রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
মিয়ানমার সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কঠিন করে তুলেছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের কাজ এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে এটি এখন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।’
সোমবার সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধ্যাপক পায়াম আখাভান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
আখাভান আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বাংলাদেশের নিযুক্ত আইনজীবী।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার সীমান্তে আগের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। তারা আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করছে।’
তিনি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যাতে মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যায় তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনো ধরনের বিদ্রোহের জন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এই নীতিতে বিশ্বাস করে এবং ভবিষ্যতে কাউকে তা করতে দেবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা যুবকদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার জন্য সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা করেছে এবং এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, কিছু রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে অস্ত্র, নারী ও মাদক পাচারের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ যুদ্ধের বিপক্ষে, রক্ষা করা হবে সার্বভৌমত্ব: প্রধানমন্ত্রী
ড. পায়াম আখাভান প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, বাংলাদেশ এখন জলবায়ু ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো নির্ভরশীল না হয়ে, বাংলাদেশ কপ-১৫ এর পর জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর সুরক্ষায় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলাসহ বাংলাদেশ অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
'জলবায়ু ব্যবস্থার সুরক্ষা নিশ্চিতে' রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যবাধকতার বিষয়ে পরামর্শমূলক মতামতের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বাংলাদেশের আইনি উপস্থাপনের প্রস্তুতিতে সহায়তা করায় অধ্যাপক পায়াম আখাভানকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে সংকট অবসানের পথ খুঁজতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সময়টা ভালো নয়: জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি খুবই কঠিন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এটি ভালো সময় নয়।
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
ইউএনআরসি বলেছে, প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের জন্য একটি অগ্রাধিকার এবং রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থায়নের ঘাটতি রয়েছে।’
এর আগে রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারে তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সংহতি ও তহবিল বাড়ানোর আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের প্রয়োজন আমাদের সংহতি। এ সবের জন্য আমাদের তহবিল বাড়াতে হবে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘কোনো শরণার্থীকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসন করা উচিত নয়।’ এটি স্বেচ্ছায় ও এমনভাবে করা দরকার যাতে তাদের মর্যাদা ও সুরক্ষা রক্ষা হয়।
দুজারিক বলেন, 'আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি বর্তমানে তাদের দাবি পূরণ করে না। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো, যারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদারভাবে আশ্রয় দিচ্ছে তাদের জন্য বৈশ্বিক সংহতি বাড়ানো দরকার, যেমন কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়। এর আগে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন মহাসচিব।’
‘মিয়ানমারে আমাদের নিজের ঘরে ফিরতে সাহায্য করুন’
কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে বিশাল জনসমাগমের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাঈদা নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাষায় দাবি জানিয়ে আসছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্ণপাত করছে না। আমরা ইংরেজিতেও আমাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। তবুও তারা মনোযোগ দিচ্ছে না। আমরা হতাশ। আমরা শুধু ভুক্তভোগী নই, আমরা বেঁচে আছি এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বলছি।’
তিনি বলেন, তিনি ২৫ আগস্টের দিনটি কখনোই ভুলতে পারবেন না এবং গত ৬ বছরে তারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে যেতে পারেননি।
অশ্রুসিক্ত সাঈদা বলেন, ‘ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়েছে, ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়েছে। আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’
তাদের সম্মিলিত দাবি- রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শক্তিশালী সমর্থন চায় বাংলাদেশ
অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা, মিয়ানমারের অন্যান্য ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মতো পূর্ণ অধিকারসহ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার।
বর্তমানে ১০ বছর বয়সী বনি আমিন ৬ বছর আগে মিয়ানমার থেকে দেশটির সামরিক জান্তার আক্রমণের সময় পরিবারের ৮ সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিল। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনবিকে এই শিশু বলেছে, ‘আমার মনে আছে কীভাবে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সামরিক বাহিনী আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাই।’
আজকের (শুক্রবার) সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, তারা মিয়ানমার সরকারের কাছে আবেদন করতে চান যেন তারা আগের মতোই মিয়ানমারে ফিরে যেতে ও সেখানে বসবাস করতে এবং নাগরিক হিসেবে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারেন।
তারা বলেন, মিয়ানমারের অর্থনীতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
রোহিঙ্গারা তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং
রোহিঙ্গা যুবক মুসা বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে সাহায্য করুন, ওটাই আমাদের দেশ। আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা এই দিনটিকে কেবল আমাদের অভিন্ন ট্র্যাজেডি মনে করিয়ে দেওয়ার নয়, বরং পদক্ষেপ নেওয়ার দিন হিসেবেও পালন করি। আসুন আমরা বেদনার ঊর্ধ্বে গিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচারের দাবি জানাই।’
মুসা আরও বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এমন একটি পথ সৃষ্টি করবে যে বিশ্বে এই ধরনের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি হবে না। এর ফলে এখানে শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে সব সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’
পরিবারের সদস্যদের হারানো নূর জাহান ইউএনবিকে বলেন, তারা ন্যায়বিচার চান এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চান।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ এখনো ঠিক হয়নি: সেহেলী সাবরীন
তিনি বলেন, তারা মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার চান, যাতে তারা নিরাপদ বোধ করেন।
‘রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে রোহিঙ্গারা একত্রিত হয়েছেন। তারা বলেন, এই ট্র্যাজেডিতে তাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত, যা তাদের কষ্ট দিয়েই চলেছে।
প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা কয়েক ডজন সমাবেশে যোগ দেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশটি কুতুপালং ক্যাম্পে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেই প্রায় ১০ হাজার শরণার্থীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
তারা এই দুঃসময়ে হাত বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৬ বছর পরেও সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দিকে মনোনিবেশ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের বাংলাদেশে একীভূত করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর মিয়ানমারকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তারা (রোহিঙ্গারা) তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাবে, এটাই আমাদের অগ্রাধিকার। মিয়ানমারও তাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করবে যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান শুরু করে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সরকার দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং অন্যান্য দেশ থেকে আরও প্রচুর সংখ্যক জনসংখ্যার প্রয়োজন নেই।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা ১৯৭০, ৮০’ ও ৯০’ এর দশকে বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু প্রতিবারই তারা ফিরে গিয়েছিল, এমনকি অতীতে সামরিক শাসনের সময়ও।
পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন বড় আকারের প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো বুঝতে সহায়তা করবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে কারো বাধা সৃষ্টি করা উচিত হবে না।
তিনি বলেন, ‘বড় পরিসরে প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতেই এই পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন। নিয়মিত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগকে চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধান আরও ভালোভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বলেননি যে তারা ফিরে যেতে চান না। বরং যখনই কোনো বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তি ক্যাম্পে তাদের সঙ্গে দেখা করেন তখনই তারা দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অস্ত্র ও মাদক পাচারের ঘটনা ক্যাম্পে বেড়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষ সদস্যও নিহত ও আহত হয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কীভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ভাসানচরকে ‘একটি ভাসমান দ্বীপ’ বলে বর্ণনা করেছিল তা স্মরণ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যতদিন তারা বাংলাদেশে থাকবে ততদিন আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার সমাধান খুঁজতে মানবিক সাড়া ও রাজনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য নতুন করে অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে’ চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
ইউএনএইচসিআর বলেছে, মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের বারবার বলেছে, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন নিরাপদ হলেই কেবল তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
সংস্থাটি আরও বলেছে, সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিৎ রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। যেন, তারা তাদের জন্মস্থান বা পছন্দের জায়গায় অবাধে চলাফেরা করতে পারে এবং তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি, নাগরিকত্বের জন্য ব্যবস্থা, পরিষেবা এবং আয়ের সুযোগ পায়।
ঢাকায় চীনা বিশেষ দূত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত
এশীয় বিষয়ক চীনের বিশেষ দূত দেং সিজুন ঢাকায় দুটি পৃথক বৈঠক করেছেন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এটি তার দ্বিতীয় সফর এবং তিনি সোমবার (৩১ জুলাই) ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন।
এবার বাংলাদেশে আসার আগে চীনের বিশেষ দূত মিয়ানমার সফর করেছেন। মঙ্গলবার তার ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।
তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা স্বয়ং পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এখন পর্যন্ত জিজুনের সফর সম্পর্কে কিছু জানাননি।
আরও পড়ুন: ঝিনজিয়াংয়ে বন্দিশিবির নেই, বিদেশি গণমাধ্যমসহ সবার জন্য উন্মুক্ত: চীন
এপ্রিলের শুরুতে চীনের বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠকের পর রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে শুরু করবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তার আশা পুনর্ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে অনেকেই কাজ করছেন। ‘আমার বলা উচিত তারা (চীন) একটি খুব ভাল উদ্যোগ নিয়েছে এবং তারা সেই অনুযায়ী কাজ করছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য অতীতে দুবার চেষ্টা করা হলেও দুটিই ব্যর্থ হয়েছে।
মোমেন বলেন, চীনা পক্ষ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার সুযোগ দেয় এবং আশা প্রকাশ করে যে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে শুরু করবে।
আরও পড়ুন: চীনের ঝিনজিয়াংয়ে 'বন্দিশিবিরের' দাবি ভিত্তিহীন: বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধি দলকে অঞ্চলটির বৃহত্তম মসজিদের ইমাম
ঢাকা-বেইজিং কৌশলগত সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে হবে: চীনা রাষ্ট্রদূত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের চলমান প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করেছে বাংলাদেশ ও চীন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও দ্রুত প্রত্যাবাসনে আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
মোমেন এবং চীনের ভাইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডন সম্মত হয়েছেন যে সমস্যার একটি জরুরি সমাধান প্রয়োজন, কারণ যদি আর কোনো সমাধান না করা হয়, তাহলে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বাস্তব হুমকি হিসেবে বিকশিত হতে পারে।
রবিবার মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মোমেন বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় চীনের উল্লেখযোগ্য অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন: মোমেন
তিনি দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনে গঠনমূলক ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মোমেন ২৭ মে ঢাকায় দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য সানকে অভিনন্দন জানান।
দুই দেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও সভ্যতার সম্পর্ক উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫০-এর দশকে চীন সফর এবং তিনি যা দেখেছিলেন তার ওপর তিনি যে বইটি লিখেছিলেন তার কথা উল্লেখ করেন।
বৃহৎ পদ্মা বহুমুখী সেতুর জন্য তার প্রশংসা করে সান উল্লেখ করেন যে এই কাঠামোটি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বের একটি নতুন প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়েছে এবং পর্যবেক্ষণ করেছেন যে দুটি দেশ বৃহত্তর এবং আরও ভাল সমন্বয়ের মাধ্যমে বিস্ময়কর কাজ করতে পারে।
মোমেন উভয় দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশে চীনা এফডিআইয়ের বৃহত্তর প্রবাহের আমন্ত্রণ জানান এবং উৎসাহিত করেন।
তিনি কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন চীন যে সহায়তা দিয়েছিল তা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন।
চীনে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত প্রবেশের সুবিধার বিষয়ে আলোচনা করার সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশ যাতে এই ব্যবস্থা থেকে সর্বোত্তম সুবিধা পেতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় সম্মত হওয়া প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন তিনি।
সান বাংলাদেশের উদ্যমী যুব জনগোষ্ঠীর প্রশংসা করেন যারা সমাজ ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের দশম বার্ষিকীর কথা উল্লেখ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশ এই মহাপরিকল্পনা থেকে সর্বাধিক সুফল পাবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির কারণে টাকা পাচার কমবে: মোমেন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করবে যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম।
শনিবার সুইডেনের স্টকহোমে দ্বিতীয় ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিস্টেরিয়াল ফোরামের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে এ কথা জানান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমদ এবং বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাদজা লাহাবিব।
যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করেন।
লর্ড আহমদ এসময় আশ্বাস দেন যে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবে এবং দেশটি রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সক্রিয় থাকবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে’ চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে’ চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন শনিবার বলেছেন যে চীন, একটি দায়িত্বশীল প্রধান দেশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে’।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় এক বন্ধু একবার আমাকে আন্তরিকভাবে বলেছিলেন যে অনেক লোক মুখে মুখে সাহায্যের কথা বলে, তবে কেবল চীন প্রত্যাবাসনকে তরান্বিত করতে বাস্তবিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে কসমস ডায়ালগ অ্যাম্বাসেডরস’ লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ (বাংলাদেশ-চায়না রিলেশনস: প্রগ্নসিস ফর দ্য ফিউচার)-শীর্ষক এক সিম্পোজিয়ামে মূল বক্তব্য দেওয়ার সময় রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
কসমস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রাক্তন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান।
বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।
পুনর্বাসনের প্রস্তুতি দেখতে শুক্রবার ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইন পরিদর্শন করেছে। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ১৫টি গ্রাম ও অন্যান্য অবকাঠামো পরিদর্শন করেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, প্রতিনিধি দলের নেতাও বলেছেন, ‘আমরা মংডু শহরের চারপাশে তাদের জন্য করা ব্যবস্থা পরিদর্শন করে ২০ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে ফিরে এসেছি। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছা দেখেছি। আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি মানবিক ট্র্যাজেডি এবং এটি আর কখনোই হওয়া উচিত নয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে, কারণ তিনি বাংলাদেশের মাটিতে এই রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশ বিশাল ত্যাগ স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-বেইজিংয়ের উচিত নতুন প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্র অন্বেষণে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করা: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে মিয়ানমারে ‘নিরাপদ সুরক্ষা অঞ্চল’ তৈরির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সেজন্য মিয়ানমারে একটি ‘নিরাপদ সুরক্ষা অঞ্চল’ তৈরি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা তাদের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে টেকসই সমাধানের জন্য আলোচনা করেছি (রোহিঙ্গা সংকটের)। ‘আমরা বলেছি আমাদের অগ্রাধিকার হলো তাদের (রোহিঙ্গাদের) প্রত্যাবাসন।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প শিগগিরই বাস্তবায়নের আশাবাদ শাহরিয়ারের
তিনি বলেন, মার্কিন পক্ষ উল্লেখ করেছে যে মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনও প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল নয়।
মোমেন বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে তারা (রোহিঙ্গারা) একবার সেখানে (মিয়ানমার) যাবে, তারা অনুকূল পরিবেশ পাবে। আপনি (মার্কিন) একটি নিরাপদ সুরক্ষা অঞ্চল তৈরি করুন। রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশেই নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন সরকার অব্যাহত মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে উদারভাবে আতিথ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আতিথেয়তা করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান এবং ২০১৭ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তায় প্রায় দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলারের কথা তুলে ধরেন, যার মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জরুরি খাদ্য ও পুষ্টি পরিষেবা সরবরাহের জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নতুন সহায়তায় ২৩ দশমিক আট মিলিয়ন মার্কিন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেদারল্যান্ডসের বৃহত্তর সমর্থন চায় ঢাকা
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আলোচনায় ‘সম্পৃক্ত নয়’ ইউএনএইচসিআর
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আলোচনায় ‘সম্পৃক্ত নয়’ ইউএনএইচসিআর
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য ‘উপযোগী নয়’।
জাতিসংঘের সংস্থাটি তার মূল্যায়ন তুলে ধরে বলেছে, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ইউএনএইচসিআরের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।’
জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে যে সম্ভাব্য প্রত্যাবাসন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্পে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে দেখা করতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে সফর সম্পর্কে অবগত রয়েছে তারা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ, মিয়ানমারের পাইলট প্রকল্পের বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউএনএইচসিআর এসব আলোচনায় জড়িত নয়।
রবিবার রাতে ইউএনএইচসিআর আঞ্চলিক ব্যুরো ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক এই বিবৃতিটি প্রদান করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানাল ইউএনএইচসিআর
একই সময়ে, ইউএনএইচসিআর পুনর্ব্যক্ত করেছে যে প্রতিটি শরণার্থীর একটি অবগত পছন্দের ভিত্তিতে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে, তবে কোনও শরণার্থীকে তা করতে বাধ্য করা উচিত নয়।
এতে বলা হয়েছে, সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রত্যাবাসনের অধিকার সংরক্ষণ প্রচেষ্টার সমর্থনে ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে আলোচনা ও সংলাপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। যাতে শরণার্থীরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সচেতনভাবে একটি পছন্দ করতে পারে এবং তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, ‘এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনেক শরণার্থী পুনর্ব্যক্ত করেছে যে তারা শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আশা করছে।’
২০১৭ সালের আগস্টের ঘটনার পর শরণার্থীরা যখন তা করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রশাসনিক বাধাগুলো তুলে নেয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে শরণার্থীদের মিয়ানমারে পূর্বের বাসস্থানটি দ্রুত যাচাই করার জন্য মিয়ানমারকে ধারাবাহিকভাবে উৎসাহিত করেছে।
জাতিসংঘ সংস্থাটি বলেছে , ‘ইউএনএইচসিআর সেই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যা সমস্ত শরণার্থীদের যাচাইয়ের দিকে পরিচালিত করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তনের পথ তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে সম্প্রতি মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের প্রযুক্তিগত যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য লজিস্টিক সহায়তা প্রদান অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
ইউএনএইচসিআর বলেছে যে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সম্পূর্ণরূপে অবহিত এবং স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রত্যাবর্তনের অধিকার বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।
ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর শরণার্থীদের শেষ প্রত্যাবর্তন এবং মিয়ানমারে টেকসই পুনর্মিলনের সুবিধার্থে তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা ২০২৩ সম্প্রতি চালু করা হয়েছে এবং ইউএনএইচসিআর এই আবেদনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত জোরালো সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বর্তমানে ১০ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করল জাপান-ইউএনএইচসিআর
টেকনাফে মিয়ানমারের ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের তালিকা যাচাইয়ে মিয়ানমার সরকারের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের টেকনাফে পৌঁছায়। মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের মংডু টাউনশীপ থেকে নাফ নদী পার হয়ে স্পীড বোটে করে তারা টেকনাফ জেটি ঘাটে এসে পৌঁছে।
এ সময় শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবিসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। এছাড়া প্রতিনিধি দলে মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের ১৭ জন কর্মকর্তা এবং মিয়ানমার পুলিশের পাঁচ সদস্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: টেকনাফে ইয়াবাসহ ইউপি সদস্য আটক, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের যে তালিকাটি পাঠিয়েছিল তা যাচাই করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। প্রতিনিধিদলটি আরআরআরসির সঙ্গে বৈঠক করবে। পাশাপাশি টেকনাফ স্থলবন্দরে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবে।
প্রথম দিকে পরিবার ভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার কথা এখন বলা হচ্ছে। এর মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ খানেক রোহিঙ্গা রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে মিয়ানমারকে আট লাখ ৬২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দেয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার।
আরও পড়ুন: টেকনাফে ৪ কৃষক অপহরণের অভিযোগ
টেকনাফে অস্ত্রধারীদের হাতে ৮ জন অপহৃত