রকল্প নিয়েছে। তারা এভাবে দেশের সম্পদ নষ্ট করছে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করার জন্য তাদের দলের কোনো বিকল্প নেই।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করার আহ্বান জানান ফখরুল।
অন্যথায় গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের জনগণ সরকারের পতন নিশ্চিত করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা।
রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি: প্রধানমন্ত্রী
রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল। রিজার্ভের টাকা গেছে পায়রা বন্দরে। রিজার্ভের টাকা গেছে দেশের জনগণের জন্য খাদ্য ও সার কিনতে। রিজার্ভের টাকা জনগণের কল্যাণে ও আমদানিতে ব্যয় হয়েছে। কেউ এই অর্থ আত্মসাৎ বা অপব্যবহার করেনি।’
বৃহস্পতিবার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধা তৈরির লক্ষ্যে পায়রা বন্দরে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: মানুষের উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ দিতে হবে: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রধানমন্ত্রী
উদ্বোধন করা অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আটটি জাহাজ, ছয় লেনের সংযোগ সড়ক ও একটি সেতু নির্মাণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ (বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল) এর অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে। এই অর্থ দিয়েই বন্দরের ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বন্দরকে ন্যূনতম সুদের হারে ঋণ দিয়েছি। এক শতাংশ সার্ভিস চার্জের সঙ্গে তাদের দিতে হবে মাত্র দুই শতাংশ সুদ।’
দেশের অর্থ বাংলাদেশেই থাকবে বলেও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিদেশি তহবিল নেয়ার সময় বাংলাদেশকে যেসব ঝামেলা পোহাতে হয় তা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: পায়রা সমুদ্রবন্দরে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে প্রকল্পের মোড়ক উন্মোচন প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেই বিবেচনায় আমরা একটি তহবিল তৈরি করেছি-বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল। আমরা আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ অর্থ ব্যবহার করে এই তহবিল তৈরি করেছি। যা ব্যবহার করেই পায়রা বন্দরের ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন হাজার ৫৯৮ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগে যা ছিল চার হাজার ৬১৯ কোটি মার্কিন ডলার (২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর)।
আরও পড়ুন: প্রফিট শেয়ার করার জন্য হাওয়া ভবন ও পিএমওতে উন্নয়ন উইং নেই: ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী
দেশে রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি নেই: ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের পর আগামী দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শেষ হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিদ্যুতের সংকট ‘তৈরি হয়েছে, এরপর আমরা জ্বালানি তেলের ঘাটতির মুখোমুখি হব। তারপর আপনারা দেখবেন রিজার্ভ ফুরিয়ে যাচ্ছে।’
শুক্রবার ‘নজিরবিহীন’ লোডশেডিং এবং জ্বালানি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির ঢাকা উত্তর মহানগর শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় দেশের মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই; দুর্নীতি ও লুটপাট করা। তাই আমাদের এখন এক দফা দাবি সরকারের পদত্যাগ।’
তিনি সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির এই নেতা তার দলের নেতাকর্মীদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমাদের হাতে আর সময় নেই, তাই জেগে উঠুন। আমাদের অবশ্যই এই ফ্যাসিবাদী ও দুর্নীতিবাজ শাসকদের উৎখাত করতে হবে।’
আরও পড়ুন: মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর জন্য সরকার কম জনসংখ্যা দেখাচ্ছে: ফখরুল
ফখরুল বলেন, এখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের কথা স্বীকার করলেও, গত সপ্তাহে তিনি তা অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘এভাবে এই সরকার নির্লজ্জ মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয় এবং মানুষকে ধোঁকা দেয় ও বোকা বানায়। কিন্তু ভিতরে তারা খালি। তারা অর্থ-সম্পদ নষ্ট করে দেশকে দেউলিয়া বানাচ্ছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ভীতিজনক বর্ণনা করে বলেন, সরকারের কাছে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি নেই। তারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। তাই আওয়ামী লীগকে আর সময় ও সুযোগ দিতে পারি না। তারা যতই ক্ষমতায় থাকবে, ততই দেশের ধ্বংস ত্বরান্বিত হবে।’
দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি নেই এমন মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কটাক্ষ করেন।
তিনি বলেন, ‘স্বল্পতা না থাকলে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং করছেন কেন? আপনি গ্যাস রেশন করছেন কেন? কেনো আজকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন অশনি সংকেত?
সরকার দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন,‘শহরের মানুষ এখন দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হচ্ছেন এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষ যেখানে বোরো মৌসুমে সেচের জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, তারা সাত-আট ঘণ্টা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এই সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছে।’
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য পদত্যাগ করলে আপনাদের সঙ্গে চা খাব: প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল
আ.লীগের ‘মেগা দুর্নীতি’ দেশকে অন্ধকার খাদের প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে: ফখরুল
রিজার্ভ দিয়ে ৯ মাসের খাবার আমদানি করতে পারবো: শেখ হাসিনা
বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশ ছয় থেকে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যে কোনো সংকটের সময় কমপক্ষে তিন মাসের জন্য খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য (প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র) আমদানি করার জন্য আমাদের হাতে অর্থ রয়েছে। আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে শুধু তিন মাস নয়, ছয় থেকে নয় মাসের জন্য খাবার আমদানি করতে পারবো।’
বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে এবং যে কোনো জরুরি অবস্থার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখার জন্য আরও ফসল ফলানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠন। এটি ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বেচ্ছাসেবার ১ বছর’ শীর্ষক একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার ছেলে ও তার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হয়।
গত ২৯ জুন মারা যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রয়াত সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু।
পড়ুন: ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ জায়গা দিতে প্রস্তুত: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর