সারাদেশ
কোটা সংস্কার আন্দোলন: পূর্ব রেলের ক্ষতি প্রায় ২২ কোটি টাকা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতায় ভাঙচুর করা হয়েছে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ট্রেনের বগি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেলপথ। এতে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। রেলওয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রেল সূত্র বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় চারটি ট্রেনের ৪০টি বগি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রেল চলাচল না করায় চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন।
জানা যায়, ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করে। তাছাড়া জনগণের নিরাপত্তায় সরকার কারফিউ জারি করে। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গত ১৮ জুলাই থেকে সব ধরনের রেল চলাচল বন্ধ রাখে। কার্যত এর পর থেকে আর কোনো রেল চলাচল করেনি।
তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে গতকাল শুক্রবার চারটি তেলবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভোর সাড়ে ৫টায় ২৪টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন ঢাকা, সাড়ে ৬টায় ১৬টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন সিলেট, সকাল সাড়ে ১০টায় ১২টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন দোহাজারী এবং ১১টায় ১২টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন হাটহাজারী স্টেশনের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন ছেড়ে যায়। প্রতিটি ট্রেনে বিজিবি চট্টগ্রাম থেকে এক প্লাটুন করে সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
এসব তাণ্ডবের পর রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের দপ্তরপ্রধানদের নিয়ে গঠিত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, দুষ্কৃতকারীরা রেলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাণিজ্যিক বিভাগের, এরপর যান্ত্রিক বিভাগের।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কারে নীতিগতভাবে একমত, আলোচনায় বসতে চায় সরকার: আইনমন্ত্রী
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি ট্রেনের ৪০টি কোচ ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭টি, চট্টলা এক্সপ্রেসের ১৩টি, জামালপুর এক্সপ্রেসের ৬টি, পারাবত এক্সপ্রেসের ৮টি ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের ২টি বগি ভাঙচুর করা হয়। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের চারটি বগি পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া চট্টলা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও কর্ণফুলী কমিউটারের ইঞ্জিন ভাঙচুর করা হয়।
রেলওয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায়। ১৮ থেকে ২৩ জুলাই বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল না করায় যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হবে। এর পরিমাণ ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের আওতায় ঢাকা বিভাগের যাত্রীদের ফেরত দিতে হবে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের যাত্রীদের ফেরত দিতে হবে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।
এদিকে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেনে। বৈঠকে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ-আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি ফখরুলের
পুলিশের পোশাক পরে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
পুলিশের পোশাক পরে দুর্বৃত্তরা সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দোষ চাপাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে নামার সঙ্গে সঙ্গে সরকার তাদের দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল করে। ২০১৮ সালে সরকারই তো এ কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। সেটা আবার হাইকোর্ট বাতিলের রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সেটার ওপর আবার স্থিতাবস্থা দেন। যেহেতু বারবার এরকম হচ্ছে, তাই ছাত্ররা দাবি করেছিল কোটা সংস্কার করে একটি আইনি কাঠামো করে দেওয়ার।’
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারীদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ঘাটতি ছিল। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে ছিলেন। সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেন। দুই মন্ত্রীর উদ্যোগে যখন ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি হলো, তখন আমরা ঢাকা শহরে, সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস, তাণ্ডব দেখলাম। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে যাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না, তারা তাড়াহুড়ো করে রাজধানীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা করল।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পুলিশের পোশাক পরে দুর্বত্তরা সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। দুর্যোগ ভবনে আগুন দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সার্ভার স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হলো। সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে সংবাদের কনটেন্ট আগে থেকেই তৈরি করে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে একটি পরিত্যক্ত দেশ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল।’
‘এত রক্তপাত, হতাহতের ঘটনা আমি কখনো দেখিনি। ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করে তারা যেভাবে ধ্বংসলীলা চালালো, সেটা সবাই দেখেছে। ছাত্ররা স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা এ ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত নয়।’
আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবস্থাপনায় মার্কিন সহযোগিতাকে স্বাগত জানালেন খালিদ মাহমুদ
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমাদেরও দাবি-আন্দোলন ছিল। আমরা সচিবালয় ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। শিক্ষামন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। কিন্তু কখনো ঢুকে আক্রমণ করিনি। ছাত্ররা আন্দোলন করবে এটাই তো স্বাভাবিক। ভুল ত্রুটি, ভালো-মন্দ যা-ই থাক, তরুণদের মধ্যে একটি বোঝাপড়া আছে। সেই বোঝাপড়া দিয়ে তারা মাঠে নেমেছে এবং আন্দোলন করেছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ দখল করতে বিদেশ থেকে উসকানি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যম এত বেশি শক্তিশালী যেকোনো সংবাদ গোপন থাকে না। দেশের এরকম একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে দেশের মানুষের শান্তি স্থাপন ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনা কারফিউ ঘোষণা করেছেন। কারফিউ জারি করার পর পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ২০২৬ সালে শুরু হবে: খালিদ মাহমুদ
নরসিংদীর জেল পলাতক জঙ্গি নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার
নরসিংদী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া এক কয়েদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তার ফারুক আহমেদ (৪৩) নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলন: ১০ মামলায় আসামি ১৬ হাজার, গ্রেপ্তার শতাধিক
১৯ জুলাই সোনারগাঁয়ের প্রেমের বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফারুককে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ আনা হয়। পরে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তিন জঙ্গি হিজবুল্লাহ, আবদুল আলিম ও মঈনুদ্দিনের সঙ্গে তাকে ৪ নম্বর সেলে রাখা হয়।
১৯ জুলাই কারাগার থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার আগে তিনি ঢাকায় বোনের বাসায় দুই দিন লুকিয়ে ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিএনপির ২ নেতাসহ ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ গ্রেপ্তার
চুয়াডাঙ্গায় সাপের কামড়ে নিহত ২, চিকিৎসাধীন আরও ২
চুয়াডাঙ্গায় সাপের কামড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা দুজন মারা যান। নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের জয়দেব পালের ছেলে দেবাশীষ (১২) ও সদর উপজেলার ভুলটিয়া গ্রামের বুলা মিয়ার ছেলে রাজন (১৬)।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন কনিকা (১৭) ও ইভা (২১) নামে দুজন।
আরও পড়ুন: ট্রেকিং, হাইকিং, ক্যাম্পিং ও ভ্রমণের সময় সাপের কামড় থেকে নিরাপদে থাকার উপায়
স্বজনরা জানান, দেবাশীষ ও রাজনকে সাপে কামড় দিলে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের পরিবারের লোকজন হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। হাসপাতালে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরই তারা মারা যান। এছাড়া সদর উপজেলার পীতম্বরপুর গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে কনিকা এবং ইভা নামে আরও এক নারী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধী নিচ্ছেন।চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন জানান, সাপের কামড়ে অসুস্থ দুজন রোগীর মৃতু হয়েছে। দুজন চিকিৎসাধীন এখনও। হাসপাতালে আসার পরপরই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনতে দেরি হলে মৃত্যুর শঙ্কা থেকেই যায়। তাই দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: তালায় সাপের কামড়ে নারীর মৃত্যু
কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা বাড়ল আরও ১৫ দিন
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধের সময়সীমা আরও ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৮ আগস্ট বৈঠক করে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
এর আগে তিন মাসের জন্য সব ধরনের মাছ ধরার ওপর জেলা প্রশাসনের জারি করা এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু মা মাছ পোনা ছাড়লেও সেগুলো এখনো ছোট থাকায় এবং কাপ্তাই হ্রদের পানি পর্যাপ্ত না থাকায় মাছের সুষ্ঠু প্রজননের স্বার্থে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধের সময়সীমা আরও ১৫ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক ও কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএফডিসি রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া, রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবাইদা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাইফুল ইসলাম, মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা উদয়ন বড়ুয়া ও মো. শুক্কুর, বিএফআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রমুখ।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে ২০ এপ্রিল থেকে ৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ
জেলা প্রশাসক বলেন, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশবৃদ্ধি ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের মাছ শিকার, আহরণ, বিপণন, বাজারজাত ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে। এজন্য বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও ১৫ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের সুষ্ঠু ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে তিন মাস হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। যদিও এ বছরও হ্রদে পানি স্বল্পতার কারণে মাছ শিকার বন্ধের সময়সীমা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত সময়েও পর্যাপ্ত পানি না বাড়লে মাছ শিকারের ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২টি ইউনিট চালু
বঙ্গপোসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় ফেরি চলাচল ব্যাহত
বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ৩ দিন ধরে ভোলার ইলিশা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে ফেরিচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অতি জোয়ারে ফেরির দুটি পন্টুন ও গ্যাংওয়ে ডুবে যাওয়ায় ফেরিতে উঠানামা করতে পারছে না যানবাহন। ফলে পচনশীল মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ট্রাক চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ-রুটে প্রতিদিন ৫টি ফেরিতে শতাধিক যানবাহন পারাপার করে থাকে। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ এই রুটের ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট অংশে যানবাহন ফেরিতে উঠানামার জন্য একটি হাইওয়াটার ও একটি লোওয়াটার ঘাট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দুপুর হলেই তীব্র জোয়ারে মেঘনা নদীর হাই ওয়াটার ঘাটটিও পানিতে তলিয়ে যায়। জোয়ারের পানির কারণে ইলিশা ঘাটে যানবাহন নিয়ে ফেরি এলেও নামতে কয়েক ঘণ্টা দেরি হয়। গত ৩ দিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাট এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে।
পরিবহন চালকরা জানান, ভোলার মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় লক্ষ্মীপুর থেকে ইলিশা আসতে অতিরিক্ত তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। আবার ঘাটে আসার পরও জোয়ারের পানিতে ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ফেরিতে আরও কয়েক ঘণ্টা ধরে বসে থাকতে হয়েছে। এর ফলে আটকে থাকা গাড়িতে পচনশীল মালসহ অন্যান্য মালামাল নষ্ট হচ্ছে বলেও জানান চালকরা।
আরও পড়ুন: কর্ণফুলীতে নৌকায় ফেরির ধাক্কা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতিসহ ২ যাত্রী নিখোঁজ
গত তিন দিন ধরে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় ভোলা ও লক্ষ্মীপুর অংশের দুই পাড়ে পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে বসে আছে অর্ধশতাধিক যানবাহন। ফেরির গ্যাংওয়ে ডুবে ফেরি লোড আনলোড করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ে ফেরি চলাচল করতে পারছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবহন চালক ও যাত্রীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ-রুটের ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের হাই ওয়াটার ঘাটটি অতি জোয়ারের সময় তলিয়ে যাওয়ায় কোনো কাজে আসছে না। জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়লেও যাতে এই ঘাট দিয়ে যানবাহান ফেরিতে উঠা নামা করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের একটি ফেরির সহকারী ব্যবস্থাপক আতিকুজ্জামান জানান, জোয়ারের পানির কারণে ফেরিঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য ফেরিচলাচল বন্ধ থাকে। কয়েক ঘণ্টা পর পানি কমে গেলে গাড়ি লোড-আনলোড করে ফেরি চলাচল করে। জোয়ারের পানি কমে গেলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ভোলা নদী বন্দরের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আগামী রবিবার ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট সরেজমিনে পরিদর্শন করে হাই ওয়াটার ঘাটটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেবেন।
আরও পড়ুন: মেরামতের অপেক্ষায় ‘রিমালে’ ক্ষতিগ্রস্ত ভোলার ১১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
বরিশালের হিজলা উপজেলায় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে সুফিয়ান সরদার (৩২) নিহত হন বলে জানিয়েছেন হিজলা থানার ওসি জুবাইর আহম্মেদ। এ সংঘর্ষে আরও চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
নিহত সুফিয়ান সরদার উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের চর দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা জামাল সরদারের ছেলে। তিনি মেমানিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি।
আরও পড়ুন: খুলনায় ভাতিজার বিরুদ্ধে চাচাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
সুফিয়ানের মামা ও মেমানিয়া ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নোমান সরদার বলেন, বুধবার রাত ১০টার দিকে সুফিয়ান তার দুই বন্ধুকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একই ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মাইনুলের বাড়ির সামনে পৌঁছালে প্রতিপক্ষ হামলা করে। ওই সময় দুই বন্ধু পালিয়ে গেলে সুফিয়ানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। খবর পেয়ে তারা গিয়ে সুফিয়ানকে উদ্ধার করে প্রথমে হিজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখান থেকে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে মাঝ পথে মারা যান সুফিয়ান।
নোমান বলেন, মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় মাছঘাট দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্থানীয় কিছু লোকজনের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল। তারই জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর আহমেদ বলেন, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন জখম হযেছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন ৫ জন। আহতদের মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত চারজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
ওসি বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের বাবা এ ঘটনায় মামলা করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে যুবকেকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গায় কিশোর হত্যায় একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড
চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত কিশোর রুবেল (১৪) হত্যার দায়ে আসামি মো. সোহাগকে (২০) আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে আসামির উপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক মো. মাসুদ আলী এই রায় ঘোষণা করেন।
নিহত রুবেল হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের ইয়ামিন আলীর ছেলে এবং আসামি সোহাগ একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এসএম শরীফউদ্দিন হাসু জানান, বয়স বিবেচনায় আসামির বিরুদ্ধে আমৃত্য কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলন: ২৭ মামলায় ৭০৩ গ্রেপ্তার
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৭ জুন বিকেলে কিশোর ভ্যানচালক রুবেলকে সদর উপজেলার দশমাইল বাজারে ভাড়ায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বের হন সোহাগ আহম্মেদ। এ সময় প্রলোভন দেখিয়ে কুতুবপুর মর্তুজাপুর গ্রামের মাঠের ভেতর নিয়ে গিয়ে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে রুবেলকে হত্যা করেন সোহাগ। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা ইয়ামিন আলী পরদিন চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সোহাগের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সোহাগ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গত বছরের ২৮ জুন চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একমাত্র আসামি সোহাগের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। একই বছরের ৩১ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ একমাত্র আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আসামি সোহাগ আহম্মেদকে যাবজ্জীবন (আমৃত্যু) সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত।
আরও পড়ুন: বিএনপির ২ নেতাসহ ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ গ্রেপ্তার
সপ্তাহজুড়ে সংঘর্ষের পর স্বাভাবিক হচ্ছে বাংলাদেশ, নিহত প্রায় ২০০: এপি
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা বিশৃঙ্খলার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। বুধবার সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা ও অফিস চালু হয়েছে। এক সপ্তাহজুড়ে চলা এ সহিংসতায় প্রায় ২০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় দেশের বেশিরভাগ অংশে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সাত ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করার পরে হাজার হাজার গাড়ি রাজধানীর রাস্তায় দেখা গেছে।
বুধবার(২৪ জুলাই) ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালুর পর কয়েক ঘণ্টার জন্য অফিস ও ব্যাংকের কার্যক্রম চালানো হয়।
আরও পড়ুন: জবিতে বিকাল ৪টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ, ছাত্রীদের বিক্ষোভ
পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় কারফিউ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ১৯৭ জন নিহত হয়েছেন বলে বুধবার (২৩ জুলাই) শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোর খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস কোনও সরকারি সূত্র থেকে মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়দের জন্য সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত কোটা বাতিলের দাবিতে ১৫ জুলাই থেকে সপ্তাহজুড়ে পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও ডানপন্থী জামায়াতে ইসলামী এই বিক্ষোভে সমর্থন জানানোর পর এই বিশৃঙ্খলা মারাত্মক আকার ধারণ করে। দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় অনেক সরকারি স্থাপনায় হামলা করা হয়।
রবিবার সুপ্রিম কোর্ট মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে সিভিল সার্ভিসের ৯৩ শতাংশ চাকরি মেধাভিত্তিক হবে এবং অবশিষ্ট ২ শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় কার্যকর করতে মঙ্গলবার পরিপত্র জারি করে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এই রায় বাস্তবায়নে তারা প্রস্তুত।
তবে রবিবারের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নেয় বিক্ষোভকারীরা। মঙ্গলবার তারা জানায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং পরবর্তী সরকারি বিজ্ঞপ্তি বিক্ষোভকারীদের পক্ষে রয়েছে।
তবে বিক্ষোভের সময় রক্তপাত ও মৃত্যুর জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।
গত জানুয়ারির নির্বাচনে শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দলগুলো তাদের বর্জন করার পর এই বিক্ষোভ বাংলাদেশ সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সরকার জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়।
বিক্ষোভকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, কোটা পদ্ধতি বৈষম্যমূলক এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উপকৃত করছে। এর পরিবর্তে তারা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা চেয়েছিল।
কোটা সংস্কারের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ এবং ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার নারীরা দলমত নির্বিশেষে সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার যোগ্য।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায়ই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতায় ইন্ধন যোগানোর জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতার উপর দমনপীড়ন চালানো হয়।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কারের দাবিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বুধবার(২৪ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করেছে সরকার। এরপর বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অফিস ও ব্যাংকের কার্যক্রম চালু ছিল। একই সঙ্গে ঢাকার কয়েকটি প্রধান সড়কে যানজট ছিল চোখে পড়ার মতো।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বারবার বলেছেন, বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং ডানপন্থী জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডাররা বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল। রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের সদর দপ্তর, একটি ফ্লাইওভারের দুটি টোল প্লাজা এবং একটি এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকায় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনসহ অনেক সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায় তারা। এছাড়া শত শত সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
প্রধান বিরোধী দলের সদর দপ্তরে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকায় বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে লাঠি, লোহার রড এবং দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির জন্য সরকারকে দায়ী করেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ছয় দিন পর মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আংশিকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে।
প্রধান ডাটা সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং ফাইবার অপটিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার জন্য তিনি বিক্ষোভকারীদের দায়ী করেন। তাদের দুর্বৃত্ত আখ্যা দেন তিনি।
তিনি বলেন, ধীরে ধীরে সারা দেশে ইন্টারনেট সচল করা হবে। তবে আপাতত করপোরেট ব্যবসা, ব্যাংক, কূটনৈতিক অঞ্চল এবং অন্যান্য কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হবে।
কয়েকদিন আগে কারফিউ জারিসহ দেখামাত্র গুলি (শুট অন সাইট অর্ডার) করার বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। এ সময় সামরিক সদস্যদের রাজধানী ও অন্যান্য অঞ্চলে টহল দিতে দেখা গেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সারা দেশে ২৭ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়।
সামরিক বাহিনীর তিন বিভাগের প্রধান, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা ও রাজনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তিনি সহিংসতার জন্য বিরোধীদের দোষারোপ করেছেন এবং অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন।
মার্কিন দূতাবাস রবিবারের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল ও অপ্রত্যাশিত বলে বর্ণনা করে বলেছে, দূতাবাসের আশেপাশে বন্দুক, টিয়ার গ্যাস ও অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তারা আমেরিকানদের সতর্ক হতে, বড় ভিড় এড়িয়ে চলতে এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: কোটা বাতিলের দাবিতে বাকৃবিতে আবারও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ
কোটাবিরোধী আন্দোলনে রণক্ষেত্র ঠাকুরগাঁও, আহত ৩০
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করার সময় ঠাকুরগাঁও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে আন্দোলনকারীরা সড়কে নামলে সত্যপীর সেতু পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
আন্দোলনকারীরা সড়কের কয়েকটি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী।
এর আগে দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শহরের চৌরাস্তায় ঘন্টাব্যাপী অবস্থান নেয় তারা।
পরে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অভিভাকদের কয়েকজনকে অংশ নিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে রাস্তার মাঝের ডিভাইডারের র্যালিং ভেঙ্গে ফেলে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ৩০ জন আহত হয় বলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
এর আগের দিন ঠাকুরগাঁওয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলকারীরা বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় দফায় দফায়
ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায় ও পুলিশ ৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। আহত হয় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন।
পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাঠক বলেন, পুলিশ অনেক ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। তবে কোন রকম নাশকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।