বিশেষ সংবাদ
মৌলভীবাজারে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা, ভোগান্তিতে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ
ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় সড়কের অবস্থা বেহাল। নদীতে ফেরি চলাচল এবং সেতু নির্মাণের কথা থাকলেও তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছেই না। এমন অবস্থায় যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তিতে মৌলভীবাজারের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ।
সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজার-রাজনগর-খেয়াঘাটবাজার সড়ক। সড়কটির ধারণ ক্ষমতা ও চলাচলের মেয়াদও শেষ অনেক আগেই। কিন্তু তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের। রাজনগর সদর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কটি এলজিইউডি থেকে ২০১৯ সালে সড়ক বিভাগকে হস্তান্তর করা হলেও সংস্কারের মুখ দেখেনি এখনও।
সড়কটি সংস্কারে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গেলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনসহ দেশে বাজেট সংকোচ থাকায় সংস্কার কাজ শুরু করা যায়নি বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন্যায় মনু নদের বাঁধ ভেঙে সড়কের পার্শ্ববর্তী কাওয়াদিঘী হাওরে পানি প্রবেশ করে সড়কের রাজনগর সদর, পাচগাঁও ও ফতেপুর ইউনিয়নের বহু জায়গা তলিয়ে যায়। ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে। এরইমধ্যে ওই সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগ জানায়, ২০১৯ সাল থেকে এলজিইডির কাছ থেকে মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগকে হস্তান্তর করা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো বড় বাজেট না আসায় তারা কেবল মাত্র ইট সলিং ছাড়া আর কোনো সংস্কার কাজ করেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মূল সড়কের প্রায় ৯০ ভাগ জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সড়কের রাজনগর সদর, মোকামবাজার, আজাদের বাজার, মধুর দোকানসহ বহু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সড়কের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় সড়কটি দিন দিন আরও ছোট হয়ে আসছে। এতে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে।
সড়ক ব্যবস্থার এই বেহাল দশার কারণে এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে পিছিয়ে পড়েছেন সড়ক এলাকার রাজনগর ও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।
সম্প্রতি সিলেটের সঙ্গে মৌলভীবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে ওই সড়কের কুশিয়ারা নদীতে ফেরি চলাচলের প্রস্তাব পাঠানো হলেও সেই প্রস্তাব এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
আরও পড়ুন: বন্যায় সব হারিয়ে বিপর্যস্ত শেরপুরবাসী, কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকারও বেশি
কুশিয়ারা নদীতে ফেরি চলাচল ব্যবস্থা না থাকায় নৌপথে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। ১৭ কিলোমিটারের সড়কটি ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে দুই লেনসহ সড়ক নির্মাণ এবং কুশিয়ারায় সেতু তৈরি করতে সেতুর নকশাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফাইল পাঠানো হয় সড়ক বিভাগ। খরচ ধরা হয় ১ হাজার কোটি টাকা।
সড়কের কিনারায় অবস্থিত কুশিয়ারা নদীর কয়েক স্থানকে সেতু নির্মাণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও শেষমেশ মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর অংশের হামিদপুর ও নদীর ওপারের সিলেট জেলার বালাগঞ্জ অংশের রাধাকোনা গ্রামের ওপর দিয়ে সেতু নির্মিত হবে এমনটা চূড়ান্ত করা হয়। সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা সেতুর নকশা তৈরি করেন। বর্তমানে সেতুর ডিজাইন কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়াও রাজনগর উপজেলা অংশের সেতুর সংযোগ সড়ক সংস্কারের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চূড়ান্ত হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আসায় এখনও আলোর মুখ দেখছে না সড়কটি।
রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আমীর আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় গাড়ি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। যার কারণে অটোরিকশা ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে এবং বাসও ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না।
রাজনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর আবুর রাইয়ান শাহীন বলেন, ওই সড়ক দিয়ে কুশিয়ারা পাড়ের দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। সংস্কারের অভাবে দেশের বৃহত্তম পূজা মণ্ডপ ‘পাঁচগাও’ এলাকায় পূজা উপলক্ষে সড়কের এক অংশ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে মৌলভীবাজার-ও বালাগঞ্জগামী যাত্রীরা গাড়ি নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন। সড়কটি সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জামি আহমদ বলেন, ওই সড়কটি সংস্কারের অভাবে অচল হয়ে পড়েছে। দুই উপজেলার ব্যস্ততম সড়কটি অচিরেই সংস্কার করা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ বলেন, সড়কটি মেরামতের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অ্যাডিশনাল প্রকৌশলী সিলেট জোন থেকে এই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাজেট সংকোচ না হলে সংস্কার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আরও পড়ুন: ৫০ বছরের মধ্যে সাহারা মরুভূমিতে প্রথম বন্যার বিরল দৃশ্য
৩ ঘণ্টা আগে
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীতে চলছে ইলিশ শিকার
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীতে ইলিশ শিকার করছে এক শ্রেণির অসাধু জেলে ও সৌখিন মৎস্য শিকারিরা। রাজবাড়ীর ৪২ কিলোমিটার পদ্মা নদীর অংশে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও তাদের আড়ালে মাছ ধরছে জেলেরা। রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া থেকে গোয়ালন্দ উপজেলার বাহির চর দৌলতদিয়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড়েই প্রকাশ্যে এসব ইলিশ বিক্রি চলছে।
মা মাছ রক্ষায় ও মাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এ সময় মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাড়তি লাভের আশায় ইলিশ শিকার করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পদ্মা নদীর পাড় থেকে তারা ইলিশ কিনে গ্রাম ঘুরে বিক্রি করছেন। আবার অনেকে ‘হোম ডেলিভারি’ও দিচ্ছেন।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সদর উপজেলার উড়াকান্দা, বরাট অন্তারমোড়, গোয়ালন্দের দেবগ্রামের তেনাপচা ও দৌলতদিয়া কলাবাগান এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ইলিশ শিকার ও বিক্রির সত্যতা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে ২০০ কেজি ইলিশ জব্দসহ ২২ জেলে আটক
সদর উপজেলার বরাট ইউপির অন্তারমোড়ে দেখা যায়, নদীতে অসংখ্য জেলে নৌকায় মাছ শিকার করছেন। এর এক কিলোমিটার দূরে দেব গ্রামের তেনাপচায় নদীর পাড়ে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের ভিড়। নদী থেকে মাছ নিয়ে জেলেরা আসলেই ক্রেতা, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। প্রতিটি নৌকায় ১০ থেকে ৩০ কেজি করে ইলিশ দেখা যায়।
দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে নৌকা দেখা না গেলেও ঘাট থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভাটিতে বাহির চর কলাবাগান এলাকায় সারি সারি নৌকা দেখা যায়। নদী থেকে মাছ ধরে জেলেরা কলাবাগান এলাকার নালায় গিয়ে বিক্রি করছে।
স্থানীয়রা জানায়, ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ইলিশ এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কেজি প্রতি ১০০ গ্রাম করে তারা বাড়তি ছাড় পাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা গ্রাম ঘুরে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে মৎস্য বিভাগকে সহযোগিতা করছেন। প্রকাশ্যে ইলিশ শিকার ও বিক্রির বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব বলেন, ৪২ কিলোমিটার পদ্মা নদীপথের মধ্যে ধাওয়া পাড়া থেকে বাহির চর দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। জনবল স্বল্পতার কারণে এতবড় এলাকায় অভিযান চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকালে, দুপুরে ও সন্ধ্যার পর পৃথক ভাগ করে অভিযান চালানো হচ্ছে।
একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত আসা যাওয়ার ফাঁকে জেলেরা নেমে পড়েন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, অভিযান চালাতে সরকারিভাবে ২২ দিনের জন্য মাত্র ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ মিলেছে। অথচ এই অভিযানে প্রতিদিন শুধুমাত্র ট্রলারভাড়া, জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ মিলে ১০ হাজার টাকার বেশি লাগছে। পাশাপাশি নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার না থাকায় অভিযানকালে ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়।
এসব সমস্যা সমাধান হলে ২৪ ঘণ্টা নির্বিঘ্নে অভিযান চালানো সম্ভব বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা।
ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইলিশ শিকার, আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় এবং বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অমান্য করলে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড রয়েছে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ ধরায় ৯ জেলের কারাদণ্ড
১ ঘণ্টা আগে
গ্রামীণ কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের নতুন উন্নয়ন প্রকল্প
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে গ্রামাঞ্চলে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে থাকা চলমান প্রকল্পগুলো সংশোধন ও পরিমার্জনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমেই কমে আসায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করার পর সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'এমনিতেই গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করতে হবে।’
নতুন উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি ও চলমান প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘দ্রুত নতুন প্রকল্প শুরু করতে হবে, না হলে বিদ্যমান প্রকল্পগুলো সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে।’
আরও পড়ুন: ঋণ প্রদান-বিনিয়োগ স্থবির হওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট নিয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য একটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি জরিপ প্রকল্প, ৮৭টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের ৮০টি প্রকল্প রয়েছে।
এডিপি থেকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ), বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ) এবং শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা (১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ) রয়েছে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে রয়েছে আবাসন, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। সব মিলিয়ে শীর্ষ ১০ খাত পেয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপি বরাদ্দের ৯০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, উদ্বেগ হিসেবে রয়ে গেছে মূল্যস্ফীতি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির হার সেপ্টেম্বরে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে, যা ২০২৪ সালের আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগস্টে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে এবং একই সময়ে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
গ্রামাঞ্চলেও মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশে নেমেছে। শহরাঞ্চলেও মূল্যস্ফীতির পতন দেখা গেছে। ১০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থেকে কমে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির চাপের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নিয়ে এসেছে।
পূর্ববর্তী প্রশাসনের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল বলে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে চলমান প্রকল্পগুলো সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে, যা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বা কম অগ্রাধিকার হিসেবে যাচাই করে স্বনির্ভর পর্যায়ে পৌঁছে গেলে বরাদ্দ বন্ধ করে দিচ্ছে। সম্পদ সুবিন্যস্ত করতে এবং উন্নয়নের উদ্যোগগুলো সফল করতে বৃহৎ প্রচেষ্টার একটি অংশ এটি।
আরও পড়ুন: নদীর পানি কেবলমাত্র রাজনীতি নয়, এটা কূটনীতি ও অর্থনীতিও: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
১ দিন আগে
ঋণ প্রদান-বিনিয়োগ স্থবির হওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি
কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। গত কয়েক মাস ধরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
অনেক শিল্প ও ব্যাংক মালিক নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত না থাকায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমেছে। ফলে, বেসরকারি শিল্পগুলোতে কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং ঋণের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে ধীর গতিতে চলছে।
একনেক সভা শেষে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিল্প খাতে উৎপাদন ও ব্যাংকিং খাতে ঋণ কার্যক্রমে ধীরগতির কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এ খাত বাধার সম্মুখীন হলে পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
তবে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিনিয়োগে বাধার সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন ড. মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম।’
উন্নয়ন বাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়িত সরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে ড. মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুমোদন পাওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন করছে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এতে ১,৩২১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার মধ্যে ১,১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি জরিপ প্রকল্প, ৮৭টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ৮০টি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনের প্রকল্প।
ড. মাহমুদ বলেন, অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হয় দুর্বলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে অথবা পরে পর্যালোচনার সময় দেখা গেছে, এগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়নি।’
ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান প্রকল্পগুলো সংশোধন করছে, যা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। কোনো প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় বা কম অগ্রাধিকার সম্পন্ন মনে হলে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছালে সরকার পরবর্তী বরাদ্দ বন্ধ করে দিচ্ছে।
ড. মাহমুদ সতর্ক করে বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও সরকারি খাতের ব্যয় উভয়ই কমে গেলে অর্থনীতির সার্বিক অর্থপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, উভয় খাতের বিনিয়োগ হ্রাসের কারণে গ্রামীণ ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় মন্দার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এডিপি বরাদ্দের ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ খাতের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ) এবং শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা (১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ)।
অন্যান্য মূল খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে আবাসন ও সম্প্রদায় সুবিধা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার এবং পল্লী উন্নয়ন, কৃষি, পরিবেশ, শিল্প এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
শীর্ষ ১০টি খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ৯০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল নীতি হার (রেপো রেট) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার গত আগস্টে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও এই সময়ে নিম্নমুখী ছিল।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগস্টে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ থেকে কমে সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি আগস্টে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ থেকে কমে সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
শহর ও গ্রামীণ উভয় অঞ্চলেই মূল্যস্ফীতি গত মাসে হ্রাস পেয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশে, যা আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শহরাঞ্চলে তা কমে সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে, যা আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ০১ শতাংশ।
২ দিন আগে
ঢাকা বিমানবন্দরের সেবা উন্নত হওয়ায় স্বস্তিতে যাত্রীরা
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি হাবিবুর রহমান প্রায় দুই বছর পর প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর দেরি হওয়া ও নানা বিড়ম্বনার কথা তিনি আগে থেকেই জানতেন। তবে এবার তিনি বেশ অবাক হয়েছেন।
রহমান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, 'আমি অল্প সময়ের মধ্যে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছি।’
সৌদি আরব ফেরত আরেক প্রবাসী আতাউর রহমানও একই অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইমিগ্রেশন শেষ করে দেখি আমার লাগেজ বেল্টে আছে। আগে আমাদের এর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। তবে এবার লাগেজ পেতে খুব বেশি দেরি করতে হয়নি।’
আগে ফ্লাইট থেকে নেমে ইমিগ্রেশনে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতো। এরপর লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। কিন্তু এখন বিমানবন্দরের চিত্র পুরোই বদলে গেছে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম ইউএনবিকে জানিয়েছেন, বর্তমানে সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা বা তার কম সময়ে যাত্রীরা লাগেজ পাচ্ছেন। এই কম সময়ে ডেলিভারির নিশ্চিত করা হয়েছে প্রায় ৮৮ শতাংশ। লাগেজ ডেলিভারির সময় আরও কমিয়ে আমার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কামরুল ইসলাম বলেন, অন্যদিকে লাগেজ চুরি ও কাটা লাগেজ বা লাগেজ থেকে মালামাল চুরি অনেকাংশেই কমে গেছে। বর্তমানে এটি শোনা যায় না বললেই চলে। এ বিষয়ে আমরা কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা করেছি, ফলে লাগেজ কাটা বন্ধ হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ইউএনবিকে জানান, আগে ফ্লাইট থেকে নেমে ইমিগ্রেশনে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতো। এরপর লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এখন ফ্লাইট অবতরণের অল্প সময়ের মধ্যেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হচ্ছে। বেল্টে যাওয়ার আগেই লাগেজ পৌঁছে যাচ্ছে।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন ও সময় বেশি লাগা দীর্ঘ দিনের সমস্যা ছিল। এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিয়েছি। ইমিগ্রেশনে আগে ৩ শিফট ছিল, এখন আমি ৪ শিফট চালু করেছি। ফলে যাত্রী সেবা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, যাত্রীদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বহু পদক্ষেপ নিয়েছি। যাত্রী হয়রানি রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি যাত্রী সেবার মান আরও বাড়বে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম আরও বলেন, বর্তমানে যাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের সেবা বাড়ানো হয়েছে। ফলে যাত্রীদের অভিযোগও কমেছে।
লাগেজ লেফট বিহাইন্ড সমস্যা উন্নতিকরণ, যাত্রীদের ট্রলি সমস্যা বড় সমস্যা সমাধান, হেল্প ডেস্ক ও যাত্রীদের তথ্য সেবা প্রদান সহজীকরণ, ২৪ ঘণ্টা হট লাইন ও নতুন ওয়েব পোর্টাল, ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালু, ফ্রী টেলিফোন বুথ সংখ্যা বৃদ্ধি, শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দরের হর্নমুক্ত ঘোষিত এলাকায় বেজেই চলেছে হর্ন
লাগেজ লেফট বিহাইন্ড সমস্যা উন্নতি
আগে লাগেজ লেফট বিহাইন্ডে প্রচুর অভিযোগ ছিল। এখন কমে গেছে। বর্তমানে এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যেসব এয়ারলাইন্সের অতিরিক্ত লেফট বিহাইন্ড হয় তাদের আগমনি সিটের ক্যাপাসিটি কমিয়ে এনে এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স সমুহকে সার্বিক সহযোগিতায় লেফট বিহাইন্ড সমস্যা অনেকটা উন্নতি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৯৯.৮০ শতাংশ লাগেজ যাত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
যাত্রীদের ট্রলি সমস্যা বড় সমস্যা
যাত্রীদের আরেকটি অসুবিধা হচ্ছে ট্রলি সমস্যা।যাত্রী সংখ্যা অনুযায়ী ট্রলি সংখ্যা অনেক কম ছিল। বর্তমানে ট্রলির সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ৩৬০০ ট্রলি আছে। এটি আরও বাড়ানো হবে। ট্রলি নিয়ে থেকে বের হয়ে বহুতল পার্কিং ও রাস্তার পূর্বপাশ পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় করা হয়েছে।
হেল্প ডেস্ক ও যাত্রীদের তথ্য সেবা প্রদান সহজীকরণ
এছাড়াও যাত্রীদের আরও সেবা দেওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আগমন এবং বহির্গমন এলাকায় যাত্রীদের তথ্য ও দিক নির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন করে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। দেশি ও বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সম্মানিত যাত্রীদের বিমানবন্দরে প্রবেশের পর অনেক সময় সঠিক তথ্য না পাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়। এই প্রেক্ষাপটে সবার কথা বিবেচনা করে আগমনী এলাকায় দুইটি এবং বহির্গমন এলাকায় তিনটি হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৫৪ জন সহকর্মী ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে যাত্রীদের বিভিন্ন তথ্য দেবেন।
২৪ ঘণ্টা হট লাইন ও নতুন ওয়েব পোর্টাল
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে যাত্রী সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে এবং একটি ওয়েবসাইট ও ওয়েব পোর্টাল খোলা হয়েছে। যাতে করে যাত্রীরা যেকোনো সহায়তা সহজে পেতে পারেন এবং কোনো অভিযোগ জানিয়ে দ্রুত সমাধান পেতে পারেন ১৩৬০০-তে ২৪ ঘণ্টা হট লাইন কল গ্রহণের মাধ্যমে সেবা দান চলবে। ভেতরে যেন সবসময় সঠিক আপডেট তথ্য ওয়েব সাইট থেকে পাবেন।
ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালু
যাত্রীদের জন্য আরেকটি সেবা হচ্ছে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা। যাত্রীদের সিম কার্ড না থাকলে যাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হয় তাই যাত্রীদের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে যোগাযোগ ব্যবস্থা করতে পারছে এবং নেটে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন কথা বলতে পারছেন।
ফ্রি টেলিফোন বুথ সংখ্যা বৃদ্ধি
এছাড়াও যাত্রীদের জন্য ফ্রি টেলিফোন বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কারো সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ফ্রি কথা বলতে পারেন এবং বিভিন্ন স্থানে টেলিফোন করতে পারছে। ১০টি ফ্রি টেলিফোন বুথ চালু আছে।
শাটল বাস সার্ভিস চালু
যাত্রীদের সেবামূলক আরেকটি সার্ভিস শাটল বাস চালু করা হয়েছে চলতি বছরে। যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দর শাটল বিমানবন্দর থেকে নিকটস্থ বাসট্যান্ড রেল স্টেশন ও আসা যাওয়ার সহজ করতে বিআরটিসি বাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এসি বাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বছরে আন্তর্জাতিক রুটে প্রায় ৫৫ হাজার ফ্লাইট এবং অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৫৩ হাজার ফ্লাইট পরিচালিত হয়। বাৎসরিক প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ লাখেরও বেশি যাত্রী আন্তর্জাতিক রুটে এবং প্রায় ২৩-২৫ লাখের বেশি অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াত করে। ২০২৩ সালে প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন। বর্তমানে ২০২৪ সালে সব ধরনের ফ্লাইটে চাহিদা অধিক থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে বেবিচক: বেবিচক চেয়ারম্যান
২ দিন আগে
২৬টি কূপ খননে সরকারের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব
দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উপকূলীয় গ্যাসক্ষেত্র জুড়ে ২৬টি কূপ খননের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এই উদ্যোগ আরও এক মাস বিলম্বিত হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
মূলত দরপত্র সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরি নিয়েই এই বিলম্ব সৃষ্টি হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ খনিজ, তেল ও গ্যাস করপোরেশনের অধীনে তিনটি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনকারী কোম্পানি (সাধারণত পেট্রোবাংলা নামে পরিচিত) সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: তিতাস স্মার্ট প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে অগ্রগতি সামান্য
কিন্তু সংবাদপত্র ও সংশ্লিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য দরপত্রের নথিপত্র চূড়ান্ত না হওয়ায় কোম্পানিগুলো দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ঘোষণা দেন, প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সবুজ সংকেত পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে আশা করছেন তারা।
একই সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকার শিগগিরই বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে ২৬টি কূপ খননের জন্য একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে বলে আশ্বাস দেন।
সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে চুক্তি বা বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অযাচিত চুক্তি করা থেকে বিরত থাকবে বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, এই উদ্যোগের লক্ষ্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করা ব্যয়বহুল এলএনজির ওপর নির্ভরতা কমানো।
দরপত্র আহ্বানে বিলম্বের বিষয়ে ফাওজুল কবির ইউএনবিকে বলেন, দরপত্র তৈরিতে তার মন্ত্রণালয় একজন দরপত্র ক্রয় বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিচ্ছে এজন্য কিছুটা বেশি সময় লাগছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দেবে সরকার
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ এর আওতায় একই ধরনের চুক্তির দলিল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এবার উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে হলে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ২০০৮ মেনে চলতে হবে তাই বিলম্ব হচ্ছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র জারি করতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের পুরো মাস লাগতে পারে।
গত ৩ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি উপদেষ্টা ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খননের সরকারি পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।
এর মধ্যে ৬৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ এবং বাকি ৩১টি কূপ হবে ওয়ার্ক-ওভার ওয়েল।
বাপেক্স ৬৯টি অনুসন্ধান কূপের মধ্যে ৪৩টি এবং বাকি ২৬টি কূপ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারদের মাধ্যমে খনন করবে।
বাপেক্স নিজস্ব রিগ ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র জুড়ে ৩৩টি কূপ খনন করবে এবং ভাড়া করা রিগ ব্যবহার করে আরও ১০টি কূপ খনন করা হবে।
উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য বাপেক্সের সক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো।’
আরও পড়ুন: ঝুলে আছে ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান
৩ দিন আগে
তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক, অধিকাংশ কোম্পানির দরপতন
গত সপ্তাহে ঢাকার শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন দেখা গেছে। ডিএসই এর প্রধান সূচক তিন মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৫,৩০০ পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা তাদের আরও ক্ষতি এড়াতে শেয়ার বিক্রি করেছেন বলে এমন দরপতন হয়েছে।
সপ্তাহজুড়ে বাজারে বিক্রেতাদের প্রভাব ছিল এবং টানা চতুর্থ সপ্তাহের মতো লোকসানের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
পতনের মধ্যে দিয়ে শেয়ারবাজারের গত সপ্তাহ শুরু হয়েছিল। চার দিনই বাজার নিম্নমুখী ছিল, কারণ খুচরা বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: সপ্তাহের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জঞ্জের (ডিএসই) মূল সূচক ডিএসইএক্স শেষ পর্যন্ত ৫,২৫৮ পয়েন্টে দাঁড়ায়, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৬৪ পয়েন্ট বা ৩.০৩ শতাংশ কম। গত চার সপ্তাহে ডিএসইএক্স ৪৭৬ পয়েন্ট হারিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের অধীনে থাকা শেয়ারগুলোর দরপতন অব্যাহত ছিল। অনিশ্চয়তার কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিউচুয়াল কোম্পানিসহ বড় ধরনের শেয়ারগুলো ক্রমাগত কমছে, যা সূচকের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিনিয়োগকারীরা তাদের ইক্যুইটি এক্সপোজারগুলো কমাতে পছন্দ করেছেন। একই সঙ্গে জুনে সমাপ্ত হওয়া কোম্পানির আয় ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে অপেক্ষা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক এবং নিয়ন্ত্রণকারী অনিশ্চয়তাগুলোও নেতিবাচক অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল; যা বিক্রির প্রবণতাকে উসকে দিয়েছিল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ডিএসইএক্স ১৬৪.১ পয়েন্ট বা ৩.০ শতাংশ হারিয়ে ৫,২৫৮ পয়েন্টে স্থির হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের বাজারে অংশগ্রহণও ১৩.৩ শতাংশ কমে ৩,১৮০ মিলিয়ন টাকা হয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩,৬৬৭ মিলিয়ন টাকা।
আরও পড়ুন: আইপিওর যাচাই-বাছাইয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের আরও ভূমিকা থাকা উচিত: এটিএম তারিকুজ্জামান
বিনিয়োগকারীরা মূলত ব্যাংকিং খাতে (২০.৪%) সক্রিয় ছিলেন, এরপরের অবস্থানে ছিল ফার্মাসিউটিক্যাল খাত (১৬.৫%) এবং আইটি খাত (১১.৩%)। সবচেয়ে বড় পতনের মুখে রয়েছে সার্ভিসেস সেক্টর (-৮.৮%)।
ইবিএল সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, রেনাটা ও বিকন ফার্মার সম্মিলিতভাবে পাঁচটি বড় মূলধনী স্টক সপ্তাহজুড়ে সূচকের পতনের জন্য এক-চতুর্থাংশ দায়ী।
চলতি সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন থেকে বেরিয়ে এসেছে ৫২ বিলিয়ন টাকা, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৬৬৯১ বিলিয়ন টাকায়। গত চার সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ২৪২ বিলিয়ন টাকা।
একটি কোম্পানির মোট বকেয়া শেয়ারের সংখ্যাকে তার বর্তমান বাজার মূল্য দিয়ে গুণ করে বাজার মূলধন গণনা করা হয়।
এছাড়া ৩০টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির জোট ব্লু-চিপ ডিএস৩০ সূচক ৫৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৩০ পয়েন্টে এবং শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ডিএসইএস সূচক ৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন: লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথমবারের মতো তালিকাভুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশি বন্ড
৩ দিন আগে
আরইবির অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতার আন্দোলন দমাতে দুদকের পদক্ষেপ
দাবি আদায়ে নিজ এলাকায় কর্ম বিরতিতে থাকা এমনকি বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকির সঙ্গে জড়িত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের নথিতে ইউএনবি দেখতে পেয়েছে যে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) বিভিন্ন ইউনিটের পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক।
ওই পাঁচ কর্মকর্তা হলেন- বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম হুমায়ুন কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, মানিকগঞ্জ পিবিএস’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) সামিউল কবির ও বিপাশা ইসলাম এবং মানিকগঞ্জ পিবিএস’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রাজন কুমার দাস।
এ লক্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) দুদকের সহকারী পরিচালক শহিদুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজালাল।
দুদক আরও জানায়, খান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাসুদ খানের দায়ের করা অভিযোগের আলোকে আরইবির তদন্ত দল হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ। হুমায়ুন কবির পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভ্যন্তরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
অভিযোগে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে হুমায়ুন কবির ২২৫ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
আরও পড়ুন: সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে মাস্টার রোল ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীদের জাতীয়করণের পেছনে বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভ্যন্তরে তথাকথিত আন্দোলনের সমন্বয়কদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদক হুমায়ুন কবির, সেইসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিজিএম আসাদুজ্জামান ভূঁইয়াকে ২৭ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য একটি চিঠি দিয়েছে। আর বাকি তিনজন- সামিউল কবির, বিপাশা ইসলাম ও রাজন কুমার দাসকে আগামী ২৮ অক্টোবর হাজির হওয়ার জন্য তলব করেছে দুদক।
এর আগে বেশ কয়েকটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের পর আরইবির আওতাধীন বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) বিভিন্ন শাখার একটি অংশ কঠোর আল্টিমেটাম দিয়ে বিদ্যুৎ 'সম্পূর্ণ বন্ধের' হুমকি দেয়।
কর্মকর্তারা পিবিএসের বরখাস্ত করা ১০ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে পুনর্বহাল এবং গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে তাদের দাবি পূরণের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়। তারা একই সময়সীমার মধ্যে আরইবি চেয়ারম্যানকে অপসারণেরও আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, দাবি আদায় না হলে হাজার হাজার পিবিএস কর্মচারী ‘ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ’ করাসহ গণবিক্ষোভ করবে।
আরও পড়ুন: সিলেটের ৮ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ‘ব্ল্যাক আউট’, ৩ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চার সমন্বয়ক আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ও রাজন কুমার দাসের সই করা এক বিবৃতিতে এ হুমকি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, ‘দুই দফা দাবি আদায় না হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪৫ হাজার কর্মী লংমার্চে যেতে বাধ্য হবে।’
অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে বিবেচিত বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ এনে আরইবি পিবিএসের বিভিন্ন ইউনিটের ১০ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার পর এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সংগঠনের শৃঙ্খলাবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও অভিযোগও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের একজন কর্মরত পরিদর্শককে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বরখাস্তকৃতদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রাজন কুমার দাস, নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মনির হোসেন, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম দীপক কুমার সিনহা, ঢাকা পল্লী বিদ্যুতের-১ এর এজিএম আব্দুল হাকিম, ঢাকা পিবিএস -২ এর এজিএম মো. সালাউদ্দিন, মাগুরা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. রাহাত, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর সিনিয়র জিএম মো. জাকির হোসেন এবং বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম হুমায়ুন কবির।
আরও পড়ুন: ঢাকা-ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিতরণ প্রকল্পে পোল ও ১৪০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ক্যাবল কিনবে বিআরইবি
৪ দিন আগে
চলতি মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ হতে পারে নতুন মুখ
প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদে চলতি মাসেই কিছু নতুন মুখ যোগ হতে পারে বলে সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিতরণে রদবদল হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন তিন-চারজন নতুন মুখ যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা দুই বা ততোধিক মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছেন। এর ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমে ধীর গতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
যেসব উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কাজের চাপ কমাতে নতুন উপদেষ্টা যুক্ত করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কত দিনের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ হবে, তার সঠিক তারিখ জানা যায়নি। তবে চলতি মাসের মধ্যেই নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
নতুন উপদেষ্টাদের কত সংখ্যা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি। তবে ৩-৪ জন হতে পারে বলে ধারণা দেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিব, দপ্তর প্রধান ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। ফলে কাজের গতি অনেকটা কম লক্ষ করা গেছে।
নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের পর প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক কাজ ও নজরদারিতে গতি আসবে বলে আশা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনে স্থবিরতা বিষয়ে চলতি সপ্তাহে জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, ১৬-১৭ বছরের বিষয়ের সমস্যা অল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। একটু সময় লাগবে।
এছাড়া গত মাসের ১২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনে স্থবিরতার কথা স্বীকার করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনে স্থবিরতা তো আছে। এটা আমরা লক্ষ করছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থবিরতা কেটে যাবে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শুরুতে প্রধান উপদেষ্টাসহ এই সরকারের সদস্যসংখ্যা ছিল ১৭। এরপর এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত ১৬ আগস্ট আরও চারজন উপদেষ্টা যুক্ত করা হয়।
বর্তমানে অন্তবর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা তিনটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। ১০ জন উপদেষ্টা দায়িত্ব পালন করছেন দুটি করে মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো দ্রুত সচল ও গতিশীল করতে গত ১২ আগস্ট নিজের হাতে থাকা ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত ২৮ জন সচিবকে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপরও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরে ১৬ আগস্ট আরও চারজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করে কাজের গতি বাড়াতে আবার নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপরও উপদেষ্টাদের উদ্যোগ ছাড়া সহজে কোনো কাজ হচ্ছে না।
আলোচনায় যেসব মন্ত্রণালয়
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিববহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অথবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নতুন উপেদেষ্টা আসতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে ৫৮টি। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ৪৫ জন। একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছিলেন ৪৭ জন। ড. ফখরুদ্দীন আহমদ সরকারের আমলে উপদেষ্টার সংখ্যা ছিল ১৬।
প্রধান উপদেষ্টার অধীনে যেসব মন্ত্রণালয়
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে আছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
উপদেষ্টাদের মধ্যে কে কোন কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে
বর্তমানে অন্তবর্তী সরকারে উপদেষ্টা আছেন ২১ জন। তারমধ্যে তিনটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন তিনজন। অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
দুটি করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আছেন যারা- স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ে হাসান আরিফ, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আদিলুর রহমান খান।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্ত আছেন আলী ইমাম মজুমদার। এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আসিফ মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ফারুক-ই-আজম, বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শারমিন এস মুরশিদ দায়িত্ব পালন করছেন।
মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, নূর জাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, বিধান রঞ্জন রায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে, আ ফ ম খালিদ হাসান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ও সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৪ দিন আগে
প্রশাসনে স্বচ্ছতার জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সংস্কারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনতে হলে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও পদায়ন পদ্ধতি সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলারা।
অন্যদিকে, জনপ্রশাসন সংস্থার কমিশন বলেছে, জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা করাই এই কমিশনের মুল লক্ষ্য। এ বিষয় নিশ্চিত করতে বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলারা। নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির ক্ষেত্রে আইনগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে বলেও মনে করেন তারা।
রাষ্ট্রের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রশাসন।
গত ৩ অক্টোবর আট সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ কমিশনের প্রধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। জনমুখী, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক, নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। ৯০ দিনের (৩ মাস) মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সাবেক সচিব মোহাম্মদ তারেক এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান এবং রিজওয়ান খায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এ ফিরোজ আহমেদ এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান ইউএনবিকে বলেন, প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনতে হলে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও পদায়ন পদ্ধতি সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পদায়ন, পদোন্নতি- এগুলো ঠিক করতে পারলে, স্বচ্ছতা আনতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে। জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ প্রশাসণ করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে কঠিন নীতিমালা ও কার্যকরী ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পদায়ন, পদোন্নতি- এসব ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে এবং তা কার্যকর করতে হবে। এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতিমালা রয়েছে, তবে এটি যে যার ইচ্ছামতো ব্যবহার করে। যে ব্যাচ নীতিমালা তৈরির সময়ে থাকে, তারা লাভবান হয়। যে ব্যক্তি নীতিমালা তৈরির সঙ্গে থাকে তার ব্যক্তি চিন্তা থাকে, সে যেন লাভবান হয়। এটা যেন ভবিষ্যতে না হয়, সে বিষয়ে সংস্কার কমিশনকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সাবেক সচিব বলেন, ‘পদায়ন, বদলি ও প্রশিক্ষণের জন্য নীতিমালা আছে। কিন্তু এগুলোর ফাঁক-ফোকরও আছে, সেটাও আমরা জানি। তদবির কীভাবে সব পরিবর্তন করে দেয় সেটাও আমরা জানি। এজন্য পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে একেবারে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে।’
সাবেক এই সচিব বলেন, ‘জনগণকে সেবা দিতে হবে, যারা চাকরি করবেন তাদের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে যে তাদের কাজ হলো জনকল্যাণ। রাষ্ট্রের মালিক হবেন না। সংবিধান অনুযায়ী মানুষের সেবা করাই হবে তাদের কাজ। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, তদারকির মাধ্যমে এটা করতে হবে।’
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ইউএনবিকে বলেন, ‘পদোন্নতির বর্তমান প্রক্রিয়াটাই মান্ধাতার আমলের। এমন প্রক্রিয়া পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই। এক্ষেত্রে যদি পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা হয়, তাহলে রাজনৈতিক বিবেচনায়ও কাউকে পদোন্নতিবঞ্চিত করতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘এখন জনবল কাঠামো যেভাবে আছে, সেটা অনেক পুরোনো, সঠিকভাবে নেই। সংস্কারের জন্য আইনগত ও কাঠামোগত দুটি পরিবর্তনই প্রয়োজন হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন পদের প্রয়োজন হতে পারে। তাই সার্বিকভাবে প্রশাসনের কাঠামোটা পরিবর্তন করতে হবে।’
সাবেক অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থাকা উচিত নয়। পিএসসিতে (সরকারি কর্ম কমিশন) রাজনৈতিক বিবেচনায় চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে যোগ্যদের এখানে বসাতে হবে।’
জনপ্রশাসন সংস্থার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর সচিবালয়ে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীসহ মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আলোচনা করব, বিভিন্ন এলাকায় যাব। জনগণের কথা শুনব। স্থানীয় যারা চাকরি-বাকরি করে তাদের কথা শুনব। চেম্বারের সঙ্গে আলোচনা করব। এসব আলোচনা করেই আমরা প্রকৃত কাজটি শুরু করব।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই এই কমিশনের মূল লক্ষ্য। আমরা সেভাবেই কাজ করব।’
কমিশন প্রধান বলেন, 'আজকে আমরা আলোচনা করেছি সার্বিক বিষয়ে কী হতে পারে। এখন আমরা এটাকে আস্তে আস্তে প্রক্রিয়াজাত করব, এগিযে যাব। তিন মাসের মধ্যে করার কথা, কাজেই দুই মাস পরে গিয়ে তখন সত্যিকার অর্থে একটা রূপরেখা পাব। আমাদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে, আমরা তো এটা আলোচনা করে করেই এগোব।'
কমিশনের অগ্রাধিকার কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সরকার যেটা ঠিক করে দিয়েছে সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার। আমাদের অগ্রাধিকার কী হবে সেটাই নির্ধারণ করতে আমাদের আরও সময় লাগবে।’
তিনি বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার করতে পারলে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও পদায়নে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি কমে আসবে।
তিন মাসের মধ্যে সংস্কারের সুপারিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার তিন মাস সময় দিয়েছে। আমাদের অবশ্যই চেষ্টা থাকবে তিন মাসের মধ্যেই করার।’
৫ দিন আগে