ইউক্রেন
পুতিন-শি জিনপিং বৈঠক, বিচ্ছিন্ন রুশ প্রেসিডেন্টের জন্য রাজনৈতিক উৎসাহ
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর বিচ্ছিন্ন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে রাজনৈতিক উত্সাহ দিতে তার সঙ্গে বৈঠক করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
এই বৈঠকের কারণ ও উদ্দেশ্য কি তার কোনো বিশদ বিবরণ দেয়নি শি’র সরকার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার আগে শি ও পুতিন ঘোষণা করেছিলেন যে তাদের ‘সীমাহীন বন্ধুত্ব’ ছিল, তবে যুদ্ধের পুরোটা সময়ই চীন নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। এমনকি বেইজিং গত মাসে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল।
চীন সরকার জানিয়েছে, শি সোমবার থেকে বুধবার মস্কো সফর করবেন, তবে তিনি চলে গেছেন কিনা তার কোনও ইঙ্গিত তারা দেয়নি।
রুশ সরকার জানিয়েছে যে শি’র মধ্যাহ্নে পৌঁছানোর কথা রয়েছে এবং এরপরে পুতিনের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
বৈঠকের আগে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইসিসির প্রতি একজন রাষ্ট্রপ্রধানের ‘বিচার বিভাগীয় অনাক্রম্যতাকে সম্মান করার’ এবং ‘সবকিছুকে রাজনীতিকরণ এবং ডাবল স্টান্ডার্ড ত্যাগের’ আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেন আন্তর্জাতিক আদালত
চীন রাশিয়াকে তার অর্থনীতির জন্য তেল ও গ্যাসের উৎস হিসেবে এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমেরিকার আধিপত্যের বিরোধিতা করার অংশীদার হিসেবে মনে করে।
ওয়াশিংটনের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির চীনা-রাশিয়ান সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ জোসেফ টোরিজিয়ান বলেছেন,এ বৈঠক পুতিন ও শি’কে ওয়াশিংটনের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের সময়ে ‘শক্তিশালী অংশীদারিত্ব’- দেখানোর একটি সুযোগ দেবে।
টোরিজিয়ান বলেন, ‘এই বৈঠক চীনের দেয়া এমন ইঙ্গিত হতে পারে যে রাশিয়াকে সাহায্য করার জন্য তারা আরও বেশি কিছু করতে পারে; যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি হয় তবে তারা রাশিয়াকে শক্তিশালী করতে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করতে আরও অনেক কিছু করতে পারে।’
প্রযুক্তি, নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং হংকং ও মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আচরণ নিয়ে বিরোধের কারণে ওয়াশিংটন, ইউরোপ এবং এর প্রতিবেশীদের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক তিক্ত।
কেউ কেই ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রাশিয়ার দাবি এবং তাইওয়ানের প্রতি বেইজিংয়ের দাবি একই বলে মনে করেন।
কমিউনিস্ট পার্টির দাবি, ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধের পরে চীন থেকে বিভক্ত হওয়া স্ব-শাসিত দ্বীপ তাইওয়ানকে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্র হতে বাধ্য করা হবে।
শি’র সরকার তাইওয়ানের চারপাশ দিয়ে ফাইটার জেট উড়িয়ে এবং সমুদ্রে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দ্বীপটিকে ভয় দেখানোর প্রচেষ্টা জোরদার করছে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করার জন্য চীন ক্রেমলিনের থেকে তেল ও গ্যাস কেনা বাড়িয়েছে। তবে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক সহায়তার বিধানের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন এবং ইউরোপীয় সরকারগুলোর নির্ধারিত নিয়ম ভাঙে, এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি চীন।
আরও পড়ুন: সৌদি-ইরান চুক্তির পর বিশ্বে বৃহৎ ভূমিকা রাখতে চায় চীন
গত শুক্রবার আইসিসি অভিযোগ করে যে ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার শিশু অপহরণের জন্য পুতিন ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। যেসব দেশের সরকার এই আদালতের কর্তৃত্ব স্বীকার করে, পুতিন তাদের দেশে গেলে তাৎক্ষণিক তাকে গ্রেপ্তার করতে তারা বাধ্য থাকবে।
পুতিন এখনও এই ঘোষণার বিষয়ে মন্তব্য করেননি, তবে ক্রেমলিন এই পদক্ষেপকে ‘আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বরং এ রায়কে অবজ্ঞা করে পুতিন ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার ক্রিমিয়ান উপদ্বীপ দখলের নবম বার্ষিকী উপলক্ষে ক্রিমিয়া এবং দখলকৃত ইউক্রেনীয় বন্দর শহর মারিউপোল পরিদর্শন করেন।
রাশিয়ান সংবাদ প্রতিবেদনে তাকে মারিউপোলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে এবং ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপলে একটি আর্ট স্কুল এবং একটি শিশু কেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেখা গেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, আইসিসির উচিত ‘একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা এবং একজন রাষ্ট্রপ্রধানের প্রাপ্য বিচার বিভাগীয় অনাক্রম্যতাকে সম্মান করা’ এবং ‘সবকিছুকে রাজনীতিকরণ এবং ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ত্যাগ করা উচিত’।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনা করায় শিক্ষার্থীর ৮ বছরের কারাদণ্ড
ওয়াং বলেন, ‘চীন ইউক্রেনের সঙ্কটের বিষয়ে তার বস্তুনিষ্ঠ ও ন্যায্য অবস্থান বজায় রাখবে এবং শান্তি আলোচনার প্রচারে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।’
রুশ সংবাদপত্র রাশিয়ান গেজেটে সোমবার প্রকাশিত একটি নিবন্ধে শি বলেছেন যে চীন ‘সক্রিয়ভাবে শান্তি আলোচনার চেষ্টা করেছে’।
চীনের সিনহুয়া নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে শি বলেছেন, ‘আমার আসন্ন রাশিয়া সফর হবে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও শান্তি স্থাপনের যাত্রা।’
শি আরও বলেছেন, ‘সঙ্কট সমাধানের একটি যুক্তিসঙ্গত উপায়’- খুঁজে পাওয়া যেতে পারে; যদি ‘সব পক্ষ অভিন্ন, সর্বাঙ্গীন, সহযোগিতামূলক এবং টেকসই নিরাপত্তার মনোভাব পোষণ করে।’
বেইজিংয়ে সেঙ্গে বৈঠকের পর ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আশ্চর্য ঘোষণার পর শি এই সফর করছেন।
টোরিজিয়ান বলেন, শি একজন বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেবে দেখতে চান, যিনি শান্তির কথা বলে ‘গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছেন’। কিন্তু যুদ্ধ শেষ করার জন্য শি পুতিনকে চাপ দেবেন এমন কোনও সম্ভাবনা নেই।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার আহ্বান চীনের
এবার রাশিয়ার পরিক্ষিত মিত্র চীন; ইউক্রেন ও মস্কোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাতের অবসানের জন্য ১২-দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার সকালে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিকল্পনায় রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অবসান, পারমাণবিক স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা, বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য মানবিক করিডোর স্থাপন এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় শস্য রপ্তানি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
চীন এই সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকার দাবি করেছে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের ‘হ্রাস’ করতে এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এমনকি চীন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সংঘাতে উসকানি দেয়ার অভিযোগ এনেছে এবং বলেছে তারা মূলত ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে এই সংঘাতকে টিকিয়ে রেখেছে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিরোধীতা করতে গিয়ে ক্রমেই চীন ও রাশিয়ার বৈদেশিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই সপ্তাহে মস্কো সফরের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ: বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ ভোট দেয়নি
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা সম্ভবত রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনও প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
চীনের এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেয়া ১২-দফা প্রস্তাব নিয়ে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেয়ার কোনও আশা আছে কিনা- বা চীনকে নিরপেক্ষ ভাবা হচ্ছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রস্তাবটি প্রকাশের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চীন যে ইউক্রেনের শান্তির পক্ষে কথা বলা শুরু করেছে, আমি এটিকে খারাপ মনে করি না। আমাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত দেশ আমাদের অর্থাৎ ন্যায়বিচারের পক্ষে আসছে।’
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বৃহস্পতিবার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে আলোচনা করবে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ধরনই বলে দেয় যে চীন এ ক্ষেত্রে কোনওভাবেই একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি ন্যায্য এবং টেকসই শান্তি ছাড়া আর কিছুই চাই না ... তবে এই প্রস্তাবগুলো নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক হবে কিনা এ বিষয়ে আমরা সন্দিহান।’
শান্তি প্রস্তাবে প্রধানত সব দেশের ‘সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করার’- প্রয়োজনীয়তার উল্লেখসহ দীর্ঘকাল ধরে থাকা চীনা অবস্থানের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
এটিকে ‘স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতার’- অবসানও বলা হয়েছে। যেটি মার্কিন আধিপত্য এবং অন্যান্য দেশে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য এটি একটি আদর্শ শব্দ।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের খসড়া রেজ্যুলেশন: ইউক্রেনের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘একটি দেশের নিরাপত্তার বিনিময়ে অন্য একটি দেশ নিরাপত্তা পেতে পারে না এবং সামরিক ব্লকগুলোকে শক্তিশালী করে বা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা করা যায় না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সব দেশেরই যৌক্তিকভাবে নিরাপত্তা স্বার্থ ও উদ্বেগগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত এবং সঠিকভাবে তা সমাধান করা উচিত।’
বৃহস্পতিবার চীন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে পাশ হওয়া প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
চীন সেই ১৬টি দেশের মধ্যে একটি, যারা জাতিসংঘে ইউক্রেনের পক্ষে তোলা আগের পাঁচটি প্রস্তাবের প্রায় সবকটির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বা ভোট দেয়ায় বিরত থেকেছে।
ইউক্রেন তার মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবারের প্রস্তাবটির খসড়া তৈরি করেছে। ১৪১টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে এবং ৭টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এসময় ৩২টি দেশ ভোট দেয়ায় বিরত ছিল।
যদিও চীন খোলাখুলি মস্কোর সমালোচনা করেনি, তবে তারা বলেছে যে সংঘাত তাদের ‘কাম্য নয়’ এবং বারবার বলেছে যে কোনওভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
এটি মূলত পুতিনের বক্তব্যের প্রতিউত্তরে বলা হয়েছে।
কেননা এর আগে পুতিন তার বক্তব্যে বলেছে, রাশিয়া তার ভূখণ্ড রক্ষা করার জন্য ‘সব ধরনের উপায়’- ব্যবহার করবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধে কেউই বিজয়ী হয়না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সকল পক্ষের উচিত যুক্তিবোধ এবং সংযম বজায় রাখা... রাশিয়া ও ইউক্রেনের সমঝোতায় সমর্থন করা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনরায় সরাসরি সংলাপ শুরু করা, ধীরে ধীরে সংঘাতের পরিস্থিতি হ্রাসের চেষ্টা করা এবং যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।’
আরও পড়ুন: রাশিয়ার নিকট যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দাবির জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ
ইউক্রেনের ট্যাংক নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে প্রতিরক্ষা নেতাদের বৈঠক
ইউক্রেনে ভবিষ্যত সামরিক সহায়তার ট্যাংক সরবরাহ নিয়ে চলমান মতবিরোধের মধ্যে প্রতিরক্ষা নেতারা শুক্রবার জার্মানির রামস্টেইন বিমান ঘাঁটিতে সমবেত হয়েছেন। ইউক্রেনীয় নেতারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তাদের অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া তারা।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান সেনা জেনারেল মার্ক মিলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো সাহায্যের সর্বশেষ বিশাল প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে মোট দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন সহায়তায় প্রথমবারের মতো স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে গেলে দেশ আবারও চাঙ্গা হবে: ধর্মপ্রতিমন্ত্রী
কিন্তু ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানোর বিষয়ে দ্বিধা বৃহত্তর জোটকে বিভ্রান্ত করেছে। কারণ জার্মানি কিয়েভে লেপার্ড২ ট্যাংক সরবরাহ করার চাপে রয়েছে। যেমন জার্মানির নির্মিত পোল্যান্ডের নিজস্ব স্টক থেকে লেপার্ড২ সরবরাহ করার জন্য বাড়তি চাপের সম্মুখীন হয়েছে৷
উচ্চ-প্রযুক্তিগত গাড়ির ব্যাপক এবং জটিল রক্ষণাবেক্ষণ এবং লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্তত এ পর্যন্ত এম১ আব্রামস ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে অস্বীকার করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে লেপার্ড পাঠানো আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে। কারণ অনেক মিত্রদের কাছে সেগুলো রয়েছে এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যদের কেবলমাত্র সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর কঠিন আব্রামসের ওপর আরও বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
ইউনাইটেড কিংডম গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছে যে তারা চ্যালেঞ্জার২ ট্যাংক পাঠাবে এবং বলেছে যে এটি ইউক্রেনে সামরিক সাহায্যের একটি স্বাভাবিক অগ্রগতি।
বৃহস্পতিবার পেন্টাগনের একটি ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র সাব্রিনা সিং বলেন, লেপার্ড এবং চ্যালেঞ্জার আব্রামসের সঙ্গে তুলনীয় নয়। কারণ আব্রামসের রক্ষণাবেক্ষণ করা অনেক কঠিন এবং এটি উপযুক্ত হবে না।
সিং বলেছিলেন, ‘এটি আরও টেকসই সমস্যা আছে। আমি বলতে চাচ্ছি, এটি এমন একটি ট্যাংক যার জন্য জেট জ্বালানি প্রয়োজন, যেখানে লেপার্ড এবং চ্যালেঞ্জার, এটি একটি ভিন্ন ইঞ্জিন।’ লেপার্ড এবং চ্যালেঞ্জার ‘রক্ষণাবেক্ষণ করা একটু সহজ’। ‘তারা জ্বালানি সরবরাহ করার আগে ভূখণ্ডের বড় অংশ জুড়ে কৌশল করতে পারে। একটি আব্রামস রক্ষণাবেক্ষণে উচ্চ খরচ লাগবে যা এই মুহূর্তে ইউক্রেনীয়দের এটি প্রদান করার কোন মানে হয় না।’
বৃহস্পতিবার পেন্টাগন ঘোষণা দিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো সাহায্যের প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে আটটি অ্যাভেঞ্জার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ৩৫০টি হুমভি, ৫৩টি মাইন রেজিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রোটেক্টেড (এমআরএপি) যান, এক লাখ রাউন্ডের বেশি কামান গোলাবারুদ এবং রকেট ও হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেমের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র৷
জার্মানির নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বৃহস্পতিবার অস্টিনের সঙ্গে দেখা করা মাত্র এক ঘন্টা আগে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং রামস্টেইনের বৈঠকে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্যাংকের কথা উল্লেখ করে বরিস এআরডি টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমরা এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত পাব বলে নিশ্চিত, তবে এটি কেমন হবে তা আমি এখনও আপনাকে বলতে পারছি না।’
অস্টিনের সঙ্গে তার প্রাথমিক সেশনের সময় ট্যাংকের সমস্যাটি এসেছিল কিনা তা পরিষ্কার ছিল না।
বৈঠক শুরু হওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে অস্টিন বলেছিলেন, ‘আমরা দীর্ঘ পথ চলার জন্য ইউক্রেনের আত্মরক্ষাকে সমর্থন করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করব, তবে কোনও নির্দিষ্ট নতুন সরঞ্জামের কথা উল্লেখ করেননি।
রাশিয়ার আক্রমণের প্রায় ১১ মাস হলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অস্ত্র না পাওয়ার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বক্তব্যে জেলেনস্কি জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান সমর্থকদের বিরুদ্ধে একটি খোলামেলা সমালোচনা করেছেন, যারা ট্যাংক পাঠানোর বিষয়ে দ্বিধাবোধ করেছে।
‘নির্দিষ্ট অস্ত্রের অভাব’ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি একজন দোভাষীর মাধ্যমে বলেছেন, ‘এমন কিছু সময় আছে যেখানে আমাদের দ্বিধা করা উচিত নয় বা আমাদের তুলনা করা উচিত নয় যখন কেউ বলে, 'আমি ট্যাংক দেব এবং যদি অন্য কেউ তার ট্যাংকগুলো ভাগ করে নেয়।’
জার্মান কর্মকর্তারা মিত্রদের লেপার্ড দেয়ার অনুমতি দিতে তাদের দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। যদি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আব্রামসও না পাঠায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আব্রামসকে না পাঠানোর মার্কিন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
মিলি এই সপ্তাহে তার সঙ্গে ভ্রমণকারী সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউক্রেনীয় সেনাদের জটিল নতুন মার্কিন প্রশিক্ষণ, নতুন অস্ত্র, কামান, ইউক্রেনের দিকে যাওয়া সাঁজোয়া যানের সাহায্যে দেশটির বাহিনী প্রায় ১১ মাস পুরনো যুদ্ধে রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করার চাবিকাঠি হবে।
তিনি বলেন, লক্ষ্য হলো ইউক্রেনে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা যাতে নতুন প্রশিক্ষিত বাহিনী এটি ব্যবহার করতে সক্ষম হয় ‘বসন্তের বৃষ্টিপাতের কিছুক্ষণ আগে। সেটা হবে আদর্শ।’
আন্ডার সেক্রেটারি অব ডিফেন্স ফর পলিসি কলিন কাহলও এই সপ্তাহে বলেছিলেন যে রাশিয়া আরও গভীরভাবে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের একটি নতুন পর্যায় ধারণ করছে এবং ইউক্রেনের এই অবস্থা ভেঙে পড়ায় যান্ত্রিক পদাতিক বাহিনী প্রয়োজন হবে।
নতুন অস্ত্র, ট্যাংক এবং সাঁজোয়া বাহকের মাধ্যমে ইউক্রেন পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহর এবং কাছাকাছি লবণ খনির শহর সোলেদারের চারপাশে তীব্র যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। বসন্তে যুদ্ধ আরও তীব্র হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৪ জন নিহত
ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিশেষ যুদ্ধ প্রশিক্ষণ জার্মানিতে শুরু করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৪ জন নিহত
কিয়েভের কাছে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেনিস মোনাস্টিরস্কি (৪২) সহ কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে কিয়েভের পূর্ব উপশহর ব্রোভারিতে দুর্ঘটনা ঘটে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবা জানায়, কিয়েভের পূর্ব উপশহর ব্রোভারিতে দুর্ঘটনায় মোনাস্টিরস্কির ডেপুটি ইয়েভেন ইয়েনিন নিহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেনিস মোনাস্টিরস্কি দেশটির পুলিশ এবং জরুরি পরিষেবাগুলোর তদারকি করেছিলেন। প্রায় ১১ মাস আগে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে নিহত হওয়া সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা তিনি।
ব্রোভারির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত তা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে তদন্ত শুরু করেছে।
এ দুর্ঘটনার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভার্চুয়ালি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বক্তব্য দিয়েছেন।
বক্তৃতায় তিনি বলেছেন যে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে যুদ্ধের বিস্তৃত সংযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি যুদ্ধের কারণে হয়েছে। যুদ্ধের অনেক মাত্রা আছে, শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই যুদ্ধ হয়না।’
তিনি দাভোসে উপস্থিতদেরকে দুর্ঘটনায় নিহতদের সম্মান জানাতে তার সঙ্গে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান।
জেলেনস্কি বলেন, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে না। এগুলো সবই যুদ্ধের ফলাফল।’
ফ্রান্সের-তৈরি সুপার পুমা হেলিকপ্টারটি পরিচালনাকারী ইউক্রেনের স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানায়, হেলিকপ্টারে থাকা নয়জন এবং মাটিতে থাকা একটি শিশুসহ কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণ: ইউক্রেনকে দায়ী করলেন পুতিন
এতে আরও বলা হয়, ১১ শিশুসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। প্রারম্ভিক সরকারি প্রতিবেদনে হতাহতের সংখ্যা ভিন্ন ছিল।
কিয়েভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেক্সি কুলেবা ইউক্রেনীয় টেলিভিশনকে বলেছেন যে জরুরি পরিষেবাগুলো দুর্ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
ইউক্রেন ন্যাশনাল পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঁচ কর্মকর্তা, একজন জাতীয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং তিনজন হেলিকপ্টার ক্রু সদস্য নিহত হয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে মোনাস্টিরস্কির ডেপুটি ইয়েভেন ইয়েনিন এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি ইউরি লুবকোভিচ রয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভোলোদিমির ফেসেনকো দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, মোনাস্টিরস্কি পুলিশ এবং জরুরি পরিষেবাগুলোর দায়িত্বে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল বলেছেন, জাতীয় পুলিশ প্রধান ইহোর ক্লাইমেনকোকে ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে।
হেলিকপ্টারে থাকা কর্মকর্তাদের ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলে যাওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় পুলিশ প্রধান ভোলোদিমির টাইমোশকো ফেসবুকে বলেছেন যে তারা ‘শুধু নেতা নন’, ‘বন্ধুও যাদের আমি সম্মান করি।’
টেলিগ্রামে প্রসিকিউটর জেনারেল অ্যান্ড্রি কোস্টিন বলেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা দুর্ঘটনার ‘সকল সম্ভাব্য কারণ’ তদন্ত করছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক বার্তায় লিখেছেন, ‘আজ আরেকটি খুব দুঃখের দিন, নতুন হাহাকার।’
হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি এই দুর্ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে অভিহিত করেছেন।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান নিহত মোনাস্টিরস্কিকে ‘(রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিনের অবৈধ আগ্রাসনের সময় ইউক্রেনের জনগণকে সমর্থন করার জন্য একটি অগ্রণী আলো’ বলে অভিহিত করেছেন।
ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠানোর জন্য চাপের সম্মুখীন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এক টুইটে বলেছেন, ‘এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে যে বিশাল মূল্য দিতে হচ্ছে, তা আবারও আমাদের ভাবতে বাধ্য করে।’
কয়েকদিন আগে দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে রুশ হামলায় ছয় শিশুসহ ৪৫ জন নিহত হয়।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে পদক্ষেপের সমালোচনাকারী রাশিয়ানের ৮২ বছরের কারাদণ্ড
ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিশেষ যুদ্ধ প্রশিক্ষণ জার্মানিতে শুরু করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী
ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিশেষ যুদ্ধ প্রশিক্ষণ জার্মানিতে শুরু করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী
ইউক্রেনের নতুন সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ বাড়িয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।প্রায় ৫০০ সৈন্যের ব্যাটালিয়নকে যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরাতে এই প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। যারা আগামী আগামী পাঁচ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
রবিবার জার্মানিতে এই সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি।
আরও পড়ুন: ‘আমরা ফিরে আসব’ লিখে কি সতর্কতা দিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী!
মিলি সোমবার গ্রাফেনউয়ার প্রশিক্ষণ এলাকা পরিদর্শন করার পরিকল্পনা করছেন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দিতে সৈন্যরা কয়েকদিন আগে ইউক্রেন ছেড়ে গেছে। জার্মানিতে তাদের ব্যবহারের জন্য অস্ত্র ও সরঞ্জামের একটি সম্পূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে।
তবে কখন থেকে সেই প্রশিক্ষণ শুরু হবে তা বললে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পেন্টাগন।
তথাকথিত সম্মিলিত অস্ত্র প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ইউক্রেনীয় বাহিনীর দক্ষতাকে বাড়ানো যাতে তারা আক্রমণ চালাতে বা রুশ আক্রমণের যেকোনও ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলায় আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকে। তারা সম্মিলিত আর্টিলারি, বর্ম এবং স্থল বাহিনী ব্যবহার
করে যুদ্ধে তাদের কোম্পানি- এবং ব্যাটালিয়ন-আকারের ইউনিটগুলোকে আরও ভালভাবে সরানো এবং সমন্বয় করতে শিখবে।
রবিবার তার সঙ্গে ইউরোপে ভ্রমণরত দুই সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময়, মিলি বলেছিলেন সমন্বিত এই জটিল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইউক্রেনীয়রা নতুন অস্ত্র, আর্টিলারি, ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে ইউক্রেনীয়রা তাদের অঞ্চলগুলো পুররুদ্ধার করবে, যা রুশ বাহিনী ১১ মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে।
মিলি বলেছিলেন, ‘এই সমর্থন ইউক্রেনের পক্ষে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হওয়ার জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ,’ ‘এবং আমরা আশা করছি এখানে অল্প সময়ে এটি একসঙ্গে টানতে সক্ষম হব।’
তিনি বলেন, লক্ষ্য হলো সমস্ত আগত অস্ত্র এবং সরঞ্জাম ইউক্রেনে সরবরাহ করা যাতে নতুন প্রশিক্ষিত বাহিনী এটি ব্যবহার করতে সক্ষম হয় ‘বসন্তের বৃষ্টিপাতের কিছুটা আগে। সেটা হবে আদর্শ।’
রাশিয়া কিয়েভ, উত্তর-পূর্ব শহর খারকিভ এবং দক্ষিণ-পূর্ব শহর ডিনিপ্রো সহ বিস্তৃত এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যেখানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ এ পৌঁছেছে।
মিলি বলেছিলেন যে তিনি নিশ্চিত করতে চান যে প্রশিক্ষণটি সঠিক ধারায় রয়েছে এবং অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা এবং এটি নিশ্চিত করতে চান যে এটি সরঞ্জাম সরবরাহের সঙ্গে ভালভাবে চালিত হবে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটিতে শ্রেণিক্ষে পাঠদান এবং মাঠের অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা ছোট স্কোয়াড দিয়ে শুরু হবে। এবং ধীরে ধীরে বড় ইউনিটে রূপান্তরিত হবে। এটি জটিল যুদ্ধ অনুশীলনের মাধ্যমে শেষ হবে এবং একটি সম্পূর্ণ ব্যাটালিয়ন ও একটি সদর দপ্তর ইউনিটকে একত্রিত করবে।
এখন অবধি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্ব হলো ইউক্রেনীয় বাহিনীকে আরও তাৎক্ষণিক যুদ্ধক্ষেত্রে সরঞ্জাম সরবরাহের দিকে, বিশেষ করে কীভাবে দেশে মার্কিন অস্ত্র ব্যবস্থার বিস্তৃত অ্যারে ব্যবহার করা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই তিন হাজার ১০০ টিরও বেশি ইউক্রেনীয় সৈন্যকে নির্দিষ্ট অস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যার মধ্যে হাউইজার, সাঁজোয়া যান এবং হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম রয়েছে, যা এইচআইএমএআরএস নামে পরিচিত। অন্যান্য দেশগুলোও তাদের সরবরাহ করা অস্ত্রের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে।
গত মাসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে পেন্টাগন প্রেস সেক্রেটারি বিমান বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার বলেন, ধারণাটি হলো ‘তাদেরকে এই উন্নত স্তরের সম্মিলিত প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্ষম করে তোলা যা তাদেরকে কার্যকর সম্মিলিত অস্ত্র পরিচালনা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করতে সক্ষম করে তুলবে।’
মিলি বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে মার্কিন ন্যাশনাল গার্ড এবং বিশেষ অভিযানিক বাহিনী যারা প্রশিক্ষণ দিচ্চিল তারা সবাই দেশ ছেড়ে চলে যায়। এই নতুন প্রচেষ্টাটি মার্কিন সেনাবাহিনী ইউরোপ ও আফ্রিকার সপ্তম আর্মি ট্রেনিং কমান্ড দ্বারা করা হচ্ছে। এটি আক্রমণের আগে তারা যা করে আসছিল তার ধারাবাহিকতা হবে। অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্ররাও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: পশ্চিম তীরে অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে ৩ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
সিরিয়ায় হামলায় নিহত ১০, কুর্দি বাহিনীর হাতে ৫২ জঙ্গি গ্রেপ্তার
যুদ্ধ ও মহামারি সত্ত্বেও মানুষের কষ্ট লাঘবে যা দরকার আ.লীগ তা করবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য যা যা করা দরকার আওয়ামী লীগ সরকার তা করবে।’
শনিবার আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার, দল ও তার নেতাকর্মীরা সব সময় দুস্থ মানুষের পাশে আছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন: জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এই দেশের মানুষের জন্য একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করা। আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করব।’
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর নেতাকর্মীরা এজন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমরা গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি দিচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে কেউ গৃহহীন, ভূমিহীন ও ঠিকানাহীন থাকবে না।’
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় নিমজ্জিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তবে সর্বশক্তিমানের কৃপায় আমরা এখন পর্যন্ত দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পেরেছি।’
তিনি দেশের সার্বিক অগ্রগতির পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন।
আরও পড়ুন: গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ পেতে উৎপাদন খরচ পরিশোধ করুন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে সরকারকে ভোজ্যতেল, জ্বালানি, চিনি, মসুর ডাল, গম ও ভুট্টার মতো বিভিন্ন জিনিস বেশি দামে কিনতে হচ্ছে; যাতে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের এগুলো ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করা যায়।
তিনি আরও বলেছেন যে সরকার সারাদেশে জনগণের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে এসব জিনিসের দাম যাই হোক না কেন, সাধারণ মানুষের বোঝা কমাতে আমরা এ বিষয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছি।
তিনি আবারও সকলকে পরিমাণ যাই হোক না কেন, নিজেদের আবাদি জমি ব্যবহার করে কিছু না কিছু উৎপাদন করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ খাদ্য সংকটে ভুগছে, অনেক দেশ আমাদের কাছ থেকে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করতে চায়। আমাদের জমির সঠিক ব্যবহার করতে পারলে, আমরাও খাদ্য সরবরাহ করতে পারব।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে খাদ্য উৎপাদনের জন্য সব ধরনের ঋণ সহায়তা দেবে।
গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা টানা দশম মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদের তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সরকার মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চায়: প্রধানমন্ত্রী
কৃষি উৎপাদনের কারণেই দেশ অনেকটা স্বস্তিতে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি উৎপাদনের সাফল্যের কারণেই করোনা পরিস্থিতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও দেশ অনেকটা স্বস্তিতে।
বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব ওয়াহিদা আক্তারের যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন। একইসঙ্গে মন্ত্রী বিদায়ী কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলামকে ফুল দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভাল হয়েছে বলেই দেশে সবচেয়ে কম পরিমাণ চাল আমদানি হওয়ার পরও কোন রকম খাদ্য সংকট হয় নি। এই সময়ে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে, এটি নিয়ে এখন আমরা স্বস্তিতে আছি।
আরও পড়ুন: বিএনপির চাওয়ায় নির্বাচন হবে না, দেশও চলবে না: কৃষিমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, আমরা তিন বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ ভাগ দেশে উৎপাদন করতে কাজ করছি। এবছর দেশে সরিষার রেকর্ড আবাদ হয়েছে, এ লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।
নবনিযুক্ত কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি উৎপাদন ও উন্নয়নে যে অসাধারণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেটিকে শুধু অব্যাহত রাখা নয়, তাকে আরও বেগবান করতে কাজ করে যাব।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে সরকারের পতন হবে না: কৃষিমন্ত্রী
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে গেলে দেশ আবারও চাঙ্গা হবে: ধর্মপ্রতিমন্ত্রী
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, বর্তমান সময় সংকটময় সেটা বাংলাদেশের মানুষ জানে কারণ সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তবে বাংলাদেশের এই অবস্থা থাকবে না। সারাবিশ্বের থেকে আমরা এখন পর্যন্ত অনেক ভালো আছি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে গেলে দেশ আবারও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন যাতে আওয়ামীলীগ সরকার আর না করতে পারে সে জন্য একটা বিরোধী শক্তি কাজ করে যাচ্ছে। তারা দেশের শান্তি নষ্ট করতে চায়। এমনকি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে গোলা পানিতে মাছ শিকার করার জন্য প্রস্তুত থাকে তারা। এই দিকে আমাদের সকলকে সর্তক থাকতে হবে। মন্ত্রী বলেন,,আগামী এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা অশুভ শক্তি দেশে অনেক কিছু করার চেষ্টা করতে পারে। এই অশুভ শক্তি যাতে তাদের এই শক্তিটা প্রয়োগ করতে না পারে এই জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনপ্রতিনিধি ও দেশের সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে হবে। সে জন্য সবাইকে ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে, সবাইকে ভোট প্রয়োগ করতে হবে।
মহানবীর শিক্ষা ও আদর্শ মুসলিম উম্মাহকে উদার ও মানবিক হতে শিক্ষা দেয়: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, নাদের বখত প্রমুখ।
আরও পড়ুন: জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করেছিলেন: প্রধানমন্ত্রী
ইউক্রেনে যতদিন দরকার ততদিন সাহায্য করবে ন্যাটো
রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনীয়দের রক্ষা করতে যতদিন সময় লাগবে ততদিন ইউক্রেনকে সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর ন্যাটো। একই সঙ্গে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে পশ্চিমাদের মতো একটি আধুনিক সেনাবাহিনীতে রূপান্তর করতে সহায়তা করবে।
শুক্রবার সামরিক জোটটির মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ এই ঘোষণা দিয়েছেন।
আগামী সপ্তাহে রোমানিয়ায় ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম পৌঁছেছে ইউক্রেনের সাড়ে ৫২ হাজার টন গম
সংগঠন হিসেবে ন্যাটো অস্ত্র সরবরাহ করে না উল্লেখ করে ইউক্রেনকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এককভাবে বা দলগতভাবে দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ করেছেন স্টলটেনবার্গ।
তিনি বলেন, ‘যতদিন লাগবে ইউক্রেনের পাশে থাকবে ন্যাটো। আমরা পিছপা হবো না। বলেছেন নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ‘মিত্ররা অভূতপূর্ব সামরিক সহায়তা দিয়েছে এবং আমি আশা করি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও অ-প্রাণঘাতী সমর্থন বাড়াতে সম্মত হবেন।’স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন যে ৩০ জাতির নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা জ্বালানি, জেনারেটর, চিকিৎসা সরবরাহ, শীতকালীন সরঞ্জাম এবং ড্রোন জ্যামিং ডিভাইস সরবরাহ করছে। তবে শীতকাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি প্রয়োজন হবে। বিশেষত রাশিয়া ইউক্রেনের শক্তি অবকাঠামোতে আক্রমণ করার কারণে।
তিনি বলেন, ‘বুখারেস্টে আমাদের বৈঠকে আমি আরও কিছু করার জন্য ডাকব।’ ‘দীর্ঘ মেয়াদে আমরা ইউক্রেনকে সোভিয়েত যুগের সরঞ্জাম থেকে আধুনিক ন্যাটোর মান, মতবাদ এবং প্রশিক্ষণে রূপান্তর করতে সহায়তা করব।’
স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন যে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা তার দেশের সবচেয়ে চাপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগ দেবেন, তবে ন্যাটো কী ধরনের দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা প্রদান করতে পারে। ন্যাটোর শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তা বলেছেন যে সহায়তা ইউক্রেনকে একদিন জোটে যোগদানের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
বুখারেস্টে ২৯ ও ৩০ নভেম্বরের বৈঠকটি ন্যাটো প্রতিশ্রুতি দেয়ার প্রায় ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে যে ইউক্রেন এবং জর্জিয়া একদিন এই সংস্থার সদস্য হবে। আর এই অঙ্গীকারটি রাশিয়াকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ করেছিল।
বসনিয়া, জর্জিয়া এবং মলদোভার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন - তিনটি অংশীদার যে ন্যাটো বলছে রাশিয়ার চাপ বাড়ছে৷
স্টলটেনবার্গ বলেন, 'বৈঠকটি দেখতে পাবে ন্যাটো `তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে এবং তাদের আত্মরক্ষার ক্ষমতা জোরদার করতে সাহায্য করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেবে।‘
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ১০ মাস আগে ন্যাটো প্রতিবেশী ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছে ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু একটি বড় পারমাণবিক শক্তির সঙ্গে বৃহত্তর যুদ্ধে জড়ানো এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে চেষ্টা করেছে ন্যাটো। তবে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যেতে ইউক্রেনের ওপর কোন চাপ দেননি স্টলটেনবার্গ। প্রকৃতপক্ষে ন্যাটো এবং ইউরোপীয় কূটনীতিকরা বলেছেন যে পুতিন আলোচনার টেবিলে আসতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ যুদ্ধই আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়।’ তবে আলোচনার টেবিলে কী হবে তা নির্ভর করে যুদ্ধক্ষেত্রে কী ঘটবে তার ওপর।
অতএব, শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা বাড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হলো ইউক্রেনকে সহায়তা করা।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বিলম্ব: মন্ত্রী
রুশ রাষ্ট্রদূত আশা করছেন শিগগিরই ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ হবে: তথ্যমন্ত্রী
ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকটের আশঙ্কা করছেন না প্রধানমন্ত্রী
দেশে ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকেও (পণ্য) আমদানি শুরু করেছি।’শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যদিও (রাশিয়ার ওপর) নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলারের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের সমস্যা রয়েছে, সরকার একটি বিকল্প (পরিশোধ) ব্যবস্থার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
শেখ হাসিনা বলেন, পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত রিজার্ভ এখনও বাংলাদেশের কাছে রয়েছে।
রিজার্ভ ইস্যুতে সরকারের সমালোচকদের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন সবাই রিজার্ভ ও অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের সময় রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি।
তিনি বলেন যে মহামারি মোকাবিলায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন, টেস্টিং কিট ও অন্যান্য সম্পর্কিত উপকরণ সংগ্রহ করতে রিজার্ভ থেকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পর সরকারকে এখন উচ্চমূল্যে ভোজ্যতেল, গম ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (সরকার) ভোগ্যপণ্য নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই রিজার্ভ কমেছে।
তিনি আরও বলেন যে এখন একটি গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে ব্যাংকে টাকা নেই এবং গ্রাহকরা তাদের আমানত ফেরত পাবেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই গুজবের কারণে অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রেখে দিচ্ছেন। ঘরে টাকা রাখলে চোরের জন্য সুযোগ তৈরি হয়, তাই না?... এখন এটা মালিকদের ব্যাপার যে তারা এটা ব্যাংকে রাখবে নাকি চোরদের হাতে তুলে দেবে।’
আরও পড়ুন: ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়িতে রাখলে চোরেরা উৎসাহিত হবে: প্রধানমন্ত্রী
শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর অনুষ্ঠিত হবে: শাহরিয়ার আলম